এই অবেলায় তুমি পর্ব ২৭

এই অবেলায় তুমি পর্ব ২৭
Sabihatul Sabha

লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি সাথে কানে,গলায় গহনা, দুই হাত ভর্তি চুড়ি,মুখে ভাড়ি মেকআপ। নূর আর মাহি বসে আছে।
একটু আগে ওদের ঠিক এক রকম ভাবে সাজিয়ে গেছে পার্লারের মেয়েরা।
মাহিঃ এখনো রাগ কমে নি….
নূর চুপচাপ অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহিঃ এত রাগ কেনো করছিস রুদ্র ভাইয়া খুবি ভালো ছেলে।
নূর অগ্নি দৃষ্টিতে মাহির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ এত ভালো হলে নিজেই করে নিতি।’

মাহিঃ এক মনে কি দুই জন কে জায়গা দেওয়া যায় পাগলি।
নূরঃ এত দিন তো রুদ্র ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্য পাগল ছিলো। হঠাৎ কাল ফায়াজ স্যারের প্রতি এত ভালোবাসা কোথায় থেকে আসলো।
মাহিঃ হঠাৎ কখন কার প্রতি ভালোবাসা জন্মায় কেউ বলতে পারে না।
নূরঃ তোদের এই ঝামেলায় আমাকে কেনো জরালি..?
[সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে একে একে সবাই বউ রেখে ওর কাছে আসছে। ও যখন জানতে চায় ওর কাছে কেনো বউয়ের জিনিস..?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তখন ওর বড় আম্মু ওকে সব খোলে বলে৷ একে একে সবাই ইমোশনাল ব্লেকমেইল শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে বিয়েতে রাজি হয়৷ ও চায় না ওর মতো ওর বোনটা ও একি কষ্ট পাক। ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর কষ্টটা যে খুবি বাজে।]
হঠাৎ বাহির থেকে একটা শব্দ আসলো বর এসেছে সাথে সাথে মাহির চোখ দিয়ে টপটপ জল পরলো।
নূর উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো, ‘ আপু তুই কান্না করছিস কেনো..?

মাহি মুচকি হেসে চোখের জল মুছে বললো,’ এটা যে সুখের কান্না। ঠিক হয়ে বস। এখনি নিতে আসবে।’
নূর ভাবনায় পরে গেলো। এটা কি আসলেই সুখের কান্না..? আপুকে দেখে তো এত দিন মনে হয় নি রুদ্র ভাইয়া কে ভালোবাসে না! সব সময় মনে হয়েছে আপু খুব খুশি আর নিজের বিয়ের সব কিছু আপু নিজে কিনেছে। ভাইয়ার বিয়ের পাঞ্জাবিটা ও আপু পছন্দ করে কিনেছে। কাল রাতেও আমি আপুর চোখে ভাইয়ার জন্য অন্য কিছু দেখেছি। রাতের মধ্যে কি হলো যে ফায়াজ স্যারকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলো। ওফ্ফ আর কিছু ভাবতে পারছি না। সব কিছু কেমন যেনো এক জায়গায় এসে আবার ঘুরে যাচ্ছে।

দরজার ঠকঠক আওয়াজে ভাবনা থেকে বের হলো নূর।
আনিতা বেগম এসেছেন সাথে শুভ্রতা, আদিবা,রুহি,ইরিন।
আদিবাঃ নূর তোমার বর কিন্তু অনেক কিপটে। আমরা এত কিছু করলাম। এত কষ্ট করলাম কিন্তু আমাদের এভাবে নিরাশ করলো।

ইরিনঃ তবে যাই বলেন ভাবি মাহি আপুর বর তো চাওয়ার আগেই দিতে রেডি।আজ একদমি স্যার মনে হয়নি একদম পারফেক্ট জিজু মনে হয়েছে।
নূর রেগে বলে উঠলো,’ শুধু মাত্র তোমাদের জন্য আমি বড় বোনের বিয়েতে মজা করতে পারছি না। একটা মাত্র বোন ছিলো তাও একটু মজা করতে পারলাম না।’
শুভ্রতাঃ আহারে বেচারি, একদম মন খারাপ করো না। আজ বাদে কাল তো আবার আসবে। তখন না হয় তুমি বাকি পকেট খালি করো৷

ইরিনঃ অন্যের জামাইর পকেট খালি করার ধান্দা মাথা থেকে টুপ করে ঝেড়ে ফেল নূর।তোর জামাই তো একদম কিপটে, বউয়ের একটা মাত্র বান্ধবী ছিলাম। সব দোষ ওই কানা চশমা টার।
মাহিঃ এই ইরিন কানা চশমা কে..?
ইরিনঃ হিহিহি কেউ না আপু।

মিমঃ আমি এই সব মানবো না। একদমি মানবো না। কোনো বিয়ে হবে না। আমি আমার আপুকে এমন কিপটে ছেলের কাছে বিয়ে দিবো না।
রুদ্র অসহায়ের মতো নিজের একটা মাত্র আদরের ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
মিমঃ এভাবে তাকিয়ে কি বুঝাতে চাও..? তুমি ফকির।
রুদ্র উপর নিচ মাথা নেড়ে বুঝালো সে ফকির।
মিম রাগে গজগজ করে বললো, ‘ তাহলে চৌধুরী বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করতে এসেছো কেনো..?
নীল বলে উঠলো,’ মিম তাহলে তোর ভাই কোন বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করতে যাওয়া উচিৎ..?
মিমঃ তুই চুপ থাক!

নীল বুকে হাত দিয়ে দেখলো এখনো বেঁচে আছে কি না। এত বড় কথা। হাঁটুর সামান মেয়ে ওকে তুই বললো। আল্লাহ নীল কালার বিশ দাও খেয়ে উপরে চলে যাই। তারাতাড়ি আশেপাশে তাকালো কেউ দেখেছে কি না। পাশেই কয়েক টা মেয়ে মিটিমিটি হাসছে।
আবিরঃ মিম এভাবে কথা বলে না বুনোটা আমার যাও। নূর আর মাহিকে স্টেজের মধ্যে নিয়ে আসতে বলো।
মিমঃ একদম না শুধু মাহি আপু আসবে আর কেউ না। ফায়াজ জিজুর কাছ থেকে দশ হাজার নেওয়া শেষ আর নিজের ভা.. বলতেও রাগ হচ্ছে। এখনো একটা পয়সা দিলো না। আবার বলছে সে নাকি ফকির!
রুদ্রঃ ভাইয়ার পকেট তো খালি। সব টাকা নীলের কাছে।

মিমঃ বিয়ে তোমার আর টাকা নীল… নীলের বুক ধুকপুক করছে এই মেয়েকি আবার সবার সামনে ওর নাম নিবে। শেষ নীল আজ তোর মান সম্মান সব শেষ করে দিলো এই পিচ্চি মেয়ে।
নাহ নীলের কল্পনায় এক গ্লাস পানি ঢেলে মিম বললো,’ বিয়ে তোমার আর টাকা নীল ভাইয়ার কাছে। ওকে বিয়ে করে বউটাও নীল ভাইয়াকে দিয়ে দিও।বলেই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো।
নীল অস্বস্তিতে আসতে করে কেটে পরলো। ছি! বড় ভাইয়ের বউ ও নিয়ে কি করবে??। এই মেয়ে আদর পেয়ে দিন দিন বাঁদর হচ্ছে। এর একটা ব্যাবস্থা করতে হবে। কিন্তু হরিণ কোথায়..?

আনিতা বেগম দুই মেয়ের সামনে গিয়ে চোখ দুটো জলে ভরে উঠলো। কত ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন মেয়ে দুটো কে৷ নূর তো চোখের সামনেই থাকবে কিন্তু মাহি৷ মায়ের মন হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো। ফায়াজের আম্মু নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসবে তো? আগলে রাখবে তো?। কাল ফায়াজের আম্মুর কথার ধরন উনার পছন্দ হয়নি। ফায়াজ ছেলেটা নিসন্দেহে ভালো কিন্তু ওর আম্মু!।
মাহি আর নূর স্টেজে বসে আছে।

রুদ্র বার বার নূরের দিকে তাকাচ্ছে।
মাহি রুদ্রের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মনে মনে বলে উঠলো,’ মনের কতটা কাছে এসেছিলে তুমি।সেখানে দূরত্তের মাপটা দিতে পারিনি আমি। এতটাই ভালোবেসে ছিলাম আমি। যে ভালোবাসা আজকে পূর্ণতা না পেয়ে অপূর্ণতায় ভুগছি আমি।’

ফায়াজ মাহির দিকে তাকিয়ে আছে। ইসস একটু পরে এই মিষ্টি মেয়েটা সারা জীবনের জন্য ওর হয়ে যাবে। আর কোনো বাঁধা আসবে না। লাল টকটকে বেনারসি পরে মেয়েটা ওর ঘরটা আলোয় আলোয় ছড়িয়ে দিবে। আজ যেই চোখে কাউকে না পাওয়ার কষ্ট ফুটে আছে।হাজারো জল এসে ভিড় জমাচ্ছে।সেই চোখ একদিন ওকে পাওয়ার জন্য এমন তৃষ্ণার্থ হয়ে উঠবে। এই চোখে ও কখনো জল আসতে দিবে না। খুব যত্ন করে আগলে রাখবে এই মেয়েটিকে।
বিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে।

মাহিকে কবুল বলতে বললে সাথে সাথেই কবুল বলে দিয়েছে। নূরকে কবুল বলতে বলছে অনেকক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু কিছুই বলছে না৷ শুয়ে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহি হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘ বলে দে নূর।’
নূরঃ কবুল!
আলহামদুলিল্লাহ বিয়ের কাজ শেষ।
এখন বিদায় পালা,

আনিতা বেগম মাহিকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করলো। নূর ও বোনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। কিন্তু মাহি কাঁদেনি একটু ও কাঁদেনি। নূর নিজের বোনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মাহি নূরকে ছেড়েই গাড়িতে উঠে গেলো। কিছুক্ষনের মধ্যে গাড়ি চলে গেলো সবার নজরের বাহিরে।
রাতের দশ-টা না বাজতে রুদ্র রুমে যাওয়ার জন্য হাসফাস করা শুরু করলো।

রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবির মুচকি মুচকি হাসছে। আহারে বেচারা বউয়ের কাছে যাওয়ার জন্য কত কিছুই না করছে। কিন্তু বন্ধুর দল ওকে উঠতেই দিচ্ছে না। আজ বিয়ের রাত আজ তো একটু দেরি করে রুমে যেতে হবে।
কিন্তু আবির কিছু বলতেও পারছে না। নূর নিজের ছোটো বোন। মেয়েটা নূর না হলে এতক্ষনে রুদ্রের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যেতো।
যাক লাস্ট পর্যায়ে রুদ্র ছাড়া পেলো।
নিজের রুমের সামনে এসে বাঁধলো আরেক ঝামেলা।সব কাজিনরা রুদ্রের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

রুদ্রঃ কি চাই এখানে..?
শুভ্রতাঃ এত তারা কিসের দেবরজী।
রুদ্র দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো,’ ভাবি তুমি ও।’
শুভ্রতাঃ এত কথা শুনতে চাই না। আমাদের সবাইকে খুশি করো না হলে বউ পাবে না।
মিমঃ ভাই এবার কোনো চালাকি হবে না।
নীলঃ এই তুই এত পকপক করিস কেনো। চুপ থাক।
মিমঃ চামচামি কম করো নীল ভাইয়া।
ইরিন সহ বাকি সবাই হেঁসে উঠলো।
নীলঃ হরিণ তুমিও হাসছো।

ইরিনঃ এত কিপটামু করেন কেনো…? জিজু তো আর প্রতি দিন বিয়ে করবে না।
নীল আর কথা না বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু না ওরা দশ হাজারের কমে নিবে না। বাধ্য হয়ে দশ হাজার দিয়ে দিলো।
টাকা হাতে নিয়ে শুভ্রতা,আদিবা,মিম,রুহি সবাই মিটমিট করে হাসছে।
রুদ্রঃ ব্যাপার কি নীল আমার শালিকা একবার বলতেই দিয়ে দিলি।আর ওরা সারা দিন এত এত ঝামেলা করলো তাও দিলি না।

নীল আমতা আমতা করে বলে উঠলো, ‘ সারাদিন তো অনেক ঘুরালাম তাই ভাবলাম আর কতো দেওয়া যেহেতু লাগবে দিয়েই দেই।
সবাই এক সাথে বলে উঠলো, ” ওওহহহ আচ্ছা ”
ইরিন লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। কে বলেছিলো নীল কে বলতে। এখন সবাই নিশ্চয়ই উল্টো পাল্টা ভাবছে।
নীলঃ ভাই নতুন বউ রেখে বাইরে কি করো ভাই..?

সবাই টাকা পেয়ে খুশিতে গদোগদো হয়ে চলে গেছে।
রুদ্র রুমে ঢুকে দেখে রুমে কেউ নেই ,ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে ওখানে ও নেই, ওয়াশরুমে দেখলো তাও নেই। তাহলে বউ গেলো কোথায়..? ওরা কি তাহলে আমাকে বোকা বানালো নাকি বউ নিজেই পালিয়েছ রুম থেকে …?

এই অবেলায় তুমি পর্ব ২৬

বউ নিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফায়াজ।
ফায়াজের আম্মু রোকেয়া বেগম ছেলের বউকে সব নিয়ম মেনে ঘরে প্রবেশ করালেন। ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই রোকেয়া বেগম শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,” দাঁড়াও নতুন বউ!…

এই অবেলায় তুমি পর্ব ২৮