কহিনুর পর্ব ১৮

কহিনুর পর্ব ১৮
লাবণ্য ইয়াসমিন

প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও ঘেমেঘেটে একাকার অধরা। জুবায়ের ওকে বুকে নিয়ে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। জীবনে প্রথমবার কাউকে এভাবে আ*ঘা*ত করেছে। লোকটা খারাপ ছিল তাই বলে এভাবে আঘাত করাটা ঠিক হয়নি। জুবায়ের ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। চোখে ঘুম নেই। মেয়েটা এভাবে ভয় পাবে ওর ভাবনার বাইরে ছিল। আগে জানলে কিছুতেই যেতে দিতো না। মেয়েটা ওর একটা কথাও শুনে না রাগ হচ্ছে। এইটুকুতে ভয়ে কুপোকাত। সামনে যে আরও ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। মনে জোর থাকাটা এখন অতি জরুরি। কথাগুলো ভেবে জুবায়ের ওর কপালে ওষ্ঠদ্বয় রেখে বলল,

সারারাত জেগে থাকবে? যা করেছো বেশ করেছো। লোকগুলো ভালো ছিল না। এমনওতো হতে পারে ওরা মানুষ না। তুমি খামাখা ভয় পাচ্ছো আর আমাকে কষ্ট দিচ্ছো। অধরা সামনে কিন্তু তোমার স্বামীর প্রা*ণ নেওয়ার দৃশ্যটাও তোমাকে দেখতে হতে পারে তখন? এখন থেকে শক্ত হও।
জুবায়েরের বলতে দেরী হলো কিন্তু অধরার উঠে বসতে দেরী হলো না। মুখটা ফুলিয়ে ঠোঁট উল্টে বলল,
> জঘন্য খারাপ আপনি। দেখছেন আমি ভয় পাচ্ছি কোথায় সান্ত্বনা দিবেন, আদর করবেন তানা ওসব বাজে কথা বলছেন? আপনি সত্যিই খারাপ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জুবায়ের অধরার মুখটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
> আমি ভালো হতেও চাইনা। আমি আমার লক্ষ্মী বউয়ের উড়নচন্ডী বর। মাথা গরম করে যা করতে পারবো শান্ত মাথায় সেটা জীবনেও পারবো না। ধুমদাম অদ্ভুত কাজকর্ম করে তোমাকে চমকে দিব নাজেহাল করবো। তুমি বকবে আমি মজা নিবো বেশ হবে। আচ্ছা আমাদের মেয়েটা কার মতো হবে বলতে পারো? তোমার মতো ছিঁদকাদুনে নাকি আমার মতো ভদ্রলোক? আমার মেয়ে যদিও জানি সে আমার মতোই হবে। তবুও যদি না হয়!ওই হবে তো?
অধরা ভ্রু কুচকে ফেলল। মেয়ে কেমন হবে ও এখুনি কিভাবে জানবে। তাছাড়া বাচ্চাদের যা শেখানো হয় বাচ্চারা তাই শিখে। অধরা বিরক্ত হয়ে বল‍ল,

> মেয়ে আপনাদের মতোই হবে। সুলতান বংশের মাথার উপরে চড়ে নাচবে এই মেয়ে। আপনি মিলিয়ে নিবেন। হাড়ে হাড়ে চিনি আপনাদের।
> আমিও চাই আমার মেয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে আর কাল বৈশাখী ঝড়ের মতো গতি নিয়ে ধরণীতে আসুক। ওকে আমি তোমার মতো ভিতুর ডিম তৈরী করবো না। মেয়ের এক চোখে থাকবে আগুন আরেক চোখে থাকবে মমতা। সুলতানদের এতদিনের করা পাপ ধ্বংস করে দিবে। আমিও চেয়েছি ধ্বং*স হোক। আমি মনে প্রাণে ছেয়েছি আমার মেয়ে ধ্বংস হয়ে আসুক।

অধরা মুখ কাচুমাচু করে ফেলল। মেয়েটা না আসতেই কতকিছু। আসলে না জানি কি করবে। বাবা তাঁর মেয়ের জন্য ভাবছে বিষয়টা ভেবেও ওর শান্তি অনুভব হচ্ছে। স্ত্রীর কাছে এর চাইতে বেশিকিছু আর কিবা চাওয়ার থাকে। তবুও কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
> বাচ্চাটাকে আপনি একদম আজেবাজে কিছু শেখাবেন না। আমার বাচ্চাটা হবে খুবই শান্ত। মায়ের মতো ভদ্র। আপনার মতো না।

জুবায়ের মানতে পারলো না। মেয়ে মায়ের মতো হতেই পারে তবে ওর মেয়ে কিছুতেই তাঁর মায়ের মতো হতে পারবে না। সামান্য একটু সাহস দেখিয়ে হাড় হাড্ডি ঠকঠক করে কাঁপিয়ে ভুমিকম্প করে দিচ্ছে। জুবায়ের বেটি হবে হিংস্র। কথায় কথায় লোকের হৃদপিণ্ড কাঁপিয়ে দিবে। সুলতান বংশের রত্ন সে। তাঁর চলন বলন কিছুতেই সাধারণ হবে না। কথাগুলো ভেবেও শান্তি লাগছে ওর। অধরাকে ভয় থেকে বের করতে মূলত ও এতক্ষণ ঝগড়া লাগানোর চেষ্টা করছিল। একটু চিন্তা যে হচ্ছে না তেমন না। কাকে না কাকে মে*রে দিয়েছে লোকটা কে হতে পারে ভাবলো। নিজের ভাই নাকি চাচা নাকি দাদু? সবাইকে সন্দেহ হচ্ছে। সন্দেহের বাইরে কেউ নেই। জুবায়েরকে চুপচাপ ভাবতে দেখে অধরা মুখ খুলল। আবারও পূর্বের মতো ভয়ে ভয়ে বলল,

> কি হয়েছে আপনার? কি ভাবছেন এতো?
> তেমন কিছু না।। দ্রুত আসো ঘুমাতে হবে। একা একা ভয় পাবে তারচেয়ে আমাকে ঝাপটে ধরে চোখ বন্ধ করো। সকালের জন্য আমি অপেক্ষা করছি।
জুবায়ের কথাটা শেষ করে ওকে নিয়ে শুয়ে পড়লো। মধ্য রাত ঘুম বেশিক্ষণ হবে না। বাইরে মেয়েটাকে রেখে আসা হয়েছে যদিও সকাল পযর্ন্ত বিষয়টা গোপন থাকবে। এই বাড়িতে বাইরের একজন মেয়েকে আনা হয়েছে ভাবতেই বিরক্তিকর লাগছে।

ভোরবেলা দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙলো অধরার। হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে শরীর মৃদু কাঁপছে। জুবায়ের গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওকে না ডাকলে উঠবে না। অধরা চুপচাপ উঠে এসে দরজা খুঁলে দিলো। দরজার সামনে জুহি দাঁড়িয়ে আছে। অধরার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। দুদিন আগে মা*রা যাওয়া মানুষ হঠাৎ ফিরে এসেছে? অধরা ভয়ে চুপসে গেলো।

মেয়েটা ওকে ইগনোর করে হুড়মুড় করে ভেতরে গিয়ে জুবায়েরকে জড়িয়ে ধরে ডাকলো। জুবায়ের ঘুমের মধ্যে মেয়েটার হাতটা ছাড়িয়ে দিয়ে উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে গেলো। অধরার রাগ হচ্ছে না যা হচ্ছে সব কৌতূহল। এই পেত্নী যে মা*রা গিয়ে এভাবে ফিরে আসবে ওর ভাবনার বাইরে ছিল । নাকি এরাও জমজ ছিল ? জুহির হাকডাকে জুবায়ের উঠে বসলো। চোখ খুঁলেই হতভম্ব হয়ে গেলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জুহির দিকে তাঁকিয়ে চমকে গিয়েছে সেটা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অধরা ভাবলো এখুনি বুঝি ছেলেটা ওকে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। জুবায়েরের মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করলো। দ্রুতগতিতে বিছানা থেকে নেমে জুহির গলা টিপে ধরে হুঙ্কার ছেড়ে বলল,

> তুই মানুষ হোস বা পেত্নী আমার কিছু যায় আসেনা। তোকে যে শিক্ষা দেওয়ার একটা সুযোগ পেয়েছি এটাই অনেক। আল্লাহ্ কাছে শুকরিয়া। আমার সঙ্গে গেম খেলার মজা তোকে আমি হাড়ে হাড়ে বোঝাবো। ভেবেছিলাম তোর ক*বের উপরে গিয়ে বো*ম ফেলবো কিন্তু পারিনি অন‍্যদের কথা ভেবে।

জুবায়েরের শক্তিশালী পেশিশক্তির কাছে জুহির নাজেহাল অবস্থা। গলা বেশ ভালো ভাবেই ধরেছে। অধরা হতভম্ব হয়ে গেলো জুবায়ের কৃতকর্ম দেখে। এই ছেলেটার যে মাথায় সমস্যা সেটা আবারও প্রমাণিত। প্রেমিকার শোকে একদিন কাতর ছিল। প্রেমিকা ফিরে এসেছে সেই খুশীতে কোথায় জড়িয়ে ধরবে তানা গলা টিপে ধরছে। মা*রা যাবে ভেবে অধরা জুবায়েরের হাত ধরে নাড়া দিয়ে বলল,

> ছাড়ুন বলছি। ওকে মা*র*ছেন কেনো? পাগলামি অনেক হয়েছে।
জুবায়ের অধরার কোথা ইগনোর করলো। গলা আরও শক্ত করে ধরেছে। মেয়েটা ছটফট করছে।মেয়েটা যদি জানতো এমন হবে তাহলে হয়তো এখানে আসার কথা কল্পণাও করতো না। অধরা কি করবে বুঝতে পারছে না। শেষ চেষ্টা হিসেবে জুবায়েরের হাতটা ছাড়িয়ে দিতে দিতে বলল,
> সুযোগ না দিয়ে মে*রে ফেলবেন? আগে শুনি তারপর যা ইচ্ছে করা যাবে। মৃ*ত মানুষ ফিরে এসেছে জুবায়ের ফারুকী কিভাবে সম্ভব এটা নিয়ে ভাবুন।

অধরার ঝাঝালো কন্ঠ শুনে জুবায়ের ওকে ছেড়ে দিলো তবে ছেড়ে দেওয়ার আগে লা*থি বসিয়ে দিলো মেয়েটার পেট বরাবর। জুহি ছিটকে গিয়ে পড়লো সোফার উপরে। জুবায়ের হাপাচ্ছে তবুও দমন হলো না। দ্বিতীয়বার মেয়েটার সামনে যেতেই অধরা ওর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। চোখ রাঙিয়ে বলল,
>মাথা ঠান্ডা করুন আমি দেখছি। মা*রা গেলে ঝামেলা পাকিয়ে যাবে।
জুবায়ের আক্ষেপ নিয়ে উত্তর দিলো,

> আমি জানি ও জুহি না। জানিনা ও কে তবে যেই হোক সুযোগ যখন পেয়েছি রাগ মিটিয়ে নিবো। ওরে আমি ভর্তা বানিয়ে খাবো। পিচ*পিচ করে কা*টবো। তুমি ফ্রাই করে দিবা। যদিও ওর মাং*স খাওয়ার অযোগ্য। তবুও ফেলবো না। রাগ মেটানোর জন্য খেয়ে ফেলবো।
জুবায়ের রাগের মাথায় হড়বড় করে যা মুখে আসলো বলে দিলো। অধরা কপাল চাপড়ালো। লোকটা এমন কেনো কে জানে। বুদ্ধি জ্ঞানের বড্ড অভাব। অধরা নাক মুখ কুচকে বলল,

> একটা কথাও আর উচ্চারণ করবেন না। কথা বললে কিন্তু আমি আপনাকে খু*ন করবো। চুপচাপ গিয়ে বসুন। আমি দেখছি কি করা যায়। যে ওকে পাঠিয়েছে কি তাঁর ষড়যন্ত্র সেটা তো বুঝতে দিন।
জুবায়ের বিরক্ত হলো অধরার ধমক শুনে। ওর একেবারেই ইচ্ছে নেই এই মেয়েকে ছেড়ে দেওেয়ার। অন‍্যদিকে মেয়েটা পড়েছে মহা বিপদে। জা*ন বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল। একটুর জন্য বেঁ*চে গেছে। অধরা মেয়েটার মুখের দিকে তাঁকিয়ে ঝটপট পাশে থাকা একটা গ্লাসের পানি মেয়েটার মুখে ছুড়ে দিলো। মেয়েটা এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। এই ঘরে যে বাঘ আর বাঘিনীর বসবাস এটা ওর জানা ছিল না। অধরা টাওয়েল নিয়ে এসে মেয়েটার মুখ থেকে মেকাপের আস্তরণ উঠিয়ে দিলো। পুরোপুরি উঠলো না তবে বোঝা গেলো কিছুটা। এটা জুহি না পাক্কা সিউর। অধরা বাঁকা হাসলো। মেয়েটার চোখেমুখে ভয় দাঁনা বেঁধেছে। জুবায়েরের চোখে বিস্ময়। অধরা নীরবতা ভেঙে থমথমে মুখ নিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল,

> কে পাঠিয়েছে?
মেয়েটা মাথা নিচু করে আছে। জুবায়ের বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে ছিল । অধরার প্রশ্ন শুনে আবার উঠে আসলো। ওকে উঠতে দেখে ভয় পেয়ে মেয়েটা দ্রুতগতিতে অধরার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বললো,
> আমাকে বাঁ*চা*ন। মা*র*বেন না প্লিজ। আমি নিজ ইচ্ছেতে আসিনি। আমাকে আনা হয়েছে। আমি জুহি আপুর ছোট বোন। আপুর সঙ্গে হালকা চেহারার মিল আছে দেখে আপনার শশুর মশাই আমাকে টাকার লোভ দেখিয়ে এনেছে। আমি আগে জানলে আসতাম না।

মেয়েটা কোনো প্রশ্ন ছাড়াই হুড়হুড় করে সব গোপন তথ্য বলে দিলো। জুবায়কে এবার থামানো গেলো না। মেয়েটাকে তুলে নিয়ে জোরে আরেকটা থা*প্প*ড় বসিয়ে দিলো। অধরা গিয়ে ওকে ধরে ফেলল। ভ্রু কুচকে মেজাজ দেখিয়ে বলল,
> একদম ওকে মা*র*বেন না। আপনার ড‍্যাড এসব করছে। উনাকে গিয়ে প্রশ্ন করুন তারপর ওকে মা?র*বেন। ভালো মুনাফা পেলে সবাই লোভী হয়ে উঠে। আগে শুনুন উনার উদ্দেশ্য কি ছিল। এই মেয়ে বলো কি উদ্দেশ্য নিয়ে তোমাকে ভাড়া করা হয়েছে?
মেয়েটা শব্দ করে কেঁদে উঠে বলল,

> উনার সঙ্গে প্রমের নাটক করে আপনার থেকে আলাদা করতে আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে। আপনার সঙ্গে থেকে উনি বেয়াদব হয়ে উঠেছে। আরমান ফারুকী স‍্যার আমাকে বলেছিলেন আমাকে দেখলে জুনায়েদ স‍্যার শান্ত হয়ে যাবেন। উনার সব কথা শুনবেন।
জুবায়েরকে বেয়াদব বলা হয়েছে শুনে ও আবারও জ্বলে উঠলো। তেড়ে আসতে চাইলো কিন্তু অধরা চোখ রাঙিয়ে নিষেধ করলো। মেয়েটা আবারও বলল,

> আমি জানতাম না উনি এরকম আ*ক্র*মণ করে বসবেন। আরমান স‍্যার মিথ্যা বলে আমাকে পাঠিয়েছে। প্লিজ কিছু করবেন না। অনেক ব‍্যাথা পাচ্ছি। কখনও আর এমন লোভ করবো না।
অধরা মুখ কাচুমাচু করে বলল,

> প্রথমবার ছিল তাই ক্ষমা করেছি। দ্বিতীয়বার এই সুযোগ পাবেনা। এই বাড়ির দিকে পা রেখেও ঘুমাবে না। যাও
মেয়েটা অনুমতি পেয়ে এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলো না। যেমন হুড়মুড় করে এসেছিল তেমনি দৌড়ে পালিয়ে গেলো। অধরার এবার ভীষণ হাসি পেলো। মেয়েটা কত আশা নিয়ে এসেছিল। ও তো জানেই না জুবায়ের কেমন টাইপের ছেলে। বিশ্বাসঘাতকতা সহ‍্য করতে পারেনা। যদি মেয়েটাকে ও সুযোগ দিতো তবে চিত্রটা এখন অন‍্যরকম হতো। সে যাইহোক আরমান ফারুকী কি করতে চাইছে? উনি যেকোনো উপায়ে আবারও জুবায়েরকে হাতের মুঠোয় নিয়ে চেয়েছে নাতো? কথাটা ভেবেই ও দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। জুবায়ের অধরার মুখের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

> রণক্ষেত্রে পৌঁছে গেছি আর অপেক্ষা করলে চলবে না। যা হবে সামনে সামনে। চলো আরমান ফারুকীর সঙ্গে বোঝাপড়াটা শেষ করে আসি। উনি এখন বাইরে আছে জগিং করছে।
অধরা কিছু বলার আগেই জুবায়ের ওর হাত ধরে বেরিয়ে আসলো। বাড়ির পেছনের বাগানে আরমান ফারুকী নিজের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে জগিং করতে এসেছেন। মাঝেমাঝে গল্প করছে আবার দৌড়াদৌড়িও করছে। জুবায়ের সেখানে গিয়ে দাঁড়ালো। আরমান ফারুকী ওকে দেখে থমকে গিয়ে বলল,

> কিছু বলবে?
জুবায়ের হুঙ্কার দিয়ে বলল,
> বলার মতো অনেক কথায় আছে আপাতত এটা বল‍ুন ওই ফালতু মেয়েটাকে আমাকে কাছে কেনো পাঠিয়েছেন?
আরমান ফারুকী ভ্রু কুচকে চিন্তিত হয়ে বললেন,
> কোন মেয়ে? তুমি কোন মেয়ের কথা বলছো? জুবায়ের মাথা ঠান্ডা করো। তোমার এই হট মেজাজের জন্য বিপদে পড়বে একদিন।
> রাখুন আপনার মেজাজ। ওই মেয়েকে পাঠিয়ে ঠিক করেননি। কি ভেবেছেন আবারও আপনার কথায় উঠবো আর বসবো? কখনও না।

> আরে বাবা আমি সত্যি বলছি আমি এমন করিনি। নিয়ে এসো সেই মেয়েকে আমি কথা বলতে চাই। মেয়েটার কথায় তো হবে না। আমিও কথা বলে দেখি। তুমি দিনদিন বড্ড বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছো। গতকাল আমার নামে নোটিশ পাঠিয়েছো। তোমার সব সম্পত্তি তোমার মেয়ের নামে লিখে দিয়েছো। এসব কি হচ্ছে বলবে? বাচ্চাটার যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায় ধরো মা*রা যায় তখন সব সরকারি ফান্ডে চলে যাবে। এসব কি পাগলামি বলতো? তোমাকে এসব কে করতে বলেছে? জুবায়ের আমি তোমার ভালো চাই।

আরমান ফারুকীর কথা শুনে অধরা হতবাক হলো। লোকটা ভালো সাজার নাটক করছে নাকি এমনিতেই ভালো কোনটা? জুবায়েরের মাথা গরম ছিল আরও গরম হলো। বাবা হিসেবে এতদিন যাকে সম্মান করেছে হঠাৎ তাঁর গায়ে হাত তোলাটা বেমানান লাগে নয়তো এতক্ষণ অবস্থা খারাপ ছিল। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া তো কথা বলা যাবে না। তাছাড়া সব বলে দিলে লোকটা সতর্ক হয়ে যাবে। অধরা পেছন থেকে জুবায়েরের হাত টেনে ফিসফিস করে বলল,

যথেষ্ট হয়েছে। আর কোনো ঝামেলা করবেন না। মেয়েটাকে হাজির করুন। তারপর কথা বলবেন।
জুবায়ের কিছু একটা ভেবে ঠান্ডা হলো। আরমান ফারুকী জুবায়েরের হাত ধরে খুব অসহায় কন্ঠ নিয়ে জানালো। উনি এসবের মধ্যে নেই। উনি করুণ মুখে বললেন,
> আমি তোমাদের সকলের ভালো চেয়ে বাবার অনুমতি নিয়ে অধরাকে এই বাড়িতে এনেছিলাম বউ করে। বাবার কাছে শুনেছিলাম কহিনুরের জন্ম হলে আমাদের বাড়ির মেয়েগুলোর জীবন থেকে অভিশাপ কেটে যাবে। বাবা হয়ে এইটুকু চাওয়া কি আমার অপরাধ ছিল? তোমরা অযথা আমাকে ভুল বুঝেছো।

কহিনুর পর্ব ১৭

অধরা এখনো ভ্রু কুচকে আছে। এই বাড়িতে যে যাকে পারছে দোষারোপ করে নিজেকে সাধু বানানোর চেষ্টা করছে। দাদু নিজের ছেলেকে দোষ দিলো অন‍্যদিকে ছেলে দাদুকে দোষ দিচ্ছে। এতকিছুর মধ্যে হঠাৎ মনে হলো গতকাল যে লোকটাকে ছু*রি*কা*ঘা*ত করা হলো সে কোথায় গেলো?

কহিনুর পর্ব ১৯