আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৫

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৫
Raiha Zubair Ripte

সময় টা ছিলো ফাগুন মাসের প্রথম সপ্তাহ। সেদিন আকশ জুড়ে রোদের দেখা নেই। চারিপাশ ফাগুনের শীতল হাওয়া বইছে। ছেলেমেয়ে রা বাহারি রকমের পোষাক পড়ে ঘুরছে৷ সেদিন তন্ময় সিআইডি ব্যুরো তে বসে ল্যাপটে দোলনের পিক দেখছে।

আগেই ইনফর্ম পেয়েছে এই মেয়ে কে পা’চার করার প্ল্যান করছে নারী পা’চার কারী রা৷ যাদের বিপদ অতি নিকটে। রাহাত কে পাঠিয়ে ছিলো মেয়েটার ঠিকানা সহ সব রকমের খবরাখবর কালেক্ট করতে। রাহাত সব খবরাখবর এনে জানায়,মেয়েটা ডক্টর মরিয়ম মান্নানের ভাইয়ের মেয়ে,নাম দোলন৷ ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। এইচএসসি ব্যাচ৷
মরিয়ম মান্নানের নাম শুনে বার কয়েক ঠোঁটে আওড়ায়। মোবাইল ফোন থেকে ডক্টর মরিয়ম মান্নানের ছবি বের করে বলে-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ ইনিই সেই ডক্টর মরিয়ম মান্নান?
রাহাত ছবি টা দেখে বলে-
-“ হুমম ইনিই৷ তুই চিনিস?
-“ হ্যাঁ, ইনি আমাদের পরিচিত ডক্টর। উনার ভাইয়ের মেয়ে দোলন?
-“ হ্যাঁ। গ্রাম থেকে এসেছে মাস কয়েক হলো। এখানেই পড়াশোনা করছে এখন।
-“ কোনো রিলেশন টিলেশন করছে? বয়ফ্রেন্ড আছে?

-“ না। ইন্টোভার্ট টাইপের মেয়ে। কলেজে যায় তাও সাথে বোন বা মরিয়ম মান্নান যায়৷ একা যায় না।
-“ বোন কে?
-“ মরিয়ম মান্নানের মেয়ে মিথিলা।
-“ এই দোলন কেই নেক্সট নিশানা করা হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখার ব্যাবস্থা কর।
-“ সে ব্যাবস্থা করে এসেছি। এবার এই কাজকর্ম বন্ধ করে চল বাহিরে ফাগুনের হাওয়া গায়ে মেখে আসি৷ লিখন ব্যাটা বউ নিয়ে ঘুরতে গেছে। এবার চল তুই আমি সাব্বির মিলে অল্প সময়ের ট্যুর দেই।
তন্ময় মানা করলো না। অফিস থেকে বের হয়ে সাব্বির কে ইনফর্ম করে আসতে বলে। তারপর তিনজন মিলে ট্যুর দেয় ঢাকার ধানমন্ডি লেকে।

লেক টা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারিদিকে যুগলবন্দী প্রেমিক প্রেমিকা রা হাতে হাত ধরে হেঁটে চলছে কেউ বা লেকের জলের ধারে বসে আছে। তন্ময় বিরক্ত হলো এমন প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে তার মতো সিঙ্গেল মানুষ কে নিয়ে আসায়। সাব্বিরের মাথায় চড় মে’রে বলে-

-“ শা’লা এটা কই নিয়া আসছস। এটা তোদের ট্যুর? এইখানে শান্তি মতো নিশ্বাস নিতে পারবো? দেখ সব জোড়া জোড়া ঘুরতেছে খালি আমরাই ত্রিপল। তাও জেন্ডার মেইল৷ ব্যাটা চল এখান থেকে।
সাব্বির তন্ময়ের কথায় পাত্তা দিলো না। রাহাত তন্ময়ের কাঁধে হাত দিয়ে বলল-

-“ রিলাক্স ব্রো,এমনি এমনি আসি নি এখানে আমরা।
-“ তাহলে কিসের জন্য আসছস?
-“ ব্যাটা তুই ই তো বললি দোলনের উপর চব্বিশ ঘন্টা নজর রাখতে। সেজন্য ই তো আসা।
তন্ময় অবাক হয়ে বলে-

-“ এখানে দোলন আছে?
-“ আরে হ। এখন খুঁজে দেখতে হবে কই আছে।
-“ তুই যে বললি ওর বয়ফ্রেন্ড বফ কিছুই নাই। মাইয়া ইন্টোভার্ট তাইলে এমন জায়গায় আসে কিভাবে?
-“ আরে ধূর ওর ফুপির লগে আসছে। ঐ যে ঐ তে গাছের নিচে বসে আছে।

তন্ময় তাকায়। বাসন্তি কালারের শাড়ি পরিহিত মেয়েটার দিকে। মরিয়ম মান্নানের পাশে চুপ হয়ে বসে আছে। মাথায় বেলি ফুলের গাজরা,লম্বা চুল গুলো খোলা৷ কুচকুচে কালো মনির অধিকারি দুটো চোখ, মুখে হাসির ছিটেফোঁটা নেই। থমথমে মুখ করে সামনে তাকিয়ে আছে। আর একটু পরপর কপালে দু ভাজ পড়ছে। তবুও তন্ময়ের কাছে মায়াবী লাগলো ঐ থমথমে মুখশ্রী টা
এক দেখাতেই তন্ময় থমকে গেলো। এইরকম মেয়ে পা’চার করতে চাইবে না নারী পা’চার কারী রা তো কোন রকমের মেয়ে পা’চার করবে?
তন্ময় কে এক দৃষ্টি নিয়ে দোলনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাব্বির ভ্রু কুঁচকায়।

-“ তন্ময় তুই ঠিক আছিস?
তন্ময় তড়িৎ গতিতে দৃষ্টি সরালো। পরপর দুটো শ্বাস নিলো। হার্ট তো থেমেই গিয়েছিলো তন্ময়ের বাপরে বাপ। এই মেয়ে তো ছবির চাইতেও দ্বিগুণ সুন্দর।
-“ আ… আমার কিছু ঠিক নাই ভাই। আমি বাসায় যাচ্ছি তোরা পাহারা দে।
কথাটা বলে তন্ময় চলে আসে। সাব্বির রাহাত দু’জনের মুখের দিকে তাকায়। হঠাৎ করে কি হলো এই ছেলের?
কথাটা বলে থামলো তন্ময়। সায়ান তাকিয়ে আছে এখনও তন্ময়ের মুখের দিকে।

-“ আমার সন্দেহই ঠিক হলো তন্ময়। আমি বেশ বুঝেছিলাম ঐ গানের মানে। দোলনের সাথে ফাস্ট দেখা কখনই ঐ বিয়ের দিন হতেই পারে না।
তন্ময় স্মিত হাসে। ব্যুরো তে আসতে না আসতেই সায়ান প্রশ্ন করে –
-“ ঐ গান টার মানে কি তন্ময়?
তন্ময় মুচকি হাসে৷ তন্ময় জানতো এই প্রশ্নের সম্মুখীন সে হবে। তাই আর ধোঁয়াশা না রেখে সব বলে দিলো।

-“ আপনি বেশ ইন্টেলিজেন্ট মিস্টার সায়ান মাহবুব।
-“ সে আমি শুরু থেকেই।
-“ হুমম বোঝা যায়। আচ্ছা শরাফত উল্লাহ এর খবর কি?
-“ উনি ভেতর অনেকটাই গড়মিল আছে। আমরা উনার বাসা থেকে চলে আসার পর উনি বার কয়েক একটা নম্বরে কথা বলেছে। নম্বর টার লোকেশন ট্র্যাকিং করা হচ্ছে।
এরমধ্যে ফারাহ্ কেবিনের দরজায় নক দেয়। সায়ান সেদিকে তাকায়। ফারাহ্ কে ভেতরে আসতে বলে। ফারাহ্ ভেতরে ঢুকে। সায়ান বসতে বলে। ফারাহ্ তন্ময়ের পাশে চেয়ার টেনে বসে।

-“ লোকেশন ট্র্যাকিং হলো?
-“ না স্যার। ফোন বন্ধ। এর আগে যখন কথা বলেছিলো তখন লোকেশন মিরপুর দশ নম্বরে ছিলো। এরপর থেকে ফোন বন্ধ।
-“ সিম টা কার নম্বরে?
-“ ফ..ফারহান আহমেদ।
তন্ময় চকিতে তাকালো ফারাহ্ র দিকে। এই ফারহান ই তো ফয়সাল আহমেদ। উনি তারমানে বাংলাদেশে!
-“ ফারহান আহমেদের ছবি টা আমায় সেন্ড করো তো ফারাহ্।
তন্ময়ের কথায় ফারাহ্ তাকালো তার দিকে।

-“ আমি উনার ছবি পাবো কোথায়?
-“ আশ্চর্য সিম কার্ড যেহেতু যার নামে আছে জানতে পেরেছো সেখানে তো ছবি থাকারই কথা।
-“ ওহ্ হ্যাঁ পাঠাচ্ছি।
ফারাহ্ কেবিন থেকে বের হওয়ার মিনিট কয়েকের মধ্যে তন্ময়ের হোয়াটসঅ্যাপে ছবি টা পাঠায়। তন্ময় ছবি টা দেখে মুচকি হাসে। তার ধারনাই সঠিক। ফারহান আহমেদ ওরফে ফয়সাল শেখ তার মানে বাংলাদেশে।

পাঁচ তলার এক হোটেলে অবস্থান করেছে ফারহান আহমেদ ওরফে ফয়সাল শেখ। তার পছনে জোকের মতো পড়েছে পাঁচ সিআইডি সাথে তুষার ও। সব প্ল্যান কি তাহলে ভেস্তে যাবে? রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সামনেই আপাদমস্তক হয়ে আছে এক মেয়ে । ফারহান এগিয়ে গেলো সেদিকে। গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলল-

-“তোমাকে এতদূর এনে কি হলো আমার বলো? কোনো কাজ তো প্রোপার্লি ফিনিশ করতে পারো নি। না পারলে তন্ময় কে মুঠোয় আনতে আর না পারলে সব খবরাখবর সময় মতো দিতে। কি দরকার ছিলো আমার নাম টা বলার গাধা মেয়ে। অন্য নাম বলা যেতো না?
ফারাহ্ ব্যাথায় চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। এটা বাবা নাকি পাষাণ। সবসময় খালি নিজের স্বার্থ বুঝে।

-“ ব..বাবা ব্যাথা পাচ্ছি।
-“ ব্যাথা পাওয়ার জন্য ই ধরেছি। তোমার বোকামির জন্য আমার সব প্ল্যান ভেস্তে যাচ্ছে ইডিয়ট মেয়ে। তোমাকে এমনি এমনি আমি সিআইডি হতে বলি নি। আমাকে সব অপকর্ম থেকে বাঁচাবে বলে বানিয়েছি৷ যদি বাঁচাতে না পারো সেদিনই তোমার বাঁচার শেষ দিন।
ফারাহ্ র ঘৃণা হলো জন্মদাতা পিতাকে দেখে। ছোট থেকে আলাদা রেখেছে ফারাহ্ কে। তার মা কে সে এটাও জানে না। বাংলাদেশের এক সেবিকা মালিহা নামের মহিলা ফারাহ্ র দেখাশোনা করতো । আর মালদ্বীপ ভাই আর বাবা থাকতো।

-“ আমি আদৌও তোমার নিজের মেয়েতো বাবা? নিজের মেয়ে হলে এমন টা করতে পারতো কোনো বাবা? সন্দেহ হচ্ছে আমার জন্ম পরিচয় নিয়ে।
ফারহান চকিতে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো ফারাহ্ র দিকে।
-“ গেট লস্ট অফ মাই রুম। তা না হলে ভয়ংকর কিছু করে ফেলবো বলে রাখলাম।

ফারাহ্ ঘৃণা নিয়ে বেরিয়ে আসলো। ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে। কান্না আসছে বুক ফেটে। ছোট বেলা থেকেই নিজের স্বার্থের জন্য ব্যাবহার করছে ফারাহ্ কে। ফারাহ হোটেল থেকে বের হয়ে সোজা নিজের বাড়ি চলে আসলো। এই বড় বাড়িতে একমাত্র ফারাহ্ থাকে। বাবা ভাই থেকেও দুনিয়াকে বলে বেড়াতে হয় তার কেউ নেই। এই কষ্ট কাকে দেখাবে সে? কে বুঝবে তার এই দুঃখ। সোজা ছাঁদে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। তার বুক টা অসহ্য রকমের ব্যাথা হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। এর থেকে তো মৃত্যু যন্ত্রণা বেশি ভালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে এবার বলে উঠল-

-“ কোথায় তুমি মা? আমি তোমাকে ভীষণ মিস করছি। উনি কি করে আমার বাবা হতে পারে? বাবা রা কি এমন হয়? বাবারা তো তাদের ছেলে মেয়েদের সঠিক রাস্তা দেখায়। ভুল থেকে বিরত থাকতপ বলে। কিন্তু আমার বাবা! সে আমাকে ব্যাবহার করছে আইনের থেকে বাঁচার জন্য। তার পরিকল্পিত প্ল্যান সাকসেসফুল করার জন্য৷ আমার এসব করতে ইচ্ছে করে না। আমি স্বাভাবিক ভাবে বাঁচতে চাই। আমি মোটেও বাবার মতো হতে চাই না মা। আমি বাবার মতো অমানুষ নই।

কথাটা বলে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে। পাশেই পড়ে থাকা ফোন টা বেজে চলছে। ফারাহ্ একবার তাকালো। পরিচিত নম্বর। তাচ্ছিল্যের হাসি আসলে ভেতর থেকে৷ কান্না আটকানোর চেষ্টা করে ফোন রিসিভ করলো।

-“ কি হয়েছে ফারাহ্? বাবা কি বলছে তোকে?
-“ কি বলবে? যা বলার তাই বলেছে।
ফাহাদ রাগ সংবরণ করার চেষ্টা চালালো।
-“ গায়ে হাত তুলেছে? সত্যি করে বলবি কিন্তু।

-“ সেটা শুনে তুমি কি করবে ভাইয়া? আদৌও কিছু করতে পারবে? তারই তো রক্ত বইছে শরীরে। সে নিজেও অমানুষ সাথে তোমাকেও বানালো। এখন জোরজবরদস্তি করে আমাকেও বানাতে চাইছে। আমি হাঁপিয়ে গেছি ভাই। আমি তোমাদের মতো এমন পেঁচালো জীবন বইতে পাড়ছি না। তন্ময় কে জোরজবরদস্তি করে ভালোবাসতে বললো। আমি মানুষ আমার কি অনুভূতির মূল্য নেই? তোমাদের ফিলিংস নাই থাকতে পারে।

কারন যাদের মনে মায়া,দয়া স্নেহ নেই তারা আর ভালোবাসার কি করে বুঝবে? জোর কে না হয় তন্ময় কে ভালেবাসার চেষ্টা করলাম। বিনিময়ে কি পেলাম? পেলাম আমি তন্ময় কে? জোর করে আমার ভাগ্যে লিখতে চেয়েছিল বাবা তন্ময় কে। কিন্তু দেখলে তো জোর করে কিচ্ছু হয় না। আমি ভীষণ খুশি তন্ময়ের অন্যত্রে বিয়ে হওয়ায়। তা না হলে আমি কিভাবে ফেইস করতাম তাকে? বাবার সামনে অভিনয় করতে হয় তন্ময় কে নিয়ে। যা আমি আর করতে পারছি না ভাই। হয় আমাকে সুন্দর জীবন দাও আর তা না হলে হলে জীবন একেবারে শেষ করে দাও।

ফাহাদ চুপচাপ শুনলো বোনের কথা। তার ভাইকেও সে তার বাবার মতোই মনে করে! ফারাহ্ কি জানে না তার ভাই তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে? কত যুদ্ধ করে ফারাহ্ এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। আর সেই ফারাহ্ কি না তাকে বলছে এই জীবন টা শেষ করে দিতে? জীবন টা কি এতোটাই মূলহীন হয়ে গেছে?
-“ আমি বাবার সাথে কথা বলছি। আর কাঁদবি না। তোর ভাই এখনও পুরোপুরি অমানুষ হয়ে উঠে নি ফারাহ্। ফিলিংস একটু হলেও এখনও আছে৷ ভাইয়ের উপর কি ভরসা নেই?

-“ আছে বলেই হয়তো এখনও বেঁচে আছি। তা না হলে…
-“ চুপ। ওসব মুখে আনবি না। বড্ড দামি তোর জীবন আমার কাছে। আমার হৃদপিণ্ড তুই।
-“ তাহলে ভাই ফিরে আসো না ঐ জগৎ থেকে। বাবা তো পুরো ডুবে গেছে চলো না তুমি আর আমি দূরে কোনো দেশে চলে যাই।
ফাহাদের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসলো।

-“ সম্ভব না বোন। তবে তোর জীবন আমাদের মতো হবে না। সুন্দর হবে আমি সেই ব্যাবস্থাই করবো।
-“ তোমাদের শেষ টা গিয়ে কোথায় ঠেকবে ভাই?
ফারাহ্ -র গলা ধরে আসলো।
-“ শেষ টা বেশ ভয়ঙ্কর হবে ফারাহ্। আমাদের কিছু হয়ে গেলি নিজেকে স্ট্রং রাখতে পারবি না?
ফারাহ্ এবার কেঁদে উঠলো। তাড় ভাইয়ের কিছু হলে ফারাহ্ ম’রেই যাবে।

-“ ভাই তোমার কিছু হলে আমি ম’রেই যাব। প্লিজ ফিরে আসো না ঐ জগৎ থেকে। আমার জন্য হলেও আসো ফিরে।
ফাহাদ তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ আর সম্ভব না। রাখি এখন,নিজের খেয়াল রাখ।
ফারাহ্ এক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। খুব করে প্রে করলো আল্লাহর কাছে,,কেউ আসুক তার ভাইয়ের জীবনে,কেউ বদলে দিক তার ভাইকে নিজ হাতে। কেউ আসুক তার ভাইয়ের জীবনকে আলোয় ভরিয়ে দিতে। এমন কেউ আসুক যাকে তার ভাই নিজের চাইতেও ভালোবাসুক। এমন কেউ আসুক। এমন একজন আসা ভীষণ জরুরি তার ভাইয়ের জীবনে।

তন্ময় রাহাত দের ইনফর্ম করে জানিয়ে দিয়েছে যে ফয়সাল শেখ বাংলাদেশের কোথাও ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে। প্রতিত্তোরে তন্ময় কিভাবে জেনেছে এটা জিজ্ঞেস করলে তন্ময় এড়িয়ে যায়। রাহাত দের কাজের প্রেশার তাহলে কমলো। এবার শুধু ফাহাদ কে খোঁজা বাকি। দু তিনদিন হলো লারা কে বেশ অন্য রকম লাগে। খুব একটা কথা বলে না,প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয় না। লিখন তো পুরোপুরি মানা করে দিছে লারা কে এই কেসের সাথে ইনভলভ না করতে। সেজন্য কেউ এই কেস নিয়ে লারার সাথে কথা বলে না। রাহাত ভাবলো সেজন্য হয়তো লারার মন খারাপ। সেজন্য রাহাত সাব্বির কে দিয়ে লারা কে ডেকে পাঠালো। লারা আসলো। রাহাত বসতে বললো। লারা বসলো।

-“ কি হয়েছে তোর?
লারা হাসার চেষ্টা করে বলল-
-“ কি হবে আবার আমার? কিছুই হয় নি।
-” রেগে আছিস আমাদের উপর, আমরা এই কেসে তোকে নেই নি বলে? আচ্ছা মন খারাপ করিস না। তুই আমাদের সাথেই কেস সল্ভ করবি। এখন আর বেশি প্রেসার নেই কাজের। তুই দু একটা ভুল করলে সামলে নিবো। আমরা এখন ফাহাদ কে খুঁজে বের করবো। এই যে ফাহাদের ছবি,দেখে নে।
কথাটা বলে রাহাত ছবিটা লারার দিকে এগিয়ে দিলে লারা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে উঠে পড়ে।

-“ আমার ছবি টবি দেখতে হবে না। আমার ভালো লাগছে না,রুমে গেলাম। ঘুম পাচ্ছে।
লারা চলে গেলো। রাহাত এখন অনেকটাই অবাক হলে। এ তো সেই আগের লারা না। কিছুতে হয়েছে ওর।
-“ সাব্বির লারার দিকে নজর রাখিস তো।

লারা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে রইলো এই আশায় যদি তামিম ফারুকী একটু মায়া করে তাকে মেসেজ দেয়। নাহ্ দিলো না। এক দেখাতেই এই ছেলেকে মন দিয়ে ফেলছে লারা। ছেলেদের মন এতো পাথর কেনো? লারা কাঁপা কাঁপা হাতে তামিম ফারুকীর নম্বরে কল করলো। বার দুয়েক রিং হতেই কল রিসিভ হলো। লারার বুক ধক করে উঠলো। ছেলেটা কি জানে তার এই ফোন রিসিভ করাতে লারার আঁটকে থাকা শ্বাস এক নিমিষেই দূর হয়ে গেলে। ছেলেটা কি এখনও বুঝে নি তার হাবভাবে যে লারা তাকে ভালোবেসে ফেলছে। ওপাশ থেকে ঘনঘন শ্বাস ফেলার শব্দ ভেসে আসলো। কয়েক সেকেন্ড পর তামিম ফারুকী বলে উঠল-

-“ কেমন আছেন মিস লারা?
লারা কি জবাব দিবে? বলবে সে ভালো নেই? তার ভালো থাকাকে হারাম করে দিছেন। কোনোরকমে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল-
-“ জ..জ্বি ভালো আছি। আপনি?
-“ এই তো ভালোই আছি। ফোন দিয়েছেন যে কোনো সমস্যা? কোমড়ের ব্যাথা সেরেছে?
-“ হুমম সেরেছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা। কিছু বলবেন?
লারার ইচ্ছে করলো এই মুহূর্তে বলে দিতে আই লাভ ইউ তামিম ফারুকী। কিন্তু বলা হলো না।

-“ মেসেজ সিন করে রেখে দিচ্ছিলেন রিপ্লাই দিচ্ছিলেন না সেজন্য ফোন দিলাম।
-“ আমাদের তো বেশি কথা বলা উচিত না মিস। এই বেশি কথা বলাই না আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। অভ্যাস জিনিস টা ভীষণ খারাপ, তার চাইতেও মায়া জিনিস টা বড্ড বাজে বুঝলেন মিস লারা? মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে অভ্যাস পরিবর্তন যায় কিন্তু একবার মায়ায় পড়লে সেটা থেকে বের হওয়া যায় না। বুঝতে পেরেছেন?

-“ হুমম বুঝলাম। তারমানে এটাই আমাদের শেষ কথা, শেষ দেখা?
-“ হতে পারে।
-“ শেষ বার দেখা করা যায় না? আমি কোনো কিছু চেপে রাখতে পারছি না। কিছু বলতে চাই।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৪

-“ আমি জানি আপনি কি বলবেন। তবে আপনি যখন চাইছেন তাহলে শেষ বারের মতো দেখা করবো। এরপর সারাজীবনের মতো আমায় মুছে ফেলবেন স্মৃতি থেকে।
ফোন কে’টে গেলো। লোকটা বলল স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে৷ এটা কি সম্ভব? মানুষ কি কোনো ডিভাইস যে ডিলেট বাটনে ক্লিক করলো আর সব স্মৃতি মুছে গেলো?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৬