এই অবেলায় তুমি পর্ব ৪০

এই অবেলায় তুমি পর্ব ৪০
Sabihatul Sabha

নূর ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। রাতের মৃদু বাতাসে খোঁপা করা চুল ছেড়ে দিলো। কোমর পর্যন্ত চুল ছড়িয়ে পরলো।
রুদ্র রুমে প্রবেশ করে কাউকে না পেয়ে আবার আহত হলো আজ-ও কি নূর পালিয়েছে?? কথাটা মনে হতেই বুকটা ভার হয়ে উঠলো। এত দিনেও কি নূরের মনে একটু জায়গা করে নিতে পারেনি? আসলেই সে ব্যার্থ।
মন খারাপ করে ফুলে ফুলে সাজানো রুম টার দিকে একবার তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় ব্যালকনিতে একটা ছায়া দেখে থমকে গেলো। ঘার ঘুরিয়ে ছায়াটা ভালো করে দেখে ঠোঁটের কোনে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো।

রুদ্র নিঃশব্দে গিয়ে নূরের পিছনে দাঁড়ালো। নূর টের পেলো তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মিষ্টি একটা পুরুষালি ঘ্রাণ এসে নাকে ঠেকলো। এই ঘ্রানটা খুব পরিচিত নূরের। এই পারফিউম টা তার বর সব সময় ব্যাবহার করে।
নূর পেছন ফিরতে গিয়ে রুদ্রের সাথে ধাক্কা খেলো। নূর সরে আসতে নিলে রুদ্র নূরের কোমর জড়িয়ে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসলো। নূর লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
রুমের লাইটের আলো এসে ব্যালকনিতে পরছে। নূরের লজ্জা মাখা মুখটা রুদ্রের কাছে খুব আকর্ষণীয় লাগছে।
নূরের চুল গুলো বাতাসে এসে চোখে মুখে আঁচড়ে পরছে। রুদ্র ফুঁ দিয়ে চুল গুলো উড়িয়ে দিলো।
নূর হালকা কেঁপে উঠল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রুদ্র নূরের দিকে তাকিয়ে বলে,’ আজ রাতটা আমাকে দিবে নূর..?
নূর সাথে সাথে ফ্রিজড হয়ে যায়। কোনো কথা বলতে পারছে না।
রুদ্র আবার বলে,’ নিরবতা কি সম্মতির লক্ষন।’
নূর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো,’ শুধু আজ নয় আমি সারাজীবনের জন্য আপনাতে মিশে যেতে চাই।’
রুদ্র খুশিতে নূরকে জড়িয়ে ধরে, নাক, মুখ ডুবিয়ে দেয় নূরের ঘাড়ে।
রুদ্রঃ শাড়ি পড়লে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে নূর। কাল থেকে শুধু শাড়ি পড়বে।’

নূরকে কোলে নিয়ে রুমে চলে যায় (তারপর কি হইছে🧐 সত্যি আমি জানিনা🥴🤭)
সকালে নীল নিচে নেমে জোর পূর্বক হাসি ঝুলিয়ে ফাইজার দিকে তাকালো।
নীল মনে মনে ভাবছে,’ এই মেয়ে এই সময় এখানে কেনো??’
ফাইজাঃ ওফ্ফ কেমন আছো হ্যান্ডসাম বয়??
মাহি ফাইজার কথা বলার স্টাইল দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
ইরিন মাহির পাশে বসে আছে। এই ঘা ঘেঁষে ঘেঁষে কথা বলা মেয়েটাকে একদম পছন্দ না ইরিনের।
নীলঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি??

ফাইজাঃ ভালো.. কাল রাতে এত এত ফোন দিলাম ধরলে না যে??
নীল রাগে মন চাচ্ছে এই মেয়ের গালে ঠাস ঠাস করে তবলা বাজাতে।
নীল কথা পাল্টানোর জন্য বললো,’ কখন আসলে??’
ফাইজা খুব ভালো করেই বুঝলো নীল কথা এরিয়ে যাচ্ছে।
ফাইজাঃ এই তো একটু আগে।
নীলঃ ওহ্হ।
ফাইজাঃ সবাই একটা গল্প শুনবে??
মাহিঃ হুম বলো??
ফািজা নীলের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো??’
নীল ইরিনের পাশে বসলো।

ফাইজা প্রথম থেকে শেষ অবদ্ধি নীল, রিফাত ভাই আর ওর কাহিনিটা বললো।
কাহিনি শেষ হতেই নীল ভয়ে খুক খুক করে কেশে উঠলো ।
মাহি আর ইরিন হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। ওদের ও বুঝা হয়ে গেছে এটা কার জীবন কাহিনি আর ছেলেটা কে।
ফাইজা হেলান দিয়ে সোফায় বসে আহত কন্ঠে বললো,’ জীবনের সেরা বিনোদন ছিলো এটা।’
এভাবে হাসি খুশিতে কেটে গেলো আরো অনেক দিন।
ইদানীং নূর খেয়াল করছে আদিবা ঠিক নেই। কেমন যেনো অন্য মনস্ক হয়ে থাকে। কেউ একটা কথা বললে একটু পর ভুলে যাচ্ছে। সারাক্ষণ কি যেনো চিন্তা করে।

কয়েকদিন আগে নূর রুহি আর ইরিনের পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজকে রেজাল্ট দিবে।
নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছে৷
হঠাৎ নূরের বড় আব্বু বললো,’ আদির খবর পেয়েছো?’
রুহি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
উনি আবার বললেন,’ মেঝো তোর ছেলেটাকে আর মানুষ বানাতে পাড়লি না। ‘
মেঝোঃ ভাই সে কোথায় আছে আমি জানার চেষ্টা করেছি। আবিরও অনেক চেষ্টা করেছে৷ আমার মনে হয় আবির জানে কিন্তু কিছু বলছে না।

আবির খাওয়া বন্ধ করে ওর বাবার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো।
আবিরঃ ওকে তোমার ছেলে বলতে লজ্জা হয়না আব্বু…? প্রেম করে একজন কে ঠকিয়ে তারি বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করলো আবার এখন এই মেয়েকে ও ভালো লাগছে না। এমন ভাইকে তো গুলি করে মেরে ফেলা উচিত। তোমাদের অতিরিক্ত আদরে ও এমন হয়েছে বলে কি তোমার মনে হয় না।??
~কি বলতে চাচ্ছো সোজাসুজি বলো? এটা তোমার কাজের জায়গা নয় যে পেঁচিয়ে ঘুরিয়ে কথা বলবে।
আবিরঃ তোমার ছেলে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছে, বলে হাত ধুয়ে উঠে চলে গেলো।
সবার মুখ থতমত হয়ে আছে।

রুহি মুচকি হাসি দিলো। সে তো জানতই খুব তারাতারি এই দিনের মুখোমুখি হতে হবে। যার জীবন নরক বানাতে চেয়ে ছিলো তার জীবন আজ সুখের শেষ নেই। কিন্তু আজ ওর জীবন অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। নিজের পাপের শাস্তি সে পেয়েছে খুব জঘন্য ভাবে পেয়েছে।
রাতে ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে গেলো রুহি। সবাই হাজার বলেও আটকাতে পারেনি। আর কি বলেই বা আটকাবে।

সময় চলে যাচ্ছে নিজের মতো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পালটে গেছে কয়েকটি জীবন।
নূর এখন রুদ্রকে খুব ভালোবাসে। অতীত ভুলে নিজের স্বামীর সাথে খুব ভালো আছে।
নীল আর ইরিন সারাদিন ঝগড়া লেগে থাকে।তবে নীরবে একজন আরেক জনকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
আদিবা আর আবিরের ভালোবাসার মধ্যেও কোনো ত্রুটি নেই। খুব ভালো যাচ্ছে ওদের জীবন। তবে আবির খেয়াল করছে কয়েক দিন ধরে আদিবা কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে।

শুভ্রতা ভাবির এখন পাঁচ মাস চলছে। জিসান ভাই এখন বেশি রাত বাহিরে থাকে না। কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাসায় চলে আশে। ভাবির খুব খেয়াল রাখে। এতে ভাবি এখন খুব খুশি।
রুহি আদির ডিভোর্স পেপারে এখনো সাইন করেনি। খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছে। পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।
কারো জীবন থেমে নেই। কারো ভালো কারো খারাপ চলছে। তবে সারাজীবন খারাপ চলবে না কোনো একদিন হয়তো হারানো হাসিটা আবার ফিরে আসবে। সেই ফিরে আশার অপেক্ষার প্রহর গুনছে রুহি। রুহি আগের মতো নেই নূরের সাথে কথা বলতে এখন লজ্জা পায়। এখন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে নিজের বোনের মতো বেস্ট ফ্রেন্ড কে ঠকিয়ে আমি ভালো ছিলাম তো?? ও আমাকে ছেড়ে দিলেও প্রকৃতি ঠিক তার ঋণ শুধ করেছে।

আদিবা সবার নজর ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো।
সিএনজি স্টেশনে এসে একটা লোককে একটা ঠিকানা দেখালো নিয়ে যেতে। গাড়ি চলছে আর আদিবার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
গাড়ি গিয়ে থামলো একটা ভাংচুর পুড়া বাড়ির সামনে।
~আফা এটাই সেই ঠিকানা।

আদিবা শুষ্ক একটা ঢুক গিলে বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,’ ঠিক আছে আপনি ভাড়া রেখে চলে জান।
~ আফা জায়গাটা ভালা না। আফনে একা একটা মেয়ে মানুষ আমি কেমনে একা রেখে যা-ই।
আদিবা এত এত চিন্তার মধ্যে হেসে দিলো।
আদিবাঃ যেখানে নিজেই জীবন অন্যের হাতে। সেখানে ভয় পাওয়া বোকামি। আপনি চলে জান ভাই।
লোকটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে আদিবার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো গাড়ি নিয়ে।
টুং করে আরেকটা মেসেজ আসলো মোবাইলে।

আদিবা মেসেজ চেক করে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
বাড়িটা বাহিরে ভাংচুর পুড়া হলেও ভেতরটা অতোটা ভাংচুর না।
আবারও মেসেজ আসলো।
মেসেজ অনুযায়ী আদিবা চেয়ারে বসে পরলো।
সাথে সাথে আশেপাশে থেকে কয়েকটা লোক এসে ওর হাত চেয়ারের সাথে বেঁধে দিলো।
আসতে ধীরে ধীরে একজন লোক ওর দিকে শয়তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলো।
লোকটিকে দেখে মুখ থেকে বেড়িয়ে আসলো” মামা!!”

লোকটা ওর সামনের চেয়ারে বসে বি*শ্রী এক হাসি দিয়ে বললো, ‘ বাহ্ মনে আছে তাইলে।’
আদিবা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছে না নিজের মামা ওকে এতদিন মানুষিক রোগী বানিয়ে দিচ্ছিলো!!
আদিবাঃ মামা আপনি তাহলে…
মামাঃ কেন সামনে দেইখা চিনবার পারতাছোস না? না-কি পুলিশ নাগর পাইয়া কয়দিন বড়লোক পুলা দেইখা চোখে সরিষার চশমা পড়ছোস?

আদিবার চোখ জ্বালা ধরে উঠলো। জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো। জার কাছে ছোটো থেকে বড় হলো। হয়তো কষ্ট দিয়েছে তাতে কি শিয়াল কুকুরে ছিঁড়ে খাওয়া থেকে তো আগলে রেখে ছিলো। সেই লোক ওর প্রিয় মানুষটিকে শেষ করার পরিকল্পনা করছে।
আদিবার সামনে তুবড়ি বাজাতেই টপ করে গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো জল।
মামাঃ কি ভাবছিস? এত দিন নিজে খাইয়ে পেলে বড় করলাম আর আজ সেই মামু কি-না বুকে ছুরি মারতে যাচ্ছি তাই তো??
হিহি তাহলে শুন আমি কোনো কালেই তোর মামা ছিলাম না।
আদিবা চমকে তাকালো।

~তোর বাবার সব থেকে প্রিয় বন্ধু ছিলাম আমি। খুব বেশি বিশ্বাস করতো আমাকে। কিন্তু আমার লোভ ছিলো তোর বাবার সম্পত্তির উপর।তোর বাবার সব কিছুই আমার জানা ছিলো। যেহেতু তোর বাবা উকিলদের সব থেকে বড় উকিল ছিলো তাই ভাবলাম শা*লা কে উড়িয়ে দেই সব দোষ গিয়ে পরবে তার বিরোধী দলের উপর। তাই গাড়ির ব্রেক ফেইল করে রেখে ছিলো। আর ভাগ্য কমে সেই দিন তুই বাসায় রয়ে গেলি তাই বেঁচে গিয়েছিস। ওদের মৃত্যুর পর তোকে মেরে ফেলার প্লেন করি।

পথের কাটা রাখতে নেই কিন্তু তার আগেই শুনতে পাই হারা**ম*জা*দা তোর নামে সব লেখে গেছে। তোর ২২বছর হলে তখন তোর বিয়ে দেওয়ার কথা লেখা আছে। তোর অর্ধেক সম্পত্তির মালিক হবে তোর স্বামী। টাকার লোভ আবার আমি সামলাতে পারি না। ছোটো থেকে ছেলেকে দূরে দূরে রেখেছি। এখানের সবাই জানে আমার কোনো ছেলে নেই, কিন্তু আমাদের একটা ছেলে আছে ও আমাদের সাথে থাকে না।

ওকে লাগিয়ে দিলাম তোর পিছে। কিন্তু ওই হাদা*রাম তো তোর রূপ দেখে প্রেমে পড়ে গেলো। তাতে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না। আমার কাজ আরো সহজ হয়ে গিয়ে ছিলো কিন্তু মাঝ খানে ওই চেংরা পুলা আইসা সব প্লেনে জল ঢেলে দিলো। গাছে পানি দিলাম, যত্ন করলাম আমি। আর ফল খাবে অন্য কেউ তাতো আমি বসে বসে দেখতে পারি না। এই নে এখানে সাইন কর.!

আদিবা ঘৃনায়, ক্ষো*ভে চোখ লাল করে তাকালো সামনের অমানুষ, সাইকো লোকটার দিকে। ওর মা বাবার খুনির দিকে। যদি পারতো এখন এই লোকের জীবন নিয়ে নিতো নিজের হাতে।
মামাঃ এভাবে তাকিয়ে কি দেখোস? কিছুই করতে পারবি না। কেউ আসবে না এখানে। তুই যদি তোর পিয়ারার স্বামীকে বাঁচাতে চাস তাহলে সাইন করে দে। তা না হলে তোর বাবা মা’র মতো বলেই বি*শ্রী হাসিতে ভাংচুর ঘর কেঁপে কেঁপে উঠল। সাথে আদিবার বুক টাও কেঁপে উঠল অজানা ভয়ে।

হাজার কষ্ট, রাগ,ক্ষো*ব মনে রেখে হাত বাড়িয়ে কলমটা নিলো। ও জানে সাইন করার পর ওকেও খুব যত্ন করে এই লোক ওর বাবা মা-র কাছে পাঠিয়ে দিবে। আবিরের মুখটা বেসে উঠলো চোখের সামনে।
কলম ধরে পেপারের দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরে উঠলো। চোখ ঝাপসা হয়ে উঠলো। পিছন থেকে কানে বেসে আসলো একটা সুর ” আব্বা বার বার কল দিয়ে ডেকে আনার কারন টা কি এমন জায়গায়??”
তারপর আর কিছুই কানে আসলো না। তার আগেই আদিবা জ্ঞান হারায়।
চোখের উপর জল পরতে পিটপিট করে চোখ খোলে আদিবা। সামনে পরিচিত একটা মুখ দেখে বুঝার চেষ্টা করে এই ছেলে এখানে কেনো??..

এই অবেলায় তুমি পর্ব ৩৯

~আপনি ঠিক আছেন তো?? বলেই পিছনে ওর মামার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় ছেলেটা।
আদিবা এখনো ফ্যাঁল ফ্যাঁল করে তাকিয়ে আছে।
ছেলেটা আদিবার তাকানোর মানে বুঝে একটু হেসে বললো,’ আমি এই কু*লা*ঙ্গার, লোকের ছেলে।
আদিবার সাথে আজ কি হচ্ছে একের পর এক ঝটকা খাচ্ছে।

এই অবেলায় তুমি শেষ পর্ব