এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩১

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩১
ইফা আমহৃদ

অপূর্ব ভাই রান্না বসিয়েছেন। ফোনটা নিয়ে গেছেন সাথে। ফোন ব্যবহার করার উপায় নেই। আমি টিভি দেখছি। রান্নার অনুষ্ঠান চলছে। আজকের রান্নার রেসিপি চিকেন বিরিয়ানি। আমি মনোযোগ সহকারে দেখছি। বর্তমানে আমি অপূর্ব ভাইয়ের সহধর্মিণী। তাকে রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার হাতে। আমি রান্নার অনুষ্ঠান দেখতে ব্যস্ত। অপূর্ব ভাই রান্না শেষ করে খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত হলেন। আলু ভাজি রান্না করেছেন। উঁচু গলায় আমাকে ডাকলেন, “আরু খেতে আয়, খেয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমা। তাড়াতাড়ি আয়।”

টিভি অন রেখেই ছুটে গেলাম অপূর্ব ভাইয়ের নিকট গেলাম। চেয়ার টেনে বসলাম। পরোটা বানিয়েছেন। দেখেই বিরক্ত লাগল। শুকনো খাবার খেলে আমার গলা শুকিয়ে যায়। কষ্ট হয়। আমি কিছুটা মন খারাপ করে বললাম, “অপূর্ব ভাই আপনি এমন খাবার কেন বানিয়েছেন? আমি এইসব খেতে পারি না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অপূর্ব ভাই পানি পান করতে করতে বললেন, “ঘরে কিছু নেই। তুই কোন জায়গার মহারানী যে, এতোরাতে তোর জন্য দোকান খোলা রাখবে? তোর ভাগ্য ভালো ঘরে আটা ছিল। চুপচাপ খেয়ে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়। পরোটা/ রুটি খেলে পানির তৃষ্ণা লাগে। অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।”

নতজানু হয়ে পরোটা মুখে তুললাম। কোনোমতে একটা পরোটা শেষ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঘরে গেলাম। ঘরের ভেতরে মশারা পায়চারি করছে। মশারী টাঙিয়ে নিলাম অতঃপর ফ্যান ছেড়ে শুয়ে গেলাম। গরমের মাঝেও আমার কাঁথা লাগে ঘুমাতে। আমি আশেপাশে তাকিয়ে কাঁথা না পেয়ে বিছানার চাদর তুলে গায়ে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
মাঝরাতে অপূর্ব ভাই ঘুম থেকে তুললেন। নিভু নিভু দৃষ্টিতে অপূর্ব ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, “গরমের ভেতরে ডাকছেন কেন আশ্চর্য! ফ্যান বন্ধ করেছেন কেন? ফ্যান ছেড়ে দিন।”

অপূর্ব ভাই চাদর টেনে সরিয়ে দিলেন। বিরক্তিকর কণ্ঠে বলেন, “ওষুধ খেয়ে আমার ঘুমিয়ে পড়। (আমার ভাবাবেগ না পেয়ে পুনরায় বলেন) কী-রে, উঠবি?”
“না, আপনি ফ্যান চালু করেন। মামি, ও মামি তোমার ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যাও। তিনি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না।” এবার অপূর্ব ভাই বেজায় বিরক্ত হলেন। হাত ধরে টেনে উঠিয়ে নিলেন। নিজহাতে পানি মুখে তুলে দিলেন। ওষুধ মুখে দিয়ে চেপে ধরলেন ওষ্ঠদ্বয়।

আমি ঢোক গিলে অপূর্ব ভাইয়ের কাঁধে মাথা রাখলাম। ঘুম জড়ানো গলায় বললাম, “অপূর্ব ভাই আমি আপনার কথা শুনেছি, এবার আপনি আমার কথা‌ শুনেন। প্লীজ ফ্যান ছাড়ুন। আমার পোশাক ঘামে ভিজে গেছে।”
“বিদ্যুৎ নেই, আমি হাওয়া করছি। তুই ঘুমানোর চেষ্টা কর।” বলেই পরণের ট্রাউজার খানিকটা উঁচু করতেই হকচকিয়ে উঠলাম আমি। হতবুদ্ধি হয়ে বললাম, “কী করছেন টা কী?”

নিচে নামানোর চেষ্টা করলাম। অপূর্ব ভাই শান্তনা দিয়ে বললেন, “রিলেক্স আরু। এখানে তুই আর আমি ছাড়া কেউ নেই। এই ঘরে কারো আসার সম্ভাবনা নেই। সুইচ অফ করে দিয়েছি। বিদ্যুৎ আসলে আলো জ্বলবে না। তাছাড়া আমি তোর স্বামী। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর।”

অপূর্ব ভাইয়ের মুখটা অন্ধকারে দেখতে পেলাম না, তবে স্বস্তি বোধ করলাম। তিনি মিথ্যা বলেন না। বিদ্যুৎ তো নেই, দেখার উপায়ও নেই। হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে অগোছালো হয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। অপূর্ব ভাই মোটা কাগজ দিয়ে হাওয়া করতে করতে নিজেও আমার পাশে শুয়ে পড়লেন।
গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে সূর্য্যি মামা উঁকি দিয়েছেন। গরমটা কমে গেছে। মাথার উপরে ফ্যান চলছে, বুঝতে পারলাম বিদ্যুৎ এসেছে।

অপূর্ব ভাই চেম্বারে গেছেন। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। ঘুম ভেঙেছে আধ ঘণ্টা পূর্বে। বিছানায় শুয়ে বিদায় অনুষ্ঠান করা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস। পুরোনো অভ্যাসটা বদলাবে না। দরজাটা খোলা, অপূর্ব ভাই যাওয়ার পূর্বে বেশ কয়েকবার বলেছেন, দরজায় লক করতে। আলসেমির কারণে উঠতে ইচ্ছা করেনি। বাজার নেই। অপূর্ব ভাই যাওয়ার পূর্বে পরোটা আর ডিম করে রেখেছেন সকালের নাস্তা হিসেবে। আমি গ্ৰামের মানুষ, মামা বাড়ি, দাদা বাড়িতে আমি পান্তা খেতাম‌। ভেতরটা একদম ঠান্ডা হয়ে যেতো। তাছাড়া কালকে পরোটা খেয়ে আমার অবস্থা নাজেহাল। অসম্ভব! এটা খাবো না।

বিছানা ছেড়ে উঠলাম। আগের বারের মতো অপূর্ব ভাইয়ের ব্যবহার করা ব্রাশ দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলাম। তুলোর মতো ব্রাশ তার। অতঃপর রান্নাঘরে গেলাম। চাল ধুয়ে চুলাতে দিতাম। চালের সাথে দুটো আলু সিদ্ধ দিলাম। আগুন জ্বেলে ড্রয়িং রুমে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে টেলিভিশন দেখতে বসলাম। দীর্ঘক্ষণ পেরিয়ে গেল। আমি রান্নাঘরের দিকে গেলাম না। হঠাৎ লক্ষ্য হলো। চমকে উঠলাম। রিমোট বিছানায় রেখে ছুটে গেলাম রান্নাঘরে।

ভাতের পানি পরে চুলার চারপাশে কালো হয়ে গেছে। ভাতও পড়ে আছে। নরম হয়ে গেছে। হতভম্ব হলাম। তড়িগড়ি করে মার্ক ফেলার উদ্দেশ্যে ভাতের পাতিল ধরতেই ছ্যাকা লাগল হাতে। ফুঁ দিলাম। উপায়হীন হয়ে ট্যাবের নিচে হাত রাখলাম। চোখের পানি পড়ছে অনবরত। অন্যহাত দিয়ে চুলোটা বন্ধ করে দিলাম। ছ্যাকা খাওয়া হাতে ভাত গড়া দিলাম। লবণের ছিটা দিলাম। মামিকে দিতে দেখেছি।

ডান হাতে ছ্যাকা খেয়েছি। অপূর্ব ভাই এক গাদা জামা কাপড় ধুয়ে রাখতে বলেছেন। একহাত দিয়ে জামা কাপড় ধুয়ে নিলাম। বারান্দায় মেলে দিলাম জামা কাপড়। পুনরায় ঘরে এসে বসলাম। ড্রয়ার খুঁজতে ব্যস্ত হলাম। কোথাও কোনো মেডিসিন বক্স দেখতে পারছি না। অন্যদিকে না খেয়ে থাকার অভ্যাস আমার নেই। অপূর্ব ভাইয়ের বানানো পরোটা আর ডিম খেতে বসলাম।

খ্যাঁচ খ্যাঁচ শব্দ শুনতে পেলাম। এক টুকরো মুখে দিয়ে দরজার দিকে তাকালাম। অপূর্ব ভাই এসেছেন। ডানহাতটা পেছনে লুকিয়ে ফেললাম। স্মিত হেসে বললাম, “আপনি এত তাড়াতাড়ি এসেছেন? বললেন না, আসতে দেরি হবে। পাঁচটা বাজবে।”

অপূর্ব ভাই ভ্রু কুঁচকে বললেন, “এত তাড়াতাড়ি কোথায়? পাঁচটা পঞ্চাশ বাজে। (আমার হাতের দিকে তাকিয়ে বললেন) সকালের খাবার এখন খাচ্ছিস?”

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩০

আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। পাঁচটা বেজে একান্ন মিনিট। কিন্তু আমি তো একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছি। মৃদু স্বরে বললাম, “এত তাড়াতাড়ি পাঁচটা বাজল কীভাবে?”

এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব ৩২