কহিনুর পর্ব ১৪

কহিনুর পর্ব ১৪
লাবণ্য ইয়াসমিন

কিছু সত্য মেনে নিতে কষ্ট হয় তবুও মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার থাকে না। চোখের পানির সঙ্গে ভাসিয়ে দিতে হয় দুঃখগুলোকে। কাছের মানুষের বিশ্বাসঘাতকতা মানতে পারলেও তাঁকে ক্ষমা করা যায় না। জুবায়ের হঠাৎ থমকে গেছে। চোখ দুটো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। এতকাল যাকে বাবা মা বলে এসেছে হঠাৎ বুঝতে পারলো সব মিথ্যা। মানতে পারছে না।অধরা ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। নিরবতা কাটিয়ে অধরা মুখ খুঁলল। ভয়ে ভয়ে বলল,

মাথা ঠান্ডা করুণ। আমিও অনাথ বাবা মা নেই। পৃথিবীতে আপনজন বলতে আপনি আর আমাদের বাচ্চাটা ছাড়া কেউ নেই। আমরা নতুন করে আমাদের পরিবার সাজাবো। পারবেন না আমাদের সঙ্গে চলতে?
জুবায়ের বহুকষ্টে বলল,
> খুব পারবো। সরি অনেক। আর মারবো না।তুমি জানো উনার সঙ্গে আমার ডিএনএ মিলেনি কিন্তু ভাইয়ের সঙ্গে মিলেছে। ভাইয়ের ব্লাডে কোনো অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি। ও সুস্থ আছে। জানিনা সূর্যের আলোতে ওর কি সমস্যা। ডাক্তারের সঙ্গে কথা হয়েছে।
অধরা জুবায়েরের হাত দুটো নিজের মুঠোয় পুরে নিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

> আপনাদের পরিবারিক উকিলের সঙ্গে কথা বলুন। সম্পত্তির উত্তরাধিকার কার নামে চেক করে ফেলুন। যা করবেন গোপনে। আমার বিশ্বাস এগুলো সব আপনার নামে। আর আরমান ফারুকী আপনার ছোট চাচা। আপনি উনার বড় ভাইয়ের ছেলে। দ্রুত ব‍‍্যাবস্থা নিন। আপনার নামে যদি কোনো সম্পদ থাকে তবে নতুন করে দলিল করুন। লিখে ফেলুন আপনার কিছু হলে সব অর্থসম্পদ মসজিদ বা সরকারি খাতে চলে যাবে।
জুবায়েরের উত্তর দিলো না। শুয়ে পড়লো। কিছু একটা ভেবে অধরাকে কাছে টেনে নিয়ে ওর গালাতে মুখ ঢুবিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল,

> ঘুমাও চিন্তা করো না। আমার কিছু হবে না। যতক্ষণ বেঁচে আছি তোমাদের খেয়াল রাখবো ইনশাআল্লাহ। বাচ্চাটা যেনো আমার মায়ের মতো হয় দোয়া করবে একটু? চোখের সামনে ছিল তাই গুরুত্ব বুঝতে পারিনি। কেনো এমন হলো বলতে পারো?

অধরা কি বলবে বুঝতে পারলো না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করলো। বাবা মায়ের কথাগুলো আবারও মনে পড়ছে। বছর খানিক আগেও সব ঠিক ছিল। এতো ত‍্যাগ বিসর্জন সব কহিনুরের জন্য। মেয়েটা শুভ নাকি অশুভ কিছুই ওদের জানা নেই। কহিনুরের রহস্য কিভাবে জানতে পারবে মাথায় আসছে না। দাদুর রুমটা যদি একবার চেক করা যেতো ভালো হতো। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো। যখন ঘুম ভাঙলো তখন নিজেকে বিছানায় একা পেলো জুবায়ের নেই। অধরা দ্রুত উঠে বসলো। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে ঠিক নেই। জুবায়ের ওকে না বলে বাইরে গেছে ভেবে টেনশন হচ্ছে। অধরা ফ্রেস হয়ে বাইরে যেতে গেলো তখনই জুবায়ের খাবারের ট্রে নিয়ে হাজির হলো। মুখে হাসির ঝিলিক। মন খারাপের কোনো চিহ্ন নেই। অধরা বেশ অবাক হলো ওর ব‍্যবহার দেখে। কৌতূহল চাপিয়ে রেখে বলল,

> কোথায় ছিলেন? টেনশন করছি।
জুবায়ের ওকে হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ওর সামনে খাবার নিয়ে বসে পড়লো। প্লেটে খাবার নিয়ে বলল,
> চিন্তা করে ঠিকঠাক খাওয়া হচ্ছে না। বেবীর পুষ্টির দরকার আছে। চুপচাপ খেয়ে আমার উদ্ধার করো। তোমার শশুর মশাইকে জব্দ করার হাতিয়ার পেয়ে গেছি। বিষয়টা যে আমরা জেনে গেছি আরমান ফারুকীকে বুঝতে দিলে চলবে না।
অধরা বিস্মিত হয়ে বলল,

> কি করতে চাইছেন আপনি? শুনুন ভুলভাল কাজের জন্য আপনি আগে থেকেই ফেমাস হয়ে আছেন। নতুন করে নিজের বুদ্ধিতে দুমদাম কিছু করার চেষ্টা করবেন না। আমাকে বলুন সাহায্য করবো।
> তুমি জানো এই সম্পত্তি আমার বাবা সুলতান জাফর ফারুকীর নামে ছিলো। জানিনা কি কারণে উনি সবটা আমার নামে করে দিয়েছিলেন। আমাদের পুরাতন উকিলের সঙ্গে কথা হয়েছে। লোকটা প্রথমে বলতে চাইনি পরে বাধ্য হয়ে বলেছে। আমি লোক দিয়ে উনার ছেলেকে উঠিয়ে এনেছিলাম। সামান্য এইটুকু কাজ, আমি এখানে বসে আধা ঘন্টার মধ্যে শেষ করেছি।

জুবায়ের ভাব নিয়ে কথাগুলো বললো। অধার চোখ কপালে। এই লোকটা যে সরলভাবে কিছুই ভাবতে জানেনা। কি দরকার ছিল কিডন‍্যাপ করার। ঝামেলার শেষ নেই। অধরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
> ছেড়ে দিয়েছেন তো? সামান্য কাজের জন্য কিডন‍্যাপ করে ফেললেন? বাচ্চা ছেলেটার যদি কিছু হয়ে যেতো?
> দূর বাচ্চা কোথায় পেলে? দেখো লুকিয়ে চুরিয়ে কয়টা বাচ্চার বাপ হয়ে গেছে তার ঠিক নেই। ভীষণ দুষ্ট। যাইহোক ছেড়ে দিয়েছি। ভেবেছিলাম তুমি ঘুম থেকে উঠার আগেই কাজটা শেষ করবো। তথ্য জেনেছি এখন আইনি নোটিশ পাঠাবো।আরমান ফারুকী ঝটকা খাবে কেমন বলো?

> আপনার মাথা । একদম ফালতু বুদ্ধি। আপনার কিছু হয়ে গেলে আপনার ভাই এসে সব দখল করবে। এসব বাদ দিয়ে অন‍্য কিছু ভাবুন।
> আচ্ছা আমার নামের সব কিছু আমি যদি আমার স্ত্রী সন্তানের নামে করিয়ে দেয় তাহলে?
অধরা বিরক্ত হলো, ভ্রু কুচকে বলল,
> আপনার বিপদটা আমার বাচ্চার ঘাড়ে স্থানান্তরিত করতে চাইছেন এসব হবে না।
> আরে বাবা কথা তো শেষ করতে দাও। আমি এখানে উল্লেখ করবো যতদিন আমার বাচ্চার বয়স আঠারো হবে না ততদিন এর দ্বায়ীত্ব আমার স্ত্রীর উপরে থাকবে। তারপর মেয়ের বয়স হলে ও নিজেই নিজের সবটা বুঝে নিবে। তাছাড়া আমার তো আর একটা মেয়ে হবে না। আরও হবে আমি উল্লেখ করবো আমার যতগুলো বেবী হবে সবগুলো সমানুপাতিক সম্পত্তির মালিক হবে।

অধরা চরম বিরক্ত জুবায়েরের উপরে। লোকটা মহা ফাজিল। একটা মেয়ের যন্ত্রণায় পাগল হয়ে যাচ্ছে আবার আরও চাইছে। অধরা থমথমে মুখ নিয়ে বলল,
> সবটা আপনি কহিনুরের নামে করে দিন। ঝামেলা মিটে যাবে। মেয়ে যতদিন পযর্ন্ত বিয়ের উপযুক্ত না হবে ততদিন পযর্ন্ত ওটা আপনি দেখাশোনা করবেন। আর যদি কোনো কারণে কহিনুরের কিছু হয়ে যায় তবে এটা সরকারি ফান্ডে চলে যাবে। একটা শব্দও আর উচ্চারণ করবেন না। বহুত বাজে কথা বলেছেন আর না।

জুবায়ের মুখটা করুন করে পকেট থেকে ফোনটা বের করে উকিলের কাছে ফোন দিয়ে সবটা বুঝিয়ে বলে দিলো। দ্রুত দলিত তৈরি করতে হবে। অধরার ওষ্ঠে হাসি ফুঁটে উঠলো। আরমান ফারুকীর বদ বুদ্ধি গুলোকে ছুটিয়ে দিবে। প্রতারণা খু*ন সব কিছুর জন্য কঠিন শাস্তির ব‍্যবস্থা করবে। হঠাৎ বাইরে থেকে শব্দ শুনে ওর ধ‍্যান ভাঙলো। বাইরে কিছু একটা নিয়ে চেচামেচি হচ্ছে। অধরা খাবার শেষ করতে পারলো না। উঠে আসতে চাইলো কিন্তু জুবায়ের দিলো না।

ওকে বসিয়ে দিয়ে ও নিজের বেরিয়ে আসলো। গতদুদিন ধরে বাড়ির দক্ষিণ সাইডে অবস্থিত এক প্রতিবেশির কাজের মেয়েটা নিখোঁজ আছে। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। জুবায়ের বিষয়টা জেনে রুমে এসে অধরাকে বলে দিলো। অধরার কেনো জানি সন্দেহ হচ্ছে। রাতেই ভেবেছিল কেউ নিখোঁজ থাকবে আর তাঁই হলো। এই বাড়ির কেউ কালো যাদুর সঙ্গে যুক্ত আছে। বাবার ডাইরিতে লেখা ছিল কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। তার মানে পরিস্কার এই বাড়ির ঐশ্বর্যের পেছনে মেয়েদের মুখের ভাষাটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমনটা হতেই পারে কিন্তু কে এমন কাজের সঙ্গে যুক্ত? আরমান ফারুকী নাকি উনার বাবা? অধরার মাথাটা দপদপ করে যন্ত্রণা হচ্ছে। জানালা খোঁলা ছিল বেশ ঠান্ডা বাসাত আসছে। জুবায়ের সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ বাইরের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো,

> অধরা সেই লোকটা!
অধরা চমকে উঠে বিছানা থেকে নেমে আসলো। গতকাল সন্ধ্যায় কাচা মাং*স খেয়েছিল সেই লোকটা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। জুবায়ের ওকে ছেড়ে বাইরে যেতে চাইলো কিন্তু অধরা দিলো না। ওর হাতটা খপ করে ধরে বলল,
> উনার সঙ্গে আমি কথা বলবো আপনি চুপচাপ শুনবেন। হাঙ্গামা করে সত্যি জানা মুশকিল হবে। আমি কথা বলবো আপনি শুনবেন। চলুন বারান্দা দিয়ে পেছনের গেট দিয়ে বাইরে যায়। আপাতত কাউকে কিছু বলার দরকার নেই।

জুবায়ের মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। ওর হাতটা ধরে বেরিয়ে আসলো। ডাইনিং রুমে ছোটখাট একটা আড্ডা বসেছে। ফুপির মেয়েগুলো কথা বলতে জানেনা কিন্তু আসর জামাতে উস্তাদ। ইশারা করছে সেটা কাজের মেয়েটা অনুবাদ করছে। অধরা এক নজর সেদিকে দেখে নিলো। দাদু আড্ডার মাঝে বসে আছে। আহা এখনই যদি দাদুর ঘরটা চেক করতে পরতো। অধরার ভাবনার চিরচ্ছেদ হলো সেই লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে। লোকটা ওদেরকে মনে হচ্ছে প্রথমবার দেখেছে। বিস্মিত হচ্ছে আর সরল করে হাসছে। অধরা ভনিতা ছাড়া বলে উঠলো,

> গতকাল সন্ধ্যায় জঙ্গলে কেনো গিয়েছিলেন? কি খেয়েছিলেন উত্তর দিন?
লোকটা ভয় পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলো। মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> কি বলছেন ম‍্যাম আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমি গতকাল বিকেলে চলে গিয়েছিলাম এসেছি সকালে। আপনি ভূল দেখেছেন বোধহয়।
জুবায়ের জ্বলে উঠলো। মুঠো শক্ত করে লোকটার মুখ বরাবর আঘাত করতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে নিলো। হাত উঠানোর আগেই অধরা ওর পাঁচ আঙ্গুলের মধ্যে নিজের আঙুল চালান করে দিয়ে ফিসফিস করে বলল,

> আমি কথা বলছি তো। চুপচাপ দেখুন।
> মিথ্যা বলছে কেনো? থাপ্পড় দিলে বাপ বাপ করে সব বলে দিবে। হাত ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ দেখো।
> আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। চুপ থাকতে বলেছিনা?
জুবায়ের নিভে গেলো। যতবার জ্বলে উঠে অধরা ততবার ওকে নিভিয়ে ছাড়ে। এই জন্য উকিলের বিষয়টা নিজের বুদ্ধিতে করেছে তাও অধরার অনুপস্থিতিতে। বেশ করেছে কাজটা। আধর ওকে এক পলক দেখে নিয়ে সামানের লোকটাকে বলল,
> সমস্যা নেই আসলে দূর থেকে ভালো দেখতে পারিনি। মনের ভূল ছিল তাই আপনাকে বিরক্ত করেছি। আপনি এবার আসুন।
লোকটা মনে হলো হাপ ছেড়ে বাঁচলো।দ্রুত চলে গেলো।অধরা সেদিকে তাঁকিয়ে আছে। জুবায়ের বিস্মিত হয়ে বলল,
> ছেড়ে দিলে? ওরে তো আমি দেখছি। এমন পিটাবো না সারা জীবনের জন্য মিথ্যা ভূলে যাবে। ওর জন্য আমি অজ্ঞান ছিলাম। বউয়ের খোঁটা শুনেছি।
অধরা ওর কথার পাত্তা দিলো না। চাপা কন্ঠে বলল,
> ওই নর খাদকটা স্বাভাবিক মানুষ কিছুতেই ছিল না। আপনি কি জানেন এই বাড়িতে নর বলি হয়? অসংখ্য নরখাদক আপনাদের বাড়িতে বসবাস করছে এটা কি মানেন? জুবায়ের আয়াতকে বাড়ি পাঠানোর ব‍্যবস্থা করুন,সেটা এখুনি। দ্রুত করবেন।

জুবায়েরের কপালে চিন্তার রেখা। বুঝতে পারলো না ওর কথাগুলো। দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। কি সাংঘাতিক কথাবার্তা বলছে মেয়েটা। ও কোনরকম নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
> কি বলছো তোমার মাথা ঠিক আছে?
> একদম ঠিক আছে। আপনাদের বাড়ির কেউ একজন কালো যাদু বা শয়তানের উপাসনা করে। গতকাল যে খু*লিটা দেখেছিলাম ওটা পাশের বাড়ির ওই মেয়েটার। খু*লি নিয়ে লা*শটা এই নরখাদকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। প্রমাণ থাকে না।
> এসব করে কিসের লাভ? বুঝিয়ে বলো।

> এখন সময় নেই। পরে আপনাকে বলো। এখন আপনি আয়াতের জন্য গাড়ি নিয়ে আসুন। লোকদিয়ে ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবেন। এক মিনিট নষ্ট মানে ওর জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি হবে।
জুবায়ের সব কৌতূহল দমিয়ে রেখে ভেতরে চলে গেলো। আয়াত কিছুতেই এই বাড়ি থেকে যেতে চাইছে না কিন্তু অধরা শুনলো না। এটা ওটা বুঝিয়ে ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো। ছেলেটার জন্য ওর দম বন্ধ লাগছিল। এই মৃত্যু পুরীতে থাকা মানে বিষাক্ত জীবন পার করা। জুবায়েরের দাদু বেশ কষ্ট পেয়েছেন ছেলেটাকে পাঠিয়ে দেওয়াতে। উনি অধরাকে নিজের রুমে ডেকে নিলেন। অধরা প্রথমবার দাদুর রুমে প্রবেশ করলো। জুবায়ের আসতে চেয়েছিল কিন্তু অধরা ওকে উকিলের সঙ্গে কথা বলতে পাঠিয়ে দিয়েছে। হাতে সময় কম। দরজায় পা রাখতেই ভেতর থেকে গম্ভীর কন্ঠে আওয়াজ আসলো,

> কোথায় ছিলে দাদুভাই? সারাদিন খোঁজ পাচ্ছি না। এই বুড়ো মানুষটা সারাদিন তোমাকে প্রচণ্ড মিস করেছে এটা কি তুমি জানো?
অধরা ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে চনচল হয়ে উঠলো। ভেতরে গিয়ে একদম দাদুর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। মিনমিনে কন্ঠে বলল,
> দাদু জানেন তো আমার অবস্থা!শরীর হঠাৎ হঠাৎ খারাপ হচ্ছে, ঘুম পাচ্ছে।
> তা বটে এই সময়ে এরকম একটু হয়ে থাকে। তুমি চিন্তা করোনা। তোমার পেটে আমাদের সুলতান পরিবারের বিশেষ একজন অতিথি সে। তাঁর কোনো ক্ষতি হবে না। আমরা সবাই দোয়া করছি।

> আপনারা ছাড়া কে আছে আমার? বাবা মা পরিবার পরিজন কেউ নেই।
> দুঃখ করো না বাবা মা কারো চিরকাল থাকে না। যেই ছেলেটা এসেছিল ওকে কিছুদিন কাছে রাখতে পারতে। ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিয়ে ঠিক করোনি। শুনেছি এক সঙ্গে বড় হয়েছো। কাছে থাকলে তোমার ভালো লাগতো।
অধরা থমকে গেলো তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার ত্রুটি করলো না। ঢোক গিলে বলল,
> আন্টি অসুস্থ ওকে দরকার ছিল বাড়িতে। কয়েকদিন পরে আবারও আসবে।

ভদ্রলোক বিশ্বাস করলো কি ঠিক বোঝা গেলো না। বিছানা থেকে নেমে আলমারির কাছে গিয়ে একটা লাল পুটলি বের করলো। যেটা খুঁলে ভেতর থেকে একটা পুরাতন ডাইরি নিয়ে অধরার সামনে ধরলেন। আর চাপা কন্ঠে বললেন,
> এই ডাইরীটা তোমার। পড়ে আমাকে ফেরত দিবে। এখানে আমাদের বংশের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে।
অধরা আগ্রহ নিয়ে ডাইরিটা দ্রুত নিজের হস্তগত করলো। মনে হলো এখুনি না নিলে আর পাবে না। ওর অস্থিরতা দেখে দাদু মৃদু হাসলো। বলল,

এটা পড়লে তোমার সব কৌতূহল আশাকরি মিটে যাবে।
অধরা ডাইরীর উপরে হাত বুলিয়ে নিলো। উপরে বেশ গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে “কোহিনুর”। ভেতরে কি লেখা আছে কে জানে। অধরা দাদুর চোখে দৃষ্টি রেখে বলল,
> কক্ষে নিয়ে যেতে চাই, দিবেন?

কহিনুর পর্ব ১৩

নিশ্চয়ই, তবে কাউকে দেখাতে পারবে না। নিয়ে যাও সকাল হলে ফেরত দিতে হবে।
অধরা সম্মতি জানিয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসলো। কি আছে এই ডাইরীতে?

কহিনুর পর্ব ১৫