আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৯

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৯
লেখনীতে সালমা চৌধুরী

ঘুমে কাতর মেঘের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে। ফোনের অপর পাশের আবেশিত কন্ঠ শুনে ঘুম ঘুম চোখে স্ক্রিনে তাকাতেই আবিরের ছবি ভেসে উঠেছে তার সঙ্গে সেইভ করা নামটা। সহসা অষ্টাদশীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সতেজ হয়ে উঠেছে। এক মুহুর্তেই চোখ থেকে ঘুমের রেশ কেটে গেল, অক্ষি যুগল প্রশস্ত হলো ৷ মেঘ উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,
“আবির ভাই! ”

এই প্রথমবার আবির নিজ থেকে মেঘকে কল করেছে। আধলা ঘুমে থাকায় আবিরের কন্ঠ ঠিকমতো বুঝতে পারে নি। মেঘ এক লাফে বিছানায় বসে ফোন কানের কাছে নিতেই পুনরায় আবিরের নেশাক্ত কন্ঠ ভেসে আসে,
“ম্যাম, আপনার দর্শন পেতে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে? ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেঘ ভ্রু কুঁচকে একবার স্ক্রিনে তাকাচ্ছে আরেকবার ফোন কানে ধরছে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। নাম্বার টা আবির ভাইয়ের নামেই সেইভ করা, কন্ঠস্বর ও আবির ভাইয়ের। কিন্তু আবির ভাই তো কখনো এভাবে কথা বলেন না। মেঘের মাথা চক্কর দিচ্ছে। মেঘ ফোন কানে ধরে আশেপাশে তাকালো। মীম, দিশারা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে।
আবির পক্ষান্তরে মৃদুস্বরে ডাকল,

“ম্যাম..!”
মেঘ জবাব দিল,
“জ্বি। ”
“আপনি কি এখনও ঘুমাচ্ছেন?”
“না তো। ”
“কষ্ট করে একটু বেলকনিতে আসবেন!”

মেঘ ফোন বিছানার উপর রেখে এক হাত দিয়ে অন্য হাতে চিমটি কেটে নিজেই ‘উফফ’ করে উঠল। বুঝতে পারল এটা স্বপ্ন নয় সত্যি। ফোন কানে ধরে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বিছানা থেকে নেমে হুড়মুড়ি করে বেলকনিতে পা দিতেই কপাল কুঁচকে সরু নেত্রে তাকালো। পূর্ব দিগন্তে উদিত সূর্যের আলোয় মেঘ ঠিকমতো তাকাতে পারছে না।

চোখ কচলে বেশকয়েকবার পিটপিট করে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকাতেই নজর পরে উঠোনের মাঝ বরাবর একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে আবির ভাই বসে আছেন। পড়নে কালো হুডি, একহাত হুডির পকেটে অন্য হাতে কানে ফোন ধরে তাকিয়ে আছে বেলকনির দিকে। পূর্বাভিমুখে বসায় শীতের সকালের অনুচ্চ আলোয় জ্বলজ্বল করছে আবিরের মুখবিবর। মেঘ স্থির দৃষ্টিতে আবিরকে দেখছে। হুডিতে আবির ভাইকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পুনরায় তাকালো। এদিকে আবিরের চোখে সূর্যরশ্মি আছড়ে পরছে, সেই রশ্মি উপেক্ষা করে অতি সঙ্কীর্ণ লোচনে মেঘকে দেখছে। আংশিক সময়ব্যাপী চলে এই দৃশ্য। আবির আচমকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,

“ফ্রেশ হয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে নিচে আসেন। ”
“কেন?”
“আমি বলছি তাই৷”
মেঘ হাসিমুখে বলল,
“আচ্ছা। ”
কান থেকে ফোন নামাতে যাবে ওমনি আবির আবার ডাকল,
” ম্যাম শুনেন…!”
“জ্বি স্যার, বলুন। ”
আবির মৃদু হেসে বলল,
“খালি পায়ে আসবেন । রাখছি। ”

আবির কল কেটে দিয়েছে৷ তবে দৃষ্টি এখনও মেঘেতে নিবদ্ধ। মেঘ কয়েক সেকেন্ড স্থির থেকে হঠাৎ ই হুড়োহুড়ি করে রুমে চলে গেছে। হাতের মেহেদী তুলা হয় নি। ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে নিচে যেতে হবে তাই তাড়াহুড়ো করছে। এত সকালে বেশিরভাগ মানুষ ই ঘুমে। যারা উঠেছেন তারা সবাই রান্নার কাজে ব্যস্ত। মেঘ চুপিচুপি ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো৷ ১০ মিনিটের আগেই মেঘ নিচে চলে আসছে। আবির মাথা নিচু করে ফোন চাপতেছিল আচমকা নুপুর পড়া আলতা রাঙা পায়ে নজর পরতেই আবির আঁতকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে ফোন পকেটে রেখে চোখ তুলে তাকাল। মেঘ আবিরের ঠিক সামনে দাঁড়ানো। চোখাচোখি হলো দু’জনের। মেঘ আবিরের অবসন্ন ধৃষ্টতা দেখে চিন্তিত স্বরে শুধালো,

“আপনি কি রাতে ঘুমান নি?”
আবির স্বভাবসুলভ ভারী কন্ঠে উত্তর দিল,
“ঘুম আসছিল না। হাতটা দেখি!”
মেঘ হাত বাড়িয়ে মেহেদী টা দেখালো ।মেহেদীর গাঢ় রঙ দেখে আবির মৃদু হাসলো। মেঘ শীতল কন্ঠে বলল,
“রাতে কিছু বলতে পারি নি..”
মেঘের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবির আড়চোখে চেয়ে প্রশ্ন করল,
“কি বলতি?”

“থ্যাংক ইউ আবির ভাই। এত সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দেয়ার জন্য। ”
আবির নিঃশব্দে হেসে বলল,
“ওয়েলকাম। এই মেহেদী দেখে কান্না করে দেস কি না এই টেনশনে ছিলাম। ”
“কাঁদবো কেন?”
“সবাই সুন্দর করে দিয়েছে তোর টা সুন্দর হয় নি বলে যদি কান্না করিস৷ ”
মেঘ ভেঙচি কেটে বলল,

“জীবনেও না। আমার টা সবচেয়ে সুন্দর হয়ছে।
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বলল, “চল এখন!”
আবির উঠে হাঁটতে শুরু করেছে। মেঘও গুটিগুটি পায়ে হাঁটছে৷ মামাদের বাড়ির পেছনদিকে মাটির রাস্তায় পা দিতেই মেঘ শুধালো,

“আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
“তোকে নিয়ে পালাচ্ছি।”
অকস্মাৎ মেঘ বিষম খেল, জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে শুধালো,
“কোথায়?”
“কোনো এক কোলাহল শূন্য নিসর্গে ।”

মেঘ আর কিছু বলতে পারল না। শীতের সকালের এলোমেলো ঠান্ডা হাওয়া তারসাথে আবিরের বলা কথায় মেঘের মনে অজানা শিহরণ জাগে। অষ্টাদশীর আঁখি জোড়ায় রঙিন স্বপ্ন। আবির ভাই তাকে নিয়ে পালাবে , এটা ভাবতেই হৃদয়ে বসন্ত দোলা দিচ্ছে। বুকের ভেতর কে যেন অবিরাম ঢোল পেটাচ্ছে। মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে নিষিদ্ধ প্রেমানুভূতি। আবির কিছুটা এগিয়ে গিয়ে নিরস্ত হলো। পেছন ফিরে দেখল মেঘ এখনো আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
আবির দুর্বহ কন্ঠে বলে উঠে,

“ম্যাম, Are you okey?”
আবিরের কন্ঠস্বর কানে আসলেই কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আপনি আমাকে ম্যাম বলছেন কেন?”
” ভয়ে।”
“মানে?”
“শীতকালে এত সকাল সকাল আপনাকে ঘুম থেকে উঠালাম। কখন জানি ফোঁস করে রেগে যান। তাই! ”
মেঘ বোকার মতো চেয়ে পুনরায় শুধালো,
“আপনি আমায় ভয় পান, আবির ভাই ?”
“মাঝে মাঝে ।”

মেঘ হতবাক। চোখ বড় করে চেয়ে আছে। মেঘের অবিশ্বাস্য চাহনি দেখে আবির ভ্রু নাঁচালো।
মেঘ লাজুক হেসে চিবুক নামালো। ঠোঁট জুড়ে বিশ্বজয়ের হাসি৷ মুখবিবরে প্রাপ্তির ছাপ। মেঘের লজ্জামাখা হাসি দেখে আবিরও মুচকি হাসল। কথা না বাড়িয়ে আবির খালি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আবিরের পিছুপিছু মেঘও হাঁটছে। মেঘের ঠোঁট থেকে হাসি যেন সরছেই না। গতকাল থেকে আবির ভাইয়ের আদতে অষ্টাদশীর হৃদয়ে তোলপাড় বেড়েছে কয়েকগুণ। আবির ভাইয়ের কথা, যত্ন, ব্যবহার, চাহনি সবকিছুই জানান দিচ্ছে,

“আবিরের হৃদয়ের অস্ফুট বরফ গলতে শুরু করেছে।”
অষ্টাদশী স্পষ্টরূপে বুঝতে পারছে তা। নিজেকে আবির ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড ভাবছে আর বার বার লজ্জায় আড়ষ্ট হচ্ছে। আবিরের পেছন পেছন মেঘ মাটির রাস্তা পেরিয়ে বিস্তীর্ণ মাঠে পা রাখতেই কেঁপে উঠল। শিশিরে ভিজে আছে সবুজ ঘাস। এতক্ষণ যাবৎ আবিরকে এমনভাবে অনুসরণ করছিল, যেন আশেপাশে তাকানোর মত সময় নেই। পলক ফেললেই হারিয়ে যাবে শখের পুরুষ।

অষ্টাদশী উষ্ণ পায়ের স্পর্শে শিশিরে স্নান ঘাস মাড়িয়ে যাচ্ছে। হৃদয় দোলছে শীতল হাওয়ায়। ব্যস্ততম শহরে মাটির স্পর্শ পাওয়া দুষ্কর। প্রকৃতি সাথে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে মেঘের মনে প্রেম প্রেম অনুভূতি জাগছে। আবির যেখানে পা ফেলছে আবিরের পায়ের ছাপ দেখে মেঘও ঠিক সেই জায়গাতেই পা ফেলছে। বেশকিছু টা যাওয়ার পর আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে মেঘের কান্ড দেখে কপাল কুঁচকালো, মৃদু হেসে সামনের দিকে ঘুরলো।
“পাগলির পাগলামিতে অত্যাসক্ত আবির। ”

বিশালাকৃতির মাঠের পরেই কয়েক সারি ঘর। আশেপাশে নানান রকমের গাছ। দুইটা ঘরের মাঝ বরাবর সরু রাস্তা। মেঘ একান্তে আবিরকে অনুসরণ করেই চলেছে। ইহজগতের আর কোনোকিছুতেই মনোযোগ নেই তার। বাড়িগুলো পেরিয়ে কিছুদূর গিয়ে আবির পিছু ঘুরল। তৎক্ষনাৎ মেঘের মাথা ঠেকে আবিরের বুকে৷ মেঘ কুন্ঠায় দু পা পিছিয়ে চোখ তুলে তাকালো৷

এভাবে আবির ভাইয়ের পিছু নেয়ায় আবির ভাই যদি রেগে যায়, আতঙ্কে মেঘের বুক কাঁপছে৷ কিন্তু আবিরের অভিব্যক্তি বুঝা গেল না৷ মেঘের সামনে থেকে সরে পাশে দাঁড়াতেই মেঘ বিপুল চোখে তাকালো। দৃষ্টির সীমানা জুড়ে হলুদ রঙের সরষে ফুল। আশ্চর্য নয়নে চেয়ে আছে মেঘ। এত সরষে ফুল একসঙ্গে কখনো দেখেনি সে। কয়েক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেছে। আবিরের দিকে তাকাতেই আবির মুচকি হেসে বলল,
“এক খন্ড হলুদের রাজ্যে আপনাকে স্বাগতম। যেখানে নেই শহরের কোনো কোলাহল, নেই কোনো নিষিক্ত অনিল৷ সবটুকু জুড়েই শুধু স্নিগ্ধতা। ”

নীল আকাশ আর প্রকৃতি জুড়ে সরিষা ফুল। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে অনুভূতিরা অষ্টাদশীর হৃদয়ে ছোঁয়ে যাচ্ছে৷ প্রকৃতি নিরন্তর অনিন্দিত। সরিষা ফুল তার এক প্রীতিপদ নিদর্শন। দিগন্ত জোড়া মাঠের প্রতিটা সরিষা ফুলে জমে আছে শিশিরের কণা৷ সেই দৃশ্য দেখে মেঘের মন প্রেমের রঙে সুশোভিত হয়ে গেছে। মেঘ গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে আলতো হাতে শিশিরে ভেজা সরিষা ফুল স্পর্শ করল। মেঘ আপনমনে ছুটে যাচ্ছে। কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো। পিছনে ঘুরে দৌড়ে আবিরের কাছে চলে আসছে। আবির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। মেঘ আবিরের কাছে এসে হাঁপাতে শুরু করল।

আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে শুধালো,
“কি হয়ছে?”
মেঘ ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিল। হাত দিয়ে আবিরকে ইশারা করতেই আবির একটু নিচু হয়ে মেঘের মুখোমুখি হলো। মেঘ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবিরের কানে কানে বলল,
‘আপনি কি জানেন না, সরিষা খেতে তাঁনাদের বসবাস!’

আবির সিরিয়াস মুডে কথা শুনতে এসেছিল। কিন্তু মেঘের আজগুবি কথা শুনে স্ব শব্দে হেসে বলল,
“তোর তাঁনারা বেড়াতে গেছে৷ ”
মেঘ ভয়ে ভয়ে শুধালো,
“আপনাকে কে বলছে?”
“রাতে তোর তাঁনাদের সাথে দেখা হয়ছিল। বলে গেছিলাম সকালে তোকে নিয়ে আসবো। তোর তাঁনারা যেন ঘুরতে চলে যায়। ”

“কোথায়?”
“তোর শ্বশুরবাড়ি৷ ”
“মানে?”
“এমন ভাবে বলছিস, মনে হচ্ছে তাঁনারা যেখানেই যায় আমার থেকে অনুমতি নিয়ে যায়।”
“আপনিই তো বললেন!”
” আল্লাহ! কোন পাগলির পাল্লায় পড়লাম।”
মেঘ গাল ফুলিয়ে ওষ্ঠ উল্টে তাকালো। আবির মেঘের মাথায় আস্তে করে গাট্টা মেরে বলল,
“তোর মাথায় তাঁনাদের কথা কে ঢুকাইছে বল তো!”

“বড় আম্মু। ”
“কি???
আম্মু তোকে এসব বলে?”
“জ্বি।”
“আর কি বলে?”
“আরও অনেক কিছুই বলে। কিন্তু সেসব আপনাকে বলা যাবে না। পার্সোনাল কথা । ”
আবির ভ্রু গুটিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“শাশুড়ি-বৌ মিলে আমায় পাগল বানায় ছাড়বে।”

আবির গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
” এসব আজগুবি কথা আর বলবি না। তাঁনারা বলতেই কিছু হয় না।”
“আমার ভয় লাগে। বড় আম্মু বলছে তাঁনারা আমায় নিয়ে যাবে । ”
আবির অত্যন্ত গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“আমি থাকতে তোর কিসের ভয় ? আমার চোখের সামনে, আমার অনুমতি ব্যতিত কেউ তোকে ছুঁতেও পারবে না৷ ”
মেঘ প্রশস্ত নেত্রে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ভীষণ লজ্জা পেয়েছে। চিবুক নামিয়ে ঘুরতেই মেঘের মাথা থেকে ওড়না পরে গেল৷ পা বাড়াতেই আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল,

” দাঁড়া। ”
মেঘ দাঁড়াতেই আবির আলতোভাবে মেঘের চুল থেকে কাকড়া বেন্ট খুলে দিল।ওমনি মেঘের ঘন কালো চুল কোমড় ছাড়িয়ে পরেছে। আবির দু’হাতে কতগুলো সরিষা ফুল ছিঁড়ে মেঘের চুলে ছড়িয়ে দিয়েছে। কালো চুলে হলুদ ফুলগুলো অসাধারণ সুন্দর লাগছে। একহাতে মুষ্টিবদ্ধ হাতে সরষে ফুল ছিঁড়ে দু পা এগিয়ে মেঘের কানে গুঁজে দিয়ে মোয়ালেম কন্ঠে বলল,

“এবার যেতে পারিস৷ ”
মেঘ ভয়ে ভয়ে পা বাড়ায়। আবির পকেট থেকে ফোন বের করে মেঘের ভিডিও করায় ব্যস্ত। অনেকটা সময় ঘুরাঘুরি শেষে মেঘ হঠাৎ বলল,
“Can I take a picture with you?”
“yes, of course.”
মেঘ নিজের ফোন দিয়ে আবিরের সঙ্গে দুটা ছবি তুলেছে। আবিরের ফোন ভাইব্রেশন হতেই আবির পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করল। পরপর ই মেঘের দিকে তাকিয়ে বলল,

“চল। ”
“কোথায়?”
“নদীর পাড়ে।”
নদীর পাড়ে যেতেই দেখল সাকিব হাতে একটা বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘকে দেখেই বলল,
“শুভ সকাল, মেঘবতী। ”
“শুভ সকাল ”
“তোমার জন্য গাছ থেকে খেজুরের রস আনছি। খেয়ে দেখো কেমন লাগে। ”

মেঘ অল্প একটু খেয়ে বলল,
“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।”
সাকিব হাসিমুখে বলল,
“ধন্যবাদ আমাকে না দিয়ে তোমার আবির ভাইকে দাও। এত ঠান্ডায় আলো ফোঁটার আগে আমায় টেনে তুলে কুয়াশার মধ্যে খেজুরের রস আনতে পাঠাইছে। ”
মেঘ আশ্চর্য নয়নে আবিরের অভিমুখে চেয়ে শুধাল,

” আপনি বলছেন? ”
আবির নিরুদ্বেগ কন্ঠে উত্তর দিল,
“তুই কখনো খেজুরের রস খাস নি তাই আনাইছি। তোকে নিয়ে যাব ভাবছিলাম৷ কিন্তু অনেকটা দূর হয়ে যাবে তাই যায় নি৷ ”

আবিরের ভাইয়ের এত যত্ন দেখে মেঘ বার বার অভিভূত হয়ে যাচ্ছে। গতকাল থেকে কতশত বার আবিরের প্রেমে পড়েছে তার হিসেব নেই। ঘন্টাদুয়েক মেঘ আবির আর সাকিব একসঙ্গে নদীর পাড়ে বসে আড্ডা দিয়েছে। আবির আর সাকিবের শৈশবের স্মৃতিগুলো সাকিব অবলীলায় মেঘকে জানাচ্ছে। এই নদীতে কতকত দিন গোসল করেছে একসাথে। ফুটবল, ক্রিকেট খেলার ঘটনা থেকে শুরু করে এক পর্যায়ে সাকিবের মনের মানুষের কথাও বলেছে। সেই থেকে মেঘ বায়না ধরেছে সাকিবের গার্লফ্রেন্ড কে দেখবে। আবির কয়েকবার না করছে কিন্তু মেঘ কোনো কথায় শুনছে না।

আবির ধমক দিতে গিয়েও বার বার আঁটকে যাচ্ছে।সে কোনোভাবেই মেঘের মনে আঘাত দিতে চাচ্ছে না৷ মেঘের পাগলামিতে সাকিব বাধ্য হয়ে মেয়েটাকে কল দিল৷ কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা মেয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ওদের কাছে আসলো। থ্রিপিস পড়নে, চুলগুলো বেনি করা, গ্রামের খুব সাধারণ একটা মেয়ে তবে রূপ-লাবণ্যে পরিপূর্ণ। মেঘ বসা থেকে দাঁড়িয়ে সালাম দিল৷ মেয়েটা হাসিমুখে সালামের উত্তর দিয়ে মেঘকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করছে। আবির আর সাকিব মুখ চাওয়াচাওয়ি করে কিছু একটা ইশারা করল। সাকিব মেয়েটাকে বলল,

“শিমু, তুমি চাইলে আমাদের সাথে বসতে পারো। ”
শিমু আস্তে করে বলল,
“বাসায় বলে আসি নি। চলে যেতে হবে।”
মেঘ মন খারাপ করে বলল,
“ভাবি একটু বসেন না প্লিজ।”

শিমু লজ্জায় নুইয়ে পড়ল। মেঘের কথায় সাকিব হাত দিয়ে কপাল চাপড়াচ্ছে। আবির তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বের করল। হাজার হোক আবির সাকিবের বড় ভাই৷ ছোট ভাইয়ের প্রেমিকাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতেই আবির তৎক্ষনাৎ জায়গা ত্যাগ করল। শিমু শীতল কন্ঠে বলল,
“অন্য কোনোদিন সময় নিয়ে তোমার সাথে আড্ডা দিব”
“আচ্ছা আপু। ”

শিমু যেতে নিলে সাকিব পিছু ডাকে, সাকিব আর শিমুকে কথা বলতে দেখে মেঘ কিছুটা সরে দাঁড়ালো। আবির ফোনে কথা বলতে বলতে মেঘকে ডাকলো।
মেঘ কাছে আসতেই আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
“চল বাড়ি যায়৷ সবাই খোঁজতেছে।”
মেঘ মোলায়েম কন্ঠে শুধালো,
“জায়গাটা অনেক সুন্দর। আর একটু পরে গেলে হয় না?”
“নো ম্যাম৷ এখনি যেতে হবে। ”

মেঘ মন খারাপ করে হাঁটতে শুরু করল। আবির মেঘের থেকে কিছুটা পেছনে রাকিবের সাথে কথা বলে বলে হাঁটছিল৷ অফিসের কিছু কাগজপত্রে ঝামেলা হয়েছে সেসব নিয়েই কথা বলছে। সাকিব দৌড়ে এসে আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“নিজের কাজ শেষ ওমনি আমায় ফেলে চলে যাচ্ছ নাকি?”
আবির কান থেকে ফোন সরিয়ে ভারী কন্ঠে বলল,
“তোকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে আসলাম। ”
“সুযোগ না ছাই। তোমরা আসতেই ভয়ে পালাইছে৷ ”

আবির মৃদু হেসে রাকিবের সঙ্গে কথা বলায় মনোযোগ দিল। আবির আর সাকিব মেঘকে মাটির রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিল, মেঘ মুখ গোমড়া করে বাড়িতে ঢুকলো৷ উঠোনে দাঁড়িয়ে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে। অনেক বেলা হয়ে যাওয়ায় বাড়ির সব মেহমান উঠে পরেছে। সবাই কাজে ব্যস্ত। মেঘ ঘরে ঢুকতে গেলেই পেছন থেকে ডাকল,
“বনু।”
মেঘ পেছন ফিরতেই দেখল তানভির। মেঘ উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

“ভাইয়া, কখন আসছো?”
“একটু আগেই আসছি। কোথাও গেছিলি?”
“নদীর পাড়ে। ”
তানভির ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
“একা গেছিলি?”
“না, আবির ভাই আর সাকিব ভাইয়াও ছিল।”
“ওহ আচ্ছা। ভাইয়া এখন কোথায়?”
“বাড়ির পেছনে। ”

আকলিমা খান মেঘকে ডেকে নিয়ে গেছেন। সকাল থেকে খাওয়া হয় নি। তানভির বেরিয়ে গেছে আবিরের সঙ্গে দেখা করতে। তানভির বাড়ি থেকে নামতে গিয়ে সাকিব আর আবিরকে দেখে থমকে দাঁড়ালো। সাকিব তানভিরকে দেখেই ছুটে এসে জরিয়ে ধরে উদ্বেগপূর্ণ কন্ঠে বলল,
“কিরে কেমন আছিস?”
“আলহামদুলিল্লাহ৷ তুই কেমন আছিস?”
“ভালোই ছিলাম৷ কিন্তু ভাইয়ার অবস্থা দেখে আর ভালো থাকতে পারছি না। ”
“কেন কি হয়ছে?”

“বিশ্বাস করবি কি না জানি না, গতকাল সারারাত গেছে ভাইয়া এক মিনিটের জন্যও ঘুমায় নি। আমি যতবার সজাগ হয়ছি ততবার ই দেখি ভাইয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে, নয়তো শুয়ে তোর বোনের ছবি দেখছে। একটা মানুষ কেমনে নির্ঘুম রাত কাটায় এর জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো ভাইয়া। ভাইয়ার এই অবস্থা দেখে আমিই ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
আবির ক্রোধিত আঁখিতে সাকিবের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সাকিব আবিরের মুখের পানে চেয়ে পুনরায় তানভির কে বলল,

“তোর বোনকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দে।”
তানভির হেসে উত্তর দিল,
“বিয়ে দেয়ার ক্ষমতা যদি আমার হাতে থাকতো তাহলে অনেক আগেই বিয়ে দিয়ে দিতাম।”
আবির গম্ভীর কন্ঠে ধমক দিল,
“আমার বিয়ে নিয়ে গবেষণা করতে হবে না। মাইশা আপুর বিয়েতে ফোকাস কর।”
তানভিরকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“এত সকালে চলে আসলি যে!”
“মাইশা আপু ভোরবেলা থেকে কল দিতে দিতে আমার ঘুমের চৌদ্দটা বাজায় দিছে। একা কুলাতে পারছিল না বলে আব্বুকে আর বড় আব্বুকে দিয়ে কল দেয়াইছে বাধ্য হয়ে ঘুম থেকে উঠেই রওনা দিতে হয়ছে।”
“বাইক আনছিস?”
“হ্যাঁ। এই নাও চাবি।”

আবির চাবি নিয়ে বাড়িতে চলে গেছে। সাকিব আর তানভির কিছুক্ষণ কথা বলে যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে গেছে। মেঘ বসে বসে আবিরের সঙ্গে তোলা সেলফি গুলো দেখছে৷ সেখান থেকে একটা ছবি ফেসবুক ডে তে পোস্ট করে ফোন ব্যাগে রেখে গোসলে চলে গেছে। এদিকে বন্যা ক্লাস শেষ করে ফেসবুকে ঢুকে মেঘের ডে দেখে রীতিমতো শকট খেয়েছে। আবির ভাইয়ের সাথে মেঘ ছবি পোস্ট করেছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

পাশে এক বান্ধবীকে বলল চিমটি কাটতে, বার বার ছবি টা দেখছে। খুশিতে বন্যার চোখ ছলছল করছে। ডে পোস্টে রিপ্লাই দিয়েছে, কল দিয়েছে মেঘ নেটে নেই। আনন্দে বন্যার হাত কাঁপছে। মেঘের নাম্বারে বার বার কল দিচ্ছে, মেঘ রিসিভ করছে না। মেঘের সাথে কথা না বলেও শান্তি পাচ্ছে না। ১০-১৫ বার মেঘকে কল দেয়ার পর, তানভিরের নাম্বারে ডায়াল করল। তানভির কল রিসিভ করে সালাম দিল। বন্যা সালামের উত্তর দিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে শুধালো,

” মেঘ কোথায়? ”
“বনু তো এখানে নেই৷ কেন কি হয়ছে?”
“একটু দরকার ছিল। মেঘকে কি দেয়া যাবে?”
“আচ্ছা ওয়েট করো আমি দেখছি। এখন কোথায় তুমি?”
“ভার্সিটিতে। ”
“সব ঠিক আছে তো? মনে হচ্ছে কোনো বিষয়ে আপসেট।”
“আপসেট না। এমনি-ই মেঘের সাথে একটু কথা ছিল। ”

তানভির কথা বলতে বলতে মেঘের রুমে গিয়ে ফোন দিয়ে আসছে। মেঘ বন্যার সাথে কথা বলে, একেবারে রেডি হয়ে তানভিরের ফোন নিয়ে নিচে নামছে৷ তানভিরকে খোঁজতে খোঁজতে গেইট পর্যন্ত চলে গেছে। গেইটের কাছে তানভির সাকিবসহ মাইশার আরও কয়েকটা কাজিন কাজ করতেছিল৷ আবির এখানে নেই৷ মেঘ ডাকতেই তানভির উঠে এসে ফোনটা নিল। মেঘ চলে যেতে নিলে তানভির গম্ভীর কন্ঠে শুধালো,

“তোর ফ্রেন্ড কল দিয়েছিল কেন?”
মেঘ আমতা আমতা করে বলল,
“ক্লাসের জন্য। ”
“কাল ক্লাস আছে?”
“হ্যাঁ!”
মেঘ যেতে নিলে তানভির পুনরায় ডাকল,
“শুন”
মেঘ মুখ গোমড়া করে বলল, “আমি জানি তুমি কি বলবা”

“কি বলব?”
“বলবা, বরযাত্রী আসলে ঘর থেকে যেন না বের হয়,কারো সাথে যেন কথা না বলি, খাবার ঘরে নিয়ে খাওয়াবা এসব ই তো। ”
তানভির স্ব শব্দে হেসে বলল,
“না এসবের কিছুই বলব না। তুই যেখানে ইচ্ছে ঘুরতে পারিস। ”
“সত্যি?”
“হুমম। তবে একা যাবি না। মীমকে সাথে নিয়ে যাবি।”
“আচ্ছা। কিন্তু তুমি কি বলতে চাইছিলা?”
“চুল ছেড়ে ঘুরিস না। হিজাব পরে আসিস। ”

“ঠিক আছে।”
মেঘ রুমে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি পর্যন্ত যেতেই মালার সাথে দেখা হলো। মালা হেসে বলল,
“মেঘ কোথায় ছিলে তুমি? রুমে খোঁজতে গেছিলাম তোমায়৷ ”
মেঘ তপ্ত স্বরে বলল, “নিচে ছিলাম।”
মালা আশপাশে তাকিয়ে বলল,
“তুমি কি আমার উপর রেগে আছো? রাতে তোমার সাথে ঐরকম ব্যবহার করা ঠিক হয় নি। তারজন্য দুঃখিত। ”
মেঘ ওষ্ঠদ্বয় প্রশস্ত করে উত্তর দিল,

“রাগ করি না৷”
মালা উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
“দেখো তো আমার মেহেদী টা কেমন হয়েছে। ”
হাত বাড়াতেই মেঘ মালার হাতের দিকে তাকালো। মেহেদী ডিজাইন খুব সুন্দর হয়েছে। হঠাৎ ই মেঘের ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। মালার হাতে A অক্ষর দেখে মেঘ ভীষণ চটে গেছে। সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে মালা ইচ্ছে করে আবির ভাইয়ের নামের প্রথম অক্ষর লিখেছে এবং সেটা মেঘকে দেখাতে আসছে। মেঘ রাগে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। মালা আড় চোখে চেয়ে হাসলো।

বরযাত্রী আসছে অনেকক্ষণ হলো৷ গেইটে জামাই বরণ চলছে৷ হুড়োহুড়ি কর্মকাণ্ডের কোথাও মেঘ নেই৷ সেই যে রুমে ঢুকেছে আর বের হয় নি মেয়েটা৷ মীম দিশাদের সাথেই আছে। তানভির টেনশনে পরে গেছে, হিজাব পড়তে বলায় বোন রেগে গেল কি না। মেঘের নাম্বারে কল দিল। কিন্তু মেঘ কল রিসিভ করছে না। এত মানুষের ভিড় ঠেলে বাড়িতে ঢুকতেও ইচ্ছে করছে না। তানভির এমনিতেই নেট অন করল৷ ফেসবুকে ঢুকতেই মেঘ আবিরের সেলফি দেখে আনমনে হেসে বলল, “মাশাআল্লাহ” ।

কিন্তু সেই হাসিটা বেশিসময়ের জন্য স্থির হলো না। মেঘের আইডি দেখে ভ্রু গুটালো। আবির ফেসবুকে কিছু শেয়ার করলে সেগুলো কাস্টম করেই শেয়ার করে। কিন্তু মেঘ যে হুট করে আবিরের সাথে ছবি আপলোড করল বাসার মানুষের নজরে পড়লে সর্বনাশ হয়ে যাবে৷ এসব ভেবেই তানভির ভয় পাচ্ছে। তানভির তাড়াতাড়ি উঠে আবিরের কাছে গেল। আবিরের কানে কানে কিছু বলতেই আবিরের অভিব্যক্তি বদলে গেল। তানভির ফোন থেকে সেই পোস্ট টা দেখালো। আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“মেঘ কোথায়?”
বনুকে হিজাব পড়তে বলছিলাম। সেই যে উপরে গেছে আর তো আসছে না৷ কল দিলাম কল ধরে না। আবির গম্ভীর কন্ঠে বলল, “মীম কে বল ডেকে নিয়ে আসতে।”

আবির, সাকিব, সাকিবের কয়েকটা বন্ধু সবাই মিলে বরযাত্রীদের খাবার পরিবেশন করছে। তানভিরও চেয়েছিল, কিন্তু মামারা রাজি হোন নি।আবির ওনাদের বোনের ছেলে, আবিরের প্রতি যতটুকু অধিকারবোধ আছে তানভিরের প্রতি ততটুকু নেই। তাই তানভিরকে ওনারা মেহমানের মতোই যত্ন করছে। কোনো প্রকার দায়িত্ব দিচ্ছেন না। মীম রুম থেকে মেঘকে নিয়ে নামছে। আত্মীয় আর বরযাত্রীদের ভিড়ে উঠোনে পা রাখার জায়গা নেই। দিশা, মীম, মেঘ আরও কয়েকজন কাজিন নতুন জামাই এর সঙ্গে দেখা করতে স্টেজে গেল। জামাইয়ের সাথে কথা বলে আসার সময় একটা ছেলে পাশ থেকে ডেকে বলল,

“Excuse me ”
মীম আর মেঘ দুজনেই পাশ ফিরল। কিন্তু কিছু বলল না।ছেলেটা পুনরায় বলল,
“আপনারা বৌয়ের কি হোন?”
মীম স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিল,
“বোন। কেনো?”
“তাহলে তো তোমরা আমার বিয়াইন হোও। তা তোমার পাশের জনের নাম কি?”

“নাম দিয়ে আপনার কাজ কি?” মীম রাগে উত্তর দিল।
ছেলেটা স্ব শব্দে হেসে বলল, “কাজ আছে বলেই তো জিজ্ঞেস করছি। ”
ছেলেটার একটু পেছনে আবির দাঁড়াতেই মেঘ বৃহৎ নয়নে তাকালো। আবির চোখ দিয়ে ইশারা করতেই মেঘ মুচকি হেসে মীমকে বলে,
“চল আমরা ঐদিকে যায়। ”

বোনের কথামতো মীম ও চলে যাচ্ছে। ঐ ছেলে পুনরায় পিছু ডাকে,
“এই সুন্দরী তোমার হাসিটা খুব সুন্দর। প্লিজ, তোমার নামটা বলো। ”
পেছন থেকে আবির গুরুতর স্বরে বলল,
” এইযে মিস্টার, সুন্দরীর নাম আমি আপনাকে বলছি। আপনি বরং একটু ঐদিকে আসুন।”

বরযাত্রী খাওয়ানো শেষে বাড়ির সব কাজিনদের খেতে বসানো হয়েছে। আবির ইচ্ছেকৃত মেঘদের টেবিলের দায়িত্ব নিয়েছে যাতে মনমতো খাওয়াতে পারে। তানভিরের কথামতো মেঘ হিজাব পড়েই এসেছে। গাঢ় বেগুনি রঙের একটা গর্জিয়াছ ড্রেস পড়েছে তারসঙ্গে ম্যাচিং হিজাব। হালকা করে সাজুগুজু করেছে তবে সবসময়ের মতোই মায়াবী লাগছে। আবির খাবার দিতে দিতে বেশ কয়েকবার আড় চোখে তাকাচ্ছে।

খাওয়ার শেষ পর্যায়ে আবির হঠাৎ মেঘকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করল। সহসা আবিরের অভিব্যক্তি বদলে গেছে। আঁখি যুগল ক্রোধে জ্বলছে। সঙ্গে সঙ্গে আবির জায়গা ত্যাগ করল। মেঘ কলতলা থেকে হাত ধৌয়ে ফেরার পথে আবিরকে দেখেই থমকে গেল। আবিরের ক্রোধিত আঁখি দেখে মেঘের অন্তরাত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে। আবিরে রুদ্রমূর্তি রূপ দেখে মেঘ ভয়ে ঢোক গিলল।

আবির মেঘের হাত নিজের কাছে টেনে খুললো,মেঘের হাতে মেহেদী দিয়ে “Abir” লেখা। আবির রক্তাভ দুচোখে নিজের নাম টা দেখলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কাঁপা কাঁপা হাতে মেঘ নামটা লিখেছে৷ আবির কন্ঠ চারগুণ ভারি করে বলল,
“এসবের মানে কি?”

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৩৮ শেষ অংশ 

মেঘ হাত টেনে নিজের পেছনে লুকালো। আবির দাঁতে দাঁত পিষে চলে গেছে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে আবির একটা মেহেদী নিয়ে আসছে। মেঘের হাত টেনে একটু মেহেদী নামের উপর রেখে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নিজের নামটা লেপ্টে দিয়েছে। মেঘ আবিরের রক্তাভ চোখে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে।

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৪০