কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৪

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৪
লাবন্য ইয়াসমিন

সোফায় গড়াগড়ি খেয়ে খিলখিল শব্দ করে হেসে চলেছে সাঈদ। থামার কোনো লক্ষণ নেই। কহিনুর ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। সাঈদ সেসব পাত্তা দিচ্ছে না। হাসি থামছে না। কহিনুর বিরক্ত হয়ে ধমকে উঠে বলল,

সাঈদ উন্মাদের ন্যায় আচরণ বন্ধ করবে? কেনো এভাবে আমাকে বিরক্ত করছো? চারদিকে সব জটিলতায় ভরে উঠেছে কোথায় একটু সাহায্য করবে তানা এসেছো আমাকে বিরক্ত করতে। তুমি এখন আসতে পারো। হাসি থামলে তবেই আমার সামনে আসবে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কহিনুর যথেষ্ট কঠোর হয়েই কথাগুলো বলল কিন্তু সাঈদের কোনো ভাবান্তর নেই। বেচারা ধমক শুনে হাসি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যার্থ হলো। দ্বিতীয় দফায় শব্দ করে হাসতে হাসতে বলল,

রাগ করোনা নূর। তখন চন্দ্রের সামনে তুমি আমাকে বোতল বের করতে বলছিলে বিষয়টা ভেবেই আমার কেমন হাসি পাচ্ছে। তুমি খুব ভালো করে জানো ও জ্বিন না তবুও কেমন করে এমন বোকামি করতে গেলে? ওটা একটা অতৃপ্ত আত্মা। বেচারী আত্মহ/ত্যা করে এই পর্যায়ে এসেছে। হাসি পাচ্ছে আমার বোতলের কথা ভেবে।
কহিনুর বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুটি করে বলল,

তোমার ঘটে বুদ্ধি না ছাই আছে। ওকে বিভ্রান্ত করতে কথাটা বলেছিলাম। ভাবিনি ফারাবী ফারুকী এসে টুপ করে ওকে নিয়ে যাবে। সাঈদ একটা কাজের কথার এসো। বৃদ্ধ দাদুর গোপন কক্ষে যাওয়াটা খুব জরুরী।জানি সেখানে কিছু পাবোনা তবুও চেষ্টা করবো কিছু পেতে পারি। ঘরটাতে বিন্দু পরিণাম ফাঁক নেই একমাত্র দরজা ছাড়া। কিছু উপাই খোঁজো কিভাবে সেখানে যাওয়া যায়। বৃদ্ধ দাদুকে ঘর থেকে বের করতে হবে।

বৃদ্ধ দাদুকে বাইরে বের করা কঠিন কিছু না। ডাইনিং রুমে নিয়ে আসতে পারবো। অপেক্ষা করো উনার কক্ষে একটু তান্ডব করে আছি।
সাঈদ বলতে দেরি করলো কিন্তু প্রস্থান করতে দেরী করলো না। কহিনুর ওকে থামতে বলে চোখ করে করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো। বৃদ্ধ দাদু বুঝতে পারলে কাহিনী খতম। শ/ত্রুকে ছোট ভাবাটা নেহায়েত বোকামি ছাড়া কিছুই না। তাছাড়া এই বাড়িতে আরও কিছু আছে যেটা বৃদ্ধ দাদুর অগোচরেই ঘটছে। সেটা জানাটা আগে জরুরী ছিল।

কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো উপর থেকে আসা হৈচৈ এর শব্দ শুনে। সাঈদ নিশ্চয়ই কিছু ঘটিয়েছে।কথাটা ভেবে ও উপরের দিকে দৌড়ে গেলো। দাদুর কক্ষে মোটামুটি ছোট্ট একটা ভিড় জমে গেছে। কহিনুর ভেতরে গিয়ে অবাক হলো। বৃদ্ধ দাদুর বিছানার মাঝখানে পানির পাত্র উপুড় করে ফেলে রাখা। সেটা দেখেই ভদ্রলোক চিৎকার জুড়েছে। কহিনুর মোলায়েন কণ্ঠে বলল,

আচ্ছা চিন্তা নেই আমি এখুনি সব চেঞ্জ করে দিচ্ছি। দুমিনিট বাইরে গিয়ে বসুন আমি করে ফেলবো প্রমিজ।
কহিনুরের প্রস্তাবটা ফেলে দিতে না পেলে একে একে সবাই বিদায় নিলো। জুবায়ের অফিসে গেছে অধরা কিচেনে। সবাইকে চলে যেতে দেখে কহিনুর হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সাঈদ লাপাত্তা ছিল হঠাৎ তাঁর আগমন ঘটলো। দ্রুত এসে আলমারির দরজা খুঁলতে খুঁলতে বলল,

নূর টাইম নষ্ট করো না। আমি দরজা বন্ধ করে বিছানা পরিবর্তন করছি তুমি ভেতরে ঢুকে যাও। বিপদ দেখলে জানিয়ে দিও।

আচ্ছা। শুনো পাথর আসলে আমার কথা বলবেনা কিছু। এই বেকুবের জন্য চন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে কিন্তু ।
কহিনুর বলতে বলতে ভেতরে চলে গেলো। নির্জন কক্ষ আলোবাতাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। রুমটা জুড়ে গুমোট ভাব আর কিসের একটা গন্ধ ছড়িয়ে আছে। কহিনুর দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে হাতের লাইটটা জ্বালিয়ে নিয়ে দ্রুত গিয়ে ক/ফিনের ঢাকনা সরিয়ে দিলো সেখানে কেউ নেই। কহিনুর জানতো এমন হবে। তবুও ও খুটিয়ে খুটিয়ে সবটা দেখে নিলো।

ক/ফিনের পায়ের দিকের একটা অংশে র/ক্ত মাং/স খসে পড়লে যেমন দাগ হয় তেমন একটা শুকনো দাগ হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কফিনের যে লা/শ ছিল সেটার পায়ের কিছু অংশ পচন ধরেছে। বিষয়টা ভেবেই কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। ভাবল চন্দ্রের শরীরে ক্ষতচিহ্ন আছে তাঁই সে নিজের শরীরে ফিরতে চাইছে না বিধায় ওর শরীর খুঁজে চলেছে। নাকি অন্য কিছু?

কথাগুলো ভেবে ও আলমারিটা চেক করলো।বিশেষ কিছু নেই তাই ফিরে আসছিল। হঠাৎ হাতের ধাক্কা লেগে আলমারির সাইড থেকে ছোট একটা ড্রয়ারের হাতল উঠে গেলো। কহিনুর কৌতূহলী হয়ে সেটা অপেন করে হতবাক হলো। মোটা একটা ডাইরী। কহিনুর কয়েক পৃষ্টা উল্টে নিয়ে বুঝলো যা পাওয়ার সেটা পেয়ে গেছে। দ্রুত বেরিয়ে পড়লো গোপন কক্ষ থেকে।

সাঈদ ইতিমধ্যে সব কাজ গুছিয়ে ফেলেছে। কহিনুর ডাইরীটা ওর হাতে দিয়ে কক্ষে যেতে বলে নিজেও বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়ালো।এটা পড়তে না পারলে শান্তি মিলছে না। কহিনুর চুপচাপ বেরিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু হলো না পাথর দরজায় পা ভাজ করে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়িয়ে মৃদু মৃদু পা নাচিয়ে চলেছে। কহিনুর ওর দিকে ফিরতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। পাথর ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলো কি ব্যপার? কহিনুর কোমরে হাত রেখে চাপা কণ্ঠে বলে উঠল,

বোবা হয়ে গেছেন যে কথা বলতে পারছেন না? রাস্তা ছাড়ুন, আমাকে যেতে হবে। নয়তো কিন্তু খু/ন করে ফেলবো।
কহিনুর বেশ তেজ দেখিয়ে কথাগুলো বলে উত্তরের আশা করলো কিন্তু হলো না। পাথর বিনিময়ে মিষ্টি হেসে ওর দিকে কিছুটা ঝুকে বলল,

আজকাল আলমারির মধ্যে বাচ্চাদের মতো খেলাধুলা করছো নাকি? কি বুদ্ধি পাকিয়েছো শুনি?
আপনাকে বলবো কেনো? ফুলের ঘায়ে মূর্ছা জান আবার আসছেন কহিনুরের বুদ্ধির তল পেতে। শুনুন আমাকে এতোটা সহজলভ্য ভাববেন না। অকুল পাথারে হারিয়ে যাবেন।
কহিনুর বেশ ব্যঙ্গ ছলেই কথাগুলো বলল কিন্তু পাথর রাগলো না। গভীর দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলল,

হারিয়ে গেলেও আফসোস থাকবে না। তাছাড়া চেষ্টা করলে দোষের কি? কহিনুরের হৃদয়ের গভীরতা পরিমাপ করতে চাই। অনুমতি চাই ওই মরূময় হৃদয় নামক অনুভূতি শূন্য ভূমিতে ভালোবাসা গোলাপ লাল ফোঁটাতে।
কহিনুর ভ্রু কুচকে বলল,

কেনো অনুমতি দিবো শুনি? একটা দুটো কারণ বলুন যেটা দেখে আমি আপনাকে অনুমতি দিতে পারি। অযথা অযোগ্য মানুষকে নিজের হৃদয়ের দায়িত্ব কেনো দিবো? যোগ্য ব্যক্তি না হলে আমার হৃদয় সুই/সাইড করবে তখন?
পাথর মুখে হাত দিয়ে উত্তর দিলো,

সেটাইতো কেনো দিবে? পাথরের চাইতে যোগ্য কেউ আছে নাকি?আচ্ছা বিয়েটা কি আমাকে করেছিলে নাকি অন্য কেউ ছিল যে তাঁকে সুযোগ দিবে? বিয়ে করে কিসের লাভ হলো সেই তো বউ আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না। দূর দূর এর থেকে সিঙ্গেল থেকে মা/রা যাওয়া ভালো ছিলো। যাইহোক তোমার মূল্যবান টাইম নষ্ট করছি না। কক্ষে যাও আমি আসছি। ডাইরীটা হাতে ধরে রাখবে কিছুতেই ছাড়লে চলবে না। আমি কিছুক্ষণ পরে আসছি।
পাথর কহিনুরের উত্তরের আশা করলো না। সিঁড়িতে বৃদ্ধা দাদু আছে। ভদ্রলোক উপরের দিকে আসছে। কহিনুর দ্রুত বেরিয়ে গেলো। পাথর সেখানেই আছে। আপাতত এই ভদ্রলোকের কিছু কাজ ওকে করতে হবে।

“আমি সুলতান আলমগীর ফারুকী,সুলতান ফারাবী ফারুকীর উত্তরসূরি। যদিও আমি একা না আমার আরও কিছু জমজ ভাইবোনেরা আছে যারা ওই বিশাল সম্পত্তির ওয়ারিশ। বড় হওয়ার সুবাদে আমি আর আমার ভাইয়ের উপরে সম্পত্তির দেখাশোনার দ্বায়ভার এসে পড়ে। আমার ভাই ছিলেন একজন কর্মঠ আর ন্যায়পরায়ণ মানুষ অন্যদিকে আমি তাঁর সম্পূর্ণ বিপরীত। ক্ষমতা আর অর্থের লোভে যা ইচ্ছা তাই করেছি।

নর্ত/কী ম/দ আর দেশ ভ্রমণের নামে অযথা টাকা উড়িয়েছি। সুলতান বংশের ইতিহাস আমার অজানা ছিল না। আমি ক্রমশ বিপথে এগিয়ে যেতে থাকি। তাই বাবা আমাকে হুশিয়ারী করেন এভাবে চললে আমার সব সম্পত্তি ভাইকে দিয়ে দিবেন। যেটা আমার জন্য আতঙ্কের বিষয় ছিল।দিনদিন আমার জন্য কঠিন হয়ে উঠছিলো। চিরাচরিত অভ্যাস পরিবর্তন করতে আমি হিমশিম খাচ্ছিলাম।ঠিক তখনই একরাতে স্বপ্ন দেখলাম এক সুদর্শন যুবগ আমাকে অকুল কণ্ঠে আবেদন করে বলছেন,

আলমগীর তোমার মধ্যে আমাকে একটুখানি জায়গা দাও আমি কথা দিচ্ছি সুলতান পরিবারের অর্থ সম্পদের তুমি ছাড়া আর কোনো ওয়ারিশ থাকবে না। এর জন্য তোমাকে বিশেষ কিছু করতে হবে না। এই বাড়ির পুরাতন কক্ষে আমার ব্যবহিত পোশাক আছে। সেটা পরে ওই কক্ষের মাঝখানে থাকা বৃত্তের মধ্যে বসে আমাকে স্মরণ করো। আমাকে ফিরতে সাহায্য করো।”

সেরাতে স্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ছেড়ে গেলো। রাত তখন অনুমানিক তিনটা। আমি উঠে বসলাম কিছু একটা ভেবে দ্রুত বেরিয়ে গেলাম। লোকটার বলা কক্ষে গিয়ে সেই অনুযায়ী সব পালন শেষে সেখানেই অচেতন হয়ে গেলাম। জানিনা সেরাতে আমার কি হয়েছিলো। সকালে নিজের বিছানা পেলাম। সেই থেকে শুরু হলো আমার শরীরে সুলতান ফারাবী ফারুকীর বসবাস।

উনাকে যখন ফিরিয়ে এনেছি তার অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফলাফল পেলাম। আমার ভ্রাতার পরিবার সেই সঙ্গে আমার দুজন বোন আততায়ীর হাতে নি/হত হলো। এই বাড়িতে তখন একমাত্র পুত্র সন্তান হিসেবে শুধুমাত্র আমি জীবিত আছি। অর্থের মোহে আমি সেদিন উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম। এখন আফসোস হয় কেনো এমন করলাম? ফারাবী ফারুকী আমার শরীর দখল করেই শান্ত হলেন না নিজের অর্ধাঙ্গীকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করলেন।

পৃথিবীর নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে চন্দ্রের ক/ফিন তুলে আনলেন। আচর্যজনক বিষয় হচ্ছে এতো বছরেরও চন্দ্রের লা/শ অক্ষত আছে। কালো জাদুর ফলে হয়েছে কি জানিনা তবে উনার ডাম পাটা কেমন পঁ/চে গিয়েছিল। অর্ধেক পঁচা লা/শটা উনি নিজের গোপন কক্ষে সরিয়ে রাখলেন। সেই থেকে নতুন করে শুরুহলো কালোজাদুর চর্চা। লোকটা একবার ঠকে শিক্ষা পাইনি আবারও কালো জাদু চর্চা শুরু করে। যাইহোক চন্দ্রের শরীর টাটকা যাখতে র/ক্তের দরকার হয়।

উনি নর/বলি দিতে থাকেন আমার হাত দুখানা ব্যবহার করে। আমি কতবার নিষেধ করেছি ও শোনেনি। চন্দ্র ফিরে আসলো আমি হয়ে পড়লাম কাঠের পুতুল। তবে সুলতান পরিবারের মুক্তির রাস্তা হচ্ছে কহিনুর। তাঁর আগমনে হয়তো আমারও মুক্তি মিলবে। পাপ করেছি শাস্তি পাচ্ছি। চোখের সামনে আমার আদরের সন্তানকে অন্য সন্তান দ্বারা খু/ন হতে দেখলাম। চুপচাপ দেখা ছাড়া আমার কিছু করার নেই।

চন্দ্র ত্রুটিহীন কোনো শরীরে প্রবেশ করে সেই শরীর অক্ষত হওয়া পযর্ন্ত সেখানেই বসবাস করে। এতোদিন আমার মেয়ের মধ্যে ছিল জানি অচিরেই সে অন্য শরীর খুঁজে নিবে। মেয়েটা আমার সারাদিন কক্ষের মধ্যে অচেতন হয়ে পড়ে থাকে। ফারাবী ফারুকী আত্মহ/ত্যা করে মা/রা গিয়েছিলেন।

উনার মৃ/ত্যুর সাত দিনের মাথায় চন্দ্রও আত্মহ/ত্যা করে। তবে সমস্যা হলো উনার মতো মহিলার লা/শ দা/ফন করতে কেউ ইচ্ছুক ছিল না।লা/শ দুদিন ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। তারপর গায়েব হয়ে যায়। কালো শক্তি হয়তো নিজেদের জন্য এই কাজটা করেছিলো। আমার শরীরের দখলদার উন্যজন হওয়ার দরুন আমার চেহারার পরিবর্তন ঘটে অনেক বছর পরপর।এরপর হয়তো ঘটবেও না। কালো শক্তি আমাকেও গ্রাস করে নিচ্ছে।একসময় হয়তো পুরোপুরি সফল হবে।

কহিনুর এই পযর্ন্ত এসে থামলো। ওর ধারণা ঠিক ছিল। চন্দ্র এখন ওর ফুপির শরীরে আছে। একসময় হয়তো ওর শরীরে এসে ঘাটি গড়তে চাইবে। পাথর আর সাঈদ পাশে চুপচাপ বসে আছে। নির্জনতা কাটিয়ে পাথর বলে উঠলো,
এই চন্দ্র আর ফারাবী সাহেবের ইচ্ছাটা কী?
কহিনুর কিছু একটা ভেবে উত্তর দিলো,

ওরা কালো শক্তির দোসর। শয়/তান ওদেরকে পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছিল ফলে মৃ/ত্যুর পরেও ওদের মুক্তি মিলেনি। তাছাড়া দুজনই আত্মহ/ত্যা করেছে ফলে ওদের আ/ত্মা অতৃপ্ত হয়ে ঘুরছিলো। চন্দ্র চাইছে আমার শরীর নিয়ে নতুন ঠিকানা গড়তে তার সঙ্গে মহামূল্যবান কহিনুরের শক্তি দিয়ে রাজ করতে। যার ফলে ওকে আর নতুন কোনো শরী র খুঁজতে হবে না। ফারাবী ফারুকী চন্দ্রের প্রেমে না বরং কালো শক্তির জন্য এসব করছে। ওতো নিজের ভুলটা আগেই বুঝেছিলো তাই পা\প বোধ থেকে মুক্তির জন্য আত্মহ/ত্যা করেছিলো। কিন্তু চন্দ্রের উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল। ফারাবীকে ও চেয়েছিলো মন থেকেই। তাই নিজে ইচ্ছা করে কালোজাদুর সাহায্য নিয়ে সুই/সাইড করে।

কহিনুর বেশ গুছিয়ে সবটা বললো।। সাঈদ বলে উঠল,
ওর নিজের শরীর যখন অক্ষত তবে ও অন্যদের শরীর কেনো দখল করতে চাইছে? আর ওর পায়ের দিকটাতে কি হয়েছিলো?
সাঈদের কথা শুনে কহিনুর হাসলো। মুখে হাত রেখে বলল,

নিজের র/ক্ত দিয়ে শয়/তানকে ভেট দিয়েছিলো। সেদিন ছিল শনিবার। চন্দ্র গভীর রাতে রশি নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো সুলতান ভিলা থেকে। গহীন অরণ্যের লম্বা একটা বৃক্ষের ডালে ঝু/লে পড়ার আগ মূহুর্তে ও খ/ঞ্জর দিয়ে নিজের ডান পা কেটেছিলো। শয়/তানকে খুশি করতে নিজের রক্ত আর জীবন এক অভিনব কায়দায় উৎসর্গ করেন। ফলাফল হিসেবে ফারাভী ফারুকী ফিরে এসে ওকেও ফিরিয়ে আনলো। চন্দ্র নিখুঁত সুন্দরী ছিলেন তাই খুঁতপূর্ণ আর পরিত্যক্ত শরীরে প্রবেশ করে ও পূর্ণ শক্তি নিয়ে হাটাচলা করতে পারেনা। লা/শ হয়েই পড়ে থাকে তাই এই ব্যবস্থা। তবে চিন্তা নেই ওই লা/শ আমি জ্বালিয়ে দিবো।

কহিনুরের কথা শুনে পাথর আর সাঈদ বেশ চিন্তিত হলো। কি সাংঘাতিক মহিলা ছিলেন চন্দ্র যে সামান্য একজনকে পেতে এসব করেছে। কালোজাদুর কি ভালো নাকি? অভদ্র মহিলা। সাঈদ গা/লি দিয়ে বলল,
ওটাকে পেলে না জন্মের শিক্ষা দিয়ে দিতাম। এখন কি করবে নূর? কিছু ভেবেছো?
সাঈদ তুমি ফুপির ডান পায়ের কিছুটা অংশ কে/টে দিতে পারবে? তুমি জানো কালো শক্তির এই শয়তা/নদেরকে কে সাহায্য করছে?

কে?
তোমার আম্মি। তোমার আম্মি জ্যোতির্বিজ্ঞানে পারদর্শী তাই উনাকে আটকে রেখে ভবিষ্যত সম্পর্কে ধারণা নিয়ে শয়তান এসব করছে। আমার জন্ম কখন কিভাবে হবে সবটা তোমার আম্মি এদেরকে বলেছিলেন বলেইনা আমার বাবা মায়ের বিয়েটা হয়েছিলো। ভাবো একবার? খান পরিবার অভিশপ্ত হয়েছিলো কোনো এক নারীর কারণে এখানেও সেই সেম কারণ। তবে পার্থক্য খানরা নিজেদের চরিত্রের দোষে ভুগছে আর সুলতানরা চন্দ্রের দোষে ভুগছে।
কহিনুর আর সাঈদের কথার মধ্যে ফোঁড়ন কেটে পাথর বলে উঠলো,

খানদের চ/রিত্র খারাপ হতো না যদি অভিশপ্ত হতো। কোনো মেয়েই এদের স্থায়ী হয়না। ছোঁয়া লেগেই মূর্ছা যায়। কি করবে বলো?
বাঁচা যাচ্ছে না। আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠীর চ/রিত্র ফুলের মতো পবিত্র,হয়েছে এবার?সাঈদ চন্দ্রের কাহিনীটা বুঝলাম কিন্তু সেদিন রাতের সেই গুপ্ত খু/নীটাকে জানো?
কহিনুরের প্রশ্নের উত্তর পাথর দিলো,

জানিনা তবে খ/ঞ্জর কিন্তু ঐশ্বর্যের কক্ষে আছে। খু/নি নিশ্চয়ই চাইবে না নিজের কক্ষে খ/ঞ্জর ফেলে সখ করে ধরা খেতে? অন্য কেউ আছে। ভাবতে হবে।
পাথর উঠতে উঠতে কথাগুলো বলল। কহিনুর ভ্রু কুটি করে আছে। কে হতে পারে সন্দেহ করতে পারছে না। কেমন এলোমেলো লাগছে। ইতিমধ্যে কহিনুরের ডাক পড়লো। উপর থেকে ঐশ্বর্য ডাকছে। পাথর ওকে যেতে বলে নিজেও বেরিয়ে আসল। গোপন বৈঠক আপাতত সমাপ্ত। কহিনুর দৌড়ে গিয়ে ঐশ্বর্যের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। হাপাতে হাপাতে বলল,

ম্যাম কিছু বলবেন?
ঐশ্বর্য উত্তর করলো না। রেগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে হাতে থাকা পানির গ্লাসটা কহিনুরের পায়ের দিকে ছুড়ে দিলো। মূহুর্তেই ফিনকি দিয়ে ওর পা থেকে র/ক্ত গড়িয়ে সাদা ফ্লর রঙ্গিন হয়ে উঠলো। কহিনুর ভড়কে গেলো। এই র/ক্তের উৎস ধরে শত্রুরা ওকে ঠিক চিনে নিবে। কি হবে এখন? কহিনুর পায়ে হাত দিয়ে র ক্ত বন্ধ করতে করতে গম্ভীর কণ্ঠে ছোট করে উচ্চারণ করলো,

সুদে আসলে সবটা যখন উসুল করবো তখন কিন্তু আফসোস করবে না। আমি ঋণ রাখিনা। ঘনিয়ে আসছে সময়। কেঁ/দে কুল পাবেনা।
ঐশ্বর্যের কান পযর্ন্ত সেটা পৌঁছালো না। জুবায়ের ভেতরে প্রবেশ করলো। ও হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে এসে হতভম্ভ হলো। মেয়ের পা থেকে র/ক্ত ঝরছে দেখে বুঝতে বাকী নেই কি হয়েছে। ঐশ্বর্য ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,

ড্যাড ও আমার খেয়াল রাখেনা তাই ওকে শাস্তি দিয়েছি।ভালো করিনি?
জুবায়েরের মাথা ভনভন করে ঘুরে উঠলো। মেজাজ চরম খারাপ। শক্ত হাতে ছুটে গিয়ে ঐশ্বর্যের গালে থা/প্পড় বসিয়ে দিলো।তারপর ওর দুবাহু নাড়িয়ে দিয়ে বলল,

অতিরিক্ত ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আমি অমা/নুষ তৈরী করেছি। আমার র/ক্ত হলে কখনও এসব করতে পারতে না। র/ক্ত কথা বলে,সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছ প্রতি পদে পদে। ভুলে গেছো তোমার মা এই বাড়ির কে ছিলেন? তার মেয়ে হয়ে কিভাবে পারলে এমন করতে?

জুবায়ের দ্বিতীয় দফায় আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে ক্ষান্ত হলো। তারপর কহিনুরের পায়ের কাছে বসে পড়লো। কাচ পরিস্কার করে ওকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। ঐশ্বর্যের এক চোখে পানি আরেক চোখে আগুন জ্বলছে। জুবায়ের সামান্য একটা মেয়ের জন্য ওকে অপমান করেছে। জ্যাকি হলে কখনও এমন করতো না ভেবে আবারও লোকটাকে ফোন দিলো। কিন্তু ফলাফল শূন্য।

গভীর রজনী পরিত্যক্ত বাড়ির নির্জন কক্ষে শুয়ে আছে আঁধার। কহিনুর নামক রমনীর প্রেমে ওর শরীর মন পুড়ে পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। কয়েকদিন ওকে দেখতে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে। যেকোনো মূল্যে ওক দরকার। কিন্তু কিভাবে সম্ভব? অস্থির অবস্থা। গতকাল এক মেয়েকে এখানে এনেছিলো সকালে তাকে পাইনি আর পাবেওনা। যদি কহিনুর ওর হয়ে যেতো তবে এসব কিছুই হতো না। আধারের ভাবনার অবসান ঘটলো মোটা পুরুষালী এক কণ্ঠেস্বর শুনে। বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক অবয়ব। লোকটা বলে উঠলো,

নিশ্চয়ই কহিনুর তোমার হবে। কেনো হবে না? ওই রূপের অমৃত সুধা শুধু তোমার জন্যই সৃষ্টি।
আঁধার বিচলিত হলো তবে সন্তুষ্ট হলো প্রচুর। কহিনুর ওর হবে ভেবেই কেমন খুশি খুশি লাগছে। মনে হচ্ছে অগন্তুকের গালে ঠাস করে একটা চুমু বসিয়ে দিলে ভালো লাগতো। চিন্তা অচেনা ভেবে মনটাকে দমিয়ে রেখে বলল,
কে আপনি? কহিনুরকে কিভাবে চিনেন?

আমার কৌশলের গুণে কহিনুর সৃষ্টি হলো আর আমি জানবো না কহিনুর কে? সব জানি । কহিনুর তোমার হবে কিন্তু তুমি কি জানো কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়? আমি বিনিময় করতে পছন্দ করি। কিছু নিতে চাইলে কিছু দিতেও হবে।
লোকটার কথা শুনে আঁধার ভাবনায় পড়ে গেলো। লোকটা কি চাইছে বুঝতে না পেরে বলল,
কালো/জাদু ওসব আমার দাদুর কাজকর্ম আমার না। আমি ওসবে নেই। কহিনুরকে না পেলে ছিনিয়ে নিবো চিন্তা নেই। আপনি আসুন।
আঁধারের বোকাবোকা কথা শুনে লোকটা মৃদু কণ্ঠে হাসলো। তারপর উত্তর দিলো,

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৩

দুদিন সময় দিলাম।একটু ভেবে দেখো বিনিময় করবে কিনা। চাপিয়ে দিচ্ছি না। এখানে আমার কোনো স্বার্থ নেই। শুধুমাত্র তোমার জন্য এসেছি। যাইহোক দুদিন পরে দেখা হবে তখন বিস্তারিত বলবো এখন আসছি।
কথাটা বলে লোকটা ধোয়ার মতো মিলিয়ে গেলো। পাথর বুঝতে পারছে না লোকটা ওর থেকে কি চাইছে?

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৫