এক শ্রাবণ হাওয়ায় পর্ব ২৮+২৯

এক শ্রাবণ হাওয়ায় পর্ব ২৮+২৯
কায়ানাত আফরিন

-‘ওসব এগ্রিমেন্টের কথা ভুলে যাও আহি। বিয়ে যেহেতু আমরা করেছি, তাই সেটা মেনে নিতে হবে আমাদের। আফটার অল এত সুইট , কিউট বউটাকে তো আর হাতছাড়া করা যায় না? আজরান ভাইয়া ঠিকই বলতো , এমন বউ রাগারাগি করার জিনিস না ; আদর করার জিনিস।এখন তুমি যেহেতু গতকাল আমায় পাগল করে দিয়েছো এখন তোমায় শাস্তি দেবো নাকি আদর করবো?’

আমি তৎক্ষণাৎ উনার বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম উনাকে। আমার হৃদস্পন্দন ক্রমাগত যেন বেড়েই চলেছে। আমি এখনও বুঝতে পারছি না যে উনার এরকমটা করার কারন কি। উনি এবার বললেন,
-‘ভয় পাওয়ার দরকার নেই। জাস্ট মজা করছিলাম। বাই দ্য ওয়ে, আমি তখনও বলেছিলাম এখনও বলবো, সময় আছে। ঢাকায় ফিরে চলো আমার সাথে। আজ নাহয় কাল তোমায় আমার সাথে ফিরে যেতেই হবে।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি উনার সাথে কথা না বাড়িয়ে এবার রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।কেননা আমি জানি আনভীর মুখে মুখেই মামীকে হ্যাঁ বলেছেন এখানে আজ রাত থাকবেন। তবুও আমি নিশ্চিত উনি নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করবেন আজকের মধ্যেই আমায় এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে আনভীর তো এর আগে আমায় স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে আমার সাথে উনার কোনো যোগসূত্র নেই। তাহলে এখন এগ্রিমেন্টের কথা ভুলে যেতে বলছেন কেনো? আমার কাছে উনার নতুন ব্যবহার কেমন যেন অন্যরকম লাগছে। খুব শীঘ্রই এর কারন জানতে হবে আমায়।

মোটামোটি অনেকক্ষণই উনাকে কড়াকড়ি ভাবে এড়িয়ে চলেছি আমি। একটাবারের জন্যও আনভীরের মুখোমুখি যাইনি। উনি আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্ত ছোট মামা যেভাবে উনার সাথে শলাপরামর্শ করে চলছেন উনি না পারছেন থাকতে না পারছেন সরে আসতে। ছোটমামা উনার সাথে কথার মাঝখানে বললো,
-‘বুঝলা আনভীর, দেশের জন্য বড় কিছু করার অনেক ইচ্ছা আছে আমার। আমার খুব খারাপ লাগে বেকার ছেলেদের চাকরির জন্য এভাবে হন্য হয়ে ঘুরে বেড়াতে। আমি ভাবছি এ এলাকার সব বেকার যুবকদের নিয়ে একটা সংঘ গড়ে তুলবো। ওরা যেন চাকরির আশায় বসে না থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার কথা পরিকল্পনা করতে পারে সে ব্যাপারে সবাইকে বুঝাবো।আইডিয়াটা কেমন?’

-‘আইডিয়াটা দারুন মামা , তবে আপনি একা সব করবেন কিভাবে?’
-আমি একা কেনো করবো, তুমি আছো না? তাই তো তোমার সাথে আইডিয়াটা শেয়ার করলাম।’
আনভীর কোনোমতে ঠোঁটচেপে হাসলেন। আমি বুঝেছি মহাশয় ভালোই ফ্যাসাদে পড়েছে। তবে আমি একদন্ডের জন্যও উনার মুখোমুখি হলাম না। ছোটমামা যেই , একদিনের মধ্যেই উনাকে বাসায় ফেরত পাঠিয়ে দেবেন। বিষয়টা ভাবতেই আমার মনে পৈশাচিক আনন্দ ফুটে ওঠলো।

আজ মামীর সাথে মটরশুটির ডাল রান্না করা শিখেছি আমি। যদিও ছোটবেলা থেকেই কাজের হাত আমার বড্ড পরিপক্ক , তবে রান্নার বিষয়টা এখনও ভালোমতো সামলে ওঠা হয়নি। আজ মামীর সাথে ইলিশ ভূনা, গরুর মাংস , চিংড়ীর মালাইকারী আরও হরেক রকম পদ রান্না করা হয়ে গিয়েছে। এগুলো পরিবেশনের সময়ই আনভীরের মুখোমুখি হতে হলো আমাকে। তবে আমি উনাকে খুব সুক্ষ্ণভাবে এড়িয়ে চলেছি ।

এখন দুপুরের প্রহর কাটিয়ে দীপ্তমান বিকেল। মামুদের ছাদে ছোট মামা বাহারি পদের গাছ লাগিয়ে পুরো বাগান করে রেখেছেন। মামীর এ নিয়ে অনেক বিক্ষোভ যে এ গাছগুলোর জন্য সে ঠিকমতো কাপড় শুকাতে পারে না। কিন্ত ছোট মামা তো ছোট মামাই। উনার মাথায় একবার একটা ভূত ঢুকলে উনি তা করেই ছাড়েন। একবার পরিবেশ সংরক্ষণের এক সেমিনারে গিয়ে উনি পরিবেশে গ্রীণহাউস গ্যাসের প্রভাব কমাবেন বলে নিজের লক্ষ্যকে স্থির করেন।

পরে বড় মামু থেকে সাড়ে সাতহাজার টাকা নেন শুধুমাত্র গাছ কিনে বপন করার জন্য। ছয় মাস হতে না হতেই উনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে এখন বেকার যুকদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা করলেন। এসব কিছুই ছাদে বসে আমায় বলছেন ছোটমামা। আমি উদগ্রীব হয়েই উনার প্রতিটা কথা শুনছি। হঠাৎ মামী আমায় ডাকতেই পরে মামাকে একা রেখে অগত্যা রান্নাঘরে যেতে হলো আমায়। আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

-‘আমায় ডেকেছিলে?’
মামী আমার হাতে চায়ের ট্রে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-‘তোর বড় মামুর রুমে নিয়ে যা। আনভীর আর তোর মামু কথা বলছেন ওখানে।’
আমি মাথা নাড়িয়ে ট্রে টি নিজেরহাতে নিয়ে চলে গেলাম বড় মামুর ঘরের উদ্দেশ্যে। দরজার ঠিক কাছাকাছি যাওয়ার পর আমি উনাদের কিছু কথা শুনেই পা থামিয়ে দেই। মামু এবার আনভীরকে বললেন,
-‘তোমার আর আহির মধ্যকারসম্পর্কটি আমি একটু হলেও আন্দাজ করতে পারি আনভীর। যতই হোক , একটা বাজে পরিস্থিতির সাপেক্ষেই তোমাদের বিয়ে হয়েছে।’
আনভীর নিশ্চুপ।মামু এবার বললেন,

-‘একটা কথা বলি আনভীর। আহি বাচ্চা একটি মেয়ে। উনিশে পা দিয়েছে বেশিদিন কিন্ত হয় নাই। তবুও এই জীবনে ওর মা মারা যাওয়ার পর অনেক অমানুষিক যন্ত্রণার স্বীকার হয়েছে ও। আমি অনেকবার আহিকে দত্তকে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। গ্রামের পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে কোট কাচারি সবকিছু আমি বিচরণ করেছি। কিন্ত আহির যেহেতু বাবা আছে এবং সে সাবলম্বী আহিকে লালন পালনের জন্য তাই ওকে দত্তক নেয়াটা সম্ভব হয়নি আমার। এসবের জন্য আহির বাবা আমাদের সাথে একেবারেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ,,,,,,(কিছুটা দম ফেলে),,,,,আহি অন্য চারপাঁচটা মেয়ের মতো এতটা স্ট্রং না আনভীর। মা’হীনা মেয়ে যার কাছে বাবার ছায়াও ছিলো না তাই নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখতো। আমি চাই না যে বিয়ের পরেও ও এসব কষ্টে ভুগুক।’

-‘আপনি ভুল ভাবছেন মামা। আমিও চাই যে আহি নিজেকে সাবলম্বী করুক। এন্ড আমি জানি যে ও খুব আবেগী ধনের মেয়ে। তাই ওর সাথে এমন কোনো আচরণ করতে আমি চাই নি যাতে ও পড়ালেখা ছেড়ে ক্ষণিকের আবেগে হারিয়ে যাক। ওর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছি আমি মামা। ওর পড়ালেখা থেকে শুরু করে সব কিছুর প্রতি আমার নজরছিলো। তবে একজন হাসবেন্ট হিসেবে যেটা আমি করিনি তা হলো নিজেকে ওর কাছে প্রিয়জন করে তোলা।

কেন করিনি জানেন? যাতে ও পড়ালেখা বাদ দিয়ে শুধু আমায় নিয়ে যেন চিন্তা না করে। ভালোবাসার মতো ক্ষণিকের ভালোলাগা যেন ওর পড়ালিখার ক্ষতি না করে। আমি ওর সাথে স্ট্রিক্ট হয়েছি শুধুমাত্র ওকে বুঝানোর জন্য যে আহিকে নিজে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এভাবে নিজেকে গুটিয়ে ফেললে চলবে না। এককথায় ওর মনের দুর্বলতা কাটানোর জন্য যা করার দরকার সেই সবটুকু রেসপন্সিবিলিটি আমি পালন করেছি।’

-‘বিয়ের সম্পর্ক দায়বদ্ধতার মধ্যে থাকে না আনভীর। আমি সরাসরি তোমায় তাই প্রশ্ন করবো।,,,,,,,,তুমি কি আহিকে ভালোবাসো?’
আনভীর থমকে গেলেন। সেই সাথে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা আমিও। মামুর মতো আমিও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি উনার উত্তরটি শোনার উদ্দেশ্যে। আনভীর এবার তপ্তশ্বাস ছেড়ে বললেন,
-‘আহিকে আমি ভালোবাসি কি-না তা আমি জানিনা মামা ,তবে আহিকে আমার প্রয়োজন।’

আমার আর কিছু শোনার বাকি থাকলো না আর। যা উত্তর জানার তা পেয়েই গিয়েছি। উনি উনার প্রয়োজনীয়তার তাগিদে আমায় নিতে এসেছেন শুনতেই চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমি কোনোমতে নিজেকে সামলে নীলুর কাছে গিয়ে বললাম ট্রে টা দিয়ে আসতে। তারপর আমি নিজেকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখলাম। দোষ আমারই। উনার ব্যবহারে আমি বেশি আশা করে ফেলেছি। আমি শুধুমাত্র উনার প্রয়োজনীয়তা.. আর কিছুনা !!!

রাত ১ টা বাজে প্রায়। বিছানায় নির্ঘুমে রাত কাটছে আমার। ঘরে আমি একা। আনভীর নেই। উনি চলে গিয়েছেন আমায় একা রেখে। বলতে গেলে উনাকে চলে যেতে আমি বাধ্য করেছি। সন্ধ্যার সময় আনভীরের সাথে ভয়াবহ মনোমানিল্য হয় আমার। উনি জেনে গিয়েছেন যে আমাদের চুক্তির ব্যাপারটা মাকে বলেছি আমি। উনি এই নিয়ে অজান্তেই আমার সাথে একটু রাগারাগি করে ফেলেন। আমি শান্ত হয়েই উনার সব কথা শুনছিলাম। তবে উনি যখন পুনরায় আমায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য জোড় করলেন নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারিনি আমি। প্রখর গলায় জিঙ্গেস করলাম,

-‘কেনো যাবো আমি আপনার সাথে? আমি আপনার প্রয়োজনীয়তা বলে?’
-‘কথা অন্যদিকে ঘুরিও না আহি। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। মা যদি বুঝেন যে তুমি আর আসবে না তাহলে বাবাকে সব সত্য বলে দিবে। যা আমি চাচ্ছি না।’
-‘কিন্ত আমি চাই না আপনার সাথে ফেরত যতে। আমার আপনার দায়বদ্ধতা বা প‍্রয়োজনীয়তা কোনোটাই হওয়ার ইচ্ছে নেই। বাই দ্য ওয়ে মিঃ আনভীর? আমি আপনার কেমন প্রয়োজনীয়তা ? মানসিক নাকি শারীরিক? তো সেটা তো চাইলে আপনি আগেই ভোগ করতে পারতেন আমার ওপর জোর খাটিয়ে। এখন এমন করছেন কেনো?’

আনভীরের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠলো আমার কথায়। খুব কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছেন। কিন্ত আমি নিজের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছি। উনার তখনকার কথায় আমার মাথায় শুধু শারীরিক প্রয়োজনীয়তাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে। উনি এবার তৎক্ষণাৎ একটা সিদ্ধান্তনিয়ে ফেললেন। বলে ওঠলেন,
-‘আমাদের বিয়ের দিন মানুষদের নোংরা কথা আমায় যতটা না হার্ট করেছিলো তার থেকেও বেশি হার্ট করলো আমায় তোমার কথাটি। তুমি এখানেই থাকো আহি। যতদিন খুশি থাকো। আমি আর জোর করবো না এটলিস্ট শারীরিক প্রয়োজনীয়তা কথাটি শোনার পর। আমি চলে যাচ্ছি।’

আনভীর একমুহুর্তের জন্যও থাকলেন না এখানে। সবাই বারবার জিঙ্গেস করছিলো যে উনি হঠাৎ কেনো ফিরে যাচ্ছেন তবুও আমরা দুজনের কেউই কিছু বললাম না। আনভীরের এমন শীতল প্রতিক্রিয়া আমায় ভাবিয়ে তুললেও আমি নিজেকে শক্ত করে রাখলাম। উনার জন্য মনের কোঠায় শূণ্যতা সৃষ্টি হলেও সারাত নির্ঘুমে কাটিয়ে দিলাম। সেই ঘটনার আজ চারদিন হতে চললেও আনভীর একটাবারের জন্যও কল করেনি আমায়।

আমি অধীর আগ্রহী হয়ে বসে ছিলাম উনার ফোনের জন্য । জানিনা কেন। তবে উনার গম্ভীর কন্ঠ শোনার জন্য আমার কান যেন তৃষ্ণার্ত হয়ে গিয়েছিলো। আচ্ছা উনি কি একটাবারের জন্যও মনে করলেননা যে উনার ব্যবহারে আমি ঠিক কেমন কষ্টটা পেয়েছিলাম? শুধু নিজের রাগ আর ইগোর কথা ভেবে এভাবে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করাতে অভিমানটা আমার আরও চাড়া দিয়ে উঠলো।মনে হতে থাকলো সবকিছু কেমন যেন বিষাক্ত।

সকালে আমার ঘুমটা ভেঙেছিলো নীলুর ধাক্কাধাক্কিতে। বিগত কিছুদিন ধরে নির্ঘুমে রাত কাটানোর জন্য প্রায়ই সকালে উঠতে দেরি হয়ে যায়। তাই এসময়ে নীলুর কন্ঠে আমি বেশ বিরক্ত হলাম । ঘুমুঘুমু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম,
-‘কি হয়েছে?’
-তুমি জলদি উঠো।
নীলুর দ্বিধাগ্রস্থ কন্ঠ। এমন কন্ঠ পেয়ে তৎক্ষণাৎ উঠে বসি আমি। নীলুকে চিন্তিত লাগছে। চোখমুখ ফ্যাকাসে। কমাগত শুকনো ঢোক গিলছে। আমি তাই ওর গালে হাত স্পর্শ করে জিঙ্গেস করলাম,
-‘তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? কি হয়েছে?’
নীলু ভয়ার্ত গলায় বললো,

-অ অপূর্ব ভাইয়া এসেছে আপু!
আমার চোখের ঘুম উড়ে গিয়ে নিমিষেই স্থান করলো ত্রাসের রাজত্ব। অপূর্ব ভাইয়া এসেছেন — কথাটি কানে আমার নুপুরের ন্যায় বাজছে। আমি শুকনো ঢোক গিললাম ক্রমাগত। কিন্ত হঠাৎ এভাবে এখানে আসলেন কেনো ভাইয়া?

মামুদের বাড়ির বারান্দায় সোফায় শান্ত হয়ে বসে আছে অপূর্ব ভাইয়া। আমার চাচ্চুর ছেলে। যার সংলাপটা আমার জীবনে খুব কমই টেনে আনা হয়। আসলে আমি তার অস্তিত্বটাকে আমার থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার জীবনের একসময়ে সে এমনভাবে আমার মস্তিষ্কে জায়গা করে নিয়েছিলো যেটার কথা ভাবতেই আমার শরীরে কাটা দিয়ে উঠে। তাই আমি তাকে দেখে আরও গুটিশুটি হয়ে তার বিপরীতমুখী সোফায় বসলাম। আমায় এতটা ভয় পেতে দেখে মিহি হাসলো অপূর্ব ভাইয়া। বললেন,

-‘তোর ভয়টা আর কমাতে পারলাম না আমি।’
আমি চুপ হয়ে বসে রইলাম।তবে একটা জিনিস টের পেয়েছি, ভাইয়া পরিবর্তন হয়েছে আগের থেকে। তার কথাবার্তা , আচার-আচরণ , ব্যাক্তিত্ব সবকিছুতেই একটা অভাবনীয় পরিবর্তন দেখে আমার অন্যরকম লাগলো। এডমিশন টেস্টের কিছুদিন আগেও চাচীর সাথে কথা হয়েছিলো আমার। তখন উনি ভাইয়ার যা পাগলামির কথাগুলো বললেন সেগুলোর সাথে উনার এখন আকাশ-পাতাল তফাৎ। তবুও আমার ভয় হচ্ছে।

মনে হচ্ছে যেনো সুযোগ পেলেই হয়তো আবার অতীতের মতো আমায় আঘাত করে বসবে। তারওপর মামা-মামী, ছোটমামা কেউই বাড়িতে নেই। নীলু বললো যে ওর নানুবাড়িতে কার জানি সন্তান হয়েছে সেই উপলক্ষে সকালেই সবাই সেখানে গিয়েছে। আমায় গতরাতে মামী বলেছিলো কিন্ত আমি ভুলে গিয়ছিলাম ব্যাপারটি। আমি নিজেকে শক্ত রাখলাম। কেননা ভয়ই অন্য একজনের মধ্যে পশুত্ব এনে দেয়। আমি থমথমে গলায় বললাম,

-‘কেন এসেছো এখানে তুমি?’
-‘আমি তো ভেবেছিলাম যে তুই আগে জিজ্ঞেস করবি যে তোর ঠিকানা কোথায় পেলাম?’
ভাইয়ার সরু কন্ঠ। কিছুক্ষণ নীরবতা কাটানোর পর নিজ থেকেই বললো,
-‘আনভীর কল দিয়েছিলো তোর বাবার কাছে। জানতে পারলাম তুই নাকি মামু বাড়িতে আছিস। আর আমিতো এ বাড়ির ঠিকানা আগে থেকেই জানতাম। তাই এসে পড়েছি তোর সাথে কথা বলার জন্য।’
-‘আমার প্রশ্ন এটা ছিলো না ভাইয়া। আমি জিজ্ঞেস করেছি যে কেনো এসেছো এখানে?’
ভাইয়া বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। বলে ওঠলো,

-‘তুই আর আগের মতো নেই রে আহি ! বিয়ের পর এত পরিবর্তন?’
-‘সেটা নিয়ে তোমায় এত ভাবতে হবে না।’
অপূর্ব ভাইয়া কি একটা ভেবে আমার হাত ধরে টেনে পা চালিয়ে আমার বেডরুমে নিয়ে গেলো এবার। আমি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে যে রুম থেকে বেরিয়েছি ওটা দেখেই সে আন্দাজ করে নিলো যে এই রুমটিতেই হয়তো আমি থাকি। আমার চোখ-মুখ ফ্যাকাশে হয়ে এলো ভাইয়ার এমন কাজে। নীলুও আশেপাশে নেই যে ওকে ডাকবো। অগত্যা আমি হাত মোচড়া মোচড়ি করতে করতে বললাম,

-‘এভাবে হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলে কেনো?’
-‘এমন ভাব করছিস যে আজই তোর হাত ধরেছি।’
ভাইয়ার কথা শুনে তৎক্ষণাৎ নিজের হাত জোরপূর্বক আমি ছাড়িয়ে নিলাম। গহীন কন্ঠে বললাম,
-‘আগে কেনো ধরেছিলে তা আমার মনে নেই, তুমি এরকমটা ভাবলে কি করে? শুনে রাখো , উইদআউট মাই পার্মিশন নেক্সট টাইম কখনোই আমায় স্পর্শ করতে আসবে না।’

অপূর্ব ভাইয়া আমায় এতটা রেগে যেতে দেখে অবাকের চরম সীমানায় চলে গিয়েছে। আমার এই ব্যবহার তার কাছে নতুন। এমনকি আমি নিজেও অবাক হয়েছি নিজের এমন বিক্ষোভে। আসলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের চাপে সবমিলিয়ে আমি এতটাই পাথর মনের হয়ে গিয়েছি যে আজকাল কারও জন্যই তেমন কোনো অনুভূতি কাজ করেনা। নিজেকে এতটা স্ট্রং থাকার পেছনে কি আমার উচিত আনভীরকে ক্রেডিট দেওয়া? অপূর্ব ভাইয়া এবার ইশারায় জানালার পাশে থাকা কাঠের চেয়ারটিতে বসতে বললো। আমি বসমাত্র সে আমার বরাবর বসে পড়লো চেয়ারে। জানালা খোলা থাকায় শীতল হিমের হাওয়ার উপস্থিতি আমার গায়ে অন্যরকম ভালোলাগা এনে দিয়েছে। অল্পবিস্তর মেঘের আমেজে নীল আকাশটি সুন্দর।

অপূর্ব ভাইয়া মৌনতা কাটালো কিছুক্ষণ। ঠোঁট চেপে গম্ভীর ভঙ্গি নিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকলো। তার উজ্জল মুখে সেই ভাবটা স্পষ্টতই নজরে পড়ছে আমার। অতঃপর ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকলো,
-‘আহি আমি জানি আমার জন্য তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিলি। কিন্ত তুই তার থেকেও বেশি কষ্ট পেয়েছিস আমার চলে যাওয়ার পর। আমার মা তোকে দিয়ে অমানুষিক কাজ করিয়েছে, তাই না রে? বিশ্বাস কর , আমি থাকলে মা কখনোই এমনটা করার সাহস পেতো না। কারন সে জানে তোকে কতটা ভালোবাসি আমি।’
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম এবার। বলে ওঠলাম,

-‘আমার কপাল ভালোবাসার সাক্ষাত কখনও ঘটবে না ভাইয়া। আর তুমি যেটাকে ভালোবাসা বলছো ওটা তোমার পাগলামি। তুমি শুধু জোর করে আমায় নিজের কাছে বন্দী রাখতে চেয়েছিলে। তোমার কোন জিনিসটাকে ভালোবাসা বলে দাবি করবো আমি? আমি তোমার জন্য কোনো ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে পারতাম না , আমায় কোথাও যাওয়ার অনুমতি ছিলো না, আমি অপরিচিত বা পরিচিত কারও সামনে গেলে তুমি হুংকার দিয়ে বাড়িঘর তুলে ফেলতে। একবার কি করলে?

আমার কলেজের এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে শাড়ি পড়ে গিয়েছিলাম আমি। তুমি তা জানতে পেরেই টেনে হিচড়ে বাড়িতে নিয়ে এলে আমায়। তোমার অনুমতি নিয়ে যাইনি বলে আমার হাতের মধ্যে গরম খুন্তি চেপে ধরেছিলে। আলমারি থেকে আমার সব শাড়ি বের করে পুড়িয়ে দিয়েছিলে। একটা কথাই বলে যাচ্ছিলে তুমি ছাড়া কেউ আমায় দেখতে পারবে না। এককথায় আমার ছোটোখাটো জীবনটাকে জাহান্নামে পরিপূর্ণ করার জন্য তুমিই যথেষ্ট ছিলে অপূর্ব ভাইয়া!’

আমি থেমে গেলাম এবার।তাকালাম ভাইয়ার দিকে। তার মধ্যে কোনোরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পেলাম না আমি। তাই আবার বললাম,
-‘একবার তুমি কি যেন বলেছিলে? তুমি আমায় ভালোবাসো বা এসব কথাগুলো আনভীরকে বলে দিবে তাইতো? তাহলে বলে দিও। আমার কাছে এখন কারও অনুভূতিই কোনোরূপ কোনো ম্যাটার করে না।’
অপূর্ব ভাইয়া এবার হাটুগেড়ে বসে পুনরায় হাত ধরলেন আমার বারণ করা সত্বেও। বলে ওঠলেন,

-‘দেখ আহি, তোর এই কষ্টের জন্য হয়তো আমিও অনেকাংশে দায়ী কিন্ত সত্যি বলছি , আমি আমার ভুলটুকু বুঝতে পেরেছি। তাইতো ফিরে এলাম বাবার বারণ করা সত্বেও। তোর হঠাৎ বিয়েতে আমি প্রচন্ড রেগে গিয়েছিলাম। কিন্ত পরে যাচাই করে দেখলাম যে আনভীরের সাথে এক্সিডেন্টলি তোর বিয়েটা হয়ে গিয়েছে। যদি আমি তখন থাকতাম তাহলে কখনোই তোদের বিয়ে আমি হতে দিতাম না। আমার চোখের অগোচরে মা তোর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তবে আনভীর আর তোর মধ্যে যে সম্পর্ক অন্য চার-পাঁচজনের মতো না তা আমি জানি।তোকে শুধু নামেমাত্র এই বোঝাটা টানতে হয়েছে পরিস্থিতির শিকারে।

আহি ! তোকে আমি বড্ড ভালোবাসি রে। আগের মতোই ভালোবাসি। আই প্রমিস , তোর সাথে কখনোই আগের মতো ওভার প্রোটেকটিভ আমি হবো না। মানুষ তো মাত্রই ভুল করে তাই না? এখন আমায় দিয়েও একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। এখন,,,,,,,’
-‘তুমি কি চাও সরাসরি বলো ।’
-‘আমি তোকে চাই। আমি চাই তুই ওই নামে মাত্র বিয়ে থেকে সরে আয়। ‘
আমি এবার বললাম,

-‘আমার বিয়ের দিন কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেনি। সবাই শুধু বলেছিলো যে আমি নাকি বিয়ের আগে আনভীরের সাথে এক ঘরে,,,,,,(এতটুকু বলে থামলাম),,,,,,,তুমি কেন আমা বিশ্বাস করছো?’
-‘তোকে আমার ভালোমতো জানা আছে আহি। চাচিমা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের পরিবারেই তুই বড় হয়েছিস। তুই আর যাই কর্ , একজন ছেলের সাথে কখনোই বিয়ের আগে এসব করতে পারবি না।’
আমি নিশ্চুপ।

-তুই এত কি ভাবছিস আহি? আমি তোর মুখ দেখেই আন্দাজ করতে পেরেছি যে তুই ওই ছেলেটার সাথে সুখে নেই। আমি চাই তুই সুখটা ডিজার্ভ কর যা তুই কখনোই আনভীরের সাথে পাবি না। ইভেন আনভীর নিজে বলেছে যে তোর যদি ইচ্ছে হয় তবে তুই ওকে ছেড়ে দিতে পারবি। আনভীর বা ওর ফ্যামিলি তোকে কোনো বাধা দিবে না।’
আমি খপ করে তাকালাম ভাইয়ার দিকে। ‘আনভীরের’ নামে কথাগুলো শোনার পর মাথা কেমন যেনো ঘুরপাক খাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

-‘মানে? উনার সাথে কথা হয়েছে তোমার?’
-‘হুম। গতকাল তার সাথে তার ভার্সিটিতে দেখা করেছিলাম।’
আমি শুকনো ঢোক গিললাম। জিজ্ঞেস করলাম,
-‘তাহলে তুমি যে উনাকে সব বলে দিয়েছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই আমার।,,,,,,,,,,,,,,,কি বলেছেন উনি?’

-‘কি আর বলবে সে? আমি স্পষ্টত সব বলেছি তোর কথা। আমি তোর সাথে কি অন্যায় করেছিলাম সেটাও বলেছি। ফার্স্ট এ আনভীর রিয়্যাক্ট করলেও যখন বললাম যে আহি কি সত্যিই ভালো আছে এ বিয়েতে,হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো সে। আনভীর চক্ষুলজ্জার জন্য কিছু বলতে পারছে না আহি। ও শুধু এতটুকুই বলেছে তোর যদি ইচ্ছে হয় তাহলে ও নিজ দায়িত্বে তোর আর আমার মাঝ থেকে সরে যাবে।’

শেষ কথাটি বুকে তোলপাড় শুরুকরে দিলো আমার। আমার মস্তিষ্ক যেন নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। অপূর্ব ভাইয়া আরও অনেক কথাই বলেছিলেন কিন্ত মূর্তির মতো বসে রইলাম আমি। আনভীর শেষ পর্যন্ত ছাড়াছাড়ির প্রসঙ্গটাও বলে দিলেন?

অপূর্ব ভাইয়া আমার হাত আরও জোড়ালোভাবে আকড়ে ধরার চেষ্টা করতেই আমি দাঁড়িয়ে সজোরে চড় বসিয়ে দিলাম তার গালে। জীবনের এই প্রথমবার ; এই প্রথমবার এতটা রেগে গিয়েছি আমি যে যাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই তার গায়ে হাত তুলতেও ভাবলাম না দুইবার। সে স্তব্ধ। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম ,

-‘আমি কি কখনও বলেছি যে তোমায় ভালোবাসি আমি?তাহলে কি দরকার ছিলো উনাকে এসব বলার?’
-‘আহি ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি আমরা। তুই ভালোমতই জানিস ওই আনভীর থেকে তোকে আমি যথেষ্ট ভালো রাখতে পারবো যেখানে তোদের বিয়েটা জাস্ট একটা নাটক মাত্র। আমাদের মধ্যে ভালোবাসার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও একটা বন্ধন ছিলো তা তুই জানিস?’

-‘না ! আমি জানতে চাই না , জানার চেষ্টাও করবো না। তোমার পাগলামি একতরফা ভাইয়া!……এখন প্লিজ আমায় একা ছেড়ে দাও। চলে যাও এখান থেকে।’
-‘আহি!’
-‘আমি যেতে বলেছি তোমায়।’

আমায় এতটা অস্থির হতে দেখে চলে গেলেন অপূর্ব ভাইয়া। আমি পা ভেঙে নিচে বসে পড়লাম। আনভীরের ওপর জমানো রাগটাই আমি ভাইয়ার ওপর ঢেলে দিয়েছি এভাবে। আমি মানছি সেদিন রাগবশত অনেক কথা বলে ফেলেছি আমি তাই উনি কিভাবে বলতে পারলেন ছাড়াছাড়ির কথা? আমি তো উনার প্রয়োজন না প্রিয়জন হতে চেয়েছিলাম। আর শেষমেষ এতটা জঘণ্য পরিণতি নেমে এলো।

আমি দুর্বলভাবে বেশ কিছুক্ষণ রুমে বসে থাকি এভাবে। সকাল ঢলে দুপুর এলো, নীলু খাবারের জন্য ডাকতে এসেছিলো , আমি যাইনি। তারপর বিকেলের দিকে কোনোমতে ছাদে গেলাম। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। বাতাস হুহু করে উত্তর থেকে দক্ষিণে ছুটে চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। সিক্ত হয়ে ওঠলো সারা মধুগন্জ। বৃষ্টির বেগতিক ধারায় আমারও চোখ বেয়ে পানি ঝরছে। আমার এত কষ্ট হচ্ছে কেনো এ কথাটি শুনে? শুরুতে তো আমিই বলেছিলাম উনাকে ছেড়ে চলে যাবো। তাহলে এ শূণ্যতার কি নাম দেবো আমি?

হঠাৎ নিচে গাড়ির আওয়াজ পেতেই বুঝলাম মামা-মামী এসে পড়েছে। আমি তখনও মূর্তির মতো বসে রইলাম সেখানে। পায়ের ক্ষত স্থানটিতে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে হতাশার বশে নিজেকে আঘাত দেওয়ার ফলে। পায়ের অল্পবিস্তর রক্ত বৃষ্টির পানির সঙ্গে ধুয়ে যাচ্ছে বারবার। তখনই দরজা ঠেলে ছাদে আসলেন মামী। আমায় এভাবে পাথরের মতো বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে ভিজেই আমার কাছে আসলেন। আমার গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

-‘আহি ! জলদি উঠ এখান থেকে। ঠান্ডা লাগবে তোর।’
আমি নির্বিকার। চোখের পলক ফেলতে যেন ভুলে গিয়েছি।আমি আবছা আবছা শুনতে লাগলাম মামীর কথা। কারন ধীরে ধীরে আমার পৃথিবীটা শূণ্য হয়ে আসছে। মামী আমার পায়ের ক্ষত দেখে আৎকে উঠলেন। বললেন,
-‘ইয়া আল্লাহ ! পা দেখি রক্তে মেখে যাচ্ছে। জলদি উঠ। কষ্ট হচ্ছে তোর?’
আমি দুর্বল কন্ঠে বললাম,
-‘হুম মামী ! খুব কষ্ট হচ্ছে।’
তারপর আর কিছু মনে রইলো না আমার। ঢলে পড়লাম ছাদের সিক্ত মেঝেতে।

গহীন রাত। অদূরে ঝিঝি পোকারডাক কানে শুনতে পাচ্ছি আমি। তবে আমার শরীর দুর্বল। নড়াচড়া করার মতো ক্ষমতা নেই। আমি দুর্বল কন্ঠে চোখ বন্ধ অবস্থাতেই বললাম,
-‘মা !’

হঠাৎ একজোড়া উষ্ণ হাত আমার হাত আবদ্ধ করে নিলো। এই স্পর্শে কেপে উঠলাম আমি। কেননা স্পর্শটি আমার চেনা। আমি দুর্বলভাবে চোখ খুললাম। নিভু নিভু চোখের পাপড়ির আবছা অবয়বে যা দেখলাম তা আমার কোনোক্রমেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। আনভীর ঝুকে আছেন আমার দিকে। চুলগুলো অগোছালো। চোখজোড়া রক্তিম লাল। কেমন যেন অস্থির লাগছে উনাকে। আমার হ্যালুসিনেট হচ্ছে নাতো? আমি দুর্বলভাবে উনার গাল স্পর্শ করলাম। জিজ্ঞেস করলাম,

এক শ্রাবণ হাওয়ায় পর্ব ২৭

-‘আপনি কি আবার ফিরে যাওয়ার জন্য এসেছেন?’
-‘না আহি ! আমি এসেছি তোমায় আমার সাথে ফিরিয়ে নিতে। এখন এসব কথা বাদ দাও, ঘুমানোর চেষ্টা করো। আমি তোমার পাশে আছি।’
উনি তাহলে সত্যি সত্যিই আছেন এখানে। আমার দুর্বল ঠোঁটজোড়ায় নিমিষেই এক ভালোলাগা ছড়িয়ে পড়লো। জানিনা কেনো। তবে আমার জন্য উনার অস্থিরতাটি আমার ভালোলাগে। এককথায় প্রচন্ড রকমের ভালোলাগে।

~চলবে ইনশাআল্লাহ

ভুল সংশোধন: গতপর্বে লাস্টের একটা অংশে বলেছিলাম যে আহির সাথে আনভীরের কথা কাটাকাটির পর আনভীর চারদিন ওর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখে। এখানে চারদিনের জায়গায় দুইদিন হবে। গল্পটি পাবলিক গ্রুপ আর একটি পাবলিক পেজে যাচ্ছে বলে এডিট করা সম্ভব ছিলোনা আমার জন্য। বিষয়টি তাই এই পর্বে জানিয়ে দিলাম। ধন্যবাদ।
[আজকের পর্বটি কেমন হয়েছে জানাবেন।]

এক শ্রাবণ হাওয়ায় পর্ব ৩০+৩১