বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব ২৮

বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব ২৮
দিশা মনি

আলো বর্ষর বিয়ের কথাটা শুনে সুমনা একটু অবাকই হন। বর্ষ যে আলোকে পছন্দ করে এটা তিনি ভাবতে পারেন নি। সুমনার এই বিয়েতে কোন আপত্তি ছিলনা। এক ছেলের ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে গেছে তাই তিনি চান আরেক ছেলের ভালোবাসা অন্তত পূর্ণতা পাক। তাই তিনি আলোর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন।
আলোর পরিবারও কোন আপত্তি জানায় না কারণ আলো নিজেই এই বিয়েতে মত দিয়েছে।
এক মাস পর

আজ আলো ও বর্ষর বিয়ে। এই উপলক্ষে সেরকম কোন আমেজ নেই। জোনাকি-বর্ণর মৃত্যুর শোক এখনো কা’টিয়ে উঠতে পারেনি কেউ। তাই অনেকটা আড়ম্বরহীন ভাবেই বিয়েটা হতে চলেছে।
আলোর সাথে কথা বলতে আসেন মালেকা বেগম। তার কেন জানি না মনে হয় আলো অনেক বড় কোন পরিকল্পনা করছে।
‘তুই কি সত্যি ভালোবাসিস’ বর্ষকে? আমার তো সেটা মনে হয়না। তুই কেন বিয়েটা করছিস তাহলে?’
‘আমি সত্যি বর্ষ স্যারকে পছন্দ করি। তবে এই বিয়েটা করার জন্য সত্যিই আমার একটা উদ্দ্যেশ্য আছে।’
‘কিসের উদ্দ্যেশ্য?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ক্ষমতার। আমি চাই ক্ষমতাবান হতে। আজকাল পৃথিবীতে যে ক্ষমতা ছাড়া কারো কোন মূল্য নেই। জোর যার মুলুক তার। এই বিয়েটা হয়ে গেলে আমি সেই জোর পাবো। আমার আসল উদ্দ্যেশ্য জোনাকি আপুর দোষীদের যথাযোগ্য শাস্তি দেওয়া। আমি নিজের হাতেই তাদের শাস্তি দেব। চরম রকমের শাস্তি।’

‘আমার তোর জন্য খুব ভয় হচ্ছে। যদি তোর কোন বিপদ হয়!’
‘আমার কোন বিপদ হবে না আম্মু। তুমি আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করো না। আমি সবকিছু ভেবে রেখেছি কিভাবে কি করব। তাই এই নিয়ে অন্তত কোন সমস্যা হবে না।’
‘আল্লাহ তোর সহায় হোক আলো।’

আলো, বর্ষকে মুখোমুখি করে বসানো হয়েছে। তাদের সামনে পর্দা দেওয়া আছে যাতে একে অপরকে দেখতে না পারে। কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করেছে। বর্ষ অপলক তাকিয়ে আছে আলোর দিকে। যদিও পর্দা আছে তবুও পর্দাটা পাতলা হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে। কাজি কবুল বলতে বলেন। বর্ষ কবুল বলে দেয়, আলো কিছু সময় অপেক্ষা করে কবুল বলে।
বিয়েটা আলোদের বাড়ি জামালপুরেই হয়েছে। সবাই এসেছে সেখানে। বিয়েতা হয়ে যেতেই আলো উঠে চলে আসে। মালেকা বেগম, আসাদুল করীমকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে। আলোর চাচা চাচিও এসেছে। দেলোয়ারা বেগম আলোকে জড়িয়ে কান্না করে বলেন,

‘আমার ছেলেটা তোদের সাথে অনেক অন্যায় করেছে। সাজিদ তার কাজের শাস্তি পেয়েও গেছে। জোনাকির সাথে যে এমন হবে ভাবতে পারিনি। মেয়েটা অভাগী ছিল খুব।’
‘না চাচি আপু অভাগী ছিলনা। সে অনেক ভাগ্যবতী ছিল। ভাগ্যবতী না হলে কেউ জীবনে এত ভালোবাসা পায়না। আপু জীবনে এমন একজনকে পেয়েছিল যে তাকে সত্যি ভালোবাসে। তাকে ভালোবেসে নিজের জীবন দিতে পেরেছে। এতকিছুর পর আপুকে আর যাই হোক অভাগী বলা যায়না। আমিও চাই আপুর মতো ভাগ্যবতী হবে। তবে মরে গিয়ে নয় বেচে থেকে। আমি বেচে থাকতে চাই ভাগ্যবতী হয়ে।’

বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসে। সবাইকে বিদায় জানিয়ে আলো বর্ষ উঠে যায় গাড়িতে। আলোকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বর্ষর ভালো লাগছিল না।
‘আলো তুমি এত চুপচাপ আছ কেন?’
‘এমনিই।’
‘একটা কথা সত্য করে বলবে?’
‘হুম।’
‘ভালোবাসো আমায়?’
‘হ্যা।’
‘কতটুকু।’
‘একটুখানি।’
‘একটুখানি??’

‘আমার মনে যতটুকু যায়গা আছে সবটুকু জুড়ে আপনি আছেন।’
বর্ষ আলোকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে৷ আলো অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আলো একপ্রকার লজ্জায় পড়ে যায়। বর্ষ আলোকে আরো কাছে টেনে নেয়। আলোর কপালে বসিয়ে দেয় চুমু।
আলো লজ্জায় লাল হয়ে যায়। বর্ষ দুষ্টুমি করে বলে,
‘এখনই লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি আলো। আমাদের বাসর রাত এখনো বাকি আছে।’
‘জানি,,,’

নিজের কথাতেই লজ্জা পেয়ে যায় আলো। কোথায় মুখ লুকাবে সেটাই ভাবতে থাকে।
‘আমার বুকে এসে মুখ লুকাও।’
বর্ষর কথায় আলো তাই করে। বর্ষ বলে,
‘আহা কি শান্তি। এই শান্তির থেকে বড় শান্তি আর হয়না।’
‘এভাবে বলবেন না আমার লজ্জা লাগছে।’
‘আজ তোমার সব লজ্জা দূর করে দেব।’

আলো,বর্ষর সাথে ঢাকায় তাদের বাড়িতে এসে চুপচাপ ঘরে গিয়ে বসে আছে। বর্ষ এসেছে আলোর পেছনে। আলোকে একা ঘরে বসে থাকতে দেখে বর্ষর মনে শ’য়তানী বুদ্ধি চাপে৷ সে দরজা বন্ধ করে দেয়।
‘একি করছেন?’
‘কেন বুঝতে পারছ না?’
‘বাসর তো আজ রাতে।’
‘রাতের কাজ দিনে করলে কি কোন অসুবিধা আছে?’

‘আপনি না একটা,,,,’
‘আমি কি হ্যা?’
‘কিছু না।’
‘কিছু তো।’
‘সত্যিই কিছু না।’
‘তাহলে তুমি কি প্রস্তুত বাসরের জন্য?’
‘একেবারেই না।’

বর্ষ আলোর কথা অগ্রাহ্য করে তাকে নিজের কাছে টেনে নেয়। আলো বলে,
‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।’
‘একদম ঠিক হচ্ছে।’
বলেই আলোর ঠোটে ঠোট বসাতে যাবে তখনই আলো বর্ষর কানে কামড় বসিয়ে দেয়। বর্ষ দূরে সরে যায় এই সুযোগে আলো দৌড়ে পালিয়ে যায়। বর্ষ কান ডলতে ডলতে বলে,
‘আর কতক্ষণ এভাবে পালিয়ে বেড়াবে? শেষ অব্দি আমার কাছে তো আসতেই হবে।’

আলো একটি সাদা শাড়ি। তার উপর পড়ে একটি কালো বোরখা। নিজেকে আয়নার সামনে গিয়ে দেখে।
‘আমাকে তো একদমই চেনা যাচ্ছে না। এখন আমাকে নিজের কাজটা করে নিতে হবে। শ’য়তানেরা তোমরা নিজেদের সবথেকে বাজে পরিস্থির জন্য প্রস্তুত হও। আমি জোনাকি আপুকে নিজের চোখের সামনে তড়পে তড়পে মরতে দেখেছি। সেই একই শাস্তি তোমাদেরকেও পেতে হবে। আমার আপুর প্রত্যেক ফোটা রক্তের দাম আমি উসুল করে নেব। তোমাদের সুখের দিন শেষ হয়ে আসছে।’

আলো এরকম অবস্থাতেই বেরিয়ে পড়ে। যাওয়ার সময় রান্নাঘর থেকে ফল কা’টার ছু’রি নিয়ে যায়। দূর থেকে দাড়িয়ে আলোকে দেখে নেয় জরিনা। তার কেন জানিনা মনে হয় আলো কোন ভয়ানক কিছু করতে যাচ্ছে।

♪Shuru…
Jo akh lad jaave
Saari raat neend na aave
Meinu bada tadpaave
Dil chain kahin na paave paave paave (x2)
Khann khann khann khann choodi
Teri khann khann khann khann khanke re
Khann khann khann khann khanke (aah!)♪

পাব থেকে গান বাজছে। ভেতরে বসে তা উপভোগ করছে আদিত্য। এরিকের যে তিন বন্ধু ছিল, সে তাদের মধ্যে একজন।
লতা আলোকে ফোন করে বলে,
‘আলো তুমি আমাকে মিস্টার আদিত্যর উপর নজর রাখতে বলেছিলে না। আমি নজর রেখেছি। ও এখন ডিস্কে আছে। আমি তোমাকে লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি তুমি চলে এসো।’

লতা লোকেশন দিয়ে দেয়। সেই লোকেশন অনুযায়ী বৈশাখী চলে আসে। বৈশাখী ডিস্কে চলে আসে। বৈশাখী সোজা আদিত্যর কাছে যায়। আদিত্য বৈশাখীকে দেখে বলে,
‘কে তুমি সুন্দরী? সাদা শাড়িতে তোমাকে পুরো সাদা পরি লাগছে।’
বৈশাখী মুখের মাক্সটা ভালো ভাবে পড়ে নেয়।

বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব ২৭

‘চলুন আমার সাথে। এই পরীর পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করুন।’
মাতাল আদিত্য আলোর সাথে যেতে থাকে। আলো আদিত্যকে একটি রুমে নিয়ে যায়। রুমের দরজা ভালোভাবে আটকে দেয়। আদিত্য আলোর কাছে আসলে আলো শাড়ির আঁচল থেকে ছু’রিটা বের করে আদিত্যর বুকে ঢুকিয়ে দিতে যায়। কিন্তু আদিত্য তার হাত ধরে ফেলে।’

বিবর্ণ আলোকবর্ষ শেষ পর্ব