আযদাহা পর্ব ১৯
সাবিলা সাবি
জ্যাসপার ল্যাব থেকে ধীর পায়ে গ্লাস হাউজে ফিরে এলো। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েও তার প্রশান্তি মিললো না, মাথার ভেতর তীব্র যন্ত্রণার প্রবাহ মস্তিষ্ককে ক্ষতবিক্ষত করছে। শক্তিশালী শরীরে ক্লান্তি না থাকলেও এই অসহ্য মাথাব্যথা তাকে ভেতরে ভেতরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। ঘরে প্রবেশের আগেই সে অ্যাকুয়ারাকে আদেশ করেছিল কফির জন্য, যাতে হয়তো কিছুটা স্বস্তি পায়।
অন্যদিকে, অ্যাকুয়ারা প্রিন্সের কফি তৈরি করে দোতলায় যাচ্ছিল, ঠিক তখনই আলবিরা তার পথ আটকায়।
“অ্যাকুয়ারা,শুনো,একটা দরকারি কথা ছিলো,” আলবিরার কণ্ঠে চিন্তার আভাস।
অ্যাকুয়ারা কিছুটা থেমে প্রশ্ন করে, “কিন্তু প্রিন্স তার জন্য কফি নেয়ার আদেশ দিয়েছে, আগে কফিটা দিয়ে আসি।”
আলবিরা একটু থেমে গম্ভীর মুখে বলে। ”তোমার যেতে হবেনা, ওই মানবী মেয়েটাকে পাঠাও। ওকে আদেশ দাও।
অ্যাকুয়ারার মুখে একটু কৌতূহল ফুটে ওঠে, তবে সে আলবিরার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়। “ঠিক আছে, যেমন তুমি বলছো।”
অ্যাকুয়ারা ফিওনাকে ডেকে নিয়ে আসে,কফির কাপ তার হাতে ধরিয়ে দেয়। ফিওনার ভেতরে অজানা শঙ্কা ভর করে। কফি হাতে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, বুঝে উঠতে পারছে না তাকেই কেনো বারবার ওই জ্যাসপারের সামনে পাঠানো হয়।
অ্যাকুয়ারা কড়া কণ্ঠে বলে, “ফিওনা, প্রিন্সের কক্ষে কফিটা পৌঁছে দাও। সাবধান, একটুও না পরে যায়, এটাতে আয়ুর্বেদিক মিশিয়ে দিয়েছি ওনার মাথা ব্যাথা তাই।”
ফিওনা খানিকটা অস্থির মনে প্রশ্ন করে, “কিন্তু…আমি না গেলে হয়না আজকে …?”
অ্যাকুয়ারা একটু বিরক্তির সুরে বলে, “আলবিরার নির্দেশ, খেলাপ করার জায়গা নেই। কফিটা নিয়ে যাও।
আর,মনে রেখো, প্রিন্সের সামনে সাবধান থাকবে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফিওনা মুখে কিছু না বললেও তার মন দুশ্চিন্তায় ভারী হয়ে ওঠে। তবে সে ধীরে ধীরে কফির কাপ হাতে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলে, সেই অনিশ্চয়তার মাঝেই নিজের সাহসকে শক্ত করে ধরে।
ফিওনা নিঃশব্দে করিডোর পেরিয়ে চলেছে, প্রতি পদক্ষেপে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে চলেছে। আজকের সেই ভয়াল চুম্বনের ঘটনার পর সেই অগ্নিসদৃশ প্রান্তরের দানবটির মুখোমুখি হওয়াটা ভীষণ অস্বস্তির।
তবুও,হাতে কফির কাপ ধরা অবস্থায় নিজের শঙ্কাকে নিবৃত্ত করে জ্যাসপারের কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালো।দরজাটা স্লাইডিং হয়ে খুলে গেল।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে চাঁদের আলো কক্ষের ভেতর প্রবেশ করেছে, সারা ঘরকে এক অপার্থিব আলোকমালায় রাঙিয়ে তুলেছে। জ্যাসপার বিছানায় আড়মোড়া ভেঙে শুয়ে আছে, এক পায়ের ওপর অন্য পা তুলে রেখেছে, একটি হাত অবহেলায় চোখের ওপর রাখা। তার উন্মুক্ত বক্ষ— শার্টহীন, শক্তিশালী পেশিগুলো প্রদীপ্ত চাঁদের আলোয় আরো ঝলমল করছে। চাদের স্নিগ্ধ আলোতে তার সিক্স-প্যাক আবির্ভূত, হাতে ফুটে উঠেছে ভেনাসের মতো নীলচে-সবুজ শিরা।
ফিওনার দৃষ্টি থমকে যায়, কোনো কথা নেই, কোনো শব্দ নেই। সেই নীরবতার ভেতর দাঁড়িয়ে ,সে অপার এক শক্তিমত্তার সামনে স্থির। তার অন্তরের গভীরে মিশে থাকা দ্বিধা আর সংযম তাকে থামিয়ে রেখেছে, জ্যাসপার এক জটিল ধাঁধা, যা সমাধানের অধিকার কেবল তার নিজের হাতে।
ফিওনা নির্বাক, বেখেয়ালি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।জীবনে প্রথমবার কোনো পুরুষের এমন খোলামেলা, অনাবৃত শরীর দেখছে সে—তাও এমন এক শরীর যা স্বয়ং প্রকৃতির নিপুণ শৈল্পিক সৃষ্টি। ফিওনার দৃষ্টি আকর্ষণ এড়াতে চাইলেও বারবার তার চোখ গিয়ে আটকে যাচ্ছে সেখানে, অবাধ্য হয়ে প্রতিটি বিশদে হারিয়ে যাচ্ছে।
তার ঠোঁট শুকিয়ে আসে, হৃদয় হঠাৎ তীব্র গতিতে ধুকপুক করতে থাকে। এমন এক ধরনের অস্বস্তি আর মুগ্ধতার সম্মিলনে তার গাল লাল হয়ে উঠলো। এই পুরুষটি, যে কিনা তার জন্য দুর্বোধ্য আর ভয়ঙ্কর এক প্রাণী, তার শরীরের সৌন্দর্য ফিওনার সমস্ত সংযমকে অকার্যকর করে দিয়েছে।
জ্যাসপারের গম্ভীর কণ্ঠে ফিওনার মগ্নতা ভেঙে গেলো।
“কি হলো, অ্যাকুয়ারা? চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো কেনো?কফি কোথায়?”
ফিওনা মুহূর্তে বাস্তবে ফিরে এলো,নিজের মনে অস্থির হয়ে উঠলো—ইশ,নিজেই নিজেকে গালমন্দ করতে লাগলো। “ছিঃ তুই এমন নির্লজ্জ কিভাবে হতে পারলি, ফিওনা? ওই ড্রাগনটাকে এভাবে দেখার কি আছে?”
ফিওনা যখন মৃদু পায়ে এগিয়ে এসে টেবিলে কফির মগটি রাখলো, তখন জ্যাসপার চোখের ওপর হাত রেখে অর্ধতন্দ্রায় শুয়ে ছিল। হঠাৎ,কোনো এক অদ্ভুত মিষ্টি সুবাস তার নাকে ভেসে এলো। এটা ছিলো এক অচেনা ঘ্রাণ—আশ্চর্যভাবে উষ্ণ,কোমল আর এমন এক মাদকতায় ভরা,তার মস্তিষ্কের প্রতিটি স্নায়ু শিথিল হয়ে আসলো।
একটা মেয়েলি হরমোনাল ঘ্রান যা সূক্ষ্ম, ফিওনার শরীর থেকে ভেসে আসা এই ঘ্রাণ কেমন উষ্ণ, কোমল, আর খানিকটা ফুলের মতো সতেজ। এটি এক ধরনের ম্যাগনোলিয়া ফুলের মিষ্টি, মৃদু চন্দনগন্ধের মতো, যা প্রাকৃতিকভাবে শীতলতর।
আচমকা এরকম অপরচিত ঘ্রান নাকে আসতেই জ্যাসপার তার হাত সরিয়ে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো। সেই সুবাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে ঠিক যেন ফুলের বনে বসে আছে সে, যেখানে প্রতিটি শ্বাসের সাথে ঘ্রাণটি তার ভেতরে প্রবেশ করছে। ফিওনা সেখানেই দাঁড়িয়ে, নিরীহ ভঙ্গিতে; তবে তার শরীর থেকে ভেসে আসা সেই আকর্ষণীয় ঘ্রাণ জ্যাসপারের ইন্দ্রিয়জগতে নতুন এক অনুভূতির সঞ্চার করলো।
জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য স্থির থেকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো—ফিওনা থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো—তার চোখে চোখ পড়লো জ্যাসপারের তীক্ষ্ণ,গভীর দৃষ্টির সাথে। সেই দৃষ্টিতে এক অজানা স্রোত আছে, যা ফিওনার অন্তরে প্রবেশ করে তাকে তুমুলভাবে কাঁপিয়ে তুললো। মুহূর্তেই সে নিজের অব্যক্ত লজ্জা আর দুর্বলতা চাপা দিয়ে অন্যদিকে তাকাতে চাইলেও পারলো না, সেই দৃষ্টির মায়ায় বন্দী হয়ে রইলো।
ফিওনা থমকে দাঁড়িয়ে আছে, অদৃশ্য কোনো শক্তি তাকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছে। জ্যাসপার প্রথমে সামান্য অবাক হলো, তারপর তার চোখ দু’টি ফিওনার দিকে নিবদ্ধ করলো—ধীরে ধীরে, প্রতিটি ভাঁজে লুকানো রহস্য উন্মোচন করতে চাইলো। পায়ের পাতা থেকে মাথা পর্যন্ত দৃষ্টিতে আচ্ছন্ন করলো তাকে।
ফিওনার গায়ে খয়েরি রঙের ফ্রক, যা হাঁটু পর্যন্ত নেমে এসেছে। কাঁধ থেকে একটু নেমে আসা হাতাটা তার অনিচ্ছায় এক ধরনের নাজুক সৌন্দর্য এনে দিয়েছে।তার বাদামী চুলগুলো খোলা,আর চাঁদের আলোর মোলায়েম ঝলক সেই চুলের প্রতিটি রেশমী সুতায় জীবন্ত আলোর বুনন এঁকে দিয়েছে।
জ্যাসপার তাকিয়ে রইলো তার মুখের দিকে, কোনো কথা না বলে, কিন্তু তার দৃষ্টির গভীরতায় প্রশ্নের ঝড় বইছে। ফিওনার মনে হলো, এই দৃষ্টির প্রতিটি ছোঁয়া তার মনের গোপন আবরণকে খসিয়ে দিচ্ছে। অস্বস্তিতে সে এক পা পেছনে সরতে চাইল,কিন্তু সেখানে শিকল বেঁধে তাকে আটকে রেখেছে এই অনিশ্চিত মুহূর্ত। সে নিজেকে সংবরণ করতে চেষ্টা করলো,কিন্তু সেই মনস্টারের এই তীক্ষ্ণ, অনুচ্চারিত দৃষ্টির সামনে নিজেকে পুরোপুরি হারিয়ে ফেললো।
জ্যাসপার হঠাৎই গম্ভীর অথচ কোমল স্বরে প্রশ্ন করলো, “এতোক্ষণ ধরে কক্ষে প্রবেশ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলে কেনো?”
ফিওনা মুহূর্তেই বিচলিত হয়ে উঠলো। কী বলবে সে? কীভাবে ব্যাখ্যা করবে এই বিব্রতকর সত্য যে, এই অচেনা অথচ দুর্নিবার আকর্ষণীয় পুরুষের অনাবৃত শরীর তার দৃষ্টি দিয়ে তাকে বন্দি করে রেখেছিলো। এক অস্বস্তিকর অনুভূতিতে তার মুখ লাল হয়ে উঠলো।নিজেরই মনের মধ্যে একটা ক্ষীণ কণ্ঠস্বর তাকে পুনরায় গালমন্দ করছে।
তবুও সে নিজেকে সঙ্কলিত করে কিছু বলতে চেষ্টা করলো, তবে শব্দগুলো গলার কাছে এসে আটকে গেলো। তার চোখ নীচে নামিয়ে ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় রইলো না, নিজের এই দুর্বলতাকে জ্যাসপারের কাছ থেকে আড়াল করতে চাইছে।
ফিওনার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে জ্যাসপার ধমকের স্বরে বলল,”এই মেয়ে, তুমি সবসময় এমন কেনো? কোনো কথার উত্তর দিতে পারো না?”
ফিওনার হৃদয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। তার কণ্ঠস্বর কাঁপলো “না,আসলে আমি ভেবেছিলাম আপনি ঘুমিয়ে আছেন। তাই বিরক্ত না করে টেবিলে কফিটা রাখতে চেয়েছি।”
জ্যাসপার তখন বিছানা থেকে উঠে বসলো, পাশেই থাকা কফির মগটি হাতে তুলে নিল। উষ্ণ কফির ধোঁয়া বাতাসে ভাসতে লাগলো, আর সে কফির মগে চুমুক দিলো। ফিওনার চোখ সেই মগের দিকে আটকে গেল।রক্তিম বেগুনি ঠোঁটগুলো কফির মগে স্পর্শ করছিল, এক অদ্ভুত আকর্ষণে ভরা দৃশ্য ছিল।
সেই ঠোঁটগুলো, যা গতকাল তার ঠোঁটে লেগেছিল, এখন কফির সঙ্গে চুমুক দিচ্ছে। ফিওনার মনে অদ্ভুত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলো। সে বুঝতে পারলো না ঠোঁটজোড়া এতোটা আকর্ষণীয় অথচ এর স্বাদ এতো জঘন্য তিক্ত।
কফি শেষ করে জ্যাসপার মগটি ফিওনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এই নাও,মগ। এন্ড গো টু হেল নাও।”
ফিওনার মনে রাগের আগুন জ্বলে উঠল। সে মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো, এই ড্রাগনটা নিজেকে কী ভাবে?হতে পারে সে ভেনাসের প্রিন্স? কিন্তু পৃথিবীতে সে একটা এনিমেল ছাড়া কিছুই না।
ফিওনার প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তার মুখাবয়বের ভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছিল।বিরক্তি,আর ক্ষোভ—এই সবই একসাথে জমা হয়েছিল।
ফিওনা কফির মগটা হাতে নিয়ে একপ্রকার হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো,তার পদক্ষেপে এক ধরনের তীব্রতা ছিল, যা জ্যাসপারের জন্য অবাককর ছিল। সে ভাবতে লাগলো, এভাবে হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া তো আমার স্টাইল।
ফিওনার এই আচরণ নতুন বার্তা নিয়ে আসছিল, যা জ্যাসপারের সঙ্গে তার সম্পর্কের মধ্যে একটা পরিবর্তন সূচিত করছিল। তার চোখে ছিল ক্ষোভের জ্বলন্ত শিখা,আর সেই শিখা জ্যাসপারকে বিদ্ধ করে যাচ্ছিল।
ফিওনা চলে যাওয়ার সাথে সাথে সেই মেয়েলি হরমোনাল মিষ্টি ঘ্রানটাও হারিয়ে গেলো, ঘরের বাতাস থেকে এক মুহূর্তে স্পর্শময়তা উবে গেল। জ্যাসপার একপ্রকার বিভ্রান্ত হয়ে পড়লো, তার মন খুঁজে ফিরছিল সেই স্নিগ্ধ সুবাসের উৎস।
জ্যাসপারের অনুভূতি এখন আস্তে আস্তে গভীরতর হতে শুরু করেছে, কারণ তার লাভ ফাংশনালিটি ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে। প্রথমবারের মতো ফিওনার শরীর থেকে বেরিয়ে আসা এক অদ্ভুত মিষ্টি ঘ্রাণ তাকে মোহিত করতে শুরু করেছিলো।
ফিওনার শরীরের এই ঘ্রাণকে কোনো সাধারণ সুগন্ধির মতো নয়, বরং এটা ফুলের মৃদু সৌরভ আর গাঢ় মৌ মৌ সুবাসের সংমিশ্রণ, যা ঘিরে ধরেছিলো জ্যাসপারকে।
ঘ্রাণটি তার ভেতরের বায়ো-রিসেপ্টরদের আস্তে আস্তে উত্তেজিত করছিলো। তার মধ্যে এক ধরনের আসক্তি সৃষ্টি করছিলো।
এর আগেও তো ফিওনার কাছে কতবার গিয়েছিলো, মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো জ্যাসপার। তখন তো এমন কোনো ঘ্রান নাকে আসেনি আজ হঠাৎ কী হলো?তার মনে প্রশ্নের খেলা চলতে লাগল। এই মেয়ে কি আজ কোনো বিশেষ পারফিউম মেখেছে?
জ্যাসপারের হৃদয়ে উঁকি দিল এক অদ্ভুত কৌতূহল।ফিওনার এই পরিবর্তন, তার শরীরের আশেপাশের নিঃশ্বাসে ভাসমান সেই অচেনা ঘ্রান, মনের মধ্যে উড়ে বেড়ানো ভাবনাগুলো অদৃশ্য এক আকর্ষণে তাকে আরও বেশি কৌতূহলী করে তুলছিল।
পরের দিন সকালে এক স্নিগ্ধ আলোতে ঘরটি উজ্জ্বল হয়ে উঠলো সূর্যের প্রথম কিরণগুলো আকাশের কোলে নেমে এসে সবকিছু নতুন করে সজীবতা দিয়েছে,ফিওনা আলতোভাবে ঘুম থেকে উঠলো, চোখ মেজাজের নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে দৃষ্টিতে আলো নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
সেই মুহূর্তে অ্যাকুয়ারা তার রুমে প্রবেশ করলো,দ্রুতার চটপটে। “ফিও,তুমি উঠেছো! তাড়াতাড়ি করো,নাস্তা তৈরি করতে হবে তো!”
ফিওনা অ্যকুয়ারার উত্তেজনা শুনে এক মুহূর্তের জন্য স্তম্ভিত হলো।নিজের মনকে একত্রিত করে সে উঠে পড়লো। হালকা করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা প্রস্তুতের কাজে অ্যাকুয়ারা সাথে কিচেনে প্রবেশ করলো।
দুজনের মধ্যে সজীবতা অনুভূত হচ্ছিল, ফিওনার হাতগুলো ঘুরছিল রান্নাঘরের সামগ্রীগুলোতে, অ্যাকুয়ারা আনন্দের সাথে নির্দেশ দিচ্ছিল। প্যানের ওপর ডিম ফেটানো, টোস্ট পুড়ানো—সবকিছুতে তাদের আলাপচারিতা আর হাসির ভঙ্গি ছিল।
“আজকের মেনু কি হবে?” ফিওনা জিজ্ঞেস করলো,প্যানের মধ্যে তেল ঢালতে ঢালতে।
“অবশ্যই,প্যানকেক!” অ্যাকুয়ারা উত্তর দিলো, তার চোখে উজ্জ্বলতা। “তোমার হাতে যে মিষ্টি স্পর্শ, তাতে সবকিছুই আরও সুস্বাদু হয়!”
ফিওনা তার কথা শুনে হাসলো। এই সহজ স্নিগ্ধ সকালে, দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন আরও গভীর হতে লাগলো। রান্নাঘরের নিঃশ্বাসে তারা জীবনকে নতুন করে আবিষ্কার করছিল।
ফিওনা হঠাৎ বলে বসলো “বলছিলাম যে অ্যকু, অনেকদিন হয়েছে আমি ঠিকমতো গোসল করতে পারছিনা, ওই ছোট বাথরুমে, আজকে একটু হ্রদে গোসল করতে পারলে ভালো লাগতো, কি বলো?
ফিওনার মুখে এমন প্রস্তাব শুনে অ্যাকুয়ারা কিছুটা হেসে বলল, “ঠিক বলেছো। ছোট বাথরুমে সুবিধা হয় না। আমরাও একদিন একটু আনন্দ করে গোসল করতে পারি ।”
ফিওনা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, “ওহ! তাহলে তো বেশ মজাই হবে।
অ্যাকুয়ারা মৃদু হাসি দিয়ে মাথা নাড়লো, “তাহলে আমি প্রিন্সের থেকে অনুমতি নিয়ে নিচ্ছি। আশা করি,তিনি অনূমতি দিবেন।”
জ্যাসপার ধীরপায়ে ঘুম থেকে উঠে গোসলের দিকে এগিয়ে যায়। তার প্রাত্যহিক অভিজাত গোসলের আয়োজন আগেই সম্পন্ন হয়েছে, অন্য এক ড্রাগন তার জন্য এই বিশেষ স্থানে সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছে।
জ্যাসপারের গোসলের জায়গাটা প্রকৃতির কোলে তৈরি এক স্বর্গের টুকরো। গ্লাস হাউজের বিশাল বারান্দার এক পাশে পাহাড়ের সাথে ঝুলে রয়েছে গোসলখানা।উন্মুক্ত প্রকৃতির মাঝে অবস্থিত,এই স্থান এক রাজকীয় বিশ্রামস্থল। বারান্দার ওপর এক সুবৃহৎ বাথটাব রাখা, যা তৈরি হয়েছে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে,তার চারপাশ সাদা মার্বেল পাথরে সাজানো।
বারান্দার ঠিক পাশেই মেঘেরা এসে লেপ্টে থাকে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায় তাদের। দৃষ্টিসীমার ওপারে বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ের সারি, মাঝে মাঝে ছোট ছোট ঝরনার শব্দ দূরের সুর মূর্ছনা এনে দেয়। কুয়াশায় মোড়ানো এই সৌন্দর্যের মাঝে, স্নিগ্ধ আলোর ঝলকানি এসে পড়ে বাথটাবের স্বচ্ছ জলের ওপর, সোনালী আভা এনে দেয় গোটা পরিবেশে। জ্যাসপারের গোসলের স্থানে রাখা রয়েছে ছোট ছোট প্রাকৃতিক পাথরের তৈরি সোপ আর অন্য উপকরণ, যা তার রাজকীয় রুচির সাথে মিল রেখে মনোমুগ্ধকরভাবে সাজানো।
জ্যাসপারের গোসলের আগে বাথটাবে বরফের টুকরো ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যেন গোসলটা তার জন্য আরামদায়ক হয়। ড্রাগনের তপ্ত তাপমাত্রাকে ঠান্ডা পানির স্নিগ্ধতায় প্রশমিত করার এক প্রাকৃতিক আয়োজন।
তার দেহের বাইরের তাপমাত্রা পৃথিবীর মানুষের মতোই সেই মেডিসিনের কারনে তবে ভেতরে লুকিয়ে থাকা ড্রাগনের উষ্ণতা বরফের ঠান্ডা পানির স্পর্শে খানিকটা স্থির হয়।
বিশাল কাঁচের বারান্দায় ঝুলন্ত গোসলখানায় জ্যাসপার প্রবেশের সাথে সাথেই চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য তার অপেক্ষায় আছে। পাহাড়ের ঢাল ,সামনে উঁচু মেঘ, দূরের সবুজ পর্বতমালা—সব মিলিয়ে এক অতুলনীয় দৃশ্য।
ধীরে ধীরে জ্যাসপার সব পোশাক খুলে ফেলল, রাজকীয় সাজসজ্জা ছেড়ে একান্ত নিরাভরণে নিজেকে প্রকৃতির স্নেহে সঁপে দিচ্ছে। এরপর পা ডুবিয়ে বসল বরফের ঠান্ডা পানিতে ভরা বিশাল বাথটাবে। প্রথম ছোঁয়াতেই ঠান্ডা পানির স্পর্শ তার ড্রাগনের অন্তর্গত তাপকে প্রশমিত করে এক গভীর প্রশান্তির আস্বাদ এনে দেয়। হালকা শ্বাস ফেলে সে আরাম অনুভব করল,সেই শীতল স্রোত তার দেহের সব অবশিষ্ট উত্তাপ মুছে ফেলে।
পাশে রাখা সুবাসিত বডি ওয়াশ নিয়ে ধীরে ধীরে দেহে সাবানের ফেনা তৈরি করল, সূক্ষ্ম ফেনায় তার মসৃণ ত্বক ঢেকে উঠল। ফেনার আস্তরণে তার শরীর আরো উদ্ভাসিত হয়ে উঠল, মাথায় শ্যাম্পু করল নিখুঁত যত্নে,গা থেকে সমস্ত ক্লান্তি ধুয়ে নিয়ে আরেকবার নবজীবনের স্নিগ্ধতায় উদ্ভাসিত হলো। এভাবে,গোসলের প্রতিটি মুহূর্ত তার জন্য এক রাজকীয় অভিজ্ঞতা,একান্ত প্রশান্তির অনুভব, নিজেকে প্রকৃতির কোলে বিলিয়ে দেওয়া এক সূক্ষ্ম বিলাসিতা।
জ্যাসপার নিজের কক্ষে প্রবেশ করে। আলমারির একটি দরজা খুলে, সে একটি স্নিগ্ধ সাদা শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিল। কালো আর সাদা রং তার পছন্দের,আর সাদা শার্টটি তার ফর্সা দেহের সাথে আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল। শার্টটি পরে,সে ভেনাসের বিশেষ পারফিউমটি নিয়ে তার ঘাড়ে,শার্টে আর হাতে লাগালো।
পৃথিবীতে এই পারফিউম পাওয়া যায়না তাই জ্যাসপারের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে ভেনাসের পারফিউমটি। “চন্দ্রমল্লিকা ফুলের -এর সুবাসটি একেবারে স্বর্গীয়—এটি শুরুতেই আনে এক হালকা,সুগন্ধি সৌর ঘ্রাণ,একদম সূর্যাস্তের পরে ভেনাসের গায়ে জমা বৃষ্টির মতো। এরপর উঠে আসে গভীর গন্ধের একটি স্তর, যাতে মিশে থাকে স্টার অ্যানিসও গ্রিন কেয়ারের মিশ্রণ, যা তার শক্তিময় সত্তার প্রকাশ। শেষ স্তরে, এ সুবাসে রয়েছে একটি মিষ্টি স্যান্ডালউড আর অম্বারগ্রিসের উষ্ণতা, যা তার ড্রাগনের গোপন, অন্তর্নিহিত উষ্ণতার ইঙ্গিত দেয়।
“স্বর্গীয় এই ভেনাস সুগন্ধি এক আবেশে ভরা ঐশ্বর্য, যা অন্য কারো জন্য নয়, শুধুমাত্র জ্যাসপারের জন্য।
এক মুহূর্তে, পুরো গ্লাস হাউজে সেই সুবাস ছড়িয়ে পড়ল। ফিওনা তখন টেবিলে নাস্তা সাজাচ্ছিলো,আর সবাই উপস্থিত ছিল,শুধু জ্যাসপার বাদে। সবার মধ্যে পরিচিতি ছিল সেই ঘ্রানের তবে ফিওনার জন্য এটা ছিল নতুন এক অভিজ্ঞতা।
একেবারে স্নিগ্ধ আর প্রাণবন্ত—ফিওনা সেই সুবাসের ঘ্রানে বিমোহিত হয়ে গেল,ফিওনা শ্বাস টেনে নিলো,সুবাসটি তার সারা শরীরে প্রবাহিত হতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর, যখন জ্যাসপার সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো, তখন ঘরটি তার উপস্থিতিতে নতুনভাবে আলোকিত হয়ে উঠল। সেই ভেনাসের বিশেষ পারফিউমের ঘ্রান আরও গাঢ় হয়ে পরিবেশকে ভরিয়ে দিল। যখন জ্যাসপার টেবিলে নিজের আসনে বসলো,ফিওনা তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলো— ঘ্রানটা ছিল জ্যাসপারের গায়ের পারফিউম।
ফিওনার হৃদয়ে অদ্ভুত অনুভূতি প্রবাহিত হতে লাগলো; ইচ্ছে করছিল জ্যাসপারের শরীরে নাক ডুবিয়ে সেই ঘ্রাণ গ্রহণ করতে।
নিজের ওপর রাগ হচ্ছে—এই অদ্ভুত নোংরা চিন্তা কেন তার মনে ঢুকে পড়ছে? ফিওনা নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো, কেনো সে এসব ভাবছে ? তার ভিতরের কিছু একেবারে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, জ্যাসপারের প্রতি আকর্ষণ এক নতুন মাত্রা অর্জন করছে।
ফিওনার অন্যমনস্কতা হয়তো জ্যাসপার কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো। তার চোখে যে অদ্ভুত দীপ্তি, সেটা দেখে মনে হলো, কিছু একটা চলছে তার মনে।কিন্তু ফিওনা তখন কোথায় হারিয়ে গেছে, সে নিজেই জানে না। জ্যাসপার যখন ফিওনাকে ডাকলো,তার কণ্ঠে এক ধরনের তীব্রতা ছিল।
“ফিওনা!”—এই শব্দটি তাকে বাস্তবে ফিরিয়ে নিয়ে এলো। ফিওনা কেঁপে উঠলো, তার ধ্যান ভেঙে গেল।
জ্যাসপার টেবিলে বসে তাকে লক্ষ করছিল,
“এভাবে বসিয়ে রাখবে নাকি? খাবার পরিবেশনটা তো করবে! প্রচুর খিদে পেয়েছে, আগে খাবারটা দাও। সবাই খেতে বসেছে, এসব আকাশ-কুসুম ভাবনায় পরেও ডুবে থাকা যাবে।
ফিওনার পুনরায় নিজের ওপর নিজের রাগ হতে শুরু করলো। আর কোনো কিছু না বলেই সবাইকে খাবার বেড়ে দিলো।
খাবারের মাঝে, অ্যকুয়ারা সরাসরি জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে বললো, “বলছিলাম যে,প্রিন্স অরিজিন, আপনি যদি অনুমতি দিতেন তাহলে আজকে ফিওনাকে নিয়ে গ্লাস হাউজ থেকে বের হয়ে ওই হ্রদে একটু গোসল করতে যেতাম।”
জ্যাসপার কিছুটা নিসংকোচে উত্তর দিলো, “ওকে। কিন্তু খেয়াল রাখবে। এই মেয়েটা যেন আবার পালিয়ে না যায়। অবশ্য পালাতে পারবে না,তবুও ওর জন্য খামোখা আমি কোনো হয়রানি করতে চাই না।”
অ্যাকুয়ারা তার কথা সমর্থন করলো, না,না,প্রিন্স! আপনি আমার ওপর ভরসা রাখুন। ফিওনা এমন কিছুই করবেনা।”
“শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য বাইরে যেতে পারবে,” জ্যাসপার বললো,”আমি চাই না,কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটুক।”
অ্যাকুয়ারা হাসি মুখে বললো, “আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন,প্রিন্স। আমি সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখবো।”
খাবার শেষ করেই ফিওনা আর অ্যাকুয়ারা গ্লাস হাউজের বাইরের দিকে বেরিয়ে পড়লো। কড়া রোদে প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও, ধীরে ধীরে ফিওনা আবার বাইরের হাওয়ার প্রশান্তি অনুভব করলো।এটি তার দীর্ঘ বন্দিদশা থেকে মুক্তির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
চারিদিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে সে দেখলো,পাহাড়গুলো সত্যিই অসাধারণ সুন্দর।বনভূমির মাঝে গাঢ় সবুজ রং ফুটিয়ে তুলেছে হ্নদের পানি গুলো—কতটা পরিষ্কার আর নীল!এক বিশাল নীল সুতোর মতো জলরাশি সারা পৃথিবীকে আলিঙ্গন করে আছে।
হঠাৎ,ফিওনার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো অ্যকুয়ারা,যে একটি ছোট রঙিন নৌকা সেটাকে কত সুন্দরভাবে ফুল দিয়ে সাজিয়ে তুলেছে। ফিওনার চোখে-মুখে আনন্দের উচ্ছ্বাস।
“এটা কি তুমি সাজিয়েছো?” ফিওনা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
অ্যাকুয়ারা মাথা নেড়ে বললো, “হ্যাঁ! ভাবলাম, আজকের জন্য কিছু বিশেষ করি।ৎএই নৌকাটা আমাদের জন্য আনন্দের মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করার জন্য তৈরি করলাম।“
ফিওনা হাসি মুখে নৌকাটির দিকে আরও একবার তাকালো। ফুলগুলো নৌকার সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করেছে।
ফিওনা আর অ্যাকুয়ারা দুজনে নৌকায় উঠে পড়লো। নৌকাটা ফুলের মাঝে অবস্থান করছিল, ফিওনা মুগ্ধ হয়ে চারপাশে তাকালো; নৌকার পাশে থাকা রঙ-বেরঙের ফুলগুলো তাদের হাসিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছিল।
সাবলীল হেসে ফিওনা দুই পা পানিতে ডোবালো।কোমল পানি তার পায়ের তলে ছুঁয়ে গেল, পায়ের তলায় নাচাতে নাচাতে, ফিওনা এক বাচ্চার মতো হাসতে লাগলো। প্রতিটি ঢেউ তার হাসির সাথে তাল মিলিয়ে নাচছিল।
“কী অসাধারণ!” ফিওনা উল্লাসের সাথে বললো,
“সত্যিই এক রুপকথার অনুভূতি হচ্ছে !”
অ্যাকুয়ারা তার পাশে বসে ফিওনার আনন্দ দেখে ভীষণ খুশি হলো। “ঠিক বলেছো!এটা আমাদের জন্য একটা রুপকথার আনন্দ”।
ফিওনার মনে হচ্ছিল, এই প্রথম এখানে আসার পর এতটা আনন্দ সে কখনো অনুভব করেনি। প্রকৃতির সাথে এই সংযোগ, মুক্ত বাতাসের স্রোত, আর ফুলের সৌন্দর্য—সবকিছু মিলিয়ে তার হৃদয়কে প্রশান্তি দিচ্ছিল।
“আচ্ছা, ফিওনা, চলো এবার হ্রদে নামি!” অ্যাকুয়ারা উৎসাহের সঙ্গে বললো। ফিওনা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। দুজনে একসাথে পানির গভীরে নেমে গেলো, হালকা ডুব দিয়ে একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। হঠাৎ, ফিওনা দুষ্টুমি করে অ্যাকুয়ারার দিকে পানি ছিটিয়ে দিলো।
“থামো ফিও!” অ্যাকুয়ারা হাসতে হাসতে হাত দিয়ে চোখ-মুখ ঢেকে নিলো। অ্যাকুয়ারার চোখে মুখে পানি পড়তে লাগলো, “দাঁড়াও,দেখাচ্ছি তোমাকে মজা!” এই বলে অ্যাকুয়ারা সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় ড্রাগনের রূপে পরিণত হলো।বিশাল আকাশী ডানা ঝাপটিয়ে উঠলো, আর সে পানির উপর দিয়ে গা ছমছম করা এক দারুণ দৃশ্য সৃষ্টি করলো।
ফিওনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। অ্যাকুয়ারা যখন ডানা ঝাপটালো,তখন তার বিশাল ডানা থেকে পানি ছিটকে ফিওনার দিকে এলো, আর স্রোতের সঙ্গে ভেসে যেতে লাগলো সে। হঠাৎ,তার মুখে,নাকে চোখে পানি ঢুকে গেলো,মনে হলো এক জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাচ্ছে।
“অ্যাকু,থামো প্লিজ! এটা কিন্তু চিটিং!” ফিওনা অস্থির হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, এক হাতে জল ধরে রাখতে চেষ্টা করেও হাসি আর অস্থিরতা সামলাতে পারছিলো না।
আযদাহা পর্ব ১৮ (২)
ফিওনা আর অ্যাকুয়ারা যখন আনন্দে মেতে উঠেছে, তখন দূরে একজোড়া চোখ তাদের দিকে গভীর দৃষ্টি নিবন্ধিত করে ছিল। সেই শান্ত,পলকহীন চোখের অধিকারী, জ্যাসপার, তার বিশাল গ্লাস হাউজের ছাদে দাঁড়িয়ে ছিলো।তার মনযোগ সারা বিশ্বের সমস্ত কিছুকে ভুলিয়ে দিয়ে ফিওনার হাসিতে নিবিষ্ট হয়ে ছিল।
ফিওনার হাসির ঝড় তাঁর হৃদয়ে এক অস্থিরতা সৃষ্টি করছিল। প্রতিটি হাসির ঢেউ জ্যাসপারের ভেতরটা নাড়া দিচ্ছিল অদ্ভুত এক অনুভূতি।ৎমাথায় অস্পষ্ট একটা চাপ অনুভব করছিল,মনে হলো মাথা থেকে কিছু নিষ্ক্রিয় হচ্ছে। এরই মাঝে তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে উঠছিল,সেখানে এক অজানা শক্তির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে।
জ্যাসপার বুঝতে পারছিল, তার ভেতরে কিছু একটি ফাংশন এক্টিভ হয়ে উঠছে।