অর্ধাঙ্গিনী গল্পের লিংক || Mousumi Akter

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ১
Mousumi Akter

“প্রভাত চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী হয়ে তুমি অর্ধনগ্ন অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছো?তাও আবার কলেজভর্তি মানুষের ভেতরে।হাউ ডেয়ার ইউ?” ঝাঁঝালো গলায় কথাটা বলল প্রভাত চৌধুরী।
পূর্ণতা কলেজ মাঠে বন্ধুদের সাথে গোল হয়ে বসে ঝালমুড়ি খাচ্ছিলো।পরণে ব্লু জিন্স আর সাদা টপ্স।প্রভাতকে দেখে বন্ধুদের মাঝ থেকে উঠে দাঁড়াল।
প্রভাত আবার ও ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

“আগামিকাল থেকে তোমার কলেজ আসা বন্ধ।আমার পারমিশন ছাড়া এখন থেকে তুমি বাসা থেকে এক ‘পা ও বাড়াতে পারবে না।নাউ গো।”
কথাগুলো বলেই পূর্ণতার হাত খুব শক্তভাবে চেপে ধরল।কলেজভর্তি মানুষের ভীড়ে বন্ধুদের সামনে এমন ব্যবহারে অপমানে থমথমে হয়ে এল পূর্ণতার মুখের অবয়ব।চারদিক থেকে মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে।লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে তার।আশে পাশে তাকিয়ে দেখে পুরা কলেজের সমস্ত স্টুডেন্ট তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।আর সবাই পূর্ণতার দিকেই তাকিয়ে আছে।পূর্ণতা জানে এই মুহুর্তে প্রভাতকে কিছু বলেও লাভ নেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কারণ প্রভাতকে সে খুব ভালভাবেই চিনে।পৃথিবীর কোনো কিছুর ই তোয়াক্কা সে করেনা।তাকে কেউ বাঁধা দিতে আসলে এখানেই শে’ষ করে দিবে।তাছাড়াও সে এখানে কাউকে খু*ন করে ফেললেও কেউ কিছু বলবেনা।এগিয়ে এসে কেউ জিজ্ঞেস করবে না কেন মা’র’ছে?কারণ প্রভাত এখানকার সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারের ছেলে।তার বাবার কথায় পুরা এলাকা চলে।প্রভাত ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ।

সবাই বলে চৌধুরী বংশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার।যুগ যুগ ধরে প্রভাতের চৌদ্দপুরুষ এলাকায় রাজত্ব করে আসছে।পূর্ণতা প্রভাতের ই চাচাতো বোন। প্রভাতের বাবা ওয়াসিল চৌধুরী একমাত্র ভাতিজিকে তার একমাত্র ছেলের বউ হিসাবে রেখে দিতে চান।প্রভাতের বয়স এখন ত্রিশ। বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়স।এ মাসেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়েছে।অথচ পূর্ণতার প্রভাতকে পছন্দ নয়।সে কোনভাবেই প্রভাতকে বিয়ে করতে চায়না।এ কারণে প্রভাতের অপছন্দের প্রতিটা কাজ করে চলেছে।

চারদিকে মানুষ দেখে প্রভাত চোয়াল শক্ত করে বলল, ” তুমি কি ভালভাবে যাবে নাকি আমাকে আঙুল বাঁকা করতে হবে।”
মানুষের মাঝে কিছু না বলে পূর্ণতা প্রভাতের সাথে হাঁটা দিল।প্রভাত পূর্ণতার হাত ধরেই রেখেছে।গাড়ির কাছে গিয়ে প্রভাত গাড়ির দরজা খুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ” ওঠো।”

পূর্ণতা এইবার অগ্নিচোখে প্রভাতের দিকে চাইল।রাগে চোখ দুটো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে তার।এতক্ষণ মানুষের মাঝে ছিল বলে কিছু বলতে পারেনি।দাঁতে দাঁত চেপে খুব জোরে প্রভাতের হাত ঝাড়ি মেরে বলল,
“ছাড়ুন আমার হাত।কোন সাহসে আমার হাত ধরেছেন।আমার হাত ধরার কোনো রাইট আপনার নেই।”
প্রভাত ভ্রু কুঁচকালো।খানিকটা অবাকের ন্যায় পূর্ণতার তেজ দেখছে।পূর্ণতা আবার ও বলল,

“আমি অর্ধনগ্ন হয়ে কলেজে আসি বা পুরা নগ্ন হয়ে আসি সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।আপনি কেন বারবার আমার পারসোনাল ব্যাপারে নাক গলাতে আসেন?কাল থেকে এর চেয়ে ছোট পোশাক পরে কলেজে আসব দেখি আপনি কি করতে পারেন।”

পূর্ণতার কথা শুনে প্রভাত নিঃশব্দে হাসল।ঠোঁটের কোনে ক্ষীন হাসির ছড়াছড়ি।সেই হাসি নিয়ে পূর্ণতার দিকে ঝুঁকে বলল, ” ওয়াও গ্রেট! নগ্ন থাকতে চাও?নো প্রব্লেম! আই প্রমিজ পূর্ণতা বিয়ের পর যদি তুমি রাত দিন চব্বিস ঘণ্টা ও নগ্ন থাকতে চাও আমি বাঁধা দিবনা।এইটুক বিশ্বাস তুমি রাখতে পারো। ” বলেই প্রভাত ভয়ংকর এক দুষ্টু হাসি হাসল। পূর্ণতার চোখ যেন কপালে উঠল।প্রভাত ঠোঁট কাটা স্বভাবের।মুখ দিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালি গালাজ করে বন্ধুদের সাথে এটাও জানে।কিন্তু যে সে এত অসভ্য এটা জানা ছিলনা।পূর্ণতা ছানাবড়া চোখে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনার কি একবিন্দু ও লজ্জা শরম নেই। আমি না আপনার চাচাতো বোন। আমাকে এসব বলতে আপনার লজ্জা করেনা।”

প্রভাত আবার ও ভ্রু কুচকে বলল, “চাচাতো বোন বাট চাচাতো বউ তো নও।বউ তো আপণ।সো মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিনক্রিয়েট করোনা, বাসায় চলো।রুমে বসে না হয় খোলামেলা ডিসকাস করব মিসেস অর্ধাঙ্গিসী।”
“আমি এখনো আপনার অর্ধাঙ্গিনী হইনি প্রভাত চৌধুরী।তাই আমার নামের আগে মিসেস শব্দটা জুড়ে দিলেই আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে যাবোনা।”

প্রভাত তাচ্ছিল্যের সুরে হাসল।পূর্ণতার দিকেই দৃষ্টি অনড় রেখে শার্টের স্লিভ গোটালো।স্লিভ গোটানো শেষে পূর্ণতার কপালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে মাথায় হালকা গুঁতা মে’ রে বলল,
” একটা কথা তোমার এই ছোট্ট মাথায় খুব ভাল ভাবে ঢুকিয়ে নাও;তোমার এই চার আঙুল কপালে জীবনসঙ্গী হিসাবে প্রভাত চৌধুরীর নামটাই লেখা হয়ে গিয়েছে।এর আর কোনো নড়চড় হবেনা মিসেস পূর্ণতা চৌধুরী।”
কঠিন গলায় কথাটা বলল প্রভাত। পূর্ণতা প্রভাতের বুকে গায়ের সমস্ত বল প্রয়োগ করে ধাক্কা মেরে বলল, ” আপনি ভাবলেন কীভাবে আপনার মত একজন জঘন্য মানুষকে আমি বিয়ে করব।আমি চিরকুমারি থাকব তবুও আপনাকে বিয়ে করব না।”

পূর্ণতার ধাক্কায় প্রভাতের একটুও হেলদোল হলনা।একজন সুঠামদেহের অধিকারী পুরুষকে কি আর পূর্ণতার নরম হাতের ধাক্কায় নড়ানো যায়।পূর্ণতার ধাক্কায় প্রভাত তাচ্ছিল্যর স্বরে আবার হাসল।নিমিষেই আবার চোয়াল শক্ত করে বলল, ” নিজেকে কি ভাবো তুমি? বিশ্ব সুন্দরী নাকি মহারানি ভিক্টোরিয়া। তোমার চেয়ে হাজারগুন সুন্দরী মেয়ে প্রভাত চৌধুরীর পায়ে এসে পড়ে থাকে। তোমার চেয়ে হাজারগুন সুন্দরী সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড রিজেক্ট করেছি শুধুমাত্র তোমাকে বিয়ে করব বলে।ভেবোনা তোমার রুপে আমি পা*গ*ল।শুধুমাত্র বাবার কথা রাখতেই বিয়েটা করছি।”

“বাবার কথা রাখতে অন্য একজনের গার্লফ্রেন্ড বিয়ে করতে চান?”
“কে কার গার্লফ্রেন্ড?”
“আমি অন্য একজনের গার্লফ্রেন্ড। আমার বয়ফ্রেন্ড আছে, এইজন্য আপনামে আমি বিয়ে করতে চাইনা।”
প্রভাত পূর্ণতার আপাদমস্তক ভালভাবে তাকিয়ে দেখে নিয়ে বলল, ” তুমি কেন বিয়েটা করতে চাওনা একবার ও জানতে চেয়েছি আমি।তুমি চাও আর না চাও বিয়েটা আমার সাথেই হচ্ছে তোমার।”

পূর্ণতা পরের উত্তর টা আরোও দ্রুত দিল।
“তার সন্তান আমার পেটে।আমি দু’মাসের প্রেগন্যান্ট। ”
প্রভাত আশেপাশে তাকাল।দ্রুত পূর্ণতাকে পাজা কোলে তুলে নিল।পূর্ণতা হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে বলল, ” আরে কি করছেন?”

প্রভাত সেসব কথার কোনো উত্তর দিলনা।পূর্ণতাকে গাড়িতে বসিয়ে সোজা দরজা লাগিয়ে দিল গাড়ির।গাড়ির দরজা লক করে নিজেও গাড়িতে গিয়ে বসল।প্রভাতের হাত গাড়ির স্টিয়ারিং এ।পূর্ণতা গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করতে করতে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল, ” আপনি শুনলেন আমি প্রেগন্যান্ট তাও বিয়ে করবেন আমাকে?”
প্রভাত এইবার পূর্ণতার দিকে তাকাল।পূর্ণতার দিকে খানিক টা ঝুঁকে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলল, ” আর ইউ প্রেগন্যান্ট। ”

“অবশ্যই।”
“উত্তর টা অবশ্যই হবেনা।হ্যাঁ হবে।”
“ওইতো হ্যাঁ। ”
প্রভাত আচমকা পূর্ণতার পেটে হাত দিয়ে বলল, ” বাচ্চা কি আজকাল পুরুষদের চেহারা দেখে দেখে হচ্ছে নাকি কিছু বুঝলাম না।দেশ উন্নত হচ্ছে কিন্তু বাচ্চা হওয়ার সিস্টেম বদলে গেল কবে।কোনো চ্যানেলেও তো দেখলাম না যে পুরুষের চেহারা দেখে দেখে এখন থেকে বাচ্চা হবে।”
পূর্ণতা প্রভাতের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, ” চরিত্রহীন।”

“চরিত্র হরন করলাম কখন।”
“একটা অবিবাহিত মেয়ের পেটে হাত দিচ্ছেন,অন্যর বাচ্চার মা’কে জোর করে বিয়ে করতে চাইছেন এসব কি?”
“তুমি অন্যোর বাচ্চার মা হলেও আমার সমস্যা নেই।কারণ আপাতত আমার বাচ্চা নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।বাচ্চাটা হলে যার সন্তান তার কাছে ফেরত দিও।”
প্রভাতের কাছ থেকে এমন উত্তর পূর্ণতা আশা করেনি।পৃথিবীতে এমন ছেলে আজও জীবিত আছে।যে কীনা বিয়ে ঠিক হওয়া মেয়ে সম্পর্কে এত বড় কথা শুনেও চুপ থাকে।পূর্ণতা খানিকটা অবাক হয়ে উত্তর দিল,

“মানে?”
“মানে তোমাকে আমি ছোট বেলা থেকে দেখছি।বাবা যতই বলুক।তোমার চরিত্রে সমস্যা থাকলে কখনো বিয়ে করতাম না।আর তুমি কি ভাবো তোমার কোনো খোজ আমি রাখিনা।তোমার প্রতিটা পশমের খোজ খবর রাখি।”
“এইভাবে আমাকে অত্যাচার না করে একবারে খু-ন করে ফেলুন।”

প্রভাত পূর্ণতার গালে আঙুল ছুঁইয়ে বলল, “তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে। জীবনের অর্ধেক অঙ্গের অধিকারীনি।তোমাকে খু- ন করলে আমার জীবনের পুরাটাই লস আর লস।তার চেয়ে বরং তুমি আমায় খু-ন করে দাও।জীবন ধন্য হোক।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২