আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৮ শেষ অংশ 

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৮ শেষ অংশ 
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

আবিরের ঘোর যেন কোনোমতেই কাটছে না। সাকিবের কাঁধে মাথা রেখে ক্লান্তিহীন অমত্ত চোখে মেঘকে দেখেই যাচ্ছে। নিজে পছন্দ করে কেনা ড্রেসটাতে অষ্টাদশীকে যতটা মোহনীয় লাগবে ভেবেছিল তার থেকেও কয়েকগুণ বেশি রমণীয় লাগছে। মেঘের মায়াবী হাসি দেখে আবিরের টালমাটাল অবস্থা।

মায়াবিনীর মায়াবী হাসি দেখলে বরাবরই আবিরের সকল দুশ্চিন্তার অবসান ঘটে ৷ হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। আজ সকাল থেকে ঘটা একের পর এক ঘটনা আবিরকে বেসামাল করে দিচ্ছে। নিজেকে সামলানোর বিন্দু মাত্র শক্তি আবিরের নেই। নানান রকমের নিষিদ্ধ ইচ্ছা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অষ্টাদশীর প্রাণোচ্ছল হাসি, তার সাথে গাঢ় কাজল টানা দু চোখ দেখে আবির আনমনে বিড়বিড় করে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমার ক্লান্ত মস্তিষ্ক জোড়ে শুধু তোর বিচরণ চলে ”
সাকিব ঠাট্টার স্বরে শুধালো,
“কার?”
সাকিবের প্রশ্নে আবির কিছুটা নড়ে বসল। বুঝতে পারল, তার মনের কথা মুখ ফঁসকে বেড়িয়ে গেছে। নিজেকে সামলে উত্তর দিল,
“মাহদিবা খান মেঘ”

“এখনও মেঘবতীকেই দেখছ নাকি? কোথায় মেঘবতী, দেখি! ”
যেই না ঘাড় ঘুরাতে যাবে,ওমনি আবির আঁটকে দিল। তেজঃপূর্ণ ভারী স্বরে বলল,
” আমার সম্পত্তিতে ভুলেও নজর দিবি না। ”
সাকিব আমতা আমতা করে বলল,
“আমি তো শুধু দেখতে চাইছিলাম৷ ভাইয়ের সম্পত্তিতে নজর দিব এত নিকৃষ্ট আমি না। তাছাড়া আমার মানুষ আছে। ”

আবির কোনো কথা বলল না। একটু থেমে সাকিব পুনরায় বলল,
“ভাইয়া চলো একটা জায়গায় যায়। ”
আবির উদাস কন্ঠে বলে উঠল,
“আমি জানি তুই কোথায় যেতে চাচ্ছিস৷ কিন্তু আমি এখন কোথাও যাচ্ছি না।”
“প্লিজ ভাইয়া চলো না। ওদের সন্ধ্যার পর আমাদের বাড়িতে আসার কথা ছিল,আমি বলছিলাম এগিয়ে নিয়ে আসবো। ”

আবির ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
” ইশশ কি প্রেম! দুইটা বাড়ি পরেই তো বাড়ি। এখান থেকেও আবার এগিয়ে আনতে হয় ? আর কত কি যে দেখতে হবে। ”
সাকিব একগাল হেসে প্রশ্ন করল,
” এই কথা তুমি বলছ ভাইয়া? ২৪ ঘন্টা যার চোখের সামনে মেঘবতী ঘুরঘুর করে, মেঘবতীর কন্ঠ না শুনলে রাতে যার ঘুম হয় না, সেই সাজ্জাদুল খান আবির এই কথা বলছে?”
আবির গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“চুপ থাকবি তুই৷ ”
“আর একটা প্রশ্ন,
বাসায় তো সারাদিন মেঘবতীকে দেখই তারপরও এত বিভোর হয়ে আছো কেন, বলবা ? ”
আবির রাশভারি কন্ঠে জবাব দিল,
“বাসায় তো এভাবে দেখার সুযোগ পায় না। একবারের বেশি দুবার তাকাতে গেলেই চোখে চোখ পরে যায়৷ না চাইতেও বাধ্য হয়ে আমার ই দৃষ্টি সরিয়ে নিতে হয়। আজ এতদিন পর ও কে দেখার সুযোগ পেয়েছি। দয়া করে তোর মুখ টা বন্ধ রাখ। ”

“ওদের কি আনতে যাব না?”
আবির গম্ভীর কন্ঠে জানাল,
“কল বা মেসেজ দিয়ে বল চলে আসতে৷ আমি এখন কোথাও যাব না৷ আর তুই ও যেতে পারবি না৷ প্রোগ্রাম শেষে এগিয়ে দিয়ে আসিস। এখন ডিস্টার্ব করিস না। ”
সাকিব পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেজ করছিল। সাকিবের কাঁধে আবিরের মাথা, অক্ষি যুগল নিবদ্ধ মেঘের চোখে-মুখে। প্রেয়সীর মুগ্ধতায় ডুবে আছে সে। পল্লব ফেলছে না একটিবারও। ইহজগতের আর কোনোকিছুতেই মনোযোগ নেই তার।

আচমকা কেউ একজন আবিরের কান চেপে ধরায়, আঁতকে উঠে। অগাধ মনোযোগে ছেদ পরল। আকস্মিক ঘটনায় আবির কিছুটা ভড়কে গেল। হকচকিয়ে সোজা হয়ে বসে সঙ্গে সঙ্গে তাকায় সেদিকে। মাইশা শক্ত হাতে আবিরের কান চেপে ধরে আছে, চোখে-মুখে পরিষ্কার রুষ্টতা। আবির বিস্ময় চোখে তাকায়, ভ্রু কুঁচকে নরম স্বরে বলল,
“উফ, আপু লাগছে। ”

মাইশা রাগী স্বরে জবাব দেয়,
“লাগুক। তোরে কতক্ষণ পি*টাইলে মনে শান্তি পাইতাম। ”
আবির নিরুদ্বেগ কন্ঠে বলল,
“আমি আবার কি করলাম?”
“ফাজিল ছেলে, আবার কথা বলিস।”
“প্লিজ আপু কান ছাড়ো। ব্যথা পাচ্ছি ৷”
মাইশা কান ছেড়ে আবিরের পিঠে ঠাস ঠাস করে ২-৩ থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে। আবির কপাল গুটিয়ে কোমল কন্ঠে আর্তনাদ করে,

“আপু…..!”
সাকিব চিন্তিত স্বরে শুধালো,
“হয়ছে টা কি আপু? ভাইয়াকে মারতেছো কেন?”
মাইশা রাগান্বিত কন্ঠে বলা শুরু করে,

“মারবো না তো কি করব। আমি নিজে না সেজে কতটা সময় নিয়ে মেঘকে সাজিয়েছি। সাথী শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে, মুন্নি আর আমি মিলে মেকাপ করে দিয়েছি, আলতা টা পর্যন্ত আমি দিয়ে দিয়েছি৷ বার বার মেয়েটাকে বলছি, তুমি বসে থাকো আমি রেডি হলে একসাথে নিচে আসব। ছটফটে মেয়ে একটুও বসলো না, রুম থেকে ছুটে চলে আসছে। আমি রেডি হয়ে আসতে পারলাম না, মেঘের পড়নে না আছে শাড়ি, আর না আছে কোনো সাজগুজ। আমি সিউর এটা এই ফাজিলের কাজ। ”

বলতে বলতে আবিরের পিঠে আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে। সাকিব মাইশার কথা শুনেই বসা থেকে উঠে গেছে৷ আবিরের মুখোমুখি হয়ে শুধায়,
” ওহ আচ্ছা, এই কারণেই তাহলে তোমার টালমাটাল অবস্থা?”
মাইশা পুনরায় চেচিয়ে উঠে,

” কিরে কথা বলছিস না কেন?”
আবির অন্য দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল,
“আমি কি বলব।”
“মেঘ শাড়ি পাল্টালো কেন?”
“জানি না ”
“আবির, একদম ফাজলামো করবি না। আমি ডেম সিউর এটা তোর কাজ। ”
সাকিব পাশ থেকে বলে উঠল,

“এতক্ষণে বুঝলাম, ভাইয়ার মাথা নষ্টের কারণ মেঘবতীর শাড়ি। থাক আপু, তুমি মন খারাপ করো না। ভাইয়া মেঘবতীর প্রতি একটু বেশিই সিরিয়াস তো, তাই হয়তো শাড়ি পাল্টাতে বলছে।”
মাইশা ভ্রু কুঁচকে শুধালো,
“তুইও জানিস? আবির তাহলে সত্যি সত্যি মেঘকে পছন্দ করে?”
সাকিব উত্তেজিত কন্ঠে জানাল,

“পছন্দ না গো আপু। মেঘবতীর প্রেমে আবির দেওয়ানা বলো। মানুষ তো প্রেমে হাবুডুবু খায়, ভাইয়া পুরোপুরি ডুবে আছে। কবে যে নিঃশ্বাস আটকে মরে যায় আল্লাহ জানেন।”
আবির সাকিবের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। সাকিবের সেদিকে হুঁশ নেই। আবির ধমক দিতে যাবে তার আগেই মাইশা শীতল কন্ঠে বলে উঠে,
“ছিঃ আবির তোর থেকে অন্তত এটা আশা করি নি। ছোট বেলা থেকে তুই বলতি, আমি নাকি তোর সবচেয়ে ভালো বোন। ভালো বোন হওয়ার এই প্রতিদান দিলি৷ একটাবার বলতে তো পারতি!”
আবির কৈফিয়তের স্বরে জবাব দিল,

“কি করে বলব! তোমার সাথে কি নিরবে কথা বলতে পারি? ফোনে কথা বললে মামা, মামি, মালা, দিশা কেউ না কেউ থাকেই সবসময়৷ বলবো কিভাবে?”
মাইশা সেসবে পাত্তা না দিয়ে বলে,
“তুই আমার প্ল্যানে পানি ঢালছিস, এখন আমি তোর প্রেমে আগুন লাগাবো। ওয়েট বাবু। ”
মাইশা রাগে গজগজ করে ২-৩ কদম এগুতেই আবির ছুটে গিয়ে মাইশার পথ আঁটকে দ্বিগুণ ভারি কন্ঠে প্রশ্ন করে,
“কি করবা?”

“তানভির কে কল দিয়ে বলব, তুই যে গোপনে হের বোনের পিছে ঘুরছিস৷ ”
আবির মাইশার সামনে থেকে সরে একপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে উত্তর দিল,
“ওহহ ”

মাইশা ভ্রু কুঁচকে আবিরের মুখের পানে তাকায়। আবিরের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে মাইশার চরম রাগ উঠে গেছে। সাকিবের দিকে তাকাতেই সাকিব হেসে ফেলল৷ সাকিবকে হাসতে দেখে মাইশা রাগে প্রশ্ন করল,
“হাসছিস কেন?”
“হাসছি, কারণ তুমি যাকে বিচার দিতে যাচ্ছো। সে অলরেডি সবকিছু জানে৷ এখন না, আরও ৭-৮ বছর আগে থেকেই জানে। ”

“কি? আবির কি এতবছর যাবৎ মেঘকে ভালোবাসে? ”
“হ্যাঁ।”
মাইশা আবিরকে শুধালো,
“মেঘ জানে?”
“না”
“বলিস না কেন?”
“সময় হলে বলব।”
“তুই সময়ের অপেক্ষা কর, আমি এখনি বলে দিব৷ ”
আবির আতঙ্কিত হয়ে বলে,
“আপু প্লিজ, ওরে এখন কিছু বলো না।”
” আমি বলবই৷ ”
“সরি আপু। প্লিজ ওরে কিছু বলো না। ”

” সরি বললেই কি সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়? এত কষ্ট করে সাজিয়ে দেখতেই পারলাম না আর একটা ছবিও তুলতে পারলাম না। এখন তোরে কি করতে মন চাই বল ”
” আপু শুনো, ভাইয়া যেহেতু ঢাকায় জব করেন, বিয়ের পর তো তুমিও ঢাকা তেই থাকবা। কোন একদিন মেঘকে শাড়ি পরিয়ে তোমার সাথে দেখা করাবো, দরকার হলে তোমাদের বাসা থেকেও ঘুরে আসবো। তবুও শাড়ি পরা নিয়ে আর কিছু বলো না। আম্মুরা কারো কানে একথা গেলে তুলকালাম হয়ে যাবে। প্লিজ৷ ”

“ফুপ্পি জানে না?”
“না।”
“ঠিক আছে, মাফ করতে পারি তবে একটা শর্তে”
“কি শর্ত?”
” কানে ধর ”
“এখন?”
“হ্যাঁ এখন। কানে ধরবি নাকি মেঘকে বলবো?”
“আচ্ছা ধরছি ” বলে আবির দু’হাতে আলতোভাবে কানের লতি স্পর্শ করল৷
মাইশা মৃদু হেসে শুধালো,
“মেঘকে প্রথমবার শাড়িতে দেখার অনুভূতি বল ”
আবিরের জবাব এলো,
“কানে ধরে কেউ অনুভূতি শেয়ার করে?”
“কেউ করে না বলেই তুই করবি।”
“শুনো তবে,

শাড়ি পরিহিতা মাহদিবা খান মেঘকে দেখে সাজ্জাদুল খান আবিরের অন্তরতম অঁচল পূর্বাভাস বিহীন কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়েছে। মাহদিবার সাহচর্য ব্যতীত আবিরের অশান্ত হৃদয় শান্ত হবে না।”
মাইশা আর সাকিব দুজনেই হা করে তাকিয়ে আছে। মাইশা উচ্চস্বরে হেসে বলল,
“হায় আল্লাহ! আমার ভাই এখন প্রেমিক পুরুষ হয়ে গেছে। ”
মাইশার হাসির শব্দে মীমদের নজর পড়ে। আবির কে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,

“আপু, দেখো ভাইয়া কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে৷ ”
তৎক্ষনাৎ মেঘের নজর পরে সেদিকে। আবিরকে এই অবস্থায় দেখে মেঘের মাথায় চক্কর দিয়ে উঠে। মেঘ, মীম ছুটে যায় সেদিকে।
মেঘ দূর থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধায়,
“কি হয়েছে? আপনি কানে ধরে আছেন কেন?”
মাইশা আবিরকে ইশারা দিতেই আবির কান থেকে হাত নামিয়ে বলে,

” কিছু হয় নি৷ ”
“কিছু হয়নি মানে কি?”
মাইশা মেঘের দিকে তাকিয়ে কোমল কন্ঠে বলে,
“আবির ভুল করেছিল তাই আমি শাস্তি দিয়েছি। ”
মীম প্রশ্ন করে,
“ভাইয়া কি ভুল করছিল?”
“সেটা তোমাদের বলা যাবে না। ” এই বলে মাইশা চলে গেছে। মেঘ আবিরের মুখের পানে চেয়ে চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

“কি করছিলেন আপনি?”
আবির কিছু বলার আগেই সাকিব বলল,
“ভাইয়া ছোট একটা ভুল করেছিল তাই আপু শাস্তি দিয়েছে৷ তুমি টেনশন করো না। ”
এই কথা শুনে মেঘ ফিক করে হেসে উঠলো। আবির ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“হাসছিস কেন?”

মেঘ মুচকি হেসে এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়ল। মীমের হাত ধরে হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছে। আবির কপাল গুটিয়ে প্রেয়সীর গমনপথে চেয়ে আছে। মেঘের চিন্তান্বিত চেহারার হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ আবিরের মাথায় ঢুকছে না। মাইশাকে স্টেজে বসানো হয়েছে। প্যান্ডেলে আত্মীয়ের সমাগম। এরমধ্যে দুটা অল্পবয়স্ক মেয়ে শাড়ি পড়ে বাড়িতে ঢুকছে। সাকিব একপলক তাকিয়ে আবিরের কানে ফিসফিস করে কি যেন বলে সেদিকে চলে গেছে।

মালা আর ওর বান্ধবীরা কয়েকটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে ব্যস্ত। ছেলেগুলো মালার ই বন্ধু। আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছে। মেঘ চেয়ারে বসে মাইশার ছবি তুলছে আর সেগুলো মীমকে দেখাচ্ছে। মাঝে মাঝে দুইবোন সেলফিও তুলছে। সাকিব গেইটের কাছে গিয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে একটু কথা বলেই সরে গেছে। আদি ছুটে এসে মীমকে টেনে নিয়ে কোথায় চলে গেছে। এই সুযোগে আবির লোকজনের ভিড় পেরিয়ে মেঘের পেছনে দাঁড়িয়ে মেঘের মাথায় গাট্টা মারে। আকস্মিক ঘটনায় মেঘ আঁতকে উঠে। পেছন ফিরে আবিরকে দেখে কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

আবির রাশভারি কন্ঠে প্রশ্ন করে,
“তখন হাসছিলি কেন ?”
“এমনি!”
“এমনি কেউ হাসে না। কারণ বল। ”
“আপনাকে শাস্তি দেয়ার মানুষ আছে দেখেই হাসি পাচ্ছিল। ”
“তারমানে আমি শাস্তি পেলে তুই খুশি?”
“আমি এই কথা কখন বললাম! ”

“সব কথা বলতে হয় না। তোর মনের কথা চোখে স্পষ্ট ভাসতেছে।”
মেঘ ঘন ঘন পল্লব ফেলে শুধালো,
“আপনি কি চোখের ভাষাও বুঝেন?”
“জ্বি।”
“সবার?”
“জ্বি না। তোর মতো তার ছিঁড়া মানুষের মনের কথা বুঝার ক্ষমতা আল্লাহ আমায় দিয়েছেন। ”
“আমি তার ছিঁড়া? ”
“কি মনে হয়?”
মেঘ গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলল,
“আমি মোটেই তাঁর ছিড়া না।”

“সেসব পরে দেখা যাবে। মামি খাওয়ার জন্য ডেকে গেছেন। মীম, আদিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি আয়।”
মালা আর ওর বান্ধবীরা দূর থেকে আবির মেঘের কথোপকথন শুনার চেষ্টা করছিল। স্টেজ থেকে মাইশাও আবির মেঘকে দেখছিল। মাইশার মুখে মিষ্টি হাসি। মাইশা আর আবিরের বয়সের পার্থক্য মাত্র ১ বছর হওয়ায় দুই ভাই- বোনের মধ্যে ছোট থেকেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মামা বাড়িকে কেন্দ্র করে আবিরের শৈশবের অনেকখানি স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মামা বাড়ির সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল মাইশা৷ সাকিব একটু বড় হওয়ার পর থেকে সাকিবের সঙ্গেও খুব ভালো সম্পর্ক হয়েছে ।

বাকিদের সঙ্গে তেমন আন্তরিকতা নেই। মাইশা পড়াশোনার জন্য বাড়ির বাহিরে চলে যাওয়া, আবিরের দীর্ঘদিন মামা বাড়িতে না আসা, তারপর বিদেশে চলে যাওয়া। সব মিলিয়ে মাইশার সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হয়নি অনেক বছর। মালার ফোন দিয়ে বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। তবে সবসময় মালা আশেপাশে থাকে। মালার সামনেই মাইশা আবিরকে অনেকবার প্রশ্ন করেছে, আবির কাউকে পছন্দ করে কি না।

কেউ আছে কি না! কিন্তু আবির সবসময় এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছে। ব্যস্ততা দেখিয়ে কল কেটে দিয়েছে। মাইশাও আলাদা ভাবে কখনো আবিরকে কল দেয় নি, আবিরও নিজ থেকে কিছু বলে নি। এতদিন পর মাইশা আবিরের মনের কথা জানতে পেরেছে। তাই মেঘ আবিরের খুনসুটি দেখে আনমনে হাসছে। তবে মাইশা খুশি হলেও মালা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছে। সন্ধ্যার ঘটনার পর থেকে দুজনকে একসঙ্গে দেখলেই মালা ফুঁসে ওঠে।

আবির বাড়ির ভেতরে চলে গেছে। মীম আর আদি আসার পর মেঘও ওদের নিয়ে খেতে চলে গেছে। মাইশার বাবা-চাচারা, মামারা আরও যারা যারা আছেন সবাই মাইশাকে হলুদ লাগাতে ব্যস্ত। ২ জন ক্যামেরাম্যান ছবি তুলতেছে। মেঘদের পিছুপিছু মালাও ওর বান্ধবীদের নিয়ে খেতে গেছে। মালিহা খান আর আবিরের ছোট মামি মিলে সবাইকে খাওয়াচ্ছেন। মালাকে বসতে দেখেই সাকিব ঠাট্টার স্বরে বলল,

“কিরে মালা, তুই খেতে বসছিস কেন?”
“তোর কি সমস্যা? ”
“আমার আবার কি সমস্যা হবে। যে মেয়ে সাজলে সারাদিন পানিও খায় না। সেই মেয়ে শাড়ি পরে, সেজেগুজে ভাত খেতে বসছে। ঘটনা কি?”
” তোর মাথা। ”

সাকিব আর কথা না বাড়ালো না। আবিরের একপাশে সাকিব বসেছে। অপরপাশে আদি বসেছে, তারপর মীম, এরপর মেঘ। মেঘের পাশেই মালা বসেছে। মালাকে মেঘের পাশে বসতে দেখেই আবির চোখ রাঙিয়ে সাকিবের দিকে তাকিয়ে আছে। সাকিব চোখে ইশারা করল, আবির যেন শান্ত থাকে। মালার থেকে মেঘকে দূরে দূরে রাখতে চেয়েও পারছে না। আবির নিজের রাগ কন্ট্রোল করে খুব তাড়াহুড়োয় খাবার খাচ্ছে। আবির খাবার প্রায় শেষ। তখন মালা মেঘকে উদ্দেশ্য করে বলছে,
“মেঘ তুমি বরং এই মাছটা খাও।”

একটা মাছের পিস চামচে তুলে মেঘের দিকে এগুতেই আবির রাগান্বিত কন্ঠে বলে,
“মাছের তরকারি অনেক ঝাল হয়েছে, মেঘ এত ঝাল খেতে পারে না৷ ”
মালা পুনরায় মাছ বাটিতে রেখে দিল। আবিরের কথা শুনে মেঘ চোখ জোড়া বড় করে তাকালো। অষ্টাদশীর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। মেঘ এত ঝাল খেতে পারে না, এটা আবির ভাই মনে রেখেছে, ভেবেই অষ্টাদশীর মন খুশিতে ভরে গেছে। মেঘ চিবুক নামিয়ে লাজুক হাসলো। আবির ভাইয়ের প্রতি ভালো লাগা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
আবির উঠে যেতে যেতে মালাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” মেঘকে খাওয়ানোর দায়িত্ব তোকে দেয়া হয়নি। তোর যতটুকু কর্তব্য ততটুকুই করিস৷ এর বাহিরে কোনো প্রকার ভালোবাসা দেখানোর প্রয়োজন নেই। ”
আবির রাগে কটমট করে রুম থেকে বেরিয়ে পরেছে। রাগটা পুরোপুরি প্রকাশ করতে পারছে না৷ আবার গিলতেও পারছে না৷ খাওয়ার মধ্যে তানভির ৫-৭ বার কল দিয়ে ফেলেছে৷ তানভিরের সাথে কথা বলে নিজের ভেতরের ক্ষোভ প্রকাশ করছে৷

তানভিরও ঠান্ডা মাথায় ভাইকে বুঝাচ্ছে ৷ আচমকা আবিরের সামনে মেঘ দাঁড়াতেই আবিরের কথা বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষোভের পরিবর্তে আবিরের চোখে-মুখে মুগ্ধতা প্রতীয়মান হচ্ছে। মায়াবিনীর মায়াবী মুখ দেখলে আবিরের ক্রোধ যেন নিমিষেই বিলীন হয়ে যায়। আবির উঠে যাওয়ায় মেঘ তাড়াহুড়ো করে খাবার খেয়ে ছুটে এসেছে। আবির ভাইয়ের অপ্রকাশিত ভালোবাসা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে সে। আবিরকে নিরুত্তর থাকতে দেখে তানভির কয়েকবার হ্যালো হ্যালো বলছে । কয়েক মুহুর্ত পর আবির বলে,

“এখন রাখছি। পরে কল দিব।”
মেঘ মোলায়েম কন্ঠে শুধালো,
“ভাইয়া কল দিয়েছিল?”
“হ্যাঁ।”
“ভাইয়া কি রাতে খেয়েছে?”
“হ্যাঁ। তুই কি জন্য এসেছিলি?”
“আপনাকে দেখতে। ”
আবির কপাল কুঁচকে বলে,
“মানে?”

” আপনার শীত লাগছে কি না দেখতে আসছিলাম। ঠিক আছে চলে যাচ্ছি। ”
আবিরের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঘ লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। মুখ ফসকে সবসময় সত্যি কথায় কেন বের হয়! মেঘ কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে স্টেজের দিকে চলে গেছে৷ মেঘকে দেখেই মাইশা হাতে ইশারা করলো স্টেজে যাওয়ার জন্য।

ঘন্টাদুয়েক গায়ে হলুদের প্রোগ্রাম চলল। স্টেজের আশেপাশে ছবি তুলার জন্য বেশ কিছু সোফা, তার আশেপাশে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানেই সকলে দল বেঁধে ছবি তুলছে। সবার হলুদ ছোঁয়ানো শেষে নাচের প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। দিশা, মালা, মালার বান্ধবীরা সবাই গায়ে হলুদের গানে অনেক সুন্দর নেচেছে। ছেলেদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন নেচেছে।

সবার শেষে ১০ জন ছেলে স্টেজে উঠেছে। সবার পরনে রানী গোলাপী পাঞ্জাবি , সবাই এক গানে নাচছে। মেঘ সামনের দিকে চেয়ারে বসে সেই নাচের ভিডিও করছে। কারণ ১০ জনের কেন্দ্রবিন্দু হলো আবির। সবাই নিজেদের মতো নাচলেও আবিরকে স্টেজে উঠানো যায় নি। মাইশা আপু আর সাকিবের জোড়াজুড়িতে আবির শেষমেশ সবার সাথে নাচতে রাজি হয়েছে। টানা ৩ টা গানে ১০ জন একসঙ্গে পারফর্ম করেছে। আবির স্টেজ থেকে নেমে একটা চেয়ারে বসতে বসতে মেঘকে বলল,

“একটু পানি নিয়ে আসবি, প্লিজ। ”
“এক্ষুনি আনছি। ” বলে মেঘ হুটোপুটি করে পানি আনতে চলে যায়। পানির গ্লাস নিয়ে আসতে আসতে দেখে মালা আবিরকে পানির বোতল সাধতেছে। মেঘ গ্লাস হাতে মাঝপথেই দাঁড়িয়ে পরেছে। আবির ঘাড় ঘুরিয়ে উচ্চস্বরে বলল,
“পানি কি দিবি? ”
মালা পুনরায় বলল,

“এটা ভালো পানি। খাও। ”
মেঘ কয়েক পা এগিয়ে আবিরের কাছে আসতেই আবির হাত বাড়িয়ে পানির গ্লাস নিতে নিতে বলল,
“বোতল দিয়ে পানি খায় না আমি। ”
মালা রাগে গজগজ করে চলে যাচ্ছে। যতবারই আবিরের কাছে যেতে চায়, আবির ততবারই মালাকে অবহেলা করে, দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এটা মালার একদম সহ্য হচ্ছে না। মেঘের প্রতি এত কেয়ার সহ্য করতে পারছে না সে।
মেঘ পানির গ্লাস নিতে নিতে বলল,

“আপনি এত ভালো ডান্স করেন। জানতাম না তো! ”
আবির মুচকি হেসে বলে,
” সময় হলে আরও অনেককিছু জানতে পারবেন। ”

মেঘ অবাক লোচনে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷ প্যান্ডেলের আনাচে-কানাচে মানুষের ভিড়। শীতের রাত বলে প্রোগ্রাম তাড়াতাড়ি শেষ করা হয়েছে। মেহেদী দেয়ার জন্য পার্লার থেকে তিনজন মেহেদী আর্টিস্ট আনা হয়েছে। মাইশা রুমে চলে যাওয়ায় পাড়া-প্রতিবেশীরাও যে যার মতো বাড়ি চলে যাচ্ছে। এত মানুষের ভিড়েও দু’জোড়া চোখ একে অপরকে দেখছে। উভয়ের তপ্ত দৃষ্টি তোলপাড় চালাচ্ছে উভয়ের হৃদয়ে৷ হৃৎস্পন্দনের মাত্রা তীব্র হচ্ছে। দুজনার আঁখি যুগল জড়িয়ে আছে মোহময়তায়।

হঠাৎ ফোন ভাইব্রেশন হওয়ার আবিরের দুর্ভেদ্য চাহনিতে ছেদ পরে। স্ক্রিনে তাকাতেই সাকিবের নাম চোখে পড়ে ৷ ঘাড় ঘুরিয়ে সাকিবের হাস্যোজ্জল মুখ দেখে আবির পুনরায় মেঘের দিকে তাকায়। মেঘ তখনও গভীর মনোযোগের সঙ্গে আবিরকে দেখছে৷ আবির মেঘের চোখের সামনে দু আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে মেঘের ঘোর কাটানোর চেষ্টা করল। তুড়ির শব্দে মেঘ নড়ে ওঠে।

সম্বিৎ ফিরতেই মেঘ লাজুক হাসলো। সে কল্পনায় আবির ভাইয়ের সঙ্গে কাপল ডান্স করতেছিল। আবির তুড়ি বাজিয়ে রোমান্টিক মুহুর্তটা নষ্ট করে ফেলেছে। মেঘকে হাসতে দেখে আবির কপাল গুটিয়ে বলল,
“কি হলো?”
মেঘ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজালো। দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছেড়ে ডাকল,
“আবির ভাই..!”
আবির আবেশিত কন্ঠে জবাব দিল,
“হুমমমমমম। ”
আগপাছ না ভেবেই মেঘ বলল,

“আপনি মানুষটা খুব তেঁতো। ”
মেঘের কথায় আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। মুচকি হেসে আশেপাশে তাকিয়ে ভাবলেশহীন জবাব দিল,
“তেঁতো হয়েই যে বিপদে আছি, মিষ্টি হলে না জানি কি হতো!”

মেঘের ওষ্ঠদ্বয় আরও প্রশস্ত হলো। আবির ভাই ঠিকই বলেছেন। আবির ভাইয়ের এই অ্যাটিটিউড দেখেই মালা আপু, এমপির মেয়ের মতো না জানি আরও কত মেয়ে পাগল। মালা আপুর আচরণে মনে হয় আবির ভাই তার সম্পত্তি। ভাবতেই আচমকা মেঘের হাসি গায়েব হয়ে গেছে। মুখ ফুলিয়ে শ্বাস টেনে বিড়বিড় করে বলল,
“আবির ভাই শুধুই আমার। আর কারোর না। ”

আবির তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেঘের হঠাৎ পরিবর্তন দেখছে। মেঘের যে ক্ষণে ক্ষণে কি হয়ে যায় এটা ভেবেই আবির ক্লান্ত। আসার পর থেকেই মেয়েটাকে চোখে চোখে রাখছে। তারপরও কি যে হয়! বাসায় থাকলে আবির কখনোই এতটা সময় মেঘকে দিতে পারতো না।বিয়ে বাড়ি আত্মীয়ে পরিপূর্ণ। তাছাড়া সাকিব আর ওর বন্ধুরা আবিরকে অনেকদিকে সাহায্য করছে। মামারা বা আবিরের বাবা কোনো কাজে আবিরকে খোঁজতে গেলে সাকিবের বন্ধুরায় সে কাজ করে দিচ্ছে। আবিরকে ডাকার সুযোগ ই দিচ্ছে না তারা। সাকিব দু’দিকে ই নজর রাখছে।
আবির গলা খাঁকারি দিয়ে ডাকল,

“এইযে ”
মেঘের নজর পরলো আবিরের চোখে। কোনো উত্তর দিল না।
আবির রাশভারি কন্ঠে বলল,
” অনেক রাত হয়ে গেছে। আর টইটই করতে হবে না। কুয়াশার মধ্যে বাহিরে ঘুরলে ঠান্ডা লাগবে। প্রোগ্রাম তো শেষ ই। এখন রুমে যা। ”
“আপনি কি করবেন?”
” আমার কাজ আছে ।”
মেঘ এবার ভাব নিয়ে বলল,

“রাত অনেক হয়েছে। আপনারও টইটই করা উচিত হবে না৷”
আবির প্রশস্ত নেত্রে তাকাতেই মেঘ ছুটে পালালো সেখান থেকে। আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে। সহসা স্বভাবসিদ্ধ হাসে। আবিরের প্রতি মেঘের ভয়ভীতি যেমন কমছে, তেমনি বাড়ছে মেয়েটার দায়িত্ববোধ। প্রেয়সীর অল্পস্বল্প যত্ন দেখে আবির বেশ বিস্মিত হয়। মনখারাপের জায়গায় ভিড় করে একরাশ মুগ্ধতা।

মেঘের সবকিছুই আবিরকে টানে তবে ছোট ছোট পাগলামি আর দুষ্টামি গুলো আবিরের অনেক বেশি টানে। দুজন মেহেদী আর্টিস্ট মিলে এক রুমে মাইশার দুহাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। মাইশাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে তাই পাশের রুমে আরেকজন সবাইকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। মেঘ মাইশার রুমে বসে মেহেদী দেয়া দেখছে।
মাইশা মেঘের হাতের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,

” তোমার হাত ফাঁকা কেন? মেহেদী দিতে পারো না?”
“না”
“সমস্যা নেই৷ পাশের রুমে একজন আপু আছেন, ওনি সবাইকে দিচ্ছেন। ওনাকে বলো তোমাকে দিয়ে দিতে। ”
“মেহেদী লাগাবো না আপু।”
“এসব বললে হবে না। সবার হাতে মেহেদী তোমার হাত ফাঁকা দেখলে তোমার আবির ভাই আমার সাথে রাগ দেখাবে। এক হাতে অন্তত দাও। ”

“আবির ভাই কিছু বলবে না। ”
“তোমাকে বলবে না। আমাকে ঠিকই বলবে। যাও বলছি।”
“ঠিক আছে আপু।”
মেঘ পাশের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে রুমের পরিস্থিতি দেখল। একপাশে মালার বান্ধবীরা যে যার মতো একে অপরকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। পার্লারের আপুটা মীমকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে।
মেঘকে দেখে মীম ডাকল,
“আপু আসো। তোমাকেও মেহেদী দিয়ে দিবে।”

মেঘ মীমের পাশে বসেছে। মীমের মেহেদী দেয়া প্রায় শেষ। মেঘ বসে মেহেদী ডিজাইন দেখছে। আপুটা খুব দ্রুত আর অসম্ভব সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছেন। মীমের মেহেদী দেয়া শেষ। মীম বিছানায় ওঠে বসেছে, দিশারা আগে থেকেই বিছানায় বসে ছিল। মেঘকে মেহেদী দেয়ার জন্য আপু মেঘের বামহাতের কব্জিতে ধরতেই মালা রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“আপু, এখন আমাকে মেহেদী দিয়ে দিবেন। ”
আপুটা হেসে বলল,
“তুমি একটু বসো। বেশিক্ষণ লাগবে না। ”
মালা রাগে কটমট করে বলল,
“মেঘ তুমি বরং পরে মেহেদী দিও। এখন আমি দিব। ”

মেঘ চুপচাপ উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। মেঘ উঠতেই মালা মেঘের জায়গায় বসে নিজের হাত বাড়ালো। আবির আর মেঘ প্যান্ডেলে কথা বলার সময় মালা নিজের রুম থেকে দেখেছে। সন্ধ্যার পর থেকে মালা মেঘকে সহ্য ই করতে পারছে না। নিচে মালা কাজ করছিল, মেঘ মেহেদী দিতে আসায় মালার বান্ধবী মালাকে কল দিয়েছে। সব কাজ ফেলে মালা মেহেদী দেয়ার নাম করে মেঘের মনে আঘাত দিতে আসছে৷ মালার আচরণে মেঘের মন খারাপ হওয়ার থেকেও বেশি অপমানিত হয়েছে। সে তো ইচ্ছে করে মেহেদী দিতে আসে নি, মাইশা আপু জোর করায় এসেছিল।

প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট পর আবির কোথা থেকে এসেছে। মালাদের উঠোন পেরিয়ে সাকিবদের উঠোনে যেতে যেতে আচমকা থমকে দাঁড়ালো। চোখ পরে স্টেজের দিকে। স্টেজের পাশে একটা টেবিলের উপর মেঘ মাথা রেখে বসে আছে। কিছু চুলে পিঠ ঢেকে আছে আর কিছু চুল টেবিলের উপর। আবির ভ্রু জোড়া নাকের ডগায় টেনে, এগিয়ে গেল সেদিকে। তপ্ত স্বরে ডাকল,

“মেঘ। ”
মেঘ মুখ তুলে পেছন ফিরে আবিরকে দেখে পুনরায় মুখ লুকালো। আবির মেঘের কাছাকাছি এগিয়ে গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,
“আবার কি হয়ছে?”
মেঘ আগের অবস্থায় থেকেই উত্তর দিল,
“কিছু না। ”
আবিরের মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ভারী কন্ঠে বলল,
” কে কি বলছে?”

মেঘকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে আবির মেঘের ডান বাহু চেপে ধরে একটানে দাঁড় করালো। আকস্মিক ঘটনায় মেঘের ছোট দেহ কম্পিত হয়।আবিরের মুখের পানে তাকাতেই মেঘের বুক কেঁপে উঠে। আবিরের রক্তাভ দুচোখ দেখেই মাথা নিচু করে ফেলেছে । ভয়ে জড়সড় হয়ে যাচ্ছে। আবির রাগান্বিত কন্ঠে ধমক দিল,
“তাকা আমার দিকে৷ ”
মেঘ আঁতকে উঠে তাকালো আবিরের তামাটে চেহারায়৷ চারপাশে এত লাইটিং থাকা সত্ত্বেও আবিরের মুখে উজ্জ্বলতার ছিটেফোঁটা নেই। কপাল গুটিয়ে প্রশ্ন করল,
“এখানে বসে ছিলি কেন?”

মালার আচরণে মেঘের খুব রাগ হয়েছিল। আজ পর্যন্ত তাকে কেউ এমনভাবে অপমান করে নি। মালা কি না এভাবে কথা বলল! সেই আক্রোশেই রুম থেকে বেরিয়ে প্যান্ডেলে এসে বসে আছে। চারপাশ কুয়াশায় আচ্ছাদিত৷ লাইটের আলোতে কুয়াশাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সামান্য জ্যাকেটে শীত মানছে না তবুও মেঘ রুমে যাচ্ছে না। মেঘ এতক্ষণ রাগে ফুঁসলেও প্রিয় মানুষের উপস্থিতিতে এখন অনেকটা শান্ত হয়ে গেছে। মেঘের কন্ঠস্বর ভার হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ভেতরের ক্রোধ কান্না হয়ে বেড়িয়ে আসবে৷ মেঘ উদ্বেল কন্ঠে বলে,

“আমি এখানে থাকবো না। বাসায় চলে যাব। ”
আবির ঢোক গিলে ছোট করে শুধালো,
“কি হয়ছে বল, প্লিজ। ”
মেঘ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে, অভিযোগের স্বরে আবিরকে মালা আপুর নামে নালিশ জানালো। মনের যত ক্ষোভ ছিল একদমে সব প্রকাশ করল। আবির অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মেঘের অভিযোগ গুলো শুনেছে৷ এতক্ষণ ধরেই আবির মেঘের বাহু চেপে ধরেছিল। মেঘের কথা শেষ হওয়া মাত্রই আবির মেঘের বাহু ছেড়ে দিয়ে মোলায়েম কন্ঠে বলল,
” মেহেদী দিতে পারিস নি বলে এত রাগ? ”

মেঘ কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
“আমি কি একবারও বলছি মেহেদী দিতে পারি নি বলে রাগ উঠেছে? দূর ভাল্লাগে না। আমি থাকবোই না। ”
এই কথা বলে মেঘ চলে যেতে নিলে সঙ্গে সঙ্গে আবির মেঘের হাত ধরে এক টানে নিজের কাছে টেনে নেয়। টাল সামলাতে না পেরে আবিরের প্রশস্ত বুকে ধাক্কা খেল মেঘ। তৎক্ষনাৎ আবিরের পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরল। মেঘের হাত স্পর্শ করতেই আবির পুনরায় কপাল গুটালো। মেঘের আঙুলগুলো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে৷ মেঘ আবিরকে ছেড়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। আবির তখনও মেঘের হাত ধরেই আছে। মেঘ সরে যাওয়ায় আবির দুহাতে মেঘের হাত ঘসতে ঘসতে বলল,

“মানুষের উপর রাগ করে নিজের ক্ষতি করা কবে বন্ধ করবি তুই?”
মেঘ ওষ্ঠ উল্টে আবিরের অভিমুখে চেয়ে আছে। আবির পুনরায় বলল,
“তোর হাত আর বরফের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। কথা বললে শুনিস না কেন? ”
মেঘ আস্তে করে বলল,
“সরি। এখনি রুমে চলে যাব।”
“এখন আর রুমে যেতে হবে না। বস এখানে। আসছি আমি। ”

মেঘ চেয়ারে বসে আছে। আবির সাকিবের রুমে গেছে। ২ মিনিটের মধ্যে পাঞ্জাবি পাল্টিয়ে টিশার্ট তার উপর জ্যাকেট পরে আসছে। হাতে একটা শপিং ব্যাগ আর একটা চাদর হাতে নিয়ে আসছে৷ মেঘের গায়ে চাদর জরিয়ে পাশ থেকে একটা চেয়ার টেনে মেঘের অভিমুখে বসলো। শপিং ব্যাগ উল্টাতেই টেবিলে ৮-১০ টা মেহেদী পরল। মেঘ বিপুল চোখে তাকিয়ে আছে মেহেদী গুলোর দিকে৷ আবির বলল,

“তোকে মেহেদী দিতে দেয় নি কথাটা একবার জানাতি আমায়…”
আবির টেবিল থেকে একটা মেহেদী নিল। মেঘের বামহাতের কব্জিতে ধরে শুধালো,
“এই হাতে দিব?”
আবিরের কথা শুনে মেঘ আশ্চর্য বনে গেল। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গলা খাঁকারি দিয়ে আস্তে করে বলল,
“আবির ভাই, আপনি মেহেদীও দিতে পারেন?”
আবির স্বভাবসুলভ ভারী কন্ঠে জবাব দিল,

“হয়তো আর্টিস্টদের মতো সুন্দর হবে না। কিন্তু চেষ্টা করতে পারি৷ অবশ্য তুই না চাইলে দিব না।”
তখন অভিভূত হয়ে গেছে। আবির ভাই মেহেদী দিয়ে দিবে এটা অষ্টাদশীর কল্পনাও করতে পারছে না। মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“আপনার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই দেন। ”

আবির মেঘের হাত ধরে কাঁপা কাঁপা হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। আর মেঘ অপলক দৃষ্টিতে সেই দৃশ্য দেখছে। মালিহা খানের হঠাৎ নজর পরে স্টেজের কাছে আবির মেঘ বসে আছে। ওনি কৌতূহল বশতই এগিয়ে যান সেদিকে। কাছাকাছি যেতেই চোখে পরে আবির মেঘের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। ততক্ষণে মেহেদী দেয়া প্রায় শেষদিকে। মালিহা খান হাসিমুখে বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ। ”

মায়ের কন্ঠ শুনে আবির আঁতকে উঠে। মেঘের মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটে। দু’জনেই মালিহা খানের দিকে তাকায়। মালিহা খানের হাস্যোজ্জল মুখ দেখে মেঘ আবির দুজনেই স্তব্ধ হয়ে আছে।
মালিহা খান পুনরায় বললেন,
“আমি তো এই আবিরকেই দেখতে চাইছিলাম। বোনের প্রতি এই টান এতদিন কোথায় ছিল?”
আবির উত্তর না দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে শুধালো,

” কাকামনি আর চাচ্চু কখন আসছেন?”
মালিহা খান বললেন,
“কিছুক্ষণ আগেই আসছে। খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পরছে।”
একটু থেমে মালিহা খান আবার বললেন,
“কত বছর পর মেহেদী হাতে নিছিস বল তো আবির?”
“মনে নেই। ”

মেঘ একবার বড় আম্মুর দিকে তাকাচ্ছে আবার আবিরের দিকে। বড় আম্মুর কথার মানে বুঝার চেষ্টা করছে মেঘ। মালিহা খান মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“জানিস মেঘ, ছোটবেলা আবির মেহেদী না দিয়ে দিলে তুই কি যে কান্না করতিস।”
মেঘ ভ্রু কুঁচকে শুধালো,
“আমি?”

“হ্যাঁ তুই। মীম তখন কোলে ছিল। ঈদের সময় আশেপাশের বাসার পিচ্চিদের হাতে মেহেদী দেখে তুই বাসায় এসে কান্না করতিস। তখন তো এত পার্লারও ছিল না। আমি তোর মা, কাকিয়া কেউ ই মেহেদী দিতে পারতাম না। বাধ্য হয়ে আবির ই তোরে মেহেদী দিয়ে দিতো।মীমরেও কয়েকবার দিছে৷ তবে তোরে বেশি দিয়ে দিছে। ”
মেঘ ডান হাতে মাথা চুলকে বলল,
“আমার কিছু মনে নাই কেন?”
মালিহা খান হেসে উত্তর দিলেন,
“জন্মের পর থেকে ৬-৭ বছরের ঘটনা কারোর ই মনে থাকে না। কিন্তু তোরা এত ঠান্ডায় এখানে বসে আছিস কেন? ”

আবির রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
“আম্মু তোমার ভাইয়ের মেয়েকে সাবধান করে দিও।”
মালিহা খান চিন্তিত স্বরে বললেন,
“কে? মালা?”
“হ্যাঁ”
“মালা আবার কি করছে?”

“মালা মেঘকে অপমান করছে। মেঘ কি ওদের বাড়িতে দাওয়াত ছাড়া আসছে? যা তা ব্যবহার কেন করবে! এরকম আচরণ যদি আর একবার করে আমি কিন্তু ওর খবর করে ছাড়বো। ”
মালিহা খান হেসে উত্তর দিলেন,
“মালাকে আমি বুঝিয়ে বলব নে। দাঁড়া তোর মামনি আর কাকিয়াকে ডেকে আনি। ওদের দেখায় আমার ছেলেটা ঘরমুখো হচ্ছে। ”

মালিহা খান দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে চলে গেছেন। এদিকে মালা দুহাতে মেহেদী দিয়ে প্রতিটা রুমে রুমে মেঘকে খোঁজছে অথচ মেঘ কোথাও নেই। মালিহা খানকে ঘরে ঢুকতে দেখে মালা প্রশ্ন করল,
“কি হয়েছে ফুপ্পি৷ এত তাড়াহুড়োতে কোথায় যাচ্ছ?”
“আবির মেঘের হাতে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার জন্য আমার দুই ঝা করে ডাকতে যাচ্ছি।”

মালিহা খান চলে গেছেন। কথাটা মালার কাটা গায়ে নুনেরছিটের মতো লাগছে। দ্রুত বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। ঘন কুয়াশার মধ্যেও চোখ পরে মেঘ আবিরের দিকে। নিজের উপর এখন আরও বেশি রাগ হচ্ছে। আবির মেঘকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে, এটা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। সে যদি মেঘের সাথে এই আচরণ না করত তাহলে আবির আর মেঘ কাছাকাছি আসতো না, আবিরও মেঘকে মেহেদী দিয়ে দিত না। রাগে মালার চোখ-মুখ জ্বলছে। রুমে ঢুকেই ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

বড় আম্মু যাওয়ার পর থেকে মেঘ আবিরকে দেখেই যাচ্ছে। পল্লবও ফেলছে না। আবির তড়িঘড়ি করে মেহেদী দিচ্ছে। মেঘ কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না। মনের ভেতর এক রাশ মুগ্ধতা। আবির ভাই ছোটবেলা নিজের হাতে মেঘকে মেহেদী দিয়ে দিতো। এটা ভেবে ই আনমনে হাসছে। আবির মেহেদীটা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলল,

“তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরিস। আমি গেলাম। ”
বলেই সাকিবদের ঘরের দিকে দৌড় দিল। মেঘ মুগ্ধ আঁখিতে আবিরকে দেখছে। কয়েক মুহুর্তের মধ্যে আবির ঘরে ঢুকে পরেছে। মেঘ তখনও সেদিকেই তাকিয়ে আছে। ততক্ষণে তিন ঝা আসছেন। দূর থেকে মেঘকে ডেকে বলল,
“কিরে আবির কই?”
“চলে গেছে। ”
কাকিয়া মেঘের হাত ধরে এপাশ-ওপাশ ঘুরিয়ে বলল,

“বাহ! অনেক সুন্দর করে দিয়েছে তো। ”
কাকিয়ার কথায় মেঘ এবার নিজের হাতের দিকে তাকালো। মেহেদী আর্টিস্টদের মতো না হলেও খুব একটা খারাপ হয় নি। মেঘ হাতের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মন, মস্তিষ্ক জোড়ে আবির ভাই বিচরণ করছে। মনে অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করছে। মনে মনে হাজার বার মালা আপুকে ধন্যবাদ দিচ্ছে । “মালা আপু অপমান না করলে, আবির ভাইয়ের সাথে এত সুন্দর মুহুর্তটা কখনো উপভোগ করতে পারতো না সে। ” মা কাকিয়ারা কি বলছে তার কোনোকিছুতেই মেঘের মনোযোগ নেই।
অষ্টাদশীর হৃদয়ের প্রতিটা স্পন্দন বলছে,

” আবির ভাই, আপনি আমার সেই পূর্ণতা। ভালোবাসি আপনাকে। ”
মা কাকিয়ার সঙ্গে ঘরে গিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে গেছে। মীম, দিশারা অনেকক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পরেছে। মেঘ মীমের পাশে শুয়েছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে মেহেদী না তুলেই ঘুমিয়ে পরেছে। অনেকক্ষণ যাবৎ ফোন ভাইব্রেশন হচ্ছে।

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৮

মেঘ গভীর ঘুমে নিমগ্ন। দীর্ঘ সময় ভাইব্রেশনের পর মেঘ চোখ বন্ধ রেখেই পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে কানের উপর রাখল। ওপাশ থেকে আবেশিত কন্ঠ ভেসে আসে,
“ম্যাম, আপনার ঘুম কি এখনও ভাঙে নি? এক ঘন্টা যাবৎ আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। ”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৯