এই মন তোমারি পর্ব ১২

এই মন তোমারি পর্ব ১২
নুজাইফা নূন

-” আমি একদম ঠিক আছি পুলিশ। আপনি মাস্টার মশাই কে আজ থেকে পড়াতে আসতে বলেন। আমি মন দিয়ে পড়াশোনা করবো। আমি যতো তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শিখতে পারবো, আপনি আমাকে ততো তাড়াতাড়ি ভালোবাসবেন তাই না পুলিশ? আপনি আমাকে কেনো ভালোবাসতে পারেন না পুলিশ?আমি তো দেখতে একেবারে খারাপ ও না‌।

আমার পাড়ার লোকেরা বলতো আমি নাকি পাড়ার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। আমার বর নাকি আমাকে অনেক ভালোবাসবে। কিন্তু আপনি তো সবসময় আমাকে দূর ছাই দূর ছাই করেন।আপনি কি আমাকে সত্যিই তালাক দিয়ে দেবেন পুলিশ?যদি সত্যিই তালাক দিয়ে দেন আমি আর চাচির সংসারে বোঝা হতে যাবো না। আমি গাড়ির নিয়ে চাপা পড়ে ম’রে যাবো।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-” কথা টা শোনা মাত্র শাফায়াত সূরার গলায় ছুরি ধরে বললো, আর একবার যদি ম’রা’র কথা তোমার মুখ দিয়ে বের হয় আমি নিজেই তোমার গলায় ছুরি চালিয়ে দিবো।মনে থাকে যেন কথাটা।”
-” আমি তো তোর কেউ না। তাহলে আমার ম’রা’র কথা শুনে তোর এতো জ্বলছে কেনো?”
-” তুমি বড্ড বেশি কথা বলো মেয়ে।ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকবে। আমাকে দয়া করে আর জ্বালিয়ো না মেয়ে।এখন চলো ফ্রেশ হতে হবে তোমাকে।”

-” না! আমি কোথাও যাবো না।আগে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর চাই।আপনি যদি আমাকে ভালোবাসতে না পারেন তাহলে আপনার দয়ার কোনো প্রয়োজন নেই আমার।”
-” শাফায়াত কি বলবে বুঝতে না পেরে বললো, ওকে ।তোমাকে একটা সুযোগ দিতেই পারি। তুমি যদি কখনো আমার যোগ্য হয়ে উঠতে পারো আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবো। সমাজের কাছে তোমাকে স্বীকৃতি দিবো।পারবে আমার যোগ্য হয়ে উঠতে? বাবা কে দেওয়া আম্মির কথা রাখতে।”

-” শাফায়াতের কথা শুনে সূরা যেন আসমানের চাঁদ হাতে পেলো।সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে শাফায়াতের গলা জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু দিয়ে বললো, খুব করে পারবো পুলিশ।সূরার এহেন কাজে শাফায়াত বিরক্ত হয়ে সূরা কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো, ইয়াক থু এটা কি করলে তুমি মেয়ে? আমার গাল টা সকাল সকাল নোংরা করে দিলে তুমি। বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়ে সকালে ব্রাশ করেছো তুমি? মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে তোমার।”

-” ব্রাশ করলে আরো চুমু খেতে দিবেন পুলিশ?”
-” শাফায়াত তৎক্ষণাৎ তার মাথাটা এগিয়ে দিয়ে বললো, চুমু খাওয়ার থেকে তুমি বরং আমার মাথাটা চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলো।চুমুর থেকে এটার স্বাদ আরো অনেক বেশি।”
-” সূরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নুজাইফা রুমের মধ্যে এসে বললো, সরি ভাইয়া নক না করেই ভুলে চলে এসেছি। দাঁড়াও আমি আবার বাইরে গিয়ে নক করে ভেতরে আসছি?”

-” শাফায়াত তাকে বাধা দিয়ে বললো, এই দাঁড়া! রুমে যখন এসে গিয়েছিস তখন আবার অনুমতি নিয়ে আসার কোনো প্রয়োজন নেই। কেন এসেছিস তাই বল?”
-” কেনো ভাইয়া আমি ভুল সময়ে এন্ট্রি নিয়ে ফেলেছি? আই মিন তোমাদের রোমান্সে বাঁধা সৃষ্টি করলাম না তো?”
-” নুজাইফার কথা শুনে শাফায়াত তার কান মলে দিয়ে বললো, তুই ও এই বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার মতো লাগাম ছাড়া কথা বার্তা বলা শুরু করে দিয়েছিস? তুই আজ থেকে এই মেয়েটার সাথে একদম মিশবি না।ওর থেকে দূরে দূরে থাকবি।”

-” হু বললেই হলো। আমার কতো কিউট একটা ভাবি মনি। দেখলেই কেমন গাল দুটো টেনে দিয়ে আদর করতে মন চাই। তোমার মন চায় না ভাইয়া?”
-“আমি যে তোর সিনিয়র এটা কি তুই ভুলে গিয়েছিস?”
-” না ভাইয়া।”
-” তুই যাবি আমার রুম থেকে?”
-” যাচ্ছি জনাব । আমি আপনার রুমে থাকতে আসি নি ওকে।ভাবি মনি কে দেখতে এসেছিলাম তার কি অবস্থা?”
-” দেখা হয়ে গেছে তো।এবার নিচে যা।”

-” ভাগ্য ভালো যে ভাবি মনির কোনো দেবর নাই।দেবর থাকলে তুমি তাকে ভাবি মনির ছায়া ও দেখতে দিতে না বলে রাগে গজগজ করতে করতে রুম বেরিয়ে গেল নুজাইফা।নুজাইফার যাওয়ার পানে তাকিয়ে সূরা বললো, ইশ্ আমার ননদ টাও আমার বরের মতো কি মিষ্টি দেখতে।আপনারা সবাই কতো সুন্দর দেখতে।আমার বাচ্চা কাচ্চাও হয়তো আপনাদের মতো এতো সুন্দর হবে দেখতে তাই না?”

-” সূরার প্রশ্ন শুনে শাফায়াত মনে মনে বললো, তোমার মাথা থেকে যদি এই বর , বাচ্চা কাচ্চা , আদর , ভালোবাসার ভূত না নামিয়েছে আমার নাম ও শাফায়াত নয় বলে সে সূরা কে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে নামিয়ে দিলো। সূরা কে ব্রাশ করিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ করিয়ে দিলো।যার ফলে সূরার গাঁয়ে থাকা শার্ট টা ভিজে গেলো।যা দেখে শাফায়াতের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসলো।সে তৎক্ষণাৎ সূরা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে সূরার গাঁয়ে থাকা শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করলো।

শাফায়াতের স্পর্শে যেন সূরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।তার সারা শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। সে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো কি করছেন পুলিশ? আমার সুড়সুড়ি লাগছে তো।আপনি আমার থেকে দূরে সরে যান পুলিশ। আমার কেমন যেন লাগছে। শাফায়াত মনে মনে বললো, এই তো লাইনে আসছো। আজকে তোমার এমন অবস্থা করবো যে , আজকের পর থেকে ‌তোমার মাথা থেকে সব ভালোবাসার ভূত নেমে যাবে বলে শাফায়াত সূরার শার্ট কাঁধ থেকে নামিয়ে তার কাঁধে একটা চুমু দিলো। মূহুর্তের মধ্যে যেন সূরার শরীরে কারেন্ট বয়ে গেল।সে এক হাত দিয়ে শাফায়াত কে ঠেলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ‌বললো,

-“ছিঃ ছিঃ পুলিশ এসব কি করছেন আপনি?”
-” কেনো তোমাকে ভালোবাসছি , আদর করছি। তুমি তো এটাই চাও তাই না? সবসময় বাচ্চা কাচ্চা আদর ভালোবাসা করে আমার মাথা খারাপ করে দাও।তাহলে এখন ছিঃ ছিঃ করছো কেন? তোমার না বাচ্চা চায় বলে শাফায়াত সূরার ঘাড়ে আরো একটা চুমু দেয়।”

-” হ্যাঁ চাই তো।তাই বলে আপনি আমার সাথে এমন করবেন। ছিঃ ছিঃ ছিঃ আমি আপনাকে ভালো‌ মনে করেছিলাম।আর আপনি কিনা? আমি থাকবো না আপনার সাথে।আমি আজ থেকে আমার শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে থাকবো।আর মা কে এটাও বলে দিবো যে আপনি আমার সাথে কি কি করেছেন।”

-” সিরিয়াসলি এসব বলবে তুমি আম্মির কাছে? যাও গিয়ে বলো। তুমি তো আমার সাথে থাকতে চায়ছো না তাই না? কিন্তু তুমি যদি আম্মি কে বলো আমি তোমার সাথে কি কি করেছি তাহলে আম্মি জোর করে তোমাকে আমার কাছে রেখে যাবে‌।আর আমি এখন থেকে তোমাকে সবসময় এইভাবে ভালোবাসবো আদর করবো।”

এই মন তোমারি পর্ব ১১

-” না না বাপু আমার চাই না আপনার ভালোবাসা। আমি ভালো মা কে কিছুই বলবো না। তবু আমি আপনার সাথে থাকবো না বলে সূরা খোঁড়া তে খোঁড়া তে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।যা দেখে শাফায়াত হো হো করে হেসে উঠে বললো, আচ্ছা জব্দ হয়ছে বে’য়া’দ’ব অ’স’ভ্য মেয়েটা।”

এই মন তোমারি পর্ব ১৩