কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৬

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৬
লাবন্য ইয়াসমিন

থরথর করে কাঁপছে অধরা। বেলকনিতে ফোঁটা ফোঁটা র/ক্তের সঙ্গে মাং/সের ছোট ছোট অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এগুলো কোথা থেকে এসেছে ওর জানা নেই। কিন্তু প্রশ্ন এই কক্ষেই কেনো আসবে? আজ অবধি এই বাড়িতে যায় হয়ে থাকুক কখনও ওদের কক্ষে কোনো ঝামেলা হয়নি। জুবায়ের হন্তদন্ত হয়ে দৌঁড়ে এসে অধরাকে জড়িয়ে ধরলো নিজের সঙ্গে।

মেয়েটাকে কখনও ও এভাবে ভয় পেতে দেখেনি। জামসেদ ওদের পেছন থেকে সামনের দিকে এগিয়ে এসে র/ক্তের ফোটা থেকে সামান্য কিছু আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে চোখের সামনে তুলে ধরতেই ওর কপালের তকে ভাজ পড়লো। ভাবলো এখানে মানুষের র/ক্ত মাং/স কিভাবে সম্ভব? জুবায়ের ভ্রু কুচকে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কি বুঝলে? র/ক্ত নাকি রঙ ফেলে ভয় দেখানো হচ্ছে?
জামসেদ উঠে পড়লো। হাতটা টিসু দিয়ে মুছে নিয়ে বলল,

টাটকা র/ক্ত কোনো ভেজাল নেই। অধরা তুমি কোনো শব্দ শুনেছো? কেউ তো এসেছিলো এসব ফেলতে? অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়েনি তোমার?
অধরা জুবায়েরের বুকে মুখ লুকিয়েই উত্তর দিলো,

ওয়াশরুম থেকে শব্দ শুনেছিলাম কেমন ঠকঠক আওয়াজ আসছিলো। তখনই চলে এসেছি তারপর দেখলাম এভাবে সব পড়ে আছে। কহিনুর কোথায় ? আমার মেয়েটা কোথায় আছে আমার এখুনি জানতে হবে।
অধরা জুবায়েরের থেকে নিজের ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু জুবায়ের ওকে ছাড়লো না। বুকের সঙ্গে রেখেই ফিসফিস করে বলল,

কহিনুর ঠিক আছে। ওর সঙ্গে পাথর আছে টেনশন করো না। তুমি অনেক দুর্বল হয়ে উঠেছো। আগে এতোটা ভীতু ছিলে না। এমন করলে হবে বলো?
অধরা জুবায়েরকে ছাড়িয়ে দিয়ে ছলছল চোখে বলল,

বয়স হচ্ছে লড়াই করতে করতে আমি হাপিয়ে উঠেছি। স্বামী সংসার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করার লোভ সকলের আছে আমার একার না। সব সময় আতঙ্কে থাকি। না জানি কখন আমার মেয়ে বা স্বামীর ক্ষতি হয়ে গেলো। আমার মেয়েটা যদি সাধারণ হতো তবে এমন কিছুই হতো না। প্লিজ খোঁজ নিন আমার ভালো লাগছে না। মনের মধ্যে খারাপ চিন্তা হচ্ছে। বুঝেন তো মায়ের মন? এই ও নিজের কক্ষে আছে তো?

অধরার কথা শুনে জুবায়ের ঢোক গিললো। কহিনুর কক্ষে নেই। ও কিছুক্ষণ আগে দেখে এসেছে। মেয়েটা পায়ের এই অবস্থা নিয়ে কোথায় গেলো কে জানে। সাঈদ বারান্দায় বসে আছে ওকে নিয়ে যায়নি। পাথর সঙ্গে আছে তবে পাথরের উপরে ওর বিন্দু মাত্র ভরসা নেই। শত্রু পক্ষ যতই ভালো হোক তবুও সে শত্রু। অধরা আবারও জিঞ্জাসা করলো। জুবায়ের কিছু বলার আগেই জামসেদ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলো,

কহিনুর এখানে এসেছে? ওকে কে এনেছে? ও এসেছে অথচ আমাকে বলা হয়নি কেনো? জুবায়ের তুমি আমার থেকে কথা লুকিয়েছো? মেয়েটার বিপদ হলে কিন্তু তোমাকে আমি ছাড়বো না। কোথায় ও?
জামসেদের রাগ দেখে জুবায়ের মিনমিনে কণ্ঠে বলল,

কুপি হচ্ছে কহিনুর। আমরাও জানতাম না। পরে জেনেছি। প্লিজ রাগ করোনা। মেয়েটার পা অনেকটা কে/টে গেছে। কিছুক্ষণ আগে ওর কক্ষে গিয়েছিলাম সেখানে নেই। জানিনা কি হচ্ছে। আমার ভালো লাগছে না।

জুবায়েরের এলোমেলো কথা শুনে জামসেদ হুঙ্কার দিয়ে উঠলো। কতবার নিষেধ করেছিলো এই বাড়িতে যেনো ও না আসে তবুও এসেছে। এসেছে তো এসেছে আবার কাজের মানুষ হয়ে আসতে হলো। সুলতান বাড়ির মেয়ে বউদের সম্মান সবার উপরে থাকার কথা অথচ সে বাড়ির কাজের মেয়ে হয়ে পরের ফরমায়েশ পূরণ করছে। পা কে/টেছে মানে রক্ত ঝরছে। ওর র/ক্তের গন্ধ শুকে কতশত শত্রু জেগে উঠবে মেয়েটার কোনো আইডিয়া আছে? জামসেদ বিরক্ত হচ্ছে জুবায়েরের উপরে। রেগে গিয়ে বলল,

কোথায় যেতে পারে কোনো আইডিয়া আছে? ও এখানে আছে কাউকে বলোনা। আমি কতবার বললাম সাবধানে থাকতে। তবুও শুনলো না। আমার চিন্তা হচ্ছে। শোনো আমি জঙ্গলের দিকে যাচ্ছি। কাজে মেয়েটা এসে সবটা পরিস্কার করে দিবে আপাতত ততক্ষণ তোমরা আমাদের কক্ষে গিয়ে অপেক্ষা করো।
জামসেদ যেতে চাইলো কিন্তু জুবায়ের ওকে থামতে বলে বলল,

পাথর ওর সঙ্গে আছে। ওরা জঙ্গলের দিকে নেই। অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের কোনো উপাই নেই। ও আসলে তুমি যতটা পারো ঝামেলা করবে তবুও প্লিজ এখন চুপ যাও। অধরা টেনশন করছে। ওর শরীর ঠিক নেই।
জুবায়েরের কথা শুনে জামসেদের মুখটা বিরক্তিতে ভরে উঠলো। মেয়ে বিপদে তাঁতে জনাবের চিন্তা নেই। বউ অসুস্থ হবে তাই নিয়ে যত চিন্তা। বউ পাগলা কারে কয়। জামসেদ দ্রুত প্রস্থান করলো। এখানে থাকলেই জুবায়েরের নেকামী ওকে সহ্য করতে হবে। বিড়বিড় করলো,পৃথিবীতে একমাত্র সুলতান জুবায়ের ফারুকীর বউ আছে আর বাকীরা সব বিধবা।

চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। পাথর আশেপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে। এখান থেকে বের হতে না পারলে পাথরের শক্তি কাজ করবে না। এখানে শক্তিশালী কালো শক্তির উপস্থিতি আছে যেটা ওকে বাঁধা দিচ্ছে কিন্তু কহিনুর ওরতো শক্তি আছে যেটা কালো শক্তির সঙ্গে যুক্ত না। কহিনুর কিছু একটা ভেবে সামনে এগিয়ে গেলো।

সন্দেহজনক বিষয় হচ্ছে এই বাড়িতে অসংখ্য ছোটবড় আয়না রয়েছে। কহিনুর বাঁকা হেসে চোখ ঘুরিয়ে একবার আশেপাশে দেখে নিয়ে পাশে থাকা ফুলদানিটা তুলে নিলো তারপর ধুমধাম ভাঙতে শুরু করলো। হঠাৎ শব্দ শুনে পাথর দৌড়ে এসে ওকে পেছন থেকে ঝাপটা ধরে ফুলদানিটা নিজের আয়ত্তে নিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল,

এসব কি করছো? মাথা ঠাণ্ডা করো আমি একটা রাস্তার খোঁজ করছি। এভাবে হুটহাট ভাঙচুর করলে হবে না।
কহিনুর লাফালাফি করতে করতে ঝাড়ি দিয়ে বলল,

আমাকে কি আপনার বাচ্চা মনে হয়? আপনার ঘটে বুদ্ধি নেই বলে আমারও থাকবে না কেনো ভাবছেন? এই বাড়িতে দেখেছেন কতগুলো আয়না আছে? আয়নার মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের বাইরে যাওয়ার রাস্তা। কালো শক্তির শয়তা/নেররা এই আয়নার মধ্যে দিয়ে চলাফেরা করে। সবগুলো ভেঙে দিন তারপর আমাদের মুক্তি এমনিতেই মিলবে। ছাড়ুন আমাকে। এবার থেকে আমাকে স্পর্শ করতে হলে অনুমতি নিবেন। জানেন না দেনমোহরের টাকা এখনো পযর্ন্ত বাকী আছে?আগে শোধ করুন। অবশ্য আপনার পুরো জীবন চলে যাবে তবুও তা শোধ হবে না। আবার আসছেন আমার কাজের বারোটা বাজাতে? পুরো দুশো কোটি টাকা বুঝলেন?

পাথর হতবাক হলো কহিনুরের কথা শুনে। কিসের মধ্যে কিসের তুলনা করছে মেয়েটা? আর দুশো কোটি টাকা কি গাছের পাতা নাকি যে বিয়ের দেনমোহরে এতগুলো টাকা উল্লেখ করা হলো? কোন পাষান হৃদয়ের ব্যক্তির দ্বারা এহেন বিপদের সৃষ্টি হলো জানার জন্য পাথর মুখটা কঠিন করে বলল,

দেনমোহরের এতগুলো টাকার প্রস্তাব কে দিয়েছিলো নূর? আমার মন ভালো ছিলো না তাই খেয়াল করিনি তাইবলে পুকুর ডুবি করবে?
কহিনুর ওকে ঝাড়ি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘোমটা টেনে খাপছাড়াভাবে উত্তর দিলো,

আমার চাচু জানতো আপনার মধ্যে কোনো ত্রুটি আছে। তাইতো বুদ্ধি করে দুশো কোটি টাকা কাবিননামা করতে চাপ দিয়েছিলো। তাছাড়া সুলতানা কহিনুর ফারুকীর বিয়ে বলে কথা। একদম ঠিক হয়েছে।এখন রাতদিন কমলা খেটে টাকা জোগাড় করুন। চিন্তা নেই আপনার জন্য আমি শেষ বয়স পযর্ন্ত অপেক্ষা করবো।

কহিনুর বেশ মজা পাচ্ছে পাথরকে খেপাতে। বেচারা ওর কথা শুনে হতভম্ভ হয়ে আছে। আজ পযর্ন্ত দুশো কোটি টাকা কোন বাপের মেয়ের বিয়ের কাবিন হয়েছে? পৃথিবীর বিরল ঘটনা এটা। ভিক্ষা করে এখন কাবিনের টাকা জোগাড় করতে না হয়। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। বিপদের কথা মাথা থেকেই বেরিয়ে গেলো।পাথর পকেটে হাত রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

তোমার বাপ চাচা জব্বর একটা জিনিস। একজন মেয়েকে জামাইয়ের সঙ্গে দেখলে এলিডি বাল্বের ন্যায় জ্বলে উঠেন। আরেকজন কৌশলে জামাইয়ের হাতে ঘটিবাটি ধরিয়ে দেয়ার সুন্দর পরিকল্পনা করে ফেলেছে। চমৎকার বুদ্ধি।
কহিনুর আরেকটা আয়নাতে আ/ঘাত করতে করতে উত্তর দিলো,

আপনার চৌদ্দ পুরুষের সৌভাগ্য কহিনুর ফারুকী আপনার গলাতে বরমাল্য দিয়েছে এতেই সন্তুষ্ট থাকুন। আর একবার যদি আমার বাপ চাচাকে নিয়ে একটাও উস্কানি মূলক শব্দ উচ্চারণ করেছেন না? আপনাকে আমি এখানেই রেখে যাবো। বসে বসে চন্দ্রের নৃত্য দেখবেন।

কহিনুর হাপাচ্ছে আর কথা বলছে। পাথর আর উত্তর দিলো না। হাতের মুঠো শক্ত করে সামনের আয়নাতে গিয়ে ঘু/সি বসিয়ে দিলো। রাগ হচ্ছে আয়না ভেঙে বেশ শান্তি লাগছে দেখে আর অপেক্ষা করলো না। একের পর এক ভাঙ/চুর করতে শুরু করলো। কহিনুর একটা আয়নার সামনে গিয়ে থমকে গেলো। সেখানে ওর প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে না। ভাবলো জাদুমিরর এটা? কহিনুর চিৎকার দিয়ে পাথরকে ডেকে নিয়ে বলল,

এখানে আসুন,আর দেখুন এই মিরর।
পাথর দ্রুতপায়ে সেখানে এসে থমকে গেলো। দুজনের মধ্যে কারো প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে না। পাথর কহিনুরের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ইশারা করলো সামনে পা বাড়াতে। কহিনুর মাথা নাড়িয়ে ওকে অনুসরণ করলো। মূহুর্ত্তের মধ্যে সবটা পরিবর্তন হয়ে গেলো। দুজনে সেই জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। কহিনুর হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বুদ্ধি না করলে আজীবন ওই কক্ষে ফেঁসে থাকতে হতো। পাথর কিছু একটা ভেবে বলল,

কোলে উঠবে নূর?
কহিনুর থতমত খেয়ে উত্তর দিলো,

কহিনুরকে কি আপনার খোঁড়া মনে হয়? চলুন হাটতে পারবো। ভুলে যাবেন না আমার র/ক্তে কহিনুরের জ্যোতি মিশে আছে। যা জ্বীনের অংশ থেকে তৈরি। যতক্ষণ এটা আমার কাছে আছে আমি যথেষ্ট শক্তি নিয়ে বিপদের মুখোমুখি হতে পারবো। চলুন রাত শেষ হতে চলেছে।
পাথর উত্তর করলো না। চুপচাপ দুজনে ছুটলো বাড়ির পথে।

পূর্ণিমা রাত উত্তাল সমুদ্রের কিনারে হাটু ভাজ করে বসে আছে আঁধার । ওর সামনে একট যুবক দাঁড়িয়ে আছে। যার মুখে এলোমেলো অসংখ্য কা/টা দাগে ভর্তি। মুখ থেকে র/ক্ত মাং/স খসে খসে পড়ছে। জঘন্য দেখতে সেই রূপ। আঁধার জানে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির আসলে পরিচয়। লোকটা দেখতে জঘন্য তবুও তাঁর শক্তির কাছে ও অতি নগণ্য। লোকটা খসখসে কণ্ঠে বলে উঠলো,

আমার প্রস্তাবে তুমি রাজিতো?
আঁধার জানেনা ওকে কোন প্রস্তাবের কথা বলা হচ্ছে। দুদিন আগে এই ব্যক্তি ওর কাছে এসেছিল কিন্তু কিছুই খোলসা করে বলেনি। দাদুর পরামর্শ নিতে গিয়ে বুঝলো এই লোকটা কোনো সাধারণ মানুষ না। একে দিয়েই ওর কহিনুরকে হাছিল করা সম্ভব। কথাগুলো ভেবে ও মাথা নাড়িয়ে বলল,

প্রভু আমি আপনার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। কহিনুরের জন্য সব পরবো। আপনি শুধু হুকুম করুন।
লোকটা খুশি হলো। হাসলেন শব্দ করে ফলে কিছু মাং/স ছুটে চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। আঁধারের গা গুলিয়ে আসসে কিন্তু কিছু করার নেই। লোকটা বলে উঠলো,

বেশ তবে কহিনুরের জাদুলিপি আমাকে এনে দাও। যেভাবেই হোক ওই লিপি আমার চাই।
আঁধার কিছুটা ভেবে বলল,
কিভাবে পাবো সেই লিপি? আমি বললেই কেনো কহিনুর আমাকে ওর জাদুলিপি দিয়ে দিবে?

দিবে না কৌশলে আদায় করবে।সবকি তোমাকে আমি বলে দিবো? শক্তি আছে কাজে লাগাও। পাথরকে বশ করে আটকে রেখে নিজে ওর রূপ নিয়ে চলে যাও সুলতান ভিলাতে। সেখানেই ঘাপটি মেরে বসে আছে তোমার কহিনুর। একবার জাদুলিপি আমার হাতে আসুক কহিনুর তোমার হয়ে যাবে। প্রমিজ।
আঁধার খুশি হয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,

তবে তাই হোক। এবার দেখবেন এই আঁধার কিভাবে ধরণীকে আঁধারে নিমজ্জিত করে নিজের স্বার্থ হাছিল করে। আমি অর্ধমানব, আমার না আছে কারো সঙ্গে র/ক্তের সম্পর্ক রাখার ওয়াদা না আছে কোনো ধর্ম। আমি শুধুই শয়তানের উপাসক। নিজের স্বার্থের জন্য সবটা করবো।

এটাইতো চেয়েছি তোমার থেকে। এগিয়ে যাও তোমার লক্ষ পূরণে আমি সাহায্য করবো। এখন আসছি তবে।
লোকটা বিদায় নিলো। আঁধার দুহাত প্রশস্ত করে সমুদ্রের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল,
লুকোচুরি খেলা তবে জমে উঠুক।

চুপচাপ কহিনুরের পা ব্যান্ডেজ করছে জামসেদ। রাতে ফিরে না গিয়ে কহিনুরের কক্ষে ও অপেক্ষায় ছিলো। ভেবেছিলো অনেক বকাবকি করবে কিন্তু মেয়েটার পায়ের অবস্থা দেখে আর বকতে পারেনি। কহিনুর অনেকবার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু ফলাফল শূন্য। নির্জনতা কাটিয়ে জামসেদ বলে উঠলো,

চন্দ্রের মুখোমুখি হওয়া এতোটা সোজা হবে না নূর। ওকে তোমার এতোটা বোকা মনে হয়? কতশত বছরের পরিকল্পনা তুমি এক মূহুর্ত্তের মধ্যে নষ্ট করবে এমটা হবে না। তোমার কাছে যেমন শক্তি আছে ওর কাছেও আছে। তোমাকে নিয়ে আমাদের কতটা টেনশন হয় তুমি বুঝবে না। কি ভেবেছো চন্দ্রের হৃদপিণ্ড আছে সেখানে নিজের নাম লিখে পুড়িয়ে ঝলসে দিবে আর সব ঝামেলা খতম? কখনও না। ওর হৃদয় নেই না আছে মানুষের মতো শরীর। তাছাড়া ওদের পেছনে আরও কেউ আছে। জানি তুমি রহস্য প্রায় জেনে গেছো কিন্তু চন্দ্রের বিষয়ে কতটা জানো?
জামসেদ বেশ রেগে কথাগুলো বলছে। কহিনুর মুখটা কঠিন করে উত্তর দিলো,

একজন নর্তকী আর গণিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার বিশেষ কোনো অসুবিধা হবে না চাচু। নিজেকে নিয়ে বিন্দু পরিমাণ চিন্তা আমি করছিনা। ওর সাহস কিভাবে হলো যে আমার ফুপিকে কষ্ট দিচ্ছে? ছাড়বো না আমি। কাউকে ছাড়বো না।
জামসেদ কহিনুরের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

ওর মৃত্যু বহুবছর আগেই হয়ে গেছে নূর। ওই আত্মাকে মুক্তি দিতে সাঈদের আম্মিকে দরকার হবে। তুমি উনাকে খোঁজ করো। উনি বলতে পারবেন কিভাবে চন্দ্রের মুখোমুখি হতে পারবে। চন্দ্র লুকোচুরি করতে করতে তোমার ক্ষতি করতে চাইছে। ওর ফাঁদে পা দিয়ে তুমি ভুল করেছো। শুধু শক্তি থাকলে হবে না বুদ্ধি দিয়ে সবটা সামলাতে হবে।

সরি চাচু,এবার আর ভুল হবে না।
যাইহোক মন বলছে তোমার পা থেকে ঝ*রা র/ক্তের গন্ধে সুলতান পরিবারে নতুন অতিথি নিশ্চয়ই আসবে। কার মধ্যে কিভাবে কে আসবে নজর রেখো।আর ভুলেও নিজের চেহারা কারো সামনে আনবেনা। আমি চেষ্টা করছি চন্দ্রের বিষয়ে জানার জন্য ।

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৫

কহিনুর মাথা নাড়িয়ে ভাবলো আবার কে আসবে সুলতান ভিলাতে?

কহিনুর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব ৫৭