আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১২

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১২
Raiha Zubair Ripte

মিস্টার জনসের অফিস থেকে বেশ কিছুটা দূরেই মিস্টার জনস এর বলা ফাহাদের বাসার এড্রেস। দুতলা একটা ডুপ্লেক্স, বাড়ির মেন গেটে তালা ঝুলছে। তিনজন বেশ বুঝতে পারলো ফাহাদ বাসায় নেই। হয় মিস্টার জনস খবর দিয়েছে আর তা না হলে অন্য কোনোভাবে তাদের আসার খবর জেনেছে। সাব্বির পকেট থেকে পিস্তল বের করে তালা টা ভাঙে। তারপর ভেতরে ঢুকে।

পুরো রুম অন্ধকার। সাব্বির ফোনের লাইট জ্বালালো। তারপর সুইচ খুঁজে বাতি জ্বালালো। ঘরে বাতি জ্বলতেই সবার চোখ গিয়ে ঠেকলো ওদের সামনে থাকা দেওয়ালে। যেখানে বেশ কিছু রমণীর ছবি। লিখনের চোখ গিয়ে আটকালো সেই সব রমনীর মধ্যে থাকা দোলনের ছবির মধ্যে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তিনজন একে ওপরের মুখের দিকে তাকালো। রাহাত এগিয়ে গিয়ে মোবাইলে পিক তুলে নিলো। তারপর লিখন কে উপরে গিয়ে খুঁজতে বললো যদি কোনো ক্লু পায়। সাব্বির বসার ঘর টা খুঁজছে আর রাহাত নিচের রুম গুলো। এ বাড়িতে মোট চারটা রুম। উপরে তিনটা আর নিচে একটা। লিখন উপরের সব রুম খুঁজলো কিন্তু কোনো ক্লু পেলো না। সাব্বির ও পেলো না। কোনো ক্লুই রেখে যায় নি। এটা শিওর ওদের আসার খবর ফাহাদ জেনে গিয়েছিল। রাহাত নিচের রুম খুঁজতে গিয়ে একটা ছবি পায়। ছবিটা বেশ পুরানো। ছবিটা আলমারির ঠিক পেছন দিকটায় উল্টো হয়ে পড়ে ছিলো। হয়তো সব ক্লু সরিয়ে ফেলতে গিয়ে এটা অসাবধানতার জন্য পড়ে গেছে।

রাহাত পিক টা নিয়ে বাহিরে আসে। লিখন সাব্বির কে ডেকে পিক টা দেখায়। পিকটায় একজন পুরুষের ছবি ভাসমান। বেশ ইয়াং দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ছবি টা কার হতে পারে? এটা কি ফাহাদ? নাকি অন্য কেউ?
বাড়ি টা থেকে বের হয়ে আসলো ওরা। লিখন রাহাত কে ফের মিস্টার জনস এর অফিসে পাঠালো। লিখন আর সাব্বির হোটেল ফিরে আসলো। হোটেলে এসে লারা কে তার রুমে দেখতে না পেয়ে বেশ বিরক্ত হলো। মেয়েটা কে সাথে করে আনা মানে তাদের কাজের বারো তেরো টা বাজা। লারা কেস সল্ভ করতে আসে নি এসেছে মালদ্বীপ এর হাওয়া খেতে। সাব্বির ফোন লাগালো লারার নম্বরে আর তখনই লারা তার রুমে ঢুকে৷ নিজের রুমে সাব্বির লিখন কে দেখে অবাক হয়ে বলে-

-“ কখন এসেছিস তোরা? আর জনস ফনস কে কি চড়িয়ে দাঁত ফেলে দিয়েছিস?
সাব্বির লারার সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ কই গেছিলি তুই?
লারা হাসার চেষ্টা করে বলে-
-“ ক..কই আবার একটু বাহিরে গিয়েছিলাম।
-“ চিনিস কিছু এই শহরের? তোকে সাথে করে নিয়ে আসা মানে ঘাড়ে বিপদ নিয়ে বয়ে বেড়ানো। বোইন তুই সিআইডি থেকে নাম কাটা তাড়াতাড়ি রিজাইন দে। সিআইডির নাম ডুবাস না।
লারা রেগে গেলো সাব্বিরের কথায়। বিছানায় বসতে বসতে বলে-

-“ আমাকে বারবার পচাস তাই না? দেখিস একদিন এই আমাকে নিয়ে গর্ভ করবি।
সাব্বির হাসতে হাসতে বলে- হ্যাঁ স্বপ্নে।
লারা ভেঙচি কাটলো। লিখন লারার পাশে বসলো।
-“ লারা শোন তুই প্লিজ আমাদের কাজ কমানোর বদলে বাড়িয়ে দিস না। তোকে দরকার হলে এই কেসে থাকতে হবে না তবুও প্লিজ এমন কিছু করিস না যার জন্য আমাদের আরো ভোগান্তি পোহাতে হয়
-“ লিখন তুই ও!

লারার এবার সত্যি মন খারাপ হলো। সে না হয় একটু বোকাসোকা টাইপের, কাজ কমানোর বদলে মাঝেমধ্যে বাড়িয়ে দেয়। সেজন্য ওরা এভাবে বলবে?
লিখন তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ এই কেস টা বেশ অনেকটাই ক্রিটিক্যাল লারা৷ কে দোষী আর কে নির্দোষ বোঝা যাচ্ছে না। তুই প্লিজ আমাদের কথার অবাধ্যে গিয়ে বা না জানিয়ে কোনো কাজ করিস না বা উল্টাপাল্টা ডিসিশন নিস না।

-“ ওক্কে এবার আসতে পারিস তোরা।
লিখন রাহাত চলে আসলো। লারা দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। কোমড় টায় হাল্কা ব্যাথা করছে।
রাহাত মিস্টার জনস এর কাছে ফের আসতে মিস্টার জনস বলে উঠে –
-“ আবার কি হলো?
রাহাত কোনো ভনিতা ছাড়াই বলল-

-“ ফাহাদের পিক সেন্ড করুন আমার নম্বরে।
-“ ফাহাদের পিক নেই আমার ফোনে।
-” অফিস জুড়ে কোথাও নেই?
-” আছে।
-“ তাড়াতাড়ি দেখান।

মিস্টার জনস একজন গার্ড কে ডেকে ফাহাদের একটা ছবির ব্যাবস্থা করতে বললো। গার্ড টা মিনিট পাঁচেক এর মধ্যে ফাহাদের একটা ছবি এনে দেয়। মিস্টার জনস ছবি টা রাহাতের হাতে দেয়। রাহাত ছবি টা দেখে। ছবিতে থাকা ফাহাদের ছবি টা বেশ মিল মিল লাগছে ফাহাদের বাসায় পাওয়া ছবিটার সাথে। রাহাত পকেট থেকে সেই ছবি টা বের করে মিস্টার জনস এর সামনে ধরে বলে-

-“ এনাকে চিনেন?
জনস ছবিটা দেখে বলে-
-“ হ্যাঁ এটা ফাহাদের বাবা মিস্টার ফয়সাল শেখ।
-“ উনি কোথায়?
-“ উনি এই মালদ্বীপ শহরে নেই। কোথায় যেনো গিয়েছে সেটা শিওর জানি না।
-“ ফোন নম্বর আছে?
-“ হ্যাঁ মালদ্বীপের টা আছে।
-“ সেন্ড করুন।
জনস ফয়সাল শেখের নম্বর টা রাহাতের ফোনে সেন্ড করে।
-“ আবার দরকার পড়লে আসবো।
-“ অবশ্যই।

রাহাত বেরিয়ে আসলো, সোজা হোটেলে অবস্থান করলো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। লিখন সাব্বির বেলকনিতে বসে সিগারেট টানছে। রাহাত রুমে ঢুকে দু’জন কে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে দেখে বলে-
-“ সিগারেট খাচ্ছিস কোন শোকে?
-“ মনের শোকে।
লিখনের কথায় রাহাত বলে-
-“ তোর বউ মা’রা গেছে?
লিখন বিস্ফোরণ নিয়ে তাকায়।

-“ বালাইষাট কি বলিস এসব। আমার বউ মরবে ক্যান৷ এখনও বাবা ডাক শুনি নি দাদা নানা ডাক শুনলাম না আর এখনই এসব অলক্ষুণে কথা বলছিস।
-“ নাহ যেভাবে টানছিলি সিগারেট তাই বললাম।
-“ কোনো ক্লু পেলি?
-” হুম আমরা যেই ছবি টা ও বাড়ি পেলাম ওটা ফাহাদের বাবার ছবি। আর এটা ফাহাদের ছবি।
ফাহাদের ছবিটা ওদের দিকে বাড়িয়ে দিলো। সাব্বির আর লিখন ছবিটা দেখে নিলো। বাবা ছেলের মুখের গড়ন বেশ মিল।

-“ ছবিটা তন্ময় আর সায়ান কে পাঠিয়ে দে।
রাহাত হুমম জানিয়ে তন্ময়ের আর সায়ানের হোয়াটসঅ্যাপে পিক দুটো পাঠায় সাথে কে কার কি হয় তা ডিটেইলসে ভয়েসে বলে পাঠিয়ে দেয়।
তন্ময় সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো,হঠাৎ ফোনে মেসেজ টোন আসায় ফোন টা ওপেন করে। পিক দুটো ভালো করে দেখে নেয়। সাথে রাহাতের ভয়েস টাও শুনে। দোলন রান্না ঘরে রান্না করছে। তন্ময় দোলন কে ডেকে এক কাপ কফি চায়। দোলন তন্ময়ের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে রুমে আসে। তন্ময় কফি টা হাতে নিয়ে দোলন কে ইশারায় পাশে বসতে বলে। দোলন চুপচাপ তন্ময়ের পাশে বসে।

-“ কাল তো রেজাল্ট দিবে। পাস করবে তো?
সন্দেহান হয়ে বলে তন্ময়। দোলন তন্ময়ের দিকে তাকায়। তন্ময় কফিতে চুমুক বসিয়ে দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে।
-“ প্লাস আসবে নিশ্চিত। কিন্তু গোল্ডেন আসবে কি না জানি না।
তন্ময় বড়বড় চোখ করে তাকায়।
-“ সিরিয়াসলি প্লাস আসবে?
-“ হু।

-“ কনফিডেন্স নিয়ে বলছো যে ব্যাপার কি?
-“ কারন আমার এক্সাম ভালো হয়েছে। সব কমন পরেছিল।
-“ বাহ ভালোই তাহলে। আমার ওয়াইফ হিসেবে গ্রেট। আগে থেকে তাহলে মিষ্টি অর্ডার করে রাখি দোকানে?
দোলন চোখ ছোটছোট করে তাকায়।
-“ রেজাল্ট পাবলিশ হোক আগে।
-“ ওমা পাবলিশ হওয়ার বাকি আছে কি? তুমি তো বলেই দিলা প্লাস আসবে।
-“ তবুও,গোল্ডেন তো মনে হয় আসবে না।
-“ কেনো তুমি প্লাস আসলে খুশি হবে না?
-“ গোল্ডেন হলে বেটার হতো।

তন্ময় অবাক না হয়ে পারলো না। বেশির ভাগ মেয়েরা প্লাস না আসায় মন খারাপ কান্না কাটি করে আর এই মেয়ে গোল্ডেন চাচ্ছে। তবে মনে মনে আল্লাহ কে ডেকে বলল বউয়ের ইচ্ছে টা পূরন করে দিতে।
-” আচ্ছা কাল দেখা যাবে রেজাল্ট এখন খাবার রেডি করো। রাত অনেক হলো ঘুমাতে হবে তো নাকি।
দোলন মাথা নেড়ে খাবার টেবিলে যায় খাবাড় বাড়তে।

সায়ান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। পড়নে তার ব্লাক টি-শার্ট। দৃষ্টি তার আকাশপানে। আজ ভীষণ বাবা মা কে মনে পড়ছে সায়ানের। আট বছর হলো বাবা মা নেই দুনিয়া তে৷ আজ তৃষার কেসের ফাইল টা দেখার পর থেকেই বাবা মার কথা মনে পড়লো। সায়ানের বাবা মা মারা গেছে তখন সায়ান বিশ বছরের। তাতেই তার দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। আর ছোট্ট তৃষা না জানি কোথায় কিভাবে বেড়ে উঠছে। কোনো ভালো পরিবারে তার আশ্রয় হয়েছে নাকি রাস্তা ঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
হঠাৎ পাশে এসে কাউকে দাঁড়াতে দেখে সায়ান পাশ ফিরে। রাকিব কে দেখে দৃষ্টি আবার আকাশ পানে করে।

-“ বাবা মা কে মনে পড়ছে ভীষণ?
সায়ান ছোট্ট করে হুম জানালো।
-“ আমার ও ভীষণ মনে পড়ে মা কে।
-“ তোমার মা ও কি মামু…
রাকিব হোসাইন সায়ান কে কথাটা সম্পূর্ণ শেষ করতে দিলো না।
-“ আমার মা বেঁচে আছে।
-“ কোথায়?
রাকিব হোসাইন মুচকি হেঁসে বলে-
-“ এই ধরণীতেই।
-“ তুমি এখনও রহস্যই রয়ে গেলে মামু…

ফোনে মেসেজ আসায় সায়ান ফোনের দিকে তাকায়। রাহাত দুটো ছবি আর ভয়েস পাঠিয়েছে।
নেট শ্লো থাকায় লোডিং দেখাচ্ছে। সায়ান নেটের উপর বিরক্ত হলো। এদিকে ওয়াশরুমের চাপ আসায় ফোন টা রাকিব হোসাইন এর হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

রাকিব হোসাইন ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আছে। মিনিট একের মধ্যেই ছবি দুটো ওপেন হলো। ছবি দুটোর মধ্যে থাকা একটা পিকের দিকে গিয়ে চোখ আঁটকে গেলো। মুহূর্তে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। তড়িঘড়ি করে রাহাতের ভয়েস টা শুনে নিলো। এও সম্ভব? সায়ান ওয়াশরুম থেকে আসতেই রাকিব হোসাইন সায়ানের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে চলে আসে।

তুষার ডিনার করে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে চিত্রার জন্য অপেক্ষা করছে। যৌবন থাকাকালীন বউকে সময় দিতে পারে নি। এখন যখন বউকে সময় দিতে চায় তখন বউ তার এর ওর কাজে ব্যাস্ত থাকে। বউয়ের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘড়ির কাটা এগারো টায় গিয়ে ঠেকলো কিন্তু বউ তার এখনও রুমে আসলো না। তুষার অধৈর্য্য হয়ে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফোনে মেসেজের শব্দ আসে। তুষার ঘর থেকে না বের হয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ এসেছে সাথে দুটো পিক।
তুষার ওপেন করে দেখলো পিক টা। পিক ওপেন হতেই তুষারের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। নিচেই মেসেজ। তাতে লিখা-

-“ ও বেঁচে আছে। তারমানে সেদিন ও মা’রা যায় নি। মিথ্যা বলা হয়েছিল সেদিন তোকে।
তুষার দ্রুত টাইপ করলো-
-“ কাল সকালে দ্রুত অফিসে এসে দেখা কর।

তুলির আজ বেশ দেরি হয়ে গেছে। চটজলদি পা চালাচ্ছে গন্তব্য তার স্কুলে। ঘুম থেকে উঠতে আজ দেরি হয়েছে যার কারনে রেডি হতে হতে স্কুলের টাইম প্রায় ওভার হয়ে গেলো বলে। তুলি আজ জলপাই রঙের থ্রিপিস পড়েছে,কাঁধে তার সাইড ব্যাগ। স্কুলের মোড়ে আসতেই হঠাৎ দূরে তন্ময় কে দেখে তুলি স্কুলের কথা ভুলে গিয়ে তন্ময়ের দিকে এগিয়ে যায়।
তন্ময় আর সায়ান দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। সায়ান ফোনে রাহাতের সাথে কথা বলছে আর তন্ময় দাঁড়িয়ে আছে।
-“ ভাইয়া তুমি এখানে?

তুলির ডাকে সায়ান, তন্ময় দুজনেই পাশে ফিরে তাকায়। তুলির দিকে তাকাতেই সায়ান সেদিন দোকানে ধাক্কা লাগার কথা মনে পড়ে। ম্যানারলেস মেয়ে একটা৷ তন্ময় তুলির মাথায় হাত রাখে মুচকি হেঁসে বলে-
-“ স্কুলে এসেছিস?
-” হ্যাঁ। তুমি এখানে যে?
-“ কাজে এসেছি। সময় শেষ হয়ে গেলো তো স্কুলের।
তুলি হাত ঘড়ির দিকে তাকায়। জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে-
-“ ইশ ভুলেই গেছি। এখন আসি,এসো কিন্তু সময় করে।
তন্ময় মাথা নাড়িয়ে আচ্ছা জানায়। সায়ান ফোন কানে থেকে নামিয়ে বলে-

-“ কে ঐ মেয়েটা?
-“ আমার বোন, শিমুল তুলা।
তুলা নাম টা বার কয়েক আওড়ালো ঠোঁটের কোনে। লারার মুখেও তো এই তুলা নাম টা শুনেছে। ঐ মেয়েটাই তাহলে এই মেয়ে!
-“ এখন চলো শরাফত উল্লাহ এর সাথে কথা বলতে হবে তো নাকি।
তন্ময় হুমম জানিয়ে হাঁটা ধরলো। সায়ান পেছন ফিরে একবার তুলির দিকে তাকালো।

শরাফত উল্লাহ, যে গত সাত বছর হলো রিটায়ার হয়েছেন। তার মুখোমুখি বসে আছে সায়ান তন্ময়। শরাফত উল্লাহ কাজের মেয়েটাকে ডেকে তন্ময়, সায়ানের জন্য কফি আনতে বলে। মেয়েটা দুকাপ কফি এনে সায়ান দের সামনে রাখে। সায়ান কফির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে-
-“ আমরা কফি খেতে আসে নি মিস্টার শরাফত উল্লাহ। আমরা এসেছি আপনার কাছ থেকে সত্যি টা জানতে।
শরাফত উল্লাহ মুচকি হেঁসে বলে-
-“ কিসের সত্যি?

-“ তৃষা খাঁন এর কেস টার মূল সত্যি টা যেটা গত ১৯ বছর আগে যার তদন্তের মূলে ছিলেন আপনি। আপনার আন্ডারেই এই কেস টা ক্লোজ হয়েছে। বাট আপনি মেয়েটার খোঁজ কেনো পেলেন না?
শরাফত উল্লাহ মনে করার চেষ্টা করলো এই কেস টা। তারপর মনে পড়ায় বলল-
-“ মনে পড়েছে। তুষার খাঁনের মেয়েকে তো খুঁজে পাওয়া যায় নি আর।
-“ কেনো খুঁজে পাওয়া যায় নি?
-“ কারন মিস্টার খাঁন এর স্ত্রী কোনো ক্লু ই দিতে পারে নি। তবুও আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি খোঁজার কিন্তু পাই নি।

-“ সত্যি?
সন্দেহান হয়ে বলল সায়ান। শরাফত উল্লাহ হকচকিয়ে গেলেন।
-“ জ..জ্বি সত্যি।
-“ সেদিন সত্যি স্কুলে শর্টসার্কিটের জন্য আগুন লেগেছিল?
-“ এমন টাই জানা গেছে ইনভেস্টিগেটর করে।
-“ কিন্তু আমরা তো অন্য কিছু জানলাম।
-“ ক.. কি জেনেছেন?
-“ ওটা পরিকল্পনা মাফিক ভাবে করা হয়েছিল।
-“ কে বললো?
-“ ইনভেস্টিগেটর করে জানা গেছে।
-“ আ..আপনারা আবার কেস টা ওপেন করেছেন?
-“ ইয়াহ্

শরাফত উল্লাহ ক্রমাগত ঘামতে শুরু করলো। সায়ান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
-“ ঘামছেন কেনো আপনি এই এসির মধ্যে থেকেও?
শরাফত উল্লাহ হাসার চেষ্টা করে বলে-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১১

-“ গ..গরম লাগছে ভীষণ। আপনারা এখন আসতে পারেন,আমার শরীর টা ভালো লাগছে না। রেস্ট নিবো।
শরাফত উল্লাহ বসা থেকে উঠে রুমে চলে গেলেন। তন্ময় সায়ানের দিকে তাকালো। সায়ান বসা থেকে উঠে বলে-
-“ ডাল মে কুচ কালা হে। নজর রাখতে হবে এর উপর,আমার মনে হয় উনি অনেক কিছু জানেন এই কেস টার সম্পর্কে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৩