কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৯+১০

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৯+১০
লেখিকাঃঅনন্যা অসমি

এখন মেন’স শপে দাঁড়িয়ে টির্শাট চুজ করছে মেহেক আর তার পেছনে দাঁড়িয়ে বকবক করছে রিফা।মেহেক দুটো টিশার্ট চুজ করে রিফা দেখায়।
” এগুলো কেমন?”
” বরাবরের মতোই তোর চয়েজ খুব ভালো।দে আমি এগুলো প্যাক করে আনছি।”
টির্শাট দুটো নিয়ে রিফা দৌড়ে চলে যায় কাউন্টারে।রিফার এই বাচ্চাপনা দেখে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মুচকি হাসে মেহেক।
ফ্ল্যাসবেক,

মাটিতে পড়ে থাকা জানের ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে মেহেক।সে দ্রুত মাটি থেকে ফোনটা তুলে নেয় তারপর অগ্নিদৃষ্টি পেছনে ফিরে তাকাই।মেহেকের তাকানো দেখে রিফা জোরপূর্বক একটা হাসি দেয়।
” ওই এভাবে লাফালাফি করিস কেন?দেখ তোর জন্য আমার জানটা পড়ে গেলো।তোর জন্য আমার একমাত্র জানটা ব্যথা পেয়েছে।”
” জান?” কপাল কুচকে প্রশ্ন করে রিফা। ” তোর জান আবার কে?এখানে তো তুই আর আমি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা আমি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আরে এটা কি দেখোস না নাকি?” ফোনটা রিফার চোখের সামনে নিয়ে।
” ও আচ্ছা তোর মোবাইল জান।আহারে কষ্ট পাসনা বান্ধপী।তোর একটা জান গেলে সমস্যা নেই আরো কত জান আসবে।এই তোর একটা জানের সাথে যদি ডির্বোস হয়ে যায় তো কোন সমস্যা নেই আমরা তোকে নতুন একটা জানের সাথে বিয়ে দেবো।তখন তুই তার সাথে জান জান খেলিস।”
” তুই কি আমার মজা নিচ্ছিস?”
” আরে আমি কেন মজা নেবো?আমি সিরিয়ালি বলছি।”
” আচ্ছা এবার বল কোথায় গিয়েছিল?এতোক্ষণ কেন লাগলো?”
” আরো দাভাইয়ের সাথে এই দোকানে গিয়েছিলাম।”
” তো আমাকে নিয়ে গেলিনা কেন?আমাকে নিয়ে গেলে কি হতো?”
” আরে ছাড় ওসব।এই নে ধর এটা?”

” কি এটা?”
” এটা তোর জন্য গিফ্ট।আমার আর দাভাইয়ের তরফ থেকে।এটা দাভাই সিলেক্টেড করেছে।তুই তো জানিস আমার পছন্দ তেমন একটা ভালো না।”
” এসবের…..”
” দরকার ছিল।এখন চল আমার সাথে।”
” আবার কোথায়?”
” দাভাই আর ভাইয়ার জন্য কিছু কিনবো।দাভাই আমাকে ড্রেস দিলো তো আমি দেবোনা।আর দাভাইকে দিলে ভাইয়াকেও দিতে হবে না হলে দেখা যাবে আমার মাথায় আর চুল থাকবেনা।”
ফ্ল্যাসবেক এন্ড….

” কিরে মেহু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস?চল চল দাভাই ফোন দিতে দিতে পাগল করে দিচ্ছে।
রিফা মেহেককে টেনে শপ থেকে বাইরে নিয়ে আসে।
” কিরে আর কতো শপিং করবি?”
” এতো শেষ।চলো এবার কিছু খায়।প্রচুর খিদা লেগেছে।”
” হুম চল।তাড়াতাড়ি খাবি কিন্তু।সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে অলরেডি।”
এরপর মেহেক,সৌন্দর্য আর রিফা একটা রেস্টুরেন্টে যায়।অল্পকিছু খাবার খেয়েই তারা বেরিয়ে আসে।যেহেতু গাড়ি স্পর্শ নিয়ে গিয়েছে তাই তারা ট্যাক্সি করে বাড়িতে ফেরত আসে।
এতোক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর সৌন্দর্য,রিফা আর মেহেক তিনজনই হাঁপিয়ে গিয়েছে।বাসায় এসে তিনজনেই সোফায় গা এলিয়ে দেয়।

” আমি জীবনেও তোর সাথে আর শপিংয়ে যাবোনা,কতো হাঁটাস তুই।আমার তো পা ব্যথা করছে।”
” কি গো দেবরজী এতো ক্লান্ত লাগছে কেন?ননদীনি বুঝি খুব পরিশ্রম করিয়েছে?” শবরের গ্লাস দিতে দিতে সৌন্দর্যকে কথাটা বলে মেহেকের বোন সৃষ্টি।
” আর বলোনা ভাবী,এই মেয়ে কতোটা যে দোকান ঘুরিয়েছে।হাঁটতে হাঁটতে আমার জান বের করে ফেলেছে।”
” ভাবী দাভাইয়ের কথা শুনোনা।তুমি মেহু থেকে জিজ্ঞেস করো আমি এরকম কিছু করিনি।কিরে মেহু বল।”
” আমি কিছু জানিনা।”

” আচ্ছা হয়েছে বুঝেছি আমি।এবার তোমরা সবাই যে যার রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নাও।অনেক হাঁটাহাঁটি করেছে এবার শরীরটাকে একটু আরাম করতে দাও।”
সৌন্দর্য আর রিফা চলে যাওয়া পর মেহেক তার বোনকে বলে—
” আপুনি শোন।”
” বল মৃদু।কিছু খাবি নাকি?”
” না।শোন না তুই রাতের খাবার শেষ হলে একটু আমার রুমে আসিস তো।তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
” কি কথা এখন বল।”
” না এখন না।এখন অনেক ক্লান্ত।রাতে খাবার পরে বলবো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।যা একটু বিশ্রাম নে।”

মেহেক সোফা থেকে উঠে আস্তে ধীরে হেঁটে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে।সে যখন মাঝ সিঁড়ি পৌঁছায় তখন তার দেখা হয় স্পর্শের সাথে।তার গায়ে জগিং সুট আর কানে হেডফোন।স্পর্শ মেহেকের দিকে না তাকিয়ে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে পড়ে।এদিকে মেহেক এখনো স্পর্শের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।সে দ্বিধায় আসে,আসলে কি ঠিক দেখেছে নাকি ভুল।এই সময় স্পর্শের গায়ে জগিং সুট,ব্যপারটা সে ঠিক মেলাতে পারছেনা।
” এই সময় জগিং সুট পড়ে নাকি কেউ?উনি কি মর্নিং ওয়াকের বদলে ইভিনিং ওয়াক করতে বেরিয়েছেন নাকি?”
মেহেক দ্রুততার সাথে উল্টো পায়ে আবারো নিচে নেমে আসে।

” আপুনি,এই আপুনি।”
” বল।আবার নিচে নেমে এলি যে?”
” আচ্ছা তোর ছোট দেবর মানে আদু এই সময় জগিং সুট পড়ে কোথায় গেলো?”
” আরে ও এরকমি।মাঝে মধ্যেই সন্ধ্যা বেলা জগিং করতে বেরিয়ে যায়।আবার কোন কোন সময় তো রাত একটা দুটো তেও বেরিয়ে যায়।”
” সট্রেন্জ।ওনার মধ্যে কি মাঝে মধ্যে দৌড়ানোর ভুত ঢুকে নাকি?”
স্পর্শের কথা ভাবতে ভাবতেই মেহেক রুমে চলে আসে।রিফার দেওয়া প্যাকেটটা বিছানায় রেখে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় মেহেক।তার এখন একটা শাওয়ারের প্রয়োজন।এতো সময় হাঁটাহাঁটি করে প্রচুর ঘেমে গেছে সে।এ অবস্থা শাওয়ার না নিয়ে থাকা মোটেও সম্ভব নয়।

পনেরো বিশ মিনিটের মধ্যে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে মেহেক।চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায় সে।হঠাৎ নিচে চোখ পড়লে মেহেক দেখে স্পর্শ গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকছে।এতো তাড়াতাড়ি স্পর্শকে ফিরে আসতে দেখে মেহেক কপাল কুচকে উঠে।
” এতো তাড়াতাড়ি ওনার জগিং শেষ!দৌড়ানোর ভুত কি নেমে গেলো নাকি?কি জানি বাবা।মানুষটা যেমন আজব তার কাজগুলোও তেমন আজব।”
রাতে খাবার শেষ করে বোনের জন্য অপেক্ষা করছে মেহেক।অবশেষে সবকাজ শেষ করে সৃষ্টি আসে মেহেকের কাছে।
” বল কি বলবি?”
” ও তুই এসেছিস।আচ্ছা যেটা বলছিলাম,তোকে বলেছিলাম না আমি এখন থেকে এখানে মানে ঢাকা শহরেই থাকবো।”
” হুম।বলেছিস তো।”

” তো আমি আমার পড়াশোনা এখানের কোন একটা ভার্সিটিতে করতে চাই।কিন্তু আমি তো তেমন কিছু জানিনা।তুই দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে দেখবি একবার।”
” আচ্ছা ঠিক আছে,আমি তোর দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলে তোকে জানাচ্ছি।”
পরেরদিন সকালে,
মেহেকের কোন কাজ নেই এখন তাও সে সকাল সকাল উঠে পড়েছে।ফ্রেশ হয়ে সে নিচে চলে যায়।নিচে নেমে দেখে তার বোন রান্না করছে আর তার দুলাভাই আর বোনের শাশুড়ি কথা বলছে।
” আরে মেহেক,এসো বসো।ঘুম কেমন হলো তোমার?”
” এইতো দুলাভাই ভালো।”

” তোমার আপু কাল আমাকে তোমার পড়াশোনার কথা বলেছে।আমি চাইছি তুমি বোনু যে ভার্সিটিতে পড়ে তুমিও সেই ভার্সিটিতে ভর্তি হও।যেহেতু তুমি এখানে নতুন,তাই যদি আগে থেকে ভার্সিটিতে তোমার পরিচিত কেউ থাকে তাহলে তোমার জন্য সুবিধা হবে।তুমি কি বলো?”
” ঠিক আছে দুলাভাই,আপনি যা ভালো মনে করেন।”
” কি…..মেহু আমার ভার্সিটিতে পড়বে!ইয়াহু…….. ” নাচতে নাচতে কথাটা বলে রিফা।
” তাহলে ঠিক আছে ব্রেকফার্স্ট করে তুমি তৈরি হয়ে নাও।আজকেই ভার্সিটির কাজ শেষ করে ফেলবো।কারণ কয়েকদিন পর থেকেই তো নতুন ক্লাস শুরু হবে।”
” ঠিক আছে দুলাভাই।”

” মেহু…. মেহু…. আমার কি যে খুশি খুশি লাগছে তোকে বলে বোঝাতে পারবোনা।আমি আর তুই একি ভার্সিটি পড়বো।দাঁড়া আমি খবরটা ইভানকে দিয়ে আসি।”
” এটাও তোর বয়ফ্রেন্ডকে বলতে হবে?” হতাশ হয়ে বলে মেহেক।কারণ রিফা প্রত্যেকটা কথা ইভানকে বলে।
” ও মা বলতে হবেনা!ওটা আমার কলিজা না।আমি আমার কলিজাকে না বলে কেমন করে থাকবো?”
” আচ্ছা যা যা বল,সব বলে দে।কিছু বাদ রাখিস না।গার্লস টিপিক গুলোও বলে দে।”
” ছিঃ ছিঃ আমি গার্লস টিপিকগুলো কেন ওকে বলতে যাবো?”
” কেন?এটা কেন বাদ রাখবি?সব যখন বলিস তখন এটাও বল।”
” ধুর তোর সাথে কথায় আমি পেরে উঠবো না।আমি যায় আমার জানের সাথে কথা বলে আসি।”

গাড়িতে বসে আছে সৌন্দর্য,স্পর্শ,মেহেক আর রিফা,উদ্দেশ্য তাদের ভার্সিটি।মেহেক আজকে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল কিন্তু শেষ মহূর্তে এসে তার দুলাভাইয়ের একটা কাজ পড়ে যায় যার জন্য তিনি মেহেক ভর্তি সম্পর্কিত কাজে যেতে পারেননি।এখন তার বদলে মেহেককে ভর্তি করানোর দ্বায়িত্ব এসে পড়েছে সৌন্দর্যের কাঁধে।
ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামায় সৌন্দর্য।স্পর্শ আগেই নেমে ভার্সিটির ভেতরে চলে যায়।মেহেক নেমে রিফাকে প্রশ্ন করে,
” এই তোরা তিনজন কি একি জায়গায় পড়াশোনা করিস?”
” হ্যাঁ আর কিছুদিন পর থেকে তুইও এখানে পড়বি।”
” মেহেক চলো।বোনু তুই ক্লাসে যা।”

” আচ্ছা।সাবধানে থাকিস মেহু।আর বোরিং ফিল করিস না আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।”
রিফা মেহেক থেকে বিদায় নিয়ে ক্লাসে দিকে চলে যায়।সৌন্দর্য মেহেকে নিয়ে প্রিন্সিপালের রুমের কাছে আসে।
” তুমি এখানেই দাঁড়াও,আমি ভেতরে যাচ্ছি।যাও ফাইলটা আমাকে দাও।”
সৌন্দর্য মেহেক থেকে কাগজপত্রের ফাইলটা নিয়ে ভিতরে চলে যায়।বেশ কিছুক্ষণ সময় পর সৌন্দর্য বেরিয়ে আসে।
” ভেতরে কি হয়েছে?ভর্তি করিয়েছে আমাকে?নাকি….. ” ভীত গলায় সৌন্দর্যকে প্রশ্ন করে মেহেক।
” আরে বাবা শান্ত হয়।ভর্তি হয়ে গেছে তোমার।আর ভর্তি না করানোর কি আছে?তোমার তো সব জায়গা রেজাল্ট ভালোই আছে।শুধু শুধু এতো টেনশন নিচ্ছো তুমি।”
সৌন্দর্যের কথায় মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।

” চলো সামনে একটা রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে গিয়ে বসি।”
” কিন্তু আপনার ক্লাস?”
” ক্লাস আরো দেরি আছে।চলো তো।”
সৌন্দর্যের পেছন পেছন মেহেক রেস্টুরেন্টে চলে আসে।
” বলো কি খাবে?”
” কিছুক্ষণ আগেই তো খেয়ে এলাম।এখন খিদে নেই।”
” আরে তা বললে কি করে হয়।আচ্ছা আমি কফি নিয়ে আসছি।কফি খেতে তো কোন সমস্যা নেই।”
” আচ্ছা।”

সৌন্দর্য কফি নিতে চলে যায়।মেহেক আশেপাশে দেখছে হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় তার থেকে কিছুটা দূরে থাকা টেবিলটাতে।একটা ছেলে একটা মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে।এই দৃশ্যটা দেখে মেহেকের বুক ধক করে উঠে।কারণ যখন সে আর মুগ্ধ রিলেশনে ছিল মুগ্ধও তখন তাকে এভাবেই খাইয়ে দিতো।দৃশ্যটা দেখেই মেহেক পিছিয়ে যায় কিছুমাস আগে—-
ফ্ল্যাশবেক,

” এতো দেরি কেন হলো তোমার আসতে?জানো কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছিলাম।”
” আরে বাবা সরি।আসলে কিছু কাজ ছিল।তা শেষ করে আসতে দেরি হয়ে গেলো।”
” যাও থাকো তুমি তোমার কাজ নিয়ে।আমার কাছে কেন এসেছো?”
” সরি জান,প্লিজ রাগ করোনা।আচ্ছা এই দেখো আমি তোমার জন্য কি এনেছি।”
মেহেক তাকিয়ে দেখে মুগ্ধ তার জন্য তার ফ্রেবারিট চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রিম নিয়ে এসে।এটা দেখে তো মেহেকের সব রাগ পানি হয়ে যায়।মেহেক আইসক্রিম নিতে গেলে মুগ্ধ হাত সরিয়ে ফেলে।

” কি হলো এটা?দাও আমাকে।”
” না দেবোনা।”
” কেন?দাও আমি খাবো।”
” হুম খাবে তবে এভাবে না।”
” তো কিভাবে?”
আইসক্রিম প্যাকেট থেকে বের করে মেহেকের মুখে সামনে ধরে মুগ্ধ।
” এভাবে।খাও এবার।”
” আমি খেতে পারবো তো।”

” না আমি খাইয়ে দেবো।এবার তাড়াতাড়ি খাও নয়তো গলে যাবে তো।”
মেহেকও মুচকি হেসে মুগ্ধের হাত থেকে আইসক্রিম খেতে থাকে।খাওয়ার সময় মেহেকের নাকের আইসক্রিম লেগে গেলে মুগ্ধ খুব সাবধানে তা মুছে দেয়।মুগ্ধের এতো কেয়ারিং কাজ দেখে মেহেক লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে।
ফ্ল্যাসবেক এন্ড…..
” এইযে মেহুরানী,কোথায় হারিয়ে গেলো?”
সৌন্দর্যের কথায় মেহেক অতিত থেকে বেরিয়ে আসে।
” হ্যাঁ?”

” কি এতো ভাবছো তুমি?আর ওইদিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?বয়ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে বুঝি?নাকি বয়ফ্রেন্ড ছেড়ে চলে গিয়েছে?” মজা করে বলে সৌন্দর্য।
কিন্তু সৌন্দর্য তো আর জানে না আসলেই মেহেকের সাথে এরকম কিছু হয়েছে।যদি জানতো তাহলে হয়তো এরকম কথা বলতো না।সৌন্দর্যের কথায় মেহেক কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসে।
” আবার কি ভাবছো তুমি?কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো।”
মেহেক কফির কাপটা নিয়ে তাকে চুমুক দেয় আর বাইরে দেখতে থাকে।
” আচ্ছা মেহেক তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”
” বলুন।”

” আচ্ছা তুমি হঠাৎ নিজ শহর ছেড়ে এই অচেনা শহরে এলে কেন?না মানে কোন বিশেষ কারণ আছে?”
” না তেমন কিছু না।আসলে ওখানে এখন আমার তেমন কেউ নেই।বড্ড একা লাগতো ওই শহরে,তাই শহর ছেড়ে চলে এসেছি নিজের একাকিত্ব দূর করার জন্য।”
” হা…..আবার তোমার জ্ঞানী জ্ঞানী কথা।”
মেহেক কিছু না বলে কফির কাপে চুমুক দেয়।
” উহু…উহু….মেহেক।”
” জ্বি।”

” তোমার মুখে কফি লেগে আছে।নাও মুছে নাও।” একটা টিস্যু পেপার বারিয়ে কথাটা বললো সৌন্দর্য।
” এবার ঠিক আছে?”
” না এখনো আছে।”
” কোন দিকে?”
” এইতো বাম দিকে,না না এখনো আছে।একটু উপরে।”

সৌন্দর্য উপরে,নিচে,পাশে বলেই চলেছে কিন্তু মেহেক ঠিক মতো মুছতে পারছেনা।অবশেষে বিরক্ত হয়ে সৌন্দর্য নিজেই টিস্যু দিয়ে কফিটা মুছে দেয়।সৌন্দর্যের কাজে মেহেক কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে।
” খাবার সময় মুখে খাবার লাগে কেন?তুমি কি ছোট বাচ্চা?”
” হুম জানেন না আমি কিউট পিচ্চি বাচ্চা।” মজা করে বলে মেহেক।
” ওলে আমার পিচ্চি বাচ্চারে।আসো আমাকে একটু আদর করে দিয়।বাবু তুমি কি চকলেট খাবে?”
” উহু…..লাগবে না আমার চকলেট।”

এভাবেই হাসিমজা করে সময় পার করতে থাকে মেহেক আর সৌন্দর্য।এর মধ্যে মেহেক মুগ্ধ কথা ভুলে যায়।
১ সপ্তাহ পর,
আজ নতুন ভার্সিটিতে মেহেক প্রথম দিন।সৌন্দর্য,মেহেক,রিফা আর স্পর্শ আজও একসাথে ভার্সিটিতে আসে।
” বোনু মেহেকের খেয়াল রাখিস কিন্তু।ও কিন্তু এখানের কিছুই চেনেনা তাই ওকে সবসময় চোখে চোখে রাখবি।”
” আচ্ছা দাভাই।তুমি তোমার ক্লাসে যাও।মেহেককে নিয়ে চিন্তা করোনা আমি আছি তো।”
” সেই জন্যই তো বেশি চিন্তা হচ্ছে।তুই যে শয়তানি করিস।”

” দাভাই,তুমি এভাবে বলতে পারলে।” কিউট ফেস করে বলে রিফা।
” আচ্ছা যা এবার।আমিও গেলাম।মেহেক সাবধানে থেকে।”
রিফা মেহেকের হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটা গাছের নিচে এসে দাঁড়ায়।
” কিরে রিফু আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি কেন?ক্লাসে যাবিনা?”
” একটু দাঁড়া,একজনের জন্য অপেক্ষা করছি।”
হঠাৎ কেউ এসে পেছন থেকে রিফাকে জরিয়ে ধরে।
” বেপি আই এম এসে পড়েছি।”
” তোর এতো সময় লাগে আসতে।”

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৭+৮

” রাগ করিস না বেপি।আসলে সকালে উঠে দেরি হয়ে গিয়েছে।”
” দেরি তো হবেই।রাতে আরো কে-ড্রামা দেখ আর দেরি করে ঘুমা।তাহলে তো তুই আরো সকালে উঠতে পারবি।”
” ওই আমার কে-ড্রামা নিয়ে কিছু বলবিনা।আচ্ছা এটা কে?”
” ও এ হচ্ছে মেহেক।আমার ভাবীর ছোট বোন আর এখন আমার ফ্রেন্ড।মেহু এ হচ্ছে অথৈ স্টর্ট ফ্রম অথু।”
” আনেং মেহু।(হাই মেহু)”
” এই বেডি বাংলায় কথা ক।মেহু তুই ওর কথায় আবার উল্টাপাল্টা কিছু ভাবিস না।আসলে ও কে-ড্রামা দেখতে দেখতে পাগল হয়ে গিয়েছে।”
” গোয়েনচানা।(ইট’স ওকে)”

” তুইও কোরিয়ান পারিস?” অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে অথৈ।
” ওই একটু আকটু পারি।”
” বইন প্লিজ তোরা তোদের কোরিয়ান ভাষা বন্ধ করবি?আমি বাঙালি মানুষ আমি বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা বুঝিনা সো বাংলায় কথা বলবি।”
” আরাতসোও।(ওকে)” হাসতে হাসতে বলে অথৈ।

” অথু কি বাচ্ছি বাংলায় বল।বলছিনা আমি কোরিয়ান ভাষা বুঝিনা।”
” আচ্ছা আচ্ছা অথু আর কোরিয়ান বলিস না।না হলে দেখা যাবে রিফাকে এখনই মেন্টাল হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে।”
” ওকে মেহু সোনা।ওই রিফু আমার জানটা কেমন আছে রে?”
” রিফু অথু কোন জানের কথা বলছে?অথু তোরও কি বয়ফ্রেন্ড আছে?”
” আরে ও ভাইয়ার(স্পর্শ) কথা বলছে।ও তো ভাইয়া উপর ক্রাশ খেয়ে উল্টো পড়ে আছে।”
” তাই নাকি অথু?”

” হুম।” লজ্জা মাখা মুখে মুচকি হেসে বলে অথৈ।
” বাহ্ বান্ধবী তোরা কত ফার্স্ট।তা মিস্টার স্পর্শ কি জানে?”
” না না জানে না।আর ভুলেও তুই ওর সামনে এই কথা বলিস না।না হলে আমি কোনদিনও লজ্জায় স্পর্শের সামনে যেতে পারবোনা।”
” আচ্ছা এসব রাখ।আর আজ তো মেহুর আমাদের ভার্সিটিতে প্রথম দিন,চল ওকে ক্যাম্পাসটা ঘুরিয়ে দেখায়।”
এরপর অথৈ আর রিফা মেহেকের দুপাশে দুটো হাত ধরে তাকে ক্যাম্পসটা ঘুরিয়ে দেখাতে থাকে।

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ১১+১২