অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩
Mousumi Akter

বিছানায় উপুড় হয়ে পূর্ণতা কাঁদছে।কান্নায় বুক ভেঙে আসছে তার।ছোট বেলা থেকে মানসিক শান্তি বলে কিছুই সে পায়নি।একটু বুঝতে শেখার পর থেকে ভেবেছে বড় হয়ে সে এই নরক থেকে পালাবে।কোনো রাজকুমার এসে তাকে উদ্ধার করবে।তারপর নিজের মা’কে এখান থেকে নিয়ে যাবে।মায়ের শেষ বয়সে অন্তত প্রশান্তি দিবে।কিন্তু বড় হতে না হতেই সে পথ ও বন্ধ হয়ে গেল।

বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন নিয়ে যে স্বপ্ন এতদিন দেখেছে তা বৈশাখের কাল বৈশাখির মত লন্ডভন্ড হয়ে গেল।পরিবার হল মানসিক শান্তির প্রথম স্তর। পরিবারে অশান্তি হলে ঘরে-বাইরে কোথাও কোনো কাজে মন বসেনা।মা-বাবার ঝ’গ’ড়ার ফলে সন্তানের মনে বিরুপ একটা প্রভাব পড়ে।সন্তানরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে,তারা ছোট বেলা থেকে মানসিক বিকাশ ঘটাতে পারেনা।পরিবারের সুখ -শান্তি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নির্ভর করে পরিবারের একজন পুরুষের উপর।পুরুষ যদি নারীকে একটু বুঝে, স্ত্রীকে দাসী মনে না করে অর্ধাঙ্গ মনে করে তাহলেই সংসারে সুখ -শান্তিতে টই -টুম্বর থাকে।পূর্ণতার গোটা জীবন গেল শান্তির অফসোস করতে করতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এত টাকা পয়সা তো তার লাগবে না।একটা হত দরিদ্র পরিবারের জন্ম হলেও যদি একটু সুখ পেত তবুও পূর্ণতা কোনো আফসোস করত না।সুখের অভাবে যে পড়েছে তার কাছে টাকা তুচ্ছ ব্যাপার।কারণ সে জেনে গিয়েছে টাকায় কোনদিন সুখ পাওয়া যায়না।সুখ পাওয়া যায় একজন ভালো জীবনসঙ্গী পেলে।কাদতে কাদতে চোখে ঝাপসা দেখছে পূর্ণতা।হেচকি উঠে গিয়েছে।

পূর্ণতার পাশেই বসে আছে প্রভাতের ছোট বোন পুষ্প।আর ওদের দাদী।পুষ্প খুব শান্ত-শিষ্ট একটা মেয়ে।পূর্নতার চেয়ে এক বছরের বড় হবে।পুষ্প পূর্ণতার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, “আর কাদিস না পূর্ণ। কেদে কি কোনো লাভ আছে।আমাদের কপালটাই তো এমন খারাপ।দেখিস না আম্মু আর চাচিআম্মা সারাজীবন এভাবে কেদে কেদে জীবন কাটালো।”

পূর্ণতা বিছানা ছেড়ে উঠে বসেই পুষ্পকে জড়িয়ে ধরল।কাঁন্নার মাত্রা আরো খানিক বেড়ে গেল।কাঁন্নাজড়ানো গলায় বলল, “আমি মুক্তি চাই আপু এই নরক থেকে।আমি মুক্তি চাই।আম্মু আর চাচিআম্মার মত এমন জীবন আমি চাইনা।কলেজে যাই দামি ফোন নিয়ে,দামি পোশাক পরে,দামি গাড়িতে করে।মানুষ আমাদের দেখে আফসোস করে। ওদের মত বিলাসবহুল সুন্দর জীবন যদি আমাদের হত।অথচ ওরা জানেনা আমরা ওদের দেখে আফসোস করি ওদের মত কম টাকা থাকুক কিন্তু সুখি একটা জীবন পেতাম যদি।”

পুষ্প একটা ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, “কেউ কারো জায়গায় সুখি নেই।আমরা বাইরে থেকেই মানুষকে সুখি মনে করি।”

পুষ্প এবং পূর্ণতার দাদী চোখ গরম করে ওদের দু’বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।রাগে যেন ফুঁসছে।মুখ ঝামটা দিয়ে উত্তর দিল, “তোরা দু’বোন এমন ভাব করছিস যেন তোদের মা-চাচীদের উপর জুলুম করা হয়।দু’টোই তো ফকিরের মেয়ে।গায়ের চামড়া একটু ভাল দেখে এমন রাজপ্রাসাদের বউ হতে পেরেছে। ঠ্যাং এর উপর ঠ্যাং তুলে খাচ্ছে সারাজীবন।একটা কাজ কর্ম নেই।এ বাড়িতে বিয়ে হওয়ার জন্য ওর চৌদ্দপুরুষের সংসার চলে যাচ্ছে।”

পুষ্প মোলায়েম কন্ঠে বলল, ” বাবা আর চাচা যে ব্যবহার করে তার চেয়ে না খেয়ে থাকা ভাল।”
দাদী আবার ফোঁস করে উঠে বললেন, “কি ব্যবহার করে রে।পুরুষ মানুষ হল সংসারের রাজা।আর মহিলারা ঘরের দাসী। সামান্য ওইটুক কথা গায়ে সয়ানো কি এমন ব্যাপার।ফেরাউনের মত তো করছে না।”
পূর্ণতা চোখের পানি মুছে বলল, ” সব এই বেটে বুড়ির দোষ। এই খচ্চর মহিলাকে যদি দাদা বিয়ে না করত তাহলে এই পরিবারের অশান্তি কিছুটা কমত।”

দাদী আবার ও ফোঁস করে উঠে বললেন, ” কি বললি আমি খচ্চর আমি বেটে।এত বড় কথা।ওয়াজেদ কে যদি আমি না বলি।তোর ব্যবস্থা করতে হবে।”
“যাও,এখনি যাও।”

দাদী পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, “মেয়ে মানুষের এত দাপট ভালনা।মেয়ে মানুষ তুই।কন্ঠ এমন বাজপাখির মত হবে কেন?আয়নায় গিয়ে দেখ এক গালে পাঁচ আঙুলের দাগ বসেছে।আরেকগালে না বসা পর্যন্ত শান্তি হচ্ছেনা।”
পুষ্প বরাবর ই শান্তশিষ্ট আর বিনয়ী।রাগ হলেও শান্ত কন্ঠেই কথা বলে।পুষ্ট শান্ত কন্ঠে বলল, ” দাদী আমরা না তোমার ছেলের সন্তান।তুমি আমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করো।মানুষের দাদীকে দেখি পুতনিদের নিয়ে কত হাসি আনন্দ করে।তুমি সারাক্ষণ আমাদের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বলো।ছোট বেলা থেকে আমরা মেয়ে বলে কথা শোনাচ্ছো।ভাইয়াকে যতটুক ভালবাসো তার একবিন্দু পরিমান আমাদের ভালবাসোনি।মেয়ে হয়েছি বলে এত অবহেলা করো কেন?”

“প্রভাত এ বংশের প্রদীপ জ্বালাবে, আর তোরা কি করবি।বসে বসে অন্ন ধ্বংস করছিস।তোরা দু’টো যদি ছেলে হতি চৌধুরী পরিবারের আর দুটো লাঠি বাড়ত।আমার প্রভাত একা কি করবে সেই চিন্তায় আমার ঘুম হয়না।আর ওয়াজেদের তো বংশ ই বৃদ্ধি পেলনা।ছেলেটার নাম বলার মত কেউ আর এ পুরিতে থাকবে না।”
পূর্ণতা সব সময় তেজি স্বভাবের।সে পুষ্পর মত শান্ত-শিষ্ট ভদ্র নয়।কথা পড়লেই উত্তর দেয়।পূর্ণতার ইচ্ছা করছে দাদীর গ’ লা টি’ পে দিতে।কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, ” তোমার ওয়াজেদের বংশ কিভাবে এগোলো না।”

“পুত্র সন্তান না থাকলে এগোবে কীভাবে?আগে যদি জানতাম জাহান অমন বাজা হবে তাহলে কি আর বিয়ে করাতাম।”
“বাহ! একটা মেয়ে থাকতেও তুমি তাকে বাজা বলছো।এতই যখন পুত্র সন্তানের দরকার আবার বিয়ে দিলে না কেন তোমার ছেলেকে।”
“চৌধুরীরা কেউ দুইবার বিয়ে করেনা।এই বংশের একটা সুনাম আছে।”
“দুইটা বিয়ে করতে পারেনা আবার দুই শ’ত মহিলাদের কাছ দিয়ে বেড়ানোর নীতি আছে।”
“তুই কিন্তু মুখ সামলায় কথা বলবি পূর্ণতা।খুব বুলি ফুটেছে তোর মুখের।প্রভাতের সাথে তোর বিয়ে হোক বলব চাপা ভে’ঙে সোজা করতে।”

পুষ্প মৃদু হেসে বলল, ” দাদী চৌধুরীদের রীতিনীতি কিন্তু এইবার পাল্টে যাবে বলে মনে হচ্ছে।ভাইয়া মনে হয়না কোনদিন তার বউ এর গায়ে হাত তুলবে।”
“ওর শরীরে চৌধুরী বংশের র* ক্ত বইছে।সময় হলে ঠিক-ই বংশের পরিচয় দিবে।”
পূর্ণতা বলল, ” তোমার কি মরণের ভ’য় নেই।কোথায় নিজের ছেলেদের বুঝিয়ে সংসারে শান্তি রক্ষা করবা।সেটা না করে তাদের উস্কে আরো অশান্তি সৃষ্টি করেছো।এখন আবার পুতার পেছনে লেগেছো।”
“তুই কি বলতে চাস এই সংসারের অশান্তি আমি করছি।”

“তুমি ছাড়া আর কে করছে।একটা কথা মনে রেখো তোমার যা কুকির্তী ছেলের বউরা দেখবে বলে মনে হচ্ছেনা।বিছানায় পড়লে গু খেয়ে মরতে হবে।আর যদি প্রভাতের সাথে আমার বিয়ে হয়েই যায় আমার আর প্রভাতের মাঝে নাক গলাতে আসলে সোজা বৃদ্ধাশ্রম এ রেখে আসব।”
দাদীর চোখ কপালে উঠল।এ বাড়িতে এত বড় কথা কেউ তাকে আগে বলেনি।তার মুখের উপর কেউ কথা বলেনা।এত বড় কথা প্রথমবার কেউ বলল।ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

” কি? কি বললি তুই।এত বড় কথা।তোর বিচার আজ যদি ওয়াজেদ না করে।এ বাড়ি আমি আর থাকব না।”
“যাও বুড়ি কালে কে তোমাকে বিয়ে করে দেখো।এই যুগ হলে কেউ ফিরেও তাকাত না।যে হিংসুটে মহিলা তুমি আর যে বেটে মানুষ তুমি।”
পুষ্প চিমটি কেটে বলল, ” আর ক্ষেপাস না।”

দাদী চলে গেলে পূর্ণতা পুষ্পকে বলল, ” আচ্ছা আপু,দাদী এমন কেন? উনিও তো মেয়ে।মেয়ে হয়ে মেয়েদের হিংসে করে কেন? কেন সারাজীবন নিজের ছেলেদের উস্কানিমূলক কথা বলে।”
পুষ্প পূর্ণতাকে খুব আদর করে।বোঝা যায়না ওরা দুই মায়ের পেটের সন্তান।পূর্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলল, ” উনিও দাদার পায়ের নিচে থাকত।আগের যুগের মানুষ। লেখাপড়া জানেনা।উনি যে কালচার মেনে এসছে ওই কালচার ই বিশ্বাস করে।”

“তবুও আপু আরো অনেক অশিক্ষিত মুরব্বি মানুষ আছে।তারাতো অমন নয়।”
“দুনিয়াতে ভাল আর খারাপ মানুষ যুগে যুগে জন্ম নিবে।জানিনা আমাদের দাদী কেন এমন হল।”
“দাদী কিন্তু একটা কথা ঠিক-ই বলেছে আপু।প্রভাত ভাই চৌধুরী বংশের ছেলে।দিন শেষে সে-ও বাবা-চাচার মত হবে।”

পুষ্প হেসে বলল, “ধূর পা- গ- লি।আমি ভাইয়ার মাঝে অন্যরকম কিছু দেখছি।আমার মনে হয় ভাইয়া তোকে ভালবাসে পুষ্প।বাবা-চাচাদের কোনো গুনাবলি ভাইয়ার মাঝে নেই।”
“কি যা-তা বলছো।ভালবাসবে কেন? সে তো চাচার হুকুম মানতে বিয়ে করছে।”
“আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা রহস্য রয়েছে।আমাদের যা দেখাচ্ছে আমরা তাই দেখছি কাহিনী হয়ত ভিন্ন।”
“কেন আপু?”

“তুই দেখ,সজল ভাই তোকে পছন্দ করে।বাবা নিজেদের মাঝে বিয়ে শাদী পছন্দ করেনা বলে ফুপিকে কত কথা শোনাল।এইদিকে হুট করেই ভাইয়ার সাথে তোর বিয়ের ঘোষণা দিল।কাহিনী কিছু আছে।”
“কাহিনী হল, আমাকে নিয়ে রাজনীতি চলছে এই পরিবারে।বিয়ে নামক রাজনীতি। আমি ম’রে যাব আপু তবুও এই চৌধুরীদের র-ক্ত যার শরীরে আছে তাকে বিয়ে করব না।আমার ঘৃণা হয় কেন আমি এই পরিবারে জন্ম নিলাম।কেন নিলাম আপু? ”

“আমাদের কপালে এমন ছিলরে পুষ্প।”
দুপুরে পূর্ণতা খাবার খেলনা।সুয়ে সুয়েই মন খারাপ করে কাটিয়ে দিল।জাহান অনেক সাধাসাধি করেও পূর্ণতাকে খাবার খাওয়াতে পারেনি।একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এ বাড়িতে থেকে যাওয়া জাহানের।রাতে ওয়াজেদ বালিশ হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে আছে।চোখ -মুখ গম্ভীর আর থমথমে।জাহান পা টিপে দিচ্ছে।দু’ঘন্টা হয়ে গিয়েছে একভাবে পা টিপে যাচ্ছে।হাত লেগে এসছে।তবুও পা টিপে যাচ্ছে।জাহানের আজ ভীষণ মন খারাপ।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ওয়াজেদ খেয়াল করল জাহানের চোখে পানি।জাহানের মুখের দিকে খানিক সময় তাকিয়ে বলল,
“তোর চোখে পানি কেন? আবার কি নাটক শুরু হইছে?”

জাহান ফুপিয়ে কেদে উঠে বলল, “একটাই তো মেয়ে আপনার। মেয়ে ছাড়া আপনার আর কে আছে?আপনি কি তারেও দাসী বানায় রাখতে চান?”
“মেয়ের আবার কি হল?তুই কি সব কিছুতে দাসী দেখতে পাস।প্রভাত এর সাথে বিয়ে হবে এর চেয়ে ভাল ওর জন্য কি হবে।” ওয়াজেদ সিগারেট টানছে আর কথা বলছে।

” আপনার কি ঠিক হইছে ওইভাবে মেয়েটার গায়ে হাত তোলা।পাঁচটা আঙুল বসে গেছে।মেয়েটা সারাদিন আজ কিচ্ছু খায়নি।আপনি তো একবার গিয়ে সাধতে পারতেন।তাহলে মেয়েটার কষ্ট কমে যেত।”
“বাপ হয়ে একটা থা’ প্প’ড় দিয়েছি। এতে না খেয়ে থাকার কি আছে।খুদা লাগলে এমনিই খেয়ে নিবে।”
“মেয়েটা খায়নি।আপনি ওর গায়ে হাত দিয়ে কীভাবে খাবার খেলেন।একবার ও ভাবলেন না মেয়েটা না খেয়ে কষ্টে আছে।”

ওয়াজেদ উঠে বসল।জাহানের মুখের কাছে মুখ এনে চাপা কন্ঠে বলল,
“মেয়ে নিয়ে এত ভেবে কি হবে? পারিস নাই তো দুই চারটা সন্তানের জন্ম দিতে।রাস্তায় একটা বিপদ হলে কি লা’ঠি ধরতে পারবে।উল্টা রাস্তায় বের হলেই আরেক চিন্তা কোন ছেলের সাথে কথা বলবে,কার সাথে মেলামেশা করবে অঘটন না ঘটে যায়।”

“সন্তান কি আমি ইচ্ছা করে নিইনি।আল্লাহ না দিলে আমি কি করব।”
“তোরে বিয়ে করে আমার পুরো জীবনটাই লস।না পেরেছিস পুত্র সন্তানের মুখ দেখাতে।না পারিস ঠিকমত শারিরীক চাহিদা মেটাতে।তোর জন্য বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে গিয়ে লাখ লাখ টাকা নষ্ট করতে হয় আপনার।”
” ছিঃ এই বয়সে এসেও আপনি এসব করে বেড়ান।মেয়ে বড় হয়েছে।বিয়ে সামনে।আপনার কি একটুও লজ্জা করেনা।আপনি এসব করেন আপনার জামাই যদি এসব করে তখন কি করবেন?”
ওয়াজেদ জাহানের মুখে লা’ থি মে’ রে বলল,

“কু* ত্তা* র বাচ্চা। এই বয়সে মানে কি। যতকাল আমার শরীরে চাহিদা থাকবে ততকাল মেটাব।তোর মেয়ে যদি তোর মত অকর্মণ্য হয়ে থাকে জামাই তো এসব করে বেড়াবেই।”
এক লাথিতে জাহান নিচে পড়ে গেল।কাঁন্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল, ” শুধুই কি আমার দোষ। আপনি তো বিয়ের প্রথম থেকেই নারী লোভী।কত লাগে আপনার।”

ওয়াজেদ উঠে এসে ইচ্ছামত লা’ থি মা’র’ তে থাকল জাহানকে।মুখ খুললেই এইভাবে মা’র খে’ তে হয় তাকে।ওয়াজেদ লা’ থি গু’তা মে’ রে বাহিরে চলে গেল।জাহান ঘরের কোনে পড়ে গুঙাতে থাকল।ওয়াজেদ আজ আর ফিরবে না।কোন না কোনো হোটেলে গিয়ে রাত কাটাবে।

প্রভাতের দাদী জামেলা আজ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।দুপুর থেকে রাগে ফুলে আছেন।সে রাতের খাবার খাবেনা।পূর্ণতার বলা এত বড় কথার বিচার হলে সে এ বাড়ির অন্ন মুখে তুলবেনা।জাহান আর মেরি ভ’য়ে ভ’য়ে আছে।বাড়িতে কি অশান্তি হবে আজ তার ঠিক নেই।জমেলা এমনিই তিল থেকে তাল সৃষ্টি করে।জাহান আর মেরিকে সারাজীবন অত্যাচার করে আসছে।জমেলার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জাহান,মেরি, পুষ্প,জয়নাব আর ওয়াসেল চৌধুরী।বাইরে থেকে সবাই দরজা ধাক্কাধাক্কি করছে।কিন্তু দরজা খুলছে না। ওয়াসেল চৌধুরি জয়নাবের দিকে তাকিয়ে বলল, “প্রভাত কে ডেকে নিয়ে আসো।প্রভাত ডাকলে দরজা খুলবে।”

জয়নাব দ্রুত পায়ে গিয়ে প্রভাত কে ডেকে আনল।প্রভাতের পরণে থ্রি কোয়ার্টার, গায়ে কালো গেঞ্জি।এসে বলল, ” কি হয়েছে বাবা তোমার মায়ের।দরজা লাগিয়েছে কেন?”

“পূর্ণতা মায়ের সাথে বেয়াদবি করেছে।মা সেকারণে খুব কষ্ট পেয়েছে।শোনো প্রভাত পূর্ণতাকে তুমি বিয়ে করতে চলেছো।তুমি যেহেতু বলে দিয়েছো পূর্ণতাকে তুমি ছাড়া কেউ কিছু বলতে পারবেনা তাই এই বেয়াদবির শাস্তি তুমিই দিবা।পূর্ণতা যেন তোমার দাদীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়।আর এখন থেকেই পূর্ণতাকে সোজা করে রেখো।নাহলে পরে পস্তাবে।চৌধুরী বাড়ির ছেলেরা সিংহের মত বাঁচে।বৌ-এর আঁচল ধরে কেউ চলেনা।”

প্রভাত এতসময় তার বাবার দিকে তাকিয়ে মনযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনল।বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, ” আমি আজই পূর্ণতাকে বুঝিয়ে দিব বাবা ওর পজিশন কোথায়? আর কীভাবে ওর জীবন চলতে হবে।”
” হ্যাঁ বুঝিয়ে দাও।”
জাহান ওয়াজেদের মার খে’য়ে এসে এখন মেয়েকে নিয়ে দুঃচিন্তা করছে।মেরি বলল, “ভাবিস না, প্রভাত কিছুই বলবে না পূর্ণ কে।”

প্রভাত খুব জোরে পূর্ণতার নাম ধরে ডাকছে, ” পূর্ণতা এখনি দাদীর ঘরের সামনে এসো।না হলে ঘরের দরজা ভে’ ঙে তোমাকে বের করে আনব।”
পূর্ণতা প্রভাতের কন্ঠ শুনে রুম থেকে বেরিয়ে এল।দাদীর রুমের সামনে এসে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল, ” এভাবে হুংকার ছাড়ছেন কেন প্রভাত ভাই?”
“এখনি জানতে পারবে ওয়েট।”

প্রভাত দরজায় টোকা দিয়ে ডাকছে, ” দাদী বেরিয়ে এসো।দেখি কি হয়েছে এখনি বিচার হবে।”
জমেলা দরজা খুলে থমথমে মুডে দাঁড়াল।জমেলা বেশ খানিক টা শর্ট।প্রভাত ঝুঁকে জমেলার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল, ” কি হয়েছে তোমার?ঘরে দরজা লাগিয়েছো কেন?পূর্ণতা কি বলেছে তোমাকে।”
জমেলা পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, ” বল প্রভাতকে আমাকে কি বলেছিস।”
পূর্ণতা কিছুটা ভ’য় পাচ্ছে।দাদীকে একটু বেশীই বলা হয়ে গিয়েছিলো।চোখ মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রভাত বলল, ” দাদী তুমি বলো ও কি বলেছে।”

” ওর এত বড় সাহস আমাকে বৃদ্ধাশ্রম এ রেখে আসতে চায়।”
প্রভাত পূর্ণতার দিকে তাকাল।পূর্ণতার ভীত মুখটা দেখে মায়া হল।পূর্ণতার কাছে এগিয়ে গিয়ে পূর্ণতার ডানহাতের কব্জি চেপে ধরে দাদীর সামনে এনে বলল, ” তুমি কি দাদীকে বৃদ্ধাশ্রম এ রেখে আসতে চাও?”
পূর্ণতা মুখ কাচুমাচু করে বলল, ” না মানে।”

“আরে তুমি ভ’য় পাচ্ছো কেন? তুমি যদি এই জমেলা বুড়িকে বৃদ্ধাশ্রম এ রেখে আসতে চাও তাহলে আমি তোমাকে হেল্প করব।আমি তোমার সাথে এক হয়ে এই বুড়িকে রেখে আসব।তোমার যা ইচ্ছা হবে তুমি তাই করবে।”
” এসব কি বলছেন প্রভাত ভাই।”

“তুমি এই বুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে না রেখে এসে মুখে কেন বলেছো বুঝলাম না। এজন্য তোমার শাস্তি পাওয়া উচিৎ। ”
জাহান,মেরি,পুষ্প,জয়নাব ওয়াসেল সবাই হা করে তাকিয়ে রইলো প্রভাতের দিকে।তারা এ কোন প্রভাত কে দেখছে।
ওয়াসেল চোয়াল শক্ত করে বলল,” তুমি এসব কি বলছো প্রভাত?”

“একদম ঠিক ই বলছি।তোমার মা’কে বাংলা ভাষায় বুঝিয়ে দাও আমার বউকে যেন ভুলেও কোনদিন বাজে কথা না বলে।নিজের ছেলের বউদের সাথে যা করেছে আমার বউ এর সাথে যেন সেসব ভুলেও না করতে যায়।তোমার মা’কে আমি বলেছি আমার হয়ে কথা বলতে।আমার বউ আমার পায়ের নিচে থাকবে সে কথা বুঝাতে বলেছি তোমার মা’কে।আমার বউ ওয়াসেল এবং ওয়াজেদ চৌধুরীর বউদের মত পায়ের নিচে নয়,মাথার উপরে থাকবে।আমার বউ দাসী নয় বরং রানি হয়ে থাকবে।মাইন্ড ইট।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ২

বলেই প্রভাত পূর্ণতার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলে গেল।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রভাতের দিকে।চৌধুরী বংশে এ কোন প্রভাতের জন্ম হল।এ বংশে ইতপূর্বে বউ নিয়ে এত বাড়াবাড়ি তো কোন ছেলে করেনি।
জাহানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল।তবে কি তার মেয়ের জীবন টা এই চৌধুরী বাড়িতেই রানির মত করে কাটবে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৪