একটা বসন্ত বিকেলে শেষ পর্ব 

একটা বসন্ত বিকেলে শেষ পর্ব 
অরনিশা সাথী

একটা জরুরী মিটিংয়ে ছিলো শ্রাবণ। এমন সময় বাসার নাম্বার দেখে ক্ষানিকটা ভ্রু কুঁচকালো। পরমূহুর্তেই আয়াতের কথা মনে হতে দ্রুত ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে সানিয়া মেহরাব অস্থির কন্ঠে বললো,
–“শ্রাবন, আয়ুর পেইন উঠেছে ওকে হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি।”
–“আসছি আমি।”

কথাটা বলেই দ্রুত লাইন কেটে দিলো। ম্যানেজারকে সবকিছু বুঝিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটলো হসপিটালের দিকে। শ্রাবণের মনটা বড্ড অস্থির হয়ে আছে। সাথে ভয় কাজ করছে মনে। আয়াতের কিছু হবে না তো? গাড়ি পার্ক করে দৌড়ে হসপিটালের ভিতর চলে গেলো শ্রাবণ। সেকেন্ড ফ্লোরে উঠে কিছুদূর যেতেই দেখা মিললো সানিয়া মেহরাব আর শানের সাথে। শ্রাবণকে দেখে শান এগিয়ে আসলো৷ শ্রাবণ কাঁপা কন্ঠে আয়াতের কথা জিজ্ঞেস করতেই শান আস্বস্ত করে বললো,
–“ভয় পেও না ভাইয়া, সব ঠিকঠাক হবে ইনশাআল্লাহ।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শ্রাবণ কিছু না বলে সানিয়া মেহরাবের কাছে গেলেন। তিনি চেয়ারে বসে দোয়া দুরুদ পড়ে যাচ্ছেন। মিনিট দুয়েক গড়াতেই বাচ্চার কান্নার শব্দ ভেসে এলো কানে। কিছুক্ষণ বাদেই একজন নার্স সাদা টাওয়ালে পেঁচিয়ে একটা বাবু এনে সানিয়া মেহরাবের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“আপনাদের ঘরে কন্যা সন্তান এসেছে।”
সানিয়া মেহরাব বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করলো। শ্রাবণ নার্সকে বললো,
–“আয়াতের কি অবস্থা?”
নার্স একগাল হেসে বললো,

–“চিন্তার কিছু নেই, ম্যামের নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। এখনই কেবিনে শিফট করা হবে উনাকে।”
নার্সের কথায় শ্রাবণ স্বস্তির শ্বাস নিলো। সানিয়া মেহরাব আল্লাহ’র দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া জানালেন। সানিয়া মেহরাব শ্রাবণের কাছে এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে ওর কোলে দিলেন। শ্রাবণ কাঁপা কাঁপা হাতে কোলে নিয়ে মেয়ের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। মেয়ের গালের সাথে নিজের গাল ঠেকিয়ে রাখলো বেশ কিছুক্ষণ। শ্রাবণের কোল থেকে এবার শান নিয়ে নিলো। শ্রাবণ এগিয়ে গেলো কেবিনের দিকে। গুটি গুটি পায়ে চেয়ার টেনে আয়াতের পাশে বসলো। আয়াত শ্রাবণকে খালি হাতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,

–“আমার মেয়ে কোথায়?”
–“শানের কাছে।”
–“আপনি কোলে নেননি?”
–“নিয়েছি তো, কিন্তু ও অনেক ছোট বউ। আমার কোলে নিতে সমস্যা হয়। মনে হয় এই বুঝি হাতের কোনো ফাঁকফোকড় দিয়ে পড়ে গেলো।”
শ্রাবণের এহেন কথায় আয়াত শব্দ করে হেসে দিলো। হাসি থামিয়ে বললো,

–“থাক আপনার কোলে নিতে হবে না, আমার মেয়ে আমিই রাখতে পারবো।”
শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“বললেই হলো না? মেয়ে তোমার একার না, আমারও মেয়ে। আমিও কোলে নিতে পারবো, দু/একদিন ট্রাই করলেই হয়ে যাবে।”
–“উঁহু পারবেন না আপনি।”
–“আই উইল ম্যানেজ।”

শ্রাবণের কথা আর এক্সপ্রেশন দেখে আয়াত আরেক দফা হাসলো। এমন সময় কেবিনে প্রবেশ করলো আয়াতের বাবা মা ভাই আর ইরা। সানিয়া মেহরাব আর শানও আছে। মা বাবা ভাইকে দেখে খুশিতে আটখানা হয়ে গেলো আয়াত৷ ইরফান চৌধুরী মেয়ের মাথায় আদর স্পর্শ করলো। আয়াশ বোনের সাথে টুকটাক কথা বললো। ইরা তখন ব্যস্ত আয়াতের মেয়েকে নিয়ে খেলতে। আয়াত মুখ ক্ষানিকটা গোমড়া করে বললো,

–“তুই এসেছিস পর থেকেই আমার মেয়ের সাথে খেলছিস একবারো আমার সাথে কথা বললি না তো।”
আয়াতের এরকম কথায় সকলে হেসে উঠে। ইরা শ্রাবণকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“দেখেছেন ভাইয়া? আপনার বউ নিজের মেয়ের সাথেও হিংসে করে। কি হিংসুটে।”
আয়াত গাল ফোলালো৷ ইরা বাবুটাকে আদর করতে করতে বললো,
–“আয়ু আমার না একটা কথা ছিলো।”
আয়াত প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো ইরার দিকে। ইরা বেশ ভাবুক হয়ে বললো,

–“তোর বিয়েরও দু/তিন বছর আগে থেকে তোর ভাইয়ের সাথে প্রেম করছি আমি৷ সেখানে তোর বিয়ে হয়ে গেলো, আচ্ছা এটা মেনে নিলাম কিন্তু বাচ্চা? তুই এক বাচ্চার মা হয়ে গেলি আয়ু অথচ তোর ভাই আমাকে এখনো বিয়ে করছে না। আমার বিয়ে কবে হবে ইয়ার? এর থেকে তো অন্যছেলের সাথে প্রেম করলে এতদিনে বিয়ে করে দু/তিন বাচ্চার মা আমিও হয়ে যেতাম। আর কত অপেক্ষা করবো বল?”
ইরার এমন কথায় সকলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। আয়াশ বাঁকা হেসে বললো,

–“বেশি না আর বছর দুয়েক অপেক্ষা করো? আমার ভাগ্নীটা পুরো দমে দৌড়াদৌড়ি করতে শিখুক তারপর আমরা বিয়ে করবো পাক্কা।”
কথাটা বলে আয়াতের মেয়ের গাল স্পর্শ করলো আয়াশ। ইরার চেহারা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে। আয়াত হাত বাড়িয়ে মেয়েকে নিজের কাছে চাইলো। ইরা গিয়ে বাবুটাকে আয়াতের কোলে দিয়ে একপাশ থেকে আয়াতকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আচ্ছা আয়ু, তোর মেয়ে আমায় খালামণি ডাকবে নাকি মামিমা ডাকবে?”
আয়াত ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ইরা হেসে বললো,

–“না মানে আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড সেই হিসেবে খালামণি। আর সাথে তোর ভাইয়ের উডবি, এদিক থেকে দেখতে গেলে মামিমা। তো কোনটা ডাকবে ও আমাকে?”
–“খালামণি ডাকবে, কারণ আমার ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হতে দিবো না আমি।”
–“এমন করিস না ইয়ার, আমার ছেলে কাজিন আছে অনেকগুলা, বিয়েতে তোর সাথে লাইন করিয়ে দিবো নো সমস্যা।”
ইরার কথায় শ্রাবণ গলা ঝেড়ে বললো,

–“নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। মুখের কথা ফিরিয়ে নাও শালীকা। আমি থাকতে আমার বিয়ে করা বউ অন্য ছেলেদের সাথে লাইন মারবে কেন?”
ইরা দাঁত দিয়ে জিহবা কেটে বললো,
–“উপস স্যরি ভাইয়া, আপনার কথা ভুলে গেছিলাম আমি।”
বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসলো ইরা।

আয়াতদের পুরো বাসা খুব সুন্দর সাজানো হয়েছে। কেননা আজ আয়াশ আর ইরার হলুদ। সারা বাড়ি জুড়ে অনেক মানুষের আনাগোনা। আয়াত ব্যস্ত চোখে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে মেয়েকে খুঁজছে। কিন্তু মেয়ের দেখা মিলছে না। আয়াত শাড়ি টাড়ি পড়ে একদম রেডি। এখন মেয়েকে রেডি করাবে। কিন্তু পাচ্ছে না কোথাও। শ্রাবণ বললো,
–“খুঁজছো কাউকে?”
–“হ্যাঁ, আপনার গুণধর মেয়েক। কোথায় সে?”
–“অয়ন্তি তো শানের সাথে ছাদে।”
–“নিয়ে আসুন গিয়ে, রেডি করাবো ওকে।”

শ্রাবণ সম্মতি জানিয়ে ছাদের দিকে পা বাড়ালো। অয়ন্তি নামটা শান রেখেছে। তাই আর দ্বিতীয় কোনো নাম রাখা হয়নি। শানের রাখা নামটাই প্রাধান্য দিয়েছে আয়াত আর শ্রাবণ। আয়াতেরও ভীষণ পছন্দ হয়েছে নামটা। গত সপ্তাহেই অয়ন্তির দুই বছর পূর্ণ হলো। সেদিন মজার ছলে বলা কথাটাই আয়াশ রেখেছে। অয়ন্তি এখন পুরো দমে দৌড়াদৌড়ি করতে পারে। আর আয়াশও এখনই বিয়ে করছে। কথা ভেবে মুচকি হাসলো আয়াত৷ অতঃপর আয়াত নিজের ঘরে গিয়ে অয়ন্তির জন্য রেডিমেড শাড়ি বের করলো৷ আয়াশ এটা স্পেশালি অয়ন্তির জন্য অর্ডার দিয়ে বানিয়েছে৷ হলুদ রঙের শাড়িটা। আজ আয়াত আর শ্রাবণও হলুদ রঙের শাড়ি পাঞ্জাবীই পড়েছে।

আয়াত আর শ্রাবণ একসাথে স্টেজে উঠেছে ইরাকে হলুদ লাগানোর জন্য। আয়াত শাড়ি পড়ে অয়ন্তিকে সামলাতে পারবে না বলে শ্রাবণ কোলে নিয়েছে অয়ন্তিকে। আয়াত অবশ্য বলেছিলো ও সামলে নিতে পারবে কিন্তু শ্রাবণের ভাষ্যমতে আয়াত শাড়ি সামলে অয়ন্তিকে সামলাতে হিমশিম খাবে। তাই জোর করেই অয়ন্তিকে নিজের কাছে রেখেছে। অয়ন্তিও বাবা বলতে পাগল৷ সাথে শানের জন্য জান বের করে দিবে। বাসায় বাইকের শব্দ পেলেই ‘পাপা’ বলে শানের দিকে ছুটে যাবে। ইরা অয়ন্তির দিকে হাত বাড়াতেই অয়ন্তি ইরার কোলে চলে গেলো। ইরা অয়ন্তির গাল টেনে দিয়ে বললো,

–“আমি তোমার খালামণি নাকি মামিমা হই বলো তো সোনা?”
অয়ন্তি কিছুক্ষণ ভেবে আধো আধো বুলিতে বললো,
–“মাম্ মাম।”
ইরা অয়ন্তির গালে চুমু খেয়ে বললো,
–“ওলে আমাল সোনাটা, খালামণি মামিমা বাদ আজ থেকে শুধু মাম্মাম ওকে?”
অয়ন্তি কি বুঝলো কে জানে ও ইরার কথায় হেসে মাথা নাড়ালো৷ অতঃপর আয়াত আর শ্রাবণ একসাথে ইরাকে হলুদ লাগিয়ে নেমে যায় স্টেজ থেকে।

আয়াশ স্টেজে বসে অয়ন্তিকে নিয়ে শত শত পোজ দিচ্ছে। কতক্ষণ আয়াশ তো আবার কতক্ষণ শান। এই দুজনের কান্ডে ফটোগ্রাফার নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যাবে। পুরো বিয়ে বাড়িতে এত এত মানুষ থাকতে এই তিনজনের ছবি দিয়েই ক্যামেরা লোড। শ্রাবণ এগিয়ে গেলো শানের কাছে। শানের কোল থেকে অয়ন্তিকে নিয়ে বললো,
–“এতক্ষন অনেক টানাহেঁচড়ার করেছিস আমার মেয়েকে নিয়ে। আর না। এবার আমরা ছবি তুলবো। কথাটা বলে শ্রাবণ আয়াতের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে স্টেজে উঠে গেলো। অতঃপর নিজেরা এবার ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

আয়াশ বর সেজে সবেই ঘর থেকে বের হলো। আয়াশকে বর বেশে দেখে অয়ন্তি খুশিতে মামা বলে ওর কাছে গিয়ে আয়াশের কোলে উঠে গেলো। আয়াশ অয়ন্তিকে কোলে তুলে কপালে চুমু খেলো। অয়ন্তিকে কোলে নিয়েই বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। নিচে নেমে গাড়িতে উঠে বসলো। আয়াশের সাথে শ্রাবণ আর আয়াত যাবে। শান রাফিয়া দিহান ওরা অন্য গাড়িতে আসবে সবাই।

আয়াত ওরা ইরাদের বাসায় এসে পৌঁছেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো। এইটুকু সময়ে গেট ধরা থেকে শুরু করে শরবত খাওয়ানো জুতা চুড়ি করা সবই করে ফেলেছে ইরার কাজিন মহল। তবে শানও কম যায় না। এক্সট্রা জুতো নিয়ে এসেছিলো ও। এটা দেখে ইরার কাজিন মহলের সকলের মুখ একটুখানি হয়ে যায়। হই হুল্লোড় হাসি ঠাট্টার মাঝেই সারাটা সময় কেটে গেলো। এর মাঝে খাওয়া দাওয়াও শেষ সবার। এখন শুধু বিয়ে পড়ানোটা বাকী। আয়াত অয়ন্তিকে কোলে নিয়ে ইরার কাছে চলে গেলো। ঘুমিয়ে পড়েছে অয়ন্তি। আয়াত খুব সাবধানে আয়াতকে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখছে যাতে ওর ঘুমে কোনো অসুবিধা না হয়। ইরা অয়ন্তিকে দেখেই হাত বাড়িয়ে দিলো। আয়াত বললো,

–“ঘুমাচ্ছে ও। আর তাছাড়া ভারী সাজে আছিস, এখন ওকে কোলে নিতে হবে না। সমস্যা হবে তোর।”
–“কিছু হবে না, দে তুই।”
আয়াত অয়ন্তিকে ইরার কোলে দিতেই অয়ন্তি কেঁদে উঠলো। নড়াচড়ার কারণেই ঘুম ভেঙেছে ওর। আয়াত দ্রুত অয়ন্তিকে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলো। কিন্তু অয়ন্তির কান্না থামার কোনো নাম গন্ধ নেই। বহু কষ্টে ক্ষানিকটা শান্ত করালো আয়াতকে। তখন কাজীর সাথে শ্রাবণ শান সহ আরো দুজন লোক এলো ঘরে। আয়াত অয়ন্তিকে নিয়ে এক সাইডে দাঁড়িয়ে ছিলো। অয়ন্তি শ্রাবণকে দেখে আবারো ঠোঁট উলটে কান্না শুরু করে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বলছে,

–“বাবা।”
শ্রাবণ দ্রুত এগিয়ে গিয়ে অয়ন্তিকে কোলে নিতেই অয়ন্তি কান্না থামিয়ে শ্রাবণের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো। শ্রাবণ অয়ন্তিকে কোলে নিয়েই বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে৷ আয়াত স্বস্তির শ্বাস ফেলে ইরার পাশে গিয়ে বসলো। ইরা ক্ষানিকটা সময় নিয়ে কাবিননামায় সাইন করে কবুল বললো। অতঃপর বিয়ের সকল রিচুয়্যালস পালন করে সাড়ে আটটা নাগাদ আয়াত ওরা ইরাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আসার সময় ইরার কি কান্না। কাঁদতে কাঁদতে বেচারী সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন আয়াশই ইরাকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসায়।

ফুলে সাজানো ঘরে বসে আছে ইরা। দরজা খোলার শব্দ পেয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসলো। ইরার বুক ধুকপুক করছে এখন। দ্রুত উঠানামা করছে। আয়াশ এক পলক সেদিকে তাকিয়ে কাবার্ড থেকে টাওজার এবং টি-শার্ট নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। এতক্ষণে যেন আয়াশের শান্তি লাগছে। উফস শেরওয়ানী পরে এত সময় থাকা যায়? তাছাড়া পাক্কা আধ ঘন্টা শান দিহান ওরা আয়াশকে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো। অতঃপর টাকা হাসিল করে তারপর ঘরে ঢুকতে দেয়। আয়াশ নিজের পছন্দমতো একটা সুতির শাড়ি বের করে ইরার হাতে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে উযু করে আসতে বললো। অতঃপর ইরা বের হলে দুজনে একসাথে দু রাকাত নফল নামায আদায় করে নেয়।

ইরা আবারো জড়োসড়ো হয়ে বসলো। আয়াশ ড্রয়ার থেকে একজোড়া সিম্পল সোনার চুড়ি বের করে। ইরার পাশে বসে ওর হাতে চুড়ি দুটো পড়িয়ে দিয়ে বললো,
–“এই চুড়িটা কখনো খুলবে না ইরু।”
ইরা সম্মতি জানায়৷ অপলক দৃষ্টিতে চুড়িজোড়া দেখতে থাকে৷ অসম্ভব সুন্দর দেখতে এটা। আয়াশ ইরার থুতনি ধরে ওর মুখ উঁচু করে কপালে চুমু খেলো। কেঁপে উঠলো ইরা। লজ্জা লাগছে ওর। আয়াশের স্পর্শ গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। যার ফলে বারবার শরীর কেঁপে উঠছে ইরার।

আয়াশের বিয়ের সপ্তাহ খানেক পার হয়েছে। কাল আয়াত ওরা ঢাকায় ফিরে যাবে৷ শ্রাবণের অফিস থেকে বারবার ফোন আসছে। তাই কাল ভোরেই চলে যাবে ওরা। সাথে আয়াতকেও যেতে হবে। শ্রাবণ শান সানিয়া মেহরাব কেউই অয়ন্তিকে চোখের আড়াল করতে পারে না।

ফারাবীর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত। ওর থেকে কিছুটা দূরে শ্রাবণ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে আয়াতকে দেখছে। অয়ন্তিকে ইরার কাছে রেখে এসেছে। ফারাবীর কবরের দিকে তাকিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো আয়াতের চোখ থেকে। আয়াত প্রতিবারই চট্টগ্রাম আসলে ঢাকায় ফেরার আগের দিন ফারাবীর কবর দেখে যায়। অবশ্য শ্রাবণের অনুমতি নিয়েই। শ্রাবণ অনুমতি না দিলে আয়াত কখনোই আসতো না। আয়াতের কান্নার পরিমান বাড়ছে। শ্রাবণ দ্রুত এগিয়ে এসে আয়াতকে জড়িয়ে ধরলো। আয়াতের মাথা শ্রাবণ ওর বুকে চেপে ধরে বললো,

–“আয়ু, প্লিজ ডোন্ট ক্রাই।”
আয়াত কাঁদতে কাঁদতে বললো,
–“আচ্ছা ফারাবী এভাবে চলে না গেলে হতো না? আল্লাহ আমাকে যেভাবে সুখি করেছে সে একই ভাবে ওকে দুনিয়াতে রেখে সুখি করলো না কেন? ফারাবীরও তো একটা সুখের জীবন প্রাপ্য ছিলো তাই না? তাহলে এভাবে কেন নিয়ে গেলো ওকে? আমার জীবনটা তো আল্লাহ গুছিয়ে দিয়ছে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে, তাহলে ওর জীবনটা এভাবে অগোছালো করেই সমাপ্তি টানলো কেন?”

কান্নার ফলে আয়াত কথা বলতে পারছে না। শ্রাবণ আয়াতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
–“ফারাবীর আয়ুকাল ওইটুকুই ছিলো আয়ু। আমাদের যতটা আয়ুকাল আছে আমরা তো ঠিক ততটা সময়ই এই পৃথিবীর বুকে শ্বাস নিবো, তাই না?”
আয়াত কিছু বললো না। শ্রাবণ আয়াতের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
–“চলো।”

কথাটা বলে আয়াতের হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসালো। শ্রাবণ গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
একটা নিরিবিলি পার্কের সামনে এসে গাড়ি থামালো শ্রাবণ। রোদ পরে গেছে৷ বিকেল এখন তাই অনেকেই পার্কে ঘুরতে এসেছে। শ্রাবণ একদম কোলাহল মুক্ত একটা জায়গায় এসে থামলো। পার্কের এই সাইডে মানুষের অত আনাগোনা নেই। শ্রাবণ আর আয়াত একটা বেঞ্চিতে বসে পড়লো। আয়াত এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে। কান্না থেমেছে অনেক আগেই। শ্রাবণ আয়াতের হাত ধরে বললো,

–“আয়ু আমি চাই আমার শেষ মূহুর্ত অবদি শুধু তোমার হয়ে থাকতে৷ অন্যান্য মানুষের মতো আমি বুক চিতিয়ে বলতে পারি না যে আমি তোমায় ভালোবাসি। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি সত্যিই তোমায় ভালোবাসি। আমার সবটা দিয়ে শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”

আয়াত চমকে তাকালো শ্রাবণের দিকে। বিয়ের প্রায় সাড়ে তিন বছর চলে। অথচ এই সাড়ে তিন বছরে আজ প্রথমবারের মতো শ্রাবণ আয়াতকে ভালোবাসি বলছে। আয়াত যতটা না চমকেছে তার থেকে অনেকবেশি খুশি হয়েছে। আয়াত বুঝতো শ্রাবণ ওকে কতটা ভালোবাসে। তবুও সবারই ইচ্ছে করে ভালোবাসার মানুষের মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনতে। আয়াতও ব্যাতিক্রম না। আজ এতদিনে ওর এই ইচ্ছেটা পূর্ণ হলো। শ্রাবণ ভালোবাসি বলেছে ওকে। আয়াতের মনে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে৷ শ্রাবণ আয়াতের গালে হাত রেখে বললো,

–“আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো। তাই আলাদা ভাবে তোমার মুখ থেকে শুনতে চাইছি না। তুমি আমাকে প্রতি মূহুর্তেই ফিল করাও যে তুমি ঠিক কতটা ভালোবাসো আমাকে। আমার কাছে এই মুখে ভালোবাসি শোনার থেকে ফিল করাটা বেশি ভালো মনে হয়। তাই তোমাকে কখনো বলবো না আমায় ভালোবাসি বলতে। যদি তোমার ইচ্ছে হয় বলতে তাহলে বলবে, সেটা অন্য বিষয়।”

শ্রাবণ কথাটা বলতেই আয়াত শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি। আমিও আমার অয়ন্তির বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।”
শ্রাবণ হেসে আয়াতের পিঠে হাত রেখে বললো,
–“এটা কিন্তু পাবলিক প্লেস, বিয়ে করা বউ।”
আয়াত দ্রুত সরে গেলো৷ শ্রাবণ বাঁকা হেসে বললো,
–“বাসায় যাই, আজ অয়ন্তিকে ইরার কাছেই রেখে দিবো। তখন ফাঁকা বন্ধ ঘরে যত পারো জড়িয়ে রেখো নিজের সাথে। চাইলে অন্যকিছুও করতে পারো আমি না করবো না___”
–“চুপ অসভ্য।”

আয়াতের কথায় এবার শ্রাবণ শব্দ করে হেসে দিলো। শ্রাবণ আবারো আয়াতের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
–“আমি চাই এরকম #একটা_বসন্ত_বিকেল আমাদের জীবনে বারবার আসুক। শুধু বসন্তেই বসন্ত বিকেল চাই না আমি। বছরের প্রতিটা দিনই আমাদের জন্য বসন্ত হয়ে উঠুক।”
আয়াত শ্রাবণের কাঁধে মাথা রাখলো। তারপর বললো,
–“আমিও চাই আবারো কোনো #একটা_বসন্ত_বিকেলে ঠিক এভাবেই আপনার কাঁধে মাথা রেখে আপনাকে ভালোবাসি বলতে। ভালোবাসি অয়ন্তির বাবা।”
শ্রাবনও হেসে আয়াতের গাল টেনে দিয়ে বললো,
–“ভালোবাসি।

একটা বসন্ত বিকেলে শেষ পর্ব ২১

|লাস্ট কয়েকদিন অনিয়মিত গল্প দেওয়ার জন্য দুঃখিত। আজ গল্পটা শেষ হলো। জানি অগোছালো হয়েছে। আমি প্রতিবারই সমাপ্তিতে এসে ঘেঁটে দেই সবটা। যাই হোক, আমি আগেই ভেবে রেখেছিলাম গল্পটা বেশি বড় করবো না। তবুও বড় হয়ে গেছে। তবে আজ অন্তত কেউ শুধু নাইছ লিখে চলে যাবেন না। কেমন লেগেছে গল্পটা অবশ্যই জানাবেন। আশা করছি সকলেই গল্প সম্বন্ধে দুই চার লাইন গঠনমূলক মন্তব্য করবেন, ধন্যবাদ|

সমাপ্তি