কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৭+৮

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৭+৮
লেখিকাঃঅনন্যা অসমি

ফোনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেক,থমথমে তার মুখ।ফোনের মধ্যে শোভা পাচ্ছে মুগ্ধ আর রিয়ার বিয়ের,বৌভাত আর তাদের হানিমুনে যাওয়ার ফটো।ছবিগুলো দেখে মেহেকের পুরোনো ক্ষতগুলো আবারো তাজা হয়ে উঠে।মেহেক যখন ছবিগুলো দেখছিল তখন আবারো ওই আইডি থেকে আরো কিছু ফটো আসে।ছবিগুলো সব সেলফি আর তা তুলেছে রিয়া।ছবিগুলোতে মুগ্ধ ঘুমাচ্ছে আর রিয়া ছবি তুলছে।মেহেকের বুঝতে দেরি হলোনা যে এটা আর কেউ না বরং রিয়া।

মেহেক চিন্তায় করতে পারছেনা যে কোন বন্ধু এমনো হতে পারে।মেহেক বিশ্বাসই করতে পারছেনা যে এই মেয়েটা একসময় তার কাছের বন্ধু ছিল।কথাটা সত্য আসলেই মানুষ পরিবর্তনশীল,সময়ের সাথে সাথে মানুষের চরিত্রও পালটে যায়।একটা ছবিতে মেহেকের চোখ আটকে যায়।ছবিটাতে মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মেহেকের মনে পড়ে এই মানুষটা তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে,তার সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য কারোর সাথে সংসার করছে সে।হঠাৎই মেহেকের মুখ কঠিন হয়ে উঠে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সে দাঁতে কিড়মিড় করতে করতে আইডিটা প্রথমে ব্লক করে তারপর একাউন্টটাই ডিলিট করে দেয়।একাউন্ট ডিলিট করার পর মেহেক অনেক শান্তি শান্তি লাগছে কারণ এই একটা মাত্রই পথ ছিল যার মাধ্যমে রিয়া আর মুগ্ধ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারতো।কারণ ইতিমধ্যেই মেহেক তার আগের সিম বদলে নতুন সিম নিয়েছে।ফোনটা একপাশে রেখে কার্বাড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে শাওয়ার নেওয়ার জন্য চলে যায় মেহেক।

প্রায় ১ ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে মেহেক।তার চোখমুখ ফোলা ফোলা যার অর্থ মেহেক কান্না করেছে।আসলে মেহেক অনেক চেষ্টা করেছে কান্না না করার জন্য কিন্তু বেহায়া মন তো আর তা বোঝেনা।
” কেন আমি মুগ্ধের কথা ভুলতে পারছিনা?কেন?সে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে,আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।সে মিথ্যুক,ছলনাময়ী মানব,সে বিশ্বাঘাতক।না আমাকে ওর কথা ভুলতে হবে যেভাবেই হোক ভুলতেই হবে।ও যদি আমাকে ভুলে মুভ অন করতে পারে,তাহলে আমিও পারবো।পারতে হবে আমাকে।” আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেকে কথাগুলো বলে মেহেক।

বারান্দায় বসে একমনে কিছু ভাবছে মেহেক।হঠাৎ সে শুনতে পাই কেউ তার দরজায় কড়া নাড়ছে।
” মৃদু এই মৃদু?”
” আসছি আপুনি।”
মেহেক দরজা খুলে দেখে তার বোন দাঁড়িয়ে আছে।
” কিরে কফি দিয়ে আর নিচে নামলিনা কেন?খাবার খাবি না নাকি?”
” হুম আসছি,তুই যা।”
” হুম তাড়াতাড়ি আয়,তোর দুলাভাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
সৃষ্টি চলে যায়।মেহেক কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর উঠে নিচে চলে যায়।নিচে এসে মেহেক দেখে অলরেডি সবাই চলে এসেছে।

” আরে শালিকা যে,এসো এসো।কতদিন পর তোমার সাথে দেখা।”
” কেমন আছেন দুলাভাই?”
” আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো সেটা বলো।”
” আমিও ভালো আছি।”
” গুড।আচ্ছা বসো বসো খেয়ে নাও।সৃষ্টি মেহেকে খাবার দাও।”
” হ্যাঁ দিচ্ছি।মৃদু তুই বস।”

মেহেক পুরো টেবিলে চোখ ঘুড়িয়ে দেখে শুধু দুটো চেয়ার খালি আছে।একটা তার দুলাভাইয়ের পাশে অপরটা স্পর্শের সামনে বা বলা যায় সৌন্দর্যের পাশে।কোন উপায় না পেয়ে মেহেক সৌন্দর্য পাশে বসে পড়ে।মেহেককে দেখে সৌন্দর্য একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়,তার বিনিময়ে মেহেকও একটা কিউট স্মাইল দেয়।চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই মেহেকের চোখ আটকে যায় স্পর্শের উপর।মেহেক স্পর্শের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয় কিন্তু স্পর্শ সৌন্দর্যের মতো না হেসে উল্টো চোখ নামিয়ে খাবার খেতে থাকে।স্পর্শের এই বিহেভে মেহেক অনেকটা অপমান বোধ করে।

” হু….ঢং।কি হতো একটু হাসলে?হাসলে কি ওনার দাঁত খুলে পড়ে যাবে?নাকি ওনার হলুদ দাঁত দেখা যাবে?আরে হ্যাঁ এটাও তো হতে পারে উনি হলুদ দাতঁ দেখানোর ভয়ে হাসছেন না।এরকম হলে তো…..হাহাহা….” মনে মনে এসব কথাগুলো ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে মেহেক।

” কিরে মেহু এভাবে নিজে নিজে হাসছিস কেন?ভুতে ধরেছে নাকি?” পাশ থেকে ফিসফিস করে কথাটা বলে রিফা।
রিফার কথায় হাসি বন্ধ করে চুপচাপ খাবার খেতে থাকে মেহেক।খাবার শেষ হলে সবাই যে যার কাজে চলে যায়।সৌন্দর্য আর স্পর্শ চলে যায় ভার্সিটি আর রিফা তার রুমে চলে আসে।মেহেক রুমে না গিয়ে বরং তার বোনকে সাহায্য করছে।থালাবাসন ধোঁয়া হলে মেহেক তার বোনকে বলে—

” আপুনি শোন,তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
” হ্যাঁ বল।”
” আপুনি আমি এখানে বেড়াতে আসিনি।আমি একেবারে ঢাকা চলে এসেছি।”
” হুম।”
” মানে আমি এখর ঢাকা শহরে থাকবো আর এখানেই পড়াশোনা করবো।”
” হুম।তারপর?”
” তারপর মানে?তুই এমনভাব বলছিস যেন তুই আগে থেকে জানতিস।”

” জানতাম না তবে আন্দাজ করেছিলাম।তুই চিন্তা করিস না আমি তোর দুলাভাই আর আমার শশুড়-শাশুড়ীর সাথে কথা বলে নিয়েছি।তুই এখানে থেকেই পড়াশোনা করতে পারিস।তোর দুলাভাই এতে আরো খুশি হয়েছে।”
” আমি তোদের এখানে বেশিদিন থাকবোনা আপুনি।আমি খুব তাড়াতাড়ি একটা বাসা খুঁজে সেখানে শিফট হয়ে যাবো।”
” বেশি কথা বলিস না।এখানে তুই কিছুই চিনিস না।তাই বলছি কয়েকমাস আমাদের এখানে থাক তারপর বাকিসব চিন্তা করিস।”

মেহেক আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে।
বিকেলবেলা,
বারান্দায় বসে উপন্যাসের বই পড়ছে মেহেক।সে বই পড়তে এতোটায় মগ্ন ছিল যে খেয়ালই করেনি তার পেছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
” ভাউ…….”
” আ…..” চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায় মেহেক।
মেহেক পেছন ফিরে দেখে রিফা তার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।
” রিফুনি……এভাবে কেউ ভয় দেখায়?আ….কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।”
” হাহাহাহা…..ভীতু মেহু।এতে কেউ ভয় পাই নাকি?”
” কেউর টা জানিনা তবে আমি ভীষণ ভয় পেয়েছি।আরেকটু হলে তো মনে হয় আমার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যেতো।”
” হাহাহা…..ভীতু মেয়ে।তা এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছিলিস?”
” বই পড়ছিলাম আর কিছুনা।”

” আচ্ছা চল।”
” কোথায়?”
” শপিংয়ে যাবো।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
” আমি যাবোনা।তুই যা।”
” চুপ।কোন কথা না।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”
মেহেককে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রিফা চলে যায়।মেহেকও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রেডি হতে থাকে।
অন্যদিকে,

রিফা এসে সৌন্দর্যের দরজার সাথে পায়চারি করছে।রিফা যখনি ঘুরে সৌন্দর্যের দরজায় টোকা দিবে তার আগেই দরজা খুলে সৌন্দর্য বেরিয়ে আসে।সৌন্দর্যকে দেখে রিফা সেখান থেকে চুপিচুপি কেটে পড়তে নিয়ে সৌন্দর্য তাকে থামিয়ে নেয়।
” কিরে বোনু কি হয়েছে?” কিছুটা গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে সৌন্দর্য।
” না কিছুনা।” জোরপূর্বক হেসে রিফা বলে।
” বোনু সত্যি করে বলতো কি চাই তোর?”
” ওই আসলে দাভাই মানে……”

” এতো মানে মানে না করে সোজা সোজা বল কি চাই তোর?” মোবাইলের দিকে তাকিয়ে।
” আসলে আমি একটু শপিংয়ে যাবো।তুমি যাবে আমার সাথে।”
” না আমার সময় নেই।কাজ আছে আমার।”
” প্লিজ দাভাই চলোনা প্লিজ প্লিজ।দেখো আমরা দুটা একা মেয়ে।ফিরতে যদি রাত হয়ে যায় তখন?”
” দুটা একা মেয়ে মানে?দুজন কোথা থেকে এলো?তোর সাথে আর কেউ যাচ্ছে নাকি?”
” হুম মেহু যাচ্ছে তো।ও বেচারি একা বাসায় কি করবে?তাই ওকেও নিয়ে যাবো।”
সৌন্দর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা চিন্তা করে।

” আচ্ছা যা তৈরি হয়ে নে।বের হওয়ার আগে আমাকে ডেকে দিস।”
” ও থ্যাঙ্ক ইউ দাভাই।ইউ আর সো সুইট।”
” হয়েছে হয়েছে আর এতো মাখন লাগাতে হবেনা।”
” তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে দাভাই।তুমি তো আমার মিষ্টি দাভাই তোমাকে কি আমি মাখন লাগে পারি?তুমিই বলো?”

” হয়েছে হয়েছে এবার যা।দেরি হলে কিন্তু আমি যাবোনা।”
” এই না না আমি যাচ্ছি।” বলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে রিফা।
রেডি হয়ে ড্রয়ংরুমে বসে সৌন্দর্যের জন্য অপেক্ষা করছে মেহেক আর রিফা।বিগত ১৫ মিনিট যাবৎ তারা অপেক্ষা করে যাচ্ছে তবে সৌন্দর্যের কোন খবর নেই।অবশেষে আরো ৫ মিনিট পর সৌন্দর্য এলো।
” এতোক্ষণে তোমার আসার সময় হলো।হা…..চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
” হুম চল।”
তারা তিন বের হবে সেই সময় কেউ তাদের উদ্দেশ্য বলে—

” কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”
” কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”
সৌন্দর্য,মেহেক আর রিফা পেছন ফিরে দেখে স্পর্শ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
” আমরা শপিংয়ে যাচ্ছি ভাইয়া।”
স্পর্শ একপলক মেহেকের দিকে তাকিয়ে তারপর বলে,
” ও তাহলে চলো আমি তোমাদের ড্রপ করে দিচ্ছি।”
” ঠিক আছে ভাইয়া চলো।”

রিফা স্পর্শের হাত ধরে তাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে।
” দাভাই মেহু নিয়ে আসো তুমি।” যেতে যেতে বলে রিফা।
” চলো মেহুপাখি।” আলতো হেসে মেহেককে বলে সৌন্দর্য।

সৌন্দর্যের মুখে “মেহুপাখি” নামটা শুনে কেঁপে উঠে মেহেক।সে নীরবে সৌন্দর্যের সাথে নিচে নেমে আসে।
গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে স্পর্শ আর তার পাশে বসেছে সৌন্দর্য।পেছনে বসেছে মেহেক আর রিফা।গাড়ি চলতে শুরু করে।রিফা আর সৌন্দর্য মোবাইল টিপছে,স্পর্শ নিজের মতো গাড়ি চালাচ্ছে আর মেহেক বাইরের দৃশ্য দেখছে।কিছুক্ষণ পর হঠাৎই কি মনে করে যেন মেহেক গাড়ির লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাই।লুকিং গ্লাসে তাকানোর পরেই মেহেকের চোখ পড়ে সৌন্দর্যের চোখের দিকে।সৌন্দর্য তার দিকেই তাকিয়ে আছে।এটা দেখে মেহেক তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারো বাইরে তাকাই।অন্যদিকে গাড়ি চালানোর ফাঁকে স্পর্শও একপলক মেহেককে দেখে নেয়।

কিছু সময় পর গাড়ি এসে থামে শপিংমলের সামনে।একে একে সৌন্দর্য,মেহেক আর রিফা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।
” ভাইয়া তুমিও আসো আমাদের সাথে।” স্পর্শকে বলে রিফা।
” না তোরা যা,আমার কিছু কাজ আছে।ভাইয়া তুমি ওদের খেয়াল রেখো কিন্তু।”
” তুই চিন্তা করিস না।আমি আছি তো।”
স্পর্শ আর কোন কথা না বলে গাড়ি নিয়ে চলে যায়।রিফা আগে আগে হাঁটছে আর তার পেছন পেছন হাঁটছে মেহেক আর সৌন্দর্য।কিছুদূর হেঁটেই মেহেক হাঁপিয়ে যায়।সে এই দুই ভাই-বোনের সাথে হাঁটতে পারছেনা কারণ তারা দুজনই খুব তাড়াতাড়ি হাঁটছে।অনেকটা পথ হাঁটার পর রিফা একটা দোকানে ঢুকে।যেহেতু ওটা ফিমেইল শপ ছিল তাই সৌন্দর্য বাইরেই দাঁড়িয়ে রইলো।

রিফা একটা একটা করে জামা দেখছে কিন্তু কোনটাই তার পছন্দ হচ্ছেনা।
” মেহু একটা জামা চয়েজ করে দেতো।”
” আমি কি চয়েজ করবো?আমার চয়েজ ভালো নারে।”
” সেটা পরে দেখা যাবে আগে চয়েজ তো কর।”
অনেক ঘটাঘাটির পর একটা পারপেল কালারের ড্রেস পছন্দ করে মেহেক।
” ওয়াও মেহু তুই তো খুব সুন্দর ড্রেস পছন্দ করেছিস।আমি তো এটাই নেবো।”

রিফা ড্রেসটা প্যাক করতে চলে যায়।মেহেক ঘুরে ঘুরে শপটা দেখছে তখন হঠাৎ তার চোখ যায় শপের বাইরে।সৌন্দর্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কয়েকটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।এটা কেন যেন মেহেকের পছন্দ হলোনা।সে দ্রুতটা দোকান থেকে বেরিয়ে আসে।কিন্তু মেহেকের পৌঁছানোর আগে মেয়েগুলো চলে যায়।মেহেক তাড়াতাড়ি এসে সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়ায়।মেহেকে দেখে সৌন্দর্য আলতো হেসে তাকে জিজ্ঞেস করে,

” শপিং করা শেষ?”
” আপনার সাথে মেয়েগুলো কে ছিলো?”
” আরে ওরা।ওরা তো আমার ক্লাসমেট ছিলো।”
” তো এতো হেসে হেসে কি কথা বলছিলেন?” হালকা অভিমান নিয়ে প্রশ্ন করে মেহেক।
” আরে তেমন কিছু না।বাই দ্যা ওয়ে তুমি এভাবে জিজ্ঞেস করছো কেন?”
” কিছুনা।”
” কিরে মেহু তুই এখানে।আর আমি তোকে দোকানের ভিতর খুঁজে বেড়াচ্ছি।”
মেহেক কিছু বললোনা।রিফা আবারো হাঁটতে শুরু করে।এবারো মেহেক আর সৌন্দর্য তার পেছন পেছন হাঁটছে।
” তুমি কি জেলাস মেহু রাণী?”
” হ্যাঁ?”

মেহেক চট করে পাশে ফিরে তাকাই।কিন্তু না সৌন্দর্য তো একমনে মোবাইল টিপছে।তাহলে কি সে ভুল শুনেছে?
” আমি কি ভুল শুনলাম?কিন্তু আমি তো স্পষ্ট শুনেছি যে উনি বললো আমি কি জেলাস?কিন্তু উনি তো মোবাইল টিপছে।ধুর হয়তো আমিই ভুল শুনেছি।আর আমি জেলাস হবো কেন?উনি কি আমার সম্পত্তি নাকি?ওনার সাথে যে কেউ কথা বলতে পারে,এতে এতো চিন্তার কি আছে?”
এসব বলে নিজে বুঝ দিলো মেহেক।সে এবার কিছুটা এগিয়ে গিয়ে রিফার সাথে হাঁটতে থাকলো।এদিকে মেহেক সামনে চলে গেলো ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মুচকি হাসে সৌন্দর্য,যা মেহেক খেয়াল করেনি।
ট্রাইয়েল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রিফার জন্য অপেক্ষা করছে মেহেক আর সৌন্দর্য।তখন একটা মেয়ে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়।

” আরে তুমি মেহেক না?”
মেহেক একবার ভালো করে মেয়েটাকে পরখ করে নেয়।
” জ্বি আমি মেহেক।কিন্তু….. ”
” আরে আমি স্নিগ্ধা।ভুলে গেলে।কলেজে তোমার সাথেই তো পড়েছি।”
কিছুক্ষণ চেষ্টা করার পর মেহেকের মনে পড়ে।
” আরে স্নিগ্ধা,মনে পড়েছে।কেমন আছো তুমি?”
” আমি তো বেশ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হলো।”
” আলহামদুলিল্লাহ,আমিও ভালো আছি।হুম বেশ অনেক দিন পর তোমার সাথে দেখা হলো।”
” তো উনি কে?তোমার ভাই নাকি?”

মেহেক একবার সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।ভাই শব্দটা শুনে সৌন্দর্যও ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে মেহেকের দিকে তাকাই।
” না উনি আমার ভাই না আমার বোনের দেবর উনি।”
” ও আচ্ছা।তো মেহেক মুগ্ধ কোথায়?তোমার সাথে আসেনি নাকি?”
মুগ্ধের কথা শুনে মেহেক বুক ধক করে উঠে।সে ভীত দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।
” তোমরা কথা বলো আমি একটা কল এটেন্ড করে আসছি।”
সৌন্দর্য সেখান থেকে চলে যায়।সৌন্দর্য চলে যেতেই মেহেক হাফ ছাড়ে।

” কিরে মেহেক বললে নাতো মুগ্ধের কথা।ও কোথায়?”
” মুগ্ধ এখানে নেই।উনি চট্টগ্রামে ওনার পরিবারের সাথে আছে।”
” ও আচ্ছা।তুমি কি এখন এখানে থাকো নাকি?”
” না বেড়াতে এসেছি।”
” ও আচ্ছা।আচ্ছা আমি যাই ভালো থেকো।তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।”
” আমারো তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।”
স্নিগ্ধা নামের মেয়েটা চলে যায়।তার কিছুক্ষণ পর রিফাও বেরিয়ে আসে।

” এতোক্ষণ লাগে তোর ড্রেস ট্রাই করতে?”
” আরে বইন রাগ করিস না।চল এখন।”
শপিং শেষ করে দোকান থেকে বেরিয়ে রিফা আর মেহেক সৌন্দর্যের কাছে এসে দাঁড়ায়।
” এতোক্ষণে বের হলেন তাহলে আপনারা।”
” এভাবে বলছো কেন?”
” তো কি করবো?১ ঘন্টা যাবৎ আমি তোদের জন্য অপেক্ষা করছি।”
” আচ্ছা চলো চলো।”
মেহেক আর রিফা আগে আগে হাঁটছে আর সৌন্দর্য তাদের পেছন পেছন।
” বোনু শোন।”

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৫+৬

রিফা আর মেহেক দাঁড়িয়ে পড়ে।
” এদিকে আয় তো।কথা আছে।”
রিফা এসে সৌন্দর্যের পাশে দাঁড়ায়।
” তুমি হাঁটো আমরা আছি তোমার পেছনে।” মেহেককে বলে সৌন্দর্য।
মেহেক একা একা হাঁটতে থাকে।কিছুসময় পর মেহেক পেছন ফিরে তাকাই কিন্তু পেছন ফিরতেই সে ঘাবড়ে যায়।কারণ তার পেছন না সৌন্দর্য আছে আর না রিফা।মেহেক এদিক-ওদিক তাকিয়ে দুজনকে খুঁজতে থাকে কিন্তু দুজনের একজন কেউ সে দেখতে পাইনা।হঠাৎ মেহেকের মনে পড়ে তার কাছে তো রিফার নম্বর আছে।মনে পড়তেই মেহেক চটজলদি রিফাকে ফোন দেয়।প্রথম বার রিং হয়ে কেটে যায় কিন্তু মেহেক আবারো ফোন দেয়।

” কিরে মেহু কি হয়েছে?”
” কি হয়েছে মানে?তোরা কোথায়?আমাকে একা রেখে কোথায় গেলি?”
” আরে আমরা আশেপাশেই আছি।”
” তাহলে আমাকে একা রেখে চলে গেলি কেন?আমাকেও সাথে নিয়ে যেতি।যদি আমি হারিয়ে যায়।”
” আরে বাবা হারিয়ে যাবিনা।শোন তুই এখন যেখানে আছিস ওখানেই দাঁড়িয়ে থাক আমরা কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।ওকে?এখন রাখ।”
মেহেককে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয় রিফা।কি আর করার মেহেক বেচারিও একা একা সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো।

রিফা আর সৌন্দর্য গিয়েছে ১ ঘন্টার কাছাকাছি সময় হবে কিন্তু এখনো তাদের আসার কোন দেখা নেই।মেহেকের একা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছেনা।সময় কাটানোর জন্য উপায় না পেয়ে মেহেক ফোনে এঞ্জেলা গেইম খেলতে থাকে।মেহেক নিজের মনের মতো গেইম খেলছে হঠাৎ পেছন থেকে কেউ এসে আচমকা তাকে জরিয়ে ধরে যার কারণে ঘাবড়ে গিয়ে মেহেকের হাত থেকে তার ফোন নিচে পড়ে যায়।

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৯+১০