অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪
Mousumi Akter

“আমার হাত ছাড়ুন, ছাড়ুন বলছি।আপনাকে না বলেছি আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি।” পূর্ণতা রুক্ষ কন্ঠে কথাটা প্রভাতকে উদ্দেশ্য করে বলল। প্রভাত পূর্ণতার কথায় কোনো হেলদোল প্রকাশ করল না।চুপচাপ পূর্ণতার হাত চেপে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।কোথায় নিয়ে যাচ্ছে পূর্ণতা সেটা আন্দাজ করতে পারছে না।

যেদিন থেকে প্রভাতের সাথে তার বিয়ের কথা-বার্তা শুরু হয়েছে সেদিন থেকে প্রভাতের স্পর্শ বিষাক্ত লাগে তার কাছে।চৌধুরী পরিবারের কোনো ছেলের সাথে তার বিয়ে হবে ভেবেই তার শরীর ঘৃণায় রি রি করছে।পূর্ণতা হাত টানাটানি করছে প্রভাতের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য কিন্তু পারছে না।পুরুষালী হাতের শক্ত বাঁধন থেকে কি চাইলেই মুক্তি পাওয়া যায়।প্রভাত হাত ছাড়ছে না দেখে পূর্ণতা বুদ্ধি করে বসে পড়ল যাতে প্রভাত তাকে টানতে টানতে নিতে পারে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পূর্ণতা আকস্মিক বসে পড়ায় প্রভাতের চলন্ত পা’দু’টো থেমে গেল।কারণ বসা একজন মানুষ যদি তার সম্পূর্ণ বল প্রয়োগ করে মাটি কা’ম’ড়ে পড়ে থাকে তার হাত ধরে টেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রভাত পূর্ণতার হাত ছাড়ল না।হাত ধরা অবস্থায় পূর্ণতার দিকে ঘুরে দাঁড়াল।গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকাল পূর্ণতার দিকে।চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ।পূর্ণতার দু’চোখের দৃষ্টি জুড়ে বিরক্তির ছড়াছড়ি।সে ভয়ংকররকমের বিরক্ত চাহনিতে তাকিয়ে আছে প্রভাতের দিকে।

প্রভাত কিছুক্ষণ গম্ভীর দৃষ্টি স্থির রাখল।কিন্তু তাতেও পূর্ণতা উঠল না।এবার গম্ভীর কন্ঠে বলল, ” উঠে দাঁড়াও পূর্ণ, সোজা আমার সাথে চলো।নাহলে তোমাকে এভাবে টান দিলে তোমার হাত ছি’ ড়ে যাবে। তুমি ভালভাবেই জানো আমার গায়ের শক্তি কোনোকালেই কম ছিলনা আজও নেই।”

পূর্ণতা বিরক্তিভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলল, “উঠব না আমি।কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এত রাতে আমাকে?”
প্রভাত খানিকটা ঝুঁকল।পূর্ণতার মুখের কাছে মুখ আনল।আচমকা পূর্ণতার গালের সাথে গাল মিশিয়ে একটা আলত ঘষা দিল।মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গজিয়েছে প্রভাতের।পূর্ণতা দাঁড়ির খোঁচায় কিছুটা ব্যাথা পেল।প্রভাতের গালে হাত দিয়ে ঝাড়া মে’ রে সরিয়ে দিল।

প্রভাত বলল, ” জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছি।কোনো প্রব্লেম?স্বামীর সাথে যেখানেও যাও পাপ হবেনা।”
পূর্ণতা বিরক্তিভরা মুখের অদল নিয়ে বলল,
“আপনারা এমনিতেই সবাই জাহান্নামে যাবেন।এতে কোনো সন্দেহ নেই।চৌধুরী বাড়ির সব ছেলেরা এমনিই জাহান্নামে যাবে।”

“তাহলে চৌধুরী বাড়ির মেয়েরা জান্নাতে যাচ্ছে কনফর্ম।এইজন্য তোমাকে বিয়ে করছি,যেন তোমার সাথে জান্নাতে যেতে পারি।এইবার ওঠো কুইক।” প্রভাত হাতের তুড়ি বাজিয়ে কথাটা বলল।
“আমি বললাম তো যাবনা আপনার সাথে।আর কতবার বলব।”
“হাত জোরে টান দিলে কিন্তু সত্যি ছি’ ড়ে যাবে পূর্ণ। ”
পূর্ণতা তীব্র মেজাজ দেখিয়ে বলল, ” ছি’ ড়ে ফেলুন আমার হাত।তবুও যাবনা।”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে দুষ্টু হাসল। হেসে বলল,

“তোমার হাত ছি’ড়ে ফেললে আমাকে আদর করবে কী দিয়ে বোকাচন্দ্রিমা? নিজের বরকে আদর করতে না পেরে পরে নিজেই ছটফট করবে।আদর করার জন্য হাতের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশী জরুরী।হাত ছাড়া কোনো আদর ই পারফেক্ট হয়না।”

আদর শব্দটা শুনে পূর্ণতার শরীর রি’রি করে উঠল ঘৃণায়।শব্দটা তার কানে বিশ্রী শোনাল।এটা যেন নিকৃষ্ট একটা ভাষা।তার ধারনা অসভ্য,অভদ্র ছেলেরাই এসব ভাষা ব্যবহার করে।তাই অতি বিরক্ত মুখের অবয়ব নিয়ে অন্যদিকে তাকাল।

প্রভাতের ঠোঁটের কোনে দুষ্টুহাসির মাত্রা ক্রমশ তীব্রতা পেল।পূর্ণতার এই রাগি চেহারাটা দেখার জন্যই এসব বলে।পূর্ণতার রাগের আ- গু-নে ঘি ঢালতে প্রভাত তার অনামিকা আঙুল দিয়ে পূর্ণতার হাতের বাহু থেকে স্লাইড করতে করতে কব্জি পর্যন্ত নামাল ।খানিক টা ফিস ফিস শব্দে বলল, ” এই কচি সুন্দর নরম হাতের মালিক কি সোজা কথায় যাবে নাকি আমাকে অন্যভাবে নিতে হবে।”

পূর্ণতা সাথে সাথেই প্রভাতের দিকে তাকাল।কারণ পূর্ণতা জানে প্রভাতের কথা না শুনলে সে কোলে তুলে নেয়।এখনি এমন কিছু করতে পারে।পূর্ণতা উঠে দাঁড়াতে যাবে যাবে তখনি প্রভাত পূর্ণতাকে পাজা কোলে তুলে নিল।কোলে তুলে সোজা সদর দরজা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।পূর্ণতা বুঝতে পারছেনা প্রভাত তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।হাত পা ছোড়াছুড়ি করছে কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছেনা।

প্রভাত পূর্ণতাকে নিয়ে সোজা বাড়ির পেছনের গেস্ট হাউজের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।গেস্ট হাউজে এ বাড়ির মেয়ে বউরা কেউ কখনো পা রাখতে পারেনি।চৌধুরী পরিবার প্রায় তিনযুগ ধরে এলাকা শাষন করছে।প্রাচীন কাল থেকেই তারা অঢেল সম্পত্তির মালিক।মেইন শহর থেকে একটু দূরে বৃহত্তর জায়গা জুড়ে চৌধুরী মহল। একই জায়গা তাদের তিনটা বাড়ি।একটা বাড়িতে শেওলা পড়ে গিয়েছে।

অনেক পুরণো তিনতলা বিশিষ্ট বাড়ি।পুরণো বাড়িতে এ বাড়ির কাজের লোক সহ কাজে সাহায্য সহযোগিতার জন্য যারা থাকে তারা বসবাস করে।নতুন করে একটা করা হয়েছে যেটায় প্রভাতদের পরিবার বসবাস করে।আর একটা হল গেস্ট হাউস।এই গেস্ট হাউজে বিভিন্ন ব্যবসায়িক আলাপ-আলোচনা হয়।বিভিন্ন জায়গা থেকে যখন ব্যবসায়িক লোক আসে তখন এই গেস্ট হাউজে রেখেই আপ্যায়ন করা হয়।এখানের আপ্যায়ন গুলা অন্য রকমের হয়।বিজনেস পার্টনারদের জন্য মদ আনা হয়।

তাদের রাতের বিনোদন এর জন্য বিভিন্ন মেয়ে ভাড়া করে এনে দেওয়া হয়।কখনো কখনো বাইরে থেকে এসে কেউ সাত-দিন ও থাকে।সাথে কোনো মেয়ে নিয়েও আসে।সাতদিন ই মেয়ে নিয়ে থাকে।যাওয়ার সময় পেছনের দিকের গেট দিয়ে আবার চলে যায়।পাচলি বিশিষ্ট বাড়ির ভেতরে আসলে কি ঘটে বাইরের কেউ জানতেও পারেনা।

আর গেস্ট হাউজের ব্যাপারে কেউ ই জানেনা।ওখানে ভিআইপি গেস্ট ছাড়া এলাউ করেনা।সাধারণ আলাপ-আলোচনা যা হওয়ার তা মেইন বাড়িতেই হয়।প্রভাত পূর্ণতাকে নিয়ে গেস্ট হাউজে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।দরজার সিটকিনি লাগাতে দেখে পূর্ণতার বক্ষ কম্পিত হল।বুকের মাঝে ঢিপ ঢিপ শব্দ হচ্ছে।প্রভাত তার সাথে কি করতে চায়।কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রভাত পূর্ণতাকে একটা বেডরুমে নিয়ে গেল।বিছানার উপর বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসল।হাতের কব্জি ভাজ করে বলল,

” উফফ হাত ব্যাথা হয়ে গিয়েছে? এতটুকু মেয়ে তুমি ওয়েট তো কমনা।”
দুঃচিন্তায় পূর্ণতা পা- গ- ল হয়ে যাচ্ছে।প্রভাত এত রাতে তাকে কি উদ্দেশ্য নিয়ে এল।খানিকটা নার্ভাস কন্ঠে বলল,
“আপনি আমাকে এখানে কেন এনেছেন?”
“কেন বুঝতে পারছো না?”

“আমি জানিতো চৌধুরী বংশের ছেলে আপনি।চরিত্র কীভাবে ভাল হবে।
প্রভাত ফ্লোরে হাঁটুগেড়ে বসল।পূর্ণতার দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকাল। পূর্ণতার চোখের তারা চিকচিক করছে।কালো মনিদুটোতে ভয়ের ছাপ।ফর্সা ছিপছিপে গডণের গোলগাল দেখতে মেয়েটা।প্রভাতের গায়ের রং ও ফর্সা, লম্বা সুদর্শন দেখতে।প্রভাতের পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে একদম ই অকারণে।
পূর্ণতা আবার বলল,

“আমাকে এখানে কেন এনেছেন?”
প্রভাত শীতল কন্ঠে বলল,
“মন ভরে দেখব বলে।”
“জীবনে দেখেন নি আমাকে?”
“দেখেছি কিন্তু মন ভরে দেখার সুযোগ পায়নি।”

প্রভাত খেয়াল করল পূর্ণতার গালে হালকা লাল দাগ এখনো আছে।কিছুক্ষণ পূর্ণতার গালের দিকে তাকিয়ে থেকে আকস্মিক পূর্ণতার গালে হাত রাখল।পূর্ণতা সাথে সাথে কেঁপে উঠল।বুকের মাঝে ঢিপ ঢিপ শব্দ বেড়ে গেল।প্রভাত পূর্ণতার গালে হাত বুলিয়ে বলল, ” তোমার বাপকে ইচ্ছা করছে খু*ন করে ফেলি। বেঁচে গেল বউ এর বাপ বলে। যে গালে আমি চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিব সেই গালে কাউকে ফুলের টোকা দিতে দিবনা।”

পূর্ণতা আশ্চর্যজনক ভঙ্গিতে তাকিয়ে প্রভাতের কথা শুনছে।প্রভাত এসব কি বলছে তাকে।প্রভাত আবার তাকে বলল,
“তোমার এই গাল দুটো ভীষণ প্রিয় আমার।একদম ফুটন্ত গোলাপের মত।”
“এভাবে প্রেমিকের মত কথা বলছেন কেন? এখানে কেন এনেছেন সেটা বলুন।”
“অপেক্ষা করো জানতে পারবে।”

প্রভাত উঠে দাঁড়াল।দরজার কাছে গেল।দরজা খুলে বেশ জোরে ডাকল, “শরিফ খাবার এনেছিস?”
শরীফ এগিয়ে এসে বলল, জি ভাই এনেছি।যা যা অর্ডার দিয়েছিলেন সব এনেছি।”
“যা ভেতরে গিয়ে রেখে আয়।” শরীফ একে একে সব খাবার ভেতরে রেখে আসল।
পূর্ণতার চোখ কপালে উঠল।সে বিস্মিত হয়ে সব খাবারের দিকে তাকাল।প্রভাত বলল, ” সারাদিন না খেয়ে থেকে কি স্বাস্থমন্ত্রী হতে চাও?চুপচাপ খাবার খেয়ে নাও।”

“আমি খাবোনা।”
“কিন্তু আমার তো খুদা লেগেছে।”
“খুদা লেগেছে তা আমাকে এখানে এনেছেন কেন? আমাকে খেয়ে ফেলতে চান নাকি?”
“অবশ্যই খেতে চাই। কিন্তু তোমার ঠোঁটে তো লিপিস্টিক নেই।”
“মানে?”

“মানে ছেলেরা মেয়েদের লিপিস্টিক খেতে পছন্দ করে।কথাটা আমার মুখে খারাপ শুনালেও এটাই কিন্তু চিরন্তন সত্য।”
“ছি ছিঃ আমাকে এসব বলছেন?”
“তাহলে কাকে বলব? তোমার বাবার মত বাজারের মেয়েদের বলব।”
পূর্ণতা রাগে থরথর করে কাঁপছে।তার মুখে কোনো ভাষা নেই।
প্রভাতের মুখে মৃদু হাসি।সে পূর্ণতার রাগ উপভোগ করছে।
কিছুক্ষণ পর বলল,

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩

“এখনো বিয়ে হয়নি।বাড়িতে সবার সামনে এত রোমান্টিকভাবে সেধে খাওয়াতে পারতাম না। এমনিই সবাই আমাকে বউ পা-গ-ল ভাবছে। দু’দিন পর আবার ওয়াসেল চৌধুরী আমাকে পা- গ- লা না ভেবে পাগলা গারদে দিয়ে আসে সেই চিন্তায় আছি।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৫