এই অবেলায় তুমি পর্ব ২৯

এই অবেলায় তুমি পর্ব ২৯
Sabihatul Sabha

খুব সকালে মাহির ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলেই সামনে ফায়াজের মুখটা দেখে চমকে উঠলো। আসতে আসতে সব চোখের সামনে ভেসে উঠলো। শুয়া থেকে উঠে বসতে নিলে চোখ আটকে যায় ফায়াজের এলোমেলো চুলে। চুলগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। মুখটা কেমন ফেঁকাসে হয়ে আছে। মনে হয় রাতে ঘুমাতে পারেনি তাই এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

হঠাৎ রুদ্রের মুখটা ভেসে উঠলো। বুকের ভেতর ঝড় তুফান শুরু হয়ে গেলো। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসলো কোনো রকম শুস্ক একটা ঢুক গিলে মাহি বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতে লাগলো। তাও যেনো চোখ বাঁধ মানছে না। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমটা ভালো করে চোখ বোলালো। রুমের সাথেই খুব সুন্দর একটা ব্যালকনি মাহি গুটিগুটি পায়ে ব্যালকনির সামনে গিয়ে ধারালো। ব্যালনিতে খুব সুন্দর কয়েক ধরনের ফুলের গাছ। গাছে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটে আছে। মাহি ফুল বেশি একটা পছন্দ করে না। তবে নূর খুব পছন্দ করে। এখন যদি এই ব্যালকনিটা ওর চোখে পড়তো খুশিতে পাগল প্রায় হয়ে যেতো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাহি আকাশের দিকে তাকালো। আকাশের কালো চাদরটা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। পূর্ব আকাশে সোনালী সূর্য আগমনের জন্য অপেক্ষা করছে। রাস্তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে দেখলো এক দুইটা গাড়ি আসছে আবার অন্য গাড়ি চলে যাচ্ছে। একদম নির্জন-শান্ত কোলাহলমুক্ত হয়ে আছে চারপাশ। সকালের হালকা মিষ্টি বাতাস এসে অশান্ত মনকে শান্ত করে দিয়ে যাচ্ছে।
মাহি রুমে এসে ওযু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো। ফায়াজ এখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

বুকের উপর ভাড়ি কিছু অনুভব হতেই রুদ্রের ঘুম ভেঙে যায়। আর মুর ভেঙে ভ্রু কুঁচকে নিজের বুকের দিকে তাকালো সামনে এটা কি!!
ভালো করে তাকিয়ে দেখে “পা” সাদা ধবধবে ফর্সা এক পা। প্লাজু অনেকটা উপরে উঠে আছে।
রুদ্র উঠে বসলো। নিজের শান্ত দৃষ্টি বিছানার মধ্যে ফেললো। সাথে সাথে চোখ ছানাপানা। কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।

নূরের মাথা রুদ্রের পায়ের কাছে। এক হাত খাট থেকে নিচের দিকে ঝুলে আছে। এক পা রুদ্রের বুকের উপর ছিলো আরেক পা বালিশের মধ্যে। চুল এলোমেলো, গায়ের কাপড়ের ঠিক নেই।রুদ্র হা করে তাকিয়ে আছে। এত বড় মেয়ে এভাবে ঘুমায়! পাঁচ বছরের বাচ্চাগুলো ও খুব পরিপাটি হয়ে ঘুমায়, ঘুম থেকে উঠে। আর সে তো কলেজে পড়া মেয়ে।
রুদ্র নিজের হাতটা নূরের মুখের দিকে এগিয়ে নিলো।ধুকপুক ধুকপুক করে বুকের সেই পরিচিত কাঁপুনি ক্রমশ বেড়েই চলছে।চুলগুলো মুখ থেকে সরাতেই খুবই অস্বাভাবিক ভাবে হার্ট বিট করছে।নূরের ঘুমন্ত মুখটা খুবই মায়াবী লাগছে। রুদ্র আসতে আসতে নূরের মুখের উপর ঝুঁকে আছে। নূরের কপালে গভীর চুম্বন একে দিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো রুদ্র।

শাড়ি পরতে গিয়ে বার বার রেগে যাচ্ছে মাহি।শাড়িটার কুঁচি তুলছে কিন্তু কুঁচি ঠিক করে উঠছে না। কুঁচিটা ধরার জন্য আরেক জন দরকার। রেগেমেগে ফায়াজের দিকে তাকালো। এই লোক কি সারা রাত ঘুমায়নি৷ চো*র পাহাড়া দিয়েছে৷ পরে পরে না ঘুমিয়ে ওকে তো একটু সাহায্য করতে পারে। কখন জানি আবার কেউ এসে দরজায় কড়া নাড়া শুরু করে। মন তো চাচ্ছে এক জগ পানি নিয়ে উপরে ঢেলে দিতে।
আবার চেষ্টা করলো একটা একটা করে কুঁচি তুললো এখন নিচে কুঁচি গুলোকে সুন্দর করে বাজ করে দিলেই হয়ে যেতো।ওর ভাবনার মাঝেই কেউ হাঁটু গেড়ে বসে কুঁচিতে হাত দিলো।

মাহির শ্বাস যেনো আটকে আসছে ওর পায়ের কাছে ফায়াজ হাঁটু গেড়ে বসে আছে।
ফায়াজঃ নিজের সমস্যা মুখ ফোটে বলতে হয়। হেল্প লাগলে চেয়ে নিতে হয়। সবাই আমার মতো দয়াবান না যে নিজ থেকে এসে করে দিবে।ফায়াজের কথা শেষ হতেই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলে কেউ ডেকে উঠলো।
ফায়াজ দাঁড়িয়ে মাহিকে ভালো করে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত এক নজর দেখে গিয়ে দরজা খোলে দিলো।
রুমের দরজা খোলতেই কেউ বলে উঠলো,’ ভাই সত্যি সত্যিই দরজা খোলে দিলে। আমি তো ভেবে রেখে ছিলাম মনে হয় এক সপ্তাহ ও এই রুমের দরজা খোলবে না। তুমি আমার ভাই হয়ে এতো নিরামিষ। আমি তো দুি সপ্তাহ ও দরজা খুলতে দিবো না আমার জামাই কে। বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসা শুরু করলো।

ফায়াজ বিরবির করে বললো,’ এই বেয়াদব মেয়ে আর ভালো হলো না।’
~কিছু বললে ভাই। আমি কি সিরিয়াস টাইমে চলে আসছি। ইসস আরেকটু পড়ে আসা দরকার ছিলো তোমাদের…
ফায়াজঃ ফাইজা তুই কি এখান থেকে যাবি নাকি আমার হাতের কয়েকটা খাবি..?
মেয়েটা ফায়াজকে আর কিছু না বলে সাইড কাটিয়ে রুমে ঢুকে গেলো। মাহির সামনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে মাহিকে দেখা শুরু করলো।

ফাইজাঃ ওফ্ফ কি হট ভাবি! আমি কেনো ছেলে হলাম না! মেয়ে হয়েও ইয়া বড় ক্রাশ খাইছি তোমার উপর। ছেলে হইলে নির্ঘাত ভাই কিছু করার আগে আমি তোমাকে নিয়ে পালাই তাম।
মাহি ড্যাবড্যাব করে সামনের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। চিনা নেই জানা নেই মেয়েটা এইগুলো কি বলছে।
মেয়েটা আবার বলা শুরু করলো,’ আমি হলাম তোমার এক মাত্র ননদী ফাইজা।বাকি পরিচয় পরে বলবো আগে চলো মামী মা তোমাকে নিয়ে নিচে যেতে বলেছে।
মাহি ফায়াজের দিকে তাকালো। ফায়াজ চোখের ইশারায় বললো ওর সাথে যেতে।বলেই ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
ফাইজা মাহির বেজা চুলের দিকে ইশারা করে বললো,’ ভাবি রাতে বুঝি ভালো ঘুম হয়নি!..বলেই মিটিমিটি হাসা শুরু করলো।

মাহি প্রথমে বুঝতে পারলো না।ফাইজার দৃষ্টি খেয়াল করে নিজের দিকে তাকিয়ে বুজলো এই বজ্জাত মেয়ে ওর বেজা চুলের দিকে ইশারা করে হাসছে।মাহি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফাইজাঃ ওফ্ফ ভাবি লজ্জা পেলে না তোমাকে মারাত্মক সুন্দরী লাগে। এখন লজ্জায় লাল নীল না হয়ে নিচে চলো। পড়ে দেখা যাবে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। দু চারটা পাপ্পি তোমার গালে পড়ে যাবে।
মাহি ফিসফিসে বললো,’ তুমি যা ভাবছো তেমন কিছু না। ‘

মাহির কথা শুনে ফাইজা খিলখিল করে হেসে বলে উঠলো,’ তাহলে কেমন কিছু বলো শুনি..?
বাড়িতে আজ বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাড়ির সামনে রান্নার আয়োজন চলছে। মহিলারা রান্নার সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছে।
ফাইজা হাটছে আর মাহিকে বলছে,’ জানো ভাবি বড় মামীর খুব শখ ছিলো ফায়াজ ভাইয়ার বিয়েতে অনেক বড় আয়োজন করবে। কিন্তু ভাই তো মামীর আশায় জল ঢেলে দিলো মামী প্রথম খুব মন খারাপ করে ছিলো। পরে মামা বুঝালো বিয়ের পরের দিন না হয় আমরা অনুষ্ঠান করবো। তারপর মামী একটু শান্ত হয়ে ছিলো। আজকে মামী অনেক মানুষ দাওয়াত করেছে।

মাহির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ওর জন্য ফায়াজ স্যারের আম্মু কষ্ট পেয়েছে এটা ভাবতেই বিষন্নতা ঘিরে ধরলো ওকে।
মাহিঃ তুমি কি ফায়াজ স্যারের আপন বোন..?
ফাইজার মুখটা ইয়া বড় করে বললো,’ এটা কি বলো ভাবি তুমি এটাও জানোনা ফায়াজ ভাইয়ার কোনো ভাই বোন নেই। তোমরা না ভালোবেসে বিয়ে করেছো!? আর ভাইয়া বুঝি তোমার স্যার ছিলো..?
মাহি ফাইজার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো।
“ওই ফাইজা তরে না বলছি নতুন বউকে নিয়ে আসতি।”
ফাইজা আর মাহি পিছন ফিরে তাকাতেই রোকেয়া বেগম হা করে সামনে তাকিয়ে আছে।
মুখ থেকে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসলো “মাশাল্লাহ ”

সকালের নির্মল পরিবেশটা সূর্যের তীব্রতায় দুপুরের হয়ে উঠলো। নূর আর মুর ভেঙে ঘুম থেকে উঠে। ফ্রেশ হয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকার কারনে ঘুম ভাঙতে এতো দেরি। তারাতারি রুদ্রের রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামলো।
নূরকে দেখে আনিতা বেগম রেগে ওর সামনো এসে দাঁড়ালো।
নূরঃ কি হয়েছে আম্মু..?
আনিতা বেগমঃ এই গুলো কি পড়েছো.?
নূরঃ কেনো দেখতে পাচ্ছো না।
আনিতা বেগমঃ শাড়ি কোথায়..? আর জিন্স,টপস,গলায় ওড়না পেঁচানো এইগুলো কি। বিয়ের পরের দিন যে শাড়ি পড়তে হয় সেটাও যানো না।
নূর মাথা নিচু করে আবার উপরে চলে গেলো। কিছুতেই ও শাড়ি পড়বে না। দরকার হলে সারা দিন রুম থেকে বের হবে না।

রোকেয়া বেগম ফাইজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ফাইজা বলে উঠলো,’ মামী তোমার ছেলের বউ এনে দিয়েছি। এবার আমার টা আমাকে দাও।’
রোকেয়া বেগমঃ রান্না ঘরে আছে নিয়ে নে।
ফাইজা এক দৌড়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলো।
রোকেয়া বেগম আবার মাহির দিকে তাকালো। রানী গোলাপি শাড়ি, সাথে দুই হাত ভর্তি চুড়ি,উজ্জ্বল ফর্সা গোলগাল মায়াবী চেহারা,টানাটানা চোখ। দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে সামনের মেয়েটিকে। উনার মন খুশিতে ভড়ে উঠলো। কিন্তু মুখে তা বুঝালো না।

রোকেয়া বেগমঃ ফায়াজ ঘুম থেকে উঠেছে..?
মাহি ভয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে। আসতে করে বললো,’ জ্বি আম্মু।’
খুশিতে গদোগদো হয়ে উঠলো রোকেয়া বেগমের মন। উনার মেয়ে নেই ছেলের বউ আম্মু ডেকেছে সেই খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো।
রোকেয়া বেগমঃ রুমে যাও। আর একটু পর তোমার বাপের বাড়ি থেকে মানুষ আসবে।

নীল,মিম,নূর,শুভ্রতা,আদিবা,রেডি হয়ে নিলো মাহির শশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য।
রুহির কি হয়েছে কেউ যানে না। কারো সাথে কথা বলছে না দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
আদি আজ কয়েক দিন ধরে ঠিক মতো বাসায় আসে না।
জিসান, আবির,রুদ্র বলেছে সময় করে ওরা একদম মাহির শশুর বাড়ি চলে যাবে।
নূর শাড়ি পড়েছে আজ ও কালো শাড়ি, কালো চুড়ি, হালকা সাজ চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে খুব সুন্দর লাগছে। একদম কালোর দিয়ে সাদা শরীরটাকে সাজিয়ে নিয়েছে।
সবাই বেড়িয়ে পড়লো মাহির শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে।

এই অবেলায় তুমি পর্ব ২৮

মাহির শশুর বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই কিছুক্ষন আগে এসেছে ওরা।
নীলঃ নূরের বাচ্চা এমন শরীরের লগে চিপকায় আছিস কা.. দূরে দূরে থাক।
নূরঃ আমার ঠেকা পরছে তোর সাথে চিপকায় থাকতে। বেশি কথা না বলে চুপচাপ বসে থাক।
নীলঃ তুই আমার থেকে দূরে গিয়ে বস। সবাই কেমন করে যেনো তাকায় আছে।
নূর রেগে নীলের পাশ থেকে উঠে মিম কে নীলের সাথে আর নিজে মিম এর জায়গায় বসলো।
নীলঃ এক ডাইনী গেছে আরেক পেত্নী আইসা বসছে। তোদের জন্য কি আর জায়গা নাই বার বার আমার পাশে কী..!?

এই অবেলায় তুমি পর্ব ৩০