আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১১

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১১
Raiha Zubair Ripte

মালদ্বীপের রাজধানী মালে সিটিতে এসেছে রাহাত,লিখন,সাব্বির আর লারা প্রায় ঘন্টা দুয়েক হবে। এই রাজধানীর বেশ নামকরা এক হোটেলে অবস্থান করেছে সবাই। সায়ানের আসার কথা থাকলেও কোনো এক কারনে সায়ান আসে নি। আর তন্ময় সে তো আগেই না করে দিয়েছিল সে আসবে না। রাহাত, লিখন, সাব্বির তিনজন মিলে এক রুম নিয়েছে আর লারা আলাদা এক রুম নিয়েছে। দুপুর হয়ে যাওয়ায় ওরা চারজন মিলে হোটেলে দুপুরের লাঞ্চ টা করে সোজা বের হয় মিস্টার জনস এর সাথে দেখা করতে।

মিস্টার জনস যে কি-না এই মালে সিটির নামকরা একজন বিজনেস ম্যান। লারা দের হোটেলের ঠিক বিপরীত পাশেই মিস্টার জনস এর দশতালা ভবনের পরপর দুটি অফিস।
হোটেলের বেলকনি থেকে মিস্টার জনস এর অফিস ভবন স্পষ্ট দেখা যায়। হেঁটে গেলে মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবে। রাহাত,লিখন, সাব্বির লারা কে হোটেলে রেখে বেরিয়ে পড়লো। লারা খেয়েদেয়ে আর নড়তে পারছিলো না। সেখানে অফিস অব্দি হেঁটে যাওয়া অসম্ভব। সাব্বির বিরক্ত হয়ে লারা কে রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে বলে। লারা খুশি মনে চলে যায় রুমে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দশতালা ভবনের সামনে এসে অফিসের ভেতরে ঢুকতে গেলো সিকিউরিটি গার্ড আঁটকে দেয় ওদের তিনজন কে। এন্ট্রি কার্ড ছাড়া অফিসে ঢোকার পারমিশন নেই। রাহাত,লিখন সাব্বিরের কাছে এন্ট্রি কেনো সেন্টি খাওয়ার মতো ও কোনো কার্ড নেই শুধু সিআইডি কার্ড ছাড়া।
লিখন পকেট থেকে তার সিআইডি কার্ড বের করে গার্ড কে দেখায়। গার্ড কার্ড টা দেখে সাইডে গিয়ে কাউকে কল দেয়। মিনিট দশেকের মতো বকবক করে ওদের সামনে আসে। তারপর ভেতরে ঢোকার পারমিশন দেয়। রাহাত গার্ড কে জিজ্ঞেস করে-

-“ মিস্টার জনস কে কত নম্বর ফ্লোরে গেলে পাবো?
-“ ফাইভ।
রাহাত হাঁটা ধরলো পেছন পেছন সাব্বির লিখন ও। লিফটের কাছে গিয়ে ফাইভ ফ্লোরের জন্য বাটনে প্রো করে। কয়েক সেকেন্ডেই তাদের ফাইভ ফ্লোরে গিয়ে নামায়। তিনজন লিফট থেকে বের হয়। সামনে গার্ড দেখতে পেয়ে সাব্বির জিজ্ঞেস করে-

-“ মিস্টার জনস কোথায়?
গার্ড তার হাতের ইশারায় দেখায় একটা কেবিন। যার নম্বর তিনশো নয়। তিনজন আর সময় নষ্ট না করে ঐ কেবিনের দিকে আগায়। কেবিনে টোকা দিতেই ভেতর থেকে পারমিশন আসে-
-“ কামিং।

তিনজন ভেতরে ঢুকে। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে চেয়ারে থাকা এক পুরুষের দিকে। যার চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। মাথার চুল আধপাকা। শরীরে ব্লাক স্যুট। ওদের তিনজন কে দেখে ভদ্রলোক বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর ওদের চেয়ারে বসার জন্য বলল।
ওরা তিনজন চেয়ারে বসলো। মিস্টার জনস চেয়ার টেনে ফের বসে বলে-

-“ আপনারা আমার সাথে কেনো দেখা করতে চাচ্ছেন আমি কি জানতে পারি?
সাব্বির স্মিত হেঁসে বলল-
-“ অবশ্যই জানতে পারবেন। 960**** এই নম্বরটি আপনার?
মিস্টার জনস কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর জবাব দিলো-
-“ হ্যাঁ আমার বাট কেনো?
-“ ০১৯*** এই নম্বর টি কার জানেন?
মিস্টার জনস মুচকি হেঁসে বলে-

-“ আমি কিভাবে জানবো এই নম্বর টি কার? আপনার বলা নম্বর টা বাংলাদেশি নম্বর। আর আমি থাকি মালদ্বীপে সেক্ষেত্রে জানা টা খুব ট্রাফ।
রাহাত নিজের ফোন থেকে একটা কল লিস্টের পিক মিস্টার জনস এর সামনে মেলে ধরলো।
-“ দেখুন নম্বর টা। আপনার ফোন নম্বর থেকে দিনে পাঁচ থেকে ছয় বার এই বাংলাদেশী নম্বরে কল যেতো। আর যার কাছে কল যেতো সে একজন নারী পা’চার কারী চক্রের সাথে জড়িত। সেই নারী চক্রের হেড আপনি নন তে মিস্টার জনস?

-“ হোয়াট ননসেন্স! বিস্ময় হয়ে কথাটা বলল মিস্টার জনস। -“ আপনাদের মাথা ঠিক আছে তো? কাকে কি বলছেন? আমার সম্পর্কে ভালো ভাবে খোঁজ নিয়েছেন আসার আগে? আমি একজন বিজনেস ম্যান। আমার টাকা পয়সার অভাব নেই সেখানে আমি বাংলাদেশে নারী চক্রের সাথে জড়িত থাকবো?
-“ আমরা প্রমান ছাড়া কথা বলিনা মিস্টার জনস। প্রুফ তো দেখালাম আপনায়৷ আপনি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করুন।
মিস্টার জনস রাগ কমানোর চেষ্টা করলো।

-“ দেখুন নম্বর টা আমার। বাট নম্বর টা আমি ইউজ করি না।
-“ কে করে তাহলে?
-“ ফাহাদ করে ইউজ। ও আমার ম্যানাজার।
-“ আপনার সিম ও ইউজ করে কেনো?
-“ কারন ওর কাছে আমার ফোন সিম সব থাকে।
-“ ও কোথায়?
-“ মনে হয় বাসায়।
-“ ওর বাসা কোথায়? এড্রেস দিন কুইক।

মিস্টার জনস এড্রেস দিলো। লিখন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল-
-“ ঘুনাক্ষরে ও যেনো এসব আপনার ম্যানেজার না জানে।
মিস্টার জনস আস্বস্ত করলো জানবে না।
ওরা তিনজন বেরিয়ে গেলো। মিস্টার জনস এর দেওয়া এড্রেসের উদ্দেশ্যে।

লারা দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু রেস্ট নিতে রুমে এসেছিল কিন্তু এখন আর এই রুমে থাকতে ইচ্ছে করছে না। কেমন দমবন্ধ লাগছে। লারা রুম থেকে বের হলো আশেপাশ টা ঘুরে দেখা’র জন্য। সাব্বির রা এখনও আসে নি। লারা লম্বা শ্বাস ফেলে হোটেল থেকে বের হয়। তারপর রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাঁটা ধরে। সামনেই একটা খোলা মাঠ দেখতে পায়৷ মাঠ টা রোডের ওপাশে।

লারা আশেপাশ টা দেখে রাস্তা পাড় হলো। রাস্তার সাইডে এক মেয়ে গিটার হাতে নিয়ে গান গাইছে আর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া লোকেরা সামনে মেলে রাখা কাপড়ের উপর টাকা রেখে যাচ্ছে। লারা মাঠের দিকে না গিয়ে মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো। মেয়েটি তখনও গানে মশগুল। লারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ঐ দেশের ভাষার গান শুনলো। বাট গানের কোনো মানে বুঝলো না। গান গাওয়া শেষে মেয়েটা টাকা গুলে উঠিয়ে চলে গেলো। লারা তখনও দাঁড়িয়ে মেয়েটার যাওয়া দেখলো।

মেয়েটা দৃষ্টি সীমার বাহিরে যেতেই লারা নড়েচড়ে উঠলো। সাইড ঘুরে অন্য রাস্তায় যেতেই কোনো পুরুষালি দেহের সাথে ধাক্কা খেলো। ধাক্কার টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে শক্তপোক্ত দু হাত লারা কে জড়িয়ে ধরে। লারা চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিজেকে পড়ে যেতে না দেখে হাল্কা করে চোখ মেলতেই দেখা মিলে এক সুদর্শন পুরুষের মুখশ্রী। ধবধবে ফর্সা দেহ,মুখ জুড়ে চাপ দাড়ি,কপালে বিরক্তির দু ভাজ,গোলাপি ঠোঁট, পড়নে সাদা শার্ট একদম পিছলে যাওয়ার মতো লুক।

লারা যেনো কোনো স্বপ্নের দেশে চলে গেলো এমন সুদর্শন পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে৷ উঠে দাঁড়াতেই ভুলে গেছে। লারা কে উঠে দাঁড়াতে না দেখে সেই পুরুষ হাত ছেড়ে দিলো। লারা ধপাস করে রাস্তায় পড়ে গেলো। কোমড়ে ব্যাথায় পাওয়ায় মৃদু শব্দ করে বসলো। লোকটা লারার ব্যাথা যুক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ছেলে মানুষ দেখেন নি কখনও? এমন হা করে কেউ দেখে ডিজগাস্টিং। এখন পেয়েছেন না ব্যাথা? বেশ হয়েছে।
লারা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। লোকটার মুখের সামনে তর্জনী উঁচু করে রেগে বলল-

-“ এই সুদর্শন অভদ্র ছেলে এভাবে কেউ ফেলে দেয়? আমি ব্যাথা পেয়েছি কোমড়ে মলম কিনে দেন।
লোকটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লারা কে পা থেকে মাথা অব্দি দেখে নিলো। তাকে সুদর্শন ও বলছে আবার অভদ্র ও বলছে এই মেয়ে। আবার মলম ও কিনে দিতে বলছে।
-“ আমার টাকা এতো বেশি হয় নি ম্যাম আপনায় মলম কিনে দেওয়ার জন্য। প্লিজ রাস্তা টা এবার দয়া করে ছাড়ুন যেতে দিন।
লারা রাস্তা ছাড়লো না বরং দু হাত মেলে ধরলো।

-“ আগে মলম কিনে দিন তারপর রাস্তা ছাড়বো।
-“ দিব না কিনে মলম। আমার দেখে মনে হচ্ছে না আপনি কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছেন।
লারা এক হাত এবার কোমড়ে দিলো। একটু বেকা হয়ে হাল্কা কান্নার মতো করে বলে-
-“ আহ দেখুন কি ব্যাথা মাজায়। ইশ কিনে দেন একটা মলম। বেশি টাকা নিবে না। আমি না হয় পরে মলমের টাকা রিটার্ন করে দিবো।

লোকটা হেঁসে উঠলো লারার এক্টিং দেখে। লারা আরেক দফা ফিদা হয়ে গেলো লোকটার হাসি দেখে।কোমড়ে রাখা হাতটা আপনা-আপনি বুকে চলে আসলো। লোকটা মুখ থেকে হাসি সরিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল-
-“ চলুন ফার্মেসি তে।
লারা লোকটার পেছন পেছন হাঁটা ধরলো। ফার্মেসীর কাছে এসে লোকটা লারা কে একটা ব্যাথার মলম কিনে দিলো। তারপর বলল-

-“ এবার শান্তি?
লারা মলম টা নেড়েচেড়ে দেখে বলল-
-“ ব্যাথা কমবে তো?
-“ হুমম।
-“ যদি না কমে তখন?
-“ তখন কি?
-“ সেটাই তো তখন কি? যদি ব্যাথা না কমে।
-“ কমবে।
-“ গ্যারান্টি দিচ্ছেন?
-“ হ্যাঁ বাবা দিচ্ছি।

বিরক্ত হয়ে বলল কথাটা। তারপর পাশ কেটে চলে যেতে নিলে লারা জিজ্ঞেস করে-
-“ সুদর্শন অভদ্র ছেলে আপনার নাম কি?
লোকটা পেছন ফিরে তাকালো। লারার দিকে চেয়ে বলল- তামিম ফারুকী।
অতঃপর লোকটা চলে গেলো। লারা ঠোঁটের কোনে বিরবির করলো নাম টা তামিম ফারুকী। তারপর মলমের দিকে চেয়ে বলল-
-“ আমাদের আবার দেখা হোক সুদর্শন অভদ্র ছেলে।

তন্ময় অফিসে বসে দীর্ঘ উনিশ বছরের পুরোনো এক ফাইল ঘেঁটে দেখছে। ফাইল টা তৃষার। সেই কেস টা আবার ওপেন করবে তন্ময়। সব খুটিনাটি ক্লু এর সূত্র ধরে বোনের খোঁজ লাগাবে। সায়ান এসেছে সবেমাত্র অফিসে। এসেই তন্ময় কে ফাইল ঘাটাঘাটি করতে দেখে সায়ান এগিয়ে আসে।
-“ কিসের ফাইল দেখছেন তন্ময়?
তন্ময় তাকালো সায়ানের দিকে। তারপর আবার ফাইলের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ উনিশ বছরের আগের একটা কেস আবার ওপেন করছি।
-“ কিসের কেস?
-“ খাঁন পরিবারের রত্ন কে খুঁজে পাওয়ার কেস।
-“ আমাকে কি একটু খুলে বলা যাবে? যদি সমস্যা না থাকে আপনার তাহলে। আমিও হেল্প করতে চাই যদি পারি তাহলে।
-“ জ্বি অবশ্যই।
সায়ান চেয়ার টেনে বসলো। তন্ময় ফাইল টা বন্ধ করে দিলো।

-“ এই ফাইল টা হচ্ছে তুষার খাঁনের মেয়ে তৃষা খাঁনের মিসিং হওয়ার। তুষার খাঁন কে নিশ্চয়ই চিনেন?
-“ হ্যাঁ আপনার বাবা, এমপি তুষার খাঁন।
-“ রাইট। উনিশ বছর আগে তার মেয়েকে এক মহিলা চুরি করে নিয়ে যায়।
-“ কিভাবে?
তন্ময় সেদিনের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললো সায়ান কে। সায়ান চুপচাপ সব শুনলো।

-“ আপনার মনে হয় এতো বছর পর কেস টা ওপেন করলে আপনি আপনার বোন কে খুঁজে পাবেন?
-“ চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি? এমন ও হতে পারে তৃষা কে খুঁজতে গিয়ে এমন কোনো রহস্যের জট খুলে ফেললাম যা একদম চমকে দিলো।
-“ বেশ সাহায্য করবো আপনার বোন কে খুঁজে বের করতে। ফাইল টা কি আমি নিতে পারি।
-“ হুমম।
-“ ওকে,ওদিকের খবর কিছু জানেন?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১০

-“ মিস্টার জনস এসবের মধ্যে নেই। ওনাকে টোপ হিসেবে জাস্ট ইউজ করা হয়েছে।
-“ মানে?
তন্ময় রাহাতের বলা সব কথা সায়ান কে বলে। সায়ান সব শুনে। এই কেস টা এতো সহজে ক্লোজ হবে না যা বোঝা গেলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১২