কি নেশায় জড়ালে গল্পের লিংক || Sabihatul Sabha

কি নেশায় জড়ালে পর্ব ১
Sabihatul Sabha

চার বছর পর সেই পরিচিত মুখ দেখে থমকে গেলো রূপা।
নিজের চোখ কে বিশ্বাস হচ্ছে না। যার থেকে এতো টা বছর পালিয়ে বেরিয়েছে আজ নিজের অজান্তে আবার তার সামনে চলে আসলো। যার জন্য নিজের পরিচিত শহরে ছেড়েছে, প্রিয় মানুষদের ছেড়েছে আজ সেই পুরুষ ওর সামনে দাড়িয়ে আছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে কিছু ঝাপসা পুরোনো স্মৃতি। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো রূপা।

আজ রূপার মামাতো বোন সোহার বিয়ে। রূপা প্রথম আসতে চায়নি কিন্তু সোহার কান্না কাটির জন্য আসতে বাধ্য হলো। এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে জানলে এই জীবনে পা রাখতো না এই শহরের আঙ্গিনায়।
রূপা অনেক দিন পর সুন্দর করে সেজেছিলো আজ। কালো লেহেঙ্গা সাথে কালো চুড়ি, ভারি সাজ খুবি সুন্দর লাগছে রূপা কে। উজ্জ্বল শ্যামলা গাঁয়ের রং এর সাথে এই সাজটা যেনো ফুটে উঠেছে ।
আহনাফ বন্ধুদের সাথে কথা বলে পেছন ফিরেই রূপা কে দেখে অবাক হয়ে গেলো। কতো অপেক্ষায়, কতো দিন, মাস,বছর কেটে গেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

এই চার বছর কোথায় কোথায় না খুঁজেছে সে রূপা কে। কিন্তু কোনো খুঁজ খবর পায়নি আর আজ সেই রূপা ওর চোখের সামনে। মূহুর্তে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো “রূপা”
রূপা ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে আহনাফ এর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো। এক ছুটে চলে গেলো বাড়ির ভেতর।
আহনাফ প্রথম থমকে গেলেও পর মূহুর্তে সেও ছুটলো রূপার পেছনে।

দিনটি ছিলো ১৫-১-২০১৯
আজ রূপার কলেজের নবীন বরন অনুষ্ঠান।
রূপা একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে মাহি কে। কিন্তু মাহির তাতে কোনো হেলদোল নেই। সে নিজের মতো করে সাজতে ব্যাস্ত। মাহির সাজগোজ খুব পছন্দ । সে সাজবে ঘন্টার পর ঘন্টা লাগিয়ে সাজবে তাতে তার একটুও বিরক্ত লাগবে না। আজও সে সাজতে বসেছে সেই সকালে এখনো উঠার নাম নেই।
রূপা রাগে গজগজ করতে করতে মাহির বাসায় চলে আসলো।
মাহির আম্মুর সাথে দেখা করে মাহির রুমে আসলো।

মাহি রূপা কে দেখে ভয়ে আয়নার সামনে থেকে উঠে বলে উঠলো, ‘ দুস্ত তুই! আমি দেখ রেডি হয়ে গেছি চল। ‘
রূপা হা করে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে।
মাহি নিজেকে এক বার আয়নায় দেখে আবার রূপার দিকে তাকালো।
রূপা রেগে এগিয়ে গেলো মাহিকে মা*রতে।
মাহিঃ দুস্ত সরি, প্লিজ কিছু করিস না অনেক কষ্ট করে নিজেকে সাজিয়েছি নষ্ট হয়ে যাবে।
রূপাঃ হা তাতো দেখতেই পারছি অনেক কষ্ট করে নিজেকে ভূত সাজিয়ে ছিস। আমরা কি বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি নাকি কলেজে? আমি তো কনফিউশানে পড়ে গেছি এখন।

মাহি গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো, ‘ তুই কখনোই আমার প্রসংশা করিস না। সব সময় উল্টো পাল্টা কথা বলিস কিন্তু কলেজের সবাই আমার কতো প্রসংশা করে।
রূপা বিরক্ত মুখে মাহির দিকে তাকিয়ে বললো,’ মুখ ধুয়ে আয়। ‘
মাহিঃ কিইইই!!

রূপাঃ তুই মুখ ধুয়ে আসবি নাকি আমি চলে যাবো..?
মাহিঃ প্লিজ দুস্ত এমন অন্যায় করিস না আমার সাথে।
রূপা রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে মাহি বলে উঠলো, ‘ ধুয়ে আসছি। ‘
রূপা মুচকি হেসে ফিরে তাকালো।
মাহি গাল ফুলিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।
কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রূপা আর মাহি। রূপার বেশি কোনো ফ্রেন্ড নেই শুধু মাহি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ড কম বোনের মতো সম্পর্ক ওদের।

মাহি রূপার সাথে এখনো কথা বলেনি। কতো কষ্ট করে সেজে ছিলো আর এই রূপ কি না সব শেষ করে দিলো৷
কলেজের ভেতর প্রবেশ করতেই দেখা গেলো সবাই আজকে শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেগুজে এসেছে।
রূপা আর মাহিও শাড়ি পড়েছে। কলাপাতা রঙের শাড়ি। সাথে হালকা সাজ, চুলগুলো খোঁপা করা।
অনুষ্ঠান শুরু হতেই রূপা আর মাহি গিয়ে দাঁড়ালো স্টেজের এক পাশে।
হঠাৎ মাহি রূপার হাত আঁকড়ে ধরলো।

রূপা জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকাতেই মাহি কাঁদোকাঁদো মুখ করে বললো, ‘ দুস্ত কে জেনো বাজে ভাবে শরীরে হাত দিচ্ছে…! ‘
রূপা পেছনে তাকালো কিছু বখাটে ছেলে বিশ্রী হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
রূপা মাহির হাত ধরে ওখান থেকে সরে অন্য পাশে চলে গেলো।

একটা ছেলে ওদের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। মাহির দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদিক ওদিকে তাকিয়ে মাহির কোমরের দিকে হাত বাড়ালো সাথে সাথে রূপা ছেলেটার হাত শক্ত করে ধরে গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। সবাই অবাক হয়ে রূপা আর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। রূপা থাপ্পড় মেরে শান্ত হয়নি, ছেলেটার কলার চেপে ধরে মাহিকে বললো জুতা খুল। মাহি ভয়ে রূপার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ প্লিজ রূপা জামেলা করার প্রয়োজন নেই ছেড়ে দে।’
রূপা নিজের পায়ের জুতা খুলে ছেলেটাকে মা’রা শুরু করলো।
সবাই দাঁড়িয়ে ফ্রী তে বিনোদন দেখছে।

ছেলেটার সাথের ছেলেগুলো হয়তো ভাবতেও পারেনি এমন কিছু হবে।
মাহি টেনে রূপা কে সরিয়ে নিলো। ছেলেটা চোখ লাল করে রূপা আর মাহির দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে কিছু বললে হিতে বিপরীত হবে তাই চুপ করে আছে। এর প্রতিশোধ করায় গন্ডায় নিবে সে।
ওই দিনের পর থেকে শুরু হয় রূপার জীবনের কালো অধ্যায়।
বেশ কয়দিন ভালোই কেঁটে যায়।

একদিন রূপা কলেজ থেকে আসার সময় একটা ছেলে এসে ওর হাতে বেলি ফুলের মালা সাথে একটা চিরকুট দিয়ে যায়।
রূপা বেশ অবাক হয় এই যোগে এসেও মানুষ চিঠি লেখে!
আজ মাহির শরীর ভালো না তাই রূপা একাই কলেজ এসেছে।
প্রতি সপ্তাহে একটা করে চিরকুট আর সাথে বেলি ফুলের মালা এটা জেনো অবাসে পরিণত হলো।

দুই এক শব্দের চিঠিতে যেনো হাজারো ভালোবাসার ছোঁয়া খুঁজে পায় রূপা। শুরু হয় এক প্রেমের কাহিনী।
প্রতিদিন বাসার সামনে একটা করে ফুল। রাতে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন, প্রতি সপ্তাহে একটা করে চিরকুট সাথে বলি ফুলের মালা। মাঝে মাঝে রাতে বাসার নিচ থেকে কারো চিৎকার করে ভালোবাসার কথা বলা।
সব কিছুই ছিলো রূপার জন্য নতুন। নতুন অনুভূতির সাথে পরিচিত হয় রূপা। আসতে আসতে সেই অনুভূতি গভীর থেকে গভীর হয়। এভাবে কেঁটে যায় এক বছর।

রূপা আর সেই আগুন্তকঃ এর মধ্যে এখন প্রতি দিন কথা হয় কিন্তু রূপা এখনো সেই আগুন্তকঃ কে দেখেনি। আজ রূপা বলে উঠলো, ‘ আহনাফ আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। ‘
আহনাফ মুচকি হেসে রাজি হয়ে গেলো।
রূপা খুব সুন্দর করে নিজেকে সাজিয়ে নিলো। এই এক বছরে রূপা ভালোবেসে ফেলেছে আহনাফ কে। শুধু ভালোবাসা নয় গভীর ভাবে প্রেমে পড়ে গেছে আহনাফ এর।
রূপা শুভ্র রঙের শাড়ি পড়ে নিজেকে সাজিয়ে নিলো। কল করে আহনাফ কে বলে বেড়িয়ে পরলো আহনাফ এর বলা রেস্টুরেন্টে।

আগে থেকেই আহনাফ রূপার জন্য অপেক্ষা করছে।
তাদের মধ্যে কথা হলো, দেখা হলো, আহনাফ রূপাকে প্রপোজ করলো রূপাও রাজি হয়ে গেলো। তারপর থেকে তাদের ভালোবাসা শুধু মোবাইলে সিমা বদ্ধ নেই। প্রতিদিন কলেজ শেষে ঘুরতে যাওয়া, হাতে হাত রেখে সূর্যোদয় দেখা। রাতে লুকিয়ে ফুচকা খেতে যাওয়া। এভাবে কেটে যায় আরও ছয় মাস।
এখন রূপা আহনাফ বলতেই পাগল। আহনাফ জেনো তার আত্মার সাথে মিশে গেছে । কথায় আছে বেশি ভালোবাসলে তার থেকেও বেশি কাঁদতে হয়।

আহনাফ রূপাকে কল দিয়ে বললো,’ রূপা তুমি কি সবার সামনে আমাকে ভালোবাসো এটা বলতে পারবে..? আমি দেখতে চাই তুমি কতোটা ভালোবাসো আমাকে। তুমি সবার সামনে তোমার মনে আমাকে নিয়ে কতোটা ভালোবাসা আছে তা আজ প্রকাশ করবে। ‘
রূপা মুচকি হেঁসে বললো, ‘ কোথায় বলতে হবে বলো..?’
আহনাফঃ আমার ভার্সিটিতে চলে আসো।
রূপা মাহিকে নিয়ে চলে গেলো আহনাফ এর ভার্সিটিতে।

আহনাফ এর দেখাও পেয়ে গেলো। বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
রূপার খুব ভয় করছে। হঠাৎ করে কোথায় থেকে এতো ভয় এসে ভির করলো রূপার মনে..? হাতে গোলাপের গুচ্ছটা শক্ত করে চেপে ধরতেই কাঁটা গিয়ে বিঁধলো হাতে। আহ্ বলে আর্তনাদ করে উঠলো রূপা।
কি হয়েছে রূপা কাঁটা কিভাবে বিঁধলো?।

মাহির কথায় রূপা নিজের হাতের দিকে তাকালো রক্ত ঝরছে।
রূপাঃ আরে কিভাবে জেনো বিঁধে গেলো। চল যাই এটা তেমন কিছু না।
গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো রূপা। মাহি দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ফুলের গুচ্ছটা আহনাফ এর সামনে বাড়িয়ে দিয়ে ধরা কন্ঠে বলে উঠলো রূপা” আমি আপনাকে ভালোবাসি আহনাফ। সেই প্রথম যেদিন আপনি আমাকে চিরকুট দিয়ে ছিলেন দুই এক লাইনের অগোছালো চিরকুট সাথে বেলি ফুলের মালা ।

আমি সেই অগোছালো চিরকুট সারারাত পড়েছি। প্রতিদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশে তাকিয়ে নিজের অজান্তে কাউকে খুঁজেছি। তারপর প্রতি সপ্তায় চিরকুটের অপেক্ষায় থেকেছি। এক একটা দিন এক একটা বছর মনে হয়েছে । আপনার সাথে দেখা হওয়া সব কিছুই কেমন হঠাৎ করে হয়ে গেলো। আপনি আমার নেশায় পরিণত হয়ে গেছেন। সব নেশা ছাড়া গেলেও আপনার নেশা আমি ছাড়তে পারবো না। ছাড়তে চাইও না। আপনি আমাকে এ কেমন নেশায় জড়ালেন আহনাফ । বলেই এতো বছর আহনাফ এর দেওয়া সবগুলো বেলি ফুল আহনাফ এর সামনে রাখলো। সবগুলো শুকিয়ে গেছে তবে এখনো খুশবু রয়ে গেছে। কি মিষ্টি ঘ্রাণ দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতোটা যত্নে ছিলো এই বেলি ফুল।

আহনাফ হঠাৎ উচ্চ সুরে হাসা সুরু করলো।
রূপা অবাক চোখে আহনাফ এর দিকে তাকালো।
আহনাফ তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ আহনাফ চৌধুরীর গার্লফ্রেন্ড হবে তোর মতো মেয়ে । কি যোগ্যতা আছে আমার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার। আর সব হঠাৎ নয় পরিকল্পনা মোতাবেক সব হয়েছে।
রূপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আহনাফ তুমি এইসব কি বলছো..? আমাদের এতো দিনের ভালোবাসা।’
আহনাফঃ এতো দিনের ভালোবাসা! এইসব নাটক ছিলো। তোর মতো খালাম্মা টাইপের মেয়ের সাথে প্রেম করবো আমি এই আহনাফ চৌধুরী!!

রূপার হাত থেকে নিজের অজান্তে গোলাপের গুচ্ছ নিচে পড়ে গেলো। নিজের কান কে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। সব যদি দুঃস্বপ্ন হতো। চোখ খোলে যদি দেখতো যা দেখেছে যা শুনেছে সব মিথ্যা।
রূপাঃ নাটক!! এতো দিনে কি তোমার মনে আমার জন্য একটুও ভালোবাসা জন্মায়নি..? এতো দিন, সপ্তাহ,মাস,বছরেও কি আমার জন্য তোমার মনে কিছু জন্মায়নি..? কিন্তু এমনটা কেনো করলে..?? এতোটা নিখুঁত অভিনয় করার কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো..?
আহনাফঃ নয়তো কি। তোদের মতো মেয়ের সাথে কয়েকদিন মজা করা যায় আর কিছুই না।সবটাই আমার সাজানো প্লেন ছিলো..

অপমানে রূপার চোখ জ্বালা ধরে উঠলো।
পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘ বামন হয়ে চাঁদে হাত দিতে গেলে হাত তো পুড়বেই।’
রূপা ছলছল চোখে আহনাফ এর দিকে তাকালো।
আহনাফ বাঁকা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে রূপার দিকে। রূপার এমন অবস্থা দেখে সে বেশ মজা পাচ্ছে।

রূপা চারপাশ একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। কেউ কেউ ভিডিও করছে, কেউ ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে আর কেউ তাকিয়ে আছে অপমানে মিইয়ে যাওয়া মুখটার দিকে।
সব যেনো আগে থেকে প্লেন করাই ছিলো।
রূপা ধপ করে নিচে বসে পড়লো সাথে সাথে হাতে গিয়ে বিঁধলো গোলাপের কাঁটা।

কি নেশায় জড়ালে পর্ব ২