আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৬

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৬
Raiha Zubair Ripte

টানা দু’দিন ভারি বৃষ্টি পাত হলো মালদ্বীপ মালে শহরে। এমন বৃষ্টি পাত খুব কমই দেখা গেছে এর আগে। দুটো দিন হোটেল থেকে বের হতে পারে নি রাহাত রা। রাস্তাঘাটে পানি উঠে গেছে। এই শগরের মেয়র আপাতত সাময়িক সময়ের জন্য গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে এই মালে শহর কে দেখছে রাহাত,সাব্বির।

লিখন এখনও ঘুমে বিভোর। রাহাতের হাতে ব্লাক কফি। পরপর চুমু দিচ্ছে সেই ধোঁয়া উঠা গরম কফির মগে। এই কেইস টা সল্ভ হলেই খুব শীগ্রই রাহার বাড়ির লোকেদের সাথে কথা বলবে তাদের বিয়ে নিয়ে। আপাতত এই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সেই সময়ই গুনছে রাহাত। মালদ্বীপ আসার পর মেয়েটার সাথে একটু ও কথা হয় নি। কি জানি রেগে আছে কি না কে জানে? আজ বিকেলে রাহাত ফোন দিবে প্রেয়সী কে দেখবে আদৌও অভিমান করে বসে আছে কি না।
সাব্বির বেলকনিতে থাকা চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো। রাহাত সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ কিরে ব্যাটা তোর বিয়ের কি খবর?
সাব্বির ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কিসের বিয়ে?
-“ সেদিন যে বললি তোর চাচি না কে যেনো তোর জন্য মেয়ে দেখছে।
-“ আরে ধূর বাদ দে তো। আমি ২৬ বছরের একজন প্রাপ্ত বয়সের পুরুষ আর আমার জন্য কি না দেখে ১৬-১৭ বছর বয়সের মেয়ে ভাবা যায়!
রাহাত কথাটা শুনে মুচকি হাসে৷ ইয়ার্কি মে’রে বলে-

-“ সমস্যা কি বুড়ো হয়ে কচি বউ পাবি। এনজয় করবি শুধু।
-“ এনজয় এর মায় রে বাপ। রাগাস না ভাই ।
-“ মিলিয়ে নিস আমার কথা,তোর কপালে কচি বউই আছে।
-“ বিয়েই করবো না শা’লা।
-“ ম’রে যা,বেঁচে থাকা লাগবে না তোর।
-“ পিংক কালারের বিষ এনে দে খেয়ে ম’রে যাই।
-” লেডিস শা’লা।

-“ চপ। এই বা’লের কেস তাড়াতাড়ি সল্ভ করার চেষ্টা কর। এই বা’লছাল আর ভালো লাগছে না। ঐ গোলামের পুত ফাহাদ কোন গর্তে গিয়ে লুকায় আছে আল্লাহ মাবুদই জানে। শা’লার পু রে পাইলে একচোট ঝাঁটা পিটা করবো তারপর রিমান্ডে নিবো। দশ দিন না খাইয়ে রাখবো। পাঁচ দিন মাইরের উপর রাখবো।
রাহাত ভরকে গেলো হুট করে সাব্বির কে রেগে যেতে দেখে।

-“ বা’ল কি হইলো তোর আবার এতো চেতিস ক্যান?
-“ আমি বাংলাদেশ যেতে চাই ভাই। এই শহর ভালো লাগছে না।
-“ ক্যান?
-“ দেখিস না টানা দু’দিন একটু বৃষ্টি হতে না হতেই লকডাউন ঘোষনা করে দিলো। দেখিস এই ফাহাদ ও ওর বাপের মতো ভাগবে বাংলাদেশ, আর আমরা ফাউ ফাউ পাগলের মতো খুঁজতে থাকবো।
রাহাত ঠোঁট কামড়ে কিছু ভাবলো। সাব্বির ভুল কিছুতো বলেনি। ফাহাদ জেনে গেছে তাদের বাপ ছেলের পেছন ওরা লেগে পড়ছে। নিশ্চয়ই কিছু ঘটাবে। লিখন আড়মোড়া ভেঙে বিছানা থেকে উঠলো। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-

-“ কি হইছে?
রাহাত জবাব দিলো-
-“ না কিছু হয় নি। রুমে হাত গুটে আর বসে থাকা যাবে না। আজ মিস্টার জনস এর কাছে যাব।
সাব্বির অবাক হয়ে বলল-
-“ এই বৃষ্টিতে!
-“ হুমম কিচ্ছু করার নেই।
বিকেলের দিকে সাব্বির, লিখন,রাহাত মিস্টার জনস এর অফিসে আসে। মিস্টার জনস তার কেবিনেই ছিলো। রাহাত,লিখন,সাব্বির কে দেখে জনস বলল-

-“ পেয়েছেন ওদের?
রাহাত চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে-
-“ না। আপনার কাছে কিছু ইনফরমেশন জানতে এসেছি।
-“ জ্বি বলুন,কি জানতে চান?
-“ ফয়সাল শেখ ও ফাহাদ কে চিনেন কিভাবে?

-“ ফরসাল শেখ কে চিনি আমি সাতাশ বছর ধরে। উনি মালদ্বীপ শহরে তখন নতুন এসেছিল। কাজের কোনো সন্ধান পাচ্ছিলো না। এই মালে শহরেই তার সাথে আমার প্রথম দেখা। আমি গাড়ি মাঝ রাস্তায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেদিন। আশেপাশে গ্যারেজ ছিলো না। এদিকে অফিসের জন্য ও দেরি হয়ে যাচ্ছিল,গুরত্বপূর্ণ মিটিং ছিলো সেদিন। তো সেই রাস্তা দিয়েই ফয়সাল যাচ্ছিল। আমাকে চিন্তিত দেখে এগিয়ে এসেছিল। তারপর জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। আমি আমার সমস্যার কথা বললাম। দ্যান ও গাড়িটা ঠিক করে দিলো।

-“ গাড়ির কি সমস্যা হয়েছিল?
-“ চাকা নষ্ট হয়েছিল। ও গাড়ি ঠিক করার পর ও কে তার পারিশ্রমিক দিতে চাইলে ফয়সাল নেয় না। হাতে পায়ে ধরা শুরু করে একটা জবের জন্য। আমার ও অফিসে লোক লাগতো সেজন্য ওকে আমার অফিসে নিয়ে আসি। সেই থেকেই ও আমার অফিসে জব করে। আগে কর্মচারী ছিলে তার বছর কয়েক পর ফয়সালের কাজে খুশি হয়ে তাকে আমার এসিস্ট্যান্ট করি।

-“ ফয়সাল শেখের স্ত্রী কোথায়? উনার কি এক ছেলেই?
-“ না একটা মেয়ে হয়েছিল ছেলের পর। মেয়েটা নাকি জন্মের পর মা’রা গেছে। আর ফয়সালের স্ত্রী শুনেছিলাম কোনো এক পুরুষের সাথে ভেগে গেছে,ফয়সালের মুখেই বলতে শুনেছিলাম।
-“ উনার স্ত্রী কে দেখেছিলেন কখনও?
-“ না দেখি নি।
-“ ফয়সাল শেখ আর বিয়ে করেন নি পরে?

-“ আমার জানা মতে দ্বিতীয় বিয়ে করে নি।
-“ ফয়সাল শেখ বা ফাহাদের সাথে এরমধ্যে কথা হয়েছে?
-“ না ফোন বন্ধ বলছে।
-“ আপনার ফোন সবসময় কি ওদের কাছেই থাকতো?
-“ হ্যাঁ। বিজনেস কল সব ওরাই রিসিভ করতো।
-“ ওহ্ আচ্ছা এখন আসছি তাহলে।

তিনজন চলে আসলো। রাহাত গভীর ভাবনায় ডুব দিলো। ফয়সাল শেখের মেয়ে হয়েছিল তারপর মা’রা গেছে আর তার স্ত্রী সে অন্য পুরুষের সাথে ভেগে গেছে! কেমন যেনো নুন ছাড়া পান্তা ভাতের মতো লাগছে।
তুলি আজ ডার্ক ব্লু কালারের শাড়ি পড়েছে। স্কুলে অনুষ্ঠান বলে কথা না সাজলে চলে? চুল গুলো হাত খোঁপা করে তাতে বেলি ফুলের গাজরা লাগিয়ে দিলো। আয়নার মধ্যে নিজেকে একবার দেখে বের হলো এতিমখানা থেকে। দোলন ও আসবে আজ। সোজা স্কুলেই দেখা হবে। হয়তো তন্ময় নিয়ে আসবে। কথাটা ভেবেই রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু কোনো রিকশা আসলো না,কিন্তু একটা প্রাইভেট কার এসে থামলো। তুলি ভ্রু কুঁচকালো। গাড়ি টা চেনা চেনা লাগছে। গাড়ির জানালা খুলতেই সায়ানের মুখশ্রীর দেখা মিললো। সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলল-

-“ গাড়িতে উঠুন মিস তুলি।
-“ কেনো?
-“ আপনার ভাইয়া পাঠিয়েছে আপনাকে নিতে।
তুলি আর সময় ব্যায় না করে গাড়িতে উঠে বসলো। সায়ান আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো তুলি কে। মেয়েটা কি আজ হার্ট অ্যাটাক করিয়ে ছাড়বপ নাকি? মেয়েটা যদি ঘুনাক্ষরে ও জানতো তার এই সাজ এক পুরুষের হৃদয় টাকে ক্রমাগত হাতুড়ি পেটা করছে তাহলে কি এই মেয়ে এভাবে সাজতো? সায়ান ঘাড় ঘুরিয়ে নিলো। গাড়ি চলতে লাগলো।

তন্ময় দোলন কে নিয়ে বসে আছে স্কুল মাঠে। আজ স্কুলে ক্রীড়াপ্রতিযোগী ফেস্টিভ্যাল। তন্ময়দের ই স্কুল সেক্ষেত্রে তাদের আসতে হয়। দোলন অফ হোয়াইট কালারের শাড়ি পরেছে। কানের এক পাশে লাল টকটকে গোলাপ যা একটু আগে তন্ময় কিনে নিজ হাতে পড়িয়ে দিয়েছে। তন্ময় ফোন ঘাটছে বসে বসে। দোলন তন্ময় কে দেখে চলছে। তন্ময় ফোনের দিকে তাকিয়েই বলল-
-“ আর কত দেখবে? আমি নিজেও এতো বার তোমাকে দেখি নি দোলন।
দোলন মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

-“ তা কেনো দেখবেন। আশেপাশে দেখুন কত সুন্দর রমনীগণ আপনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
তন্ময় মুচকি হাসলো যা দোলনের চোখে পড়লো না। ফোন টা সন্তপর্ণে পকেটে ঢুকিয়ে বলে-
-“ মিসেস শাহরিয়া আর ইউ জেলাশ!
দোলন ভেঙচি কাটলো।
-“ নিজের ব্যাক্তিগত জিনিস নিয়ে কোন মুর্খ নারী জেলাশ হয়?
-“ এই তো উদাহরণ স্বরূপ তুমি।
-“ মোটেও না। আমি জেলাশ নই,তবে বিষয় টা বাজে। কোনো বিবাহিত পুরুষের দিকে এভাবে ঢ্যাবঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকা। ঠিক কি-না বলেন?

-“ হ্যাঁ হ্যাঁ ১০০% ঠিক।
-“ হুম সেটাই। আচ্ছা তুলি আপু আসছে না কেনো?
-“ সায়ান তো গেলো আনতে এসে যাবে।
দোলন এদিক ওদিক তাকালো। দূর থেকে তুলি আর সায়ান কে এগিয়ে আসতে দেখে বলে-
-“ ঐ তো তুলি আপু আর সায়ান ভাইয়া আসছে।
তন্ময় তাকালো। তুলি এগিয়ে আসলো।

-“ কেমন আছো ভাইয়া ভাবিপু?
-“ ভালে আছি। সাজগোছ করে তো দিছিস সব সময় নষ্ট করে। তোরা মেয়েরা এতো সাজিস কেনো বোন?
তুলি ভেঙচি কাটলো। দোলনের পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল-
-“ সেটা যদি তুমি বুঝতে ভাইয়া তাহলে আর ভাবির কপাল খুলে যেতো। সে যাইহোক খুব বেশি দেরি হয় নি।
সায়ান তন্ময়ের পাশে চেয়ার টেনে বসলো। তুলির দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে৷ তন্ময় সায়ান কে চুপচাপ দেখে বলে-

-“ হোয়াট’স হ্যাপেন্ড সায়ান, আর ইউ ওকে?
-“ ইয়াহ,আ’ম ওকে।
তুলি তাকালো। সায়ানের শরীর ঘামে ভিজে একাকার। তন্ময় বসা থেকে উঠলো। দোলন তুলির দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ কিছু আনবো? ঠান্ডা কিছু। যা গরম পড়েছে।
তুলি বলে উঠল-
-“ ভাইয়া তোমার ফ্রেন্ড কে জিজ্ঞেস করো তার বেশি প্রয়োজন। সে একদম ভিজে একাকার হয়ে গেছে। আমার আর ভাবিপুর জন্য কোন আইসক্রিম আনো।
তন্ময় সায়ানের দিকে তাকালো।

-“ আপনার জন্য ও কি কোন আইসক্রিম আনবো সায়ান?
-“ না আমার জন্য কিছু আনতে হবে না তন্ময়। আপনি চলুন সাথে যাচ্ছি।
সায়ান উঠে দাঁড়ালো। তন্ময় আর সায়ান চলে গেলো।
দোলন তুলির দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে-
-“ তোমাকে কি সুন্দর লাগছে তুলি আপু।
তুলি হাসলো। দোলনের থুতনিতে হাত দিয়ে বলল-
-“ তোমাকে একদম শুভ্র পরী লাগছে ভাবিপু।

তন্ময় আইসক্রিম দোকানের সামনে এসে আইসক্রিম কিনলো। বিল পে করতে গিয়ে সায়ান বাঁধা দিলো। সে বিল পে করবে। তন্ময় মানা করলো কিন্তু সায়ান শুনলো না। আইসক্রিম এনে দোলন তুলি কে দিলো। দোলন আইসক্রিম টা নিলো। তুলির জন্য দুটো এনেছে তন্ময়। কারন জানে তুলির একটা আইসক্রিমে হবে না। তুলি একটা আইসক্রিম নিলো। তন্ময় বলল-

-” দুটোই তোর জন্য।
তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুমি তো আইসক্রিম খাও না। এটা উনাকে দাও।
-“ সায়ান খাবে না আইসক্রিম। তুই খা।
-“ সায়ান ভাইয়া আপনি আইসক্রিম টা খাবেন না?
এই প্রথম তুলি সায়ান কে ডাক দিলো। ভাইয়া ডাক টা কেমন মানান সই লাগলো না সায়ানের কাছে। সায়ান কে কেনো ভাইয়া ডাকবে?সায়ান কি তার ভাই লাগে আশ্চর্য! বিরক্তিবোধ হলো। না তাকিয়েই বলল-
-“ খাব না।

তুলি আর জোর করলো না। সায়ান আড়চোখে তাকালো। কি আশ্চর্য না করেছে বলে কি দ্বিতীয় বার আর বলবে না? সায়ানের মুখ আগের থেকেও বেশি গম্ভীর হলো।
সন্ধ্যার আগ দিয়ে বৃষ্টি থামলো। লারা ছাতা মাথায় নিয়ে তামিম ফারুকীর বলা জায়গায় এসে অপেক্ষা করছে। কিছুটা আগেই এসেছে নির্ধারিত সময়ের। তবে তামিম ফারুকীর দেখা নেই। আসবে তো লোকটা? প্রায় ঘন্টা খানেক হয় লারা একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। তামিম ফারুকীর দেখা নেই।

লারার কেনো যেনো মনে হলো তামিম ফারুকী আসবে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ফোন দিলো ফোন সুইচ অফ। আশ্চর্য ফোন কেনো বন্ধ? তামিম ফারুকী কি তাহলে মিথ্যা বললো লারা কে? সে তো বললো আসবে তাহলে কেনো আসছে না? লারা পাগলের মতে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলো ফলাফল জিরো। এদিকে রাত ও হয়ে আসছে। লোকটা আসতে পারবে না তাহলে তো বলে দেওয়া উচিত ছিলো যে সে আসতে পারবে না। লারা রাত ১০ টা অব্দি অপেক্ষা করলো তামিম ফারুকীর। টানা ৫ ঘন্টা অপেক্ষায় থাকার পর এক আকাস সম অভিমান নিয়ে হোটেলের দিকে হাঁটা ধরলো। এভাবে একটা মেয়েকে আসতে বলে না এসে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখা কোনো ভালো ম্যানার্সের মধ্যে নিশ্চয়ই পড়ে না।

অতিরক্তি হয়তো করে ফেলছে লারা যার জন্য তামিম ফারুকী এভাবে ইগনোর করছে। লারা শেষ বারের মতো তামিম ফারুকীর নম্বরে কল করলো। এবার কল ঢুকলো। রিসভ হলো।
-“ এই আপনি কই হ্যাঁ? আমি সেই কখন থেকে এসে অপেক্ষা করছি। আপনার ভেতর ম্যানার্স বলতে কিছু নেই? আসতে পারবেন না বলে দেন নি কেনো আগে?
তামিম ফারুকী অবাক হলো। মেয়েটা এখনও দাঁড়িয়ে আছে? সে তো ভেবেছিলো লারা হয়তো চলে যাবে আসতে দেরি করছে দেখে। কিন্তু মেয়েটা এমন বোকার মতে অপেক্ষা করবে কে জানতো?

-“ আপনি এখন কোথায়?
-“ হোটেলে ফিরে যাচ্ছি।
-“ আমি আসছি।
ফোন কেটে গেলো। লারার মুখে হাসি ফুটলো। মিনিট দশেকের মধ্যে তামিম ফারুকীর দেখা মিলল।ছাতা মাথায় করে এগিয়ে আসছে।
-“ আপনি এতো বোকা আগে জানা ছিলো না মিস লারা।
লারা অবাক হয়ে বলল-

-“ বোকার কি দেখলেন?
-“এই বৃষ্টি তে কেউ এভাবে অপেক্ষা করে আশ্চর্য! দেখছেন আসছি না তাহলে তো হোটেলে ফিরে যাওয়া উচিত ছিলো।
-“ আমি তো বিশ্বাস করে এসেছিলাম আপনি আসবেন।
-“ আমি মোটেও আসতাম না আপনি ফোন না দিলে। এবার শুনুন, পাগলামি বাদ দিন।আপনার পাগলামি দিনকে দিন বৃদ্ধি পাবে আপনার সাথে আমার যোগাযোগ থাকলে। সেজন্য বলছি আমি আপনাকে সব জায়গা থেকে অলরেডি ব্লক করে দিছি। এটাই আপনার আমার শেষ দেখা।

-“ আশ্চর্য এভাবে বলছেন কেনো? আমি আপনার উপর কেমন যেনো দূর্বল হয়ে গেছি।
-“ বুঝতে পেরেছি দেখেই এটা বলেছি। যোগাযোগ না থাকলে এই দূর্বলতা কে’টে যাবে।
-“ আপনি কি কাউকে ভালোবাসেন? আই মিন পছন্দের কেউ আছে?
-“ না।
-“ তাহলে? সমস্যা কোথায়?

-“ সমস্যা একটাই আমি আপনার উপর তেমন কিছু ফিল করতে পারি নি। এজ এ ফ্রেন্ড হিসেবেই কথা বলেছি। কিন্তু মেয়েদের এই একটা স্বভাব। একটু কথা বলতে না বলতেই এমন আবেগে আপ্লূত হয়ে যায় যে কি বলবো। তাই আপনাকে আগেই হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছিলাম।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৫

এখনও দিচ্ছি। আপনি আর আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই মেরুর মানুষ। তাই এসব চিন্তা বাদ দিন। যেই কাজে এসেছেন সেই কাজে সফল হন বেস্ট অফ লাক।
তামিম চলে গেলো। লারা তাকিয়ে রইলো তামিম ফারুকীর যাওয়ার পানে।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৭