হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৫

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

আরাবীর চোখজোড়া জলে টইটম্বুর।জায়ানের মুখনিঃসৃত প্রতিটা কথা শুনে আরাবীর অবাক হয়েছে। লোকটা তাকে এতো আগে থেকে ভালোবাসে।কখনো ভাবতেই পারেনি আরাবী।ওর ভাগ্যে যে এমন একজন ভালোবাসার মানুষ আল্লাহ দিবেন কখনো কল্পনা করেনি ও।জায়ান হালকা হাসলো। হাত দিয়ে চোখের জলগুলো মুছে দিলো।তারপর আরাবীর কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে বলে,

-‘ কাঁদেনা তো।এখানে কাঁদার কি আছে?’
আরাবী জায়ানের বুকে মুখ গুজে দিলো।মিনমিনে স্বরে বলে,
-‘ এতো ভালোবাসেন কেন আপনি?’
জায়ান হালকা শব্দে হাসলো।বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ ভালোবাসা কিভাবে?কি কারনে? কেন ভালোবাসি।তা তো আমি নিজেই জানি নাহ।তোমায় বলবো কিভাবে?’
-‘ কিন্তু আমি আমি যদি ভালোবাসতে পারবো কি না জানি না তো!’
আরাবীর এমন একটা শুনে জায়ান। চাপা শ্বাস ফেলে বলে,
-‘ তুমিও ভালোবাসবে আরাবী।আমি জানি তুমিও ভালোবাসবে।’
-‘ তাই যেন হয়।আমি মনে প্রাণে দোয়া করি তাই যেন হয়।’
আরাবী বিরবির করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পরলো।জায়ানও আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো আরাবী তারপর নিজেও ঘুমিয়ে পরলো।

জায়ান আরাবীর বউভাতের অনুষ্ঠান হচ্ছে।আরাবী সিলভার কালার গাউন পরা জায়ানও মেচিং করে সিলভার কালার সেরওয়ানি পরেছে।দুজনকেই ভীষণ সুন্দর লাগছে।এই-যে জায়ান একটু পর পরেই তাকাচ্ছে আরাবীর দিকে। এটা নিয়ে ইফতি,নূর,আলিফা ওদের নিয়ে মজা করছে।আর আরাবী লজ্জায় নুইয়ে পরছে। জায়ান আরাবীকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে আরাবীর কানে ফিসফিস করে বলে,

-‘ এতো লজ্জা কেন পাচ্ছো বউ?আমি তো এখন কিছুই করিনি।’
আরাবী জায়ানের এহেন কথায় জায়ানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।বললো,
-‘ আপনি চুপ থাকবেন। আর চোখ অন্যদিকে সরান।’
জায়ান হেসে দিলো। তারপর বলে,

-‘ চুপ থাকতে পারি।কিন্তু চোখ সরাতে তো পারছি না।ভীষণ সুন্দর লাগছে তোমায়।’
জায়ান এই নিয়ে আরাবী শতবার মনে হয় বলে ফেলেছে এই কথাটা।তাও লোকটার থামাথামি নেই।আরাবী আর কিছুই বললো না।সে জানে এই লোকটাকে থামানো তার পক্ষে সম্ভব নাহ।আর উপর উপর যতো মিথ্যে রাগ দেখাক।মনে মনে আরাবী অনেক ভালো লাগে জায়ানের মুখে নিজের প্রসংশা শুনতে।

ফাহিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়।হাতে তার কোল্ড ড্রিংকস। এমন সময় হুট করে সামনে এসে দাড়ালো নূর।ফাহিম হকচকিয়ে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো।নূর চওড়া হাসলো।বিনিময়ে ফাহিমও হালকা হাসলো।নূর ছটফটে কণ্ঠে বলে উঠে,

-‘ কেমন আছেন?’
-‘ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি ভালো আছো?’ প্রশ্ন করলো ফাহিম।
নূর বলে,
-‘ আমি সবসময়েই ভালো থাকি।’
-‘ বাহ তাহলে তো বেশ ভালো।’
-‘ এখনও মন খা’রাপ?’

নূরের প্রশ্ন বুঝতে পারলো না ফাহিম। বললো,
-‘ মানে বুঝলাম নাহ?’
-‘ মানে এখনও কি খা’রাপ লাগছে?কাল তো কাঁদছিলেন।দেখেন একদম মন খা’রাপ করবেন নাহ।দেখেন ভাবি কি হাসিখুশি।আমি আমার কথা রেখেছি।’
বলেই মিষ্টি করে হাসলো নূর।ফাহিম তাকিয়ে রইলো।গোলাপি রঙের গাউন পরিহিত নূরকে সুন্দর লাগছে দেখতে। ফাহিম গলা খাকারি দিলো।হালকা হেসে বলে,

-‘ নাহ,মন খা’রাপ নেই।ধন্যবাদ আমার বোনটার খেয়াল রাখার জন্যে।’
নূর খানিক ভাব নিয়ে বলে,
-‘ সাখাওয়াত পরিবারের কেউ কখনো তাদের কথার খেলাপ করে নাহ।’

ফাহিম হেসে দিলো।নূরও হাসতে হাসতে চলে গেলো।ফাহিম তাকিয়ে রইলো নূরের যাওয়ার পাণে।কেন যেন মেয়েটাকে তার ভালো লাগে।মেয়েটা প্রচুর চঞ্চল প্রকৃতির।আর নূরের এই চঞ্চলতাই ওর ভালো লাগে।
নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয় ফাহিম।তবে ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবেই নিলো কারন কাউকে তার ভালো লাগতেই পারে।এখানে এতোটা রিয়েক্ট করার কিছুই নেই।ভেবেই লম্বা শ্বাস ফেললো ফাহিম।

-‘ তুমি যে এতো ঝ’গড়া করতে পারো আমি ভাবতেও পারি নি।’
পানি খাচ্ছিলো আলিফা।আচমকা এমন কথায় মুখ ফোসকে সব পানি বের হয়ে আসলো।কাশতে লাগলো অবিরত।ইফতি নিজেও ভড়কে গিয়েছে হঠাৎ এমন হওয়ায়।ইফতি আলিফার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।খানিকক্ষণ বাদে শান্ত হলো আলিফা।ইফতি চিন্তিত গলায় বলে,

-‘ আর ইউ ওকে?’
আলিফা আঁড়চোখে তাকালো।নিজেকে ইফতির এতো কাছে দেখে দ্রুত সরে আসলো।ইফতি নিজেও খানিকটা অপ্রস্তুত হলো।তারপরও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-‘ ঠিক আছো তুমি?’

আলিফা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো ইফতির দিকে।দু কোমড়ে হাত রেখে বলে,
-‘ আমি ঝ’গড়া করি মানে?হ্যাঁ,কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?আপনি কি কম ঝ’গড়া করেন।ঝ’গড়াখু’ন্না একটা।’
ইফতি নাক মুখ কুচকে বলে,

-‘ তুমি আমাকে আবারও এই অদ্ভূত নামে ডাকছো।এইগুলো কিসব ভাষা হ্যাঁ?’
-‘ এইগুলাই ঠিক ভাষা।যা আপনার মতো ভিনগ্রহের প্রাণির তা বোধগম্য হবে না।’
-‘ তুমি কি এখন আমার সাথে ঝগড়া কর‍তে চাইছো?’
-‘ শুরু তো আপনিই করেছেন।’
-‘ আমি জাস্ট একটা কুয়েশ্চন আস্ক করেছিলাম তোমার কাছ থেকে।’
-‘ করবেন কেন?’
কথায় না পেরে ইফতি বললো,

-‘ আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
ইফতির এমন কথা শুনে আলিফা খিলখিল করে হেসে দিলো।ইফতি মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখলো।নীল রঙা গাউনে হাস্যরত আলিফাকে দেখতে খুব ভালো লাগছে ওর।ইফতি নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।আলিফাকে এইভাবে হাসতে দেখে প্রশ্ন করে,
-‘ হাসছো কেন তুমি অযথা?’
আলিফা হাসতে হাসতে বলে,

-‘ আপনাকে একটু আগে কার মতো লাগছিলো জানেন?’
ভ্রু কুচকে ইফতি বলে,
-‘ কার মতো?’
-‘ ওয়েট দেখাচ্ছি।’

তারপর আলিফা নিজের ফোনে সেই-যে ভাইরাল হওয়া চোরটার ভিডিও দেখালো। যেখানে চোরটা বলছে, ‘ আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ এমন কিছু একটা। ইফতি হা করে তাকিয়ে রইলো।শেষমেশ তাকে একটা চোরের সাথে তুলনা করলো মেয়েটা।রেগেমেগে তাকালো ইফতি আলিফার দিকে।ওকে কিছু বলার আগেই আলিফা ছুটে পালালো।যাওয়ার আগে পিছনে ঘুরে ইফতিকে ভাঙিয়ে গেলো।না চাইতেও ইফতি আলিফার এমন বাচ্চামো দেখে হেসে দিলো।

জায়ান আরাবী এসেছে আরাবীদের বাসায়।রাতের খাওয়া দাওয়া একটু আগেই শেষ হলো।লিপি বেগমের সাথে হাতে হাতে কাজ সেরে জায়ানের জন্যে এক কাপ কফি বানিয়ে নিজের রুমে আসলো আরাবী।রুমে প্রবেশ করে দরজা আটকাতেই হঠাৎ পেছন থেকে একজোড়া হাত ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আচমকা এমন হওয়ায় কেঁপে উঠলো আরাবী।পরক্ষণে কাজটা বুঝতে পেরেই নিজের শরীরের সমস্ত ভাড় জায়ানের দিকে এলিয়ে দিলো।জায়ান আরাবীর চুলের মাঝে মুখ গুজে দিয়ে বলে,

-‘ এতোক্ষণ লাগে রুমে আসতে?’
আরাবী কাঁপা স্বরে বলে,
-‘ আপনার জন্যে কফি বানাচ্ছিলাম।আপনি তো ঘুমানোর আগে কফি খান।’
-‘ উম! বিয়ে হতে না হতেই আমার উপর তদন্ত করা শুরু করে দিয়েছো।’
আরাবী মুচঁকি হাসলো।তারপর জায়ানের একটা হাত ওর পেটের উপর থেকে সরিয়ে সেই হাতে কফির মগ দিয়ে বলে,
-‘ দেখি সরুন।কফি খান আপনি।আমার ফ্রেস হতে হবে।শরীর ঘেমে আছে,বাঁজে অবস্থা।’

জায়ানের ধীর আওয়াজ,
-‘ কিন্তু আমার তো সরতে ইচ্ছে করছে না।এইভাবেই ভালো লাগছে।’
আরাবী লজ্জা পেয়ে দ্রুত জায়ানকে সরিয়ে দিলো।আলমারি থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেস হয়ে রুমে আসতেই দেখে জায়ান বিছানায় বসে এদিকেই তাকিয়ে আছে।ও বের হতেই কিছু না বলে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে পরলো।আরাবী ভাবলো তখন কি ওইভাবে সরিয়ে দেওয়ায় লোকটা রাগ করেছে?

আরাবী এসব ভাবতে ভাবতে রুমের লাইট নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো।তারপর ধীর পায়ে হেটে বিছানার পাশে বসে পরলো।অনেকক্ষন বসেই রইলো।জায়ানের কোন হেলদোল না দেখতে পেয়ে ভাবলো লোকটা ক্লান্ত থাকায় বোধহয় ঘুমিয়ে পরেছে।তাই নিজেও জায়ানের পাশে গা এলিয়ে দিলো।কিন্তু ওর বিছানায় শোতে দেরি জায়ানের ওকে আঁকড়ে ধরতে দেরি নেই।জায়ান আরাবীকে নিজের সাথে একদম আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে। আরাবী শ্বাস আটকে রইলো।জায়ান বাঁকা হেসে বলে,

-‘ কি এভাবে তাকাচ্ছো কেন? তখন তো পালিয়ে গেলে।এখন কিভাবে পালাবে?’
আরাবী কয়েকপলক জায়ানের দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো।ঘোর লেগে যাচ্ছে চোখ দুটোতে।এই লোকটার দিকে একবার তাকালে আরাবীর যেন চোখ সরানো দায় ঠেকে যায়।আরাবী নিজেকে সামলে নিয়ে মুঁচকি হাসলো।তারপর হুট করে মুখ গুজে দিলো জায়ানের বুকের মাঝে।মিনমিনে গলায় বললো,

-‘ পালাতে চায় কে?’
জায়ান সময় নিলো বিষয়টা বুঝতে।তারপর হেঁসে দিয়ে আরাবীকে আরো জোড়ে চেপে ধরলো।আরাবী স’হ্য করতে না পেরে বলে,
-‘ কি করছেন? এতো জোড়ে কেউ ধরে? ম’রে যাবে তো।’

জায়ান আরাবীকে ছেড়ে দিলো।তারপর আরাবীকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে নিজে এইবার আরাবীর দিকে ঝুকে আসলো।আরাবী চোখ পিটপিট করে তাকালো।জায়ান হাত গলিয়ে দিলো জামার ভিতর। স্পর্শ করলো আরাবীর নরম উদর।কেঁপে উঠে আরাবী চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।জায়ান চুমু খেলো আরাবীর সেই বন্ধ হয়ে থাকা চক্ষুদ্বয়ে।এরপর কপালে,গালে,চিবুকে।জায়ানের প্রতিটা উষ্ণ স্পর্শে নিজেকে ঠিক রাখা যেন কঠিন হয়ে পরেছে আরাবীর জন্যে।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৩+১৪

ভেজা নয়নজোড়া নিয়ে আস্তে আস্তে তাকালো আরাবী জায়ানের দিকে।আরাবী জায়ানের দিকে তাকাতেই জায়ান হট করে মুখ গুজে দিলো আরাবীর গলদেশে।ছোট্ট ছোট্ট আবেশ দিতে লাগলো।একসময় তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠলো সেই আবেশিত উষ্ণ ছোঁয়াগুলো। দুহাতে জায়ানকে খা’মছে ধরলো আরাবী। জায়ানকে টেনে আরও নিজের কাছে আনার প্রচেষ্টা চালাতে লাগলো।জায়ান মুখ উঠিয়ে এইবার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো আরাবীর।জায়ান যেন উন্মাদ হয়ে যায় আরাবীকে ভালোবাসার সময়টায়।হুশ জ্ঞান হারিয়ে যায় লোকটার। নিজের তীব্র পা’গলামিময় ভালোবাসাতেও ভাসিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো আরাবীকে।রাতটা হয়ে উঠলো দুজনের জন্যে মধুময়।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৬