ইট পাটকেল গল্পের লিংক || সানজিদা বিনতে সফি

ইট পাটকেল পর্ব ১
সানজিদা বিনতে সফি

বিচ্ছেদের চার বছর পরে প্রিয় মানুষটির হলুদ সন্ধায় লাইভ পারফর্ম করছে নূর। পুরো নাম তেহজিব নূর। একজন প্রফেশনাল সিঙ্গার সে।মাস খানেক আগেই তাদের সাথে কনট্রাক করেছে মিনিস্টার আশমিন জায়িনের পি.এ সানভি।সব কিছু জেনে শুনেই কন্ট্রাক পেপার সাইন করেছে নূর। যে বর্তমানে স্টেজ কাপাচ্ছে নিজের সুরেলা গলার গান দিয়ে। তার সাথেই একদল মেয়ে গানের তালে তালে নেচে যাচ্ছে। নূর ও তাদের সাথে তাল মেলাচ্ছে মাঝে মাঝে। তার দিকেই রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে আশমিন।অথচ তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই এই মুহুর্তে তার রাগ পুরো কমিউনিটি সেন্টার জ্বালিয়ে দিতে পারে।আশমিনের বাবা কিছুটা আচ করতে পেরে মুচকি হাসলেন।ছেলের চোখে চোখ পরতেই গা জ্বালানো হাসি দিতে ভুললেন না।আশমিনের রাগ তরতর করে বেড়ে গেলেও সে নূরের দিকে পুর্ণ মনোযোগ দিয়ে তাকালো।

Shuru!
Jo akh lad jaave
Saari raat neend na aave
Mainu bada tadpaave
Dil chain kahin na paave paave paave x (2)
Khan khan khan khan choodi
Teri khan khan khan khan khanke re
Khan khan khan khan khanke
Vekh vekhkechehra
Mera dil yeh dhak dhak dhadke re
Dil yeh dhak dhak dhadke
Tarsaave tere bin yeh reh na paave
Maahi jo tu na aave aave aave

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বেবি পিনক গ্রাউনে নূর কে প্রিন্সেসের মতো লাগছে।হেলেদুলে যখন ডান্সারদের সাথে পা মেলাচ্ছে তখন আশমিনের কলিজায় আগুন লেগে যাচ্ছে। অথচ তার পাশেই তার হবু বউ বসে রাগে ফুসছে তাতে তার কোন হেলদোল নেই।তার কলিজা কয়লা করার জন্য স্টেজে হাজির হলো মেল সিঙ্গার তাসিন।যে আপাতত নূরের সাথে ডুয়েট করছে।দুজন যে খুব বেশি ইনজয় করে গাইছে তা কেউ চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারবে। আশমিনের হবু বউ লারা এবার নিজের বেচারি মার্কা খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। কটমট করতে করতে আশমিন কে বললো,
— প্রাক্তনের প্রতি দরদ উতলে উঠছে নাকি?এভাবে তাকিয়ে কি তার রুপের সাগরে ডুব দিয়েছো তা সবাইকে বোঝাতে চাইছো।
আশমিন পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো লারার দিকে।পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে উপহাসের স্বরে বললো,
— সামনে রুপের সাগর রেখে আমি পাশে পচা ডোবা নিয়ে বসে আছি।কি দিন আসলো আমার।আমি কি ভেবেছি জানো লারা,এবার শহরের সমস্ত পচা নর্দমা গুলো পরিস্কার করে ফেলবো।আবর্জনা সব ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবো। মন্ত্রী হিসেবে আমার একটা কর্তব্য আছে তো নাকি।

লারার মুখ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেছে।আশমিনের নজর এখোনো নূরেতেই স্থির। প্রথম থেকে সবটা খেয়াল করলেও আশমিন কে পুরো পুরি ইগনোর করে গেছে নূর।প্রিয়জনের পাশে অন্য কাউকে সহ্য করা মানে নিজের কলিজায় নিজেই করাত চালিয়ে দেয়া।তবুও নূর নির্বাক।আর তার এই নির্লিপ্ততাই তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এইযে সামনের মানুষটা তাকে হাদি খুশি আরেক ছেলের সাথে পারফর্ম করতে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছে তাতেই তো তার নিজের কলিজায় বরফ পরছে।
গান শেষ হতেই উত্তেজনায় ফেটে পরলো দর্শক।করা তালিতে তাদের বাহ বাহ দিচ্ছে সবাই।নূর স্টেজ থেকে নেমে আমজাদ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে গেলো নূর।হাসি হাসি মুখে বললো,
— কেমন আছেন স্যার?
— মার খাবি।আমি আবার স্যার হলাম কবে রে?
— মিনিস্টার আশমিন জায়িনের বাবা আপনি।স্যার না বললে গর্দান যাবে যে।
— ওই সব মিনিস্টার ফিনিস্টার বাদ দে।দু পয়সার মূল্য নেই আমার কাছে এসবের।আমি তোর আঙ্কেল ছিলাম তাই আছি। খবরদার এইসব স্যার টের ডাকবি না।
— আচ্ছা আচ্ছা ডাকবো না।রাগ করো না তুমি।অনেকদিন পরে দেখা, এভাবে রাগ করলে আমার খারাপ লাগবে।ছেলের বিয়েতে মজা করো।মুখ গোমড়া করে আছো কেন?

নূরের কথা শুনে মুখ গোমড়া করে ফেললো আমজাদ চৌধুরী। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
— অনেক বড় হয়ে গেছিস।দোয়া করি আরো বড় হ।সবাই সবকিছুর মূল্য দিতে জানে না রে মা।কাচ কে হীরা ভাবতে ভাবতে আসল হীরাকেই কাচ ভেবে হারিয়ে ফেলে। যে মূল্য দিতে জানে না তাকেও মূল্যহীনের খাতায় ফেলে দিয়ে এগিয়ে যা।নিজেকে এতটা শক্ত কর যাতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তোকে ভেঙে গুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা না রাখে।
নূর মলিন হাসলো। আমজাদ চৌধুরীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার জন্য বরাদ্দকৃত রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।রুমে প্রবেশ করতেই নূরের হাসি হাসি মুখটা বিষাদের কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরার আগেই সন্তপর্ণে তা মুছে নিলো সে।
আশমিনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নূরের দিকেই সীমাবদ্ধ।নূর এখোনো আশমিন কে খেয়াল করে নি।বিলাশবহুল স্যুটের ড্রয়িং রুম থেকে বেড রুমে ঢুকতেই একটা হাত শক্ত করে চেপে ধরলো তাকে।শক্ত হাতের ধাক্কায় দেয়ালের উপর আছরে পরলো নূর।কয়েক সেকেন্ডের জন্য ঝাপসা হয়ে গেলো সব কিছু।নিজেকে সামলে নেয়ার আগেই সেই হাতের মালিক শক্ত করে চেপে ধরলো তাকে।ভীত চোখে সামনে তাকিয়েই শান্ত হয়ে গেলো নূর। আশমিন চোখ লাল করে তার দিকেই তাকিয়ে।

— সরে দাড়ান মন্ত্রী সাহেব। সামান্য একজন সিঙ্গারের এতো কাছে আসবেন না প্লিজ। চরিত্রে দাগ লাগতে পারে।
নূরের নির্লিপ্ত ভাব আশমিনের রাগে ঘি ঢালার কাজ করলো। হাতের বাধন শক্ত করে দাতে দাত চেপে বললো,
— আজকাল সিঙ্গাররা সস্তা হয়ে যাচ্ছে নাকি?নাকি তাদের চরিত্র এতোটাই নিম্নমানের হয়ে গেছে যে কেউ কাছে আসলে তার চরিত্র ও খারাপ বলবে লোকে।
নূর চোয়াল শক্ত করে তাকালো আশমিনের দিকে।পুরনো ক্ষত তাজা হয়ে উঠছে।নূর তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
— মানুষ নিজের চরিত্র দিয়ে অন্যকে বিচার করে জানেন তো মন্ত্রী সাহেব। যার চরিত্র যেমন সে অন্যকে তেমন ই ভাবে।সেসব কথা বাদ দিন,নিজের হবু বউয়ের দিকে নজর দিন।আমি এখানে আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট নিতে বা দিতে আসি নি।ব্যক্তিগত কোন কথা না বললে খুশি হবো।দয়া করে হাত ছাড়ুন।
— যদি না ছাড়ি?
— হাহ!ধরে রাখা আপনার স্বভাবের সাথে যায় না।আপনি ছেড়ে দিতেই অভ্যস্ত। তাই অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
— বদলে গেছো!

–পৃথিবী টা বড্ড নিষ্ঠুর মন্ত্রী সাহেব।কি?বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্বাস না হলে একবার আমার জায়গায় নিজেকে দাড় করিয়ে দেখুন। আমার চোখ দিয়ে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম মানুষ গুলো কে দেখুন। দেখবেন প্রতারকদের মেলা বসেছে।ঠান্ডা মাথায় খু*ন করে দিয়ে চলে যাবে বুঝতেই পারবেন না।আচ্ছা মন্ত্রী সাহেব! আপনি কখনো আয়না দেখেন না?চোখ মেলাতে পারেন তো নিজের সাথে? ঘৃণা হয় না এই জঘন্য প্রতারক চেহারা দেখে?বমি পায় না?আমার কিন্তু বমি পাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঘৃণা গুলো বমি হয়ে আপনার গায়ে উগড়ে দেই ।আপনি বরং চলে যান।অযথা সময় নষ্ট করার মানে হয়?
— নূর!!!

আপনার উপরে আমার কোন দাবি নেই মন্ত্রী সাহেব। নূর এতটা ও বেহায়া না।ভাববেন না আপনার নতুন সংসারে ঝামেলার সৃষ্টি করবো।জীবন অনেক লম্বা জানেন তো?সেখানে আপনার মতো প্রতারকদের পাত্তা দিতে নেই।আমার করা প্রতিটি ওয়াদা আমি পূরোন করেছি। আরেকটা ওয়াদা আমি আপনাকে করতে চাই মন্ত্রী সাহেব, আমার শূন্যতায় আপনার সুখের সংসার জ্বালিয়ে রাক করে দিবো। এটা এই নূরের ওয়াদা। প্রতি মুহূর্ত আপনি পোড়বেন।আপনার মনের ভিতর থাকা শান্তির শেষ বিন্দুটুকূ নিংড়ে বের করে আনবো।এতোদিন এই নূরের ভালোবাসা আপনাকে উষ্ণতা দিয়েছে।এবার নূরের তেজ আপনাকে ছাই করবে।নতুন জীবনের জন্য অভিনন্দন।

ইট পাটকেল পর্ব ২