এলিজা পর্ব ৪৯+৫০

এলিজা পর্ব ৪৯+৫০
Dayna

অপূর্ব চোখ খুলে দেখে সবাই তার পাশে।
এলিজা জাহাঙ্গীর,অর্পা , জয়া, মমতাজ, সাথে ডিসি সাহেব। অপূর্ব ধিরে ধিরে উঠে বসে।
ডিসি সাহেব বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো , অপূর্বর এখন কি অবস্থা?
ডাঃ বললো,
ওর মাথায় হঠাৎ আঘাত লাগাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল।
এখন কোন সমস্যা নেই।
ডিসি সাহেব বললো,
তাহলে আমি আসি। থানাতে আমাকে যেতে হবে। অপূর্ব তুমি বিশ্রাম নাও। বলেই ডিসি সাহেব চলে যান।সাথে ডাঃ ইব্রাহিম এবং জাহাঙ্গীর।
এলিজা কাছে এসে বসে।
অপূর্ব এদিক ওদিক দেখতেই দেখে সূর্য দরজার কাছে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সূর্য অপূর্বর কাছে আসে। এলিজা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পানির বোতল টা হাতে নিয়ে পানি আনতে যায়। অপূর্ব কে ঔষধ সেবন করানোর জন্য।

সূর্য অপূর্বর সামনে এসে বসে। অপূর্ব শান্ত স্বরে বললো, আমাকে তিলকনগর থেকে কে এনেছে?
সূর্য মৃদু হেসে বললো, আমি এনেছি।
অপূর্ব চিন্তিত হয়। সূর্য ওত রাতে ওখানে কি করছিলো।
আর আমাকেই বা কে আঘাত করেছে।
অপূর্ব কিছুটা কর্কট মেজাজে বললো, তুই ওখানে কি করছিলিস?
আর আমাকে কে আঘাত করেছে। আর ঐ রক্তা,ক্ত লোকটা কে ছিলো?
সূর্য ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তোর এখন সবকিছুর জন্য আমাকে দায়ী করতে হচ্ছে। অবশ্য তোর জায়গায় আমি থাকলে এটাই করতাম‌ হয়তো।
আমি তোর সাথে কিছু কথা বলার জন্য থানাতে গিয়েছিলাম।তখনই জানতে পারি তুই মাত্র ই থানা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়েছিস। আমিও তোর গাড়ি অনুসরণ করে আসতে থাকি।পেছনে রিকশায় ছিলাম। তখনি দেখি তুই তিলকনগর এর দিকে যাচ্ছিস। ওদিকে রিকশা যায়না। তাই হেটে হেটে যাচ্ছিলাম ততক্ষনে গিয়ে তোকে অজ্ঞান অবস্থায় পাই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর তোর আশেপাশে বা- দূরে আমি কাউকে দেখেনি।
অপূর্ব সূর্য কে বিশ্বাস করলো, ঐখানে কি হয়েছিল তা ভাবতে থাকলে অপূর্বর হঠাৎ নকশার কথা মনে পরে। অপূর্ব তৎক্ষণাৎ বা পকেটে হাত দেয়। কয়েন টা দেখতে পায়। অপূর্ব ক্লান্ত শরীর নিয়ে ই মনস্থির করলো, এটা নিয়ে ফরেন্সিক ল্যাবে যাবে। সূর্য জিজ্ঞেস করে এটা কি ! অপূর্ব সত্যিটা বললো না।
কথা এড়িয়ে চলে যায়।
চারদিকে যা হচ্ছে এসব কিছুর রহস্য বের করতেই হবে। একের পর এক নিরীহ মানুষের মৃ’ত্যু। আর এই মৃ’ত্যু খেলা হতে দেয়া যাবে না। কিন্তু কিভাবে আমি সূত্র পাবো। বা হাতে কয়েন টা দেখছে আর ভাবছে, এটা দিয়ে কি হবে।এটা কিসের চিন্হ। অপূর্ব ফরেন্সিক ল্যাবের উদ্দেশ্যে বের হয়।বেশ কিছুক্ষণ এর মধ্যে ল্যাবে পৌছে যায়। গ্লাসকোফ ফরেন্সিক ল্যাবে।

দ্রুত পায়ে ডাঃ জাকির এর কাছে যায়।
অপূর্ব কয়েনটি দিয়ে জিজ্ঞেস করে।এটা কিসের কয়েন।এটা দিয়ে কি পেতে পারি! জাকির কয়েনটি ভালো ভাবে দেখে বললো।কিছুতো খালি চোখে দেখা যাচ্ছে না। ওয়েট, অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখি।
জাকির কয়েনটি দেখছে। অপূর্বর হঠাৎ মাথা বেথা শুরু হয়। চেয়ারের উপর বসে পরে। মাথায় আঘাত লাগায় সব ঝাঁপসা দেখছে।
ডাঃ জাকির অস্থির কন্ঠে বললো , অপূর্ব এটাতে একটা ম্যাপ দেখা যাচ্ছে।কোন গ্রামের ম্যাপ।
অপূর্ব অবাক ভঙ্গিতে বললো, মানে এতটুকু একটা কয়েনে ম্যাপ!
হ্যাঁ এটা ম্যাপ। তাও কোন গ্রামের।

অপূর্ব আতং’ক স্বরে বলল, কিন্তু এটা আমরা দেখবো কিভাবে? সবসময় কি অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখা যায়।
জাকির বললো, একটা উপায় আছে। ব্লু লাইট আছে। সাধারণ কোন ব্লু লাইট নয়। এটার ক্ষমতা অনেক। সেই লাইটের আলো যখন বস্তর উপর পর্যবেক্ষন করা হয়,তখন ওটা সেই বস্তুটি ভেদ করে সেটার প্রতিফলন সৃষ্টি হয়। আমরা এই কয়েনটির এই প্রান্ত থেকে যদি লাইটটি পর্যবেক্ষন করি তাহলে এটার নকশাটি সাদা পর্দায় পরলে এটার নকসা টা আমরা পেয়ে যাবো ‌।
অপূর্ব তাই করতে বললো।
জাকির অপূর্ব কে একধরনের সানগ্লাস পরিয়ে দেয়।
এটা পরালেন কেন?
এটা একধরনের লেজার লাইট।এটা না পরলে চোখে সমস্যা হবে।
কিছুক্ষণ এর মধ্যে নকসাটি পেয়ে যায়।

অপূর্ব বললো,এটা তো খুবই অদ্ভুত একটা নকসা। এটা থেকে যায়গাটি কিভাবে পাবো!
ডা জাকির বললো, নকশা অভিজ্ঞ ইমরুল এটা বলতে পারবে। তবে উনি এখন নেই। ইন্ডিয়া আছেন। শুনেছি দু এক দিনের মধ্যে দেশে ফিরবে।
অপূর্ব মনে মনে ভাবলো এখন ও দু একদিন অপেক্ষা করতে হবে।
অপূর্ব ল্যাব থেকে ফিরে আসতেই পেছন থেকে ডাঃ জাকির বলে উঠলো, অপূর্ব অভিনন্দন। তোমার প্রমোশন হয়েছে। রাতে পার্টিতে দেখা হচ্ছে। অপূর্ব মৃদু হেসে হ্যাঁ সুচক মাথা নেড়ে চলে যায়।
অপূর্ব বাড়িতে ফিরলে দেখে সবাই তার অপেক্ষায় বসে আছে‌। জাহাঙ্গীর ককর্ট মেজাজে বললো, অসুস্থ শরীর নিয়েও তোর ডিউটিতে যেতে হবে। যদি তোর কিছু হয়ে যায় তবে আমাদের কি হবে।
অপূর্ব জাহাঙ্গীর এর কথা উপেক্ষা করে বললো,বাবা আমার প্রমোশন হয়েছে।

শ্রাবন এসে সাথে সাথে অভিনন্দন জানায়। অপূর্ব জয়ার পা ধরে সালাম করে।
সবাই খুশিতে আপ্লুত হয়ে ওঠে। অপূর্ব এদিক ওদিক দেখলে দেখে এলিজা নেই।হয়তো উপরে।
এলিজা আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে।
অপূর্ব পেছন থেকে এলিজার দুই স্বিনাতে হাত দেয়। এলিজা আয়নায় অপূর্ব কে দেখে অস্থির হয়ে বললো, আপনার কি নিজের জন্য এতটুকু ও মায়া নেই ‌।যদি আপনার কিছু হয়ে যেত?
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো,ম্যাডাম আপনার ভালোবাসা থাকলে কিছু হবে না। আপনি যে আমার অনন্ত শান্তি।
এলিজা মৃদু হাসে।
অপূর্ব এলিজাকে পরোখ করে বললো, তোমাকে কালো রঙে খুব সুন্দর দেখায়। আপনার সুন্দর্যর কাছে আকাশের চাঁদ ও যে হার মানবে।

এলিজা হেয়ালি করে বললো, খুব বেশি বলছেন নাতো।
অপূর্ব এলিজাকে জড়িয়ে ধরে বললো, আমার প্রমোশন হয়েছে‌।আজকে সন্ধ্যায় পার্টি আছে‌।সবাইকে উপস্থিত হতে হবে।
এলিজা অপূর্ব কে জড়িয়ে ধরে বললো, অভিনন্দন পুলিশ বাবু, আপনি যে আমার গর্ব। আপনার স্ত্রী হয়ে সত্যিই আমি গর্বিত।
সন্ধ্যা হয়ে যায়।সবাই পার্টিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।
শ্রাবন পাখির কাছে। পাখি যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু শ্রাবন তো নিয়ে যাবেই।
অনেক ক্ষন পাখিকে বোঝানোর পর যেতে রাজি হয়।
পাখি শ্রাবন এর দিকে দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, কি কাপড় পরে যাবো। আমার সব জামা কাপড় আমাদের বাড়িতে। শ্রাবন ভাবনায় পরে যায়।
পাখি খাটের উপর বসা।
শ্রাবন পায়চারি করতে করতে ভেবে বললো, পেয়েছি বউমনির শাড়ি পরে যাবে।
পাখি ভ্রু কুঁচকে বললো,আমি শাড়ি পরতে পারি না।
শ্রাবন অমৃদু হাঁসি দিয়ে বলল, তো কি হয়েছে আমি আছি তো।আমি পরিয়ে দেবো। বলেই দৌড়ে এলিজার ঘরে যেতেই মমতাজ এর সাথে ধাক্কা খায়।
শ্রাবন ভ্রুক্ষেপ ই করলো না।

মমতাজ বলে উঠলো,মাথার সাথে সাথে মেয়েটা আমার ছেলের চোখ ও খেয়েছে।বলেই মুখ কুঁচকে দেয়।
শ্রাবন দেখলো অপূর্বর দরজা খোলা‌। শ্রাবন ভেতরে ঢুকতেই দেখে, অপূর্ব এলিজার শাড়ির কুঁচি ধরে বসে আছে। এলিজা পেছন ঘুরে যায়।
শ্রাবন উল্টো ঘুরে বললো,আমি কিছু দেখেনি,আমি কিছু দেখেনি।
অপূর্ব উঠে দাঁড়িয়ে বললো, শা,লা তোর জন্য দেখছি ঘরেও থাকা যাবে না।
বেশি কথা না বলে বউমনির একটা সাড়ি দে।পাখির দরকার। এলিজা দ্রুত একটা শাড়ি বের করে দেয়।
শ্রাবন পাখিকে শাড়ি এনে দেয়। কিন্তু পাখি তো শাড়ি পরতে পারে না।
পাখিকে এখনো বিয়ে করেনি তাই তার শরীরে স্পর্শ না করে। শ্রাবন নিজেই শাড়ি পরতে থাকে।
জয়া , মমতাজ, মনোরা, অর্পা সবাই জানালার ওপাশ থেকে দেখতে থাকে ছেলের কান্ড।
শ্রাবন শাড়ি কিভাবে পরে,প্রথম কিভাবে তারপর কিভাবে, নিজেই পূরো শাড়িটা পরে পাখিকে দেখায়।
পাখি খিল খিল করে হেসে উঠে। হাসি কোন ভাবেই থামাতে পারছে না।
জানালার ওপাশ থেকে মুখ চেপে সবাই হেসে উঠে।
শ্রাবন মাথা চুলকায়।

শাড়িটা খুলে পাখিকে দিয়ে বললো , এবার পরে নাও।আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি।
পাখি শাড়িটা পরে নেয়।
চুল গুলো ছেড়ে দেয়। কপালে একটা টিপ পরে।সাথে কাজল। সবাই নিচে নেমে অপেক্ষা করছে পাখি আর এলিজার জন্য।
দুইভাই বারে বারে সময় দেখছে কখন আসবে।
জাহাঙ্গীর জয়া সবাই অপেক্ষা করছে।
তৎক্ষণাৎ চোখ পরে সিড়ির দিকে সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে ‌। এলিজা পাখি, দুজনে একই রঙের শাড়ি পরে,একই ভাবে সেজে নামছে। দুইভাই হা করে দেখছে। সাথে অন্যরাও।
কারো নজর না লাগুক ( বললো জয়া)
শ্রাবন, অপূর্ব দুজন একসাথে বলে উঠল মাশাআল্লাহ.
নিচে নামতেই দুই ভাই হাত বাড়িয়ে দেয়। দুই বোন একসাথে দুজনার হাতে হাত রাখে।
সবাই বেড়িয়ে পরে পার্টির উদ্দেশ্যে।

চারদিকে রঙিন বাতি। মানুষের কো’লাহল। বাচ্চাদের ছোটাছুটি।
ওয়েটার রা হাতে পানিয় নিয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে পার্টি জমজমাট।
তৎক্ষণাৎ এসে উপস্থিত হয় অপূর্ব সহ পূরো পরিবার।
সবাই এসে অপূর্বর পরিবারের সবার সাথে পরিচিত হয়। পার্টিতে আসা অন্যান্য অফিসারদের স্ত্রী-রা এলিজা পাখির সাথে কথা বলছে। এলিজা পাখির রুপে পূরো পার্টি আলোকিত হয়ে গেছে এমনটি বলছে।
শ্রাবন অপূর্ব অন্য অফিসার দের সাথে কথা বলছে‌।
অপূর্বর চোখ পরে সামনের দিকে। অপূর্ব চোখ গুলো বড় করে ফেলে, অপূর্ব মনে মনে বলতে থাকে আল্লাহ বাঁচাও,সাথে আমার বউ আছে। শ্রাবন অপূর্ব কে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে ভাই?
অপূর্ব সামনের দিকে দেখিয়ে দেয়।

সোনালী রঙের একটা পাতলা শাড়ি পরে এদিকেই কেউ আসছে।
শ্রাবন বললো কে সে ?
অপূর্ব বললো ,রুমা , আমার পিছনে সবসময় পরে থাকে।
রুমা আসছে।হাতে একটা ব্যাগ, হাতাকাটা ব্লাউজ,চুল গুলো ছাড়া,শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দেখাচ্ছে।
এসেই অপূর্বর সামনে দাড়ায়।
অপূর্ব ঢেকুর গিলছে।
রুমা ঢং করে বললো, স্যার ইউ আর লুকিং সো গর্জিয়াস।
অপূর্ব মৃদু হেসে বললো, ধন্যবাদ।
শ্রাবন কে দেখিয়ে বললো এই কে?
অপূর্ব বললো,একে ভুলে গেলেন শ্রাবন।
রুমা হেসে বললো,ও আচ্ছা হাই শ্রাবন, বলেই হাত বাড়িয়ে দেয়।
শ্রাবন ও হ্যান্ডসেক করে।
অপূর্ব মিটিমিটি হাসছে।

শ্রাবন: হাসছিস কেন?
অপূর্ব ইশারায় পাখির দিকে দেখিয়ে দিলো। পাখি আর চোখে তাকিয়ে আছে।
শ্রাবন দ্রুত হাতটা ছেড়ে রুমাকে বললো , আসসালামু আলাইকুম-আন্টি ঐ যে আমার বউ।
অপূর্ব হেসে বললো, আর বলে দরকার নাই ‌। বাড়ি ফিরে চল পরে বোঝা যাবে।
রুমা চাপ গলায় বললো,রাবিস বলেই চলে যায়।
শ্রাবন পাখির কাছে এসে আমতা আমতা করতে থাকে‌।
তৎকালীন পার্টির সমস্ত লাইট বন্ধ হয়ে যায়।
মিউজিসান রা মিউজিক ধরে, একজন কন্ঠশিল্পী কে আনা হয়। তিনি আরাবিক গান করে। সবাই তালে তালে নাচচে।
পার্টি জমজমাট।
এদিকে পাখি শ্রাবন এর সাথে কথা বলছে না।
শ্রাবন ভেজা কন্ঠে বললো, ওনার সাথে হাত মিলিয়েছি বলে হিংসা হচ্ছে।
পাখি মুখ ঘুরিয়ে নেয়। শ্রাবন পাখির আচরন উপভোগ করে।
কিছুক্ষণ পর শ্রাবন বললো,এই যে কানে ধরেছি এবার ক্ষমা করো।

চারদিকে বিভিন্ন ঝাড়বাতি।
আরাবিক গান। মানুষের কো’লাহল।ছোট বাচ্চাদের ছোটাছুটি সব মিলিয়ে পার্টি আরো জমজমাট‌ হয়ে ওঠেছে।
লাইট দ্বিতীয় বারের মত বন্ধ হয়ে যায়।কিছুক্ষণ পর সবার দৃষ্টি চলে যায় স্টেজে‌।
সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে‌।স্টেজে উপস্থিত হয় রুমা। সাথে কিছু মেয়েরা। নৃত্য পরিবেশন করবে‌।
পাখি ,এলিজা , অপূর্ব, শ্রাবন এক সাথে দাঁড়ানো।
পাখি এলিজার কানে ফিসফিস করে বলছে, মহিলাটি কি ধরনের শাড়ি পরে‌ আছে। সমস্ত পুরুষ তো আকর্ষিত হবেই।
এলিজা মৃদু হেসে বললো, পোশাক সবার পছন্দের একটা বস্ত্র। যার যেমন টা ভালো লাগে সে তেমন টাই পরবে।
হঠাৎ দুজন অফিসার এসে অপূর্ব, শ্রাবন এর সাথে হ্যান্ডসেক করে।
বিভিন্ন কথায় মশগুল।

তৎক্ষণাৎ এলিজা-পাখি আশপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছে।
পাখির হঠাৎ চোখ যায় রাস্তার দিকে। পাখি এলিজাকে বললো, আপু ঐ দেখ একটা পাগলি একা একা হাসছে‌।চল পাগলিটার কাছে যাই। এলিজা ইতস্তত বোধ করে বললো, একদমই না আঘাত করে দিবে।
পাখি নাছোড়বান্দা,এলিজার হাত ধরে নিয়ে গেলো।
পাগলী মেয়েটা হাতে ঈটের টুকরো নিয়ে এটা সেটা লিখছে।এলিজার খটকা লাগলো। খুব চেন চেনা লাগছে। ভালো করে দেখতে চেষ্টা করলে দেখে এটা মিরা।হাতে শায়ানের ছবিটা।এলিজার ভেতরটা হটাৎ দুমরে মুচড়ে ওঠে‌।এলিজার হঠাৎ ভাব ভঙ্গিমা অন্য রকম হয়ে যায়।
পাখি এলিজাকে পরোখ করে বললো,আপু কি হয়েছে। এলিজা না সূচক মাথা নেড়ে পাখির হাত ধরে ভেতরে চলে যায়।

শ্রাবন দৌড়ে আসে।বললো,
কোথায় ছিলে তোমরা ? খুঁজতে ছিলাম!
এলিজা মৃদু হেসে বললো, ঘুরে ঘুরে চারপাশ টা দেখছিলাম ‌‌। তোমার ভাই কোথায়?
শ্রাবন এদিক সেদিক পরোক্ষ করে বললো,আছে হয়তো এখানেই।
অপূর্ব যা কিছু করে, সবকিছুর মধ্যে সেই রক্তা’ক্ত লোকটির দেয়া কয়েন এর কথা ভাবছে। কে সে ! কি বলতে চেয়েছিলো! তার এরকম অবস্থা কারা করেছে।
এসব নিয়ে পার্টিতে উপস্থিত জাকির এর সাথে কথা বলছে‌‌।
ডাঃ জাকির বললো, কয়েনটির সাথে র’ক্ত লেগে ছিল,আমি রক্ত গুলো পরিক্ষা করে জানতে পেরেছি, কয়েনে দুজন মানুষের র’ক্ত লেগে আছে‌‌। অপূর্ব ডা জাকির এর কথা শুনে,ভ্রু কুঁচকে দেয়।অবাক ভঙ্গিতে প্রশ্ন করলো, কি বলছেন! তারমানে ঐ লোকটি যেখান থেকে আসছিল, সেখানে একাধিক লোক ছিলো‌?
তুমি একদম ঠিক বলেছো।

অপূর্ব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, নকশা অভিজ্ঞ ইমরুল কবে আসবে?
ডাঃ জাকির বললো, আমি ফোন দিয়েছিলাম। বললো , ৩/৪ দিন দেরি হবে।ইন্ডিয়াতে কাজে আটকে গিয়েছে ‌।
অপূর্ব দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অপূর্ব এলিজার কাছে আসে‌তেই সামনে পরে রুমা। অপূর্ব থমকে দাঁড়ায়।
মনে মনে বললো,এই মহিলা দেখছি আমার পিছু ছাড়বে না। রুমা অপূর্বর সামনে দাঁড়িয়ে অপূর্বর পা থেকে মাথা অব্দি পরোক্ষ করতে থাকে‌।
অপূর্ব মনোভাব নিয়ে বললো,কিছু বলবেন?
রুমা মৃদু হেসে বললো, বলতে চাই অনেক কিছু। কিন্তু আপনার কি শোনার সময় হবে‌।
অপূর্ব চোখের ইশারায় এলিজার দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললো, আমার বউ যদি অনুমতি দেয়,তবে একদিন বউ কে নিয়ে আপনার বাড়িতে গিয়ে সব শুনবো।
বলেই অপূর্ব পাশ কেটে চলে যায়।

রুমা কিছুটা কর্কট ভঙ্গিতে বললো, সারাক্ষন বউ বউ বউ। আমি কি কম সুন্দরী একটা বার ঠিক মত তাকালো ও না। যাইহোক দেখে নিবো‌।বলেই মুক কুঁচকে দেয়।
পার্টির ভির কমতে থাকে। যে যার গন্তব্যে চলে যাচ্ছে।
অপুর্ব ডিসি সাহেব এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সবাই মিলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
রাত অনেক সবাই পার্টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে। মনোরা রান্না করছে।
সবাই অপূর্ব কে বাহবা দিচ্ছে। ততক্ষণাৎ মমতাজ বলে উঠলো , অপূর্ব নিজের যোগ্যতায় আজ কতদূর। প্রমোশন হয়েছে। কত সুনাম অর্জন করেছে। আর আমার ছেলেটিকে দেখো , একটা পরিচয়হীন মেয়ের পেছনে পরে আছে। মা বাবা ছিলো না। কোথায় কি করেছে বলা যায় না।
অপূর্ব তার কাকির কথার জবাবে বললো, দেখুন কাকি, মা বাবা বেঁচে থাকলেই,তারা সঠিক পথে বড় হবে এমন নয়। এলিজা পাখির , ওদের মা বাবা বেঁচে নেই কিন্তু তারপরও ওদের চরিত্রে কোন দাগ নেই। যথেষ্ট আত্মসম্মান বোধ আছে‌‌।পাখি যথেষ্ট ভালো মেয়ে। তার থেকেও বড় কথা ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। ভালোবাসা কখনো পরিচয় দিয়ে হয়না।

শ্রাবন অপূর্বর কথা শুনে খুশি হয়। মমতাজ মুখ কুঁচকে দেয়।
জাহাঙ্গীর উঠে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বলল, তাহলে আর কি যদি ছেলে মেয়ে রাজি থাকে,আমরা ওদের বাধা না দিলেই নয়। জাহাঙ্গীর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো, তোমরা বিয়ের আয়োজন করো। আমি শ্রাবনের বাবার সাথে কথা বলে দেশে আসতে বলি।যদি আসতে পারে তো আসবে।না হয় বিয়ের কার্যক্রম আমরাই সেরে ফেলবো।
শ্রাবন মৃদু হাসে। অপূর্ব শ্রাবন কে চোখে ইশারা করলো।
জয়া এলিজাকে উদ্দেশ্য করে বললো, এলিজা তোমার কোন আপত্তি নেই তো। এলিজা অপূর্বর দিকে একবার দৃষ্টি স্থাপন করে বললো, আপনারা সবাই যখন চান তবে তাই হোক।আর তাছাড়া পাখিও শ্রাবন কে খুব ভালোবাসে। শ্রাবনের মত সৎ কারো হাতে পাখিকে তুলে দিতে পারলেই আমি শান্তি পাবো।
জয়া রান্না করে চলে যায়।রাত অনেক সবার খেতে হবে।পার্টিতে তারা কিছু খায়নি। কারন জাহাঙ্গীর বাহিরের খাবার খেতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না। এবং কাউকে খেতেও দেননা।শুধু পানিয় ছাড়া।
মমতাজ চোখ মুখ এক করে ঘরে চলে যায়।

শ্রাবন পাখির হাতটা ধরে।পাখি চট টরে সরিয়ে নেয়।কানের কাছে ফিসফিস করে শ্রাবন বললো, লজ্জা পাচ্ছ।
অপূর্ব গলায় কাশি দিয়ে মৃদু হেসে বললো, আমরা এখানে।প্রেম করলে নিজেদের ঘরে গিয়ে কর।
পাখি লজ্জা মুখে উপরে চলে যায়। পেছনে শ্রাবন।
এলিজা সোফা থেকে উঠে রান্না ঘরে যাবে। তখন ই অপূর্ব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
এলিজা মৃদু হেসে বললো,সুযোগ পেলেই জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে!
অপূর্ব বললো,আমার বউকে যখন ইচ্ছা জড়িয়ে ধরবো‌।
এলিজা হাত সরিয়ে বললো,মা একা রান্না করছে।আমাকে যেতে হবে।
অপূর্ব মৃদু হেসে ধুতনি টা এলিজার কাদের উপর রেখে বললো, ঐ শোনোনা চলো আর একবার বিয়ে করে নেই। তুমি লাল বেনারশী পরবে।আমি শেরওয়ানি পরবো।নতুন করে বাশর হবে‌। প্রথম দিনের মতন দুজনে একসাথে চাঁদ দেখবো। সবকিছু নতুন করে হবে।

এলিজা অমৃদু হাঁসি দিয়ে বলল, আপনাকে যখনই দেখি ,তখনই নতুন মনে হয়।প্রতিটা দিন ই স্মৃতিময় হয়।
তৎক্ষণাৎ সিড়ির উপর থেকে গলায় কাশি দেয় জাহাঙ্গীর। পানি চাইতে আসে।
অপূর্ব হুট করে এলিজা-কে ছেড়ে দেয়। এলিজা রান্না ঘরে চলে যায়।
অপূর্ব উল্টো দিকে ঘুরে
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো, সবাই আমার প্রেমে কাবাব মে হাড্ডি হবেই। এদের জ্বালায় প্রেম ও করা যাবে না।
অর্পা পাখির ঘরে। পাখির সাথে এটা ওটা আকছে।অর্পা পাখি বিভিন্ন কথা বলছে‌।আর হাঁসছে ‌।
শ্রাবন পাখির ঘরে আসতে আসতে আনমনে অনেক কিছু ভাবছে আর একা একা হাসছে।নক খুটতে খুটতে হাঁটছে ‌। তখনই সামনে পরে মমতাজ। মমতাজ পান চিপোচ্ছে। সবসময় সেজে থাকে। শ্রাবন কে দেখে দু হাত দুই দিকে ছড়িয়ে বললো, এই বেটা দারা। শ্রাবন থমকে দাঁড়ায় ‌‌।

শ্রাবন মৃদু হেসে বললো,কি বলবে মা বলো। মমতাজ ফিসফিস করে বললো,ঐ মেয়েটা ভালো না। আমি তোকে ওর থেকে ও সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়ে করাবো।হুমম।
শ্রাবন মমতাজ এর গলায় হাত দিয়ে বললো, মা আমি ওর সুন্দর্যর প্রেমে পরেনি।যে তুমি ওকে ওর থেকে ও সুন্দর কাউকে নিয়ে আসলে ভুলে যাবো‌‌।
মমতাজ চোখ দুটৌ বড় করে বললো, তুই বুঝতে পারছিস না।তোর সাথে পাখিকে মানায় না।
শ্রাবন কাদ থেকে হাত দুটো সরিয়ে বললো, মানিয়ে নিতে হয়। আর তুমি দেখছি আজ খুব সেজেছো‌।খুব সুন্দর লাগছে।

বলেই হাঁটতে শুরু করে।
মমতাজ পেছন থেকে থেকে শ্রাবন কে পরোখ করে বললো, ছেলে আমার পাগল হয়ে গেছে।জলদি ওর বাবাকে জানাতে হবে।
অপূর্ব সোফাতে বসে আনমনে কিছু ভাবছে‌। তৎক্ষণাৎ ল্যান্থলাইনে ফোন বেজে ওঠে ‌। অপূর্ব ভ্রু কুঁচকে দেয়। এত রাতে কে।কোন খারাপ খবর নয়তো।
কাপা হাতে ফোনটা তুললে,
ওপাশ থেকে একজন মহিলা বলে উঠলো, অপূর্ব, সূর্য গতকাল থেকে বাসা থেকে বের হয়েছে আর ফেরেনি।ফোনটা হুট করেই কেটে দেয়।

অপূর্ব কন্ঠ শুনে বুঝতে পেরেছে। সূর্যর মা ফোন করেছে। অপূর্ব হতভম্ব হয়ে যায়। কোথায় সূর্য। দ্রুত পায়ে অপূর্ব ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। গাড়ি নিয়ে অজানা পথে বের হয়।অঝরে ঘামছে। সূর্য একজন খু,নি,একটা প্রানে,র বিনিময় হাজারা টা প্রা,ন নিয়েছে। তবুও মনের এক কোনেতে সূর্যর জন্য ভালোবাসা টা রয়ে গেছে।হাজারহোক ছোট বেলার বন্ধুত্বর বাঁধন খুব সহজে ছুটে যাওয়ার নয়। অপূর্ব সিভিল পোশাকে সূর্যর উপর যাদের কে নজরদারি করার জন্য রেখেছে তাদের কাছে‌ পৌছায়। তারা জানায়,বিকেল পর্যন্ত নজরে রাখতে পেরেছে‌। তারপর কোথায় গিয়েছে…
বলেই মাথা নিচু করে কনস্টেবল।অপূর্ব এক ধমক দেয়।ক্রোধে বলে উঠলো,একটা কাজ ঠিক মত করতে পারো না।
অপূর্ব শান্ত হয়ে বললো, শেষ কোথায় দেখেছো?

তিলকনগর থেকে ঢাকার দিকে এসেছে‌।তবে ওনাকে থেকে খুব হতাশ মনে হয়েছে‌ ।
অপূর্ব গাড়ি নিয়ে সোজা চলে যায় যমুনা নদীর তীরে ‌। অপূর্ব গাড়ি তে বসেই দেখছে। দূরত্ব কিছুটা। সূর্য যমুনা নদীর তীরে বসে আছে। অপূর্ব যখনই শুনেছি সূর্য তিলকনগর থেকে হতাশা অবস্থায় ফিরেছে তখনি বুঝতে পেরেছে, রঞ্জনার কবরে,র কাছে গিয়েছিল‌‌। ওর কথা মনে পরলেই যমুনা নদীর তীরে আসে। অপূর্ব গাড়ি থেকে নেমে ধির পায়ে সূর্যর পেছনে এসে দাড়ায়। সূর্য পেছন না ঘুরেই বললো, খুঁজতে এসেছিস ! ভেবেছিস কোথায় না কোথায় চলে গিয়েছি।নয় কাউকে খু,ন করছি। নয় আমি ই খু,ন হয়ে গেলাম এসব ই ভেবেছিস তাই না। অপূর্ব অবাক হয়।আমাকে না দেখেই আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরেছে।অপূর্ব সূর্যর পাশে এসে বসে‌।

শান্ত যমুনা নদী। শীতল হাওয়া বইছে। জোনাকির আলোয় চারপাশ টা আলোকিত হয়ে গেছে‌। নিশ্চুপ চারপাশ।
অপূর্ব বলল, এখানে কি করছিস! দুদিন বাড়ি ফিরিসনি। কিছু হয়েছে!
সূর্য ভারী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের তাকিয়ে বললো, রঞ্জনা কে দেখতে এসেছি।
অপূর্ব অবাক হয়ে বললো, কিসব উল্টো পাল্টা বকছিস।
সূর্য হাত দুটো সামনে নিয়ে হাটুর উপর এক হাত আরেক হাত দিয়ে ধরে বললো, খুব মনে পরে‌ ওর সাথে কাটানো দিনগুলি।ওর স্মৃতি যে আমাকে গ্রা’স করে রেখেছে।ওর চাহনি, কথা,চুলের দর্পন।তার রাগ অভিমান খুব মনে পরে।আমাকে যে একা করে রেখে গিয়েছে‌।ওর শূন্যতা আমায় প্রতি মুহূর্তে পূড়িয়ে দেয়।
বলেই হাতের উল্টো দিক দিয়ে চোখের পানি মুছে স্বাস ছেড়ে বললো,ঐ যে তারা গুলো দেখতে পাচ্ছিস না। ওর ভিতরে একটা রঞ্জনা। ও প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে আমার জন্য অপেক্ষা করে‌। তাই আমিও চলে আসি একটা বার ওকে দেখতে।

এলিজা পর্ব ৪৬+৪৭+৪৮

অপূর্ব অপলক দৃষ্টিতে সূর্য কে দেখছে।কতটা ভালোবাসলে একটা ছেলে এমন করতে পারে।অন্যকে হ,ত্যা করতে পারে।
অপূর্ব সূর্যের ডান কাদের উপর হাত রেখে বললো, মানুষ চলে যায়। কিন্তু তাদের স্মৃতি গুলো রেখে যায়। মানুষ হ,ত্যা করা যায় তবে স্মৃতি না। যদি স্মৃতি হ,ত্যা করা যেত তবে আত্মহ,ত্যা নামক শব্দ থাকতো না, হাসপাতালে মানসিক রোগী থাকতো না ‌..

এলিজা পর্ব ৫১+৫২