অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৫

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৫
Mousumi Akter

প্রভাত শীতল চোখে পূর্ণতার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলল, “তোমার হাতে এখন দুইটা অপশন পূর্ণ।হয় এই ক্ষুদার্ত মানুষটা কে খাইয়ে দিবে নয় এই ক্ষুদার্ত মানুষটার হাতে তোমাকে খাবার খেতে হবে।বলো কোনটা করবে?চুজ করো কুইক।”

পূর্ণতা আশ্চর্যজনক ভাবে তাকাল প্রভাতের প্রস্তাব শুনে।যেখানে সে প্রভাতকে দু’চোখে সহ্য করতে পারছেনা সেখানে প্রভাতের হাতে খাবার খাওয়া বা প্রভাতকে খাইয়ে দেওয়ার কথা প্রভাত কল্পনা করল কীভাবে?রাগে চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে পূর্ণতার।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আপনার শখ দেখে আমি জাস্ট আশ্চর্য হচ্ছি! মানুষ এমন অদ্ভুত শখ কীভাবে করে?”
প্রভাত ডান ভ্রু কুঁচকালো।কয়েক সেকেন্ড পূর্ণতার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলল,
” শখ?”
“শখ ছাড়া আমার কাছে তো ভিন্ন কিছুই মনে হচ্ছেনা।”
প্রভাত মৃদু হাসল।নিঃশব্দে ঠোঁটের এক কোনায় খানিকটা হাসির ছড়াছড়ি।হাসির মাত্রা বাড়াল।হাসতে হাসতে পূর্ণতার চোখে তাকিয়ে বলল,

“প্রভাত চৌধুরীর কোনো শখ অপূর্ণ আছে দেখেছো তুমি?প্রভাত চৌধুরীর শখ মানে তার জিদ।আমার জিদের ভয়াবহতা সম্পর্কে কি নতুন করে ক্লাস নিতে হবে?”
পূর্ণতা তাচ্ছিল্যর সুরে হাসল।চোখের চাহনিতেও তাচ্ছিল্য।হেসে বলল,
“খুব প্রাউডফিল করছেন তাইনা নিজের পাওয়ার নিয়ে।পূর্ণতা চৌধুরী আজ আপনার এই শখ আর জিদ অপূর্ণ রাখবে।
না আমাকে খাইয়ে দিতে পারবেন,না আমার হাতে খেতে পারবেন।দুটোর কোনটায় আজ করতে পারবেন না।”

“চ্যালেঞ্জ করছো? ”
“যদি বলেন চ্যালেঞ্জ তাহলে চ্যালেঞ্জ, যদি বলেন জিদ তাহলে জিদ।”
প্রভাত সামনে চুল পেছনের দিকে উজিয়ে দিয়ে আবার ও মাদকভরা দৃষ্টিতে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে হাসল।সদ্য গজানো দাঁড়িতে হাত বুলাল।মুচকি হেসে বলল,

“ইন্টারেসটিং পূর্ণতা! ভেরি ইন্টারেস্টিং! এতদিন কোথায় ছিলে তুমি? প্রভাত চৌধুরী চ্যালেঞ্জিং কাজ করতে খুব পছন্দ করে।তোমার এই চ্যালেঞ্জ আমাকে তোমার প্রতি আরো ইন্টারেস্টেড করে তুলল।আমার তো তোমার মতই বউ চাই।একবার নয় হাজার বার চাই।বাইরে হাবিজাবি দলের সাথে গেম খেলে খুব একটা মজা পাচ্ছিনা।খুব সহযে স্যালেন্ডার করে নেয়।তোমার মত তেজী,জেদী মেয়েই তো আমার চাই।ঘরের ভেতর প্রতিটা কাজ চ্যালেঞ্জিং হবে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমাদের দাম্পত্য জীবন অনেক বেশী ইন্টারেস্টিং হতে চলেছে।আসলে তেতো মিষ্টি সম্পর্ক ছাড়া সম্পর্কে কোনো মজা নেই।তুমি না হয় সব সময় এমন আ’গু’ন গরম হয়ে থেকো।আমি তুষার হয়ে তোমায় নেভাবো।”

পূর্ণতা বাঁকা চোখে প্রভাতের দিকে তাকাল।দরজার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।সোজা দরজার দিকে পা বাড়াল বাইরে যাওয়ার জন্য।প্রভাত সেটা দেখে আবার ও মৃদু হেসে মনে মনে বলল, “মেয়েটার জিদ আছে,তেজ আছে কিন্তু বোকাও আছে।প্রভাতের খাঁচার দরজা খোলার মত চাবি ওর কাছে নেই।বোকা মেয়েটা বুঝতে পারছেনা কেন?”

পূর্ণতা দরজায় হাত রাখতেই প্রভাত সেকেন্ড এর মাঝে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।পূর্ণতা প্রভাতের মুখের দিকে তাকিয়ে থমথমে মুডে তাকাল। প্রভাতকে ধাক্কা দিয়ে দরজা থেকে সরিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করল।প্রভাতের মত বলিষ্ট দেহের অধিকারী একজন মানুষকে কি ওইভাবে ধাক্কা দিয়ে সরানো যায়।

প্রভাত পূর্ণতার বোকামিগুলো দেখছে আর হাসছে।হাসতে হাসতে পূর্ণতার হাত ধরে টান মারল।সেই হেচকা টানে পূর্ণতা প্রভাতের বুকে গিয়ে পড়ল।প্রভাত পূর্ণতাকে বামহাত দিয়ে বুকের সাথে শক্তভাবে চেপে ধরে ডানহাত দিয়ে ঘরের সিঁটকিনি ভালভাবে লাগিয়ে দিল।পূর্ণতা ছোটাছুটির চেষ্টা করেও কোনো লাভ হচ্ছেনা।প্রভাত পূর্ণতাকে আরো একটু শক্তভাবে নিজের সাথে আগলে ধরে বলল,

“তখন অপশন ছিল তোমাকে যেকোনো একটা করতে হবে আর এখন আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে।তোমাকে এখন দুটোই করতে হবে।”
পূর্ণতা অতিবরক্ত কন্ঠে বলল, ” যদি না করি।”
“জাস্ট কিচ্ছুনা।তোমাকে সারারাত এই ঘরে আমার সাথে কাটাতে হবে।বিয়ের আগেই আমার সাথে এক ঘরে রাত কাটাতে পারবে? ”

কথাটা পূর্ণতার কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই ঘৃণায় তার শরীর গুলিয়ে উঠল।সে জানে প্রভাতের চরিত্র এমন ই।প্রভাত চৌধুরী পরিবারের ছেলে।ওর চরিত্র এমন হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।চোখে পানি চলে এল পূর্ণতার।এখনি তার ম’ রে যেতে ইচ্ছা করছে।আগে এক অশান্তি ছিল তার মা-বাবাকে নিয়ে।এখন তার মায়ের অশান্তিটা তার জীবনে এসে পড়েছে।প্রভাত তার জীবনটা একেবারে নরক বানিয়ে ছাড়ছে।এক ঘরে অশান্তি দুই বাইরে অশান্তি।

অশান্তি আর অশান্তি তার জীবনে।এই মুহুর্তে তার ম’রে যেতে ইচ্ছা করছে।মেয়ে বলে তার জীবনের কোনো ইচ্ছার গুরুত্ব সে পায়নি।এমনকি নিজের অপছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হচ্ছে।মাঝে মাঝে মনে হয় তার হয়ত এই পৃথিবীতে জন্ম নেওয়াটাই ভুল ছিল।পূর্ণতাকে চুপ থাকতে দেখে প্রভাত পূর্ণতার কানের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“অপশন ১ নাকি অপশন ২ বেছে নিতে চাও? যদি দুই বেছে নিতে চাও তাহলে শরীফ কে খাবার নিয়ে যেতে বলি। চুমু খেয়ে পেট ভরে নিও।শুনেছি চুমু নাকি অমৃতর মত।যদিও আমি আগে পরে খায়নি।তবে খেতে ইচ্ছা করে। যার তার ঠোঁটের ছোঁয়াতো আর প্রভাত চৌধুরী নিতে পারেনা।”

প্রভাতের কথায় পূর্ণতা চমকে উঠল।কি বলতে চাইছে প্রভাত তাকে।তার জীবনের চরম সর্বনাশ কি আজ এখানেই হয়ে যাবে।পূর্ণতা।মনে মনে ভাবল তারই ভুল হয়েছে প্রভাতের সাথে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার।এই ভুলটা করা তার উচিৎ হয়নি।জেদের বশে প্রভাতকে চ্যালেঞ্জ দেওয়াটা চরম ভুল তার।প্রভাত যা চায় তাই করে ছাড়ে।এটাতো নতুন কিছু নয়।প্রভাতের বুদ্ধি,কৌশল,ক্ষমতা কোনটার সাথেই তার পেরে ওঠা সম্ভব নয়।পূর্ণতাকে গম্ভীর থাকতে দেখে প্রভাত বলল,

“বলব শরীফ কে খাবার টা নিয়ে যেতে?”
পূর্ণতা চাপা কন্ঠে বলল,
“এভাবে ধরে রাখলে খাবো কীভাবে?”
প্রভাত পূর্ণতাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“হাউ সুইট, শুধু শুধু এত জিদ না করে প্রথমেই রাজি হলে এত ঝামেলা করা লাগেনা।”

টি-টেবিল এগিয়ে আনল প্রভাত।টেবিলের উপর খাবার গুলা সব প্যাকেট থেকে বের করল।প্লেটে খাবার তুলে নিয়ে পূর্ণতাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে।পূর্ণতার ও তখন প্রচন্ড খুদা।খাবার গুলা সব পূর্ণতার পছন্দের খাবার।মনের বিরুদ্ধে, অনিচ্ছনায় প্রথমে খাবার মুখে নিলেও ক্ষুদার যন্ত্রণার খাবার গুলা শান্তভাবে খেয়ে নিল।পূর্ণতার খাওয়া শেষ হলে প্রভাতকে খাইয়ে দিতে হবে।জীবনের সব চেয়ে জঘন্য কাজটা আজ পূর্ণতা করছে।সে প্রভাতকে গালে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।

প্রভাত মুগ্ধ দুই নয়নে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আছে।দুষ্টুমি করে পূর্ণতার আঙুলে কামড় দিয়ে বলল, ” প্রতিটা ক্ষণে, ক্ষণে আমি তোমার আমার উপস্থিতি অনুভব করাব।”
পূর্ণতার চোখে পানি টলমল করছে।সে এখান থেকে যেতে চাইছে।কাঁন্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল, ” এইবার আমি যাবো।”
প্রভাত হেসে বলল, ” যাও।”
পূর্ণতা চলে গেলে প্রভাত মনে মনে বলল,

“আমি জানি আমি তোমার সাথে বাড়াবাড়ি রকম সব করছি। তুমি আজ সারারাত না খেয়ে থাকতে। ক্ষুদায় কষ্ট পেতে।তাতে কাকিমা, পুষ্ট, সবাই কষ্ট পেত।তুমি অনেক জেদী পূর্ণ, আমার চেয়েও বেশী।ভাল ভাবে বললে তুমি শুনতে না।সারারাত না খেয়ে কষ্ট পেতে।আমাকে তুমি খারাপ ভাবছো ভাবো।আমার প্রতি বিরক্ত হচ্ছো হও তাতেও সমস্যা নেই।তোমাকে খাওয়ানক্র জন্য না হয় এইটুকু খারাপ হলাম তোমার কাছে।তোমার ভালোর জন্য যত খারাপ হতে হয় আমি হব,তবুও তোমাকে বিন্দুমাত্র কষ্ট পেতে দিব।

তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী বানিয়ে বুঝিয়ে দিব চৌধুরী বংশের রীতি কখনো অর্ধাঙ্গিনীকে পায়ের নিচে রাখা নয়।মাথায় তুলে রাখতেও তারা জানে।তোমার চোখে আর মনে চৌধুরী বংশের প্রতি যে ঘৃণা, যে খারাপ ধারণা সেই ধারণার পরিবর্তন করতেই তোমাকে বিয়ে করা।না হলে এত প্রেশার দিয়ে, জোর করে তোমাকে বিয়ে করতাম না।যে মুখে বলছো চৌধুরীদের বংশে বউদের প্রতি ভালবাসা নেই একই মুখে বলবে চৌধুরা বউদের যেমন ভালবাসতে পারে পৃথিবীর কোথাও এত ভালবাসা নেই।”

পূর্ণতা ফিরে আসার কিছুক্ষণ পরেই প্রভাত শিষ দিতে দিতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল।ওয়াসেল চৌধুরী রাগে ফুঁসছেন।বারান্দা দিয়ে পায়চারী করছেন। অপেক্ষা করছেন প্রভাতের জন্য।প্রভাত বাড়িতে পা রাখতেই বললেন,
“দাঁড়াও প্রভাত।”
প্রভাত দাঁড়াল।তার বাবার দিকে তাকাল।ওয়াসেল চৌধুরী বললেন,
“গেস্ট রুমে পূর্ণতাকে নিয়ে কেন গিয়েছিলে? জানোনা ওটা আমাদের বিজনেস পার্টনারদের জন্য বিশেষ ঘর।”
“পূর্ণতাও বিশেষ কেউ আমার কাছে।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪

“এইভাবে মেয়ে মানুষ পা-গ-ল হলে ব্যবসা ধরে রাখতে পারবে না তুমি।”
প্রভাত তেজী কন্ঠে বলল,
“বউ ও ভালবাসব ব্যবসা ও ধরে রাখব।এক নতুন ইতিহাস তৈরি করে দেখাব।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬