কি নেশায় জড়ালে পর্ব ২

কি নেশায় জড়ালে পর্ব ২
Sabihatul Sabha

রূপা ধপ করে নিচে বসে পড়লো সাথে সাথে হাতে গিয়ে বিঁধল গোলাপের কাঁটা।
রূপা হাতের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো হৃদয়ে যে রক্ত খরন হচ্ছে তার কাছে এই সামান্য কাঁটার আঘাত কিছুই না।

রূপা চোখের পানি মুছে আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে বেহায়ার মতো আবার বললো,’ আহনাফ তুমি আমার সাথে মজা করছো তাই না..! প্লিজ আহনাফ এমন মজা করো না আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমি অনেক ভালোবাসি তোমাকে। তোমাকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। তুমি আমাকে ভালোবাসতে হবে না, তাও আমাকে ছেড়ে দিও না।
আহনাফ রূপার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠলো,’ নিশ্বাস নিতে কষ্ট হলে নিশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দাও। তোমরা মেয়েরা ও না ড্রামা কুইন।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

রূপা ছলছল চোখে আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আহনাফ দাঁড়িয়ে গেলো। রূপার এমন অবস্থা দেখে আজ তার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু না সে নিজেকে খুশি করতে পারছে না। যতোই চেষ্টা করছে উপরে খুশি দেখানোর ভেতর থেকে ততই ভেঙে পড়ছে। তাহলে কি ভালোবাসার অভিনয় করতে গিয়ে সে নিজেও দূর্বল হয়ে পড়েছে রূপার প্রতি..? এমনটা ভাবতেই সে চোখ বন্ধ করে নিলো সাথে সাথে নিজের ছোটো ভাইয়ের মুখটা ভেসে উঠলো। চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে গেলো আহনাফের। সে কয়েক পা পেছনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ মিট মাই গার্লফ্রেন্ড মৌ মিতা মৌ। ‘

রূপা ঝাপসা চোখে সামনে তাকালো খুবি সুন্দর পরিপাটি একটা মেয়ে আহনাফের হাতে হাত রেখে দাঁড়ালো । কি সুন্দর লাগছে আহনাফ এর সাথে মেয়েটিকে রূপা নিজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। এই মেয়ের সাথে রূপা যায় না। তাই তো আহনাফ রূপা কে নয় এই মেয়েকে ভালোবেসেছে তাহলে অভিনয় কেনো করলো..? এতো কিছু কেনো করলো…?
রূপা উঠে দাঁড়ালো। নিজেকে শক্ত করে বলে উঠলো, ‘ তাহলে আমার সাথে কেনো অভিনয় করলেন…??

আহনাফ মুহূর্তে রেগে গেলো। হাত মুষ্টি বদ্ধ করে বলে উঠলো, ‘ তোর মতো মেয়ের জন্য আজ আমার ভাই একমাত্র আদরের ভাইটা আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে। আমি হাজার ডেকেও তাকে ঘুম থেকে তুলতে পারিনি। সে শেষ বার আমাকে ভাই বলে ডাকতে পারেনি। সে অভিমান করে এই পৃথিবী ছেড়েছে।’
রূপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমার জন্য!!!.. ‘

আহনাফ চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ হে তোর জন্য । তুই ওকে সারা কলেজের সামনে জুতা খুলে মে’রে ছিস, সারা কলেজের মানুষ ছিঃ ছিঃ করেছে। কেউ হেসেছে, কেউ ভিডিও করেছে আবার কেউ কটুকথা বলে ঠাট্টা করেছে। এতো কিছু হয়েছে তোর জন্য৷ তোর সেই দিনের জুতা দিয়ে মা’রা ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। আমার ভাই ভার্সিটিতে যেতে পারতো না সবাই হাসাহাসি করতো ওকে নিয়ে । কোনো বন্ধুরা ওর সাথে মিশতে চাই তো না।

স্যার, মেম রা ও ওকে ছাড়েনি। লাস্টে কিনা বাসার কাজের লোক ও ছাড়লো না ওকে। খুব অভিমান জমে ছিলো আমার ভাইটার মনে তাই তো চলে গেলো সবাইকে ছেড়ে । আমি তখন দেশের বাহিরে ছিলাম। আব্বুর বিজনেস নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম এদিকে খেয়াল ছিলো না। যখন দেশে আসলাম ভাইটা আমার আর নেই। সারাদিন বাড়িটা মাতিয়ে রাখা ছেলেটা চলে গেলো। আমি কি করে তার খু’নী কে ছেড়ে দেবো!!??

ঠিক আজকে ও তোর জীবনটা নরকে পরিণত হয়ে যাবে। আজ থেকে তুই প্রতিদিন, প্রতিটা মুহূর্ত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করবি। জীবিত থেকেও আমি তোকে মৃত বানিয়ে দিলাম। আমি চাইলে কবেই তোকে নিজ হাতে খু’ন করতে পারতাম কিন্তু তাতে আমার ভাইয়ের কষ্টটা বুঝা হতো না।তাই এই প্লেন প্রতিটা মুহূর্ত মৃত্যুর জন্য ছটফট করবি এটা দেখে আমার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।

রূপা থমকে গেছে আহনাফ এর কথা শুনে। এখানে তো রূপার কোনো দোষ ছিলো না। ওই ছেলে অন্যায় করে ছিলো। সেখানে আহনাফ এর ভাই নয় যদি রূপার ভাইও থাকতো তাহলেও রূপা একি কাজ করতো। ভুল তো কিছু করেনি। রূপা তো সবাইকে বলেনি ভিডিও করতে । রূপা তো জানতো না এমন কিছু হবে। এখানে রূপার দোষ টা কোথায়..?
রূপা আহনাফ এর সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ ওই ছেলে তোমার ভাই ছিলো..? তুমি জানো কেনো মে’রে ছিলাম তোমার ভাই কে আমি..?

আহনাফ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ তুমি এখন আমার সামনে থেকে যাও। তোমার জায়গায় এখন একটা ছেলে থাকলে এখানেই পুঁতে ফেলতাম। তোমার কপাল ভালো তুমি মেয়ে।
রূপা ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকে পেছনে ফিরে হাঁটা ধরলো। আর সে পেছন ফিরে তাকাবে না কখনো না।
আহনাফ বাঁকা হেঁসে বলে উঠলো, ‘নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা। ‘

রূপা পেছন ফিরবে না ফিরবে না বলেও পেছন ফিরে দু পা এগিয়ে গিয়ে আহনাফ আর মৌ এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ যেই যন্ত্রণা আজ আমি পাচ্ছি, কাল এমন না হোক আল্লাহ যেনো তোমার কপালে এমন টা না রাখেন। আমাকে যেই বেঁচে থেকেও মৃত বানিয়ে দিয়েছো এমন না হোক তুমি নিজেই সেই বেঁচে থেকে মৃত হয়ে যাও। প্রতি মুহূর্তে যেনো মৃত্যুর জন্য আল্লাহ কাছে দোয়া না করো। এই দোয়া রইলো৷ আমি কখনো চাই না আমার এই দোয়া বদদোয়ায় পরিণত হোক তবে আল্লাহ কাউকে ছাড়েন না। তুমি কারো বিশ্বাস নিয়ে খেলা করো না অন্য কেউ তোমার মন নিয়ে খেলবে। বলেই পেছন ফিরে হেঁটে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো।

আহনাফ রূপার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে তার কেনো কষ্ট হচ্ছে..? এই মেয়ে তার ভাইয়ের খু’নী যা হয়েছে এর থেকে বেশি কিছু হওয়া দরকার ছিলো এই মেয়ের সাথে।
আহনাফ চারপাশ তাকিয়ে হাসলো সবাই ভিডিও করছে। হয়তো কিছু সময়ের মধ্যে এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাবে, কেউ কেউ শীষ বাজাচ্ছে, আর কেউ মাথা নিচু করে আছে হয়তো তাদের রূপার জন্য মায়া হয়েছে।
মাহি দূর থেকে সব দেখেছে রূপা বেড়িয়ে যেতে মাহি ও ওর পিছু পিছু বেড়িয়ে গেলো।
রূপা বাড়িতে এসে কারো সাথে কোনো কথা বলেনি।
দিন দিন রূপার অবস্থা খুব খারাপ হচ্ছিলো।বাহিরে বের হলে লোকে কেমন নজরে তাকাতো।

এইসব কিছু ভেবে একটা অন্ধকার রুমে হাঁটুতে মুখ গুজে রূপা ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আজ এতো গুলো বছর পর এই মানুষ টাকে দেখে মনের ক্ষত গুলো যেনো তাজা হয়ে উঠেছে। চোখ যেনো বাঁধ মানছে না।
রূপা নাক টেনে টেনে কান্না করছে তখনি কেউ ওর সামনে একটা রুমাল এগিয়ে দিলো।
রুমে ঝাপসা আলো। রূপা নিজের সামনে হঠাৎ হাত দেখে চিৎকার দিতে নিলো কিন্তু তার আগেই লোকটা রূপার মুখ চেপে ধরলো।

রূপা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো, ছুটার জন্য ছটফট শুরু করলো ।
~ আজ কাল মানুষের ভালো করতে নেই। বিশেষ করে মহিলাদের। আমি আপনার সুবিধার জন্য রুমাল এগিয়ে দিলাম আর আপনি আমাকে বিয়ে বাড়িতে গণধোলাই খাওয়াতে চাচ্ছেন!..?
রূপা ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে তাকালো। সামনে কোনো অপরিচিত পুরুষ দেখে দু হাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু রূপার ধাক্কায় ছেলেটা এক পা ও নরলো না।

ছেলেটা রূপার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘ অযথা শক্তি কেনো নষ্ট করছেন! আপনার এই পাঁচ ইঞ্চি শরীরের, জিরো ফিগারের ধাক্কায় আমি সাজ্জাদ চৌধুরী এক ইঞ্চিও নরবো না। মুখে বললেই হয় সব শরীরে টার্চ করার ধান্দা।
রূপা রেগে তাকালো কিন্তু রুম অন্ধকার থাকায় রূপার সেই রাগী চোখ জোরা সাজ্জাদ এর দেখা হলো না।
রূপা মুখ থেকে হাত সরানোর জন্য নিজের হাত দিয়ে সাজ্জাদ এর হাত সরাতে চাইলো।
সাজ্জাদ নিজ থেকেই রূপার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিলো।

রূপাঃ এক তো বিনা পারমিশনে আপনি আমার মুখে হাত চেপে ধরেছেন উল্টো আমাকেই অপমান করছেন!
সাজ্জাদ রূপার দিকে ভালো করে তাকালো তারপর বলে উঠলো, ‘ রুমে প্রবেশ করার আগে নক করে প্রবেশ করতে হয়৷ আর যখন তখন অন্য কারো রুমে বিনা পারমিশনে কান্না করা খুবি বাজে স্বভাব।’
রূপা সাজ্জাদের কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। আহনাফ এর থেকে লুকানোর জন্য যখন ছুটে বাড়ির ভেতর এসে ছিলো তখন এই রুমটায় চোখ পড়ে ছিলো। ভেবে ছিলো হয়তো কেউ নেই তাই রুমে ঢুকে ভেতর দিয়ে দরজা আঁটকে দিয়েছে। তাহলে ওকে কান্না করতে এই ছেলে দেখে ফেলেছে। এমন বিশ্রী সিচুয়েশনে পড়তে হবে কখনো ভাবেনি রূপা। আজকের দিনটাই ওর জন্য খারাপ । একটার পর একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

সাজ্জাদ রূপার হাতে রুমাল টা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রূপ এক দৃষ্টিতে হাতের রুমালটার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার মুখ দেখা হয়নি। হয়তো একটু পর বাহিরে দেখা হলেও একজন আরেক জন কে চিনতে পারবে না। তবে নামটা মনে আছে “সাজ্জাদ চৌধুরী ”
রূপা রুমালটা হাতের মুঠোয় নিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমের লাইট জ্বেলে নিলো। ওয়াশরুম খুঁজে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে রুমালটা দিয়ে ভালো করে মুছে নিলো।
সাজ্জাদ রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে গেলো। হয়তো আরিফ ওর জন্য অপেক্ষা করছে।

আহনাফ ও সারা বাড়িতে রূপা কে খুঁজে না পেয়ে পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে তখনি দেখা হয়ে গেলো সাজ্জাদ এর সাথে…
আহনাফঃ সাজ্জাদ ভাই আপনি এখানে..?
সাজ্জাদঃ পাঞ্জাবি নষ্ট হয়ে গেছে চেঞ্জ করার জন্য উপরে গিয়ে ছিলাম।
আহনাফঃ বড় ভাই আপনাকে হয়তো খুঁজছেন।
সাজ্জাদঃ আমি যাচ্ছি। তুমি ও চলো।

কি নেশায় জড়ালে পর্ব ১

আহনাফ আমতা আমতা করে বললো, ‘ আমার একটু কাজ ছিলো ভাই। ‘
সাজ্জাদ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ এখানে তোমার কি কাজ..? এখানকার কিছুই চেনো না তুমি, আমার সাথে চলো।’
অগত্যা আহনাফ এর ইচ্ছে না থাকা সত্যেও সাজ্জাদ ওর সাথে যেতে হলো। আহনাফ সাজ্জাদ কে খুব মানে। সাজ্জাদ কে খুব ভয় ও পায়।
যেতে যেতে সাজ্জাদ একবার দুইতলার দিকে তাকালো।

কি নেশায় জড়ালে পর্ব ৩