অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৮

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৮
Mousumi Akter

স্যার সম্মোধন শুনে ভ্রু কুঁচকালো পুষ্প।কুঁচকে আসা ভ্রু নিয়ে ছেলেটার আপাদমস্তক ভালভাবে তাকিয়ে দেখল।ছেলেটাকে স্যার ডাকল কেন? পুষ্পের মাথায় এলোনা কিছু।যে ছেলেটা স্যার ডেকেছে তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“আপনি উনাকে স্যার ডাকলেন কেন? কোন স্কুলের স্যার উনি?”
ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন ছেলেই জোরে হেসে ফেলল।তাদের হাসি যেন থামছে না।পারলে গড়াগড়ি দিত।তারা এত হাসছে যে, হাসতে হাসতে একেবারে দম বন্ধ হবার মত অবস্থা। মিনিট দু’য়েক দু’জন হেসেই যাচ্ছে।পুষ্পের কথার প্রেক্ষিতে ওদের হাসি যেন পুষ্পকে চূড়ান্ত অপমান করল।অ

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পমানে থমথমে হয়ে এল পুষ্পের মুখখানা।চোখ দু’টো আগ্নেয়গিরির ন্যায় ধারণ করল।আশ্চর্যজনক একটা চাহনি দিল।বেহুদা ছেলে দু’টোর হাসি তার গায়ে জ্বালা ধরাল।ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে এল তার।ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রাগি দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। চোয়াল শক্ত করে বলল,

“আপনারা কি দু’জনেই অসভ্য নাকি বুঝলাম না। এভাবে অভদ্রের মত হাসছেন কেন? কারো প্রশ্নের বিপরিতে উত্তর না দিয়ে হাসাহাসি করে গড়িয়ে পড়া হল চরম বেয়াদবি। ”
তখন রাজন নামের ছেলেটা হাসি থামিয়ে পুষ্পের রাগি চেহারাটা অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে পরিদর্শন করল।ঠোঁটে মৃদু হাসি বজিয়ে রেখেই বলল,

“আপনি প্রশ্নটায় এমন হাস্যকর করেছেন না হাসলে হাসি জিনিসটার চরম অন্যায় হবে।কারণ দুনিয়াতে সব মজার মজার ঘটনা মানুষ বা কথা মানুষকে আনন্দ দেয়।সেই আনন্দ প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হল মন খুলে হাসি।”
“কেন আমি কি জোকার দের মত কথা বলেছি যে এমন উদ্ভটভাবে হাসাহাসি করা লাগবে।”
“শুধু জোকারদের কথা শুনেই মানুষ হাসেনা। সুন্দরী দের মুখে বাচ্চাসুলভ কথা শুনেও হাসে।যা যুবকদের হৃদয়ের আনন্দের তরঙ্গ তোলে।”

“আপনি কিন্তু এসে ধরে অনেক সাহস দেখাচ্ছেন।বলতেই হয় আপনি অনেক সাহসী।তবে এত সাহস কিন্তু ভাল নয়।পিছে বিপদ হয়।আপনি জানেন আমি কে? এসব আমার পরিবার জানলে আপনার দেহ আর মাথা পৃথিবীর দুই প্রান্তে পাওয়া যাবে।”
ছেলেটি মৃদুহাসির মাত্রা আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“চৌধুরী সাহেবের একমাত্র কণ্যা, এলাকার জনপ্রিয় ফেস প্রভাত চৌধুরীর একমাত্র বোন। কিন্তু আমি কে জানেন?”
“কে আপনি?”

“আপনাদের মত কোনো চৌধুরী এর পরিবারের সোনার চামচ মুখে দিয়ে জন্মানো কোনো ছেলে নই।মাটি খেয়ে বড় হয়েছি তাই সাহস একটু বেশীই ম্যাডাম।”
ছেলেটির এমন রহস্যঘেরা কথা শুনে পুষ্প কিছুটা চিন্তিত হল।ছেলেটির পরিচয় আসলে কি? এমন অবাক করা করা কথা বলছে কেন?সোজা কোনো কথার উত্তর দিচ্ছেনা।পুষ্প বিরক্তকির মুখে বলল,
“এটা কোনো পরিচয় হল? সোজাসাপটা উত্তর দিন।নাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব দাঁরোয়ান কে ডেকে।”
“এখানে আমাকে ইনভাইট করে আনা হয়েছে।”

পুষ্প আবার কপাল কুঁচকালো এই ছেলেকে কে আবার ইনভাইট করে আনল।পুষ্প বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“কে আপনাকে ইনভাইট দিয়ে এনেছে?”
পাশে থাকা ছেলেটা বলল,
“উনি এখানকার নতুন এস আই রাজন আহমেদ।”

এস আই কথাটা শুনে পুষ্পের চোখ আবার কপালে উঠল।চোখ দুটো বড় বড় হল।বার কয়েক চোখের পলক ফেলল ঘন ঘন।ঠোঁট মুখ শুকিয়ে এসছে।ঢোক গিলল কয়েকবার।ঘন ঘন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাচ্ছে।পুষ্পের চোখ মুখের অবস্থা থমথমে।জীবনে এমন লজ্জা আর অপমান সে আগে হয়নি।লজ্জায় ম’ রে যেতে ইচ্ছা করছে তার।যে ছেলেটাকে পুলিশের ভ’য় দেখিয়ে সে মজা নিচ্ছিলো আর আনন্দ পাচ্ছিলো এতক্ষণ ধরে।

উল্টো সেই ছেলেই তার সাথে পাল্টা মজা নিচ্ছিলো।এর চেয়ে লজ্জাজনক আর অপমানজনক ঘটনা কি পৃথিবীতে আর কিছুতে আছে।একজন এস আই কে কীনা সে পুলিশের ভ’য় দেখাচ্ছিলো।ছেলেটা কত বড় বদমাশ হলে বারবার বলছিলো আমাকে পুলিশে দিবেন না।আমি খুব পুলিশ ভ’য় পাই।পুষ্পের এমন অবস্থা দেখে রাজন মৃদু হাসল।পুষ্পের চোখ মুখের এই অবস্থা সে ভীষণ উপভোগ করছে।রাজন পুষ্পের দিকে খানিকটা ঝুঁকে গিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“চৌধুরী সাহেব এর মেয়ে কি ভ’য় পেয়ে গেল নাকি?যার বাপ-ভাই এর দাপটে পুরা এলাকা কাঁপে তাকে কি ভ’য় পেলে মানায়।”

পুষ্প এবার তেজী কন্ঠে উত্তর দিল,
“আমার বাপ-ভাই নিয়ে খবরদার কথা বলবেন না।তাহলে ভাল হবেনা।”
“জানি ভাল হবেনা।রাজন নামের সদ্য জ্বলে ওঠা প্রদীপ টা নিভে যাবে তাইনা? ”
“আমি কি সে কথা বলেছি। আপনি প্রথমে বললেই পারতেন আপনি কে? তাহলে আর এত অশান্তি হতনা।”
“প্রথমেই পরিচয় দিলে কি এত ইন্টারেস্টিং একটা মেমরি তৈরি হত আপনার সাথে ম্যাম।”
“মেমরি তৈরি করতে হবে কেন বুঝলাম না।ছেলেদের কি এটা অভ্যাস নাকি মেয়ে দেখলেই মেমরি তৈরি করা।তার মাঝে পুলিশদের তো স্বভাব ই এটা।মানুষ ঠিক ই বলে পুলিশদের চরিত্রের ঠিক নেই।”

“আপনি কিন্তু পুরা পুলিশ জাতির অপমান করে দিলেন।আমি আমার পেশার এত বড় অপমান মেনে নিবনা।”
“কি করবেন অ্যারেস্ট করতে চান নাকি?”
“আপনি চৌধুরী বাড়ির মেয়ে চাইলেই কি আর অ্যারেস্ট করা যাবে।তবে আমি চেষ্টা করব মনের জেলখানায় ভর্তি করতে।”

“আমি বুঝলাম না আপনি এইখানে মূলত কি কাজে এসছেন।নাকি আমাকে জ্বালাতে এসছেন।”
“একসাথে দু’টো কাজ করতে পারলে ক্ষতি কি?”
“দু’টো কাজ কীভাবে?”
“এইযে এতক্ষণ কথা বলে বাজিয়ে দেখছিলাম আপনি কোনো অপরাধের সাথে যুক্ত আছেন কীনা! ”
“আচ্ছা এই ব্যাপার! কি বুঝলেন?”

“বুঝলাম মেয়েটা ফুলের মত পবিত্র।জয়নাব উনি কে হয়?”
“আচ্ছা জয়নাব আন্টির ব্যাপারে খোঁজ নিতে এসছেন?”
আমাদের বাড়িতে কাজে ঢুকেছিলেন নতুন।”
“নতুন এসেজ উধাও হয়ে গেল।”
“তাইতো শুনছি,আন্টিকে পাওয়া যাচ্ছেনা।”
“উনার ব্যাপারে ইনভেস্টিগেশন করতে এসছি।ভেতরে চলুন।”
“ভাইয়া পাঠিয়েছে আপনাকে?”
“জি।”

“ভেতরে আসুন।”
পুষ্প আর রাজন পাশাপাশি হাঁটছে।রাজন কথা বলছে আর বারবার পুষ্পের দিকে তাকাচ্ছে।পুষ্পের দিকে তাকালেই অদ্ভুত একটা মুগ্ধতা কাজ করছে।পুষ্পের নাম জানতে ইচ্ছা করছে।আচমকাই প্রশ্ন করল,
“নাম কি আপনার?”
পুষ্প রাজনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,
“পুষ্পতা চৌধুরী।”
“বাহ! এত সুন্দর নাম কে রেখেছে।চরিত্রের সাথে হুবহু মিল।”
“ভাইয়া।”

“বাহ!।প্রভাত ভাইয়ের নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে দারুণ অভিজ্ঞতা আছে।”
“তা আছে। তবে আপনি এইভাবে ইউনিফর্ম ছাড়া আসেন কেন? চিনতে অসুবিধা হয় মানুষের। ”
“আমার কাজ ইনভেস্টিগেশন করা।ইউনিফর্ম পরে আসলে সঠিন তথ্য নিতে পারব না।”
পুষ্প রাজন কে ডায়নিং এ বসাল।তারপর ওয়াসেল কে ফোন করল।আধাঘন্টার মাঝেই ওয়াসেল এসে হাজির হল।রাজণ ওয়াসেল কে ব্যক্তিগত ভাবে কি কি জিজ্ঞেস করছে কেউ জানেনা।এই ফাঁকে পুষ্ট চা -নাস্তা দিয়ে গেল।ঘন্টাখানিক কথা বলে রাজণ বলল,

“আজ আমি আসি। আপনার ভাই ওয়াজেদ চৌধুরী আসলে আমি আবার আসব।চিন্তা করবেন না।আপনার বাড়ির সম্মানের দিকে আমি খেয়াল রাখব।”
রাজন চলে গেল।যাওয়ার সময় একবার উপরে তাকাল।সেখানে পুষ্প তাকিয়ে আছে।পুষ্পের দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে বিদায় নিল রাজন।

ওয়াসেল রাগে ফুঁসছে।সামনে থাকা টি-টেবিলে একটা লা’ থি মা’ র’ ল।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিজের রুমে গেল।রুমে গিয়ে দেখল মেরী বেশ পরিপাটি ভাবে সেজেগুজে রেডি হয়েছে।কোথাও একটা যাবে বলে মনে হচ্ছে।ওয়াসেল মেরির কাঁধে হাত দিয়ে মেরিকে তার দিকে ঘুরিয়ে বলল,

“তোর ছেলে এসব কি শুরু করেছে? এই বাড়ির মান সম্মান বলে কিছুই রাখল না।এই বাড়িতে জীবনে পুলিশ আসতে সাহস পায়নি।তোর ছেলের জন্য আজ পুলিশ এসছে।এসে আবার আমার কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে।এখন যদি আমি এই পুলিশকে কিছু বলি বাইরে গিয়ে সাংবাদিকদের বললেই আমার কেলেংকারী হয়ে যাবে।মান-ইজ্জত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবেনা।”

মেরি ওয়াসেল এর হাত কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে বলল,
“ছেলে তো আমার একার নয় আপনার ও। আপনি তাকে যা বলার বলুন।আপনাদের এসব ঝামেলায় রোজ আমাকে জড়ান কেন?”

“কি বলব আমি।কিছু বললে হাজার টা যুক্তি দাঁড় করায়।ও যে সততা দেখায় তাতে ব্যবসার মাঠে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।আমি বিয়ে দিব আরেকটা বড় ব্যবসায়িক পরিবারে।তাতে আমার ব্যবসায়িক লাইনের সুবিধা হত।আমার বন্ধু আরিফ এর মেয়ে অজান্তা প্রভাতের বেষ্ট ফ্রেন্ড।দুজনের বিয়ে দিতে পারলে আমার সব দিক দিয়ে লাভ হত।”

” আপনিই তো জোর করলেন পূর্ণতার সাথে প্রভাতের বিয়ে দিতে।ছেলেতো রাজি ছিলনা।”
“তোর ছেলে আমাকে দিয়ে জোর পূর্বক পূর্ণতাকে বিয়ের ব্যাপারে বলিয়েছে।।আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে একাজ করিয়েছে।আমাকে এমন ফাঁদে ফেলেছে যে আমি বাধ্য হয়ে এ কাজ করেছি।”
“আপনার থেকেই তো ব্ল্যাকমেইল শিখেছে।যোগ্য বাবার যোগ্য সন্তান।”
” আমি এ বিয়ে হতে দিবনা,কিছুতেই না।”

” আপনিও ভাল ভাবে জানেন ছেলের সাথে পারবেন না।”
বলেই মেরি আলমারি থেকে টাকা বের করল।ওয়াসেল কে বলল, ” আমি পুষ্পকে নিয়ে বের হচ্ছি,ফিরতে সন্ধ্যা হবে।”
“তুই এখন সাজগোজ করে কোথায় যাচ্ছিস।”
“ভুলে গেলেন আজ শ্রাবণ মাসের ৩ তারিখ।”
“আজ তোকে আমি বাইরে যেতে দিবনা। ”

“আপনি জানেন আমাকে কোনভাবেই আটকানো যাবেনা।বছরের এই একটি দিন ই আমি বাইরে যায়।”
“এই দিনে বাইরে যাওয়ার জন্য তুই আর কত মা-ই-র খাবি। বয়স শেষ হয়ে এল এখনো তুই অতীত ভুলতে পারলিনা।”

“মে-রে ফেলুন আমাকে নিষেধ তো করিনি।এই দিনে ম-র-তে পারলেও শান্তি।”
“তোর ছেলের বয়স ত্রিশ বছর আর তুই এখনো পুরণো নাগরের জন্য কান্দিস।”
“এ কাঁন্না আমার আজন্মের।আমার প্রতিটা শিরা -উপশিরার কাঁন্না।”
“তোর ছেলে মেয়ের কাছে বলব, তোর কাহিনী?মুখ দেখাতে পারবি?”
“বলেন?তবে মিথ্যা বলবেন না।আমি কেন যায় তা নিয়ে সত্য টা বলবেন।”
ওয়াসেল মেরির মুখ চেপে ধরে বলল, ” বেশী বাড়িস না, পরিস্থিতি ভাল হবেনা।”

গাড়ি থেকে নেমে বেশ ভাবের সাথে হাঁটছে পূর্ণতা।তার পেছনে পেছনে হাঁটছে প্রভাত।দেখে মনে হচ্ছে যেন রাজরানির সাথে সুদর্শন একজন বডিগার্ড।প্রভাত রাস্তায় বেরোলে চারদিকে মানুষের ভীড় জমে।আজও তাই।স্থানীয় দলীয় লোকজন খবর পেয়ে এগিয়ে এল প্রভাত কে আপ্যায়ন করার জন্য।কেউ কেউ ছুটে আসছে ছবি তোলার জন্য।মানুষজন গোল করে ঘিরে ধরল প্রভাত আর পূর্ণতাকে।অন্য দিনের তুলনায় আজ মানুষের ভীড় বেশী।

কেননা প্রভাত চৌধুরীর সাথে আজ একটা সুন্দরী মেয়েও এসছে।নিঃসন্দেহে এই মেয়ে প্রভাত চৌধুরীর গার্লফ্রেন্ড হবে।পূর্ণতা বিরক্ত হচ্ছে।ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে।মানুষের এত ত্যালানো স্বভাব তার পছন্দ নয়।মানুষজন একদম গা ঘেষে এসে দাঁড়াচ্ছে।বিশেষ করে মেয়েরা একদম গায়ে ঘেষে এসে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে।যে যার মত সুযোগ পেয়ে এক গাঁদা সেল্ফি তুলছে আর প্রভাত কে বলছে, প্লিজ ভাইয়া একটু এদিকে তাকান।

প্রভাত সেদিকে তাকাচ্ছে।কিছু মেয়েরা তাদের পরিচিত ভাইদের বলে অনুরোধ করে ভীড় ঠেলে ঠুলে ছবি তুলছে।পূর্ণতার চোখ মুখে তীব্র বিরক্তির ছড়াছড়ি গরমে তার অসহ্য লাগছে।এত সেলিব্রিটি ব্যাপার স্যাপার ও তার পছন্দ নয়।একদম সাধারণ সাদামাঠা জীবন তার পছন্দ।যেখানে মানুষ ফ্যান ফলোয়ার অর্জনের জন্য রাত দিন পরিশ্রম করে সেখানে পূর্ণতার বিষাক্ত লাগে এসব।ছোট বেলা থেকে তার এসব ভাল লাগেনা।তার শহর ছেড়ে জন মানব ছেড়ে দূরে কোথাও গিয়ে থাকতে থাকতে ভাল লাগে। এরই মাঝে একটা মেয়ে এসে প্রভাতের কাঁধে হাত রেখে বলল, “ভাইয়া প্লিজ কিছু মনে করবেন না? আমি এভাবে একটা ছবি তুলতে চাই।”

প্রভাত পূর্ণতার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আমি কি পারমিশন দিব?”
পূর্ণতা বিড় বিড় করে বলল, “আমি কীভাবে বলব,ঘাড়ে হাত দিয়ে ছবি তুলবেন নাকি কোলে নিয়ে ছবি তুলবেন।”
“তোমার জিনিস তুমি যা বলবা তাই হবে।”
“আমার জিনিস?”

“হ্যাঁ, আমি এখন আর আমার নেই।তোমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে গিয়েছি।”
“আমার একদম বিরক্ত লাগছে।মানুষ জন সরান।”
প্রভাত মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটু কঠিন কন্ঠে বলল, “হাত সরান আপু। এত ঘনিষ্টতা আমার পছন্দ নয়।এভাবে হুট করে পারমিশন ছাড়া কারো গায়ে হাত দেওয়া ঠিক নয়।”
মেয়েটি হাত সরিয়ে নির্লজ্জের মত তাও ছবি তুলল।মেয়েদের এসব কান্ড দেখে দেখে পূর্ণতা বলছে,

“দুনিয়ায় এত গায়ে পড়া মেয়েও আছে? তোরা মেয়ে তোরা হবি আমার মত।প্রভাতের মত ছেলে পিছ পিছ ঘুরবে, বিয়ের জন্য প্রেশার দিবে কিন্তু পাত্তা দিবিনা।বার বার রিজেক্ট করবি।জীবনে যদি দশটা ছেলের প্রপোজ ই রিজেক্ট না করতে পারিস তাহলে মেয়ে হয়ে জন্মানোর স্বার্থকতা কোথায়?আর এই প্রভাত কে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন ভাই?দুনিয়াতে কি আর কোনো ছেলে নেই।প্রভাতের মাঝে বিশেষ কি আছে যার জন্য একটা ছবি তোলার জন্য তেলাতে হবে।এতে যে প্রভাতের আরো ভাব বাড়ছে মেয়েরা কি তা টের পাচ্ছেনা।কি আশ্চর্য! কি আশ্চর্য! ”

কিছু ছেলে পূর্ণতাকে ভাবি ডেকে সালাম দিতে দিতে ফ্যানা তুলে ফেলছে।বিরক্ত হলেও পূর্ণতা ভদ্রতা রক্ষার্থে উত্তর দিচ্ছে।সবাই কে ভাবি ডাকতে দেখে প্রভাত সবার উদ্দেশ্য বলল, “আমি একটি ঘোষণা দিতে চাই,আজকের পর থেকে আমার পাশে থাকা মেয়েটিকে রাস্তাঘাটে যেখানে দেখবা কেউ ভাবি ডাকবা না। আমি তোমাদের ভাই কিন্তু আমার বউ তোমাদের ফুফুআম্মা।জাস্ট ফুফু বলবা না কেউ।ফুফুর সাথে আম্মা টা ডাকবা।এক সাথে ফুফুআম্মা।”
পূর্ণতা বিরক্ত চোখে প্রভাতের দিকে তাকাল।সর্বোচ্চ রকমের অবাক হয়ে প্রভাতের দিকে তাকিয়ে ভাবছে,
“একটা মানুষ কত বড় মাপের অসভ্য হলে নিজেকে ভাইয়া আর তার চেয়ে বয়সে ছোট একটা মেয়েকে ফুফু আম্মা বলে পরিচয় করাতে পারে।”

একটা ছেলে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, “ফুফুআম্মা আপনাকে খুব বিরক্ত লাগছে।” চারদিকে থেকে যে যার মত ফুফুআম্মা বলে ডাকছে পূর্ণতাকে।পূর্ণতার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল।বিরক্ত কন্ঠে একটা ছেলেকে বলল,
“আমি বুঝলাম না আপনি কোন আক্কেলে আমাকে ফুফু আম্মা ফুফু আম্মা ডেকে ফ্যানা তুলছেন আর ওই বুইড়া লোক যে আমার চেয়ে প্রায় দশ বছরের বড় হবে তাকে ডাকছেন ভাইয়া।আমাকে যদি ফুফু আম্মা ডাকেন উনাকে ডাকবেন দাদা।ডাকুন উনাকে দাদা।”

ছেলেটা মাথা নিচু করে বলল, “ভাই এর কথার এদিক-ওদিক করা যাবেনা ফুফুআম্মা।”
ছেলেটির মুখে আবার ফুফু ডাক শুনে পূর্ণতা বিরক্ত হয়ে ভিড় ঠেলে বের হল।প্রভাত ও ভিড় ঠেলে বের হল।দু’জনে শপিং মলে প্রবেশ করল।পূর্ণতা নিজের ইচ্ছামত শাড়ি আর থ্রী-পিছ নিল।কতগুলা নিল তার হিসাব করেনি।প্রভাত কার্ড দিয়ে টাকা পরিশোধ করে দিল।দোকান থেকে বের হওয়ার সময় পূর্ণতাকে প্রভাত কে বলল,

“ব্যাগ গুলা নিন।নিয়ে গাড়িতে চলুন।একটা ব্যাগ ও আমি ধরতে পারব না।”
প্রভাত বলল, “ওকে ঠিক আছে।আমার জন্য কিছু কিনতে হবে কিনে নেই?”
“কিনুন।”

প্রভাতের পরণে কালো একটা হাতা লম্বা ব্রান্ডের গেঞ্জি, কালো জিন্স,গেঞ্জির হাতা গোটানো।সে বেশীর ভাগ সময় জিন্স আর হাতা লম্বা ব্রান্ডের গেঞ্জি পরে থাকে।এতেই তাকে মারাত্মক সুদর্শন লাগে।মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে তার সৌন্দর্য্য কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়।এত কম বয়সী সুদর্শন ছেলে যদি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকে মেয়েরা তো পা-গ-ল থাকবেই।

প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি কি একটু চয়েস করে দিবে?”
পূর্ণতার কি মন হল সে উঠে দাঁড়াল।উঠে দাঁড়াতেই প্রভাত বলল, “ভাই ব্রান্ডের ভাল আন্ডারওয়্যার দেন।”
কথাটা পূর্ণতার কর্ণকুহরে যেতেই তার চোখ বড় বড় হল।মুহুর্তের মাঝে এত মেজাজ খারাপ হল এক সেকেন্ড ও অপেক্ষা না করে রুমের বাইরে গিয়ে দাঁড়াল।পূর্ণতাকে বাইরে আসতে দেখে প্রভাত ও বাইরে আসল।পূর্ণতাকে বলল,

“কি হল? চলে এলে যে?”
পূর্ণতা দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“না মানে আমি বুঝতে পারছি না আপনার সমস্যা টা কোথায়? আপনার এখনি কেন আমার সামনে এইসব ছোট ছোট প্যান্ট কিনতে হবে।লজ্জা কি একেবারে ধুয়ে গিয়েছে?”
প্রভাত জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
“লজ্জা? কি আশ্চর্য কথা বলো!আমার লজ্জা থাকবে কেন?”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭

“ঠিক ই বলেছেন আপনি একেবারেই নির্লজ্জ।যার লজ্জা নেই তার চেয়ে সুখি মানুষ এই দুনিয়াতে একটাও নেই।”
প্রভাত পূর্ণতার কাধে হাত রাখল।কানে ঠোঁট মিশিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“পুরুষ মানুষের লজ্জা না থাকার কারণেই ওরা সুখি।লজ্জা থাকলে কি আর বউ আদর আদায় করে নেওয়া যায়।বউ এর আদর -ভালবাসা ছাড়া পুরুষের সুখ আছে কোথাও?”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৯