কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ২৮

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ২৮
লাবন্য ইয়াসমিন

কফির কাফে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে অধরা। মেজাজ আজ চরম থেকে চরম খারাপ। জুবায়ের কাউন্টারে বসে আছে। কফি হাউজে দুজন কর্মচারি বিরতিহীন ভাবে কাস্টমারদের মধ্যে যত্ন নিয়ে সকলের সামনে কফি পরিবেশ করছে। কফির এখানে বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। অধরা দক্ষিণ কোণের চেয়ারটাতে বসে আছে জুবায়ের সেটা জানে না।

ওর চুপিচুপি আসার একমাত্র কারণ হচ্ছে জুবায়ের নিজে। এই কফি হাউজের সুনাম স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে মিলেছে নানারকম মানুষের আনাগোনা। বেশ কিছু মহিলাও ভিড় করছে। তারমধ্যে একটা মেয়ে উল্লেখযোগ্য। যেকিনা নিয়ম করে তিনবেলা কফি খেতে আসে। যদিও জুবায়ের সেটা পাত্তা দেয়নি কিন্তু অধরার কানে কথাটা যাওয়া মাত্র ও রেগে বো/ম হয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ব্যবসা করে বলে যাকে তাকে ধরে নিয়ম করে কফি খাওয়াবে এটা ওর ঠিক হজম হচ্ছে না। জুবায়েরের উপরে ওর রীতিমতো বিরক্ত। এসেছে হাতেনাতে ধরতে। এখানকার মেয়েদের সঙ্গে তো ঝগড়া করতে পারবে না কিন্তু বাড়িতে গিয়ে জুবায়েরকে আচ্ছা করে ধো/লাই করতে পারবে। তার জন্য দরকার প্রমাণ। কাজের ছেলে রিকি খবর দিয়ে ওকে এনেছে।

ছেলেটার সঙ্গে অধরার বেশ ভাব জমেছে। ওই সবটা বলেছে। অধরা কফির কাপে দ্বিতীয় চুমক দিতেই পাশ থেকে রিকি ইশারা করলো দরজার দিকে তাঁকানোর জন্য । অধরা সেদিকে তাঁকিয়ে চোখ বড়বড় করে ফেলল। একটা মেয়ে বেশ হাসি হাসি মুখ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। চিকন ছিপছিপে টাইপের গড়ন মেয়েটার। অতিরিক্ত ফর্সার জন্য নাকের ঢগা পযর্ন্ত লাল হয়ে আছে। চুলগুলোতে মনে হচ্ছে আগুন লেগে গেছে উপর দিয়ে ধুলা উড়ে যাচ্ছে।

অধরার ইচ্ছে হলো খাটি নারিকেল তেল দিয়ে মেয়েটার চুলগুলো বেঁধে দিতে। যদিও দেখতে খুব একটা খারাপ না বেশ ভালো। বয়স কত অনুমান করা কঠিন। অধরা মেয়েটার পা হতে মাথা পযর্ন্ত খুটিয়ে খুটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিল এমন সময় হঠাৎ সামনে থেকে ঠকঠক শব্দ শুনে ও চমকে উঠলো। সামনের চেয়ারে তাঁকিয়ে ওর মনে হলো এখুনি হার্ট এটাক দিবে।

কারণ জুবায়ের ওর দিকে তাঁকিয়ে বসে আছে। মুখটা বেশ গম্ভীর। অধরার ভয় লাগলো। যদি পরে ভূল বুঝে তখন? অধরা ওকে সন্দেহ করছে না কিন্তু মেয়েটা যদি ভুলভাল কিছু করে বসে এটাই ভয়।বরকে নিয়ে সব মেয়েদের মধ্যেই একটু জেলাসি থাকে। বিশেষ করে বাঙ্গালী মেয়েদের। জুবায়ের অধরার অর্ধেক খাওয়া কফিটা টেনে নিয়ে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে ঢোক গিলে বলল,

আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর পেছনে গোয়েন্দাগিরি করে স্বাদ মিটেনি এখন আমার পেছনে পড়েছো? বরকে বিশ্বাস নেই? নাকি অন্য কিছু? লুকিয়ে আছো অথচ তোমার শাম্পুর গন্ধে আমি কাউন্টারে বসতে পযর্ন্ত পারলাম না। আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেই গন্ধ প্রবাহিত হচ্ছে। কত চেনা বলোতো?

অধরা চোখ বন্ধ করে ফেলল। যেই ভয়টা পাচ্ছিলো তাই হলো। এখন কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। কোন বুদ্ধিতে যে আসতে গেলো এখন আফসোস হচ্ছে। ওকে চুপচাপ দেখে জুবায়ের আবারও শীতল কণ্ঠে বলে উঠলো,
উত্তর নেই না? শুনো আমি তোমাকে যেমন মুগ্ধ হয়ে দেখে তৃপ্তি পাই আর কাউকে দেখে তেমন পাইনা। বয়স হয়েছে,মেয়ে জামাই আছে তাছাড়া বউ রেখে আমি বাইরের মেয়েদের দিকে তাঁকাবো কেনো? তুমি তো অবুঝ ছিলে না।

মানছি এই মেয়েটা নিয়মিত এখানে যাওয়া আসা করছে আর সকলের নজরে আসছে কিন্তু ওকে বোঝানোর জন্য আমি আছি তো। আজকের দিনটা সময় দিলে আমি মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতাম। বোঝালে ঠিক বুঝবে। অল্প বয়স এদের মধ্যে এখন বাস্তবিক জ্ঞান আসেনি। আমার মেয়ের বয়সের কিছুটা বড় হবে। কিছু বুঝলে?
জুবায়ের একদমে কথাগুলো বলে কফিতে আবারও চুমুক দিলো। অধরা ছলছল চোখে প্রতিবাদ করে উঠলো,

আপনি সব সময় এমন স্মার্ট হয়ে চলাফেরা করেন কেনো? সাদা পাঞ্জাবী আর লুঙ্গি পরবেন। পান খাবেন লম্বা দাড়ি রাখবেন তাহলে বয়স দেখা যাবে। আর কিসের অবুঝ আমি? পৃথিবীর একটা মহিলাকেও দেখাতে পারবেন যে কিনা নিজের স্বামীকে আরেকজন মহিলার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে রাজি হয়? জেলাসী করাটা আমাদের নারীগত অধিকার। একবার ছাড় দিয়েছি বলে বারবার দিবো নাকি? সেবার হাজারো টেনশনে ছিলাম কিছু বলিনি। এই মূহুর্ত থেকে আপনার সঙ্গে আমি রাগ করছি এবং রেগে আছি খুব। কথা বলবেন না। যাচ্ছি আমি। ভালো থাকবেন।

অধরা ভেজা গলাই হড়বড় করে মনে যা ইচ্ছে হলো বলে দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসলো। জুবায়ের সেদিকে তাঁকিয়ে হেসে ফেলল। লোকজন না থাকলে গড়াগড়ি খেয়ে হাসতো। অধরা এই প্রথমবার ওকে নিয়ে এমন সিরিয়াস। আগে যায় হয়েছে নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। জুবায়ের বেশিক্ষণ এভাবে বসে থাকতে পারলো না। দ্রুত সেই মেয়েটার সামনে গিয়ে বসলো। হঠাৎ জুবায়েরকে দেখে মেয়েটা ভড়কে গেলো। সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করলে মেয়েটা বিব্রত হবে ভেবে জুবায়ের ওষ্ঠে হাসি এনে বলল,

ম্যাম আপনি কি কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?
মেয়েটার মধ্যে বেশ অস্বস্তির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে জুবায়ের সেসব পাত্তা দিলো না আবারও বলল,
সাহায্য লাগলে বলুন প্লিজ। আমি সাহায্য করতে চেষ্টা করবো।
মেয়েটা মুখের উপরে আসা চুলের গোছাটা কানে গুজে নিয়ে লাজুক ভঙ্গিতে বলল,

আপনার এখানকার কফিটা আমার ভালো লেগেছে। আপনার মতোই মিষ্টি আপনার কফি।
বলে কি মেয়ে? কথাটা ভেবে জুবায়ের খুকখুক করে কেশে ফেলল। বুঝলো বউয়ের রাগ করার যথেষ্ট কারণ আছে। তাই সোজাসুজি বলল,

ম্যাম আমার স্ত্রী কন্যা আছে। আমি ওদেরকে ভীষণ ভালোবাসি। আপনি এখানে আসছেন আমার স্ত্রী বিষয়টা ভালোভাবে নিচ্ছে না। প্রয়োজন ছাড়া প্লিজ অযথা এখানে আসবেন না। আমার অসুবিধা হচ্ছে। আশাকরি বুঝবেন।
মেয়েটা জুবায়েরের কথা শুনে দুঃখ পেলো তবে পরক্ষণেই মলিন মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,

সরি স্যার আমি ভূল করেছি। ক্ষমা করবেন।
জুবায়ের হাসলো। পছন্দ হতেই পারে সেটা স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু তাঁকে আসকারা দেওয়া মোটেই স্বাভাবিক না। জুবায়ের মেয়েটার থেকে বিদাই নিয়ে বেরিয়ে আসলো। প্রতিবার অধরা ওকে হুমকি দিয়েছে রেগে যাবো। কিন্তু এবার বলে গেছে সে রাগ করেছে মানে সিরিয়াস কেস।

নদীর একূল ভেঙে ওকূল গড়ার মতো পৃথিবীর একদিকে থাকা শক্তিশালী পুরুষের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে অন্যদিকে এক দুর্বল পুরুষের মধ্যে হঠাৎ অজানা শক্তির অস্তিত্ব প্রকাশ ঘটতে চলেছে। ক্ষমতা সম্পর্কে একজন যেমন জ্ঞানী তেমনি আরেকজন এসব কিছুই জানে না। প্রচণ্ড ভয় আর আতঙ্ক তাঁকে গ্রাস করতে চলেছে। কি করবে কাকে বলবে সিদ্ধান্তহীনতাই দগ্ধ হচ্ছে। মেঘমুক্ত আকাশে এক খণ্ড চাঁদ উঁকি দিচ্ছে মাথার উপরে।

পায়ের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর শীতল জলধারা। নদীর কূলে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষরাজীকে মনে হচ্ছে এক একটা দানব। আজ পাথরের মনের মধ্যে কেউ নেই আছে শুধু নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা। খঞ্জ/ররটা টুকরো টুকরো হওয়ার পর থেকে ওর সঙ্গে কি জানি হচ্ছে। আগের তুলনায় শক্তিশালী মনে হচ্ছে নিজেকে। হোটেল কক্ষের একটা দেয়াল ঘুসি দিয়ে ফাঁটল সৃষ্টি করে ফেলেছে।

রেগে গিয়ে বেলালকে হিপনোটাইস করে ফেলেছে।আরও বেশ কিছু জিনিস ওর চোখে পড়েছে। এইযে রাত করে বাইরে এসেছে বিন্দু পরিমাণ ভয় পাচ্ছে না। অযথা রাগ হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। এভাবে চললে কিভাবে লোকজনের সঙ্গে চলবে মাথায় আসছে না।

পাথর সারারাত নদীতে পা ডুবিয়ে বসে থাকলো। এটা ওটা ভেবে কিভাবে রাত পার হলো ওর জানা নেই। ভোরের আলো ফুটতেই ও কূল থেকে উঠে আসলো। আয়েশি ভঙ্গিতে হাত ভাজ করে সামনে গিয়ে গেলো। সূর্যদ্বয় হচ্ছে। দূরে একজন চেনা মুখ দাঁড়িয়ে আছে। পাথর ওকে দেখে পাশ কাঠিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু হলো না। পিউ চিৎকার করে বলে উঠলো,

হেই!আপনাকে আমি চিনি। গতদিন নদীতে ছিলেন না আপনি?
পাথর কোনোরকমে উত্তর দিয়ে চলে আসতে চাইলো কিন্তু হলো না। পিউ ওকে ঝাপটে ধরার মতো সামনে গিয়ে বলল
গতদিন কিন্তু আপনার যাওয়ার তাড়া ছিল না অথচ আজ আছে। আপনি কি নূরের উপরে ক্রাশ? কিছু চলছে? যাবেন ওর সঙ্গে দেখা করতে? এখুনি আসবে অপেক্ষা করতে পারেন। ডাকবো ওকে?
পিউ নিজের স্বভাব মতো বকে গেলো কিন্তু পাথর বিব্রত হলো। নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিলো,

ম্যাম আপনার কোথাও ভূল হচ্ছে। আর কে নূর? আমি কাউকে চিনি না। প্লিজ আমি আসছি।
পাথর কেটে পড়লো সেখান থেকে। বিরক্ত হলো খুব। তবে নূরের বাড়ির ঠিকানাটা পেয়ে গেলো। মনের মধ্যে নূর নামটা বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করলো। প্রশান্তি ছেয়ে গেলো হূদয়ে।

শনশন বাতাস আর সমুদ্রের গর্জনে কান ভারি হয়ে উঠছে। দূরে একজন মেয়েকে বেপরোয়াভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে এক বেহায়া পুরুষ। মেয়েটা নানাভাবে অনুরোধ করছে ক্ষমা চাইছে আর বাড়ি ফিরে যাওয়ার তাগিদ দিচ্ছে ছেলেটা সেসব তোয়াক্কা করছে না। বহুদিনের লালসা মেটানোর তৃষ্ণা ওকে পেয়ে বসেছে। সবটা এতক্ষণ লক্ষ্য করছিল এক কিশোরী।

যেটা দেখে ওর শরীর ঘৃণাতে জ্বলে উঠলো। এগিয়ে গেলো ওদের দিকে। ছেলেটা মেয়েটাকে সমানে ছুঁয়ে দিতে মত্ত ঠিক সেই সময় হঠাৎ আরেকটা মেয়ের অবয়ব ভেসে উঠলো পুরুষটার চক্ষু বরাবর। ছেলেটা থমকে গিয়ে মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে অনাকাঙ্খিতভাবে আসা এই অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী মেয়েটাকে ধরতে হাত বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু বিধির ব্যামো ধরতে পারলো না। অসহায় মেয়েটাকে আগলে নিয়ে আকাশ বাতাস কাপিয়ে মেয়েটা গর্জন করে বলে উঠলো,

আমাকে ছুঁয়ে দেখাতে পারলে আমি আজ রাতের জন্য তোর। আর যদি না পারিস তবে তোর জীবন প্রদীপটা আমার। ডিল করতে চাইলে এখুনি উত্তর চাই।
মেয়েটার কথা শুনে ছেলেটা কিটকিট শব্দ করে জঘন্যভাবে হসলো। সদ্য পান খাওয়া দাঁত বের করে উত্তর দিলো,

মঞ্জুর,তোর ইচ্ছে আমি পূরণ করবো। এতো রূপ জীবনে প্রথমবার দেখলাম।
ছেলেটা আবারও মেয়েটার দিকে থাবা বসালো কিন্তু পারলো না। একবার দুবার না কয়েকবার এমন চলতে থাকলো। এবার মেয়েটা তীক্ষ্ম সুরে হাসলো। সেই হাসির শব্দে ছেলেটার শরীর বেঁয়ে ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। মেয়েটা বাঁকা হেসে বলল,

সুলতান বংশের সবচেয়ে শক্তিশালী উত্তরাধিকারী আর মহাশক্তির রাণী কহিনুর ফারুকীর শরীর স্পর্শ করার মতো যোগ্যতা বা সাহস তোর মতো কাপুরুষের নেই। তুই চরি/ত্রহীন ছিলি আজীবন থাকবি। তোর মৃ/ত্যু/র পরে কারো বিশেষ কোনো অসুবিধা হবে না কিন্তু বেঁচে থাকলে অনেকেই লাঞ্ছিত হবে। এটা আমার ঠিক হজম হচ্ছে না।
ছেলেটার মুখটা ভয়ে রক্ত শূন্য হয়ে গেলো। পায়ের নিচু থেকে মাটি কাঁপছে নাকি ভয়ে পা কাঁপছে বুঝতে পারছে না তবুও সাহস করে বলল,

খুব বড়বড় কথা তাইনা? দেখি কি করতে পারিস?
ছেলেটা কোমর থেকে ধারালো একটা খ/ঞ্জ/র বের করে ছুড়ে দিলো কহিনুরের দিকে। খ/ঞ্জ/রটা ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে থমকে গেলো কহিনুরের সামনে। কহিনুর সেটা দেখে হাসলো। মজা পেলো ভীষণ। আঙুল উঁচু করে ছেলেটার হৃদপিণ্ড বরাবর শূন্যের মধ্যে কিছু অঙ্কন করলো। সঙ্গে সঙ্গে গগনবিদারী চিৎকারে সমুদ্র পৃষ্ট কেঁপে উঠলো।

সেই সঙ্গে কহিনুর ঝটকরে চোখ খুঁলে উঠে বসল। শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। ভয়ানক বাজে স্বপ্ন দেখছিল এতোক্ষন। বাংলাদেশ থাকতে নিউজে কক্সবাজারে এক ছেলের লা/শ দেখেছিল। সেদিন থেকে ও এরকম স্বপ্ন প্রায় দেখতেই থাকে। তবে স্থান আর চেহারার বেশ মিল থাকে। মনে হয় ওটা স্বপ্ন ছিল না একদম জীবন্ত। নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হয়। কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো সাঈদের ফিসফিস আওয়াজ শুনে,

তুমি ঠিক আছো? বাতাস করবো?
কহিনুর চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে নিষেধ করলো। শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছে। সাঈদ পানির গ্লাসটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

গতকাল রাতে একজন অগন্তুক তোমার কক্ষে প্রবেশের চেষ্টা করেছে তুমি জানো? আমি তোমার জানালায় পা ঝুলিয়ে বসে ছিলাম ঠিক তখনই দেখলাম। কালো হুড়ি দিয়ে মুখ ঢাকা ছিল। আমি ওকে বেশ কিছুদূর অনুসরণ করেছি কিন্তু ধরতে পারিনি। কে ছিল বলোতো?
কহিনুরের কপালে ভাজ পড়লো। কে হতে পারে ঠিক মাথায় আসছে না। ওকে চিন্তিত দেখে সাঈদ বলল,

আমি আছি, এতো চিন্তা করোনা। এখানে ও আসতে পারবে না। তাছাড়া তোমার গলাতে থাকা লকেট খারাপ শক্তির থেকে তোমাকে সেভ করবে। তোমার ক্ষতি করবে এমন কেউ তোমার কাছে পৌঁছনোর ক্ষমতা নেই। চমকে যাওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে অগন্তুক আমাকে দেখতে পেয়েছে। ও মানুষ ছিল তবে কিভাবে আমাকে দেখতে পেলো এটা খুব ভাবনার বিষয়।

সাঈদ কথাগুলো বলে ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে আসল কক্ষ থেকে।। অধরা চুপচাপ রান্না করছে। জুবায়ের সোফায় মুখ গোমড়া করে বসে আছে। দুদিন হচ্ছে অধরা ওর সঙ্গে কথা বলছে না। এই প্রথমবার এমন হলো। রাতে আলাদা ছিল না। ভেবেছিল কথা বলবে কিন্তু ওর ভাবনায় এক বালতি পানি দিয়ে সারারাত মেয়েটা নাক ডেকে ঘুমিয়েছে।

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ২৭

জুবায়েরের শান্তির ঘুম হারাম। এমনে রাগ করার কোনো মানে হয় নাকি। রাগ হচ্ছে ওই মেয়েটার উপরে। অধরা রুটি ছেকে ঝকঝকে থালার উপরে রাখতে গিয়ে ভ্রু কুচকে ফেলল। কারণ থালার মধ্যে এক অগন্তুকের অবয়ব ভেসে উঠেছে। অধরার হাত কেঁপে উঠলো। অধরা উত্তেজিত হয়ে চাপা কণ্ঠে বলল,
কে তুমি? কি চাই এখানে?

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ২৯