অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭
Mousumi Akter

“গাড়িতে ওঠো পূর্ণ আমি ওয়াশ রুম থেকে আসছি।”
পূর্ণতা বাঁকা হেসে বলল, “ছেলেদের আবার ওয়াশরুম লাগে নাকি।ওদের জন্য তো রাস্তার কর্ণার ই যথেষ্ট।”
পূর্ণতার এই কথাটা শুনে প্রভাত খুব জোরে হেসে দিল।প্রভাতের হাসি যেন প্লাবিত হচ্ছে চারদিক।পূর্ণতার এই বাচ্চাসুলভ কথাটায় কি ছিল প্রভাত জানেনা।তার প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে।হাসতে হাসতেই বলল,

” তুমি তো খুব দুষ্টু।”
পূর্ণতা রুক্ষ কন্ঠে উত্তর দিল, ” দুষ্টুর কি করলাম।”
প্রভাত মাথার পেছনটা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ” ছেলেদের মান-ইজ্জতের দিকে এইভাবে নজর দাও কেন?”
পূর্ণতা মুখ বাঁকিয়ে বলল, ” ওদের আবার মান আছে নাকি যে সম্মান থাকবে।থাকলে কি আর রাস্তার পাশে দাঁড়ায় নাকি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তুমি কিন্তু তোমার সমস্ত কাকা শ্বশুরদের অপমান করছো।”
পুষ্পতা অবাক কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ল, ” সমস্ত কাকা শ্বশুর?এই পৃথিবীর সবাই কি আমার কাকা শ্বশুর হয়?”
” অফ কোর্স!এই পৃথিবীর তোমার বর একটাই।বাদ-বাকি সব ই কাকা শ্বশুর।”
পূর্ণতা ঝাঁঝালো চোখে তাকাল।চোয়াল শক্ত করে বলল,
“পৃথিবীর সবাই কি বুড়া নাকি যে কাকা শ্বশুর ডাকব।”

“বুড়া হওয়ার তো দরকার নেই সুইটহার্ট। তোমাকে ভাবি ডাকবে, আপু ডাকবে আর মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে তা আমি হতে দেবনা।যত মিষ্টি লাগে আমি তোমাকে দিব।অন্য পুরুষের মিষ্টি ভাষা আমি তোমাকে গ্রহন করতে দিব না।আজ থেকে তুমি সবার জাতীয় ফুফুআম্মা।”
“কেউ যদি আমাকে ফুফু আম্মা ডাকে আমি আপনাকে খে’ য়ে ফেলব।”
প্রভাত থুঁতনিতে হাত বুলিয়ে দুষ্টু হেসে পূর্ণতার ঠোঁটের দিকে তাকাল।চোখে -মুখে দুষ্টুমির ছড়াছড়ি।মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল,

“সত্যি খেতে চাও। কখন? সময় বলো।আই আম রিয়েলি এক্সসাইটেড।”
পূর্ণতা বুঝতে পারল প্রভাত অন্য লাইনে চলে যাচ্ছে।এইজন্য প্রভাত কে যেকোনো কথা বলতে গেলে একশ বার ভাবা লাগে।না হলে কথার প্যাঁচে ফেলে ক থেকে কলকাতায় নিয়ে যায়।পূর্ণতা আগের মেজাজে স্থির থেকে আঙুল উঁচিয়ে বলল,

” একদম বাজে কথা বলবেন না।”
প্রভাত পূর্ণতার আঙুল ধরে নেশালো কন্ঠে বলল,
” এভাবে লোভ ধরাও কেন পূর্ণ ? তুমি বোঝোনা তুমি কাছে এলেই আমি এলোমেলো হয়ে যায়।”
পূর্ণতা কোনো কথার উত্তর না দিয়ে আঙুল ছড়ানোর চেষ্টা করল। প্রভাতের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি লেগেই আছে।আরো খানিকটা দুষ্টুমি করে পূর্ণতার আঙুল ছেড়ে ঠোঁটে আঙুল ছুঁঁইয়ে বলল,
“এত সুন্দর ঠোঁটের মালিক আমাকে যত বার খেতে চাইবে ততবার ই প্রভাত চৌধুরী আত্মসমর্পণ করবে।”
পূর্ণতার কন্ঠের রুক্ষতা খানিকটা বেড়ে গেল।রেগে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশে গিয়ে বসল।
প্রভাত ও গিয়ে ডাইভিং সিটে বসল।

পূর্ণতা রুক্ষ কন্ঠে বলল, ” আপনার প্রব্লেম কি? প্রতিটা ভস্ল কথার নেগেটিভ মিনিং কেন করেন?”
“লিজেন্ড। কিছু বললেই সহযে বুঝে যাও।ন্যাকামি করে বুঝিনি বুঝিনি করোনা এটাই ভাল লাগে।প্রভাত চৌধুরীর বউ লিজেন্ড না হলে কি আর মানায়।” বলেই প্রভাত গাড়ি স্টার্ট দিল।গাড়ি স্টার্ট দিতেই পূর্ণতা বলল,
” গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছেন কেন? সজল ভাই আসছে।উনি আসুক আগে।”

প্রভাত এর চোখ-মুখ নিমিষেই গম্ভীর হয়ে এল।পূর্ণতার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল,
” সজল! সজল! সজল। মুখে তো আমার নাম কোন সময় থাকেনা।সজল কি আমার চেয়ে বেশী সুদর্শন নাকি?”
” আপনার নাম উচ্চারণ করার আগেই তো চব্বিস ঘন্টা আমার সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করেন।”
” তাহলে বুঝো তোমার গুরুত্ব আমার কাছে কত খানিক। সজল কি তোমায় এত গুরুত্ব দেয়?”
” অবশ্যই দেয়। আপনার মত জোরাজোরি করেনা কারণ এটা উনার সভ্যতা।”
এমন সময় সজলকে দেখা গেল গাড়ির লুকিং গ্লাসে।প্রভাত গাড়ি ছেড়ে দিল।পূর্ণতা প্রভাতের হাত ধরে বলল,

” গাড়ি থামান প্রভাত ভাই। সজল ভাই চলে এসছে।”
” হাত সরাও পূর্ণ অ’ঘ’ট’ন ঘটবে।”
” আপনি গাড়ি থামান, সজল ভাই চলে এসছে।”
“আর একবার সজলের নাম নিলে সত্যি অ’ঘ’ট’ন ঘটে যাবে।গাড়িটা সোজা নিয়ে সজলের উপর উঠিয়ে দিব।”
পূর্ণতা হাত সরাল।রাগে অন্যদিকে তাকাল।প্রভাতের দ্বারা অসম্ভব তো কিছুই নেই।দেখা গেল সত্যি সত্যি সজলের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দূ’র্ঘটনা বলে চালিয়ে দিল।প্রভাতের দ্বারা অসম্ভব তো কিছুই নেই।এমন সময় পূর্ণতার ফোন বেজে উঠল।সজল ফোন দিয়েছে।পূর্ণতা রিসিভ করতে যাবে যাবে ঠিক তখন ই প্রভাত পূর্ণতার হাত থেকে ফোন নিয়ে গেল।কল টা কেটে ফোন নিজের পকেটে ভরে গাড়ির গতি বাড়াল।

চৌধুরী বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে ছিপছিপে গড়নের লম্বা একটা ছেলে।পরণে ফরমাল পোশাক। বেশ অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িতে রয়েছে।ছেলেটার হাতে ফোন।পূর্ণ মনযোগে ফোন স্ক্রল করছে।এমন সময় সদর দরজার দিকে ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে পুষ্প।পুষ্পের এক পায়ে সিম্পল একটা পায়েল।তাতে একটা ঝুরি আছে।হাঁটলে হালকা বাজে।ছেলেটার কানে পুষ্পের পায়েলের ক্ষীন শব্দ যেন রিনিঝিনি আওয়াজ তুলছে।ছেলেটা ফোন থেকে দৃষ্টি সরালো।উঁকি দিয়ে পুষ্পের দিকে তাকাল।ছেলেটা দেখল দূর থেকে হেঁটে আসছে একটা মেয়ে।

ছেলেটা মেয়েটির দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে তাকিয়ে রয়েছে। পুষ্ট এদিক-ওদিক না তাকিয়ে ধীর পায়ে হাঁটছে।রোদের আলোয় যেন ঝলমল করছে পুষ্পের চেহারা।চোখের উপর এক হাত দিয়ে নিচু হয়ে হাঁটছে।কারণ রোদের তাপে সে তাকাতে পারছেনা।পরণে হলুদ থ্রী পিছ,হলুদ ফর্সা শরীরে রোদের মতই ঝলমল করছে।ছেলেটার চোখে যেন ধাঁধা লাগল পুষ্প কে দেখে।চোখ দুটো নিবদ্ধ করে রেখেছে পাতলা গড়নের লম্বা মেয়েটা পুষ্পের দিকে।একদম যেন একটা হলুদ সূর্যমুখি।

ক্রমশ পুষ্পর পথ যত আগাচ্ছে, ছেলেটা ততই মুগ্ধ হচ্ছে।পুষ্প যখন একদম ছেলেটার কাছাকাছি চলে আসল ছেলেটা চূড়ান্ত রকমের সর্বনাশ হল।হঠাৎ বুকের মাঝে ধুক করে উঠল।পুষ্পের কপালের ছোট্ট কালো টিপটা অধিক আকর্ষিত করল।ছেলেটার ঠোঁটের কোনায় ক্ষীন হাসি।দৃষ্টির নড়নড় নেই পুষ্পের দিকেই তাকিয়ে আছে।

ছেলেটাকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে পুষ্প কপাল কুচকালো।কিছুটা অবাক হয়ে ছেলেটার আপাদমস্তক তাকাল।খানিকটা সন্দেহপ্রবন হল পুষ্প।মনে প্রশ্ন জাগল, ছেলেটা কে?আর এখানে কেন? আর তার দিকেই বা তাকিয়ে আছে কেন?
পুষ্পকে ভ্রুঁ কুচকে তাকাতে দেখে ছেলেটা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ফোনের দিকে নজর দিল।দৃষ্টি সরাল পুষ্পর থেকে।পুষ্প এদিক-ওদিক তাকাল।যেন কাউকে খুজছে।
ছেলেটা আড়চোখে বার বার তাকাচ্ছে।পুষ্পের দৃষ্টির এড়াচ্ছে না তা।পুষ্প এবার সরাসরি ছেলেটাকে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“আপনি কে?”
পুষ্পের কন্ঠ কর্ণকুহরে যেতেই ছেলেটা বড় বড় চোখে পুষ্পের দিকে তাকাল। এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করে চট জলদী উত্তর দিল,
“রাজন আহমেদ।”
“নাম জানতে চাইনি, পরিচয় জানতে চাইছি।”
” বাবার নাম শরীফুল আহমেদ।”
পুষ্প এবার ভ্রঁ সুঁচালো করল।খানিকটা অবাক হয়ে বলল,

” আরে আশ্চর্য তো! আপনার নাম, আপনার বাবার নাম এসব কে জানতে চাইছে।”
” তাহলে পরিচয় দিবো কীভাবে? আপনি বলে দিন।”
“লাগবে না আপনার পরিচয়। এখানে কি চাই?বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করছেন কেন?”
“এত রেগে যাচ্ছেন কেন? শুনেছি যাদের গায়ে মাংশ কম তাদের রাগ ও বেশী।”
“আপনার সাহস তো কম নয়।আমাকে নিয়ে আবার কমেন্টস করছেন।”
“আমি এমনিই অনেক সাহসী।”

“সোজা-সাপ্টা উত্তর দিন, কি চায় আপনার? ”
“আপনাকে।” বলেই মৃদু হাসল ছেলেটা।
পুষ্প এইবার অবাকের চরম পর্যায়ে চলে পৌছে গেল।তার বাড়ির সামমে দাঁড়িয়ে এতবড় সাহস দেখানোর মত ছেলে তো আশে পাশে এরিয়ায় নেই।নাকি এই ছেলে তার পরিচয় জানেনা।পুষ্প খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,
“ফাইজলামি করেন তাইনা?আপনার তো খুব সাহস।
পুলিশ ডেকে এখনি জেলে ভরে দিব।”

ছেলেটা বড় বড় চোখে পুষ্পের দিকে তাকাল।ভীত কন্ঠে বলল,
“প্লিজ আপু এমন করবেন না। আমি পুলিশ খুব ভয় পাই।ছোট বেলা থেকে পুলিশ দেখলে বিছানায় হি’সু হয়ে যেত।প্লিজ আমাকে পুলিশে দিবেন না আপু।”
ছেলেটার ভ’য় দেখে পুষ্পর ভাল লাগল।তার ইচ্ছা করছে ছেলেটাকে আর একটু ভ’য় দেখানোর।ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে পুষ্পর।তবুও হাসি চেপে রেখেছে।এত বড় একটা ছেলের পুলিশ দেখে এত ভ’য়!
বেশ এইবার বেশ গম্ভীর গলায় বলল, “আপনার কোনো ক্ষমা নেই। পুলিশে আপনাকে দিবই।আর পুলিশে দিলে কি হবে জানেন?”

“না’তো কি হবে?”
“জেল হবে, তাও যাবজ্জীবন জেল হবে।”
ছেলেটার চোখ মুখ দেখে পুষ্প ভেতরে ভেতরে হেসে শে’ষ হয়ে যাচ্ছে।ভ’য়ে ছেলেটার চোখ মুখ একদম শুকিয়ে এসছে।ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
“আমার অপরাধ।”
“আমার দিকে তাকানো।”

“সামান্য তাকানোতে এত বড় শাস্তি।অন্য কিছু করলে কি শাস্তি হবে।”
” মৃ’ত্যু দন্ড।”
ছেলেটা আবার ভ’য় পেল।ভয়ার্ত চোখে মুখে পুষ্প কে অনুরোধ করেই যাচ্ছে।
প্লিজ! আমাকে এত বড় শাস্তি দিবেন না।আর পুষ্প মজা নিতে বলেই যাচ্ছে আপনার কোনো ক্ষমা নেই।শাস্তি পেতেই হবে।তাও কঠিন শাস্তি।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬

এমন সময় অন্য একজন ছেলে এসে ছেলেটার দিকে একটা চাবির রিং এগিয়ে দিয়ে বলল, “স্যার আপনার গাড়ির চাবি।”
পুষ্প ভীষণ অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকাল।স্যার সম্মোধন এর মানে বুঝল না।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৮