কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৩+৪

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৩+৪
লেখিকাঃঅনন্যা অসমি

” এক্সকিউজ মি মিস,আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি আপনাকে আগেও কোথাও দেখেছিলাম।”
পাশ থেকে কারো কন্ঠ শুনে মেহেক চোখ খুলে পাশ ফিরে তাকাই।দেখে তার পাশের ছেলে অর্থাৎ সৌন্দর্য তার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বাস ছেড়ে দিয়েছে প্রায় আধঘন্টা হচ্ছে।এই আধঘন্টা সৌন্দর্য শুধু এটাই চিন্তা করে গিয়েছে যে সে মেহেককে কোথায় দেখছে।

মেহেক চিন্তা করতে থাকে সে কিছু বলবে নাকি চুপ করে থাকবে।কিন্তু মেহেক চিন্তা করতে করতেই সৌন্দর্যের মনে পড়ে যায় আরে এটা তো সেই মেয়েটা যাকে সে গত রাতে লিফট দিয়েছিল।
” আপনি সেই মেয়েটা না যাকে আমি ব্রিজের ওখান থেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলাম।”
সৌন্দর্যের যেহেতু মনে পড়ে গিয়েছে তাই মেহেক আর বেশি কথা না বাড়ির হ্যাঁ বলে আবারো বাইরের দৃষ্টি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” কিন্তু আপনাকে কিছুটা দেখতে ভিন্ন ভিন্ন লাগছে কেন?” বলে সৌন্দর্য।
বাইরের দিকে তাকিয়েই মেহেক উওর দেয়,
” আমি চশমা পড়েছি তাই।”
সৌন্দর্য এবার খেয়াল করে কাল রাতে মেয়েটা মানে মেহেক চশমা পড়ে ছিলনা তবে আজ পড়েছে।সৌন্দর্য আর কিছু না বলে মোবাইল টিপতে থাকে।
কিছুটা সময় যাওয়ার পর মেহেকের পানির পিপাসা পান।সে পানি পান করার জন্য ব্যাগ থেকে বোতল বের করতে যেয়ে দেখে তাড়াহুড়োর কারণে সে পানির বোতাল অন্য ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছে,এখন অন্য ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করাও সম্ভব নয়।এদিকে মেহেকের প্রচুর পানির পিপাসা পেয়ে।

” এইযে শুনছেন?” মিনমিনে স্বরে সৌন্দর্যকে বলে মেহেক।কিন্তু কানে হেডফোন থাকার কারণে সৌন্দর্য শুনতে পাইনা।মেহেক কিছুক্ষণ চুপ থেকে হালকা করে সৌন্দর্যকে ধাক্কা দেয়,এতে সৌন্দর্য চোখ খুলে মেহেকের দিকে তাকাই।সৌন্দর্যের তাকানো দেখে মেহেক কিছুটা হেজিটেশেন ফিল করে।
” কিছু বলবেন মিস?”
” আসলে আমি না পানির বোতল অন্য ব্যাগে রেখে এসেছি।আপনার কাছে পানি হবে?”
সৌন্দর্য তার ট্রাবেল ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে মেহেককে দেয়।মেহেক পানি খেয় বোতল বন্ধ করতে গেলে সৌন্দর্য তাকে বাঁধা দিয়ে বলে,

” বন্ধ করতে হবেনা,ওটা আমাকে দিন।”
মেহেক সৌন্দর্যের দিকে মুখ খোলা বোতলটা বাড়িয়ে দেয় কিন্তু হঠাৎ গাড়ি ঘোরানোর কারণে বোতল থেকে কিছুটা পানি গিয়ে পড়ে সৌন্দর্যের গায়ে।মেহেক জিহ্বায় কামড় দিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই আর সৌন্দর্য চোখ বড় বড় করে তার কাপড়ের ভিজা অংশের দিকে তাকিয়ে রয়।
” আই এম সরি,আমি বুঝতো পারিনি এরকম কিছু হবে।প্লিজ রাগ করবেন না।” বিচলিত হয়ে বলে মেহেক।
সৌন্দর্য শান্ত গলায় মেহেকে বলে, ” ইট’স ওকে,এতে আপনার কোন দোষ নেই।”
সৌন্দর্য সমস্যা নেই বললেও মেহেক অনুশোচনার দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের ভিজা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সৌন্দর্য রুমাল দিয়ে ভিজা জায়গাটা মুছে নেয় এরপর মেহেকের দিকে তাকাই।মেহেক তখনো চুপ করে বাইরে তাকিয়ে ছিল।

” এইযে মিস,আপনাকে এতো অনুশোচনায় ভুকতে হবেনা।যা হয়ে তা এক্সিডেন্টলি হয়েছে।”
মেহেক সৌন্দর্যের দিকে আবারো অনুশোচনার দৃষ্টিতে তাকাই।
” আমরা কি পরিচিত হতে পারি মিস?”
মেহেক এবার সৌন্দর্যের দিয়ে নিলিপ্ত দৃষ্টিতে তাকাই।সৌন্দর্য এমনিতেই কারো সাথে বেশি কথা বলেনা তবে তার কেন যেন মনে হচ্ছে মেহেকের মন ভালো নেই তাই সে তার সাথে একটু কথা বলে তাকার খারাপ লাগাটা একটু কমাতে চাইছে।
” হুম।” ছোট করে জবাব দেয় মেহেক।

” নাম কি আপনার?”
” মৃদুলা মেহেক।আপনার?”
” শাহরিয়ার সৌন্দর্য।আপনার নামটা অনেক সুন্দর।”
” আপনার নামটা অনেক আনকমন।”
” থ্যাঙ্ক ইউ।তা আপনি কোন ক্লাসে পড়েন?”
” অর্নাম ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম।আপনি?”
” আমি মাস্টার্স করছি।আমি তাহলে তোমাকে তুমি করে বলতে পারি যেহেতু তুমি আমার ছোট।”
” হুম।”

” তা কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
” ঢাকা।”
” ও….আমিও ঢাকায় যাচ্ছি।তো তুমি ঢাকায় কোথায় যাচ্ছো?”
” আপুর বাসায়।আপনি বোধহয় ঘুরতে যাচ্ছেন?”
” না আমি আমার নিজ বাসায় যাচ্ছি।”
” তাহলে চট্টগ্রামে কেন এসেছিলেন?”
” বন্ধুর বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছিলাম।তো তুমি বুঝি বোনের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছো?”
” হুম।” মেহেক ইচ্ছে করেই সৌন্দর্যকে সত্যিটা বলেনি,কারণ সে চাইনা তার এই শহর ছেড়ে যাওয়ার কারণটা কেউ জানুক।

মেহেক আর সৌন্দর্য আর কোন কথা বলেনা।মেহেক বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে থাকে আর সৌন্দর্য আবারো কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনতে শুরু করে।
প্রায় আড়াইঘন্টা চলার পর বাস এসে থাকে একটা হোটেলের সামনে।১৫ মিনিটের জন্য বিরতি নেয় বাস।সবাই একেক একেক করে বাস থেকে নেমে পড়ে।সৌন্দর্যেও বাস থেকে নামার জন্য উঠে দাঁড়ায় কিন্তু যে যেতে নিয়েও থেমে যায়।প্রায় সবাই নেমে গেলেও মেহেক তার জায়গায় বসে বাইরে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছেনা সে নামবে তাও ভদ্রতার খাতিরে সৌন্দর্য তাকে জিজ্ঞেস করে,
” এইযে মিস মেহেক তুমি নিচে নামবেনা?”

মেহেক সৌন্দর্যের দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাই।আসলে সে নিচে নামতো তবে এই প্রথম সে একা ট্রাভেল করছে।তার ভয় হচ্ছে না জানি যদি আবার বাস ছেড়ে দেয় তবে তো সে আরেক বিপদে পড়বে।মেহেকের তাকানো দেখে সৌন্দর্য বুঝতে পেরে যায় তার সমস্যা।সে মুচকি হেসে মেহেককে আশ্বস্ত করে বলে,
” কিছু হবে না,তুমি নিশ্চিন্তে নামতে পারো।আর এতো ভয় পেয়োনা আমি আছি তো।চলো আমার সাথে।”
এখন মেহেকের একমাত্র ভরসা সৌন্দর্য।তাই সে সৌন্দর্যের উপর ভরসা করে বাস থেকে নেমে পড়ে।মেহেক সৌন্দর্যের পেছন পেছন হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করে।
” ওয়াশরুমে যাবে?”
পিটপিট চোখ করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ উওর দেয় মেহেক।সৌন্দর্য তাকে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিয়ে নিজেও ওয়াশরুমে চলে যায়।

ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মেহেক দেখে সৌন্দর্য আগে থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করছে।সৌন্দর্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেহেকের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।সে এতোক্ষণ এই ভয়ে ছিল না জানি সৌন্দর্য তাকে রেখে চলে যায় কিন্তু না সৌন্দর্য তা করেনি দেখে মেহেক খুশি হয়।
” চলো।”
মেহেক মাথা নাড়িয়ে সৌন্দর্যের পেছন পেছন চলতে শুরু করে।হঠাৎ সৌন্দর্য থেকে জিজ্ঞেস করে,
” কিছু খাবে?”
মেহেক মাথা নাড়িয়ে না উওর দেয়।
” তাহলে চলো তোমাকে বাসে দিয়ে আসি।”

মেহেকও ভালো মেয়ের মতো কোন কথা না বলে সৌন্দর্যের পেছন পেছন বাসের কাছে চলে আসে।মেহেক বাসে উঠে গেলে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে আর পেছন ফিরে সৌন্দর্যের দিয়ে তাকাই।
” আমার কিছু খাবার লাগবে?আপনি একটু এনে দিতে পারবেন?”
” বলো কি কি লাগবে?”
” ২টো চিপিস,১ টা পানির বোতল,২ টো ম্যাংগো বার আর ৫ টা চুইংগাম।”
” আর কিছু?” মুচকি হেসে প্রশ্ন করে সৌন্দর্য।
মেহেক মাথা নাড়িয়ে না সম্মতি দেয়।
” যাও তুমি ভিতরে গিয়ে বসো আমি আসছি।”
মেহেক আর কোন কথা না বলে নিজের সিটে এসে বসে পড়ে।

বাস ছাড়া সময় হয়ে গিয়েছে।মেহেক চিন্তা হয়ে বারবার বাইরে তাকাচ্ছে কারণ এখনো সৌন্দর্য আসেনি।তার ভয় হচ্ছে না জানি সৌন্দর্য বাস মিস করে দেয়।
বাস ছাড়ার আগে শেষবারের মতো সবাইকে বাসে উঠার জন্য বলে কিন্তু তখনো সৌন্দর্যের কোন খবর নেই।
কন্ট্রাকটর বাস আবারো নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্য চলতে শুরু করার প্রস্তুতি নিচে।মেহেক একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।বাস চলতে শুরু করে তবে হঠাৎ থেমে যায়।মেহেক দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য হাঁপাতে হাঁপাতে এসেছে।সৌন্দর্যকে দেখে মেহেকের মুখে হাসি ফুটে।সৌন্দর্য নিজের সিটে এসে ধপ করে বসে পড়ে।

” কোথায় ছিলে এতোক্ষণ?”
” তোমার জিনিসগুলো আনতে গিয়ে ভিড়ে আটকা পড়েছিলাম।”
সৌন্দর্যের কথা শুনে মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায় কারণ আজ তার জন্য সৌন্দর্য বাস মিস করতে করতে বেঁচেছে।সৌন্দর্য মেহেকের খারাপ লাগাটা বুঝতে পারে।
” এই এতে মন খারাপ করোনা তো।এতে তোমার কোন দোষ ছিলনা।নাও তোমার জিনিস।”
মেহেক সৌন্দর্য থেকে জিনিসগুলো নিয়ে নেয়।তারপর সেখান থেকে একটা চিপস,একটা ম্যাংগো বার আর দুটো চুইংগাম নিয়ে মেহেক সেগুলো সৌন্দর্যের দিয়ে বাড়িয়ে দেয়।

” কি?”
” নিন এগুলো।”
” লাগবেনা তুমি রাখো তোমার কাছে।”
” আরে রাখুন তো।”
মেহেক জিনিসগুলো সৌন্দর্যের হাতে ধরিয়ে দেয়।সৌন্দর্যও আর কথা না বাড়িয়ে জিনিসগুলো তার ব্যাগে রেখে দেয়।এরপর আর কোন কথা হয়না মেহেক আর সৌন্দর্যের মাঝে।মেহেক বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে আর সৌন্দর্য গান শুনতে শুনতে।
বাস কন্ট্রাকটারের ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে মেহেকের।সে পিটপিট করে চোখ খুলে কিন্তু চোখ খুলে নিজে অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় মেহেক।

 

সকালে নিজের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় মেহেক।কারণ সে নিজের মাথা সৌন্দর্যের কাঁধে পায় অর্থাৎ কাল রাতে ঘুমের ঘোরে সে সৌন্দর্যের কাঁধে মাথা দিয়ে দিয়েছে।মানে কাল সারারাত মেহেক সৌন্দর্যের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল।
” এইযে ম্যাডাম,বাস থেকে নামুন।আমাদের আরেক জায়গায় যেতে হবে তো।”

বাস কন্ট্রাকটরের কথায় মেহেক নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।সে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য তখনো ঘুমাচ্ছে।মেহেক চিন্তা করতে থাকে যে সৌন্দর্যকে ডাকবে কিনা।কিন্তু মেহেকের চিন্তা করতে করতেই সৌন্দর্যের ঘুম ভেঙে যায়।সৌন্দর্য চোখ খুলে প্রথমেই মেহেকের দিকে তাকাই।হঠাৎ সৌন্দর্যের তাকানো দেখে মেহেক ঘাবড়ে যায়।সে সৌন্দর্যের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিজের ব্যাগ ঘুছিয়ে নেয় বাস থেকে নেমে পড়ার জন্য।সৌন্দর্যও নিজের ব্যাগ ঘুছিয়ে নেয়।

সৌন্দর্য নিজের সিট থেকে বের হয়ে মেহেককে নিচে নেমে যাওয়ার জন্য জায়গায় করে দেয়।মেহেকও কথা না বাড়িয়ে নিচে নেমে পড়ে।মেহেক নেমে গেলে সৌন্দর্য মুচকি হাসে।আসলে তার ঘুম অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছিল।সে আগে থেকেই জানে মেহেক তার কাঁধে মাথা রেখে গত রাতে ঘুমিয়েছিল।কিন্তু সকালে যখন মেহেকের ঘুম ভাঙেছে তখন সে ঘুমানোর ভান করে ছিল কারণ সে মেহেককে লজ্জায় ফেলতে চাইনি।এস কিছু ভাবতে ভাবতে সৌন্দর্য বাস থেকে নেমে পড়ে।আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়,হঠাৎ কিছু দেখে তার মুখে হাসি ফোঁটে।কারণ কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।সৌন্দর্য ভেবেছিল মেহেক হয়তো চলে গিয়েছে কিন্তু মেহেক যে তার জন্য অপেক্ষা করবে সেটা সে ভাবেনি।সৌন্দর্য এসে মেহেকের কাছে দাঁড়ায়।

” কি হলো মিস মেহেক?কারো জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?”
মেহেক কি বলবে বুঝতে পারছেনা।সে আসলে সৌন্দর্যের জন্যই অপেক্ষা করছিল কিন্তু এখন সেটা সৌন্দর্যকে বলতে তার হেজিটেশন ফিল হচ্ছে।
” ওই আসলে আমি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম।” জোরপূর্বক হেসে উওর দেয় মেহেক।
সৌন্দর্য বুঝে যায় মেহেক মিথ্যা কথা বলছে।কারণ এই জায়গায় কোন গাড়ি সে পাবেনা।
” ও আচ্ছা।কিন্তু এখানে তো বাস ছাড়া অন্যকোন গাড়ি আসা যাওয়া করেনা।”
মেহেক বুঝে যায় সৌন্দর্য তার মিথ্যা ধরে ফেলেছে।
তাও সে হার মানলোনা।

” আসলে আমি নতুন তো তাই আরকি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে চলো আমি তোমাকে গাড়িতে তুলে দিচ্ছি।”
মেহেক সৌন্দর্যের দিকে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়।কিছুদূর গিয়ে সৌন্দর্য মেহেককে ট্যাক্সতে তুলে দেয়।
” ভালো থাকবেন মিস্টার সৌন্দর্য।আর এতো সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।”
” মাই প্লেজার।সাবধানে যেও।”

মেহেক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।সৌন্দর্য ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ট্যাক্সি স্টার্ট দিতে বলে।ট্যাক্সি অর্ধেক যাওয়ার পর মেহেকের মনে পড়ে আরে সে তো সৌন্দর্যের নম্বরটাই নিতে ভুলে গিয়েছে।সৌন্দর্যের সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগের কোন মাধ্যম জানা না থাকায় মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।হঠাৎ মেহেকের মনে পড়ে মুগ্ধের বিয়ের কথা।আশ্চর্য হলেও কাল রাতে একবারেও মেহেকের মুগ্ধের কথতা মনে পড়েনি।কিন্তু এখন মুগ্ধের কথা মনে পড়লে মেহেক কান্না পাচ্ছেনা বরং হাসি পাচ্ছে,বিদ্রুপের হাসি।মেহেক মুচকি হেসে চিন্তা করতে থাকে কতটা বোকা ছিল সে যে একটা মরিচিকার পেছনে তার মূল্যবান সময় নষ্ট করেছে।মেহেক ভেবে নেয় সে আর এসব মিথ্যা সম্পর্কে কোনদিনও জড়াবেনা আর মন দিয়ে পড়াশোনা করে সবাইকে দেখিয়ে দেবে সেও কোন অংশকে কম না।

এসব কিছু ভাবতে ভাবতে মেহেক নিজের বোনের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে সাতটা বাজে তখন।মেহেক ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়ে।মেহেকের বোন তার শশুর বাড়ির লোকেদের নিয়ে একটা বিল্ডিং এ থাকে।বিল্ডিং এর দোতালা পুরোটা তাদের নিজেদের।
মেহেক সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় উঠে আসে।তার মনের মধ্যে অনেক ভয় কাজ করছে না জানি তার বোনের শশুড়বাড়ির লোক তার আসাতে কি রকম ব্যবহার করে।মেহেক কাঁপা কাঁপা হাতে বেল দেয়।কিছুক্ষণ পর একটা ১৮/১৯ বছরের মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।

” কাকে চাই?”
” আপুনি….. মানে সৃষ্টি আপু আছে?”
” হ্যাঁ ভাবী আছে কিন্তু আপনি কে?আর ভাবীকে আপনার কি দরকার?”
মেহেক কিছু বলবে তার আগেই মেহেকের বোন বেরিয়ে আসে।বোনকে দেখে মুচকি হাসে মেহেক।আর ছোট বোনকে এতোদিন পর দেখে সৃষ্টি মেহেককে জরিয়ে ধরে।
” কেমন আছিস মৃদু?আর তুই হঠাৎ আসলি?আসার আগে একবার বলবিনা।আমি তোর দুলাভাইকে পাঠাতাম।”
” তার কোন প্রয়োজন ছিল না।”

” ভাবী তুমি একে চেনো?” দরজা খুলে দেওয়া মেয়েটা বলে।
” অনু এ হচ্ছে আমার ছোট বোন মেহেক।আর মৃদু এ হচ্ছে আমার একমাত্র ননদ রিফা।”
” আরে ভাবী আগে বলবেনা।আসলে তোমাকে আমি আগে দেখেনি তো তাই চিনতে পারিনি।সরি হ্যাঁ।”
” সমস্যা নেই আপু।”
” এই তুই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?আয় আয় ভিতরে আয়।”
” হ্যাঁ এসো।ভাবী তুমি মৃদুকে নিয়ে এসো আমি মাকে ডেকে আনছি।”

রিফা ভেতরে চলে যায়।সৃষ্টি মেহেকের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে আসে।মেহেক ভেবেছিল তাকে দেখে তার বোনের শশুড়বাড়ির লোকেরা রাগ করবে বা তার বোনের সাথে সমস্যা সৃষ্টি করবে কিন্তু এখন মেহেকের এসব কিছু মনেই হচ্ছেনা।মেহেকের বোনের শশুড় বাড়িটা ভিতরে ডুপ্লেক্স সিস্টেম মানে ঘরের ভিতরে সিঁড়ি আছে।সবার সাথে কুশলবিনিময় শেষ মেহেককে রিফা তার থাকার রুমটা দেখিয়ে দেয়।রুমে এসে মেহেক ধপ করে শুয়ে পড়ে।এতোক্ষণ জার্নি করে তার অনেক টার্য়াড লাগছে তার।

সে কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ওয়াশরুম চলে যায় ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়।১২টার দিকে মেহেকের ঘুম ভাঙে।ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে নিচে নামার জন্য রুম থেকে বের হয় সে।মেহেক হাঁটতে হাঁটতে তার বোনের রুম খুঁজছে।তার সামনে যে রুম আসছে সে সেই রুমে উঁকি মেরে দেখছে।হঠাৎ একটা রুমের দরজা খোলা দেখতে পাই মেহেক।দরজাটা হালকা করে খোলা ছিল,মেহেক দরজার হাত দিতে নিঃশব্দে দরজাটা খুলে যায়।মেহেক ধীরপায়ে ভেতরে প্রবেশ করে।ভিতরে প্রবেশ করতে মেহেকের চোখ সর্বপ্রথম পড়ে দেয়ালে টাঙানো বড় ছবিটার উপর।ফরমাল ড্রেসে, ঠোঁটে হাঁসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।বেশ লম্বাটে ছেলে।ফর্সা মুখে মুখে হাল্কা চাপ দাড়ি বিরাজমান।চোখে কালো ফ্রেশের চশমা,যার তার কারণে চোখের চাহনি বোঝা যাচ্ছেনা।মেহেক ছবিটা দেখতে এতোটাই মত্ত ছিল যে কেউ যে তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা মেহেক বুঝতেই পারেনি।

” এইযে কে আপনি?আর আমার রুমে কি করছেন?”
গম্ভীর কারো কন্ঠস্বর কানে আসলে মেহেকের ধ্যান ভাঙে।সে পেছন ফিরে তাকাই তবে যা দেখে তাতে মেহেক চিৎকার দিতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো।মেহেক মুখে হাত দিয়ে বড় বড় চোখ করে তার সামনে থাকা বলিষ্ঠ দেহ বিশিষ্ট মানুষটা দিকে তাকিয়ে রয়।ছেলেটা শরীরে শুধু একটা টাওয়াল ছাড়া আর কিছু নেই,পুরো গা উন্মুক্ত তার।মেহেক লজ্জায় চোখমুখ খিঁচে বেরিয়ে আসে রুম থেকে।এদিকে ছেলেটা এখনো অবাক হয়ে মেহেক যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানটায় তাকিয়ে আছে।
খাবার সময় যখন মেহেক টেবিলে বসতে যাবে তখন সে খেয়াল করে সেই টাওয়াল পড়া ছেলেটা তার বরাবর সামনের চেয়ারটাতে বসে আছে।ছেলেটাকে দেখে মেহেকের আবারো তার উন্মুক্ত বুকের কথা মনে পড়ে যায়।আর এটা মনে পড়তেই মেহেককে আবারো লজ্জায় ঘিড়ে ধরে।

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ১+২

” কিরে মৃদু দাঁড়িয়ে আছিস কেন?বস।”
” হুম বসছি আপুনি।”
মেহেক শত লজ্জা নিয়ে ছেলেটার সামনের চেয়ারে বসে পড়ে।অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই মেহেক ছেলেটার পরিচয় পেয়ে যায়।ছেলেটার হচ্ছে তার বোনের ছোট দেবর।নাম আদরিক স্পর্শ।
খাবার পর্ব শেষ হলে সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মেহেক আবারো নিজের রুমে ফিরে আসে।কিছুক্ষণ আগেই ঘুম থেকে উঠার পর তার এখন ঘুম আসছেনা,তাই মেহেক বসে বসে ফোনে মুভি দেখছে।

” কি করছিস মৃদু?”
কারো কথায় মাথা তুলে তাকাই মেহেক।দেখে তার বোন এসেছে।
” আরে আপুনি আয়।কিছুনা ওই মুভি দেখছিলাম।বস তুই।”
সৃষ্টি বিছানায় বসলো।তার সে মেহেকের হাতে হাত রেখে বলে,
” একটা সত্যি কথা বলবি মৃদু?”
” কি আপু?”

” তুই সত্যি করে বলতো কি হয়েছে?তুই হঠাৎ করে ঢাকা শহরে এলি কেন?”
” কিছু হয়নি আপুনি।আর তুই চিন্তা করিস না আমি বেশিদিন তোর শশুড় বাড়ি থাকবোনা।”
” এক থাপ্পড় দেবো,আমি কি তোকে ওইভাবে বলেছি নাকি?আচ্ছা যা তুই না বললে আমি তোকে জোর করবোনা তবে তোর কোন সমস্যা হলে আমাকে বলিস।”
” হুম।”
সৃষ্টি চলে যায় আর মেহেক ভাবতে থাকে তার ফেলে আসা তিক্ত অতিতের কথা।

কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব ৫+৬