ইট পাটকেল পর্ব ৩৪

ইট পাটকেল পর্ব ৩৪
সানজিদা বিনতে সফি

কামিনী চৌধুরী কে একটা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে। চারিদিকে গার্ড রা ঘিরে রেখেছে তাকে।বাচ্চাদের আলতো করে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাহাদুর আর একজন মেয়ে গার্ড। অনেকক্ষন না খেয়ে থাকার দরুন তার একটু পর পর কেদে উঠছে।কামিনী চৌধুরীর গায়ে কেউ হাত তুলে নি।যতই অন্যায় করুক না কেন কামিনী চৌধুরী আশমিনের মা।তাকে আঘাত করার সাহস কারোর নেই।

আশমিন দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই সবাই সরে দাড়ালো। আশমিনের পিছনে সানভি আর আমজাদ চৌধুরী ও ভিতরে ঢুকলো। কামিনী চৌধুরী রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। আশমিন সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজের মেয়েদের কাছে গেলো। স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবানু মুক্ত করে মেয়েদের নিজের কোলে নিয়ে বুকের সাথে আগলে রাখলো কিছুক্ষণ। বুকের অসহ্য অস্থিরতায় এতক্ষণে পাগল হওয়ার দশা তার। সন্তাদের কোলে নিয়ে অশান্ত বুক শান্ত হয়ে এসেছে। বাবার কোলে উঠে মেয়েরা ও চুপ হয়ে গেছে। আশমিন দুজনের কপালে চুমু খেয়ে তাদের কোলে নিয়েই কামিনী চৌধুরীর সামনা সামনি বসলো। মেয়েদের বুকের সাথে আগলে ধরে কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— আমাকে ও কি এভাবে নিজের বুকে আগলে রাখতে পারতে না আম্মু?
এতো বছর পরে ছেলের মুখে আম্মু ডাক শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কামিনী চৌধুরী।
— কিসের প্রতিশোধ নিতে চাইলে আম্মু? ভালবাসার মানুষ হারানোর? তাহলে তার একমাত্র অংশ কে এভাবে অবহেলা করলে কিভাবে? তার ভালোই বাসা যদি তোমাকে এতটা উন্মাদ ই করে থাকে তাহলে তার সন্তানের জন্য নিজেকে মমতাময়ী করতে পারলে না কেন? আসলে তুমি কখনো কাউকে ভালোই বাসোনি। তুমি শুধু তাকে উপলক্ষ্য বানিয়েছিলে নিজের মনের ভিতর থাকা ঘৃণা প্রকাশ করতে।তাই না আম্মু?

কামিনী চৌধুরী রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আমজাদ চৌধুরী সহ সবাই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশমিন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বাচ্চাদের আমজাদ চৌধুরী আর সানভির কোলে দিয়ে কামিনী চৌধুরীর মুখ খুলে দিলো।অগোছালো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে তার কপালে চুমু খেয়ে জরিয়ে ধরলো তাকে।কামিনী চৌধুরীর মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে ধরা গলায় বলল,

— আমার একা থাকতে খুব কষ্ট হতো আম্মু। হোস্টেলের অনেক ছেলেরা আমাকে মারতো।আমি খুব ছোট ছিলাম।কিছু বলতে পারতাম না তাদের।একা একা ঘুমাতে ভয় হতো খুব।মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ভয়ে জোড়ে কেদে উঠতাম।তখন পাশের ছেলেরক আমাকে বারান্দায় বন্ধ করে দিতো।ঠিক ভাবে খেতে দিত না।মাঝে মাঝে সারাদিন বাথরুমে বন্ধ করে রেখে আমাকে কষ্ট দিতো।ওরা আমাকে পছন্দ করতো না আম্মু।তুমি কেন আমাকে তোমার সাথে রাখলে না? রাতে তোমার বুকে ঘুমাতে খুব ইচ্ছে করতো আমার। আমাকে একটু বুকে কেন জরিয়ে ধরতে না আম্মু? আমি তোমার ছেলে বলো? সন্তানের সাথে কেউ এমন করে?

কামিনী চৌধুরী চুপ করে আছে। আশমিনের কোন কথা তার মনে আচড় কেটেছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। অমি আশিয়ানের সাথে নূর ও এসে পড়েছে। অগোছালো নূর কে দুই দিক থেকে আগলে রেখেছে দুই ভাই।নিজে নিজে দাড়ানোর অবস্থায় নেই নূর।অমি অনেকবার আটকানোর চেষ্টা করে ও সফল হয় নি। আশমিনের দেয়া মেসেজের কথা অমির মুখে শুনেই আসার জন্য পাগলামি শুরু করে। আশিয়ান ও তখন সেখানে উপস্থিত হয়।নূরের অবস্থা দেখে আশিয়ান নিজেই তাকে এখানে নিয়ে আসে।

কামিনী চৌধুরী নূর আর আশিয়ান অমি কে একসাথে দেখেই জ্বলে উঠলো। আশমিন তার হাতের বাধন খুলে দিতেই তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নূরের উপর আক্রমণ করে বসলো সে।আশিয়ান আর অমি আটকে দিলো কামিনী চৌধুরী কে। আশমিন কামিনী চৌধুরীর ধাক্কায় কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে।নিজেকে সামলে শান্ত চোখে তাকালো কামিনী চৌধুরীর দিকে। নূর নিজের বাচ্চাদের কাছে গিয়ে তাদের সারা মুখে চুমু খেলো।
তাদের কোলে নেয়ার অবস্থায় নেই সে।আশমিন ধীর পায়ে এসে দাড়ালো কামিনী চৌধুরীর সামনে। আশিয়ান আর অমি তাকে ধরে রেখেছে।আশমিন শান্ত গলায় বললো,

— আমার মেয়েদের কেন কিডন্যাপ করেছিলেন?
কামিনী চৌধুরী দাত কিড়মিড় করতে করতে বললো,
— বেচে দিতাম তোর মেয়েদের। আমার সামনে তোরা শান্তিতে থাকবি তা আমি থাকতে সম্ভব না। ওর বাবার জন্য আমি ছোট থেকেই অবহেলায় বড় হয়েছি।কারন আমি মেয়ে।বাবা মা সারাদিন ভাইয়ের পিছনেই লেগে থাকতো। মরে যাওয়ার আগে সব সম্পত্তি ও তার নামেই দিয়ে গেল। আমাকে বাচতে হতো তার দয়ায়।নিজের ইচ্ছায় ভালবাসার মানুষ টা কে বিয়ে করলাম তাকে ও খু*ন করলো। আমি কোন ভুল করিনি। আর তুই, তুই আমার পেটের ছেলে হয়ে আমার সংসার ভাঙ্গলি।আমার জন্য সতিন নিয়ে এলি। তোকে আমি শান্তিতে থাকতে দেই কি করে?
আমজাদ চৌধুরী তাচ্ছিল্যের গলায় বলল,

— তাই নাকি কামিনী? তোমার সংসার? তা কবে আমাকে স্বামীর অধিকার দিয়েছো।আমাদের কি আদেও কোন সংসার ছিল?
— আমি তোমাকে ভালবাসি আমজাদ।
কামিনী চৌধুরীর কাতর গলা শুনে আমজাদ চৌধুরী মলিন হাসলো। কামিনী চৌধুরীর চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
— সত্যিই কি ভালবাসো কামিনী?
— আমি বিয়ের সময় ই তোমাকে বলেছিলাম আমজাদ।আমরা কখনো স্বামী স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক সম্পর্কে থাকবো না।তুমি সব মেনেই আমাকে বিয়ে করেছিলে।তাহলে আজ অভিযোগ কেন?

আমজাদ চৌধুরী আর কিছু বললো না। মুখ ঘুড়িয়ে নিলো কামিনী চৌধুরীর থেকে।আশমিন অমি আর আশিয়ানের থেকে ছাড়িয়ে নিলো কামিনী চৌধুরী কে। আরেকবার তাকে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো। নূর চুপ করে আশমিন কে দেখে যাচ্ছে। আজ আশমিন কে তার স্বাভাবিক লাগছে না।কামিনী চৌধুরী ছটফট করছে ছোটার জন্য। আশিয়ান কে বেঈমানের রক্ত বলে গালাগালি করছে।আশমিন তার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে তলপেটে পর পর তিন বার শু*ট করে দিলো। আশমিনের রক্ত লাল চোখ থেকে গড়িয়ে পরা পানি কামিনী চৌধুরীর কপালে এসে পরলো।সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কামিনী চৌধুরী কয়েক বার গুঙিয়ে সাথে সাথেই শান্ত হয়ে গেছে। আশমিন তার নিথর দেহ এখনো নিজের বুকে আগলে রেখেছে। বুক থেকে মাথা টা একটু আলগা করে কপালে চুমু খেয়ে আবার মাথা টা বুকে চেপে ধরে ধরা গলায় বলল,

— আমাকে কেন ভালবাসলে না আম্মু? একটু ভালবাসলে কি হতো? কেউ আমাকে কেন ভালবাসে না? আমি কি এতোই খারাপ বলো? আমি তো তোমাদের খুব ভালবেসেছিলাম।তাহলে আমাকে কেন তোমরা একটু ভালবাসা দিলে না। আমাকে কেন তোমার খু*নি হতে হলো আম্মু? যে হাত দিয়ে আমি তোমাকে খু*ন করেছি সে হাত আমি কিভাবে বয়ে বেরাবো? আমার বেচে থাকাকে কেন এমন যন্ত্রণাময় করে দিলে।
কামিনী চৌধুরীর নিস্তেজ দেহ নিয়েই ফ্লোরে বসে পরলো আশমিন। নূর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে দাঁড়িয়ে আছে। আমজাদ চৌধুরীর হাত কাপছে।অমি এসে তার কাছ থেকে বাবু কে নিয়ে নিলো।আশিয়ান অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে কামিনী চৌধুরীর নিথর দেহের দিকে।আমজাদ চৌধুরী আশমিনের বুক থেকে কামিনী চৌধুরী কে নিজের কাছে নিলেন।তার সারা মুখে আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে ডুকরে কেদে উঠলেন।

— তোমাকে এভাবে বুকে রাখা আমার স্বপ্ন ছিল কামিনী। আমি চেয়েছিলাম আমার বুকের উষ্ণতা তুমি উপভোগ করো।আমি তোমাকে বুকে নিয়েছি ঠিকই কিন্তু তুমি উপভোগ করছো না। তুমি কেন এমন বিনাশিনী হলে? আমার মায়াবিনী হয়ে কি বেচে থাকতে পারতে না! তুমি ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো? তোমার এই দেহে প্রাণ নেই ভাবতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমাকে কিসের শাস্তি দিলে কামিনী! আমি তো শুধু ভালবেসেছিলাম। একটুও ক্ষাদ রাখিনি আমার ভালবাসায়।তাহলে কেন?
নূর পাথর চোখে তাকিয়ে আছে আশমিনের দিকে। আশমিনের এক হাতে কামিনী চৌধুরীর হাত। আশমিন কে দেখে মনে হচ্ছে একটা প্রাণহীন দেহ বসে আছে। নূরের কানে শুধু একটা কথা ই বাজছে,,কেউ আমাকে কেন ভালবাসে না। তাহলে কি নূর আশমিন কে ভালবাসেনি? নূর কে অমি একহাতে ধরে রেখেছে।সানভি নিরবে চোখের পানি ফেলছে।আশমিনের জন্য তার বুকটা হুহু করে উঠছে।তার স্যার ভালো নেই।সত্যিই তাকে কেউ ভালবাসে না।সে ই শুধু বুক উজার করে সবাই কে ভালবেসে গেলো ।

ইট পাটকেল পর্ব ৩৩

(কিছু কথা বলি,,,আমি খুব অসুস্থ। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে গলা কান ফুলে খারাপ অবস্থা। এক কান বন্ধ হয়ে আছে। কাল সারারাত কান দিয়ে পানি বের হয়েছে।এখন কানে শুধু শো শো আওয়াজ হচ্ছে। ব্যথার কথা আর কি বলবো। আমি গল্পের এক পর্বে লিখেছি সুইচ টিপতেই উপর থেকে পানি পড়ে আগুন নিভে গেছে।এটা কি আসলেই অসম্ভব? বেশির ভাগ বিল্ডিংয়ে আগুন লাগলে অটোমেটিক এলার্ম বেজে পানি পড়া শুরু করে। গোডাওনে বিলাশবহুল রুম বানানো কোন ব্যপার? টাকা হলে সব সম্ভব। আপনাদের যদি মনে হয় অযুক্তিযুক্ত তাহলে আবার ও বলছি আমার অযুক্তিযুক্ত গল্প পরে মুল্যবান সময় নষ্ট করবেন না।আপনারা কটু কথা বললে আমার শুনতে খারাপ লাগে।যাই হোক ভালবাসা সবাইকে।কাল কে না দেয়ার জন্য দুঃখিত।)

ইট পাটকেল পর্ব ৩৫

2 COMMENTS

Comments are closed.