এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬২
কাফাতুন নেছা কবিতা
” অনেক গুলো বছর পেরিয়ে যাবে…! ”
” তোমার সঙ্গে..আমার..আর দেখা হবে না.!”
” এক শহর.. একই পথ.. অথচ দেখা হবে না…!”
” পথ ভুলে ও কেউ আরো পথে হাঁটবো না..! ”
” আমাদের অসুখ_বিসুখ হবে.. কিন্তু দেখা হবে না!”
” তোমার সঙ্গে আমার..আর দেখা হবে না..!”
সুবহা নিজের মতো করে সামনে পা বাড়ায়! আজকে আর তার কোনো অভিযোগ নেই! কোনো আক্ষেপ নেই! নেই কোনো পিছুটান! শুধু আছে, এক বুক হতাশা!! দুনিয়াতে সুবহার অভিভাবক বলতে ছিলো একমাত্র তামিম! কিন্তু আজ সুবহা একবারেই অনাথ হয়ে গেলো! তামিম নামক যেই বটগাছের ছায়া ছিলো এতোদিন তার মাথার উপরে! আজকে সেই বট গাছের ছায়া ও চলে গেলো তার মাথার উপর দিয়ে! আজকে সুবহা নিঃস্ব!
ভিলার পিছন দিকের দরজা খুলে সুবহা বেরিয়ে যায়! তার গন্তব্য কোথায় জানা নেই! আজকে হাজারো মানুষের মতো সে ও আশ্রয় হীন! নেই মাথার উপরে ছাদ! আসলে সকলে ঠিকই বলে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” সুন্দর হওয়ার চাইতে..ভাগ্য সুন্দর হওয়া বেশি জরুরি! ”
আপন গতিতে হাঁটতে থাকে সুবহা! সুইজারল্যান্ডের এই সময়টায় বেশ ঠান্ডা অনুভব হয়! আজকে যেনো ঠান্ডার মাত্রাটা বেশিই লাগছিলো সুবহার! হয়তো ভিটা হীন বলে আজকে বাইরের ঠান্ডা তাকে পেয়ে বসেছে!!
কিছু ক্ষণ ধরে হাঁটার পর সুবহা থামে! চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে!
কিছু দূর যেয়ে তামিম দাড়ায়! সাথে তার পঞ্চ পান্ডব ও! তামিম তার পঞ্চ পান্ডবের দিকে তাকায়!!
” কী-রে তোগো মা তো এখন ও আইসা ফিল্মের হিরোইন দের মতো জড়িয়ে ধরলো না!”
তামিমের কথা শুনে সকলেই একটু চিন্তায় পড়ে যায়! প্ল্যান তো এটাই ছিলো! তামিম চলে যাবে আর সুবহা এসে তাকে জড়িয়ে ধরবে, আর তামিম তাকে আবার বিয়ের জন্য প্রপোজাল দিবে!! কিন্তু শেগুরে বালি! তামিম আর তার পাঁচ বলদের দল হাঁটতে হাঁটতে পিছনে যে সুবহা আসছে না, সেটা বুঝতেই পারে নি!
” পিছনে তাকা শা’লার ভাইরা! আমি সামনে যাওয়ার নাটক করি!”
তামিমের নির্দেশ মতো বাকিরা পিছনে তাকায়!
” কাম সারছে! ! ”
” ভাই – ভাবি তো নাই!”
তামিম তাড়াতাড়ি করে পিছনে ফিরে তাকায়! আসলেই তো সুবহা নেই আশেপাশে! পুরো গার্ডেন ফাঁকা! তামিম খুব জোড়ে চেঁচিয়ে উঠে…
” আমার বউ কইইইই…!”
তামিম সহ বাকিরা এসে চারপাশে খোঁজা শুরু করে! ভিলার ভিতর থেকে শুরু করে বাইরে সব কিছু খুঁজে। কিন্তু সুবহার কোনো হদিস পাওয়া যায় না! তারপর গার্ডদের থেকে জানতে পারে সুবহা ভিলার পিছনে গেছিলো!
তামিম তাড়াতাড়ি করে এসে দেখে সেখানে ও কেউ নেই! বাইরে ও ভালোমতো দেখে!! না সুবহার চুলের ও দেখা নেই!!
তামিম সাথে সাথে তার গার্ডদের বাইরে খোঁজার জন্য লাগিয়ে দেয়! আর নিজে চলে যায় কন্ট্রোল রুমে! সিসিটিভি ফুটেজ থেকে তামিম সহজেই সুবহার যাওয়ার দিক বের করতে পারবে!
তামিম খুব দ্রুত পায়ে কন্ট্রোল রুমে আসে!
” আই ওয়ানা সি দ্যা ফুটেজ! ”
তামিম এসেই চেয়ারে বসে পরে! আর ফুটেছে চেক করতে থাকে!!
তামিম তাকাতেই সকলে বাইরে চলে যায়! তামিম চায় না, তামিমের দূর্বল কেউ বুঝক!
ফুটেজ অপেন করে তামিম দেখতে পায়, সুবহা বেশ অনেক ক্ষণ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো, তার চোখ দিয়ে পানি টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছিলো, তারপর সুবহা ও একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে এক পা এক পা করে যেতে থাকে! সুবহা কিছু দূর যেয়ে আবার পিছনে ফিরে তাকায়! তারপর আবার ও যেতে থাকে! মাঝ পথে যেতেই সুবহা হুঁচট খেয়ে পড়ে যায়! তারপর উঠে ড্রেসের ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে চলে যায়। হাতে হয়তো একটু ব্যাথা ও পেয়েছে!
তামিমের চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি চলে আসে! আজকে সে যা করেছে, তা বাড়াবাড়ির চরম সীমানায় চলে গেছে!
তামিমের চোখের পানি ও বাঁধ মানছে না! আপনা আপনিই গড়িয়ে পড়ছো! তামিম ছাড়া তো সুবহার অভিভাবক বলতে এই দুনিয়াতে কেউ নেই! তার ইচিত হয়নি এভাবে সুবহার সাথে মজা করার!
তামিম চোখের পানি মুছে বেরিয়ে যায়! খুবই শক্ত মনে বেরিয়ে আসে রুম থেকে! সুবহা যে তার একমাত্র দূর্বলতা এটা তামিম প্রকাশ করতে চায় না! কারণ তামিমের শত্রুরা তার সাথে না পেরে উঠলে ও তার দুর্বলতা নিয়ে টান দিবে। তামিম এমন ভাবে বের হয় যেনো কিছুই হয়নি!
তামিম বের হতেই গার্ড এসে তাকে ইনফর্ম করে সুবহার দেখা পাওয়া গেছে! তামিম এবং তার পঞ্চ পান্ডব আর বাকি গার্ডরা ও বেরিয়ে পরে তামিমের সাথে!
সুবহা বেশিদূর যেতে পারেনি। হেঁটে হেঁটে ভিলা থেকে একটু দূরেই ছিলো! তাই তাকে খুঁজে পেতে ও অসুবিধা হয়নি তামিমের!!
উন্টারতোর ব্রুক নদীর রেলিং এর কাছে শরীরে সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে পানির দিকে তাকিয়ে থাকে সুবহা! নদীর পানি গুলোর সাথে সাথে তার চোখের পানি ও বয়ে চলছে!
হঠাৎ সুপরিচিত সুঘ্রাণ নাকে ভেসে আসতেই চোখ বন্ধ করে ফেলে সে! কিন্তু পিছনে ফিরে তাকায় না! কারণ সুবহা জানে কে তার পিছনে দাড়িয়ে আছে!
তামিম এসে সোজা পিছন থেকে সুবহাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে!
” সরি! সরি! বউ! আমি তো দুষ্টুমি করছিলাম তোর সাথে! সরি বউ! সো সরি!”
সুবহা কিছু না চুপচাপ একই ভাবে দাড়িয়ে থাকে!
” ও বউউউ! আমি তো মজা করছিলাম!”
” হুম..ভালো!”
সুবহার এতো ঠান্ডা ব্যবহার তামিমের মনে আরো সংশয় বাড়িয়ে দেয়!
” এমন করিস না বউ! আমার সুন্দর বউ না তুমি! আমার পরী! চল বাড়ি চল!”
” আমার কোনো বাড়ি নেই, আমি অনাথ! ”
সুবহার নিজেকে অনাথ বলাটা তামিমের মন একদম চূর্ণবিচূর্ণ করে দেয়! তামিম বুঝতে পারে এবার সে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!!
তামিম সুবহাকে ঘুরিয়ে তার দিকে ফিরিয়ে নেই!
” আমিই তোর অভিভাবক! তুই অনাথ না! আমি জীবিত এখনো!”
সুবহা তামিমকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে নেই!
” আপনার দয়ার আমার কোনো দরকার নেই! কষ্ট দিতে চেয়েছিলেন, পেয়েছি! খুশি হয়ে যান! আপনি সাকসেসফুল!”
সুবহা সামনের দিকে হাঁটতে থাকে চুপচাপ! আর তামিম ও তার তাকে ঘিরে ধরে!
” বউ! বউ! শোন! এমন করিস না! আমি তো prank করছি! মন থেকে কিছু বলি নাই! তুই আমার সাথে বাড়ি আয়!”
সুবহা তামিমের থেকে হাত সরিয়ে আবার সামনে যেতে থাকে! আর তামিম আবার ও সুবহার পথ আটকে দাড়ায়!
” হাত ছাড়ুন আমার!”
” নাহ! ”
” হাত ছাড়ুন!”
” এমন করিস না বইন! আমার সাথে আয়!”
” আরে ভাই আমার হাত ছাড়েন তো!”
” নাহ! তুই আয়! ”
” আমি যাবো না!”
” তুই যাবি তোর আব্বা যাবে!”
‘
” ওই ম’রা কঙ্কালকেই নিয়ে যান!”
তামিম সুবহার হাত ধরে যতই নিয়ে যেতে থাকে সুবহা ততোই নিজের হাত ছাড়িয়ে সামনে যেতে থাকে! তাদের দেখলে মনে হবে কিন্ডারগার্ডেনে পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে একজন আরেকজনের হাত ধরে টানাটানি করছে!
” প্লিজ বউ! ছেড়ে যেয়ে ও না! ছেড়ে যেয়ে ও না! ”
” নাটককক! হাত ছাড়েন আমার!”
“” নাহহ!”
” ছাড়তে বলছি!”
” নাহহহহহ!”
” কু’ত্তা, বিলাই, বান্দর! হাত ছাড় আমার!”
সুবহা খুব জোড়ে ধমক দিয়ে উঠে তামিমকে!
” আউজু বিল্লাহি মিনাশ শয়তানের রাজিয়ুম! ফুঁ ফুঁ! ”
তামিম দোয়া পড়ে সুবহার মাথায় ফুঁ দিতে থাকে!
” আরেহহহ! কী সমস্যা! ”
” তোরে জীনে আসর করছে বউ! ভুল ভাল কথা বলতাছিস!”
” কীীহহহহ?”
” হো! তুই নিজের মধ্যে নাই! তোরে বদ জীন ধরছে! আমাকে তুই করে গা’লি দেওয়াচ্ছে এই বদ জীন! ”
” তোর মতো খবিশ থাকতে আমাকে কোনো বদ জীন আসর করবে না!”
” আমি খবিশ? ”
” তার খালাতো ভাই! শয়তানের ঘরে শয়তান! যা সর!”
” বুঝছি! তোকে বড় জীন ধরছে!”
” বা’ল ধরছে! যা সর!”
” হাই আল্লাহ! এই সাকিব! জলদি হুজুর ডাক, তোগো ভাবিরে জীনে আসর করছে!”
এমপি তামিম সরকার পর্ব ৬১
সুবহা খুব রেগে তামিমের দিকে তাকায়! আর সামনে যেতে থাকে! তামিম ও সুবহার গা ঘেসে ঘেসে যেতে থাকে! মনে হচ্ছে এখনই সুবহার উপরে পড়ে যাবে!
” কী সমস্যা ভাই? পিছু পিছু ঘুরছেন কেন?”
” সহে না যাতনা না! কী করি বলি না?”
” কচু গাছে ফাঁ’সি দেন!”
” নাহ! মাত্র দুইবার ১৯/২০ করছি! এতো তাড়াতাড়ি ম’রা যাবে না!”
” বেহায়া! ”