একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব ৩০+ ৩১

একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব ৩০+ ৩১
writer Mousumi Akte

‘আমার কিউরিয়াস মাইন্ড জানতে চাচ্ছে, ‘কোন আবালে তোর জামাই হইছে?তারে দেখে কী বুঝব বল?ফিলিং ব্যাং ইমুজি!’ মৃন্ময় দ্বীপের পেছনে দাঁড়িয়ে কথাটা বলল।
‘কী বললি আমার জামাই আবাল?ওহ মাই গড!’

কথাটা মুখ থেকে বের করতে করতেই দেখি রোশান স্যার ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন। উনি মাত্রই পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ডিপার্টমেন্ট- এর দিকে।আমাদের কথোপকথন শুনে থমকে গেলেন।এক হাত দিয়ে চশমা ঠিক করছেন আর ছোটো ছোটো চোখ করে তাকাচ্ছেন।ওনার দিকে মৃন্ময় আর আমার দৃষ্টি যেতেই আমরা দুজনেই চোখ-মুখে আদব-কায়দার ভাব এনে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দ্বীপের দৃষ্টি স্যারের দিকে পড়েনি।তাই বলল,
‘নিশ্চয়ই ভুড়িওয়ালা,ছাদে মাল নেই কোনো ৬০ বছরে বুইড়া। ‘

মনে মনে বলছি থাম ভাই থাম তোরা।আর কত বাঁশ দিবি!এমনি মৃন্ময় আবাল বলেছে তা শুনে ফেলেছে এখন আবার তুই বলছিস ভুড়িওয়ালা টাক।আর ওনাকেই এখন এখান থেকেই যেতে হচ্ছিল,কী আশ্চর্যজনক ঘটনা!
এর-ই মাঝে তন্ময় আদবের সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আসসালামু ওআলাইকুম স্যার।’

উনি মিহি হেসে উত্তর দিলেন, ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম।
কেমন আছো তন্ময়?’
‘জি স্যার আলহামদুলিল্লাহ।’
‘প্রিপারেশন কেমন এবার?’
‘আলহামদুলিল্লাহ স্যার।’
‘শরীর সুস্থ আছে এখন?’
‘আমি তো সুস্থ-ই আছি স্যার।’

‘আমি জানি তুমি অসুস্থ ছিলে,যাক সে কথা; আমরা আশাবাদী তুমি এবারও ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট হওয়ার পাশাপাশি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রেকর্ড ভাঙবে।’
‘স্যার আমাকে নিয়ে এত আশা রাখবেন না।’
‘গতবছর তুমি সারা বাংলাদেশের মাঝে ৫ম হয়েছিলে।যদিও প্রচন্ড জ্বর নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলে।আশা রাখছি এইবার তুমিই প্রথম হবে।’

আল্লাহ’র রহমত থাকলে পারব স্যার।’
এবার উনি আমাদের সবার দিকে চোখ বুলিয়ে কেমন একটা অদ্ভুত চাহনি দিয়ে তন্ময়কে বললেন,
‘তোমার বন্ধুদের দিকেও একটু নজর দাও।তাদের কথবার্তা, লেখাপড়া সব-ই তো দেখছি;দিন দিন অনেক উন্নত হচ্ছে।’
‘জি স্যার দেব।’

‘তুমি ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট আর তোমার ফ্রেন্ডরা ডিপার্টমেন্ট লাস্ট খুবই লজ্জাজনক বিষয়। কার জামাই কেমন এসব নিয়ে সারাদিন গবেষণা না করে লেখাপড়ায় মন দিতে বলো। যাওয়ার সময় আমার সাথে দেখা করে যেয়ো তন্ময়।’এ-কথা বলেই ওনি রওনা দিলেন ডিপার্টমেন্ট-এর দিকে।

ওনি তো কোনদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো স্টুডেন্টের সাথে হেসে এত সময় কথা বলেন না।জীবনে প্রথমবার দেখলাম!যাওয়ার সময় আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দৃষ্টি কিছুক্ষণ স্থির রাখলেন।ওনি তাকালেই আমার কী হয়ে যায় বুঝি না!এক অজানা অনুভূতি আর লজ্জার সংমিশ্রণ তৈরি হয়।
মৃন্ময় বলল, ‘সারাহ তোর জামাই নিয়ে কথা বলেছি ওইটা স্যার শুনে ফেলেছে। স্যারের চোখে কালার হইলাম।এমনি খচ্চর স্যার,আরও নজরে পড়ে গেলাম!’

‘দেখ আজেবাজে কথা বলবি না,আমি লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম ওনাকে নিয়ে কিছুই বলবি না,কী হ্যান্ডসাম দেখেছিস!’
‘তুই এখন বিয়াইত্তা এইটা ভুলে যাইস না। নজর দিস না, পা’ প হবে!পা’প’!
দ্বীপ বলল, ‘আসলেই! স্যার মনে হয় নিজেকে ফিট রাখার ভীষণ চেষ্টা করেন।নইলে এত্ত হ্যান্ডসাম কীভাবে হতে পারে মানুষ!’

ছোঁয়া তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুই সারাহকে কী দিয়েছিস তন্ময়?ওদের মতোই কিছু?’
তন্ময় ঘাড় কাত করে একবার তাকাল ছোঁয়ার দিকে;কিন্তু উত্তর দিল না।ইদানিং তন্ময় ছোঁয়ার জন্য আর পা* গ * লা* মি করে না।সব সময় এড়িয়ে যায়।

ছোঁয়া তন্ময়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেই যাচ্ছে,কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না।ছোঁয়ার যে মানসিক অবস্থা তাতে এই মুহূর্তে একজন ভালবাসার মানুষ ভীষণ দরকার।আর সেই মানুষটা তন্ময় হলেই বেটার হয়। তন্ময়ের পিছনে দ্বীপ আর মৃন্ময়ও এগিয়ে গেল ।ছোঁয়ার মুখটা মুহূর্তের মাঝে কেমন মলিন হয়ে গেল।ছোঁয়ার কাঁধে হাত রেখে বললাম,

‘ওশানের জন্য কষ্ট হয় তোর?’
‘ছিঃ!সারাহ। এটা ভাবিস কীভাবে?কেন কষ্ট হবে?কষ্ট তো হয় ভালবাসার মানুষ ছেড়ে গেলে।কিন্তু মিথ্যুক,চরিত্রহীন এদের জন্য কখনো কষ্ট হয় না;ঘৃণা ছাড়া!আমার যেটুকু আছে ওর প্রতি সেটুকু ঘৃণা!’

‘তাহলে কী তন্ময়-এর ইগনোর তোকে কষ্ট দেয়?প্লিজ লুকাবিনা।’
‘ হ্যাঁ সারাহ!কষ্ট হচ্ছে,ভীষণ কষ্ট!ওর ভীষণ ভালবাসা আমি পায়ে ঠেলে দিয়েছিলাম।ওশানের থেকে প্রতারিত হয়ে আমি বুঝেছি তন্ময়ের গুরুত্ব। আমার মাথায় সারাক্ষণ তন্ময়ের ভালবাসা ছিল,ওর পা- গ – লা- মি সারাক্ষণ মাথায় ঘুরত।সেটা আজ মাথা থেকে নেমে মনে প্রবেশ করেছে।’

‘তন্ময়কে বল সেটা।কেন চেপে রেখেছিস?’
‘আমি পারব না সারাহ।’
‘কেন?’

‘কীভাবে বলব?যখন-ই অন্য কারো কাছ থেকে প্রতারিত হলাম তখন-ই আমি তন্ময়কে চাইব?আমার বিবেক আমাকে বাঁধা দিচ্ছে।আমি কখনো মুখ উঁচু করে কথা বলতে পারব না তাহলে।’
‘তন্ময় কী বলে?’

‘আমি ডাকলেই ও আমার কাছে আসবে,না হলে আসবেনা।আর আমি ও-কে ডাকছি না বলেই ও আমাকে সম্পূর্ণরূপে ইগনোর করে যাচ্ছে।’
‘দেখ তন্ময় তোকে কত ভালবাসে।বলছি যে জীবন থেকে যে দিনটা যাচ্ছে ওটাই ফুরিয়ে যাচ্ছে।তন্ময় কী ভাববে না ভাববে এসব ভাবতে ভাবতে আরও দেরি হয়ে যাচ্ছে।অনেক কিছু হারিয়েছিস,অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে আর নয়।তন্ময়কে ডাক তোর কাছে।’

‘আমি কী আসলেই ভুল করছি?’
‘হুম চরম ভুল,চল এবার।’
ডিপার্টমেন্টের দো’তলায় উঠতে উঠতে বললাম,
‘লিফট দেওয়া উচিত, আমার পা ব্যাথা হয়ে যায়।’
‘তোর জামাই-রে বলিস দিয়ে দিবে।’
‘হ বলব’

‘আচ্ছা তন্ময় তোকে কী গিফট দিয়েছিল?’
‘ফটোফ্রেম।কাপল পিক রাখার জন্য।’
‘তন্ময় সব সময় ইউনিক তাইনা?কী সুন্দর ভাবনা ভেবে একটা ফটোফ্রেম দিয়েছে তোকে!’
‘তাহলে ওর ভালবাসার ধরণও অনেক ইউনিক হবে ছোঁয়া।ইশ!কী লাকি তুই!’

ছোঁয়ার চোখ মুখ যেন কেমন লজ্জামিশ্রিত হলো।আমি খেয়াল করলাম ছোঁয়ার ঠোঁটে তন্ময়ের জন্য হাসি।যে হাসিতে ভালবাসা লেগে আছে।
এডমিট নিতে গেছি,অনেক ভীড়।লাইনে ভীড় ঠেলে এডমিট নিতে হচ্ছে।ছোঁয়া ভীড় ঠেলে এগোতেই পারছেনা।

তন্ময়ের হাইট অনেক বেশি।৫ ফিট ১০” হবে।সৃষ্টিকর্তা যেন তন্ময়কে সব দিক থেকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন।শুধু টাকা পয়সা দেননি।বাকি সবই দিয়েছেন।তন্ময় সবার মাথার উপর দিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে ছোঁয়ার রোল বলে বলল, ‘এইটা না তোর?’

ছোঁয়া মাথা নাড়িয়ে বুঝাল-হ্যাঁ।
তন্ময় ছোঁয়ার রোল বলে ওর এডমিট কার্ড নিয়ে সবার উপর দিয়ে ছোঁয়ার হাতে দিল আর বলল ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোকে।যা বাসায় চলে যা।’

আগে তন্ময় বলত ছোঁয়া যাবি না কিন্তু।আজ আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরব।তুই গেলে কিন্তু তোর বাসায় চলে যাব। আর আজ বাড়িতে চলে যেতে বলছে ;এটাই ছোঁয়াকে দারুণ ভাবে আহত করল।এর-ই মাঝে আমার কাছে আমার রোল জিজ্ঞেস করল তন্ময় আর মৃন্ময়। বললাম, ‘আমি আসছি। ‘

ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে রোল বললাম ক্লার্ক মাহফুজ আঙ্কেল-কে।আমাকে দেখে রোশান স্যার উঠে এগিয়ে এলেন আর বাকি স্টুডেন্টদের দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললেন, ‘সবাই পিছিয়ে যাও।এত ভীড় কেন?তোমরা কী বাচ্চা আছো এখনো?অদ্ভুত! যাও পিছিয়ে যাও।’

এমনি ওনাকে দেখে সবাই ভ* য় পায়!ওনাকে দেখলেই সবাই মাথা নিচু করে থাকে।ওনার ধমকে নিমিষেই জায়গা ফাঁকা হয়ে গেল।যেন ভ্যাপসা গরম খানিক টা দমে ফুরফুরে বাতাস এসে ঘাড়ে লাগল।মাহফুজ আঙ্কেলকে বললাম, ‘আঙ্কেল আমারটা দিন।’

মাহফুজ আঙ্কেল হেসে বললেন, ‘এখন আর তোমাকে রেগুলার দেখিনা কেন সারাহ?’
‘আঙ্কেল বাসা এখন একটু দূর হয়ে গিয়েছে তাই রেগুলার একা আসতে পারি না।’
রোশান স্যার আমার দিকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি না ম্যারেড?’

ওনি-যে আমার সাথে এখানে কথা বলবেন আমি ভাবতেও পারিনি!ওনাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কয়েকজনম পর আমাকে দেখলেন।এত স্বাভাবিক ভাবে আছেন কীভাবে ওনি!এইদিকে আমার ওনাকে দেখেই হাসি পাচ্ছে।দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরে রেখেছি হাসি আটকাতে।পায়ের আঙুল কচলাচ্ছি স্বাভাবিক থাকতে।

মাহফুজ আঙ্কেল বললেন, ‘তাই নাকি কবে? কখন?’
রোশান স্যার আবার বললেন, ‘ম্যারেড না তুমি?’
‘জি স্যার।’
‘তাহলে দূরে প্রব্লেম কি?জামাই সাথে নিয়ে আসবা।অসুবিধা কী?জামাই আসে না সাথে?’
‘না। ‘

‘বলেছো কখনো?আমাকে নিয়ে চলুন।’
আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে।কী সাংঘাতিক মানুষ ভাবা যায়!আমার সাথে মজা নেওয়া;ওয়েট! দেখেন, আমি কী করি!
ওনি আবার বললেন,

‘হাজব্যান্ডকে নিয়ে আসবা,আমাদের সাথে পরিচয় করাও,বন্ধুদের সাথে পরিচয় করাও।’
খুব দুঃখী দুঃখী মুখে বললাম,
‘না স্যার, ওনাকে নিয়ে আসা যায় না। ‘
‘কেন?’

‘অনেক কিপ্টা আমার জামাই।সে যেখানে যায় হেঁটে যায়।ভাড়ার টাকা বাঁচাতে পায়ে হেঁটে চলাচল করে।আমাকে একদিন কলেজ পর্যন্ত হাঁটিয়ে নিয়ে এসেছে।তাই তার সাথে কোথায় যাই না।বুঝেছেন রোশান স্যার?’
মাহফুজ আঙ্কেল হেসে বললেন, ‘এমন কিপ্টা মানুষও আছে দুনিয়ায়?’

আমার এবার প্রচুর হাসি পাচ্ছে।দুই ঠোঁট চেপে হাসি আটকে রেখেছি।রোশান স্যার কেমন সাংঘাতিক ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।এই সাংঘাতিক চাহনির মাঝেও মুগ্ধ হলাম।প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দ্রুত পায়ে হাঁটা দিলেন।আর আমি ফিক করে হেসে দিলাম।মনে মনে বললাম এমন বউ পেয়েছন দিনে দুই চারটা ঘটনা ইতিহাস হয়ে যায়।

কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বাদাম খাচ্ছি আমরা পাঁচ বন্ধু।জামাই আছে বলে ইদানিং সব বিল আমার-ই দেওয়া লাগে।বাদাম খেতে খেতে আড্ডায় মশগুল আমরা, হাসি আর ঠাট্টায় মুখরিত যেন চারিপাশ।এর-ই মাঝে দ্বীপ খুব জোর দিয়ে ধরেছে আমার জামাই দেখবে।সেই সাথে যোগ দিল মৃন্ময়,তন্ময় আর ছোঁয়া।আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘আমার বার্থডে-তে দেখাব।এর আগে দেখাব না।’

‘সেতো এখনো সাত মাস বাকি।’ মৃন্ময় টেনে বলল কথাটা।
আমি ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে বললাম, ‘তো কিচ্ছে?দারুণ কিছু দেখতে হলে অপেক্ষা তো করতেই হবে।’
মৃন্ময় বলল, ‘আল্লাহ জানে কী দারুণ দেখাবি তুই।’ এ নিয়ে কিছুক্ষণ প্যাঁচাল হলো।

আবারও আড্ডায় মেতে উঠলাম আমরা।আমাদের মাঝে ছোঁয়াকে কেমন মনমরা লাগছে দেখতে।আমি বুঝতে পারছি তন্ময়কে কিছু বলতে চাইছে;কিন্তু পারছেনা। এই জন্য আরও বেশি খারাপ লাগছে ওর।আমি মৃন্ময় আর দ্বীপকে চোখের ইশারায় উঠিয়ে পাশে নিয়ে গিয়ে বসলাম।ওরাও বুঝতে পারল ব্যাপারটা।দ্বীপ এই বয়সেই সিগারেট খায়। খুব একটা নেশা তা নয়;তবে প্রায়শই ও সিগারেট খায়।সাথে মৃন্ময়ও মাঝেমধ্যে সঙ্গ দেয়।তবে তন্ময় খায় না।দ্বীপ বলল, মৃন্ময় চল পানি খেয়ে আসি।’

আমি পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললাম, ‘নে খা।’
‘আমি এ পানি খাব না।’
‘তাহলে কোন পানি?’
মৃন্ময় বলল, ‘এ পানি সে পানি নয়।ও মনে হয় পেট খালি করতে যাবে।’
‘পেট খালি মানে?’
‘মানে পানি ত্যাগ করতে যাবে সাথে ধোঁয়া উড়াতে।’
‘শ* য় * তা* নে র দল দূর হ।’

‘হ দ্রুত নিয়ে যাই।নাহলে আবার সমস্যা করতে পারে।সেদিন বিছানাতেই পানি ত্যাগ করেছে।স্বপ্ন দেখেছে বাইরে করছে সেটা বিছানাতেই সেরেছে।’
দ্বীপ মৃন্ময় কে লা* * থি মে* রে বলল,’শালা ‘ফাউল কোথাকার!’
ওরা দু’জনে চলে গেল।

তাকিয়ে আছি আমার থেকে কিঞ্চিৎ দূরে বসে থাকা দুজনে কপোত-কপোতির দিকে।ছোঁয়া উঠে এসে তন্ময়ের পাশে বসল।কিছু বলবে ঠোঁট কাঁপছে কিন্তু বলতে পারছে না।অনেক্ষণ সে তাকিয়ে আছে।তন্ময় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।তন্ময়ের চোখ জুড়ে মুগ্ধতা,স্নিগ্ধতা।মন ভরে দেখছে ছোঁয়াকে।

এ যেন দীর্ঘদিনের পিপাসিত চক্ষু তার তৃষ্ণা নিবারণ করছে!জীবনে প্রথমবার তন্ময়ের অনুভূতিতে সায় দিয়ে ছোঁয়া তার পাশে বসেছে।তন্ময়ের এক জীবনের দূর্বলতা ছোঁয়া,এক জীবনের সাধনা,এক জীবনের ভালবাসা।মানুষ বলে না,সুদর্শন ছেলেরা কখনো এক নারীতে আসক্ত হয় না।তন্ময়কে দেখলে সে ধারণা ভুল প্রমাণিত হবে।ছোঁয়ার গালে তন্ময় হাত রেখে বলল,

‘কিছু বলবি?’
ছোঁয়ার কম্পিত ঠোঁট আরও কেঁপে উঠল।মাথা নাড়িয়ে বুঝাল, হুম বলব।
‘তাহলে বল।দেরি করছিস কেন?আর কত দেরি করবি?’
‘আমি বললেও কি তুই বিলিভ করবি তন্ময়?
‘একবার বলেই দেখ।’
‘আমি পারছিনা তন্ময়।আর পারছিনা।’

‘কী ভেবেছিস তোকে ইগনোর করছি?এই-যে ওশানের কারণে কষ্ট পেলি আমি তোর সেই কষ্টটা অনুভব করিনি?তুই যে প্রতিনিয়ত কষ্ট পাচ্ছিস আমি খেয়াল করছিনা? বরং আগের থেকে একটু বেশি খেয়াল রাখি তোর।সারাক্ষণ তোর মলিন মুখ আমাকে যন্ত্রণা দেয়।আমি পুড়ছি ছোঁয়া,প্রতিনিয়ত জ্বলছি তোর কষ্ট দেখে।মৃন্ময় যে এক্সট্রা নতুন আইডি খুলেছে ওটা আমার-ই আইডি।সারারাত তোকে একা কষ্ট পেতে দিইনি আমি।আমি জানি তোর ঘুম হয় না রাতে।তাই সারারাত তোর সাথে জেগে চ্যাটিং করি।’

‘আমাকে একটা লাস্ট চান্স দিবি তন্ময় তোকে ভালবাসার?একটা চান্স!আমি তোকে ভালবাসি বলার সাহস পাচ্ছিনা।কারণ আমি সময় থাকতে তোকে গুরুত্ব দিইনি।যখন ভীষণ ধাক্কা খেয়েছি,জীবনে তখনি উপলব্ধি করেছি তুই-ই ঠিক আমার জন্য।কিছুদিন একাকি থেকে উপলব্ধি করেছি তুই আমার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

তোকে নিয়ে তো আলাদা করে কখনো ভাবিনি তবুও তোর ইগনোর কেন আমাকে কষ্ট দিল?কেন মনে হলো তুই ছাড়া কিছু নেই আমার?আমার পুরো পৃথিবী শূন্য।সারাক্ষণ আমার সাথে সাথে থেকেছিস তাই আমি অনুভব করতে পারিনি তোর অভাব।তুই যদি বহু আগে আমাকে ইগনোর করতি আমি বোধহয় বহু আগেই বুঝে যেতাম আমি তোকে ভালবাসি।তন্ময় আমি শে’ষ হয়ে গিয়েছি!আমি ঠকেছি,ভীষণ আঘাত পেয়েছি!আমি এত বোকা!কে ভালবাসার মানুষ,কে অভিনেতা এটাই বুঝতে পারিনি!

ছোঁয়া অঝরে কাঁদছে,কেঁদেই যাচ্ছে।দীর্ঘ দিনের গ্লানি বোধহয় এবার-ই বেরিয়ে যাবে।
‘আমি তোকে প্রেম করার কোনো সুযোগ দিব না ছোঁয়া।সরি।’
‘তাহলে?’
‘বউ হবি আমার?’

ছোঁয়া হেসে দিল।কান্নাভেজা মুখে হাসির প্রলেপটা দারুণ লাগছে!
‘আপাতত গরিব আছি,পারবি একটা টিনের ঘরের নিচে আমার সাথে থাকতে?’
‘পারব।’
‘পরীক্ষা যেদিন শেষ ওইদিন-ই আমরা বিয়ে করব,মনে থাকে যেন।বাড়িতে গিয়ে জানিয়ে দিবি।তোকে একবার পেয়েছি আর হারানোর রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা।’
তন্ময় ছোঁয়ার হাতের উপর হাত রাখল।দুজনের-ই মুখে হাসি।এখন শুধু পরীক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষা!

বাড়িতে ফিরে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম।সন্ধ্যাগড়িয়ে রাত হলো।তন্ময়ের দেওয়া ফটোফ্রেমটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলাম।খুব ইচ্ছা করছে আমাদের দুজনের একটা ফটো রাখতে!খাটের উপর মাথার দিকে সোজা ওয়ালে একটা ফ্রেমে অনেকগুলো মুখ ক্যামেরায় বন্দি।রোশান স্যার আর তার বন্ধুরা।

এটা সাজেক ভ্রমনের পিকচার।সবার মাঝে আমার চোখ আটকাল ওনার দিকে।সন্ধ্যা থেকে একটানা বই পড়ে মাথা ধরেছে।এ বাড়িতে এখন কেমন দমবন্ধ লাগে আমার।আমার গল্প করা বা কথা বলার মতও কেউ নেই।একমাত্র ওনি এলেই মনে হয় চারিদিক মুখরিত।ফোন হাতে নিয়ে ওনার নাম্বার টা ডায়াল করেও কেটে দিলাম।কী বলব ফোন করে!আমার বলতে ইচ্ছা করছে আমার একা ভালো লাগছে না আপনি আসুন।কিন্তু লজ্জায় সেটা পারছিনা।

ফোনটা বিছানায় ফেলে দিলাম।সাথে সাথেই ফোনটা বেজে উঠল তড়িৎ গতিতে।ফোনের দিকে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি ওনার নাম্বার টা ভাসছে।দ্রুতই ফোনটা রিসিভ করে কানে দিলাম।ফোনের ওপাশ থেকে মোহনীয় কন্ঠস্বরে ওনি বললেন,

‘বলো।
‘কী বলব?’
‘মিস কল দিলে।’
‘মিস কল! কখন?’
‘মাত্র-ই তো এসেছে।’
‘মনে হয় হাতের চাপ লেগে গিয়েছে।’

ফোন তো সাথে সাথেই কাটলাম,মিস কল হলো কীভাবে বুঝলাম না!
‘ভাবলাম ইচ্ছা করেই দিয়েছ।’
‘না,মানে।’
‘থাক আর কিছু বলতে হবে না।পড়া শেষ?’
‘হুম শেষ।’
‘সত্যি তো?নাকি তোমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলে মেসেঞ্জারে?’

‘নাহ! সত্যি পড়েছি।’
‘আমাকে কিপ্টা মনে হয়?’
‘হ্যাঁ মনে হয়।’
‘কোন দিক দিয়ে?’
‘অনেক দিক দিয়ে।বিয়ে করেছেন কখনো কিছু গিফট করেছেন?’
‘গিফট করতে হয় বিয়ে করলে?’

‘অবশ্যই।’
‘ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে চাবি আছে।চাবি নিয়ে আলমারি খোলো।’
‘কেন?’
‘কেন’র উত্তর ওখানেই আছে।’
ড্রেসিন টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুললাম।ওনি লাইনেই আছেন।
‘খুলেছ?’
‘হ্যাঁ।’

‘কতগুলা প্যাকেট আছে দ্যাখো।’
‘এ তো আপনি প্রায়-ই বাসায় ফেরার সময় নিয়ে আসেন।’
‘আনি, কখনো তো খুলে দেখনি।’
‘আপনার দরকারি জিনিসে কি আমার হাত দেওয়া উচিত হবে?’
‘ওখান থেকে একটা শাড়ি পরে রেডি হও আমরা বাইরে ঘুরতে বের হব।’
‘এত রাতে?’

‘ঘোরার জন্য রাত-ই উত্তম।যদি তোমার সমস্যা থাকে তাহলে থাক।’
‘না কীসের সমস্যা?কী বলছেন?’
আলমারিতে পাঁচটা প্যাকেট।প্যাকেট পাঁচটা বের করে দেখি পাঁচটা শাড়ি।প্রতিটা প্যাকেটেই শাড়ির সাথে ম্যাচিং গহনা আর পাথরের চুড়ি।আমি দেখেছি মাঝে মধ্য ওনি প্যাকেট নিয়ে ঘরে ঢোকেন।দু’দিন ওয়্যারড্রোব-এর উপর রেখে তারপর আলমারিতে উঠিয়ে রেখেছেন;অথচ আমাকে বলেননি তোমার জন্য।

কিন্তু প্যাকেটের গায়ে ঠিকই লেখা আছে তোমার জন্য।পাঁচটা শাড়ির মাঝে সাদা শাড়িটার দিকে নজর গেল।জরজেট শাড়িটা ভালভাবে পরে নিয়ে দু’হাত ভর্তি স্টোনের সাদা চুড়ি পরলাম।চুড়ি গুলো ভারী তবে দেখতে খুব সুন্দর। মুঠোভর্তি চুড়ি,কাজল,লিপিস্টিক,কপালে ছোট্ট টিপ, খোলা চুলে আমাকে যেন অন্যরকম লাগছে!আয়নায় বারবার নিজেকে দেখছি।বিভিন্ন এঙ্গেলে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছি।শুধু একটাই কথা উঁকি দিচ্ছে মনে,ওনি কি মুগ্ধ হবেন!রেডি হওয়ার পর ছোট হ্যান্ড পার্স টা নিয়ে উনাকে ফোন দিলাম।

ফোন ধরতেই বললাম, ‘কোথায় আপনি?’
‘রিক্সা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি,চলে এসো।এক-মিনিট এটুকু আসতে পারবে তো?’
‘পারব বাট বাইক নিবেন না?’
‘বাইক নিয়ে ঘুরে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা গেলেও; তারটা যাবেনা।’
‘কারটা?’
‘প্রশ্ন না করে এসো।’

তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেলাম।আকাশে গোলবৃত্তাকার চাঁদ। চারদিক সোনালি আলোয় ঝিকিমিকি করছে।দু-মিনিটে রাস্তায় পৌঁছালাম।রাস্তায় একটা রিক্সা অপেক্ষা করছে।আমাকে দেখেই ওনি রিক্সা থেকে উঁকি দিয়ে বললেন, ‘এসো।’

রিক্সায় ওঠার সময় হাত এগিয়ে দিলেন ওনি।ওনার হাতের উপর হাত রাখার অনুভূতিটা ছিল চমৎকার।ওনার চোখে চোখ রেখে হাতে হাত রেখে রিক্সায় উঠলাম।আমার ঠোঁটে লজ্জামিশ্রিত হাসি।রিক্সায় বসতেই উনার শরীরের সাথে সম্পূর্ণ মিশে গেলাম।ওনি রিক্সাওয়ালাকে বললেন, ‘মামা চলেন।’

নির্জন রাস্তা, খোলা রিক্সায় আমরা দু’জন।মাথার উপর চাঁদ,চারদিকে চাঁদের আলো।ঝোপ-ঝাড়ে জোনাক পোকা উড়ছে।ফুরফুরে বাতাস বইছে।খোলা চুল উড়ে ওনার চোখে মুখে পড়ছে।সময়টা যেন স্বপ্নের মতো।
মনের মাঝে এমন-ই ভাললাগাময় শিহরণ বইছে!আনন্দে চিৎকার দিয়ে এই নির্জন প্রহরে বলতে ইচ্ছা করছে ধন্যবাদ পৃথিবী, আমাকে এত সুখী করার জন্য।

এত সুন্দর একটা রাত উপহার দেওয়ার জন্য,জীবনের শ্রেষ্ট মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য।ধন্যবাদ এই শ্যামসুন্দর মানুষটাকে আমার আজকের সময়টা এত স্পেশাল করে তুলবার জন্য।একমাত্র একটা মেয়েই ভালো অনুভব করতে পারবে প্রিয় মানুষের সাথে এমন একটা মুহূর্ত কাটাবার আনন্দ কত ভয়াবহ।

লজ্জায় সরে বসার চেষ্টা করছি।ইশ! কী লজ্জা!ওনার সাথে মিশে গেলেই লজ্জা লাগছে।খানিকটা সরে একদম গুটিসুটি মেরে বসতেই ওনি আমার উন্মুক্ত কোমরে হাত রাখলেন।সাথে সাথে শরীর কেমন যেন ঝাড়া মেরে উঠল।সমগ্র তনু জুড়ে শিহরণ বয়ে গেল।ঠিক যেন কারেন্ট শক-এর মতো।তড়িৎ বেগে ওনার দিকে তাকালাম।কোমরে হাত রেখে এক ঝটকায় টান দিলেন ওনার দিকে।মাথা এসে ঠেকল ওনার বক্ষে।চোখ মুখ থেকে চুল সরিয়ে কানের সাথে ওষ্ঠ মিশিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন,

একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব ২৯

‘দূরে যাচ্ছো কেন?যতই কাছে টানছি তুমি ততই দূরে যাচ্ছো।কেন বলোতো?’
আমি ভীষণ অবাক হয়ে চোখ তুলে তাকালাম ওনার দিকে।লজ্জায় নেত্রযুগল সংকুচিত হয়ে আসছে।এভাবেই মানুষটা আমাকে ফাঁসাচ্ছেন।কী সাংঘাতিক ভাবে আমাকে ফাঁসিয়ে নিলেন!

একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব ৩২+৩৩