অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬
Mousumi Akter

ধরণীতে রাতের আঁধার কেটে গিয়ে প্রভাতের আগমণ হয়েছে।চৌধুরী বাড়ির আঙিনায় সকাল সকাল হাজির হয়েছে জেলে ফায়েক উদ্দিন।ফায়েক নদীতে মাছ ধরে।সারারাত ধরে যে মাছ পায় ভোরে আগে চৌধুরী বাড়ির আঙিনায় নিয়ে আসে।চৌধুরীরা পছন্দমত মাছ নেওয়ার পর ফায়েক মাছ নিয়ে বাজারে যায়।

আজ ও রিতীমত মাছ নিয়ে এসছে।মেরি ঘুম থেকে উঠেছে অনেক আগেই।কিন্তু জাহান আজ ঘুম থেকে ওঠেনি।জাহান তো এত দেরি করেনা ঘুম থেকে উঠতে।মেরি কিছুটা চিন্তিত হল।জাহান কে কি সে ডাকবে? বুঝতে পারছেনা।কাল রাতে ঘুম হয়নি নিশ্চয়ই ঘুম ভাল হচ্ছে আজ।জাহান কে ছাড়া সে মাছ কীভাবে বেছে রাখবে বুঝতে পারছে না।কোন মাছ কোন সব্জির সাথে যাবে সেটা জাহান ভাল বোঝে।মেরি নিজের ইচ্ছামত সব মাছ রাখল
।অন্য দিনের তুলনায় আজ মাছ কম।মেরি ফায়েক কে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“মাছ এত কম কেন আজ? বেলে মাঘ,চিংড়ি মাছ নেই কেন?”
“আমার পোলা আইছে ঢাকা থেকে।ওর মা আজ সব মাছ বেছে বেছে পোলার জন্য রাখছে।”
“কি করে তোমার ছেলে ঢাকায়?”
“বিসিএস পড়ে।বাংদেশের সব চেয়ে বড় পড়া এইডা”
মেরি হাসল। ফায়েকের কথা শুনে।হেসে বলল,
“টাকা নিবেনা?”
“গত সাত দিনের টাকা আমার পোলা আইব ওর কাছে বুঝায় দিয়েন।”
“আচ্ছা।”

এইদিকে মেরি পড়েছে চিন্তায়। জয়নাব ও আজ আসেনি।মাছ কাটবে কে?সবজি বা কাটবে কে? জয়নাব ই মাছ,সব্জি মশলা রেডি করে। এইদিকে আবার সবার চা দিতে হবে।মেরি বুঝতে পারছে না একা হাতে কীভাবে কি করবে।জয়নাব এ বাড়িতে নতুন এসছে কাজের জন্য।সাতদিন হল কাজে ঢুকেছে।পাশের এলাকাতেই বাসা।সে আজ আসবেনা সে-কথা তো জানিয়ে গেলনা রাতে।মেরি জয়নাবের স্বামীর নাম্বারে ফোন করল।

সে নাম্বার ও বন্ধ।মেরি কোনো ঘটনা বুঝে উঠতে পারছে না।সে দো’তলায় গেল।জাহান আর ওয়াজেদ এর ঘরের সামনে দাঁড়াল।ঘরের দরজা বাইরে থেকে দেওয়া।তার মানে ভেতরে কেউ নেই।মেরি দরজা খুলে ধাক্কা মারল।দরজার কপাট দু’দিকে সরে যেতেই মেরি ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল।চারদিক চোখ বুলিয়ে দেখল কেউ নেই।

মেরির বুক ছ্যাঁৎ করে উঠল।জাহানের নাম ধরে কয়েকবার ডাকাডাকি করল কিন্তু জাহানের সাড়াশব্দ পেলনা।পূর্ণতা আর পুষ্প একই রুমে একই বিছানায় ঘুমোয়।মেরি ওদের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে পুষ্পের নাম ধরে কয়েকবার ডাকল।মেরির ডাকে পুষ্পের ঘুম ভাঙল।পুষ্প চোখ ডলতে ডলতে ঘরের দরজা খুলল।ঘুম ঘুন কন্ঠে হেলে, দুলে বলল,

” কি হয়েছে আম্মু?”
“কিছুই হয়নি কিন্তু তোমার কাকিমনি তো রুমে নেই।তাকে খুজে পাচ্ছিনা।”
” আমাদের সাথেই ঘুমিয়েছে। ”
মেরি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ” আমি ভাবছি গেল কোথায়?”
” কাকু কাল কাকির গায়ে আবার হাত তুলেছে।তারপর বাইরে গিয়েছে আর ফেরেনি।”
” একি আর নতুন।”
” তবে, কাকিমনির প্রচুর জ্বর এসছে।”
মেরি ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল।

পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরে সুয়ে আছে জাহান।মা আর মেয়ের এমন দৃশ্য দেখে চোখ জুড়াল মেরির।গতরাত থেকে জাহানের ভীষণ জ্বর।জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে গা।পূর্ণতা আর পুষ্প সারারাত মাথায় জলপট্টি দিয়েছে।
মেরি পুষ্পকে বলল, “কাল রাতে পূর্ণতাকে নিয়ে প্রভাত কোথায় গিয়েছিল জানো?”

” গেস্ট হাউজে নিয়ে খাবার খাইয়ে দিয়েছে।”
” তোমার বাবা সারারাত এই নিয়ে আমাকে যা তা বলেছে।”
” বাবা তার ছেলেকে বলুক। তোমাকে বলছে কেন?”
” ছেলে এখন আর ছোট নেই, তাই বলার ও সাহস পায়না।”
এমন সময় ওয়াসেল চৌধুরীর ঘুম ভাঙল।সে নিচ তলায় ঘুমোয়।ঘুম ভাঙতেই হাই তুলতে তুলতে নিচ তলার ডায়নিং এ বসে বলল, ” কই চা কই?”
মেরি বলল, ” ওইযে উঠে পড়েছে।আমি একা হাতে এতকিছু কীভাবে সামলাবো।তোমার বাবার তো আদা চা দিতেই হবে।”

” কেন আম্মু?” জয়নাব আন্টি।”
” সে-ও আজ আসেনি।”
” একটা ফোন দাও।”
” ফোন অফ।”
” আশ্চর্যজনক ব্যাপার।”
“দেখি রহিম কে পাঠিয়েছি কি বলে এসে।”
“আচ্ছা নিচে যাও বাবাকে চা দাও।আমি এসে হেল্প করছি তোমাকে।”

মেরি নিচে নামল।কিচেনে গিয়ে আগে ওয়াসেল এর জন্য চা বানাল।ওয়াসেল এর পাশে তার মা জমেলা ও বসে আছে।জমেলা মুখ গম্ভীর করে বসে আছে।গত রাতেই সে ব্যাগ গুছিয়েছে।মেয়ের বাড়িতে চলে যাবে।ওয়াসেল তার মা’কে বুঝিয়ে পারছেনা।ভোর হতে না হতেই সজল উপস্থিত হল এ বাড়িতে।অনেক দিন পর সজল এল এ বাড়িতে।সজলের সাথে পূর্ণতার বিয়ের কথা হওয়ার পর থেকে সজল আর এ বাড়িতে আসেনি।জমেলার ফোন পেয়ে সজল এর মা ভোর সকালেই সজল-কে পাঠিয়ে দিয়েছে।সজল-কে দেখেই জমেলা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

” উপর থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে আয়।”
সজল ওয়াসেল কে সালাম দিল।ওয়াসেল সজল-কে বসতে বলল।সজল বসলে ওয়াসেল সজল এর পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, ” তোর মায়ের খুব রাগ না বাবা আমার উপর।তোর ও মামার উপর রাগ।”
” না’ না মামা।”
“আসলে ওয়াজেদ এর আর কোন সন্তান নেই যার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
“আপনার যা ভাল মনে হয়েছে তাই করেছেন মামা।”
জমেলা বলল, ” এইবার চল সজল।”

ওয়াসেল জমেলার দিকে তাকিয়ে বলল, “আহা! মা।তোমার কি একটু জ্ঞান -বুদ্ধি নেই।কতদিন আসেনা ছেলেটা।এসছে সপ্তাহ খানিক থাকুক।তুমি বা এমন অশান্তি করছো কেন?”
” থাকার হলে থাকবে,তবে আমাকে দিয়ে এসে থাকবে।”
” তোর নানীর মাথা ঠিক নেই।”
ওয়াসেল রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কই প্রভাতের মা।দেখে যা সজল এসছে।ওর জন্য ভিআইপি নাস্তা বানা।”
মেরি কিছুটা অবাক হল।নিশ্চয়ই এখানেও কোনো রাজনীতি আছে।শিরিনের আসার কথা।শিরিন না এসে আসল সজল।আর এত যত্নের কারণ কি?
মেরি চা নাস্তা নিয়ে গেল।মেরি কে দেখেই সজল সালাম দিয়ে বলল, “মামি ভাল আছেন?”
” ভাল আছি বাবা।তুমি কেমন আছো?”
” জি মামি ভাল।”

ওয়াসেল মেরির দিকে তাকিয়ে বলল,” আজ এত দেরী কেন?”
” জাহানের জ্বর এসছে, এইদিকে জয়নাব ও আসেনি।”
জমেলা মুখ পুড়িয়ে আছে।মেরির কথা পড়তেই ঝামটা দিয়ে বলল, ” “আমি কিছু বললেই দো’ষ হয়ে যায়।মহিলা মানুষের গায়ে সামান্য তাপ আসতেই পারে।এ বাড়ির মহিলারা সামান্য তাপ হলেই চিৎ হয়ে থাকে।”
মেরি ওয়াসেল এর দিকে তাকিয়ে বলল, ” একা হাতে এত কাজ কীভাবে করব আমি।মাছ কাটতে হবে।”
জমেলা বলল, ” তা আমার ছেলে কি মাছ কেটে দিবে তোমাকে।”
মেরি জমেলার দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলল না।

ওয়াসেল চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল, ” তোর না ছেলে বিয়ে করছে।ছেলের বউ দিয়ে কাজ করা।ট্রেনিং দে।”
জমেলা মুখ বিশ্রি রকম বাঁকিয়ে বলল, ” ওই মেয়ে করবে কাজ।একটা কুটো ও সরাবে না বলে দিলাম।”
ওয়াসেল তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ” মা তোমার যাওয়া হচ্ছে না।সজল এসছে কয়েকদিন থাকবে।মাথা ঠান্ডা করে চুপ করে বসো।আমাকে আর জ্বালিও না।তাহলে বাড়িতে আ’ গু’ ন লাগিয়ে দিব।”
” যেখানে ইচ্ছা আ-গু-ন জ্বালায় দে।আমার কি তাতে।”

ওয়াসেল সজল-কে বলল, ” চল মামা বাগান দিয়ে হেঁটে আসি।”
ওয়াসেল সজল এর ঘাড়ে হাত দিয়ে বাগানের দিকে নিয়ে গেল।মেরির সন্দেহ হচ্ছে কিছু না কিছু কাহিনী এখানে আছেই।সহজ সরল সজল কে কোন কাজে ব্যবহার করবে তার ঠিক নেই।ওয়াসেল সজল-কে কি কি বলল তা কেউ জানেনা।লাস্টে বলল, ” আমার বংশের নিতী ধরে রাখতে এটুকু করতেই হবে।তোমাকে আমি সব ধরনের সাহায্য করব।তোমাকে যা শিখিয়ে দিলাম তাই করো।”

সজল বলল,”আপনি সাহস দিয়েছেন যখন আমি পারব-ই মামা।”
“আমি জানি তুমি পারবে সজল।”
এমন সময় রহিম ফিরে এল।রহিম এসে জানাল,” জয়নাব গতরাতে বাড়ি ফেরে নি।জয়নাবের স্বামী ভেবেছে সে এ বাড়িতেই থেকে গিয়েছে।”
মেরি খানিকটা অবাক হল।জয়নাব বাড়ি ফেরেনি মানে।জয়নাব তো বাচ্চাদের খাবার নিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছে।বাচ্চাদের রেখে তো সে অন্য কোথাও যাবেনা।জয়নাবের কি কোনো বিপদ হল।মেরি রহিমকে বলল, “তোর চাচা বাগানে আছে গিয়ে শিঘ্রী খবর টা দে।”

মিনিট পাঁচেক এর মাঝে চৌধুরী বাড়িতে হই-হুল্লোড় পড়ে গেল।জয়নাব গেল কোথায় এটা নিয়ে।নিচের চেচামেচিতে পূর্ণতার ঘুম ভাঙল।অনেকদিন পর নিজের মা’কে জড়িয়ে ধরে শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছিলো পূর্ণতা।পূর্ণতা চোখ খুলে দেখল জাহান নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।এখন আর গায়ে জ্বর নেই।পূর্ণতার মনে আছে ছোট বেলায় সে ওষুধ ছিড়ে খাইয়ে দিত তার মা অসুস্থ হলে।তার বাবা খোজ নিত না।কোনদিন কপালে হাত দিয়েও দেখত না।জ্বর কমেছে কীনা সেটাও জিজ্ঞেস করত না।তখন পূর্ণতা ছোট। জাহান ওয়াজেদ কে বলেছিলো,

“আমার কপালে একটু হাত রাখবে।”
ওয়াজেদ দাঁত কিড়মিড় করে বলেছিলো, ” এত নাটক করার সময় নেই আমার।ওষুধ খা সেরে যাবে।”
জাহান বলেছিলো, ” আমার জ্বরে খুব কষ্ট হচ্ছে।তুমি একটু দেখবে।”
ওয়াজেদ বলেছিলো, “আমি তোর কপালে হাত দিলে কি সেরে যাবে।আমি কি কোনো ওষুধ নাকি।এমনি সময় তো কাছে গেলে এখন না তখন করিস।যখন আমি ছুঁতে চাই বাহানা করিস।” বলেই ওয়াজেদ ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।
জাহান জ্বরের ঘোরে কাদতে কাদতে বলেছিলো, ” স্বামীর একটু ভালবাসা স্ত্রীর সব রোগ এমনিই সারিয়ে তুলতে পারে।তুমি কোনদিন বুঝলে না।”

পূর্ণতা রুম ছেড়ে বের হয়ে দেখল নিচে মানুষের ভীড়।পুষ্প ও নিচে আছে।পূর্ণতা এলো মেলো পা ফেলে নিচে নামল।পূর্ণতা নিচে এসে যা বুঝল জয়নাব নিঁখোজ।জয়নাব গতরাতে বাড়ি ফেরেনি।জয়নাবের স্বামী বাচ্চা দুইটা সাথে এনে ওয়াসেল চৌধুরীর পা ধরে বলছে, “আমার দুইটা ছোড বাচ্চা সাহেব।আমার জয়নাব রে খুইজা আইনা দেন। বাচ্চা দুইডা দেহেন কাঁন্নাকাটি করতাছে।”

পূর্ণতা মনে মনে বলছে, “জয়নাব আন্টি হঠাৎ গায়েব হল কোথায়?”
ওয়াসেল চৌধুরী কঠিন মেজাজে বলল, “তোর বউ দেখ কার সাথে ভেগে গেছে।যুগ যামানা ভালনা।আজকাল এর বউ ওর সাথে,ওর বউ তার সাথে ভাগতেছে।এ নতুন কিছু না।”
জয়নাবের স্বামী কাদতে কাদতে বলল, “আমার জয়নাব এমন না সাহেব।আমার জয়নাব এমন না।ও আমারে মেলা ভালবাসে।”

“তুই মহিলা মানুষের জন্য গড়াগড়ি করছিস আর কাদছিস।যা আমি দু’চোখে দেখতে পারিনা।বের হ আমার বাড়ির ত্রীসীমানা থেকে।”
এমন সময় প্রভাত উঠে এল ঘুম থেকে।ওয়াসেলের কথা শুনে প্রভাত বলল, “উনি মহিলা মানুষের জন্য কাঁন্নাকাটি করছে না বাবা।যার জন্য কাদছে সে উনার ওয়াইফ।যাকে উনি ভালবাসেন। ভালবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে কাঁন্না তো আসবেই।”
ওয়াসেল প্রভাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “তাই বলে যে ওরে ছেড়ে অন্য পুরুষের সাথে ভেগে গেছে তার জন্য কাদবে?”

“কার সাথে ভেগেছে বাবা।”
“আমি কীভাবে জানব কার সাথে ভেগেছে।”
“তাহলে বুঝলে কীভাবে ভেগে গিয়েছে।”
“না ভাগলে বাসায় যায়নি কেন?”
“এমন ও তো হতে পারে তার কোনো বিপদ হয়েছে।”
“কীসের বিপদ হবে?”
“সেটা পুলিশ কে জানালেই খুজে বের করতে পারবে।জয়নাব আন্টির স্বামীকে সাথে নিয়ে একটা মামলা দিয়ে আসি পুলিশের কাছে।”

“পা’গ-ল হয়েছো নাকি তুমি।পুলিশের কাছে এসব খবর দিলে আমাদের চৌধুরী পরিবারের মান-সম্মান নষ্ট হবে।”
“মানুষের জীবনের চেয়ে তোমাদের মান-সম্মান বড়না।”
“তুমি দেখছি এই পরিবারের সম্মান ডুবিয়ে ছাড়বে।”
“আমার দ্বারা তোমার সম্মান নষ্ট হবেনা এইটুক নিশ্চিন্তে থাকো।”

প্রভাত জয়নাবের স্বামীকে নিয়ে থানায় গেল।ফিরে এল ২ ঘন্টা পরে।প্রচন্ড দুঃচিন্তা মাথায় নিয়ে প্রভাত বাসায় ফিরল।জয়নাব যে কারো সাথে ভেগে যায়নি এ বিষয় এ নিশ্চিত প্রভাত।জয়নাবের বাবার বাড়ি খোজ নিয়েছে সেখানেও যায়নি।তাহলে গেল কোথায়? চিন্তা করতে করতে বাসায় ঢুকতেই দেখা হল পূর্ণতার সাথে।পূর্ণতার পরণে কালো জিন্স,পরণে লাল টপ্স।প্রভাত কে দেখে থমকে দাঁড়াল পূর্ণতা।প্রভাত পূর্ণতার আপাদমস্তক দেখে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“কোথায় যাচ্ছো?”
“কলেজে।”
“তোমার না কলেজ যাওয়া বন্ধ।”
“কে করেছে বন্ধ?”
“আমি করেছি গতকাল শোননি।”
“না শুনিনি।কেন শুনব আমি? আপনার জন্য কলেজ বন্ধ করে আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট করব না আমি।”

“তোমাকে তো কলেজে যেতে নিষেধ করিনি আমি।প্রভাত চৌধুরীর স্ত্রী হাইয়ার এডুকেটেড হবে।তবে এ ধরনের আজে বাজে পোশাক করে নয়।”
“আমার এসব পরতেই ভাল লাগে।”
প্রভাত পূর্ণতার খানিকটা কাছাকাছি এসে বলল, “এমন টাইট জিন্স, ওড়নাবিহীন টপ্স পরে নগ্নতার পরিচয় দিলে কি সম্মান বাড়বে?”
“এখানে নগ্নতা পেলেন কোথায়?”

“নগ্নতা ছাড়া কি? বাইরে যাবে যত ছেলে তোমাকে দেখবে তোমার দিকে খারাপ নজরে তাকিয়ে দেখবে।পেছনে তাকিয়ে দেখবে।ওরা বাজে কমেন্টস করবে।”
“আপনাকে বলেছে কেউ ওরা এসব কমেন্টস করবে?”
“কারণ আমিও ছেলে।রাস্তায় অশ্লিল পোশাক পরা মেয়ে দেখলে নজরে আসে।”
“বাহ!রাস্তাঘাটে গিয়ে এভাবে মেয়ে দেখে বেড়ান।”
“তোমাকে যে বুঝাতে পারব না সেটা আমি জানি।তোমার টোটাল কলেজ যাওয়া বন্ধ।আমার বউ আমি একা ছাড়ছিনা।”

“শুনুন আমি কারো সাথে ভেগে যাবোনা।আমি একা ও যাচ্ছিনা।আমার সাথে সজল ভাই যাচ্ছে।”
প্রভাত দুই ভ্রু উঁচাল।নিমিষেই মেজাজ তীক্ষ্ণ হল
।ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল, ” কি বললে তুমি? সজল ভাই।বিড়ালের কাছে দুধ পাহারা দেওয়ার মত ননসেন্স আমি না।সজল এর আশেপাশে কিন্তু একদম যাবেনা পূর্ণ। ভুলেও যাবেনা।তাহলে কিন্তু জয়নাব আন্টির মত সজল ও গায়েব হয়ে যাবে।”

পূর্ণতা সন্দিহান কন্ঠে বলল,
“তার মানে কী? জয়নাব আন্টিকে আপনি গায়েব করেছেন?”
প্রভাত যেন আকাশ থেকে পড়ল।ডানে বামে তাকাল।খানিকটা অবাক হয়ে বলল,
“জয়নাব আন্টিকে আমি কেন গায়েব করতে যাব?কিসব বলছো তুমি। জাস্ট একটা উদাহরণ দিলাম।এইবার ঘরে চলো।এসব পোশাকে আমি তোমাকে বাইরে যেতে দিবনা।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৫

“আমার এসব ছাড়া আর কোনো পোশাক নেই প্রভাত ভাই।”
করুণ কন্ঠে বলল পূর্ণতা।
প্রভাত পূর্ণতার গালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল,
“চলো আমার সাথে।আজ তোমাকে এত ড্রেস কিনে দিব সারাজীবনে ড্রেসের অভাব তোমার হবেনা।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭