হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৩+১৪

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৩+১৪
সাদিয়া জাহান উম্মি

তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে বারিধারা।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ক্ষণেক্ষণে।বাতাসে শীতলতা বেরে গিয়েছে বহুগুণ।ঘরের দরজা জানালা সব খোলা থাকায় হু হু করে সেই শীতল বাতাস কক্ষে প্রবেশ করছে।শীতল বাতাসের স্পর্শ পেয়ে আরাবীর ছোট্ট নরম দেহটা কেঁপে কেঁপে উঠছে।আরাবী ঠান্ডায় আরো গুটিয়ে যেতে চাচ্ছে জায়ানের বুকের মাঝে।জায়ানের বক্ষের উষ্ণতায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে ঠাণ্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্যে প্রয়াস চালাচ্ছে।জায়ান বুঝতে পেরে যেন আরো আষ্টেপৃষ্টে চেপে ধরলো আরাবীর নরম দেহটা।আরাবী কাঁপা গলায় বলে,

-‘ বারান্দার দরজা আর জানালাগুলো বন্ধ করতে হবে।’
জায়ান চোখ বন্ধ করে বলে,
-‘ উঁহু! এইভাবেই থাকুক।’
-‘ আমার শীত লাগছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরাবীর মিনমিনে কণ্ঠ শুনে জায়ান এইবার আরাবীকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।এইবার ঠাণ্ডায় যেন আরাবী শরীর হিম হয়ে যাওয়ার উপক্রম।জায়ান আরাবীর শাড়ির আঁচল ভেদ করে হাত গলিয়ে দিলো আরাবীর চিকন মসৃণ কোমড়ে।কেঁপে উঠে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো আরাবী।জায়ান এইবার তার শক্তপোক্ত পুরুষালি হাত দিয়ে স্পর্শ করলো আরাবীর কপোল(গাল)।

আরাবী নিভু নিভু চোখে তাকালো।জায়ানের অস্থির মুখশ্রী দেখে বুকটা ধ্বক করে উঠলো। এদিকে জায়ান কিছু বলতে নিয়েও বার বার আটকে যাচ্ছে।এতো অপেক্ষার পর আজ আরাবী তার।একমাত্র একান্ত তার।আরাবীকে নিজের এতোটা কাছাকাছি দেখে জায়ান নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না।হৃদপিণ্ডের তীব্র দহন যেন ঝ’লছে দিচ্ছে ওর সবকিছু।

আরাবীকে খুব করে চাইছে ও।পুরোপুরি নিজের করে চাইছে।কিন্তু কোথায় একটা জড়তা কাজ করছে ওর। আরাবী কি ওকে মন থেকে মেনে নিয়েছে? মানতে পারবে ও জায়ানকে? আরাবী জায়ানের অস্থিরতা বুঝতে পারলো।ওর গালে রাখা জায়ানের শক্তপোক্ত হাতটার উপর নিজের নরম হাতটা দিয়ে স্পর্শ করলো।জায়ানের ব্যাকুল কণ্ঠস্বর,

-‘ আ..আরাবী আমি।তুমি মানে…!’
-‘ হুশ! অস্থির হবেন নাহ! ‘

আরাবীর ধীর কণ্ঠে জায়ান জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে লাগলো।নিজেকে সামালানোর প্রয়াস করতে লাগলো।কিন্তু প্রতিবার সে ব্যর্থ।আরাবীর শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে যেন তার নারীময়ী সৌন্দর্য যেন উপচে পরছে। কোন পুরুষ কি তা দেখে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে? পারে না।

আবার যদি সে হয় তার স্ত্রী,তার অর্ধাঙ্গীনি,তার ভালোবাসার মানুষ।জায়ান নিজের বুকের এই দহনক্রিয়া কিভাবে থামাবে?ঠিক কিভাবে? আরাবী জায়ানের চোখে চোখ রাখলো।লজ্জায় তার সারাশরীর কাঁপছে।তাও কেন যেন জায়ানের অস্থিরতা, এতো ব্যাকুলতা ও উপেক্ষা করতে পারছে না।সে জানে জায়ান তাকে খুব করে চাইছে।তাও ওর জন্যেই সে তীব্রভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করছে।আরাবী জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে আরাবী ধীর আওয়াজে বলে উঠলো,

-‘ আ..আমি,, আমি জানি আপনার এতো অস্থিরতা কেন! আপনাকে এতো কষ্ট ক..করতে হবে নাহ।আপনি আমার স্বামি।আমার উপর আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমি আপনাকে ভা..ভালোবাসি কিনা জানি না।তবে আপনাকে আমার ভালোলাগে।আপনার সবকিছু আমার ভালো লাগে। আপনাকে আমি বিশ্বাস করি,সবচেয়ে বেশি ভরসা করি।’
জায়ান আরাবীর প্রতিটা কথায় যেন তীব্রভাবে অবাক হয়েছে।আরাবী যে এইভাবে ওকে এইকথাগুলো বলবে ভাবেনি ও।জায়ান শুকনো ঢোক গিললো।কাঁপা স্বরে বললো,

-‘ আরাবী আর ইউ সিয়র?’
আরাবী জোড়ে শ্বাস ফেলে জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে জায়ানের ঘারে মুখ গুজে দিলো।জায়ান চোখ বন্ধ করে নিলো।দুহাতে ঝাপ্টে ধরলো আরাবীর কোমড়।তারপর ধীরে আরাবীকে সুইয়ে দিলো।আরাবী নিভু চোখে তাকিয়েই জায়ানের দিকে। জায়ান সকল ভালোবাসা দিয়ে চুমু খেলো আরাবীর কপালে। তারপর মুখ উঠিয়ে একধ্যানে তাকিয়ে থাকলো একধ্যানে আরাবীর দিকে। তারপর হুট করে আরাবীর সারা মুখ জুড়ে এলোপাথাড়িভাবে চুমু খেতে লাগলো।ভয়ংকরভাবে দুমড়েমুচড়ে গেলো আরাবী।

বাহিরে বারছে তীব্র ঝড়ো হাওয়ার প্রকোপ। সেই সাথে বারছে জায়ানের এলোমেলো অস্থির আঁচড়ন। আরাবীর ছোট্ট নরম দেহের প্রতিটি ভাঁজে জায়ানের তীব্র ভালোবাসার উষ্ণ স্পর্শ যেন ঝড় উঠিয়ে দিচ্ছে।আরাবীর উদরে একের পর এক ঠোঁটের আবেশ দিয়ে জায়ান নিজের টি-শার্ট একটানে খুলে ছুড়ে ফেললো।

তারপর আবারও অস্থির হয়ে আরাবীর কাছে এসে নিজের অধর দ্বারা আঁকড়ে ধরলো আরাবীর অধর।জায়ান নিজের সবটুকু ভালোবাসা ঢেলে দিলো দিলো আরাবীর কাছে।আরাবীর ছোট্ট দেহটা জায়ানের বলিষ্ঠ দেহের মাঝে চাঁপা পরে আছে।ক্ষণে ক্ষণে যন্ত্র’নাময় সুখে কুকড়ে গিয়ে ক্ষ’তবিক্ষ’ত করে দিচ্ছে জায়ানের পিঠ।সারা কক্ষে দুজন কপোত-কপোতীর ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসের শোনা যাচ্ছে।সেই সাথে কিছু যন্ত্র’নাময় সুখের কাতর গোঙানির কণ্ঠস্বর।

দীর্ঘ এক ভালোবাসাময় রাত স্বামি সোহাগে কাটিয়ে উঠলো আরাবী।পিটপিট নয়নজোড়া মেলে তাকালো।একটু নড়তেই যেন চিরমিরিয়ে উঠলো শরীরের প্রতি ভাঁজের অস’হ্য যন্ত্র’ণা।ব্যাথায় ঠোঁট কামড়ে ধরলো আরাবী।সামান্যটুকু নড়ার শক্তিও অবশিষ্ট নেই শরীরে।বহু কষ্ট ঘড়ির দিকে তাকালো আরাবী।ভোর চারটা বাজে মাত্র।মাত্র দেঢ ঘন্টা ঘুমালো ও।মুখটা ঘুরিয়ে আবার তাকালো নিজের দিকে।

চক্ষুশূল হয় জায়ানের ঘুমন্ত মুখশ্রী।আরাবী বক্ষগহ্বরের ঠিক মধ্যিখানে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে সে।এতো এতো য’ন্ত্রনা কষ্ট যেন একমুহূর্তে কোথায় গায়েব হয়ে গেলো।চোখেমুখের কাতরতা সরে গিয়ে বিরাজমান হলো একরাশ মুগ্ধতা।আরাবী মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকলো জায়ানকে।কে বলবে এইযে সে কাল রাত কি পাগলামিই না করলো।তাদের মিলিত হওয়ার সময়টায় জায়ান যে বিরবির করে তাকে কতোবার যে ভালোবাসি বলেছে তা হিসেব ছাড়া।

য’ন্ত্রনায় যখন কাতরে উঠছিলো আরাবী।আরাবী সেই কষ্টে নিজেও কষ্ট পেয়ে সরে যেতে চেয়েছিলো বহুবার।তবে তা আরাবী দেয়না।জায়ানের মাঝে বিলিন করে দিয়েছিলো নিজেকে।নিজের স্বর্বষ সপে দিয়েছিলো জায়ানের কাছে। রাতের কথাটুক স্মরণ হতেই আরাবী লজ্জায় হাঁশফা’শ করে উঠলো।ওর এতো নড়াচড়ায় ঘুমটা ছুটে আসলো জায়ানের।জায়ান ঘুমন্ত কণ্ঠে বলে উঠে,

-‘ নড়ে না তো বউ।ঘুমাই তো।’
কেঁপে উঠলো আরাবী। কি ভয়া’নক মাদকতা এই লোকটার ঘুমন্ত কণ্ঠে।বুকের ভীতরটায় ঝংকার তুলে দেয় এই কণ্ঠ।আরাবী জোড়ে শ্বাস ফেললো।তাকে উঠতে হবে।কিন্তু লোকটা যেভাবে হাত পা দিয়ে ঝাপ্টে ধরেছে তাকে।উঠার জো নেই।এদিকে জায়ানের ঘুমে বিঘ্যাত ঘটায় এইবার জায়ান পুরোপুরি সজাগ হয়ে গেলো।

সজাগ হতেই কাল রাতের ভালোবাসাময় প্রতিটা মুহূর্ত স্মরণ হতেই তৃৃপ্তিময় হাসি ফুটে উঠলো জায়ানের ঠোঁটের কোণে।কাল তার আরাবী, তার কাঠগোলাপকে আপন করে নিয়েছে ও।নিজের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছে ও আরাবীর মাঝে।বুঝাতে পেরেছে ঠিক কতোটা ব্যাকুল ও আরাবীর জন্যে।জায়ান হাসি হাসি মুখে মুখ উঠিয়ে তাকালো আরাবীর দিকে।জায়ান একটু নড়ে উঠতেই আরাবীর যেন ব্যাথায় দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।কাতরে উঠলো আরাবী।

ঘাবড়ে গেলো জায়ান।দ্রুত উঠে বসলো ও।আরাবী না চাইতেও চোখের জল ছেড়ে দিলো।জায়ানের শক্তপোক্ত দেহটা ওর দেহের উপর নড়ে উঠতেই ব্যাথা-বেদনাগুলো যেন কিরমিরিয়ে উঠেছে। জায়ানের দৃষ্টি ঘুরিয়ে আরাবীর নরম দেহের উপর ঘুরপাক খেলো।আরাবীর শরীরে স্পষ্ট দৃষ্যমান হয়ে ফুটে আছে কাল জায়ানের দেওয়া প্রতিটি ভালোবাসার চিহ্ন।

দীর্ঘশ্বাস ফেললো জায়ান।আরাবীর কষ্টে বুক ভার হয়ে আসলো জায়ানের।তীব্র অনুশোচনা জেগে উঠলো মনে।কাল এমনটা না হলেও পারতো।নিজেকে কষ্ট করে হলেও নিয়ন্ত্রণ করা দরকার ছিলো ওর।তারপর আবার ভাবলো আজ হোক কাল একসময় না একসময় এমন মুহূর্তটা আসতেই ওদের মাঝে।ঠিক তখনও এমন কষ্টের মুখোমুখি হতো আরাবী।এটাই যে হবারই।জায়ান আরাবীর গালে নরমভাবে স্পর্শ করে কাতর গলায় বলে,

-‘ আ’ম সরি কাঠগোলাপ!’
এই একটা ডাক। এই একটা ডাকেই যেন আরাবীর সকল যন্ত্র’ণা উধাও হয়ে গেলো।আরাবী ঠোঁটে হাসি টেনে নিয়ে বলে,
-‘ উহু! স…সরি বলতে হবে না।’

জায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো।তারপর আরাবীকেও পাঁজাকোলে তুলে নিলো।আরাবী লজ্জা পেলো।লজ্জারাঙা মুখশ্রী লুকালো জায়ানের বুকের মাঝে। জায়ান আরাবীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-‘ ধন্যাবাদ আরাবী।সবকিছুর জন্যে ধন্যবাদ।তোমাকে আমার জীবনে আসার জন্যে।আমাকে ভালোবাসা শিখানোর জন্যে অনেক ধন্যবাদ আমার কাঠগোলাপ।’
আরাবী একহাত দিয়ে শক্ত করে ধরলো জায়ানের গলা।জায়ান আরাবীকে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।দুজনে লম্বা গোসল নিয়ে ফ্রেস হলো।

জায়ানের বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে আরাবী।জায়ান নরম স্পর্শে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আরাবী কি যেন আঁকিবুকি করছে জায়ানের বুকে।আর জায়ান সে তো ব্যস্ত তার কাঠগোলাপকে দেখতে।অনেকক্ষণ চলে গেলো।আরাবী ঘুমাচ্ছে না দেখে জায়ান জিজ্ঞেস করলো,

-‘ ঘুমাচ্ছো না কেন?’
আরাবী ছোট্ট কণ্ঠে বলে,
-‘ আসছে না তো।’
আরাবীর কথায় জায়ান কিঞ্চিৎ হাসলো।তারপর কি যেন একটা ভেবে বললো,
-‘ একটা গল্প শুনবে আরাবী?’

আরাবী এইবার ডাগর ডাগর চোখে তাকালো জায়ানের দিকে। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলে,
-‘ গল্প বলবেন আপনি?’
-‘ হ্যা!’
-‘ আচ্ছা,শুনবো।আপনি বলুন!’
জায়ান জোড়ে শ্বাস ফেললো। তারপর চোখ বুঝে অনেক কিছু ভাবলো।কিঞ্চিৎ সময় পেরিয়ে যেতেই জায়ান ধীরে বলা শুরু করলো,

-‘ সেদিন মিটিং ছিলো অফিসে।মিটিংয়ে কি যেন একটা গোলমাল হয়েছিলো। তাই প্রচন্ড রেগেছিলাম আমি।অফিসের স্টাফদের ধমকে ধামকে নিজের কেভিনে এসে দরজা আটকে দিলাম।আমার রুমের একটা দেয়াল পুরো কাচের।সেখান থেকে বাহিরের পুরো শহর দেখা যায়।কাচের দেয়ালে দুহাত ঠেকিয়ে নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছিলাম।ঠিক তখনই দেখলাম একটা মেয়ে আমাদের অফিসের গেট দিয়ে ঢুকছে।ভীতু তার চাহনী।

এদিক সেদিক তাকিয়ে এগিয়ে আসছে অফিসের দিক।বিশ্বাস করো আমার কি হলো আমি নিজেই জানি না।এতোক্ষণের সেই রাগ গলে পানি হয়ে গেলো।আমি নির্নিমেষ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিক।মেয়েটা চলে গেলো অফিসের ভীতরে।আমি নড়লাম না সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।প্রায় আধাঘন্টা একটানা দাঁড়িয়ে থাকলাম।তার একটু পরেই আবার মেয়েটা আসলো।চলে যাচ্ছে মেয়েটা।

হঠাৎ দেখলাম সে হাটা থামিয়ে দিয়ে আমাদের অফিসের পাশে একটা কাঠগোলাপের গাছ আছে।সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।গাছটার কাছে এগিয়ে গিয়ে একটা কাঠগোলাপ ছিরে নিয়ে কানের পিঠে গুজে দিলো মেয়েটা।তখন তাকে কি পরিমান সুন্দর লাগছিলো বলে বুঝানো যাবে না।সাদা জামা পরিহিত মেয়েটাকে দেখে আমার ঠিক ওই কাঠগোলাপের মতোই তাকেও শুভ্রতায় মুড়ানো স্নিগ্ধ একটা ফুল লাগছিলো।আমি বিমোহিত হয়ে তাকে দেখছিলাম।

আমি এতোটাই বিভোর ছিলাম যে এই ফাকে মেয়েটা চলে গেছে বুঝতেই পারলাম না।যখন বুঝলাম মেয়েটা চলে গেছে আমি হন্তদন্তব হয়ে ছুট লাগালাম নিচে।তন্নতন্ন করে খুজলাম কিন্তু কোথায় তাকে পেলাম না।মন খারাপ নিয়ে আবার অফিসে ফিরে আসলাম।আমায় এরকম অগোছালো ছন্নছাড়া অবস্থায় ছুটে বেড়িয়ে যেতে দেখে সবাই অবাক হয়ে দেখছিলো আমায়।আমার সেদিকে কোন ধ্যান ছিলো না।

আমার মন তো পরে রইলো সেই কাঠগোলাপের কাছে।এরপর থেকে আমি আর আমার মাঝে ছিলাম নাহ।মেয়েটার ভাবনায় দিনরাত বিভোর থাকতাম।নাওয়া খাওয়া কিছুর খেয়াল থাকতো না।অনেক খুজেছিলাম তাকে।কিন্তু পেলাম নাহ। ভগ্ন হৃদয় নিয়ে আরো নেতিয়ে পরলাম আমি।বাবা মা দুজনে চিন্তিত হয়ে পরলো আমার অবস্থা দেখে।তাই তারা সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে কিছুদিনের জন্যে বিদেশে পাঠাবেন যাতে আমার মনটা যদি একটু ভালো হয়।

যাতে আমি একটু সুস্থ্য হয়ে উঠি।কিন্তু তারা তো আর জানে না।আমার একমাত্র সুস্থ্য হওয়ার মূল ঔষুধ ওই মেয়েটা।যার জন্যই এতো কিছু।বাবা মা জোরজবরদস্তি করে সিংপুর পাঠিয়ে দিলাম।কতোবার এসে পরতে চাইতাম মা বাবা জোর করতেন আর কিছুদিন যেন থেকে আসি।নিজেকে ভালোভাবে রিফ্রেস করে আসি। কিন্তু তারা তো আর বুঝতে পারতো না আমি এভাবে কোনদিন ঠিক হবো না।পাক্কা একমাস পর দেশে ফিরলাম।দেশে ফিরার দুদিন পর মিটিং ছিলো বাবা নাকি সেটা এটেন্ট করতে পারবে না।

কি কাজ নাকি তার আছে।জোড় করে আমায় পাঠালেন। কিন্তু মিটিং শেষ হতে দেরি।আমায় ফোন করে জানালো সে যেখানে আছে সেখানে যেতে হবে। আমি প্রথমে রাজি হলাম নাহ। পরে বাবা এমন ভাবে বললো না কর‍তে পারলাম না। শতো বিরক্ত নিয়েও আসলাম সেখানে। এসে জানতে পারলাম বাবা আমার জন্যে মেয়ে দেখতে এসেছেন।এটা শুনে তীব্র রাগে মন চাচ্ছিলো সব ভেঙে গুরিয়ে দেই।কিন্তু পারলাম নাহ।

কাঠ হয়ে বসে রইলাম বাবার পাশে। কিন্তু কে জানতো আমার এতো সব পাগলামি এতো সব অস্থিরতা সৃষ্টিকারি ব্যাক্তিটি এখানেই আছে।জানলে না আরো আগেই ছুটে চলে আসতাম।যখন সে তার মিষ্টি কণ্ঠে সালাম জানালো।বিশ্বাস করো আমি আর আমার মাঝে ছিলাম নাহ।আমি রিয়েকশন দিতে ভুলে গেলাম।তার সাথে কথা বলার জন্যে আমাকে ছাদে যেতে বলা হলো।কতো কিছু বলবো মনে মনে সাজালাম।

কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না।শাড়ি পরিহিত তাকে ঠিক কতোটা সুন্দর লাগছিলো আমি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারবো না।নিজের ব্যাকুলতা লুকাতে ফোন ঘাটাঘাটি করতে লাগলাম।তবে আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ তার দিকেই।মেয়েটা বুঝলে তো।সে ব্যস্ত লজ্জা পাওয়ায়।আর তার লজ্জামিশ্রিত মুখশ্রী দেখে বার বার ঝ’ঝরা হয়ে যাচ্ছিলো আমার হৃদয়।ইফতি হঠাৎ এসে জানালো নিচে সবাই ডাকছে।আমি দ্রুত ছুটলাম।কারন তার সামনে বেশিক্ষণ থাকলে আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতাম।তাই তার আগেই চলে যেতে নিলাম।

কিন্তু মেয়েটা পরে যেতে নিতেই তাকে শক্ত করে নিজের বাহুতে জড়িয়ে নিলাম।ঠিক কতোটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।রাগও লাগছিলো। মেয়েটা এতো কেয়ারলেস কেন?সে না ধরতে কি হয়ে তার কোন ধারনা আছে।তাই রেগে বকে দিলাম মেয়েটাকে।ভয়ে মেয়েটা কেঁপে কেঁপে।আর তার কেঁপে উঠা দেহটা দেখে শীহরণ বয়ে যাচ্ছিলো আমার মনে প্রাণে।তাই দ্রুত চলে আসলাম।বিয়ে ঠিক হলো আমাদের।

সেদিন খুশিতে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলাম অনেকক্ষণ।বন্ধুর মতো বাবাকে সব খুলে বললাম।সেও খুব খুশি হলো।একে একে প্রহর গুনতে লাগলাম তাকে সারাজীবনের নিজের করে পাওয়ার জন্যে।এর মধ্যে তার সাথে নানান ছুতোয় তো দেখা সাক্ষাৎ হাতোই।একে একে গায়ে,হলুদ বিয়ে সব সম্পূর্ণ হলো।তাকে নিজের করে পেলাম আমি।আজ সে আমার স্ত্রী।আমার সহধর্মিণী। আমার কাঠগোলাপ। আমার সব,সব সব।তাকে আজ আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।ভালোবাসি কাঠগোলাপ।যাকে আমি অনেক ভালোবাসি।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১২

সে আর কেউ না সেটা তুমি আরাবী।তোমায় আমি ভালোবাসি।সারাজীবন ভালোবেসে যাবো।তুমি আমার কাছে কি তার ব্যাখ্যা আমি ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারবো না।কারন তার সাধ্যি তো নেই।শুধু এটুকু শুনে রাখো আমার শেষ নিশ্বাস অব্দি তোমাকে আমার মনের মধ্যিখানে খুব যত্নে রাখবো তোমায়।খুব করে আগলে রাখবো।এর বিনিময়ে বেশি কিছু না আমায় নাহয় তোমার মনে একটু খানি জায়গা দিও।বিশ্বাস করো, ভরসা করো।যেভাবে কাল রাতে করেছিলে। আমি কখনও তোমায় নিরাশ করবো না।এইটা জায়ান সাখাওয়াতের ওয়াদা তোমার কাছে।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৫