আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৭

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৭
Raiha Zubair Ripte

কে’টে গেছে দুদিন। পুরো মালে শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে ফাহাদ কে রাহাত রা কিন্তু ফলাফল শূন্য। এখানকার পুলিশ অফিসার দের সাহায্য নিতে হয়েছে। এয়ারপোর্ট গুলোতে হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে,এই ফাহাদ কে দেখামাত্রই যেনো ইনফর্ম করা হয় তাদের। আজ মালে শহরের অন্য প্রান্তে গিয়েছিল রাহাত রা। খবর পেয়েছিল ফাহাদ কে কোনো এক দোকানে দেখা গেছে। কিন্তু রাহাত রা যেতে যেতেই উধাও। ক্লান্ত শরীর নিয়ে হোটেল ফিরে আসলো। ক্ষিধেও পেয়েছে। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে গেলো।

লারা রুমে বসে আছে। দু’টো দিন নিজেকে সময় দিয়েছে তামিম ফারুকী কে ভুলার জন্য কিন্তু হিতে বিপরীত হচ্ছে। আরো ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে। কিন্তু যা ভাগ্যে নেই তা নিয়ে এতো মন খারাপ হলে কি চলে? লারা তপ্ত শ্বাস ফেললো। অনেক তো হলো কাজে ফাঁকি দেওয়া। এভাবে চলতে থাকলে সিআইডি চাকরি টাও চলে যাবে। তবে লারা খুব করে চায় তামিম ফারুকীর সাথে আবার দেখা হোক। একটু নতুন ভাবে। গা ঝাড়া দিয়ে বসা থেকে উঠলো। তারপর ফোন টা নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলো। তন্ময়ের নম্বরে কল করলো। ফোন রিসিভ হতেই লারা বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আমি বিডি ব্যাক করতে চাই তন্ময়।
তন্ময় ভ্রু কুঁচকালো। রাহাতের থেকে জেনেছে লারা বেশ ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। কিছুটা অন্য রকম লাগো।
-“ কেনো কি হয়েছে?
-“ কিছু না। অন্য কোনো কেস থাকলে ওটায় আমাকে দে। আমি এই কেসে থাকতে চাই না।
তন্ময় সরু চোখে বলল-
-“ তুই ছিলিই বা কবে এই কেসে। সে যাইহোক, আমিও চাচ্ছিলাম না তোকে মালদ্বীপ রাখতে। দুদিনের মধ্যে ব্যাক কর তুই।

-“ আচ্ছা।
লারা ফোন কে’টে দিলো। থাকবে না এই ফা,লতু শহরে।
রাতের দিকে সাব্বির হোটেল থেকে বের হলো একটু খানি হাঁটাহাটি করার জন্য। মৃদু বাতাস বইছে। পকেট থেকে ফোন বের করে রাহাত লিখন কেউ আসতে বললো। রাহাত লিখন না করে দিলো। তারা ভীষণ টায়ার্ড, আসবে না।
সাব্বির একাই হাঁটতে শুরু করলো।

হোটেল থেকে কিছুটা দূরে আসতেই মিস্টার জনস কে দেখে অবাক হলো। মিস্টার জনস কারো সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে। কিন্তু লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না উল্টো ফিরে থাকায়। সাব্বির দ্বিধায় পড়ে গেলো সামনে এগিয়ে যাবে কি না। নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থেকে দেখবে শেষ টা? কিছুক্ষণ ভেবে দাঁড়িয়েই রইলো। বেশ ভালোই খাতির জমিয়ে কথা বলছে। আচ্ছা ঐ লোকটা কি ফাহাদ?নাকি ফয়সাল শেখ? প্রায় মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে দেখলো। তারপর হটাৎ সেই লোকটা ঘুরতেই সাব্বির সহসা চমকে উঠলো। আরে এটা কে! তন্ময়ের চাচা রাফি খাঁন! জেমস এর সাথে কি তার? তন্ময় এগিয়ে গেলো। রাফির সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলল-

-“ আঙ্কেল আপনি এখানে!
রাফির নতুন বিজনেস পার্টনার মিস্টার জনস। তার কোম্পানির সাথেই এবারের প্রজেক্ট। আজ প্রজেক্ট নিয়েই আলোচনা করছিলো জনস এর অফিসে। আলোচনা শেষে দুজনে আসে বাহিরে ডিনার করতে। সাব্বির কে সামনে দেখে অবাক হয় রাফিও।

-“ আরে সাব্বির যে এখানে কেনো তুমি?
-“ একটা কেস সল্ভ করতে এসেছি আঙ্কেল। বাট মিস্টার জনস এর সাথে আপনার কিভাবে পরিচয়?
-“ মিস্টার জনস তো আমার নিউ বিজনেস পার্টনার।
-“ তাহলে আপনি নিশ্চয়ই ফাহাদ,ফয়সাল শেখ কে চিনেন?
রাফি ফাহাদ নামটা মুখে কয়েকবার উচ্চারণ করলো। হ্যাঁ এই তো ফাহাদ কে গতকাল এয়ারপোর্টে এগিয়ে দিয়ে এসেছে।

-“ ফাহাদ কে চিনি। মিস্টার জনস এর ম্যানেজার গতকাল এসেছিল, বলল জনস পাঠিয়েছে, দ্যান প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করলাম তারপর জানালো সে বিডি যাবে প্রজেক্টের অর্ধেক টা বিডিতে হবে আর বাকিটা মালদ্বীপ। বাট ফয়সাল শেখ টা কে? তাকে তো চিনি না।
মিস্টার জনস সাব্বিরের দিকে তাকালো।

-“ আমি কেবলই আপনাদের ইনফর্ম করতে যাচ্ছিলাম। একটু আগেই রাফি আমাকে জানালে এই খবর টা। অথচ আমাদের পুরো প্রজেক্ট টাই মালদ্বীপ হবে।
সাব্বিরের মাথা বিগড়ে গেলো। এই ফাহাদ কে সামনে পেলে ছু’রি দিয়ে কু’চিকুচি করে কাটবে। ঠিক সময় বুঝে পালালো বিডি। কিন্তু এয়ারপোর্টে তো লোক লাগানো ছিলো তাহলপ তারা তাদের ইনফর্ম করলো না কেনো?

-“ তন্ময় ও কি এসেছে?
-“ না আঙ্কেল। আচ্ছা এখন আসি তাহলে।
-“ আরে কোন হোটেলে উঠেছো সেটা তো বলো।
-“ এই তো সামনের হোটলে টায়।
সাব্বির চলে গেলো। হোটেলে ফিরে যে কি করবে সেটা জানা নেই। তারমানে আজ সকালে রাহাত দের ভুল ইনফরমেশন দিয়েছিল যে ফাহাদ কে দেখা গেছে!

রাকিব হোসাইন ছাঁদের বেঞ্চ টাতে বসে আছে৷ সায়ান ফোন স্ক্রোল করছে। রাকিবের সম্পূর্ণ দৃষ্টি সায়ানের দিকে। আশ্চর্য ছেলেটা বড় হচ্ছে বিয়ে শাদী নিয়ে কেনো ভাবছে না এখনও?
-“ সায়ান বিয়ে নিয়ে কিছু প্ল্যান করছিস না কেনো? বিয়ে করবি না নাকি?
সায়ান ফোন থেকে মুখ তুলে রাকিব হোসাইন এর দিকে তাকালো৷
-“ আমার কি বিয়ের বয়স হইছে?

রাকিব হোসাইন ভ্রু কুঁচকালো। ছেলে বলে কি? আটাশ বছর হতে চলল অথচ বলে কি না বিয়ের বয়স হয়েছে?
-“ তোর থেকে এক বছরের ছোট তন্ময় বিয়ে করে ফেলছে আর তুই আমাকে জিজ্ঞেস করছিস বিয়ের বয়স হয়েছে কি না? কোনো মেয়ে পছন্দ আছে কি না বল আমি কথা বলে আসবো তার বাবা মায়ের সাথে।
সায়ান বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই কিছু মনে পড়ায় কপালের দু ভাজ সটান হয়। একটু হাসি ফুটে উঠে ঠোঁটের কোনে। আচ্ছা সে কি তুলি কে পছন্দ করা শুরু করেছে? কি জানি সায়ান কেনো বুঝতে পারছে না? একবার কিছু ফিল হচ্ছে আবার দোটানায় ভুগছে।

-“ কিরে হাসছিস কাকে মনে করে?
সায়ান মুখে গম্ভীর ভাব আনলো।
-“ আমার বিয়ের পেছন পড়লে কেনো? তোমার ও তো বয়স হচ্ছে বিয়ে কেনো করছো না?.
রাকিব হোসাইন হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ আমার বিয়ের বয়স ওভার টেক হয়ে গেছে।
-“ আচ্ছা এখনও তো বললে না মামু তোমার প্রাক্তন একচুয়্যালি কি করেছিলো, বড় কোনো ক্রাইম করেছে?
রাতুলের মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হলো। হাস্যোজ্জ্বল মুখে কালো আঁধার ঘনিয়ে এলো। অন্য দিকে ঘুরে শান্ত কন্ঠে বলল-

-“ সে প্রাক্তন হয়ে গেলেও, তার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো গোপন রাখা আমার’ই দায়িত্ব..এবং আমি সেটাই করছি আপাতত, তাই তাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন করিস না,উত্তর মিলবে না।
রাকিব হোসাইন বসা থেকে উঠে চলেগেলো। সায়ান তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
অধরা আজ অফ হোয়াইট কালারের শাড়ি পড়েছে। গন্তব্য স্কুলে। আজ থেকে তুষার দের স্কুলে সে জয়েন হবে। মূলত সময় টাকে পাস করার জন্যই জয়েন হওয়া। চিত্রা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে,অধরা কে দেখে স্মিত হেঁসে বসতে বলল। অধরা বসতেই চিত্রা খাবার দিলো। অধরা চুপচাপ খাবার খেতে লাগলে। তুষার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে চিত্রার সামনে এসে বলে-

-“ আমার পাঞ্জাবির বোতাম টা ছেঁড়া কেনো? আমি এখন কি পড়ে যাব?
-“ আপনি যান আমি আসছি সেলাই করলেই ঠিক হয়ে যাবে।
-“ এক্ষনি আসো।
কথাটা বলেই চিত্রার হাত টেনে নিয়ে গেলো। অধরা চুপচাপ দেখলো। গলা দিয়ে ভাত নামছে না আর। কেমন গলায় আঁটকে আঁটকে যাচ্ছে ভাত। উফ অসহ্যকর যন্ত্রণা। ভাতের প্লেটে পানি ঢেলে হাত ধুয়ে উঠে পড়লো। সোফা থেকে ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা ধরলো। বুকে ব্যাথা করছে। অধরা বা হাত দিয়ে বুকে ঘষা দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে বলল-

-“ আপনার আমার ও এমন একটা সংসার হতো যদি আপনি….
আর কোনো শব্দ বের করলো না অধরা। গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিলো।
দোলন ঘুমিয়ে আছে,শরীর টা ভালো না। হুট করে সকাল থেকে পেট ব্যাথা করছে। প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট সময়ে এই ব্যাথাটা হয়। ব্যাথা টা দোলনের একটু বেশিই হয়।এইতো ব্যাথার জন্য এখন নড়াচড়া করতে পারছে না। পেটে হাত চেপে চোখ মুখ খিঁচে কাঁথা পেট অব্দি ঢেকে শুয়ে আছে। প্যাড ও নেই ফুরিয়ে গেছে। যার দরুন পড়নের সেলোয়ার জড়িয়ে গেছে। তন্ময় ওয়াশরুমে, মিনিট দশেক পর বের হয়ে দোলন কে এখনও শুয়ে থাকতে দেখে আপনা-আপনি কপাল কুঁচকে আসে।

রান্না বান্না করা হয় নি। দোলনই তো করে রান্না বান্না। বেলকনিতে ভেজা টাওয়াল মেলে দোলনের পাশে বসে দোলন কে ডাকে। দোলন নড়েচড়ে উঠে।
-“ রান্না করবে না আজ?
দোলন তাকালো না। চোখ বন্ধ রেখেই বলল-
-“ আজ কষ্ট করে বাহির থেকে কিছু খেয়ে যান।রান্না করার মতে শক্তি এখন নেই।
-“ কেনো কি হয়েছে?

কথাটা বলে দোলনের কপাল চেক করলো। নাহ জ্বর তো নেই তাহলে? দোলন কে উঠতে বলল। দোলন উঠলো না। তন্ময় জোর করে টেনে উঠালো। শরীর থেকে কাঁথা সরাতেই বিছানায় লাল ছোপ ছোপ র’ক্তের দাগের দিকে চোখ গেলো। দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কখন হলো এসব?
দোলনের কেমন লজ্জা অস্বস্তি হচ্ছে। মিনমিন সুরে বলল-

-“ ফজরের আজানের পরপর।
-“ পাল্টাও নি কেনো এখনও পোষাক?
-” প্যাড নেই তো।
-“ বলো নি কেনো আমায় ইডিয়ট। পেটে পেইন হচ্ছে?
-“ হুমম।
তন্ময় উঠে রুমের বাহিরে গেলো। মিনিট পাঁচেকে আবার চলে আসলো। হাতে তার গরম পানির ব্যাগ। সেটা দোলনের হাতে দিলো।

-“ এটা পেটে চেপে রাখো আমি না আসা অব্দি।
তন্ময় চলে গেলো। দোলন খাটে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে ব্যাগ টা পেটে চেপে ধরে।
কিয়ৎ ক্ষন পর তন্ময় আসে রুমে। হাতে তার প্যাকেটে মোড়ানো প্যাড, পেইন কিলার আর পরোটা, ডিম ভাজি আর ডাল।

দোলনের পাশে বসে দোলনের হাতে প্যাকেট টা ধরিয়ে ফ্রেশ হতে বলে। দোলম ওয়াশরুমে চলে যায় প্যাটেক আর জামা কাপড় নিয়ে। একেবারে গোসল সেরে বের হবে। তন্ময় বিছানার চাদর পাল্টিয়ে অন্য চাদর বিছায়।তারপর খাবার টেবিল থেকে প্লেট এনে খাবার বেড়ে দোলনের অপেক্ষা করে।

দোলন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তন্ময় বসা থেকে উঠে দোলনের হাত থেকে ভেজা জামা কাপড় কেঁড়ে নিয়ে দোলন কে খেতে বসতে বলে। দোলন খেতে বসে৷ তন্ময় জামা কাপড় বেলকনিতে মেলে দোলনের সামনে বসে। দোলন তন্ময়ের প্লেট টা এগিয়ে দিলো খাওয়ার জন্য। তন্ময় খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে দোলনকে পেইন কিলার দিলো খাওয়ার জন্য দোলন খেয়ে নিলে। তন্ময় এঁটো প্লেট ধুয়ে রেডি হলো অফিসের জন্য। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে দোলন কে বলল-

-“ ব্যাথা না কমলে আর রান্না বান্না করার প্রয়োজন নেই। আমি দুপুরেই চলে আসবো। আর বেশি খারাপ লাগলে আমাকে ফোন করে জানাবে। মনে থাকবে?
দোলন মাথা নাড়ালো। তন্ময় চলে গেলো। দোলন দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়লো।
তুলি আজ ফাস্ট টাইম অধরা কে সামনা-সামনি দেখছে। এর আগে চিত্রার মুখে অধরার কথা শুনেছে সাথো ও বাড়িতে ছবি ও দেখেছে। টিচার কক্ষে তুলি অধরা সামনা-সামনি বসে আছে। তুলি বুঝতে পারছে না কি ভাবে কথা শুরু করবে। দুবার এদিক ওদিক তাকিয়ে নিলো।

-“ ফুপি কেমন আছেন?
অধরা আচমকা ফুপি ডাক শোনায় তুলির দিকে তাকালো। তুলির মুখে হাসি লেগে আছে৷
-“ তুমি তুলি?
তুলি তড়িৎ গতিতে মাথা ঝাঁকালো।

-“ অনেক শুনেছি তোমার কথা। চিত্রা তন্ময় প্রায় বলতো।
-“ আমি ও আপনার কথা শুনেছি ফুপি। আজ সামনা-সামনি দেখার সৌভাগ্য হলো।
-“ আমার ও।
-” এখন থেকে এখানেই থাকবেন?
-“ হ্যাঁ।

তুলি আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলো না। ক্লাসের ঘন্টার বেল বাজায় তুলি মুচকি হেসে চলে যায় ক্লাসে ক্লাস নিতে।
ফারহানের সামনে বসে আছে শরাফত উল্লাহ। ভয়ে তার শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। ফারহানের কপালেও দুশ্চিন্তার রেখা। ফাহাদ টা বোকামি করে দেশে চলে আসছে। আর মিস্টার জনস ও তো এতোদিনে তাদের কুকর্মের কথা সব জেনে গেছে। মিস্টার জনস এনাকে ফারহানের গাধা মনে হয়। লোকটা এতো সহজ সরল,বোকা যা বলার বাহিরে। বিদেশি মানুষ গুলো এমনই হয়। অল্পতেই মানুষ বিশ্বাস করে।

এই মিস্টার জনস কে যা বলেছে তাই বিশ্বাস করেছে, এটারই সুযোগ নিয়ে ফারহান কতো কোটি কোটি টাকা যে মে’রে দিছে তার হিসেব নেই। তার ফোন ব্যাবহার করেছে স্বার্থ হাসিল করার জন্য। মিথ্যা বলেছে যে তার বউ অন্য পুরুষের সাথে ভেগে গেছে আর মেয়ে মা’রা গেছে। তার বউ যে কোথায় এটা তো সবার অজানা,একমাত্র ফারহান ছাড়া কেউই জানে না আদৌও তার বউ কোথায়। স্বয়ং ফাহাদ ও জানে না। জানবে কি করে? ছোট থেকে তো ফাহাদ কে জানানো হয়েছে তার মা নষ্টা চরিত্রহীনা। মায়ের প্রতি আকাশ সম ঘৃণা ফাহাদের।

কলিং বেল বাজতেই ফারহান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। আর তখনই ফাহাদ ভেতরে ঢুকে। ল্যাগেজ টা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। এই বিডিতে যা গরম, একদম অসহ্যকর গরম।
-“ একটা ঠান্ডার ব্যাবস্থা করো কুইক।
ফারহান পকেট থেকে ফোন বের করে হোটেলের ওয়েটার কে ডেকে তিনটা ড্রিংকস পাঠাতে বলল।

-“ বিডি আসলি কেনো তুই? তোকে বলেছিলাম না ওখানেই থাকতে?
ফাহাদ ভ্রু কুঁচকালো। পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করে বসে বলল-
-“ আমি কোথায় থাকবো না থাকবো তার সম্পূর্ন ডিসাইড করবো আমি তুমি নও।
ফারহান চুপ হয়ে গেলো। এই ছেলেকে রাগানো ঠিক হবে না।
ওয়েটার ড্রিংকস আনতেই ফারহান ওদের দিকে এগিয়ে দেয়। ফাহাদ শরাফত উল্লাহ এর দিকে তাকায়। অপরিচিত লোক।

-“ ইনি কে?
ফাহাদের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় ফাহাদ। কি বলবে এখন এই লোক কে? কিছুটা সময় নিলো ভাবার।
-“ উনি হচ্ছে রিটায়ার পুলিশ। এর আগে আমাকে হেল্প করেছিলো। বিডি এসেছি তাই ভাবলাম ডেকে দেখা করি।
-“ কি হেল্প করেছিল?
-“ এ…এতো কথা কেনো বলছিস? করেছিল কোনো একটা হেল্প। এই হোটেলেই থাকবি তো?
-“ নাহ্।
-“ তাহলে কই থাকবি?
-“ অন্য হোটেলে।

-“ আচ্ছা সেটাই ভালো। শোন ফারাহ্ কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছে। ওকে বোঝা।
-“ ওকে ওর মতো চলতে দাও। ওকে আর এসবে টানবে না। যদি টানো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
-“ মানে কি? এসব কি বলছিস? ফারাহ্ কে কেনো আমি সিআইডি তে ঢুকিয়েছি? আমাকে সাহায্য করবে বলেই তো। এখন পল্টি খাচ্ছিস কেনো দু’জন? ও আমাদের সাহায্য না করলে ধরা পড়তে খুব বেশি সময় লাগবে না।
-“ আমি আছি কি করতে? তোমার প্ল্যান যেখানে শেষ হয় সেখান থেকে আমার শুরু হয়। তা না হলে ঐ সিআইডি দের ঘোল খাইয়ে এখানে আসতে পারতাম না।

-“ কি ঘোল খাইয়েছিস?
-“ কি আবার,,তন্ময় শাহরিয়ার চাচা কে ইউজ করে বিডি এসেছি। আর এয়ারপোর্টে থাকা পুলিশ অফিসার কে টাকার ঘুষ,,দ্যান আমাদের এক চ্যালা কে বলেছিলাম ঐ অফিসার দের ইনফর্ম করতে যে আমাকে দেখা গেছে। তো ঐ বোকা অফিসার গুলো পাগলের মতো খুঁজলো।

-“ বাহ দারুন তো,এই না হলে আমার ছেলে!
তন্ময় অফিসে আসতেই মালদ্বীপে ঘটা সব খবর জানতে পারে। রাগান্বিত হলো না বরং ভালোই হলো। বাপ ব্যাটা এখন এক সাথে। ধরতে সুবিধা হবে। রাহাত দের চলে আসতে বলল। সায়ান তন্ময়ের দিকে চেয়ে বলল-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৬

-“ শরাফত উল্লাহ আজ বাসা থেকে বের হয়েছে। দ্যান একটা হোটেলের ভেতর তাকে ঢুকতে দেখা গেছে।
-“ হোটেলে? কে থাকে ঐ হোটেলে জানা গেছে?
-“ হু। ফারহান নামের কোনো লোক।
তন্ময়ের চোখ মুখ জ্বলে উঠলো। বাহ্ শিকারির দেখা এতো তাড়াতাড়ি মিলে গেলো!

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৮