কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৫+৬

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৫+৬
লেখিকাঃঅনন্যা অসমি

ড্রয়ংরুমে রিফার সাথে বসে আছে মেহেক।সে আসতে চাইনি তবে রিফা তাকে জোর করে নিচে নিয়ে এসেছে।
” শোনো আমি আবার কাউকে আপনি করে বলতে পারিনা সো আমি তোমাকে তুমি করেই বলছি।”
” ঠিক আছে আপু।”
” ধুর রাখোতো আপু।নাম ধরে ডাকো,আমার নাম অনুজা রিফা।”
” আচ্ছা।”
” হুম।তো তোমাে পুরো নাম কি?আমি তো ভালো করে তোমার নাম জানিনা।”
” মৃদুলা মেহেক।”
” বাহ্ খুব সুন্দর নাম।আমি তোমাকে মেহু বলে ডাকবো,ওকে?”
” হুম।”
” খালি হুম হুম করো কেন?আমার সাথে এইসব হু হা চলবেনা।আমি খুব পকর পকর করি তাই তোমাকেও করতে হবে।”
” আচ্ছা।”

” ধুর।আচ্ছা এবার বলো তো তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?”
” এবার অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।”
” কি বলো?আমিও তো অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারেে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।ওয়াও…..তার মানে আমরা ক্লাসমেট।তাহলে তো আমি তুমি না তুই করে বলবো।আর শোন তুইও তুই করে বলবি।”
” আচ্ছা।”
” ধুর মরা,খালি আচ্ছা আর হুম করে।অন্যকিছুও বল।”
” কি বলবো?”
” আচ্ছা এটা বল তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?”
রিফার কথা শুনে মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।
” কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”
” উহু….কিছু না।”
” নেই নাকি?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” না নেই।আপনার….না মানে তোর আছে?”
” হুম আছে।” লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে রিফা।
” তা কে সে?”
” তার নাম হচ্ছে ইভান।”
” বাড়িতে জানে?”
” না আমরা যে প্রেম করি তা বাড়িতে জানেনা তবে ইভানকে বাড়ির সবাই চেনে।”
” তা কিভাবে?”
” আরে ইভান আব্বু বন্ধুর ছেলে।”
” তো তোর ইভান কি করে এখন।”
” সে পড়াশোনা করছে এখনো।মেডিকেল স্টুডেন্ট, ফোর্থ ইয়ারে আছে এখন।আর হ্যাঁ ইভান ভাইয়ার(স্পর্শ) বন্ধুও।”
” ও আচ্ছা।”

মেহেক আর রিফা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।কথা বলতে বলতে বিকেল হয়ে গেলো কিন্তু রিফার কথা শেষ হলোনা।হঠাৎ বেল বেজে উঠে।রিফা মেহেককে বসতে বলে দরজা খুলে দেয়।দরজার খোলার সাথে সাথে মেহেক হালকা একটা চিৎকারে শব্দ শুনতে পাই।
” দাভাই…….”
ততক্ষণে মেহেক বোন সৃষ্টি আর তার বোনের শাশুড়ীও নিচে চলে এসেছে।
” কিগো ননদীনি হঠাৎ এভাবে চিৎকার করলে কেন?”
” ভাবী দাভাই এসেছে।” দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উওর দেয় রিফা।
” ও সৌ এসেছে।ওকে ভিতরে আসতে দাও অনু।বেচারা অনেক দূর থেকে এসেছে।”
রিফার তার দাভাইয়ের হাত ধরে তাকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে।

” দাভাই দেখো আমাদের বাড়িতে কে এসেছে।”
মেহেক এতোক্ষণ ফোনে কিছু করছিল,রিফার কন্ঠ শুনে সে রিফার দাভাইয়ের দিকে তাকাই।কিন্তু রিফার দাভাইকে দেখে মেহেক ছোটখাটো একটা ঝটকা খায় কারণ রিফার দাভাই মানে তার বোনের আরেক দেবর আর কেউ নয় বরং সৌন্দর্য।সৌন্দর্যও মেহেকে দেখে আশ্চর্য হয়।
” আপনি!”
” তুমি!”
একসাথে বলে উঠে মেহেক আর সৌন্দর্য।তারা দুজন যে দুজনকে আশা করি তা তাদের রিএকশেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
” দাভাই এ হচ্ছে মেহু ভাবীর ছোট বোন আর আমার নতুন বান্ধবী।”
” হ্যালো বেয়াইন সাহেবা।”
” হ্যালো।”

” অনুু সৌ কে এখন ছেড়ে দাও ওরা পরেও পরিচিত হতে পারবে।সৌ তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নাও।অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো।” বলে সৃষ্টি।
” জ্বি ভাবী।”
জ্বি বলে সৌন্দর্য চলে তো যাচ্ছে তবে তার চোখ এখনো মেহেকের উপর বিদ্যমান আর মেহেকও অবাক চোখে সৌন্দর্যে দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ” যদি সৌন্দর্য এই বাড়ির ছেলে হয় তাহলে সৌন্দর্যের বাড়িতে আসতে এতোক্ষণ কেন লাগলো?সে আর সৌন্দর্য তো একসাথে ঢাকায় এসেছিল।তাহলে সৌন্দর্য দেরি করো কেন এলো?”

” কিরে মেহু কি ভাবছিস?”
” আচ্ছা উনি কে হয় তোর?”
” আরে এটা আমার দাভাই মানে আমার মেঝো ভাই।”
” তোরা কয় ভাই বোনরে?”
” কেন তুই জানিস না?”
” না,বলনা।”
” আমরা তো ৩ ভাই আর ১ বোন।বড় ভাইকে তো তুই চিনিস তোর জিজু লাগে।আর এখন যাকে দেখলি সে হলো আমার মেঝো ভাই আর দুপুরে যাকে দেখেছিস সে হলো ছোটভাইয়া।”
” ও আচ্ছা।”
” আচ্ছা মেহু চল ছাদে চল।”
” ছাদে কেন?”

” ঘরে আর ভালো লাগছেনা,চল ছাদ থেকে ঘুরে আসি।তুই তো আমাদের ছাদ দেখিসনি।চল চল।”
রিফা মেহেকের হাত ধরে তাকে টেনে ছাদে নিয়ে আসে।ছাদটা দেখে মেহেকের মন ভালো হয়ে যায়।ছাদটা বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে খুব সুন্দর করো সাজানো।প্রত্যেকটা গাছে ৩/৪ টা করে ফুল ফুটে আছে।আর ছাদের দুপাশে আছে দুটো দোলনা।
” মেহু তুই একটু দাঁড়া আমি কাপড় গুলো বাসায় রেখে আসছি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”

রিফা কাপড় গুলো নিয়ে নিচে নেমে যায়।মেহেক হেঁটে হেঁটে ফুলে গাছগুলো দেখছে।হঠাৎ মেহেকের চোখ যায় ছাদের কর্নারে।কেউ দাড়িয়ে আছে সেখানে আর কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।মেহেক উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে আসলে লোকটা কে তবে মেহেককে বেশি কষ্ট করতে হয়নি তার আগেই লোকটা মেহেকের দিকে ফিরে তাকাই।লোকটাকে দেখে মেহেকের হার্ট এক সেকেন্ডের জন্য ধক করে উঠে।লোকটা আর কেউ নয় বরং স্পর্শ।স্পর্শ মেহেকের দিকে একপলক তাকিয়ে আবারো কথা বলতে বলতে নিচে চলে যায়।স্পর্শের গম্ভীর ভাব দেখে মেহেকের খুব আজব লাগছে।

” কি এটিটিউটরে বাবা।ওনার থেকে তো ওনার বড় ভাই সৌন্দর্য ডের ভালো আছে।এসেছি পর্যন্ত মনে হয়না দুদন্ড কথা বলতে শুনেছি।” নিজে নিজে বলে মেহেক।
মেহেক দোলনায় বসে দোল খেতে থাকে।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ একজোড়া হাত এসে মেহেকের চোখ চেপে ধরে।হঠাৎ এরকম কিছু হওয়াতে মেহেক ঘাবড়ে যায়।
” কে?”
মেহেকের কন্ঠ শুনে লোকটা মেহেকের চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।হাত সরতেই মেহেক দোলনা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে।মেহেক পেছনে ফিরে দেখে সৌন্দর্য কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

” সরি সরি মেহেক আমি ভেবেছিলাম বোনু,তাই আরকি।”
” সমস্যা নেই মিস্টার সৌন্দর্য।”
” চলো বসে কথা বলি।”
মেহেক আর সৌন্দর্য দোলানায় বসে।মেহেক যথাসম্ভব সৌন্দর্য থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।
” তাহলে ভাবীই তোমার সেই বোন।”
” হুম।”
” ভাবীর একটা বোন আছে শুনেছিলাম কিন্তু কখনো দেখিনি।তাই তোমাকে চিনতে পারিনি।তুমি কি আমাকে চিনেছিলে?”
” না।আমিও আগে কোনদিন আপনাদের দেখিনি।আমি দুলাভাইকে ছাড়া আপনাদের পরিবারের আর কাউকে তেমন একটা চিনিনা।”

” আচ্ছা।তা তুমি কি সবসময় এরকম চুপচাপ থাকো নাকি আমার সাথেই চুপ করে থাকো।”
” না তেমন কিছুনা।”
” হুম।আচ্ছা তুমি হঠাৎ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এলে কেন?এর আগে তো কখনো আসোনি।”
” আছে কিছু কারণ।সময় হলে একদিন জানতে পারবেন।” মুচকি হেসে বলে মেহেক।
” তুমি বড়ই রহস্যজনক একটা মানুষ।”
সৌন্দর্যের কথা শুনে মেহেক আবারো মুচকি হাসে।সে ভাবতে থাকে,
” আসলেই কি আমি রহস্যময় মানুষ?তাহলে তো মুগ্ধ আর রিয়া আমাকে নয় আমি ওদের ঠাকাতাম।কিন্তু এরকম তো কিছুই হয়নি।উল্টো ওরা আমাকে ঠকিয়েছে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে।”

” কি হলো মেহেক?কোথায় হারিয়ে গেলে?”
” কিছুনা।আচ্ছা আপনি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেন?”
” হুম বেসেছি তো আর এখনো বাসি।”
” ও আচ্ছা তার মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।”
মেহেকের কথা শুনে চুলে হাত দিয়ে মুচকি হাসে সৌন্দর্য।সৌন্দর্যের হাবভাবে দেখে মেহেক তার উওর পেয়ে যায়।সে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।
” জানেন মিস্টার সৌন্দর্য ভালোবাসা হচ্ছে কাশফুলের মতো।”
” তা কিভাবে?”

” কাশফুলের যেমন শুধু শরৎকালে দেখা মেলে তেমনি সত্যি কারের ভালোবাসাও দেখা মেলে ভাগ্য থাকলে।কাশফুল যেমন শুভ্র,ভালোবাসাটাও সেইরকম শুভ্র,স্বচ্ছ।”
” তোমার এই জ্ঞানী জ্ঞানী কথাগুলো বাবা আমার এই ছোট মাথায় ঢুকছেনা।তবে তোমার কথাগুলো শুনে ভালোলাগলো।”
মেহেক প্রতিউত্তরে কিছু বলেনা।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবারো তার জীবন নাম বইয়ের আগে শেষ করে আসা পৃষ্টা গুলো মনে করতে থাকে।
চুল খোঁপা করতে করতে নিচে নামছে মেহেক।সে আশেপাশে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।রান্নাঘরে গিয়ে মেহেক দেখে তার বোন সৃষ্টি রান্না করছে।মেহেক গিয়ে সৃষ্টির পাশে দাঁড়ায়।

” কি রান্না করছিস আপুনি?”
” আরে মৃদু তুই উঠে পড়েছিস।কি খাবি বল?তোর পছন্দের নাস্তা বানাবো?”
” না এতো কিছু করতে হবেনা।তুই প্রতিদিন যা বানাস তাই বানা।আচ্ছা দুলাভাই কোথায় রে?কাল দেখলাম না।”
” আরে তোর দুলাভাইয়ের কাল আসতে একটু লেট হয়েছে।হসপিটালে একটা অপারেশন ছিল।”
” ও আচ্ছা।তো দুলাভাই এখন কোথায়?”
” তোর দুলাভাই এখনো ঘুম।আচ্ছা শোন না মৃদু একটা কাজ করে দেনা বোন।”
” এভাবে বলছিস কেন আপুনি?তুই বল কি করতে হবে আমি এখুনি করে দিচ্ছি।”
” তুই এই কফির কাপ দুটো একটু উপরে দিয়ে আসবি?আসলে আমিই যেতাম কিন্তু তোর দুলাভাই আবার বের হবে কিছুক্ষণ পর,ওর খাবার বানাতে হবে।”

” আচ্ছা ঠিক আছে আমি দিয়ে আসছি।কিন্তু কার কার ঘরে দেবে?”
” একটা দিবি সৌ এর ঘরে আরেকটা আদুর ঘরে।”
” এরা আবার করা?”
” আরে সৌ মানে সৌন্দর্য আর আদু মানে স্পর্শ।”
” ও আচ্ছা আগে বলবি তো।”
” আচ্ছা যা এবার।ওরা সকালে কফি টাইমলি না পেলে আবার রেগে যায়।”
” হুম যাচ্ছি।দে কফির মগগুলো।”

কফির মগগুলো নিয়ে মেহেক আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকে।উপরে উঠে সে দ্বিধায় পড়ে যায় প্রথমে সে কার রুমে যাবে।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক ঠিক করে সে প্রথমে স্পর্শের রুমে যাবে তারপর সৌন্দর্যের রুমে।মেহেক ধীর পাশে স্পর্শের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।সে ভাবতে থাকে নক করবে কি করবেনা।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক দরজা নক করার জন্য হাত উঠাতেই সে খেয়াল করে তার দুটো হাতেই কফির মগ।আশেপাশে তাকিয়ে মেহেক একটা ছোট টেবিল দেখতে পাই।মেহেক সৌন্দর্যের মগটা টেবিলটাতে রেখে দরজায় নক করে।দরজা নক করার কিছুক্ষণ পর স্পর্শ দরজা খুলে দেয়।স্পর্শকে একবার উপর থেকে নিচে পড়ক করে নেয় মেহেক।ব্ল্যাক কালারের একটা টিশার্ট পড়েছে আর সাথে হাটুর সমান একটা প্যান্ট।অর্ধেক মুখে তার শেইভিং ক্রিম লাগালো,হয়তো শেইভ করেছিল স্পর্শ।স্পর্শের এই অদ্ভুত লুক দেখে মেহেক অনেক কষ্টে নিজের হাসি আঁটকে রেখেছে।

” কি হলো হাসছো কেন?” গম্ভীর কন্ঠে বলে স্পর্শ।
” কই নাতো।” হাসি আঁটকে বলে মেহেক।
” এখানে তোমার কাজ কি?”
” ওই আসলে কফি দিতে এসেছিলাম।”
স্পর্শ একবার মেহেকের হাতের দিকে দেখে।হঠাৎ করেই স্পর্শের ভ্রু-কুচকে উঠে।
” তোমাকে কফি কে আনতে বলেছে?”
” আপুনি পাঠিয়েছে আসলে….”
” এটা আমার মগ না।এটা মেঝো ভাইয়ার মগ।”

এটা শোনার পর মেহেক পাশের টেবিলে রাখা মগটার দিকে তাকাই।স্পর্শও মেহেকের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাই এবং নিজের মগটাকে দেখতে পাই।কফির মগটা তুলে নিয়ে একবার মেহেকের দিকে তাকাই স্পর্শ।অতঃপর তার মুখের উপর ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে মেহেক চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ খুলে মেহেক।

” হু…..কি এটিটিউট।অভদ্র ছেলে কোথাকার।” মুখ ভেঙিয়ে আস্তে আস্তে কথাগুলো বলে মেহেক।
স্পর্শের রুমের সামনে থেকে সরে এসে মেহেক সৌন্দর্যের রুমের সামনে দাঁড়ায়।দরজায় টোকা দেওয়া পরেও যখন কেউ দরজা খোলে না তখন মেহেক দরজাটা একটা ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দেয়।ভেতরে কাউকে দেখতে না পরে মেহেক আস্তে করে ঢুকে পড়ে।কফির কাপটা টেবিলে রেখে যখনি মেহেক চলে আসতে যাবে তখনি তার চোখ পড়ে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলটাতে থাকা ছবির ফ্রেমটায়।মেহেক ফ্রেমটা উঠে নিয়ে।ফ্রেমে সৌন্দর্যের ছবি লাগানো আছে।সৌন্দর্যের পড়নে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি,সাথে সাদা পায়জামা।পায়ে ব্ল্যাক কালারের জুতা,হাতে মেন’স ওয়াস আর সেই সাথে মুখে লেগে আছে একটা মিষ্টি হাসি।ছবিটা দেখে মেহেকের ঠোঁটের কোণের হাসি ফুটে উঠে।

” তুমি আমার রুমে কি করছো মেহুরাণী?”
হঠাৎ কারো কন্ঠস্বর শুনে ভয় পেয়ে যায় মেহেক।তার হাত থেকে ফ্রেমটা পড়ে যেতে নিলেও মেহেক সেটা ধরে ফেলে।যার ফলে ফ্রেমটা মরতে মরতে বেঁচে যায়।মেহেক ফ্রেমটা টেবিলে রেখে জোরপূর্বক মুচকি হেসে পেছন ফিরে তাকাই।কিন্তু পেছন ফিরে সে সৌন্দর্যকে দেখে হা।কারণ সৌন্দর্য অর্ধেক জামা-কাপড় পড়ে আছে।মানে সে প্যান্টের বদলে টাওয়াল পড়ে আছে তাও পিংক কালারের।সেই সাথে গায়ে শার্ট থাকলেও তার বোতাম খোলা,যার কারণে সৌন্দর্যের গায়ের মাঝের অংশ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে।সৌন্দর্যকে এভাবে দেখে মেহেক ঢোক গিলে।

” কি হলো?তুমি আমার রুমে কি করছো মেহুপাখি?”
” ওই আসলে কফি দিতে এসেছিলাম।” জোরপূর্বক হেসে মেহেক বলে।
” আচ্ছা আমি আসি।আমার কাজ আছে।”

মেহেক তাড়াহুড়ো করে যেতে নিলে পায়ের সাথে পা লেগে সে পড়ে যায় তবে নিচে নয়,সে গিয়ে পড়ে সৌন্দর্যের বুকে।আচমকা এরকম কিছু হওয়ায় মেহেক ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর মেহেক পিটপিট করে চোখ খোলে।চোখ খোলার সাথে সাথে মেহেক দেখতে পাই সৌন্দর্যের উন্মুক্ত বুক।সৌন্দর্যকে এতোটা কাছে থেকে দেখে মেহেকের তো জান যায় যায় অবস্থা।মেহেক বারবার ঢোক গিলছে।মেহেক সৌন্দর্য বুক থেকে চোখ সরিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।সৌন্দর্য তখন মেহেক দিকেই তাকিয়ে ছিল,হঠাৎ সৌন্দর্যের চোখে চোখ পড়তেই মেহেক আরো লজ্জা পেয়ে যায়।হঠাৎ মেহেকের খেয়াল হয় তার ডান হাতটা সৌন্দর্যের বুকের উন্মুক্ত জায়গায়।এটা মনে পড়তেই মেহেক তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে দূরে আসতে চাইলে ব্যথায় সে চেঁচিয়ে উঠে।

” আহ্…… ” চুলে হাত দিয়ে।
” কি হয়েছে মেহেক?”
” আমার চুল।”
সৌন্দর্য খেয়াল করে মেহেকের চুল তার শার্টের বোতামের সাথে আটকে আছে।সৌন্দর্য তাড়াতাড়ি চুলটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।এটা দেখে মেহেক চেষ্টা করে।আর অনেক টানাটানির পর মেহেক চুলটা ছাড়াতে সফল হয়।চুলটা খুলে যাওয়া পর আর একমিনিটও মেহেক সৌন্দর্যের রুমে থাকেনা।
এদিকে সৌন্দর্য এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।হঠাৎ তার চোখ যায় নিচে মেঝের দিকে।কিছুটা একটা দেখে প্রথমে তার ভ্রু-কুচকে উঠলেও পরক্ষণে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৩+৪

অন্যদিকে,
নিজের রুমে এসে হাঁপাচ্ছে মেহেক।তার চোখের সামনে এখনো সৌন্দর্যের অর্ধেক পরিহিত শার্টের দেহটা ভেসে উঠছে।মেহেক ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।তারপর জগ থেকে পানি ঢেলে তা ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।মেহেক মুখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিন্তু পরমুহূর্তেই ফট করে চোখ খুলে ফেলে আর বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে।
” হায়….কেন যেন আমি ওনার রুমে গেলাম।এখন চোখ বন্ধ করলেই ওনার কথায় মনে পড়ছে।আর শয়তান বেটাও শার্ট পড়েছে ঠিক আছে বোতাম গুলো লাগাবেনা।দূর ছাতার মাথা।”

মনে মনে সৌন্দর্যকে বকা দিতে দিতে হঠাৎ মেহেকের কিছু মনে পড়েছে আর সে হোহো করে হেসে উঠে।অনেক চেষ্টা করার পরও মেহেক নিজের হাসি কনট্রোল করতে পারছিলনা।
” স্পর্শ বুইড়া দাদু,হাহাহা……”
আসলে মেহেক স্পর্শের হাফ শেভিং ক্রিম লাগানো চেহারাটার কথা মনে পড়েছে।আর তা মনে পড়তেই মেহেকের হাসি পাই।

” কিন্তু যাই বলো এটার ভিতরে কোন রসকস নাই।কেমন যেন চুপচাপ আর গম্ভীর।আমার সাথে এসেছি পর্যন্ত ভালো করে একটা কথাও বলেনি।আরে ওনার কথা কি বলছি আমিও তো এরকমি।অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।আচ্ছা একবার কি ওনার সাথে কথা বলে দেখবো?না না বাবা দরকার নেই এই বুইড়া দাদুর সাথে যেছে কথা বলতে যাওয়ার।আমার কি ঠেকা পড়েছে নাকি?হু…..।তার থেকে সৌন্দর্য অনেক ভালো।কি সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলে।”
মেহেক এসবই ভাবছে তখন তার ফোনে টুং করে একটা শব্দ হয়।মেহেক বিছানার অপর পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে মেসেঞ্জারে কেউ মেসেজ দিয়েছে।মেসেজ হাসিমুখে মেসেজটা ওপেন করে কিন্তু মেসেজটা দেখেই তার মুখের হাসি উবে যায়।

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৭+৮