কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৩

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৩
লাবন্য ইয়াসমিন

গ্রীষ্মকালের গরম কাটিয়ে হঠাৎ বর্ষার আগমন ঘটেছে। ঝুম বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়ার জন্য জনজীবন যেনো থমকে গেলো। বড়সড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস দিচ্ছে এই চলচল হাওয়া আর ঘনঘন মেঘের ধুমধাম আওয়াজ। বিদ্রুৎ চমকানোর সঙ্গে বাজ পড়ছে। জুবায়ের অধরার আঙুল গুলো হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে গাড়িতে বসে আছে।

ওদের সঙ্গে আজ ড্রাইভার আসেনি। তাছাড়া অধরা সঙ্গে থাকলে জুবায়ের সেইদিন কাউকে সঙ্গে রাখে না। অযথা ঝামেলা টেনে লাভ কি? তাছাড়া ওদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো ঝামেলা নেই যা আছে অপ্রকৃতিস্থ জীবের সঙ্গে।সেখানে অস্ত্র বা গার্ড রাখা বোকামি ছাড়া কিছুই না। মারিয়াকে দেখতে যাওয়ার পথে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আজকে আর যেতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। তাছাড়া ওকে রাখা হয়েছে বালির্ন থেকে কিছুটা দুরে। অধরা বিরক্ত হচ্ছে বৃষ্টির উপরে।মেয়েটাকে দেখতে যাওয়ার সুযোগ আসেনা আজ এসেছে অথচ এই অনাকাঙ্খিত বৃষ্টি ওদেরকে বাঁধা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে প্রকৃতিও চাইনা ওরা মারিয়ার কাছে যাক। কথাগুলো ভেবে অধরা বিড়বিড় করে বলল,

এভাবে কতক্ষণ থাকবেন? ঘন্টা খানিকটা বৃষ্টি হবে তারপর শুরু হবে তুষারপাত নয়তো অন্যকিছু। এই জার্মানির মতো রাষ্ট্রে মানুষ কিভাবে থাকে আল্লাহ মালুম। আমি প্রচণ্ড বিরক্ত। আমার বাবা কেনো যে নিজের দেশ ছেড়ে এখানে এসেছিলেন বুঝতে পারি না। উনি এখানে না আসলে কিছুই হতো না।
অধরা নিজের মতো করে মনে যা আসলো বলে গেলো। জুবায়ের ওর মুখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে মলিন হেসে উত্তর দিলো,

উনি না আসলে আমি এতো ভালো বউ পেতাম কোথায়? উনি এনেছিলেন বলেই না তোমাকে পেলাম সঙ্গে কহিনুরের মতো মেয়েকে পেয়েছি।। কেমন স্বপ্নের মতো। আমার মতো মানুষ সত্যি তোমাদের উপযুক্ত না।
জুবায়েরের এমন খাপছাড়া কথা শুনে অধরা ভ্রু কুচকে ফেলল। কোন সময় কি বলতে হয় লোকটার জানা নেই। নাকি সকালের সেই ঘটনাটা এখনো ভুলে যায়নি তাই মনে রেখে মেয়েদের মতো খোচা দিয়ে কথা শোনাচ্ছে,কোনটা? অধরা ওর হাতের মুঠোয় সামান্য চাপ দিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলল,

আজেবাজে কথাবার্তা বললে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিবো। মানছি ভুল করেছি তাই বলে এভাবে যখন তখন প্রতিশোধ নিতে চাইবেন মানবো না। আমার বর আমার সম্পত্তি তাঁর সঙ্গে আমি যা ইচ্ছে তাই করবো। কিছু বলতে পারবেন না। আপনার হুটহাট অপ্রিয় বাক্য শুনতে আমি রাজি না বুঝলেন? কিছু ব্যবস্থা করুন। হুট করে গাড়ির উপরে বাজ পড়ছে কিন্তু অবস্থা খারাপ।

অধরা বেশ তেজ দেখিয়ে কথাগুলো বলল। চিন্তা হচ্ছে নিজের জন্য না জুবায়ের জন্য। লোকটার কিছু হলে ও সহ্য করতে পারবে না। একজন মানুষ সব দিক থেকে উপযুক্ত হয়না। কিছু না কিছু ত্রুটি থেকেই যায়। জুবায়েরও তেমন একজন মানুষ। হুটহাট না ভেবে কাজ করে তবে লিমিটের মধ্যে থাকে। অতিরিক্ত কিছু করেনা এই যা। হঠাৎ নিকটবর্তী কোথাও বজ্রপাতের আওয়াজে অধরার ধ্যান ভাঙলো। ও চমকে উঠে জুবায়েরের দিকে এগিয়ে গেলো। ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে কিভাবে মুক্ত হবে ভেবেই আত্মা শুকিয়ে আসছে। জুবায়ের অধরাকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত রেখে কোমর কণ্ঠে বলল,

কিছু হবে না। বৃষ্টি থেমে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে। ফোনটা দেখো আবহাওয়ার আপডেট দিচ্ছে।এপস অন করে রাখো টেনশন কমবে। এতোটা ভীতু নাকি তুমি? রহস্য উদ্ধার করতে একা একা গহিন অরণ্যে চলে যাও আর সামান্য বৃষ্টিতে ভয় পাচ্ছো? শুনো তুমি গাড়িতে থাকো আমি সামনে কোনো কটেজ বা রেস্তোরাঁ আছে কি খোঁজ করে আসছি। জ্যাকেট আছে আমি ভিজবো না কিন্তু তোমার সমস্যা হবে।

জুবায়ের বুদ্ধি দেখে অধরা চুপসে গেলো। ওকে একা ফেলে এই ভদ্রলোক নাকি এখন এই নির্জন রাস্তায় কটেজ খুঁজতে যাবে। বলি কটেজ তৈরি করা কি এতোই সহজ যে যেখানে সেখানে পাওয়া যায়? অধরা ওকে আরও খানিকটা শক্ত করে ধরে বসে থাকলো। ফিসফিস আওয়াজ করে বলল,

পারবো না একা থাকতে। আপনি যেখানে যাবেন আমিও সেখানেই থাকবো। ফোন আছে তো গুগলে দেখে নিন এখানে তেমন কোনো ব্যবস্থা আছে কি।
জুবায়ের নেচে উঠলো। বউয়ের বুদ্ধির সত্যিই প্রশংসা করতে হয়। কি সুন্দর গাড়িতে বসেই সমাধান বলে দিলো কথাটা ভেবে ও এক হাতে অধরার পিঠে হাত রেখে অন্যহাতে গুগলে সার্চ দিলো। আধা কিলোমিটারের মধ্যে একটা বাংলো আছে। জুবায়ের অধরার কপালে ওষ্ঠদ্বয় রেখে বলল,

সামনে একটা বাংলো আছে। যাবে সেখানে? যতোটা এসেছি ফিরে যেতেও লেট হবে। রাতটুকু ওখানে থেকে সকালে মারিয়াকে দেখতে যাবো চলবে না?
অধরা হেসে ফেলল। জুবায়েরের কাধে মাথা রেখে উত্তর দিলো,

শুধু চলবে না, দৌড়াবে।
জুবায়ের উত্তর পেয়ে অপেক্ষা করলো না গাড়ি ছেড়ে দিলো। বাতাসের ঝাপটা এসে গাড়ির কাচে আঘাত করছে। অধরা জড়সড় হয়ে বসে আছে। শীত করছে। পাতলা শাড়ির আচলটা গায়ের সঙ্গে লেপ্টে রেখেছে। জুবায়ের সেদিকে তাঁকিয়ে বলল,

গাড়ির পেছনের দিকে একটা প্যাকেটে তোমার শীতের পোশাক আছে। একটু কষ্ট করো আমি নেমে বের করে দেবো। মেয়েদের এই একটা সমস্যা একটু ফিটফাট সাজলে শীতের পোশাকের সঙ্গে যত ঝামেলা বাঁধে। তাছাড়া জার্মানির মতো রাষ্ট্রে বসবাস করছো জানো না ঘনঘন এখানকার ঋতুর মুড খারাপ হয়? কিছু পরে আসতে।
অধরা নিজের দোষ ঢাকার জন্য ঝাড়ি দিয়ে বলল,

আপনি আছেন তো এসব ভাবনা চিন্তার জন্য। আমি কেনো টাইম নষ্ট করবো?সামনের দিকে নজর দিন।
অধরার কথা বলতে দেরী হলো কিন্তু জুবায়েরের গাড়ি থামাতে বিন্দু মাত্র লেট হলো না।ও অধরার দিকে তাঁকিয়ে বলল,

নির্জন পরিবেশ কোথায় বরকে একা পেয়ে রোমান্টিক কথাবার্তা বলবে। চুমু টুমু দিবে তানা ভাঙা রেডিওটার মতো গড়গড় করছো।

তাই বলে গাড়ি থামালেন কেনো? দেখছেন না কেমন বৃষ্টি হচ্ছে? ঝড় উঠছে আর আপনি আমার সঙ্গে তর্ক করছেন? আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।
জুবায়ের ওর কথায় পাত্তা দিলো না। কিছু একটা ভেবে বলল,

যেতে পারি শর্ত আছে। গুণে গুণে দুটো চুমু দাও তারপর গাড়ি ছাড়বো। এতোক্ষন বকবক শুনছি সেকি ফ্রিতে ভাবছো? সুলতান জুবায়ের ফারুকী ব্যবসায়ী মানুষ। লাভ লসের হিসেব ছাড়া কাজকর্ম করে না। চুমু ছাড়া একটা পাও গাড়ি চলবে না। বিরোধী পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে দরকারে হরতাল নামবো। তবুও দাবি ছাড়বো না।
জুবায়ের বেশ মজা নিয়েই কথাগুলো বলল কিন্তু অধরা সেসব পাত্তা দিলো না। ওর দৃষ্টি সামনের দিকে। রাস্তার উপরে কাউকে ও দেখেছিলো। অবয়বটা হুটকরে সরে গেলো। কেমন সন্দেহ হচ্ছে। ওকে সামনে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে জুবায়ের কিছুটা ঝুকে এসে অধরার মখটা দুহাতে নিজের দিকে টেনে গভীর দৃষ্টিতে বলল,

আমি নিজেই নিতে জানি। তুমি ভীষণ কৃপণ সে আমার জানা আছে।
কে ছিলো সামনে? কার থেকে লুকোচুরি করতে এসব করছেন আপনি? আমি জানি আপনি সামনে আর যাবেন না। আমাদের গাড়ি ফলো করা হচ্ছে। কেউ ইচ্ছা করে আমাদের বিপদে ফেলছে। ফোনটা দিন আমাকে।

অধরার কথা শুনে জুবায়ের থমকে গেলো। সামনে ভয়ংকর দেখতে এক মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলো। বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকে ওদের সে ফলো করছে। মহিলা যে সাধারণ কেউ না এটা ভেবেই এতোক্ষন চুপচাপ ছিলো। আগে পেছনে ছিল এখন সে সামনে সামনে যেতে শুরু করছে। অধরা ভয় পাবে তাই এলোমেলো কথাবার্তা বলে ওকে ভোলানোর চেষ্টা করেছে। এই মহিলা কে বা ওর উদ্দেশ্য কি জানা নেই।

তবে যেকোনো সময় আক্র/মণ করে বসবে।তখন ম/রা ছাড়া তখন হাতে কোনো উপাই থাকবে না। জুবায়েরের ধ্যান ভাঙলো অধরার কথা শুনে। অধরা চট করে কহিনুরকে ফোন করে ফেলল। ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই অধরা সবটা বলে দিলো। বিনিময়ে কহিনুর হাসলো। তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

গাড়ি থেকে নামবে না। যেখানে আছো সেখানেই অপেক্ষা করো আমি আসছি।
জুবায়ের ভ্রু কুচকে আছে। সামান্য বিষয়ে মেয়েকে ডেকে আনার মতো কিছু হয়েছে বলে ওর মনে হয়না। তাই বিরক্তি নিয়ে বলল,

মেয়েটাকে না ডাকলে হতো না?
চুপচাপ বসে থাকুক। ইচ্ছে হলে আমাকে চুমু টুমুও দিতে পারেন। তবুও দয়াকরে কথা বলবেন না। আমি বিরক্ত। রেগে যাচ্ছি।
জুবায়ের সোজা হয়ে বসলো। অধরা সত্যি রেগে আছে। এখন কথাবার্তা বলা নিরাপদ না। কিন্তু সামনের মহিলাটা কে?

নিঝুম বৃষ্টিতে দৌড়ে চলেছে কহিনুর। ওর সামনে সবুজ শাড়ি পরিহিত এক মহিলা এগিয়ে যাচ্ছে। এই মহিলাকে নিয়ে যত রহস্য। একে ধরতে পারলেই আসল কাহিনী সামনে আসবে। কহিনুর জ্যাকিকে হ/ত্যার সময় এমন পোশাক পরেছিলো একটা উদ্দেশ্য নিয়ে। ভেবেছিলো জ্যাকি হয়তো জানে এই সবুজ শাড়ির মহিলা সম্পর্কে। কিন্তু তেমন কিছু ও জানেনা।

জানলে বোঝা যেতো। কথাটা ভেবে ও রাস্তার পাশ ঘেঁষে গহিন অরণ্যে ঢুকে পড়লো। ওর বাবা মাকে এই মহিলা ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। কারণ না জেনে আজ ও পিছু হাটবে না। কিছুটা এগিয়ে এসে ও থমকে গেলো। কারণ সামনের সেই মহিলাও দাঁড়িয়ে গেছে। কিছুটা দূরে সাঈদ আর পাথর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। তিনদিক থেকে ঘেরাও করা হয়েছে। কহিনুর এখনো ভদ্রমহিলার মুখ দেখতে পাইনি তাই আরও কিছুটা এগিয়ে মুখোমুখি হয়ে চমকে গেলো। ওর সামনে ওর ছোট ফুপি দাঁড়িয়ে আছে। কহিনুরকে দেখে মারিয়া বাঁকা হেঁসে তাচ্ছিল্যপূর্ণ ভাবে বলল,

ফুপিকে আ\ঘাত করতে পারবে তো সুলতানা কহিনুর ফারুকী? জুবায়ের ফারুকীর আদরের বোনের শরীরে আ/ঘাত করে পিতার কষ্টটা হজম করতে পারলে এসো আমি প্রস্তুত আছি।
মারিয়ার কথা শুনে কহিনুর শব্দ করে হেসে ফেলল। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। শনশন করে বাতাস বইছে। কহিনুর চোখ বন্ধ করে কঠিন গলাই জবাব দিলো,

আমার ফুপির শরীর থেকে একবার বাইরে আসুন কসম মাটিতে পু/তে দিতে দুবার ভাববো না। আর কতকাল পরের শরীরে বসবাস করবেন? একবার নিজের শরীরে প্রবেশ করে দেখুন আমিও দেখি আপনার কতটা সাহস। লোকেরা বলে জাতের মেয়ে কালোও ভালো। লোভের জন্য আজ চন্দ্রের মতো রূপসী রমণী আত্ম হয়ে এ শরীর থেকে ও শরীরে ঘুরছে। আমার দুঃখ হচ্ছে সঙ্গে আফসোস। লো/ভী মহিলা নিজের স্বার্থের জন্য আমাদের পরিবারটাকে ধ্বং/স করে দিতে দুবার ভাবেনি। আজ পালাবেন কিভাবে শুনি? সাঈদ বোতল রেডি করো।

সাঈদ সত্যিই বোতল নিয়ে হাজির হলো। কহিনুর পাথরকে ইশারা করলো মারিয়াকে পেছন থেকে ধরতে। পাথর অপেক্ষা করলো না। দ্রুত ধরে ফেলল। কহিনুর সোজা গিয়ে চন্দ্রের গলা টিপে বলল,
আপনাকে ফিরিয়ে আনার কৌশল থাকলে ফিরে যাওয়ার উপাইও নিশ্চয়ই আছে। বলো দিন কেনো এসব করছেন? আমার ফুপিকে কেনো ধরেছেন?

কহিনুর ওকে শক্ত হাতে ধরলেও হঠাৎ আক্রমণে ও টলে গেল। পাথর ছিটকে গেলো কিছুটা দূরে। ওদের থেকে খানিকটা দূরে এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে।যার মাথার চুলগুলো কিছুটা লম্বা। গায়ে পাঞ্জাবী দেখে বোঝা যাচ্ছে লোকটা বাঙ্গালী কিন্তু কে উনি?মারিয়ার কণ্ঠ থেকে হালকা আওয়াজ আসলো,”সুলতান ফারাবী ফারুকী “। কহিনুর হতভম্ভ হয়ে থমকে গেলো। কিন্তু নিজেকে সামলে নেওয়ার আগেই লোকটা হাওয়ার বেগে মারিয়াকে নিয়ে সরে গেলো। কহিনুর দাঁতে দাঁত চেপে পাথরের দিকে তাকিয়ে বলল,

এই আপনার অর্ধননবের শক্তি? ধরতে পারলেন না অকর্মণ্য একটা। কিভাবে জানবো ওই লোকটা কে ছিলো?
পাথর উঠতে উঠতে বলল,

তোমার মায়ের থেকে শুনলেই পারো। উনি জানতে পারেন কিছুটা। আর এই যুবক কিছুতেই সাধারণ না। চন্দ্রের মতো কোনো অশরীরী। ওর হাতে কিছু ছিলো তাই ছিটকে গেলাম।
কহিনুর আর তর্ক করলো না। যেভাবে দৌড়ে এসেছিলো সেভাবেই দৌড়াতে শুরু করলো। দ্রুত পৌঁছনোর দরকার ছিলো বাবা মায়ের কাছে। পাথরও ওকে ওর পিছু নিলো।

রাগে ফুলছে ঐশ্বর্য। কুপিকে রাতের খাবার তৈরী করতে বলেছিলো মেয়েটা কি করছে কে জানে নিখোঁজ। জুবায়ের আর অধরা কিছুক্ষণ আগে বাড়িতে ফিরেছে। কিন্তু ওর সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। আদি ওকে গুরুত্ব দেয়না এটা নতুন কিছু না। ছেলেটা আস্ত শয়/তান। ফ্লোরে পায়চারী করতে করতে হঠাৎ বেলকনির দিকে ওর নজর গেলো। ধারালো একটা খ/ঞ্জর চকচক করছে। ও দ্রুতপায়ে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলো।

খ/ঞ্জরের গায়ে র/ক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে। ঐশ্বর্য সেখানে আঙুল ছোঁয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটা তরলে পরিণত হলো। খ/ঞ্জর থেকে ফোটা ফোন র/ক্ত ফ্লোরে গিয়ে পড়ছে। দৃশ্যটা দেখে ওর চোখ জ্বলে উঠলো। সেদিন রাতে ওর সঙ্গিকে এই বাড়ির কেউ হ/ত্যা করেছে। এই বাড়িতে কুকুরের প্রবেশ নিষেধ ছিল বিধায় বাইরে রেখে এসেছিলো। ওটা অবাধ্য টাইপের কথা শুনতো না কতবার বলেছিলো এভাবে ডাকাডাকি না করতে তবুও শুনেনি।

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫২

বাবার সঙ্গে প্রথম দেখা হলে বাবা এটাকে ওর সঙ্গী হিসেবে দিয়েছিলো।ও মোটেই কোনো কুকুর ছিল না। কিন্তু কুকুরের রূপে থাকতে পছন্দ করতো। ওর শোকেই সারাদিন ঐশ্বর্য চিৎকার করে কেঁদেছে। দুদিন বাবার খোঁজ নেই লোকটা এতোটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন ভেবেই রাগ হচ্ছে। ঐশ্বর্য সেসব ভেবে চোখ বন্ধ করলো। এই খ/ঞ্জরটা দিয়েই ওকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এটা এই কক্ষে কে আনল?

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৪