আযদাহা পর্ব ৩৫

আযদাহা পর্ব ৩৫
সাবিলা সাবি

সকাল সকাল ডাইনিং টেবিলের চারপাশে বিশাল আর চকচকে গ্লাসের তৈরি আসনগুলোতে সবাই বসে ছিল। জ্যাসপার,আলবিরা,থারিনিয়াস,অ্যাকুয়ারা তবে এথিরিয়ন আর ফিওনা অনুপস্থিত ছিলো।সকাল বেলার স্নিগ্ধ আলো ভিতরে প্রবাহিত হচ্ছিল,কিন্তু এর উজ্জ্বলতা উপস্থিতির অস্বস্তিকর ভারমুক্ত করতে পারছিল না।টেবিলের মাঝে থাকা বিভিন্ন রকমের খাবার,রঙ-বেরঙের ফল আর সুস্বাদু ডিশগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছিল,কিন্তু সবার মনোযোগ সম্পূর্ণভাবে জ্যাসপারের ওপর কেন্দ্রীভূত হয়ে গিয়েছিল।

জ্যাসপার,উচ্চতার গুণে অন্যান্যদের থেকে আলাদা,মাথা উঁচু করে বসে ছিলো।তার চেহারায় একটি গুরুতর ভাব ছিল,আর যখন সে ঘোষণা করলো,“আমার আদেশ,আজ থেকে ফিওনা গ্লাস হাউজের আর কোনো কাজ করবেনা,”তখন একটি চাপা শ্বাসরোধকারী নীরবতা টেবিলটিকে পরিবেষ্টন করল।ফিওনা,যে এখনো নিজের কক্ষে ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো,তার আশেপাশের ঘটনার সাথে কিছুই জানতো না।
আলবিরা প্রথমে কথা বললো,“কিন্তু প্রিন্স,হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারন কি?এতদিন সে তো সবকিছু সামাল দিয়েছে গ্লাস হাউজের!” তার কণ্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট ছিল,কিন্তু জ্যাসপার তার জবাবে কিছু বললো না।
থারিনিয়াসও হতাশার সঙ্গে বললেন,”তাহলে কি ফিওনা এভাবেই থাকবে গ্লাস হাউজে প্রিন্স।তাহলে সব কাজ কে করবে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অ্যাকুয়ারা,টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো তার চোখে অসন্তোষের ছাপ স্পষ্ট।সে জানতো প্রিন্স নিশ্চিত ফিওনার জন্য কোনো নতুন কঠিন দায়িত্ব ভেবে রেখেছে।“তাহলে গ্লাস হাউজের বাকি কাজগুলো আমি করব,”সে বললো তার কণ্ঠে একটু কঠিনতা ছিল।
জ্যাসপার কেবল মাথা নেড়ে বললেন,“এটা আমার একান্ত সিদ্ধান্ত।এখন থেকে ফিওনার দায়িত্ব শুধু মাত্র আমার সকল কাজ করা,আমার খাবার পরিবেশন,আমার গোসলের সরঞ্জাম গুছিয়ে রাখা আর আমার কাপড় চোপড় পরিষ্কার করা।মোট কথা সে চব্বিশ ঘন্টা শুধু আমার সার্ভিস দিবে।”তার গলার শক্তি সেই মুহূর্তে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল,আর টেবিলের অন্যরা তার নির্দেশনার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস করছিল না।

জ্যাসপার অ্যকুয়ারাকে উদ্দেশ্য করে বললো”তবে গ্লাস হাউজের বাকি কাজ অ্যাকুয়ারা তুমি করবে,আর ফিওনাকে তার নতুন দায়িত্বের কথা জানিয়ে দিবে এটা আমার আদেশ সে যেনো কোনোভাবেই অগ্রাহ্য না করে”।
আলবিরা আর অ্যাকুয়ারা একে অপরের দিকে তাকালো,,তাদের মনে একই চিন্তা ঘুরছিল—কিভাবে জ্যাসপারের ব্যক্তিগত কাজ ফিওনাকে করতে হবে?এই প্রশ্ন তাদের মনে উদ্বেগের সৃষ্টি করছিল।তবে অ্যকুয়ারা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে।
জ্যাসপার খাবার খেতে শুরু করলো,যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু তার চোখে ছিল এক প্যাশনেট দৃঢ়তা—যে কোন মূল্যে ফিওনাকে নিজের কাছে কাছে রাখতে হবে।
এদিকে,সবার চিন্তা যেন একে অপরের সাথে লড়াই করছিল।একদিকে জ্যাসপারের অধিকার,অন্যদিকে ফিওনার স্বাধীনতা।তারা জানতো পরিস্থিতির এই মোড়ে এসে ফিওনার জন্য এক নতুন জীবন অপেক্ষা করছে—কিন্তু সেটি কেমন হবে,তা জানতেন না কেউই।

মাউন্টেন গ্লাস হাউজের কনফারেন্স রুমের বিশাল টেবিল ঘিরে জ্যাসপার,এথিরিয়ন,আর থারিনিয়াস উপস্থিত আজকের মিশনে ওরা তিনজন যাবে।রুমের এক কোণে হোলোস্ক্রিনে আর্টিক অঞ্চলের মানচিত্র ভাসমান।চারপাশে হালকা নীলাভ আলো মিস্টার চেন শিং তাদের আজকের মিশনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করছেন।
মিস্টার চেন শিং টেবিলের ওপর রাখা ডিভাইসগুলোর দিকে ইশারা করে বললেন,“আজকের মিশন শুধু অক্সিজেন সংগ্রহ নয়।এটা একটা পরীক্ষা।তোমাদের প্রস্তুতি আর তোমাদের তিনজনের দক্ষতা,দুটোই প্রমাণিত হবে।আর্টিক অঞ্চলের অ্যাথ্রাক্স মনস্টার আজকের বড় চ্যালেঞ্জ।সেই মনস্টারকে ফাঁকি দিয়ে তোমাদের অক্সিজেন সংগ্রহ করতে হবে।তোমরা কি সবাই প্রস্তুত?”
জ্যাসপার মাথা নাড়ল।তার চোখে এক ধরনের নির্ভীক আত্মবিশ্বাস।“আমরা প্রস্তুত।আপনার দেয়া প্রতিটি সরঞ্জাম পরীক্ষিত।আমরা সফল হব।”
চেন শিং ড্রিলিং ড্রোনটির দিকে ইঙ্গিত করলেন।

“এই ড্রোনটি বরফ ভেদ করতে পারদর্শী।তবে এর নিয়ন্ত্রণ জটিল।এথিরিয়ন,এটা তোমার দায়িত্ব।”
এথিরিয়ন ড্রোনটির নিয়ন্ত্রণ প্যানেল হাতে তুলে নিল। “আমার ওপর ছেড়ে দিন।আমি এটা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করব।”
এরপর চেন শিং টেম্পারেচার শিল্ড সুটের দিকে তাকিয়ে বললেন,“আর্কটিক অঞ্চলের তীব্র ঠান্ডা সহ্য করার জন্য এই সুটগুলোই তোমাদের রক্ষা করবে।থারিনিয়াস,তোমার কাজ হলো দলের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।”থারিনিয়াস গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল,“আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।আমি সবার সুরক্ষার দায়িত্ব নেব।”
টেবিলে রাখা এনার্জি মাইন সংগ্রহকারী ডিভাইস আর এনার্জি সিলিন্ডারের দিকে তাকিয়ে চেন শিং আবার বললেন,“এই ডিভাইস দুটি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
সঠিক জায়গায় এগুলো ব্যবহার না করলে অক্সিজেন সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না।জ্যাসপার,এগুলো তুমি ব্যবহার করবে।”

জ্যাসপার চেন শিং-এর কথা শুনে ডিভাইসটি হাতে তুলে নিল।”আপনি নিশ্চিত থাকুন,সঠিক জায়গাতেই এগুলো ব্যবহার হবে।”
মিস্টার চেন শিং এবার আইস ব্রিউল রেপেলার তুলে ধরলেন।“অ্যাথ্রাক্স মনস্টার বরফের নিচে লুকিয়ে থাকে।এই রেপেলার ব্যবহার করলে তার উপস্থিতি টের পাবে না।তবে একবার ব্যর্থ হলে মনস্টার আক্রমণ করবে।সুতরাং,সতর্ক থাকবে।”
এবার নেভিগেশন ডিভাইস হাতে তুলে নিয়ে চেন শিং বললেন,“তোমাদের পুরো পথনির্দেশনা এখানে সেট করা আছে।তবে মনোযোগ হারালে পথ হারানোর সম্ভাবনা থাকবে।এটিকে ভুলে যাওয়া যাবে না।”
চেন শিং-এর সঙ্গে আলোচনার পর তিনজন তাদের গিয়ারে সজ্জিত হয়ে মাউন্টেন গ্লাস হাউজের বাইরে এলো।তীব্র ঠান্ডা বাতাস তাদের মুখে আঘাত করছে,কিন্তু তাদের বিশেষ সুট সেই ঠান্ডা রুখে দিয়েছে।জ্যাসপার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,“সবাই প্রস্তুত?এবার উড়ে চলার সময়।”

থারিনিয়াস নিজের তলোয়ার কোমরে বেঁধে বলল,“প্রস্তুত।”এথিরিয়ন ড্রোনটি সক্রিয় করে বলল,“তাহলে চলো।অ্যাথ্রাক্সের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই কাজ শেষ করতে হবে।”
তিনজন ড্রাগন আকারে রূপান্তরিত হয়ে একে একে আকাশে উড়ে গেল।ঝড়ো বাতাসে তাদের ডানা শক্ত করে মেলে তারা উত্তর মেরুর বরফাচ্ছন্ন ভূমির দিকে এগিয়ে গেল।
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বরফের পাহাড়ের ফাঁকে এক গভীর অঞ্চল,যেখানে অ্যাথ্রাক্সের অবস্থান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাস্তাটা কঠিন,তবে জ্যাসপার,এথিরিয়ন,আর থারিনিয়াস জানে—আজকের দিনটা তাদের জীবনের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনটি ড্রাগন,জ্যাসপার,এথিরিয়ন,এবং থারিনিয়াস, একসঙ্গে তুষারাচ্ছন্ন আকাশে উড়ে আর্টিক অঞ্চলে পৌঁছে গেল।চারপাশে শুধুই সাদা বরফের আচ্ছাদন। আকাশ ধূসর,আর বাতাস এত ঠান্ডা যে মানুষের শ্বাস নেওয়া অসম্ভব।নিচে বরফের মাঝে ফাটলগুলো থেকে ধোঁয়ার মতো হিমশ্বাস বের হচ্ছে।দূরে বরফ পাহাড় আর ক্রিস্টালাইজড শিলাগুলো সূর্যের আলোতে ঝিকমিক করছে।
তারা তিনজন নিচে নেমে ড্রাগন থেকে মানব আকারে ফিরে এল।বরফের কঠিন মাটিতে পা দিতেই তীব্র ঠান্ডা তাদের শরীরকে স্পর্শ করল,তবে টেম্পারেচার শিল্ড সুট তাদের সুরক্ষিত রেখেছিল।এথিরিয়ন সঙ্গে থাকা ড্রোনটি সক্রিয় করল,যা ক্রমাগত আশপাশ স্ক্যান করতে লাগল।
জ্যাসপার আশপাশ দেখে বলল,“অক্সিজেন হিমশীতল পাথরের নিচে জমা রয়েছে।তবে সঠিক অবস্থান পেতে আমাদের গভীরে যেতে হবে।ড্রোন যা খুঁজে পায়,তার ওপর ভিত্তি করেই কাজ করতে হবে।”
থারিনিয়াস ড্রোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলল”মনে হচ্ছে না যে আমরা একা নই?আমি কিছু একটা অনুভব করছি।”

অন্ধকার বরফের ফাটল থেকে গম্ভীর গর্জন শোনা গেল।মুহূর্তেই বরফের পাহাড়ে বিশাল ফাটল ধরল,আর সেখান থেকে উঠে এলো অ্যাথ্রাক্স।তবে এটি কোনও সাধারণ বরফ মনস্টার নয়,এটি নারীসত্তার একটি বরফ দেবতা,যার নাম অ্যাথ্রাক্সা।
অ্যাথ্রাক্সা উচ্চতায় প্রায় ২০ ফুট লম্বা।তার শরীর ক্রিস্টাল বরফ দিয়ে তৈরি,যা সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে।তার লম্বা চুলগুলি বরফের ধারা হয়ে তার পেছনে ঝরে পড়ে।চোখ দুটি উজ্জ্বল নীল,যা মনের গভীরতা পর্যন্ত ঢুকে যেতে পারে।তার কণ্ঠস্বরে নারীসুলভ কোমলতা,তবে সঙ্গে রয়েছে গভীর শক্তির প্রতিচ্ছবি।
অ্যাথ্রাক্সা জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,“ভেনাসের ড্রাগন প্রিন্স!তোমার মতো সুদর্শন ড্রাগন আমি আগে কখনো দেখিনি।তবে আমার কাছে আকর্ষণই যথেষ্ট নয়।এখানে যা চাও,তা পেতে হলে তোমাদের প্রমাণ করতে হবে যে তোমরা যোগ্য।আমি তোমাদের জন্য ধাঁধা ও টাস্ক রেখেছি।বিশেষ করে তোমার জন্য,প্রিন্স জ্যাসপার,আমার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা।”

জ্যাসপার তার উজ্জ্বল চেহারায় কিন্তু দৃঢ় গলায় বলল, “আমাদের লক্ষ্য পবিত্র,দেবি অ্যাথ্রাক্সা।আমাদের প্রয়োজন শুধু অক্সিজেন।তোমার পরীক্ষা নিতে প্রস্তুত।”
অ্যাথ্রাক্সা মুচকি হেসে বলল,“তোমার আত্মবিশ্বাস প্রশংসনীয়।তাহলে শোনো,আমি তিনটি ধাঁধা ও তিনটি টাস্ক দেব।তোমরা যদি সফল হও,অক্সিজেন পাবে।কিন্তু যদি ব্যর্থ হও,তবে এই বরফরাজ্যে চিরদিনের জন্য বন্দী হয়ে থাকবে।”
অ্যাথ্রাক্সা জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোমার ধাঁধা হলো—
‘আমার ঘরে একটি জিনিস,
না তা মাটি,না তা হিম।
ছোঁবে যদি,যাবে পুড়ে,
তবে তা বরফেও থাকে জ্বলে।
বলো তো প্রিন্স,সেটি কী?’”

জ্যাসপার কিছুক্ষণ গভীর চিন্তায় ডুবে গেল।বরফের মধ্যে এমন কী আছে যা পুড়তে পারে কিন্তু বরফে থাকে?সে মনে করল,বরফের নিচে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাস,যা একসময় আগুনে জ্বলে।সে উত্তর দিল,“প্রাকৃতিক গ্যাস।”
অ্যাথ্রাক্সা খুশি হয়ে বলল,“তুমি সঠিক!
তবে ধাঁধা সমাধান করাই যথেষ্ট নয়।এবার তোমাকে প্রমাণ করতে হবে তোমার শক্তি এবং নেতৃত্বগুণ।তোমাকে এই বরফের গভীরে থাকা একটি প্রাচীন ক্রিস্টাল বের করে আনতে হবে,যা অক্সিজেন নিষ্কাশনের চাবি হিসেবে কাজ করবে।তবে বরফের ভূতেরা তোমাকে বাধা দেবে।”
জ্যাসপার বরফের গভীরে প্রবেশ করল।ক্রিস্টাল খুঁজে পাওয়ার আগে তাকে প্রচণ্ড ঠান্ডা,অন্ধকার,আর বরফ ভূতের সঙ্গে লড়াই করতে হলো। শেষ পর্যন্ত,তার ড্রাগন শক্তি আর কৌশল ব্যবহার করে সে সফলভাবে ক্রিস্টাল উদ্ধার করল।
অ্যাথ্রাক্সা এথিরিয়নের দিকে ফিরে বলল,

“তোমার ধাঁধা হলো—
‘হাওয়ার মতো দেহহীন,
শব্দ দিয়ে তা বাঁধা।
দেখবে না কখনো তাকে,
তবুও তা হবে অনুভব।’”
এথিরিয়ন দ্রুত চিন্তা করল।শব্দহীন এবং দেহহীন জিনিস কী হতে পারে?সে উওর দিলো “শ্বাস”।
অ্যাথ্রাক্সা হাসিমুখে বলল,“তুমি সঠিক।তবে তোমার কাজ শেষ নয়।তুমি বরফের বিশাল চাদরের নিচে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি উৎস খুঁজে বের করবে।তবে তোমাকে সময়মতো এটি নিষ্কাশন করতে হবে,অন্যথায় এটি বিস্ফোরণ ঘটাবে।”এথিরিয়ন তার ড্রোন আর ডিভাইস ব্যবহার করে কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করল।
অ্যাথ্রাক্সা এবার থারিনিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমার ধাঁধা হলো—
‘একটি জিনিস যা কখনো থামে না,
তবুও এটি ঘুরে যায়।
পৃথিবী থেকে দূরে থাকলে,
জীবন কিছুতেই চায় না।’”
থারিনিয়াস চিন্তা করল।এটি এমন কিছু,যা ঘুরতে থাকে এবং জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।উত্তর একটাই—সূর্য।

অ্যাথ্রাক্সা বলল,“তুমি সঠিক।তবে এবার তোমাকে একটি বিশেষ বরফের সিলিন্ডার তৈরি করতে হবে,যা অক্সিজেন ধরে রাখতে সক্ষম।তবে সিলিন্ডার তৈরির উপাদান এই অঞ্চলের গভীর বরফের স্তরে লুকিয়ে আছে।খুঁজে বের করো।”থারিনিয়াস বরফ খনন করে সঠিক উপাদান বের করে কাজটি সফলভাবে শেষ করল।
তিনটি ধাঁধা ও টাস্ক শেষ হলে অ্যাথ্রাক্সা মুগ্ধ হয়ে বলল,
“তোমরা প্রমাণ করেছ যে তোমরা শুধু শক্তিশালী নও, বুদ্ধিমান এবং সাহসীও।বিশেষ করে,প্রিন্স জ্যাসপার, তোমার আত্মবিশ্বাস এবং বুদ্ধিমত্তা আমাকে মুগ্ধ করেছে।আমার কাছে তোমার সৌন্দর্য শুধু বাহ্যিক নয়,তোমার ভেতরের শক্তি আরো বেশি আকর্ষণীয়।তোমরা যা চেয়েছ,তা তোমাদের দিচ্ছি।তবে মনে রেখো,বরফের এই অঞ্চলকে কোনোদিন ক্ষতিগ্রস্ত করতে চেষ্টা করো না।নইলে আমি আবার ফিরে আসব।”
অ্যাথ্রাক্সা বরফের গভীর থেকে অক্সিজেন সরবরাহের পথ খুলে দিল।জ্যাসপার আর বাকিরা দ্রুত অক্সিজেন সংগ্রহ করল আ্য মিশন সফলভাবে শেষ করে আর্কটিক অঞ্চল থেকে বের হতে লাগলো।
আর্কটিক অঞ্চলের পথ ছিল বিপজ্জনক।চারপাশে শুধু বরফের পাহাড় আর ফাটল।বরফের বাতাস তীক্ষ্ণ ব্লেডের মতো কেটে যাচ্ছিল।প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল বরফ ধসে পড়বে বা ভূতের আক্রমণ হবে।তবে জ্যাসপার,এথিরিয়ন, এবং থারিনিয়াস তাদের বুদ্ধি, সাহস,এবং দলগত কাজ দিয়ে এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।এই মিশনের পরে,তারা বুঝতে পারল যে প্রকৃত শক্তি শুধু শক্তিতে নয়,বুদ্ধি এবং ঐক্যতেও নিহিত।

আর্কটিক অঞ্চলের ঠান্ডা বাতাসে ঘেরা আকাশ ধীরে ধীরে গাঢ় কমলা রঙ ধারণ করছে জ্যাসপার,থারিনিয়াস,আর এথিরিয়ন নিজেদের মিশন সম্পূর্ণ করে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ধীরে ধীরে পুষ্পরাজ পাহাড়ের দিকে ফিরছে।সাফল্যের স্বস্তি সবার মুখে স্পষ্ট,তবে ক্লান্তির ছাপও লুকানো নেই।
থারিনিয়াস হালকা শ্বাস নিয়ে বলল,“অবশেষে কাজটা শেষ হলো।অক্সিজেন সংগ্রহ করাটা সহজ ছিল না,তবে অ্যাথ্র্যাক্সের ধাঁধাগুলোও কম কঠিন ছিল না।”
জ্যাসপার সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল,“অ্যাথ্র্যাক্স আমাদের কাজটা কঠিন করেছে ঠিকই,কিন্তু একে সফলভাবে পার করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হয়েছিল।আমাদের এখন দ্রুত ল্যাবে ফিরে যেতে হবে।এটা শুধু আমাদের জন্য নয়,পুরো ভেনাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।”
এথিরিয়ন মৃদু হেসে বলল,“জ্যাসু ভাইয়া তোমার কথা শুনে মনে হয় তুমি শুধু ভেনাসের প্রিন্স নও,পৃথিবীর বিজ্ঞানীও।”

পুষ্পরাজ পাহাড়ের নীলাভ আলো আর ঝর্ণার শব্দের মধ্যে দিয়ে তারা ল্যাবে প্রবেশ করল।ল্যাবের অভ্যন্তরিণ আলো উজ্জ্বল,আর মিস্টার চেন শিং ল্যাবের কনফারেন্স টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের অপেক্ষায় ছিলো।
চেন শিং কিছুটা উদ্বিগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করলেন,“তোমরা ফিরে এসেছো,অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পেরেছো?”
জ্যাসপার সামনের দিকে এগিয়ে একটি ক্রিওজেনিক কন্টেইনার ধরে রাখল।কন্টেইনারের চারপাশে আলো ঝলমল করছে,যা দেখেই বোঝা যায় ভেতরে তরল অক্সিজেন সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।“এটা আমাদের সংগ্রহ করা অক্সিজেন,জ্যাসপার বলল।“এই অক্সিজেন কন্টেইনারে সুরক্ষিত আছে।
চেন শিং প্রশংসার দৃষ্টিতে বললেন,“তোমরা অসাধারণ কাজ করেছ।তবে এটা ভেনাসে নেয়ার আগ পর্যন্ত সুরক্ষিত রাখতে হবে।”জ্যাসপার ক্রিওজেনিক কন্টেইনারটি ল্যাবের মূল অংশে স্থাপন করল।চারপাশে স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস কাজ করতে শুরু করল।থারিনিয়াস আর এথিরিয়ন কন্টেইনারের সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো পরীক্ষা করতে ব্যস্ত।
ল্যাবের বড় স্ক্রিনে ডেটা ভেসে উঠল,যা নির্দেশ করে যে অক্সিজেন স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।জ্যাসপার নিজেই স্ক্রিনের ডাটা চেক করল।তার চোখে ছিল একধরনের তৃপ্তি।

জ্যাসপার যখন গ্লাস হাউসে প্রবেশ করল,তখন তার উপস্থিতি যেন একটি রাজপুত্রের আবির্ভাব।লিভিং রুমের সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়ে সে কিছুটা বিশ্রাম নিল।মিশনের ধকল ওকে ক্লান্ত করে ফেলেছিল,এবং সে জানত,এখন তাকে একটি দীর্ঘ,শুদ্ধ শাওয়ার নিতে হবে।
“অ্যাকুয়ারা!”—এখন সেই মুহূর্তে,সে মনে মনে নিজের ভেতর স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল।
অ্যাকুয়ারার পদক্ষেপের শব্দ শোনা গেল।সে দ্রুত হাজির হলো, ষসদা প্রস্তুত এবং আদেশ শোনার জন্য। “জি,প্রিন্স।বলুন,আপনার কি লাগবে?”
“তুমি কি ফিওনাকে আমার সকালের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানিয়েছ?”—জ্যাসপার জানতে চাইল, তার কণ্ঠস্বরে গভীরতা ছিল।

“হ্যাঁ,প্রিন্স।জানিয়েছি। তবে মনে হচ্ছে,ফিওনা একটু চিন্তিত।”জ্যাসপার একটু হতাশা নিয়ে মাথা নাড়ল।“সেটা যাই হোক।এখন তুমি তাকে বলো,আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই শাওয়ার নিব।ওকে আমার গোসলখানা দেখিয়ে দাও আর আমি যাওয়ার আগে সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখতে বলো।”
অ্যাকুয়ারার সম্মতি পেয়ে,সে ফিওনাকে জানাতে চলে গেল।
ফিওনা যখন শাওয়ার রুমে প্রবেশ করল,তখন তার চোখ বিস্ময়ে চকচক করে উঠল।সে যে বিশাল বাথটাবটি দেখল,সেটি পাহাড়ের কোলে ঝুলে থাকা বারান্দায় অবস্থিত,যেন রাজকীয় অভিজাততার প্রতীক।
বাথটাবটি গভীর ও প্রশস্ত,বাষ্পীয় জলীয় বর্ণনার মত পরিবেশ তৈরি করেছে।তার মনে হলো,এটি কেবল একটি বাথটাব নয় বরংএকটি অভিজাত অভিজ্ঞতার অংশ।তবে তার মনে একটি প্রশ্ন উঁকি দিল জ্যাসপারের ব্যক্তিগত কাজ তাকে দিয়ে কেনো করানো হচ্ছে?

এটি সত্ত্বেও,ফিওনা ধীরে ধীরে সাবান ও শ্যাম্পুকে সঠিক জায়গায় গুছিয়ে রাখল।টাওয়ালটি যথাস্থানে রাখার পর,বাথটাবে বরফের টুকরো ছড়িয়ে দিলো। সবকিছু গুছিয়ে শেষ করার পর,সে বের হতে যাবে, ঠিক তখনই শাওয়ার রুমে জ্যাসপার প্রবেশ করল—একদম খালি গায়ে,যেন সারা বিশ্বের ভার থেকে মুক্ত।
জ্যাসপারের পেশীবহুল শরীর তার দৃঢ় গঠন আর আত্মবিশ্বাসী ভাব ফিওনার মনে নতুন এক উত্তেজনা এনে দিল।সে যেন অসংখ্য রাজকীয় ভিজ্যুয়ালের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে।
“হামিংবার্ড,”—জ্যাসপার তার দিকে তাকিয়ে বলল,তার গলা গভীর ও মধুর।“তুমি কি সব কিছু প্রস্তুত করেছ?”
ফিওনা কিছু বলতে গিয়ে থমকে গেল,তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে উঠল।তার মুখে একটি শব্দও বের হচ্ছিল না।সে শুধু মাথা নেড়ে নিশ্চিত করল।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে বাথটাবে বসে পড়ল,জলমগ্ন তার শরীরের পেশীগুলি যেন বাষ্পের মধ্যে কোমলভাবে লেপটে গেছে।ফিওনা তখন মনে মনে বেরিয়ে যেতে চাইছিল,কিন্তু তার কণ্ঠস্বর শুনে হঠাৎ থেমে গেল।
“দাঁড়াও।তোমাকে কি আমি যেতে আদেশ দিয়েছি?”—জ্যাসপারের গম্ভীর কণ্ঠস্বর শোনার পর ফিওনার হৃদয়টি দ্রুত ধুকপুক করতে শুরু করল।

“তোমার কাজ এখনো শেষ হয়নি।আমি যতক্ষণ শাওয়ার নিবো,তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে,”—সে বলল,যেন তার প্রত্যেকটি শব্দে একটি অদৃশ্য শক্তি ছিল।
ফিওনার চোখের কোণে একটি প্রশ্ন উঁকি দিল—এই মুহূর্তে তার নিজস্ব স্বাধীনতা কিভাবে ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু তার মনের মধ্যে যে অদ্ভুত অনুভূতি জেগে উঠেছিল,তা তাকে স্থির করতে বাধ্য করল।
“আমি—”সে শুরু করতেই জ্যাসপার তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকাল,যেন তার কথাগুলোকে একটি দার্শনিক প্রশ্ন হিসেবে গ্রহণ করছে।
“শুধু আমাকে দেখতে থাকো,”—সে কিছুটা ঠাণ্ডা গলায় বলল। “এই মুহূর্তে,তোমার কাজ কেবল আমার সামনে থাকা,তুমি কতোটা আত্মসংযমী তার প্রমাণ দেওয়া।”

ফিওনা নিজের চিত্কার ও প্রতিবাদের আকাঙ্ক্ষাকে গিলে ফেলল।সে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল,অথচ তার হৃদয়ের মধ্যে একটি অদ্ভুত তোলপাড় চলছিল। জ্যাসপার যখন ধীরে ধীরে শরীরের জলে ডুবিয়ে দিতে লাগলো,তখন তার প্রতি নজর দেওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না।
জ্যাসপার এক হাতে সাবান নিয়ে ধীরে ধীরে তার ফর্সা সুঠাম দেহে লাগাতে লাগল।জলবিন্দুর মতো সাবান ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে যেন একটি নতুন বিশ্বে প্রবেশ করল ফিওনা।তার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল—প্রতিটি সেকেন্ডে সময় যেন থেমে গেল।ঢোক গিলতে গিলতে সে অনুভব করল,শরীরের তপ্ত অনুভূতি তার অন্তরজগতে দোলা দিচ্ছে।
জ্যাসপারের শরীরের পেশী সজীব হয়ে উঠছে,আর ফিওনার চোখের দিকে তাকিয়ে সে যেন এক নতুন আত্মবিশ্বাস অর্জন করল।ফিওনার মনে হাহাকার উঠল—সে আরও বেশি দেখতে চাইছে,জ্যাসপারের রূপে মুগ্ধ হয়ে উঠছে।তার মন ও শরীর এক অসমানভাবে প্রভাবিত হচ্ছিল;জ্যাসপারের সৌন্দর্যের কাছে সমস্ত সংযম যেন হার মানছে।
ফিওনা তার ফ্রকের কোনা দুই হাতে খামচে ধরল।এটি তার কাছে যেন একটি উপায় ছিল নিজেকে সংযত করার,কিন্তু বেহায়া দৃষ্টির কাছে সে লজ্জা ও নীরবতাকে ভুলে গিয়েছিল।জ্যাসপারের কোমলতার মধ্যে একটি অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল,যা তাকে স্থির রাখতে পারেনি।

প্রতি মুহূর্তে,জ্যাসপার যখন সাবান মাখছিল,তার শরীরের প্রতিটি কোণ যেন নতুন করে জেগে উঠছিল। ফিওনা বুঝতে পারছিল,এই দৃশ্যের মায়া তাকে প্রবলভাবে বাঁধা দিয়ে রেখেছে।যতই চেষ্টা করুক,ততই তাকে স্থির রাখতে পারছিল না—সে যেন একটি নির্লজ্জ দর্শক,যা শুধুমাত্র সৌন্দর্যের উন্মাদনায় নিমজ্জিত।
জ্যাসপারের সৌন্দর্য যেন তার অভ্যন্তরের সমস্ত আবেগকে উসকে দিচ্ছিল।ফিওনার চিন্তার দ্বিধা দুর্বল হয়ে পড়ল,এবং তার শরীরের মধ্যে যে আগুন জ্বলছিল,তা ক্রমাগত জ্বলে উঠতে লাগল।
জ্যাসপার খুশি চোখে ফিওনার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হলো?দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে?অস্থির লাগছে হামিংবার্ড?”তার কন্ঠে একটি ঠোঁটকাটা হাসি ছিল,যেন সে ফিওনার অস্বস্তির দিকে নজর রেখেছে।

ফিওনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জ্যাসপারের দিকে তাকালো,তার হৃদয়ে একটি অদ্ভুত অনুভূতি উন্মোচিত হচ্ছিল। “দেখুন,আপনার ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে আমাকে কেনো দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে?এটা কেমন অসস্থিকর আমার জন্য”সে বললো, তার কণ্ঠে কিছুটা অসহায়তা ছিল।
জ্যাসপার সামান্য দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,”এটা তোমার জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর হতে পারে,কিন্তু আমি তো চাই তুমি এটা অনুভব করো,তোমার এই অস্থিরতা আমাকে শান্তি দিচ্ছে।”
ফিওনার গালে লালিমা ছড়িয়ে পড়লো।জ্যাসপারের কথায় তার অসহায়তা কিছুটা প্রশমিত হলো,তবে তার শরীরে যে উত্তেজনা কাজ করছিল তা তো কমেনি। “কিন্তু,আপনাকে এই অবস্থায় চোখের সামনে দেখা … এটা…” ফিওনার কণ্ঠটা ধরা পড়লো।
“কি এটা?”জ্যাসপার তার স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলো, যেন সে ফিওনার মানসিক দ্বন্দ্বের গভীরে প্রবেশ করতে চাচ্ছে।

ফিওনা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল,তার মনের ভেতর দোলাচল ছিল। “এটা অস্বস্তিকর,কিন্তু…”, সে বলল, “এটা আপনার জন্য স্বাভাবিক,কিন্তু আমার জন্য…”
জ্যাসপার হালকা এক হাসিতে বললো,”আমার জন্য সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে,হামিংবার্ড।তুমি আমার কাছে কাছে থাকার অনুভূতি কখনোই অস্বস্তিকর হতে পারে না।”
ফিওনার হৃদয়টি ধক করে উঠলো।এই মুহূর্তে,সে বুঝতে পারছিল যে জ্যাসপার শুধু তাকে নিজের কাছে টানছে না,বরং তাকে তার অন্তরের এক নতুন দিক দেখাচ্ছে।
জ্যাসপার হঠাৎ সাবান মাখতে মাখতে বললো,”ফিওনা, আমার হাত পিঠে যাচ্ছেনা।একটু পিঠে সাবান মাখিয়ে দাও তো।”ফিওনার চোখগুলো বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। “কি?আমি আপনার পিঠে সাবান মাখবো?”সে বিস্মিত গলায় বললো।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে তার ভেজা শরীরে সাবান মাখতে মাখতে আবার বললো,”হ্যাঁ,আর যদি না করো তবে শাস্তি ধার্য করবো তোমার জন্য।”

ফিওনা মুহূর্তেই বুঝতে পারলো,এই ফায়ার মনস্টারটার আবার কোন কঠিন শাস্তি দিবে।তার হৃদয়ে উত্তেজনা আর অস্থিরতা দুইই একসাথে কাজ করতে লাগলো। সে মনে মনে ভাবলো ‘না করে কোনো উপায় নেই ফিওনা ।’
ফিওনা ধীরে ধীরে সাবান হাতে জ্যাসপারের পিঠে লাগাতে শুরু করলো।তার শ্বাস ধীরে ধীরে ভারী হয়ে উঠছিল।জ্যাসপারের পিঠ এতটাই নিখুঁত,যেন কোনো শিল্পী সাবধানে পাথরে খোদাই করেছে।তার পিঠের প্রতিটি পেশি স্পষ্ট,শক্তিশালী এবং মসৃণ,যা ফিওনাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও আকর্ষণ করছিল।
ফিওনা নিজের হাতের নরম স্পর্শ সাবধানে রাখার চেষ্টা করছিল,কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে সে তার নিজের ধকধক করা হৃদয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না।তার মনে হচ্ছিল,সে কোনো নিষিদ্ধ কাজ করছে।ফিওনার অসস্থি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছিল,কারণ সে জ্যাসপারের শরীরের সৌন্দর্যের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছিল।জ্যাসপার প্রথমে স্থির ছিল,কিন্তু যখন ফিওনার হাত তার পিঠ স্পর্শ করলো,তখন সে হালকা একটা শিহরণ অনুভব করলো।তার মুখে একটি মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। “তোমার স্পর্শ,হামিংবার্ড,” সে মৃদু কণ্ঠে বললো, “এটা অনেক বেশি কোমল।আমার মনে হয় না তুমি কখনও কাউকে এভাবে ছুঁয়েছ।”

ফিওনা কোনো উত্তর দিতে পারলো না।তার হাত থেমে যাওয়ার উপক্রম করলো,কিন্তু জ্যাসপার তার সুরেলা কণ্ঠে বললো,”চালিয়ে যাও।আমি জানি তুমি এটা উপভোগ করছো।”
জ্যাসপারের অনুভূতি যেন নতুন কিছু প্রকাশ করছিল। ফিওনার স্পর্শ তার পিঠের পেশীগুলোর প্রতিটি স্নায়ুতে যেন উত্তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছিল।সে চোখ বন্ধ করলো, গভীরভাবে শ্বাস নিলো,যেন ফিওনার কোমল হাতের প্রতিটি চলাচল তার ভেতরে কোনো গভীর অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে।
ফিওনার হাত ধীরে ধীরে সাবানের ফেনা তার পিঠে ছড়িয়ে দিতে থাকলো।তার হাতের প্রতিটি মৃদু স্পর্শ জ্যাসপারের মধ্যে অদ্ভুত উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল। “তোমার হাত এতটাই মসৃণ,” জ্যাসপার বললো, “তোমার ছোঁয়া আমাকে অন্য এক দুনিয়ায় নিয়ে যাচ্ছে।”

ফিওনা লজ্জায় নতজানু হয়ে রইলো,কিন্তু তার হাত থামল না। তাদের মাঝে এক গভীর নীরবতা তৈরি হলো,যেখানে স্পর্শ,অনুভূতি, আর নিঃশব্দ ভাষাই সমস্ত কিছু প্রকাশ করছিল।
জ্যাসপার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ফিওনার কোমল স্পর্শ আর তার নির্ভরতা যেন তার ভেতরের সমস্ত বাধা ভেঙে দিলো।হঠাৎ,পেছন থেকে ফিওনার হাত খপ করে ধরে সে এক টানে তাকে সামনে এনে সোজা বাথটাবের বরফ শীতল পানিতে ফেলে দিলো।
জ্যাসপারের শক্তিশালী হাতের টান এতো দৃঢ় ছিল যে ফিওনা এক সেকেন্ডও প্রতিরোধ করার সুযোগ পেল না।সোজা বরফ শীতল পানিতে পড়ে গেল ফিওনা।বরফ কুচির ঠান্ডা স্পর্শে তার শরীর শিউরে উঠল,যেন প্রতিটি রক্তবিন্দু জমে যাচ্ছে।
“আপনি এটা কী করলেন?”ফিওনা বিস্মিত আর কাঁপতে কাঁপতে জিজ্ঞেস করল,কিন্তু তার কণ্ঠে অসহায়তা স্পষ্ট ছিল।

কিন্তু তখন জ্যাসপার তাকে ঘনিষ্ঠ করে তুলে ধরল।তার হাতের দৃঢ়তায় যেন কোনো ভয় নেই।এই মুহূর্তে ড্রাগন তাপমাত্রায় গরম তার দেহ,যা ফিওনার শীতল শরীরে উষ্ণতার ঢেউ এনে দিলো।
“শান্ত হও,হামিংবার্ড,” জ্যাসপার ফিসফিস করল,তার কণ্ঠ গভীর এবং শান্ত।”তোমাকে বরফের স্পর্শ শেখাতে চেয়েছিলাম,কিন্তু দেখছি আমার উষ্ণতা ছাড়া তুমি টিকতে পারছ না।”
ফিওনা তার শরীরের শীতলতা ভুলে জ্যাসপারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।তার হাত জ্যাসপারের পিঠে স্থির হয়ে গেল,আর তার মাথা স্বাভাবিকভাবেই জ্যাসপারের উষ্ণ বুকে ঠেকল।
জ্যাসপার অনুভব করল ফিওনার নিঃশ্বাস তার চামড়ায় হালকাগরম ভাব তৈরি করছে।সে মৃদু হাসল,যেন এই মুহূর্তে ফিওনার ওপর তার নিয়ন্ত্রণ পূর্ণ হয়েছে।

“তুমি এখনো ঠান্ডায় কাঁপছ,”জ্যাসপার বলল তার গলার গভীরতা আর উত্তাপ ফিওনাকে আরও নির্ভর করতে বাধ্য করল।”তোমার শরীর তো বরফে লড়াই করতে প্রস্তুত নয়।কিন্তু আমার তাপ তোমাকে উষ্ণ করে রাখবে।”
ফিওনা একটুও সরল না।বরং তার হাত আর শক্ত হলো।সে তার ঠান্ডা শরীরটাকে জ্যাসপারের উষ্ণতায় আরও মিশিয়ে দিলো।তার মনের ভিতর প্রশ্ন ছিল—কেন এই ড্রাগন পুরুষটা এতটা শক্তিশালী,এতটা উষ্ণ, আর এতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে তাকে?
বরফের পানিতে ড্রাগনের তাপমাত্রা যেন এক অনন্য দ্বন্দ্ব তৈরি করেছিল।সেখানে একজন ছিল শীতলতার বন্দি,আর অন্যজন ছিল জ্বলন্ত আগুনের মূর্তি।
কিছুক্ষণ পর বরফের ঠান্ডা যেন জ্যাসপারের ড্রাগনের তাপমাত্রার কাছে হার মানতে শুরু করল।পানির কাঁপুনি উষ্ণতায় বদলে যেতে লাগল।ফিওনা তখনো জ্যাসপারের শক্ত বুকে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিল, তার শরীরের প্রতিটি কোষ সেই উষ্ণতায় শিথিল হয়ে যাচ্ছিল।

হঠাৎ জ্যাসপার তার কোমরে মৃদু চাপ দিয়ে ফিওনাকে সামনে ঘুরিয়ে দিল।ফিওনার পিঠ তার দিকে,আর সে ধীরে ধীরে কাছে সরে এল।ফিওনা বুঝল,সে এখন পুরোপুরি জ্যাসপারের ঘেরাটোপে।
জ্যাসপারের হাত কোমরের দু’পাশে স্থির হলো,আর তার মুখ ফিওনার ঘাড়ের কাছে নেমে এলো।ফিওনা অনুভব করল এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস,যা তার ঘাড়ে উষ্ণ স্পর্শ ফেলে গেল।সেই স্পর্শে ফিওনার মেরুদণ্ড বেয়ে এক ঝাঁক শিহরণ নেমে গেল।
“তোমার শরীর এখনো ঠান্ডায় জমে আছে,হামিংবার্ড,” জ্যাসপার মৃদু স্বরে বলল,যেন প্রতিটি শব্দ তার কানে নয়,তার অন্তরে দোলা দিচ্ছিল।

ফিওনা নিজের শ্বাস আটকে রাখতে চাইল,কিন্তু পারল না।জ্যাসপারের হাত ধীরে ধীরে তার কাঁধ ছুঁয়ে নিচে নেমে গেল,যেন তার প্রতিটি স্নায়ু জেগে উঠছিল।
“আপনার তাপমাত্রায় এই বরফের পানিও আগুনের মতো হয়ে উঠছে,”ফিওনা অজান্তে বলে ফেলল, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার মুখ রঙে ভরে গেল।
জ্যাসপার হেসে বলল, “তবে আমিও এই আগুনে জ্বলতে চাই,হামিংবার্ড।”
ফিওনা আর কিছু বলতে পারল না।শুধু চোখ বন্ধ করে অনুভব করল সেই মুহূর্তের প্রতিটি শিহরণ,যা তার জীবনে প্রথমবারের মতো এত গভীর অনুভূতি এনে দিয়েছিল।

জ্যাসপার এক মুহূর্তের দ্বিধা ছাড়াই শ্যাম্পুর বোতল হাতে তুলে নিল।বোতল থেকে সামান্য শ্যাম্পু তার শক্ত, অথচ কোমল হাতের তালুতে ঢেলে নিয়ে ধীরে ধীরে ফিওনার চুলে মাখিয়ে দিতে শুরু করল।তার আঙুলগুলো এতটাই নিখুঁতভাবে চুলের ভেতর দিয়ে চলছিল যেন প্রতিটি স্পর্শে শুধু শ্যাম্পু নয়,‌স্নেহ আর যত্নও মিশে ছিল।
শ্যাম্পুর মিষ্টি সুবাস ধীরে ধীরে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ল। ফিওনা মুহূর্তের জন্য চমকে উঠল, যেন এই ভয়ংকর ড্রাগনের হাতের এতটা কোমলতার স্বাদ নেওয়া তার কল্পনার বাইরে ছিল।
ফিওনা চুপচাপ বসে থাকল,মাথার চুলে জ্যাসপারের আঙুলের প্রতিটি চাল আর শ্যাম্পুর স্পর্শ তার অনুভূতিকে স্নিগ্ধতার এক অন্য জগতে নিয়ে যাচ্ছিল। তার মনে হঠাৎ করে মিস ঝাং-এর কথা মনে পড়ল, যিনি ছোটবেলায় সবসময় এত যত্ন করে তার চুল শ্যাম্পু করতেন।
ফিওনার ঠোঁটের কোণে একফোঁটা হাসি ফুটে উঠল। অজান্তেই তার বুকের মধ্যে একটা ভালো লাগার স্রোত বইতে শুরু করল।

জ্যাসপার চুপচাপ তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল,তবে ফিওনার হাসিটা তার চোখ এড়াল না।”তোমার মুখে হাসি কেন, হামিংবার্ড?” জিজ্ঞেস করল জ্যাসপার,তার স্বর মৃদু এবং গভীর।
ফিওনা কিছুটা লজ্জা নিয়ে বলল,”ছোটবেলায় মিস ঝাং আমার চুল শ্যাম্পু করত।এই মুহূর্তটা… যেন সেই সময়ের মতো মনে হচ্ছে।তবে…”
“তবে কী?” জ্যাসপার একটু ঝুঁকে এসে ফিসফিস করল।
ফিওনা একটু হেসে বলল, “তবে আপনি খুব ভালো শ্যাম্পু করতে পারেন।”
জ্যাসপার হালকা হেসে বলল, “তুমি জানো না,ফিওনা, আমি যা কিছু করি,সেটা পারফেক্ট হওয়ার জন্যই করি।”ফিওনার মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল,আর সে চোখ নামিয়ে আনল।
শ্যাম্পু শেষ করার পর,জ্যাসপার নিঃশব্দে পাশ থেকে হ্যান্ড শাওয়ারটি তুলে নিল।তার মসৃণ,নিখুঁত দক্ষতায় ফিওনার চুল ধুয়ে দিল,যেন প্রতিটি আঙুলের ছোঁয়ায় তার চুল থেকে শ্যাম্পুর শেষ বিন্দুটুকু পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।ফিওনা চুপচাপ বসে ছিল,তার হৃদস্পন্দন যেন কিছুটা দ্রুত হয়ে উঠেছে।
চুল ধোয়ার কাজ শেষ হলে জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য থামল।ফিওনার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে কিছু যেন ভাবল,তারপর আচমকা তাকে নিজের দিকে টেনে নিল।

“কি করছেন আপনি?” ফিওনার কণ্ঠে কিছুটা অবাক ভাব।কোনো কথার উত্তর না দিয়ে জ্যাসপার হঠাৎই ফিওনাকে নিয়ে বাথটাবের গভীর পানিতে ডুব দিল। বরফের ঠান্ডা জল তখন উষ্ণতায় মিশে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করছিল।ফিওনার শরীরে শিহরণ ছড়িয়ে গেল,কিন্তু তার চোখগুলো বন্ধ করতে পারল না।ডুব থেকে উঠে জ্যাসপার তার শ্বাস নিল,তারপর ফিওনার চোখে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল।সেই দৃষ্টি,যেন জ্বলন্ত আগুনের শিখার মতো,ফিওনার সমস্ত আত্মাকে ছুঁয়ে গেল।
“তুমি ভয় পেয়েছো?”জিজ্ঞেস করল জ্যাসপার,তার গলার স্বরে একটা গভীরতা।ফিওনা ধীরে মাথা নাড়ল,কিন্তু তার চোখের ভাষা বলল অন্য কথা।
জ্যাসপার তার ঠোঁটের কোণে হালকা এক ফোঁটা হাসি ফুটিয়ে বলল,”ভয় পাওয়ার কিছু নেই,হামিংবার্ড।আমি তো আছি।”

এরপর,এক মুহূর্তের দ্বিধা ছাড়াই জ্যাসপার পুনরায় গভীর জলে ডুব দিল।ফিওনা তখন নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করছিল,কিন্তু পরের মুহূর্তে জ্যাসপার তার ঠোঁটের মাঝখানে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিল।
গাঢ়,গভীর আর প্রগাঢ় সেই চুম্বনে সময় থমকে দাঁড়াল। ফিওনা বুঝতে পারছিল,এই মুহূর্তে সে আর কেবল জ্যাসপারের কব্জায় নেই;তার হৃদয়ও সেই আগুনে জ্বলে উঠেছে।
পানি তাদের চারপাশে ঢেউ তুলছিল,কিন্তু তারা একে অপরের অস্তিত্বে সম্পূর্ণ হারিয়ে গিয়েছিল।তাদের মধ্যে কোনো কথা ছিল না,কেবল সেই চুম্বনের গভীরতায় সমস্ত অনুভূতি মিশে গিয়েছিল।
চুম্বনের প্রগাঢ়তার তীব্রতায় ফিওনার নিঃশ্বাস ধীরে ধীরে আটকে আসছিল।জ্যাসপারের শক্ত অথচ কোমল ঠোঁটের স্পর্শ যেন তাকে আর তার নিজস্ব জগতে রাখতে দিচ্ছিল না।পানির নিচে যেন সময় থেমে গিয়েছিল,শুধু তাদের দম বন্ধ করা অনুভূতিগুলো ছিল অবশিষ্ট।একসময় ফিওনার শরীর হালকা কেঁপে উঠল,তার নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার প্রভাব স্পষ্ট হতে লাগল।এটা টের পেয়েই জ্যাসপার তার শক্ত হাত দিয়ে ফিওনাকে ধরে নিয়ে দ্রুত পানির ওপরে উঠে এলো।

পৃষ্ঠে পৌঁছে ফিওনা হঠাৎই তীব্রভাবে শ্বাস নিলো।ঠান্ডা বাতাস তার ফুসফুস ভরিয়ে দিচ্ছিল,আর সে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগল।জ্যাসপার তখনো তার কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছিল,তার চোখে গভীর এক তৃপ্তি আর অপরিসীম অনুভূতির ছাপ।
“তুমি ঠিক আছো তো হামিংবার্ড?”জ্যাসপার গভীর, শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করল।ফিওনা কোনোভাবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল,কিন্তু তার মুখের লালিমা আর বিক্ষিপ্ত নিঃশ্বাস জ্যাসপারকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল সে কতটা প্রভাবিত হয়েছে।
জ্যাসপার তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল,”তোমাকে ঠিকমতো শ্বাস নিতে দেওয়া উচিত ছিল,তবে তোমার চোখে যে বিস্ময় আর অনুভূতি দেখলাম,সেটা কোনোভাবেই মিস করতে পারতাম না।”
ফিওনা হঠাৎই আবার লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিলো।
তার হৃদস্পন্দন এখনো দ্রুত চলছিল,আর সে অনুভব করল,এই আগুনে ড্রাগনের সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্ত যেন তার নিজের আত্মাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে।

জ্যাসপার ধীর পায়ে বাথটাব থেকে উঠে দাঁড়াল,পানির ফোঁটাগুলো তার সুঠাম শরীর বেয়ে নিচে পড়ছিল।তার তীক্ষ্ণ চোখে এক অদ্ভুত তৃপ্তি আর গভীর কিছু অনুভূতি খেলা করছিল।ফিওনাকে শক্ত হাতে ধরে এক সহজ ভঙ্গিতে কোলে তুলে নিলো,যেন তার ওজন তার কাছে কিছুই নয়।
পানির সোঁদা গন্ধ আর শ্যাম্পুর মিষ্টি ঘ্রাণ মিলে ঘর ভরে উঠেছিল।ফিওনাকে বাথটাবের পাশে নামিয়ে রেখে,জ্যাসপার পাশ থেকে একটি নরম সাদা তোয়ালে তুলে নিলো।কোনো কথা না বলেই সে সাবলীল ভঙ্গিতে ফিওনার ভেজা চুল মুছে দিতে লাগল।তার প্রতিটি স্পর্শে যেন ছিল এক অব্যক্ত কোমলতা,যা তার আগের সমস্ত কঠোরতা ঢেকে দিচ্ছিল।
ফিওনার চুল মুছে দিয়ে,জ্যাসপার তোয়ালেটি তার মাথার ওপর ঢেকে ঘোমটার মতো করে পরিয়ে দিলো। তার চোখে তখনো সেই রহস্যময় দৃষ্টির ঝিলিক ছিল, যেন তার কাজ এখানেই শেষ হয়নি।
জ্যাসপারের ঠোঁটের কোণে একধরনের শয়তানি হাসি ফুটে উঠল।সে ধীরে ধীরে ফিওনার মুখের কাছে ঝুঁকল, তার গভীর দৃষ্টি ফিওনার চঞ্চল চোখের ওপর স্থির। তার ঠোঁট ফিওনার ঠোঁটের এতটা কাছে এলো যে তাদের নিঃশ্বাস মিশে গেল এক বিন্দুতে।

ফিওনার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।তার হৃদয় যেন মুহূর্তে লাফিয়ে উঠল,কিন্তু জ্যাসপার হঠাৎ থেমে গেল। তার চোখে এক ঝলক চিন্তা ফুটে উঠল।
“তোমাকে ভয় পাইয়ে দেওয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, হামিংবার্ড,”জ্যাসপার হালকা গম্ভীর স্বরে বলল।তার ঠোঁটের কোণে সেই শয়তানি হাসি স্থির ছিল,কিন্তু চোখে ছিল অদ্ভুত মায়া।
ফিওনা তার দিকে তাকিয়ে রইল,কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল।তার ভেতরের অনুভূতির বিস্ফোরণ তাকে স্থির থাকতে দিচ্ছিল না,কিন্তু জ্যাসপারের আচরণে এক ধরনের আশ্চর্য আরামও পাচ্ছিল।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়ে বলল,”দ্রুত জামাকাপড় পাল্টে নাও নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে আর ভালো করে চুলটা শুকিয়ে নিবে।” তার কণ্ঠে ছিল এক অদ্ভুত স্নেহ আর যত্ন।

জ্যাসপার বারান্দা থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করেছিল, তার প্রত্যেকটি পদক্ষেপে একরকম রাজার মতো গাম্ভীর্য।কিন্তু ঠিক তখনই ফিওনা তার অবাক আর ক্রুদ্ধ কণ্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,”আপনি আমার সাথে হঠাৎ এমন আচরণ কেন করছেন?আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!এটা আসলে কী ধরনের আচরণ?”
জ্যাসপার থমকে দাঁড়াল,তার পায়ের তলে পানি জমে যাচ্ছিল,আর বাতাসে শ্যাম্পুর ঘ্রাণ ভেসে বেড়াচ্ছিল। সে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল, তার চোখে একধরনের খেলো উষ্ণতা আর গভীরতা ফুটে উঠল।তার ঠোঁটের কোণে সেই চিরপরিচিত শয়তানি হাসি,যা ফিওনার হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে তুলছিল।”প্রেমের আচরণ,” জ্যাসপার সহজ আর সংক্ষিপ্ত উত্তর দিল।
ফিওনার মুখ বিস্ময়ে খুলে গেল। তার কণ্ঠ কাঁপল, “কিন্তু…আপনার তো লাভ ফাংশনাল ডিলিট!আপনি তো প্রেম বোঝার মতোই নন!”

জ্যাসপারের চোখে যেন বিজয়ীর চমক ফুটে উঠল।সে একপলক ফিওনার চোখে তাকাল,তারপর ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বলল,”তোমার চুম্বনে সেটি আবার অ্যাকটিভ হয়ে গেছে।”
সে এক চোখ টিপ মেরে ভেজা অবস্থায় গোসলের স্থান থেকে বেরিয়ে গেল।পানির ফোঁটা পড়তে পড়তে তার পেছনের দৃশ্য যেন এক শিল্পকর্মের মতো ফুটে উঠছিল।

আযদাহা পর্ব ৩৪

ফিওনা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।তার হৃদয় যেন এক মুহূর্তে মনের সব ভাবনা গুছিয়ে নিতে পারছিল না। নিজের মনে বলতে লাগল,”এই ড্রাগন আমার প্রেমে পড়ে গেলো কিভাবে?”তার চোখে অজস্র প্রশ্ন আর মুখে একধরনের মিষ্টি লজ্জার ছাপ।কিন্তু তার মন বারবার ফিরে যাচ্ছিল জ্যাসপারের সেই চমকপ্রদ মন্তব্যে।

আযদাহা পর্ব ৩৬