আযদাহা সিজন ২ পর্ব ২৬
সাবিলা সাবি
রাত গভীর…
লিউ ঝান ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। আশপাশের নিস্তব্ধতা তাকে আরো অস্বস্তিকর করে তুলছে। পুরো হসপিটাল যেন মৃ*ত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে—র*ক্তাক্ত দেয়াল, মেঝেতে পড়ে থাকা ছিন্ন*ভিন্ন শরীর, আর বাতাসে ভাসতে থাকা জ্বলন্ত ধোঁয়ার গন্ধ।
সে একে একে সমস্ত জম্বিদের ক্যামিকেল দিয়ে প্রতিহত করেছে। শ্বাস দ্রুত ওঠানামা করছে। কিন্তু এসব কিছু ছাপিয়ে তার মনের একমাত্র প্রশ্ন—
ফিওনা কোথায়?
তার চোখে আতঙ্কের ছায়া নেমে এলো। এত ধ্বংসের মাঝে ফিওনা কি নিরাপদ? সে দ্রুত হসপিটালের সিসিটিভি রুমে প্রবেশ করলো।
স্ক্রিন অন করতেই চমকে উঠলো!
জ্যাসপার!
স্ক্রিনের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে সে—ঠাণ্ডা, নির্দয় এক উপস্থিতি। তার মুখে এক অস্বাভাবিক প্রশান্তি,মনে হলো এই ধ্বংসযজ্ঞই তার চাওয়া ছিল! এটা জ্যাসপারের কাজ!
“শয়তান…” লিউ ঝানের মুঠি শক্ত হয়ে গেলো।
ঠিক তখনই…
কাছের ল্যাবরেটরির দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে গেলো।
ইয়াং জিয়াও!
সে দ্রুত পা টেনে এনে ঢুকে পড়লো, চোখে অদ্ভুত আতঙ্ক। শরীর কাঁপছে, নিঃশ্বাস অনিয়ন্ত্রিত।
“স্যার…”—তার কণ্ঠস্বর কাঁপছে।
লিউ ঝান দৌড়ে তার দিকে এগিয়ে এলো।
“তোমার কী হয়েছে?”
ইয়াং জিয়াও পিছিয়ে গেলো। মুখের রঙ ফ্যাকাশে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
তার হাতের চামড়ায় কালচে দাগ ফুটে উঠছে!
“আমি… আমি জম্বি হয়ে যাচ্ছি!”
লিউ ঝানের দৃষ্টি আতঙ্কিত হয়ে উঠলো।
“কী বলছো তুমি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়াং জিয়াও কাঁপতে কাঁপতে হাত তুললো, তার হাতের একপাশে গভীর আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট।
“ওরা যখন আমাকে ধরতে এসেছিল, আমি পালিয়ে এসেছিলাম… কিন্তু…”
সে কথা শেষ করতে পারলো না। ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে।
লিউ ঝান দ্রুত ল্যাবের ক্যামিকেল শেলফের দিকে তাকালো।
জম্বি প্রতিরোধের ক্যামিকেল—শেষ!
তার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে গেলো।
“না… এটা হতে পারে না!”****”তোমাকে বাঁচাতেই হবে!”
ইয়াং জিয়াও নিঃশ্বাস বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
হসপিটালের ভেতর এখনো ধোঁয়া উড়ছে, বাতাসে র*ক্তের তীব্র গন্ধ। লিউ ঝান দ্রুততার সাথে ক্যামিকেল শেলফের দিকে এগোল। তার মাথায় একটাই চিন্তা—ইয়াং জিয়াওকে বাঁচাতেই হবে!
কিন্তু ঠিক তখনই—
“স্যার…”
লিউ ঝান চমকে পেছন ফিরে তাকালো।
ইয়াং জিয়াও তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, মুখে অদ্ভুত শান্তি। তার হাত ধীরে ধীরে উপরে উঠলো—একটা চকচকে ছুরি তার হাতের মুঠোয়!
“ইয়াং জিয়াও! থামো!”
কিন্তু কিছু বলার আগেই ছুরির ধারালো ফলা বিদীর্ণ করে দিলো তার পেট!
“না…!”—লিউ ঝানের কণ্ঠস্বর গমগম করে উঠলো।
ইয়াং জিয়াও কাশতে কাশতে হাঁটু গেড়ে বসলো, তার র*ক্ত মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছে।
লিউ ঝান ছুটে এসে তাকে ধরে ফেললো, তার কাঁধে ঠেস দিয়ে রাখলো।
“কেন করলে এটা? আমি অন্য ব্যবস্থা করতে পারতাম!”—তার কণ্ঠস্বর ব্যথায় ফেটে গেলো।
ইয়াং জিয়াও এক ঝাপসা হাসি দিলো, ফিকে হয়ে আসা চোখে লিউ ঝানের মুখের দিকে তাকালো।
“স্যার… আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারতো না।”
তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, কণ্ঠস্বর কাঁপছে।
“আমি যদি জম্বি হয়ে যেতাম, তাহলে শুধু আপনার ক্ষতি নয়, পুরো শহর শেষ হয়ে যেতো। আমি শেষ জম্বি, তাই নিজেকেই শেষ করে দিলাম…”
লিউ ঝানের চোখে নোনা জল চিকচিক করলো।
“তুমি এটা করতে পারো না, ইয়াং জিয়াও…!”
ইয়াং জিয়াও এক দুর্বল হাসি দিলো, তারপর ধীরে ধীরে তার মাথা লিউ ঝানের কাঁধে রেখে ফিসফিস করে বললো,
“স্যার, আজ একটা সত্যি কথা বলি?”
লিউ ঝান নিঃশ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করলো।
“আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করতাম…”
তার ঠোঁটে অর্ধেক হাসি খেললো।
“আপনি আমার হৃদয়ে ছিলেন… কিন্তু নিয়তিতে ছিলেন না…”
একটা শেষ দীর্ঘশ্বাস…
তারপর নিস্তব্ধতা।
লিউ ঝান অনুভব করলো, ইয়াং জিয়াওর দেহ নিস্তেজ হয়ে গেছে।
তার হাত ধীরে ধীরে নেমে এলো… তার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।
“ইয়াং জিয়াও…”
চারপাশ নিস্তব্ধ।
রক্তা*ক্ত ছুরিটা মাটিতে পড়ে রইলো, আর লিউ ঝান নিথর হয়ে বসে রইলো ইয়াং জিয়াওর নিস্পন্দ দেহ আগলে।
নিয়তির নিষ্ঠুর খেলায় হারিয়ে গেলো আরেকটি জীবন…
লিউ ঝানের চোখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু সে জানে—এখনো তার যুদ্ধ শেষ হয়নি। ফিওনাকে বাঁচাতেই হবে!
সে দ্রুত ইয়াং জিয়াওর নিথর দেহটাকে নিচে শুইয়ে দিলো, তার চোখ দুটো বন্ধ করে দিলো সম্মানের সাথে।
“তোমার আত্মত্যাগ আমাকে সারাজীবন পোড়াবে ইয়াং জিয়াও …”
গভীর শ্বাস নিলো লিউ ঝান।
তারপর সাথে সাথেই পুরো হসপিটাল রেস্ট্রিকশন মোডে চালু করে দিলো—কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারবে না!
হসপিটালের নিরাপত্তা সিস্টেম সক্রিয় হয়ে গেলো, অ্যালার্ম বেজে উঠলো।
“সতর্কতা! সতর্কতা! হসপিটাল এখন সম্পূর্ণ সিল করে দেওয়া হয়েছে!”
লিউ ঝান দ্রুততার সাথে তার কমিউনিকেশন ডিভাইসে তথ্য পাঠিয়ে দিলো। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই চারপাশে গাড়ির বিকট শব্দ শোনা গেলো—ফোর্স আর মিডিয়া চলে এসেছে!
হসপিটালের বাইরে তখনই ফোর্সের গাড়ি থামলো, সশস্ত্র বাহিনী দ্রুত অবস্থান নিলো। মিডিয়ার ক্যামেরা ফ্ল্যাশ জ্বলজ্বল করছে, রিপোর্টাররা চিৎকার করছে,
“ভেতরে কি হচ্ছে?”
“এটা কি জ*ম্বি আক্রমণ?”
কিন্তু লিউ ঝান এখন এসব নিয়ে চিন্তা করতে চায় না। তার মাথায় একটাই চিন্তা—
“ফিওনা এখন কোথায়?”
অরুণমনি প্রাসাদ, গভীর রাত………
ফিওনার পুরো শরীর লাল হয়ে গেছে, চামড়া আগুনে পুড়ে গেছে। জ্বলন্ত ব্যথায় তার সারা শরীর কাঁপছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবু চোখের কোণে জমে থাকা জল ছাড়া সে কোনো শব্দ করছে না।
জ্যাসপার ঠোঁট চেপে ধরে ফিওনাকে বাথটাব থেকে তুলে নিলো। তার হাত শক্ত, অথচ আশ্চর্যজনকভাবে কোমল।
“তোমার গায়ে ওদের ছোঁয়া ছিল, তাই এটা দরকার ছিল হামিংবার্ড ” গম্ভীর কণ্ঠে বললো সে।
ফিওনা কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। ব্যথায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
জ্যাসপার কোনো কথা না বলে তাকে নিয়ে গেলো ঝর্ণার নিচে। ঠান্ডা জল ফিওনার পোড়া ত্বকের ওপর পড়তেই সে তীব্র শিহরণে কেঁপে উঠলো, তবে যন্ত্রণাটা কিছুটা হলেও কমলো। জ্যাসপার ধৈর্য ধরে সাবধানে তাকে গোসল করিয়ে দিলো,প্রতিটা ছোঁয়ায় সে তার ক্ষত সারিয়ে দিতে চাইলে।
তারপর সে ফিওনাকে আলতো করে একটি সাদা, নরম বাথরোব পরিয়ে দিলো। এক হাতে কোলে তুলে নিয়ে ধীরে ধীরে কক্ষে ফিরে এল। বিছানার ওপর ফিওনাকে শুইয়ে দিয়ে নিজের হাতে বিশেষ মলম লাগাতে লাগলো।
“তাকিয়ে থেকো না, চোখ বন্ধ করো,” জ্যাসপার ধীর স্বরে বললো, যেন আদেশ নয়, বরং অনুরোধ করছে।
মলমের পরশে ফিওনার ত্বক একটু আরাম পেলো। শরীরের কাঁপুনি ধীরে ধীরে কমে এল।
তারপর জ্যাসপার নিজের হাতে ফিওনাকে রাতের খাবার খাইয়ে দিলো। ছোট ছোট কামড় দিয়ে খাচ্ছিল ফিওনা, একসময় কাঁপা কাঁপা হাতে নিজেই নিতে চাইলো, কিন্তু জ্যাসপার তার হাত সরিয়ে দিলো।
“তোমার হাত কষ্ট পাচ্ছে, আমিই খাওয়াবো,” একেবারে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো সে।
খাবার শেষ হলে, জ্যাসপার নরম তোয়ালে দিয়ে ফিওনার চুল মুছিয়ে দিলো। ফিওনা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে—এ কেমন জ্যাসপার?
সবশেষে, সে নিজেই ফিওনাকে নিজের বাহুতে টেনে নিয়ে এলো। গভীর, উষ্ণ এক আলিঙ্গনে মুড়ে নিলো তাকে।
“আর ব্যথা হচ্ছে?”
ফিওনা কিছু বললো না।
জ্যাসপার তার চুলে হাত বুলিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এল, বুঝা গেলো সে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ফিওনা এক মুহূর্তের জন্য তাকিয়ে রইলো তার মুখের দিকে।
তবে এই মুহূর্তে, জ্যাসপারের বাহুতে একটুখানি নিরাপত্তা অনুভব করলো সে।
এবং সেই উষ্ণতার মাঝেই তার চোখও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো…
চেন শিং গভীর রাতে নিজের ব্যক্তিগত গবেষণাগারে বসে কিছু নোট বিশ্লেষণ করছিলেন, যখন বাইরে থেকে দরজায় তীব্র কড়া নাড়ার শব্দ এল।
“মিস্টার চেন ! দরজা খুলুন!”
ভেতর থেকে পরিচিত কণ্ঠ শুনে তিনি দ্রুত দরজা খুললেন। লিউ ঝান এক ঝটকায় ভেতরে ঢুকে এল, সারা মুখ উত্তেজনায় থরথর করছে।
“কী হয়েছে, লিউ ঝান?” চেন শিং অবাক চোখে তাকালেন।
কিন্তু লিউ ঝান কোনো উত্তর না দিয়ে হাঁপাতে লাগল। তার চোখ লাল হয়ে আছে,দেখ মনে হচ্ছে সে প্রচণ্ড ধাক্কা সামলে এসেছে। কিছুক্ষণ পর, দম নিয়েই সে ভেঙে পড়ল চেন শিং-এর সামনে।
“সব শেষ… জ্যাসপার ওই হসপিটালের সব নিরীহ মানুষগুলোকে মেরে ফেলেছে!”
চেন শিং চমকে উঠলেন।
“কী বলছো?!”
“কয়েকজন পালিয়ে যেতে পেরেছিল, আর কয়েকজনকে ক্যামিকেল দিয়ে সুস্থ করা গেছে,” লিউ ঝানের কণ্ঠস্বর কাঁপছিল, “কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মা*রা গেছে… আর…”
সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল,পরের কথাগুলো বলতে গেলে নিজের কষ্ট আরও তীব্র হয়ে উঠবে।
“ইয়াং জিয়াও…”
চেন শিং অপেক্ষা করলেন, কিন্তু এরপর যা হলো, সেটা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি।
লিউ ঝান একেবারে ভেঙে পড়ল।
তার কাঁধ কাঁপছে, মুখ শুকিয়ে গেছে। চোখে একধরনের অসহায় ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট।
“ইয়াং জিয়াও নিজেই নিজেকে শেষ করে দিয়েছে! আমি কিছু করতে পারিনি!”
চেন শিং গভীর শ্বাস নিলেন, মুখ শক্ত হয়ে গেলো।
“এটা হতে পারে না… জ্যাসপার… সে এমন কাজ করবে কেন?”
লিউ ঝান দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়াল।
“ও শুধু জ্যাসপার না, ও অতীতের থেরন!”
চেন শিংয়ের চোখ বিস্ময়ে সংকুচিত হলো।
“তুমি কী বলছো, লিউ ঝান?”
“আমি ওকে একশ বছর ধরে চিনি,” লিউ ঝানের কণ্ঠস্বর ধারালো হয়ে উঠলো, “ওই নিজের হাতে ওর সৎ মা আর নিজের বাবাকে মেরে ফেলেছিলো। ও একটা সাইকোপ্যাথ!”
চেন শিং গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন।
“আমি যতটা দেখেছিলাম, হ্যাঁ, জ্যাসপার জেদি, তবে সে ফিওনাকে ভালোবাসে,” তিনি ফিসফিস করে বললেন, “কিন্তু সে এতটা নিষ্ঠুর হবে, এটা আমি ভাবতেও পারিনি।”
লিউ ঝানের হাত দুটো শক্ত হয়ে উঠলো।
“মিস্টার চেন শিং, ফিওনা ওর সাথে থাকলে শেষ হয়ে যাবে!”
চেন শিং দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“তাহলে কী করবে তুমি?”
লিউ ঝানের চোখে একরাশ অন্ধকার জমে উঠলো।
“যেভাবেই হোক, আমাকে ফিওনাকে উদ্ধার করতেই হবে…”
রাতের আকাশে ভাসমান চাঁদের আলোয় এলেনার প্রাসাদ এখনো ঝলমল করছে।আজকে ওদের পরিক্ষা শেষ হবার আনন্দে এলেনার প্রাসাদে একটা পার্টির আয়োজন করা হয়েছিলো।
পার্টির আমেজ এখনো কাটেনি, কিন্তু সিলভা আর বেশি সময় থাকতে চায়নি। পরীক্ষা শেষ, আনন্দও হলো, কিন্তু রাজা জারেন রাতের বেলা অন্যের প্রাসাদে থাকা পছন্দ করেন না, তাই সিলভাকে ফিরে যেতেই হবে।
সে ধীরে ধীরে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলো। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে মনে মনে ভাবল, “ড্রাগন রূপ ধরবো নাকি হাঁটবো?” গাড়ি আনেনি, তাই একমাত্র উপায় ওড়ার।
ঠিক তখনই, হঠাৎ একটা গাড়ি সামনে এসে থামল। হালকা ধোঁয়া উঠছে ইঞ্জিন থেকে,মনে হলো অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে।
সিলভা অবাক হয়ে গাড়ির দিকে তাকাতেই দরজা খুলে গেল।
ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা এথিরিয়ন ঠান্ডা গলায় বলল, “বসে পড়ো।”
সিলভা কপাল কুঁচকালো, “তুমি আমাকে ফলো করছো?”
এথিরিয়ন একটুও দ্বিধা না করে বলল, “তুমি ভেনাসের যেখানে যাও, আমি তথ্য পেয়ে যাবো। এবার কথা কম বলে ওঠো গাড়িতে।”
সিলভা নিঃশব্দে এথিরিয়নের চোখের দিকে তাকাল।
একটা নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ির ভেতরে উঠে বসলো।
সিলভা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বুঝতে পারল, রাস্তা ঠিক নেই।
গভীর রাতে রাজপথে আলো ঝলমল করার কথা, কিন্তু চারপাশ অন্ধকার আর গাছপালা ঘেরা। সে তৎক্ষণাৎ মুখ ঘুরিয়ে এথিরিয়নের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এটা তো ফ্লোরাস রাজ্যের রাস্তা নয়! তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো,রিয়ন?”
এথিরিয়ন কোনো ভ্রুক্ষেপ না করেই বলল,
“জঙ্গলে।”
সিলভা অবাক হয়ে তাকালো, “জঙ্গল? কেন?”
এথিরিয়নের ঠোঁটের কোণে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠলো, “আমাকে পায়ে মেরেছিলে না? এবার তোমাকে আমি মেরে গুম করে দেবো।”
সিলভা বিরক্ত হয়ে চোখ উল্টে বলল, “উফ, এটা ফান করার সময় না। বাবা নিশ্চয়ই চিন্তা করছে, আমাকে প্রাসাদে ফিরতে হবে।”
এথিরিয়ন গাড়ির গতি একটু বাড়িয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,
“আজ তুমি বাড়ি ফিরতে পারবে না। এটাই তোমার শাস্তি। কাল সকালে যখন রাজপ্রাসাদে ফিরবে, তখন বকা খাবে।”
সিলভা হতভম্ব হয়ে গেল। “তুমি কি সত্যি বলছো?”
এথিরিয়ন মুচকি হেসে শুধু একটাই কথা বলল,
“একশ ভাগ।”
ফিওনার ঘুম ধীরে ধীরে ভাঙলো। শরীর ভারী লাগছে, একরাশ ক্লান্তি চেপে আছে দেহে। চোখ খুলতেই সে বুঝতে পারলো, বিছানায় একা আছে—জ্যাসপার নেই।
বুকের ভেতর কেমন একটা অস্বস্তি কাজ করছিল, তবে তারচেয়েও বেশি অনুভূত হচ্ছিল ব্যথা। শরীরের প্রতিটি কোণায় জ্বালাপোড়া করছে। ধীরে ধীরে উঠে বসলো সে, পা নামিয়ে ফ্লোরে রাখতেই হঠাৎ এক জোড়া শক্ত হাত তার পা ধরে ফেললো।
ফিওনা চমকে তাকালো—জ্যাসপার।
একটু আগেই কোথাও ছিল না, অথচ এখন ঠিক সামনে বসে আছে, নীরব, গম্ভীর চেহারা নিয়ে। ফিওনার কিছু বলার আগেই সে সাবধানে ফিওনার পায়ে বাড়িতে পড়ার জুতো গুলো পরিয়ে দিলো।
ফিওনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
তারপর কোনো কথা না বলে আস্তে আস্তে ফিওনাকে নিয়ে গেলো ওয়াশরুমের দিকে। ফিওনা চলতে গিয়ে টলতে লাগলো, কিন্তু জ্যাসপার শক্ত হাতে তাকে ধরে রাখলো, যেন পড়ে না যায়।
ওয়াশরুমের আয়নার সামনে এসে ফিওনা তাকিয়েই স্তব্ধ হয়ে গেল।
“এটা… এটা কি সত্যি আমার চেহারা?”
আয়নায় সে যে মেয়েটিকে দেখছে, তা যেন সম্পূর্ণ অপরিচিত! গলা, গাল, কপাল সব লাল হয়ে আছে, কিছু কিছু জায়গা পুড়ে যাওয়ার মতো দেখাচ্ছে। চামড়া এতটা স্পর্শকাতর হয়ে গেছে যে হাত দিলেই ব্যথা লাগছে।
জ্যাসপার বুঝতে পেরে ধীর গলায় বললো, “চিন্তা কোরো না। কয়েকদিনের মধ্যেই তোমার স্কিন ঠিক হয়ে যাবে।”
ফিওনা ব্যথাভরা চোখে তাকালো তার দিকে, বিশ্বাস করতে পারছে না কথাটা।
জ্যাসপার হালকা হাসলো, “আর যদি ঠিক নাও হয়, তাতে কি? তোমার চেহারার সৌন্দর্য না থাকলেও আমি তোমাকে আগের মতোই ভালোবাসবো। বরং এতে একটা ভালো দিক আছে—”
ফিওনা নিঃশ্বাস চেপে তাকিয়ে রইলো।
“আর কোনো ছেলে তোমার দিকে তাকাবে না।”
তার কথায় এক মুহূর্তের জন্য ফিওনা নির্বাক হয়ে গেল। বুঝতে পারলো, এ কথার মধ্যে কোথাও একধরনের অদ্ভুত অধিকারবোধ লুকিয়ে আছে। জ্যাসপার ঠান্ডা অথচ গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলো,চোখের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে—
“তুমি শুধুই আমার।”
ফিওনা টেবিলে চুপচাপ বসে ছিল, চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ। শরীর এখনো ব্যথায় টনটন করছে, তবে জ্যাসপারের ছোঁয়ায় একরকম আশ্চর্য প্রশান্তি পাচ্ছিল।
জ্যাসপার ধীর পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালো। “ব্রেকফাস্ট করো,” বলেই সে এক চামচ তুলে ধরলো ফিওনার মুখের সামনে।
ফিওনা একটু ইতস্তত করলো, কিন্তু জ্যাসপারের গম্ভীর দৃষ্টিতে বুঝতে পারলো, এখানে না বলার সুযোগ নেই। ধীরে ধীরে সে খেতে শুরু করলো, আর জ্যাসপার নিঃশব্দে একের পর এক চামচ তুলে দিতে লাগলো তার মুখে।
সকালের খাবার শেষ হলে জ্যাসপার তাকে কোলে তুলে নিয়ে আবার রুমের দিকে গেলো। ফিওনা অবাক হয়ে বললো, “আমি নিজে যেতে পারবো!”
জ্যাসপার নির্বিকার কণ্ঠে বললো, “তোমার দরকার নেই হাঁটার।”
রুমে ঢুকেই জ্যাসপার তাকে ধীরে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ফিওনা কিছু বোঝার আগেই সে এক বোতল খুললো—একপ্রকার তেলজাতীয় ভেষজ মিশ্রণ।
“এটা কী?” ফিওনা ফিসফিস করে জানতে চাইল।
“তোমার ব্যথা কমাবে,” সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলো জ্যাসপার।
তারপর ধীরে ধীরে নিজের হাতে ফিওনার হাতে, গলায়, ঘাড়ে, পিঠে, যেখানে যেখানে লালচে দাগ ছিল, সেখানগুলোতে মলমের মতো সেই ভেষজ তেলটা মেখে দিতে লাগলো।
ফিওনা একটু শিহরিত হলো, তবে ব্যথা প্রশমিত হতে থাকায় আর কোনো প্রতিবাদ করলো না। চোখ বুজে ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এল তার শরীর।
জ্যাসপার তাকে এক ঝলক দেখে নিয়ে বললো, “এবার বিশ্রাম নাও । আমি তোমার পাশে আছি।”
ফিওনা চোখ খুলে তাকালো, এক মুহূর্তের জন্য কিছু বলতে গিয়েও বললো না। জ্যাসপার সত্যিই পাশে বসে থাকলো, যতক্ষণ না সে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
দুপুরের দিকে ফিওনা ধীরে ধীরে টেবিলের দিকে এগিয়ে এলো, চোখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি। জ্যাসপার তখন খাবার সাজাচ্ছিল।
“আমরা এখানে আর কতদিন থাকবো?” ফিওনা সরাসরি জিজ্ঞেস করলো।
জ্যাসপার এক মুহূর্ত থেমে তার দিকে তাকালো, তারপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো, “যতদিন তুমি আমাকে মন থেকে মেনে না নিচ্ছো।”
ফিওনার ভ্রু কুঁচকে গেল, “এর মানে?”
জ্যাসপার ঠাণ্ডা কণ্ঠে বললো, “ভেনাসে ফিরলে সবাই তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেবে। বিশেষ করে তোমার মা, আর আমার বাবা..তোমার মা আমাকে তোমার জন্য যথেষ্ট ভালো মনে করে না।এদিকে আমার বাবা চায়না আমি তোমার সাথে থাকি তাই তাকেই বন্দি করে রেখে এসেছি। জন্মদাতা পিতা হয় তানাহলে, আমার সাথে ছলনা করার শাস্তি আরও ভয়ানক হতো।”
ফিওনার শরীর শীতল হয়ে গেল। সে বুঝতে পারলো, জ্যাসপার সত্যিই তাকে সহজে ছাড়বে না।
ফিওনা তখন ও টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তার চোখে দৃঢ় সংকল্প। সে এক ধাপ এগিয়ে এসে বললো,
“আমি তো চীনের বেইজিংয়ের হাসপাতালে ছিলাম, তাই না?”
জ্যাসপার খাবারের প্লেট ঠিক করছিল। ফিওনার কথা শুনে এক মুহূর্ত থেমে গেল, তারপর ঠাণ্ডা গলায় বললো,
“তুমি কিভাবে জানলে?”
ফিওনার ঠোঁটে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠলো। “অবজারভেশনে রাখার আগে আমার সামান্য জ্ঞান ফিরে এসেছিল। আর সেখানে তো লিউ ঝান ছিল, তাই না? তাহলে সে কিভাবে আমাকে আপনার সাথে আসতে দিলো?”
জ্যাসপার এবার একদম থেমে গেল। ফিওনার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো, তারপর স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
“আসতে দেয়নি। নিয়ে এসেছি আমি তোমাকে।”
ফিওনার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল। তার কণ্ঠ থরথর করে উঠলো,
“আপনি কিভাবে আমাকে এনেছেন? আপনি কি লিউ ঝানের সাথে কিছু করেছেন?”
জ্যাসপারের মুখে এবার কঠোরতা ফুটে উঠলো। তার চোখ ধীরে ধীরে গাঢ় হয়ে গেল রাগে দাউ দাউ করে জ্বলছে।
ফিওনা তবুও পিছপা হলো না। সে দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
“বলুন, কি হয়েছে? চুপ করে আছেন কেন? ওর সাথে কি করেছেন?”
জ্যাসপার এবার ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এলো, তার লম্বা ছায়া ফিওনাকে গ্রাস করলো। কিন্তু ফিওনা ভয় না পেয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো, যেন সত্যটা বের করেই ছাড়বে।
ফিওনার চোখে স্পষ্ট উদ্বেগের ছায়া, লিউ ঝানের কথা শুনে জ্যাসপারের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। সে ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এলো, তারপর এক ঝটকায় ফিওনার গলা চেপে ধরলো।
ফিওনার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো, সে চেষ্টা করলো হাত সরানোর, কিন্তু জ্যাসপারের শক্তির কাছে সেটা অসম্ভব। তার পা মাটি থেকে কিছুটা উপরে উঠে গেলো, হাত-পা ছোড়াছুড়ি করেও কোনো লাভ হলো না।
জ্যাসপার অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলো তার চোখের ভীতির দিকে, তারপর হঠাৎ করেই তাকে ছেড়ে দিলো। ফিওনা মাটিতে পড়ে হাঁপাতে লাগলো, কাশতে কাশতে নিজের গলা চেপে ধরলো।
কিন্তু জ্যাসপার ওকে কোনো সুযোগ দিলো না। সে এক ঝটকায় ফিওনার চোয়াল ধরে নিজের মুখের কাছে টেনে আনলো। তার চোখ ধাঁধাঁ করছে রাগে, কণ্ঠ ভয়ানক নিচু আর তীব্র,
“আরেকবার… যদি আরেকবার এই নামটা উচ্চারণ করো, আমি তোমার জিভ টেনে ছিঁড়ে হাতে ধরিয়ে দেবো, আজীবন বোবা হয়ে থাকবে! তবুও আমার ভালোবাসা কমবেনা।”
ফিওনা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে থাকলো, তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হচ্ছিল। কিন্তু জ্যাসপার ওর মুখের প্রতিটি পরিবর্তন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিল,অপেক্ষা করছিল ভয়ের পরিবর্তে সে কখন ওর কাছে আত্মসমর্পণ করবে।
ফিওনার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেলো। তার বুক ধকধক করে কাঁপতে লাগলো। যখন জ্যাসপার লিউ ঝানকে মারার কথা বললো।
“না!” ফিসফিস করে বলে উঠলো সে, যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।
জ্যাসপার ঠান্ডা দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। “তোমার জন্যই সে মরবে, ফিওনা।” তার কণ্ঠে কোনো অনুভূতি ছিল না, এটি স্রেফ একটি অনিবার্য সত্য।
ফিওনা ছুটে গিয়ে জ্যাসপারের হাত চেপে ধরলো, তার কণ্ঠ আতঙ্কে কাঁপছিলো। “আপনি এটা করতে পারে না! প্লিজ, ওর কোনো দোষ নেই!”
জ্যাসপার ধীর গতিতে ওর হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, “তুমি যতই কাকুতিমিনতি করো, এতে কিছুই বদলাবে না। ও বেঁচে থাকলে তুমি বারবার ওই পাতি সেনাপতিটার কথা ভাববে, তাই আমি ওকে মুছে ফেলবো তোমার জীবন থেকে—একবারেই চিরতরে,এই পৃথিবী থেকে ওকে নিশ্চিহ্ন করে দিবো।”
ফিওনার পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছিল। জ্যাসপারের কথাগুলো তার কানে বাজছিল—”লিউ ঝানকে আমি এই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবো।”
তার চোখ বড় হয়ে গেলো, গলায় শুকনো খটখটে অনুভূতি। সে কিছু বলতে গিয়েও পারলো না, কেবল অসহায়ভাবে তাকিয়ে রইলো।
জ্যাসপার কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো, “খাবারটা খেয়ে নাও,” তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো।
ফিওনা ধীরে ধীরে টেবিলে বসলো, হাত কাঁপছে, মনে হচ্ছে শরীরটা এখনো স্বাভাবিক হয়নি। সে দ্রুত এক গ্লাস পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেতে শুরু করলো,নিজেকে শান্ত করতে চাইছে।
ঠিক তখনই—
“ধপ!” “ঠাস!” “গড়াগড়!”
বিকট শব্দে পুরো প্রাসাদ কেঁপে উঠলো।
ফিওনা চমকে উঠলো। কাঁপা হাতে গ্লাসটা নামিয়ে রেখে চারপাশে তাকালো। বাইরে থেকে আসা শব্দগুলো স্পষ্ট—জ্যাসপার নিজের কক্ষের সমস্ত জিনিস ছুড়ে মারছে!
“ধড়াম!”
কোনো কিছু শক্তিশালী কিছু দেয়ালে আছড়ে পড়লো।
ফিওনা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো, দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কক্ষের ভেতর থেকে জ্যাসপারের শ্বাসপ্রশ্বাসের ভারী শব্দ আসছে। সে নিঃশব্দে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলো।
কক্ষের মধ্যে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। বিছানা উল্টে গেছে, চেয়ারগুলো ভাঙা, বইগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেঝেতে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ছিল—জ্যাসপার দাঁড়িয়ে আছে ভাঙা আয়নার সামনে, তার হাত র*ক্তাক্ত,সে নিজের মুষ্টি দিয়ে আঘাত করেছে আয়নাতে।
তার নিঃশ্বাস ভারী, চোখ দুটো উত্তাল সাগরের মতো ঝড়ো।
ফিওনা থমকে দাঁড়িয়ে রইলো।
জ্যাসপার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল, তারপর হঠাৎ আয়নার দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠলো—
“ফিওনা আমার! শুধু আমার!”
তারপর আবার আঘাত করলো দেয়ালে, নিজের রাগকে নিজের মধ্যেই বন্দি রাখতে চাইছে, কিন্তু তা পারছে না।
ফিওনা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিল—এই ভয়ানক পুরুষটি কি সত্যিই তাকে ভালোবাসে, নাকি এটা কোনো পাগলামির রূপ?
দুপুরের দিকে একবার ফিওনা ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
বিকেলে ফিওনার চোখ ধীরে ধীরে খুলে গেলো। শরীরটা এখনো ক্লান্ত, কিন্তু উষ্ণ একটা স্পর্শ তাকে পুরোপুরি জাগিয়ে তুললো।
জ্যাসপার!
তার উষ্ণ ঠোঁট ফিওনার গলার উপর নরম চুম্বন এঁকে চলেছে, ধীরে ধীরে মুখটা ওপরের দিকে এনে এবার তার গালে চুমু দিলো।
ফিওনা নিঃশ্বাস আটকে গেলো।
জ্যাসপার ফিসফিস করে বললো, “ব্যথা দিয়েছি,তাই না? আমায় কেনো রাগাও তুমি,হুম?”
তার কণ্ঠে রাগ নেই, বরং একটা অদ্ভুত আবেগ,মনে হচ্ছে সে ফিওনাকে বোঝাতে চাইছে—”আমি তোমার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি, আমাকে কষ্ট দিও না!”
ফিওনা নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো তার চোখের দিকে।
জ্যাসপার এবার তার চিবুকের নিচে আঙুল রাখলো, মুখটা একটু ওপরে তুললো,ফিওনা তার চোখে চোখ রাখলো।
“শুনে রাখো,” তার কণ্ঠ এবার একটু দৃঢ়, কিন্তু তবুও গভীর ও কোমল, “ওই বাস্টার্ডের নাম আমার সামনে কখনো বলবে না, প্লিজ।”
তার কণ্ঠে কঠিন অনুরোধ ছিল, কিন্তু চোখে ছিল দাবির ছাপ।
ফিওনা ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ফেললো। সে জানে, জ্যাসপার একবার কিছু চাইলে, সেটা সে যেকোনো উপায়ে আদায় করে নেয়।
জ্যাসপার গভীর দৃষ্টিতে ফিওনার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার আঙুল শক্ত হয়ে এলো ফিওনার চিবুকের নিচে। চোখেমুখে দপদপ করছে দখলদারির আগুন।
“ওর জন্য তুমি মায়া দেখাবে না।” তার কণ্ঠ নীচু কিন্তু কঠিন, মনে হচ্ছে কোনো অলঙ্ঘনীয় আদেশ দিচ্ছে। “তোমার সব ভালোবাসা, দরদ, মায়া, আতঙ্ক—সব আমার জন্য থাকবে।”
ফিওনা চোখের পলক ফেললো না, কিন্তু তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে উঠলো।
জ্যাসপার এক ধাপ এগিয়ে এলো, তার হাত ফিওনার কাঁধের ওপর রেখে বললো, “ও যদি মরে যায়, তবুও তুমি ওর জন্য একটা বিন্দু মায়াও দেখাবে না।”
তার চোখে ছিল দাবির ছাপ, সে ফিওনার মনটাও পুরোপুরি দখল করে নিতে চায়। ফিওনার অনুভূতিগুলো কেবল তার জন্যই থাকবে।
ফিওনা নিঃশব্দে তার দিকে তাকিয়ে থাকলো।
সন্ধ্যার আবছা আলোয় কক্ষটাতে একটা বিষণ্নতা ছড়িয়ে ছিল। একা একা ভালো লাগছিল না ফিওনার, তাই টিভিটা চালিয়ে দিল। স্ক্রিনে দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকা দৃশ্যগুলোর দিকে চেয়ে থাকল সে,ওগুলোর মধ্যে হারিয়ে যেতে পারলে এক মুহূর্তের জন্য হলেও নিজের বাস্তবতাকে ভুলে থাকা যাবে।
হঠাৎ করেই স্ক্রিনে ভেসে উঠল ব্রেকিং নিউজ—”বেইজিং-এর একটি হাসপাতালে রহস্যজনক রেস্ট্রিকশন, সন্দেহ করা হচ্ছে জম্বি আক্রম*ণ!” রিপোর্টার ভয়ার্ত গলায় বর্ণনা দিচ্ছিলো—চারপাশে ছিন্নভিন্ন লাশের স্তূপ, আতঙ্কিত মানুষের আর্তনাদ, হাসপাতালের ভেতর থেকে ভেসে আসা বিকট চিৎকার।
ফিওনার শরীর মুহূর্তেই শীতল হয়ে এলো। হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো। স্ক্রিনের দৃশ্যগুলো ধীরে ধীরে তার সামনে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো তার, আতঙ্কে সে নিজেই কুঁকড়ে গেলো সোফার কোণে।
ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা শক্তিশালী হাত এসে রিমোটটা কেড়ে নিলো তার হাত থেকে। টিভির স্ক্রিন কালো হয়ে গেলো, আর তার পাশে এসে দাঁড়ালো জ্যাসপার। চোখে অদ্ভুত এক কঠিনতা, গলায় নিরাসক্ত স্বর—”এসব দেখছো কেনো? অন্য কিছু দেখো, টিভিতে এসব ফালতু খবর দেখার দরকার নেই।”
ফিওনা নিঃশব্দে বসে রইলো।ফিওনা কিছু বললো না, দুপুরের ঘটনা মনে পড়তেই তার শরীর শীতল হয়ে এলো।
সে আস্তে করে রিমোটটা টেবিলে রেখে জ্যাসপারের দিকে তাকালো। তার চোখে হাজারো প্রশ্ন জমাট বেঁধে আছে, কিন্তু জিজ্ঞেস করার সাহসটুকু পাচ্ছে না।
জ্যাসপার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে একপাশে বসল, যেন কিছুই হয়নি। তারপর গ্লাসে পানি ঢেলে ফিওনার দিকে বাড়িয়ে দিলো। “পানি খাও, এসব ব্যাপারে বেশি চিন্তা করো না।”
ফিওনা কোনো কথা না বলে ধীরে ধীরে গ্লাসটা হাতে নিলো, কিন্তু তার আঙুলগুলো কাঁপছিলো।
জ্যাসপার চলে যাওয়ার পরও ফিওনার বুকের ধুকপুকানি থামছিল না। নিজেকে শান্ত করার জন্য সে দ্রুত টিভির রিমোটটা হাতে নিলো আর একটা চাইনিজ ড্রামা চালিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে তার মনোযোগ টেনে নিলো স্ক্রিনের ঝলমলে দৃশ্যগুলো।
একটি বিশেষ দৃশ্যে এলো জনপ্রিয় অভিনেতা সুকাই। বহুদিন ধরেই ফিওনার ক্রাশ ছিলো সে। সিরিজে তার গভীর চোখ, চার্মিং হাসি, আর রাজকীয় ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে গেলো ফিওনা। একদম মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিলো স্ক্রিনের দিকে,মনে হলো বাস্তবের সব কিছু ভুলে গেছে।
এক মুহূর্তের জন্য কক্ষটা পুরো অন্ধকার হয়ে গেলো। টিভির স্ক্রিন নিভে গেছে। ফিওনা হতভম্ব হয়ে রিমোট খুঁজতে লাগলো, কিন্তু হঠাৎ অনুভব করলো পিছনে কারো উপস্থিতি। ধীর গতিতে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই তার গলা শুকিয়ে গেলো।
জ্যাসপার দাঁড়িয়ে আছে।
তীব্র রাগি চোখ, ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত বাঁকা হাসি। কোনো কথা না বলে সে এগিয়ে এসে ফিওনাকে সোফা থেকে টেনে তুললো।
“তুমি টিভিতে ওই ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে কেনো?”
ফিওনা হতভম্ব হয়ে গেলো।
“তাতে কি হয়েছে? ও তো একজন সেলিব্রিটি, শুধুমাত্র…”
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই জ্যাসপার নিজের গা থেকে শার্ট খুলে ফেললো।
ফিওনার শ্বাস আটকে গেলো।
সে ধীরে ধীরে তার কাছে এগিয়ে এলো, চোখে আগুন জ্বলা দৃষ্টি।
“তুমি ক্রাশ খাচ্ছিলে? কি নাম ওটার?”
ফিওনা গলা শুকিয়ে আসা স্বরে বললো, “সুকাই…”
জ্যাসপার এবার একেবারে ফিওনার মুখোমুখি দাঁড়ালো, তার চোখে চোখ রেখে ফিসফিস করে বললো,
“তোমার চোখে শুধুমাত্র আমিই সুদর্শন।”
তার কণ্ঠস্বরে একধরনের দাবি লুকানো ছিল,মনে হচ্ছে এই কথার বাইরে কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়।
তারপর ঠোঁটের কোণে এক ঝলক ব্যঙ্গাত্মক হাসি এনে বললো,
“মিস্টার ইউনিভার্স হবো আমি তোমার চোখে। এছাড়া পৃথিবীর আর কারো দিকে তুমি নজর দেবে না, হামিংবার্ড।”
ফিওনা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকলো জ্যাসপারের দিকে।
“আশ্চর্য! সুকাই শুধুমাত্র একজন অভিনেতা, একজন সেলিব্রিটি। ভালো লাগাটা কি কোনো অপরাধ?”
জ্যাসপারের ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের ছায়া খেললো। এক ধাপ এগিয়ে এসে ভয়ানক স্বরে বললো,
“তাহলে তোমার ওই সেলিব্রিটি সুকাইকেই মেরে দেই? তারপর টিভিতে ওর লাশ দেখে ক্রাশ খেয়ো।”
ফিওনার র*ক্ত জমে গেলো। তার চোখ বড় হয়ে গেলো ভয়ে।
জ্যাসপার ফিওনার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরলো, তার গলা থেকে একেবারে নিচু স্বরে ফিসফিস করে বললো,
“তোমার কাছে শুধুমাত্র আমি সুদর্শন পুরুষ। ওই চোখে তুমি আর কাউকে দেখবে না।”
ফিওনা এবার রাগ আর আতঙ্ক মিলিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়ালো। ঠোঁট চেপে এক মুহূর্ত জ্যাসপারের গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর দৃঢ় স্বরে বললো,
“ইয়েস, ইউ আর রাইট। আপনি আসলেই মিস্টার ইউনিভার্স!”
একটা মুহূর্তের জন্য জ্যাসপারের চোখে গর্বের ঝলক ফুটে উঠলো, কিন্তু ফিওনা তখনো শেষ করেনি।
“কিন্তু আপনার এই সৌন্দর্যের আড়ালে যে ভয়ঙ্কর রূপ লুকিয়ে আছে, সেটা খুবই কুৎসিত।”
জ্যাসপার কপাল কুঁচকালো, কিন্তু তার আগে ফিওনা এক ঝটকায় নিজের বাহু ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত নিজের কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
জ্যাসপার দাঁড়িয়ে রইলো, ঠোঁটের কোণে এক চাপা রাগ মেশানো হাসি। তার সবুজ চোখে একরকম দাবির আগুন জ্বলছিলো।
“হামিংবার্ড, তুমি যেখানেই যাও, আমার ছায়া থেকে কখনো মুক্তি পাবে না…” সে নিচু স্বরে বললো, তারপর ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেলো অন্ধকারের দিকে।
ফিওনা দরজা বন্ধ করার পরই এক মুহূর্ত শান্ত হতে না হতেই বাইরে থেকে একটা বিকট শব্দ কানে এলো।
সে চমকে উঠলো। কিছুক্ষণের জন্য নিঃশ্বাস আটকে গেলো।
তারপর ধীরে ধীরে দরজার কাছে গিয়ে কান পাতলো। মনে হলো কিছু একটা ধাক্কা খেয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
কৌতূহল আর আশঙ্কা একসঙ্গে কাজ করছিলো তার মনে। শেষমেশ আর থাকতে না পেরে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।
হলরুমে এসে দেখলো—টিভিটা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে পড়ে আছে!
টিভির পর্দার অংশ ছড়িয়ে পড়েছে মেঝেতে, আর জ্যাসপার সেখানে দাঁড়িয়ে গভীর দৃষ্টি নিয়ে ফিওনার দিকে তাকিয়ে আছে।
তার নিঃশ্বাস ভারী, চোখ দুটো জ্বলছে, আর হাতের আঙুলগুলো এখনো শক্ত হয়ে আছে,মনে হলো আরও কিছু ভাঙতে প্রস্তুত।
ফিওনার ঠোঁট কাঁপছিলো।
“আপনি…!”
জ্যাসপার এক ধাপ এগিয়ে এলো, চোখ দুটো আরও সংকীর্ণ হয়ে গেলো।
“আমি তোমাকে বলেছিলাম,আমি ছাড়া কারো কথা ভাববে না তুমি শোনোনি আমার কথা।”
ফিওনা হতভম্ব হয়ে গেলো।
তার কণ্ঠ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো, কিন্তু সেটা কাঁপছিলো।
“এটা একটা টিভি স্ক্রিন, বাস্তব কিছু নয়। আপনি এতটা পাগল কেন?”
জ্যাসপার এবার একেবারে ফিওনার সামনে এসে দাঁড়ালো।
তার কণ্ঠ নরম, কিন্তু ভেতরে তীব্র দহন লুকিয়ে আছে।
“কারণ তুমি আমার, হামিংবার্ড। আর আমি কাউকে তোমার দিকে তাকাতে দেবো না। এমনকি তোমার চোখও অন্য কাউকে দেখতে পারবে না।”
ফিওনা তার দিকে এক মুহূর্ত চেয়ে থাকলো, তারপর ধীর পায়ে এক ধাপ পিছিয়ে গেলো।
তার হাত দুটো ঠান্ডা হয়ে আসছিলো।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে হাসলো, সেই অদ্ভুত, রহস্যময় হাসি—যেটার অর্থ বোঝা যায় না, শুধু অনুভব করা যায়।
সিলভা হাঁপাচ্ছিলো।
ঘন জঙ্গলের পথ, গাছের শাখা-প্রশাখা যেনো আঁকড়ে ধরছে তাদের। শরীর ভীষণ ক্লান্ত, পা চলছিলো না। অবশেষে, আর সহ্য করতে না পেরে সে ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো।
এথিরিয়ন একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। চোখে ছিলো সেই চিরচেনা নির্লিপ্ত দৃষ্টি, যেনো এই ক্লান্তি, এই অনুনয়-বিনয় তাকে ছুঁতেও পারবে না।
সিলভা ধীরে ধীরে মুখ তুললো, কণ্ঠ ক্লান্ত কিন্তু দৃঢ়,
“আমাকে প্রাসাদে পৌঁছে দাও। আমাদের এখানে থাকা উচিৎ নয়। এই জঙ্গল অভিশপ্ত… তুমি জানো না, এখানে ড্রাগন রূপ নেয়া যাবেনা আর নিলেও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে পারে।”
এথিরিয়ন কোনো উত্তর দিলো না,কেবল ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে তার দিকে এগিয়ে দিলো।
সিলভা এক মুহূর্ত চেয়ে রইলো, তারপর বোতলটা নিয়ে অল্প করে চুমুক দিলো। ঠান্ডা জল গলা দিয়ে নামার পরও বুকের মধ্যে ভয়টা কমলো না।
“আমাকে প্রাসাদে পৌঁছে দাও রিয়ন,” সিলভা এবার অনুনয় করলো। কণ্ঠে ছিলো একধরনের অসহায়ত্ব।
এথিরিয়ন এবার গভীর চোখে তাকালো তার দিকে, ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি ফুটলো।
“একটা শর্তে পৌঁছে দেবো।”
সিলভা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো, “কি শর্ত?”
এথিরিয়ন এক ধাপ এগিয়ে এসে নিচু স্বরে বললো, “তুমি নিজে থেকে আমাকে চুমু খাবে। তাহলেই তোমাকে প্রাসাদে পৌঁছে দেবো।”
সিলভার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেলো। “তুমি পাগল! এই মুহূর্তে কি ধরনের শর্ত এটা?”
এথিরিয়ন কাঁধ ঝাঁকালো, যেনো তার কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক কিছু। “তুমি কি চাও আমি তোমাকে নিরাপদে পৌঁছে দিই, নাকি এই অভিশপ্ত জঙ্গলে ফেলে রেখে যাই?”
সিলভার নিঃশ্বাস আটকে এলো। এই বিকল্পের মাঝে সে কি বেছে নেবে?
সিলভা অবাক হয়ে এথিরিয়নের দিকে তাকালো।
“ছিঃ ছিঃ,রিয়ন! তুমি কীভাবে এভাবে চুমু নিতে চাইছো?” তার কণ্ঠে বিরক্তি আর অবিশ্বাস একসাথে মিশে ছিলো।
এথিরিয়ন এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে শান্ত ভঙ্গিতে বললো, “আমাকে যে তুমি পায়ে ব্যথা দিয়েছিলে, সেটার জন্যই তোমাকে আমায় চুমু দিতে হবে।”
সিলভা হতভম্ব হয়ে গেলো। “তুমি কি সিরিয়াস?”
এথিরিয়ন কেবল একপাশে মাথা কাত করলো, তার চোখে একধরনের নিষ্ঠুর খেলা জ্বলছিলো। “আমি মজা করছিনা।”
সিলভা দাঁতে দাঁত চেপে উঠে দাঁড়ালো, কিন্তু ওর পা তখনো ব্যথায় কাঁপছিলো। “তারমানে তুমি আরো অন্য কিছু চাইছো!”
আযদাহা সিজন ২ পর্ব ২৫
এথিরিয়ন ধীর পায়ে এগিয়ে এলো, গাছের পাতার ফাঁক গলে চাঁদের আলো তার তীক্ষ্ণ মুখাবয়ব স্পষ্ট করে তুলছিলো। “আমি যা চাই, সেটা খুবই স্পষ্ট, সিলভা। তুমি নেবে, নাকি এই অভিশপ্ত জঙ্গলে সারারাত কাটাবে?”
সিলভার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো। এথিরিয়নের চোখের গভীরতা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারছিলো না। এই অভিশপ্ত জঙ্গলে একা থাকার চেয়ে… এথিরিয়নের দাবি কি সত্যিই বেশি কঠিন?