আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৫

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৫
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

মেঘের চিৎকারের শব্দে আবিরের হৃদয় কেঁপে উঠেছে।সহসা ফোন ফেলে ছুটে যায় রান্নাঘরে। গরম তেল ছিটকে পরেছে মেঘের হাতে,পায়ে। এত রাতে বাসার মানুষ সজাগ হলে ঝামেলা হবে ভেবে চি*ৎকার দিয়েই নিজের মুখ চেপে ধরেছে। ফ্লোরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেঘ।

আবির চুলা বন্ধ করে, ঝড়ের বেগে টুথপেষ্ট নিয়ে আসছে। হাঁটু গেড়ে বসে আলতো করে হাতে আর পায়ে পেস্ট লাগিয়ে দিচ্ছে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই আবিরের শরীর ঘেমে একাকার অবস্থা। রক্তাভ দুচোখ মেঘের হাতে পায়ে নিবদ্ধ। বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডটা অবিরাম কাঁপছে। মেঘের হাতে পায়ে পেস্ট লাগিয়ে ফুঁ দিয়ে দিচ্ছে। মেঘ কেঁদেই যাচ্ছে, তবে এই ক্রন্দন শব্দহীন।
আবির ভ্রু কুঁচকে, নিজের ভেতরে থাকা সবটুকু আক্রোশ কন্ঠে ঢেলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমায় না জ্বালালে কি তোর শান্তি হয় না?”
আবির ভাইয়ের রাগান্বিত কন্ঠ শুনে মেঘ জলসিক্ত চোখে আবিরের মুখের পানে তাকায়। চোখ পড়ে রক্তাভ দুচোখে , এই চোখে অসহায়ত্ব স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে। আবিরের নিঃশ্বাসের মাত্রা তীব্র, কপালে বিদ্যমান ঘামের বিন্দুগুলো চিকচিক করছে।
আচমকা আবির মেঘকে কোলে তুলে নেয়, ওমনি মেঘের চক্ষু চড়কগাছ। এক মুহুর্তেই কান্না থেমে গেছে, অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আবিরের মুখের পানে। আবির কোনোদিকে না তাকিয়ে মেঘকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে শুধালো,

“এখনও জ্বলতেছে?”
মেঘ এপাশ-ওপাশ মাথা নেড়ে “না” করল।
আবির মেঘের হাতে- পায়ে ফুঁ দিতে দিতে হঠাৎ অত্যন্ত নমনীয় স্বরে বলে উঠল,
” কথা বললে কেন কথা শুনিস না, তেলটা যদি আর একটু বেশি পরতো কি তখন কি হতো বল !”
মেঘ অপলক দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির ভাইয়ের বলা কথাটা মেঘের কলিজায় লাগছে৷ আবির ভাইয়ের এত কোমল কন্ঠ কোনোদিন শুনেনি সে। মেঘের অপলক দৃষ্টিতে আবিরের অদ্ভুত ঘোর কাজ করছে। কোনোমতে চোখ নামিয়ে শুধালো,

“রাতে খাইছিস?”
মেঘ আস্তে করে বলল,
“না”
আবিরের মেজাজ খারাপ হলো, কপাল কুঁচকে মেঘের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“এত রাত হয়ে গেছে, খাস নি কেন?”
মেঘ যে উপন্যাস পড়তে পড়তে ১১ টা বাজিয়ে ফেলেছে, তারপর থেকে আবির ভাইয়ের অপেক্ষাতে আছে। এ কথা আবির ভাইকে কিভাবে বলবে সে!
মেঘের হাত আর পায়ের দিকে একবার দেখে ঠান্ডা কন্ঠে বলল,

“এখানে চুপচাপ বসে থাক, আসছি আমি। ”
কিছুক্ষণের মধ্যে আবির আরেকটা ডিম ভেজে ভাত নিয়ে আসছে। মেঘ নির্বাক চোখে চেয়ে আছে। হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শুরু হয়ে যাচ্ছে। আবির ভাই খাবার নিয়ে আসছে। আবির ভাই কি খাইয়ে দিবেন! এসব ভেবেই অস্থির হয়ে যাচ্ছে।

জ্বরের ঘোরে প্রথমবার মেঘকে আবিরের খাইয়ে দেয়ার অনুভূতি ঠিকমতো বুঝতে না পারলেও আজ সে অনুভব করতে পারছে। খুব যত্নসহকারে মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছে আবির, পানির গ্লাসটাতে পর্যন্ত ছুঁতে দিচ্ছে না৷ খাওয়া শেষে মেঘের হাত আর পা পরিষ্কার করে ফ্রিজ থেকে দই বের করে দিয়েছে। এরমধ্যে কম করে হলেও ১০০ বার প্রশ্ন করে ফেলছে,

জ্বলছে কি না, ব্যথা করছে কি না, মেঘের থেকেও আবির যেন কয়েক গুণ বেশি দুশ্চিন্তায় আছে।
আবিরের আতঙ্কিত কন্ঠস্বর শুনে মেঘ বারবার অবাক চোখে তাকাচ্ছে। আবির ভাইয়ের এই আচরণ কি ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসা? নাকি অন্য কিছু! অন্য কিছু ভেবেও বারবার আটকে যাচ্ছে, মনে পড়ে যাচ্ছে ফুপ্পিকে নিয়ে আবির ভাইয়ের বলা কথাগুলো। মেঘকে কোলে নিয়ে রুম পর্যন্ত দিয়ে আসছে।

৩ দিন হয়ে গেছে মেঘের হাতে পায়ে তেল পরেছে । ভাগ্য ভালো ছিল বলে মেঘের হাতে ফোসকা পরে নি, তবে দাগ হয়ে আছে। এই দাগ মুছতে বেশকিছুদিন লাগবে।পে সময় চলমান। মেঘ আর বন্যা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে। মায়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও ভর্তি হয় নি। তার পছন্দমতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। পাখি এখনও ভর্তি হয় নি।

বন্যা আর মেঘের নতুন তিনজন বান্ধবী হয়েছে। লিজা, সাদিয়া আর মিষ্টি। আর দুজন ছেলে বন্ধুও হয়েছে। মিনহাজ আর তামিম। মিনহাজের সাথে বন্ধুত্বটা খুব অদ্ভুতভাবে হয়েছে।
প্রথমদিন মেঘ আর বন্যা আশপাশ দেখতে দেখতে ডিপার্টমেন্টে হাঁটছিল। এক ছেলে একটা রুম থেকে দৌড়ে বের হচ্ছিলো। মেঘ আর বন্যা অন্যমনস্ক থাকায় বিষয় টা খেয়াল করে নি। ছেলেটা কাছাকাছি আসতেই মেঘ দ্রুত সরতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছিল৷

অথচ ছেলেটা মেঘ আর বন্যাকে দেখে দৌড় থামিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে,
” দেখে চলতে পারো না! কোন ইয়ার? ”
বন্যা আস্তে করে বলে,
“প্রথম বর্ষ।”
ছেলেটা বিরক্তির স্বরে “ওহ” বলে চলে যায়।

বন্যা আর মেঘ দুজনেই আহাম্মকের মতো চেয়ে থাকে। ছেলের হাবভাবে মনে হয়েছিলো সিনিয়র কোনো ভাইয়া ৷ তারপর যখন দেখলো এই ছেলে ওদের সাথেই পড়ে তখন দুই বান্ধবী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিল। এরপর থেকে ছেলে বেশ কয়েকবার মেঘ আর বন্যার সঙ্গে কথা বলতে আসছে। প্রথমদিনের দুষ্টামির জন্য প্রতিদিন কম করে হলেও ১০ বার করে মাফ চাই। বন্যা আর মেঘকে এখন “আপু” বলে ডাকে। সেই মিনহাজের সাথে ভর্তির দিন থেকে তামিমের পরিচয়। আস্তে আস্তে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে । মিনহাজের মাধ্যমে বন্যা আর মেঘের সঙ্গেও তামিমের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।

আজ শুক্রবার, বাড়িতে মীম, আদি আর মেঘের হৈচৈ চলছে। আবির সকাল সকাল উঠে নাস্তা করে বেশখানিকটা সময় ধরে ভাই বোনদের দুষ্টামি দেখছে।
দুপুরের পরপর আবিরের বড় মামা আসছেন। ওনার বড় মেয়ে মাইশাকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসবে তাই ওনি সবাইকে দাওয়াত দিতে আসছেন। যদি পছন্দ হয় তাহলে বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হয়ে যাবে।
আলী আহমদ খান স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন,

“আমি এখন যেতে পারবো না , আপনি বরং আবিরের মা কে নিয়ে যান। বিয়ে ঠিক হোক, বিয়ের সময় সবাই যাব। ইনশাআল্লাহ। ”
বড় মামা আবিরের দিকে তাকাতেই আবির বলে উঠল,
” বড়মামা,আমায় যেতে বলো না প্লিজ। আমার অনেক কাজ আছে। তুমি আসছো যেহেতু আম্মুকে আজই নিয়ে যাও এতে কোনো সমস্যা নেই৷ তবুও আমায় যেতে বলো না। ”
বড় মামা একটু রেগে বললেন,

“এখন তোদের সমস্যা শুনছি কিন্তু বিয়ের সময় আমি কারো কোনো সমস্যা শুনতে চাই না। আমার মেয়ের বিয়েতে সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে। ”
আবির ঠান্ডা কন্ঠে বলল,
“যদি চাও সবাই মাইশা আপুর বিয়েতে উপস্থিত থাকুক তাহলে আগামী মাসের মাঝামাঝি তে তারিখ দিও। বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে। ”
এই বলে আবির চলে গেছে। আগামী মাসে মীম আদির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হবে, তারপর বিয়ে হলে সবাই যেতে পারবে। এজন্যই আবির বিয়ের তারিখ আগামী মাসের মাঝামাঝি দিতে বলেছে।

কয়েকদিন পর সকাল বেলা খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খাবার খাচ্ছিল।
আলী আহমদ খান হঠাৎ ই বলে উঠলেন,
“আবির, তোর কি কিছুদিন সময় হবে?”
আবির বাবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“কেনো?”
আলী আহমদ খান বললেন,
” তোকে রাজশাহী যেতে হতো!”

আবির ভাই রাজশাহী যাবে শুনেই মেঘ আঁতকে উঠে। ঘুম থেকে উঠে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে আবির ভাইকে দেখা মেঘের নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আবির ভাইকে রাজশাহী যেতে হবে শুনে অষ্টাদশীর মন সহসা খারাপ হয়ে গেছে। আবির কিছু বলার আগেই পাশ থেকে ইকবাল খান ওঠে বেসিনের দিকে চলে গেছেন।
আবির একবার বেসিনের দিকে দেখে পরক্ষণেই মেঘের দিকে এক পলক তাকালো। মেঘ মাথা নিচু করে বসে আছে। আবির ভারী কন্ঠে বলল,

“ঠিক আছে। কবে যেতে হবে? ”
মোজাম্মেল খান বললেন,
“আগামীকাল গেলে ভালো হবে। ”
কেউ আর কোনো কথা বলছে না, তানভির কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেছে। আবির খাবার শেষ করে অফিসের জন্য বেরিয়ে পরেছে।
বিকেলের দিকে মেঘের ঘুম ভাঙে, ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে দাঁড়াতেই দেখল নিচে আবির ভাইয়ের বাইক রাখা। তারমানে আবির ভাই বাসায়, মেঘ রুম থেকে বেড়িয়ে আবিরের রুমের দরজায় পা রাখতে রাখতে ডাকল,

“আবির ভাই! ”
পর্দা সরাতেই চোখে পরলো রাকিব ভাইয়া সহ আরও ৩-৪ টা ছেলে। মেঘ সঙ্গে সঙ্গে দরজা থেকে সরে গেছে। মেঘ ওড়না মাথায় দিতে ব্যস্ত।
আবির দরজা পর্যন্ত এসে বলল,
“কি হয়েছে, বল!”
মেঘ মোলায়েম কন্ঠে বলল,
“ছাদে যাব৷ চাবিটা কি দেয়া যাবে? ”
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল,
“তুই দাঁড়া। আমি নিয়ে আসছি!”
রুমে ঢুকতেই রাকিব বলে উঠল,
“বাহ! আবির, বাহ! এখন থেকেই বউ কে”
এতটুকু বলতেই আবির রাকিবের মুখ চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলল,
“মুখটা বন্ধ রাখ, ও বাহিরে আছে, শুনতে পাবে । ”

উচ্চস্বরে রাসেল, লিমন, মোবারক আর শিশির বলে উঠল,
“……..ও……..”
আবির রাকিবকে ছেড়ে ছাদের চাবি মেঘকে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” ১ ঘন্টার মধ্যে নিচে আসবি। ”
মেঘ “আচ্ছা” বলে যেতে নিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো। আবির তখনও দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। মেঘকে দাঁড়াতে দেখে প্রশ্ন করল,
“আবার কি হলো?”
মেঘ আস্তে করে বলল,

” রাকিব ভাইয়া বাসায় আসছে, ভালোমন্দ খবর নেয়া দরকার না? ”
আবির কপাল কুঁচকে তাকালো, ধীরস্থির কন্ঠে বলল,
“এখানে রাকিব ছাড়াও আরও কয়েকজন আছে। সবার সাথে কথা বলার আপাতত কোনো প্রয়োজন নেই। আর তোর পক্ষ থেকে আমি রাকিবের খবর নিব নে। যা এখন৷ ”
ঘরে ঢুকতেই সবাই একসাথে বলে উঠল,

“এখনই এই অবস্থা আবির! ”
আবির বিরক্তির স্বরে বলল,
“কি অবস্থা? ”
“এখনই ও বলে সম্বোধন করিস। বিয়ের পর কি বলবি?”
আবির ঠাট্টার স্বরে বলল,
“ওগো, হে গো, জান, কলিজা,ফুসফুস , ময়না, টিয়া, টুনটুনি কতকিছুই আছে।”
শিশির বলে উঠল,

“ফাজলামো বাদ দিয়ে বিয়ে টা তাড়াতাড়ি কর। আমরা তোর প্রণয়ের শুভ পরিণত দেখতে চাই। ”
আবিরের মুখের হাসি মুহুর্তেই গায়েব হয়ে গেছে। ধপ করে বিছানার পাশে বসে গুরুভার কন্ঠে বলল,
” যদি পারতাম সেই কবেই ওরে আমার রানী বানিয়ে ফেলতাম। পারছি না তো!”
রাসেল স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“সেসব বাদ দে৷ তোর এখন রাজশাহী যাওয়ার কি দরকার বলতো! এই সপ্তাহে আমাদের মিটিং হওয়ার কথা ছিল। তুই চলে গেলে কিভাবে হবে?”
আবির বলল,

“আমায় যেতে হবে। মিটিং পরে করব। ”
লিমন সচেতন কন্ঠে শুধাল,
“তোর ইকবাল চাচ্চুকে পাঠালেই হয়। এমনিতেও ওনিই তো বেশিরভাগ দায়িত্ব সামলান। ”
আবির ভারী কন্ঠে বলল
“ওনি সিলেট আর চট্টগ্রামের সব দায়িত্ব সামলান। ওনার রাজশাহী যাওয়া বারণ। ”
“কেন?” লিমন প্রশ্ন করল।
আবির বলা শুরু করল,

“অনেক বছর আগের ঘটনা, যখন রাজশাহীতে প্রথমবার কোম্পানির কাজ শুরু হয়েছিল, তখন বেশ কয়েক বছর কাকামনি রাজশাহীতে ছিলেন। ঐখানে যেই বাসাতে ছিলেন। ঐ বাসার মালিকের মেয়েকে কাকামনির ভালো লাগতে শুরু করে। মালিকের মেয়েরও কাকামনিকে ভালো লাগে। ধীরে ধীরে ওনাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিছুদিনের মধ্যে মালিকের পরিবার বিষয়টা জানতে পারে৷

তাদের দিক থেকে আপত্তি ছিল না। বিয়েও করিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু কাকামনি চেয়েছিল পরিবার নিয়ে গিয়ে বউ উঠিয়ে আনবে৷ সেই যে রাজশাহী থেকে বাসায় আসছিল আব্বু আর চাচ্চুকে নিতে৷ ঐ দিনের পর থেকে আজও রাজশাহীতে পা দিতে পারেন নি। বিয়ে তো করতে পারেই নি, রাজশাহী পর্যন্ত যেতে পারেন না। জোর করে আব্বু চাচ্চুর পছন্দে কুমিল্লা থেকে কাকিয়াকে বিয়ে করিয়ে এনেছেন। মনের বিরুদ্ধে গিয়েও সংসারে মনোযোগ দিতে হয়েছিল। সংসারে মনোযোগ আনার পেছনে পুরো ক্রেডিট কাকিয়ার। ওনি অনেক ভালো মানুষ, ওনি কাকামনির পাশে বন্ধুর মতো ছিলেন। এখন পর্যন্ত রাজশাহীর বেশিরভাগ কাজ চাচ্চু করেন, এই প্রথম আমি যাব। ”

শিশির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তোর কি হবে রে আবির!”
আবির মুচকি হেসে উত্তর দিল,
“সিদ্ধান্ত তো কবেই নিয়ে নিয়েছি, মেঘকে পেলে বাঁ*চবো, আর না হয় _”
রাসেল প্রশ্ন করল,
“তোর বাবা আর চাচার সমস্যা কি?”
আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

“সমাজ। ওনারা সমাজের চোখে ভালো থাকতে আপন মানুষদের মনকে হাজার বার খু*ন করতে পারেন।”
অফিসিয়াল কিছু বিষয় নিয়ে বেশকিছুক্ষণ আলোচনা চলল। এরমধ্যে মেঘ এসে চাবি দিয়ে গেছে। সন্ধার দিকে রাকিব রা চলে গেছে। রাকিবদের গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে ফেরার পথে মেঘের দরজার সামনে আবির দাঁড়িয়ে পরলো।
দরজা ধাক্কা দিয়ে তাকাতেই চোখে পরলো, মেঘ টেবিলের উপর মাথা নিচু করে বসে আছে। আবির মোলায়েম কন্ঠে বলল,

“আসবো?”
মেঘ মাথা তুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েছে। অশ্রুসিক্ত লোচনে তাকালো, ওমনি গাল বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে শুরু করে । আবিরকে দেখে মেঘ আবার মাথা নিচু করে ফেলেছে। আবির এগিয়ে এসে মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল,
“চা খাবি নাকি কফি? ”
এমন প্রশ্ন শুনে পুনরায় মুখ তুলে আবিরের মুখের পানে তাকালো। এইযে সে কান্না করছে। কই একটু সান্ত্বনা দিবে, তা না ।
মেঘ মনে মনে ভাবছে,

“কখন কি বলতে হয় এই বে*টা কি কিছুই জানে না!” মেঘের বৃহৎ অক্ষি যুগল আবিরের চোখে নিবদ্ধ। গাল বেয়ে এখনও নোনাজল গড়িয়ে পরছে। আবিরের ওষ্ঠদ্বয় কিছুটা প্রশস্ত হলো, কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
“এইযে কান্না করছিস, একটু পর ই তো মাথা ব্যথা শুরু হবে। তুই নিজের চিন্তা না ই করতে পারিস। আমার তো করতে হবে। ”
মেঘ সিক্ত আঁখিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

“আপনার চিন্তা করতে হবে কেন?”
আবির একটু ভেবে বলল,
“কাঁদতে কাঁদতে যদি চোখে অন্ধকার দেখিস, তখন সবাই তোকে কা*নি বলবে। তানভিরের কত কষ্ট ই না হবে, যখন সবাই ওকে কা*নির ভাই বলবে। ”
আবির স্ব শব্দে হাসছে। আর মেঘ নির্বাক চোখে তাকিয়ে আছে।
আবির হাসি থামিয়ে বলল,
“চা খাবি নাকি কফি খাবি এটা বল। তারপর কান্না করিস। ”
মেঘ কপাল গুটিয়ে বলল,

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৪

“কফি ”
আবির মুচকি হেসে বলল,
“গুড গার্ল। এবার কান্না শুরু কর। আমি আসার আগ পর্যন্ত কাঁদবি, এক সেকেন্ডের জন্য থামবি না। রেডি ”
মেঘ আহাম্মকের মতো চেয়ে আছে। আবির হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে ।

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৬