কি নেশায় জড়ালে পর্ব ১৬

কি নেশায় জড়ালে পর্ব ১৬
Sabihatul Sabha

রূপার ঘুম ভাঙতেই সে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো।
আশে পাশে তাকিয়ে বুঝলো এটা ওর নিজের রুম।
রূপা রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখলো সবাই সোফায় বসে আছে।
রূপার আম্মু রান্না ঘরে রান্না করছেন। মাহি এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে।
রূপা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হলো এতোটা সময় ও ঘুমিয়েছে!! গাড়িতে ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলো তারপর আর কিছু মনে নেই। সাজ্জাদ কোথায়..?

সাজ্জাদ বারান্দায় বসে অফিসের বিষয় ম্যানেজার কে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
মাহতিম রূপাকে দেখেই বললো,’ ভাবি আসেন এখানে বসেন। একা একা ভালো লাগছে না।’
মাহতিম এর কথা শুনেই মাহি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে রূপার পাশে এসে দাঁড়ালো।
মাহতিম মাহিকে দেখেই বলে উঠলো,’ আরে বেয়াইন থাকতে আমরা কেনো বোরিং হচ্ছি..! বেয়াইন আসেন। ‘
মাহি মনে মনে প্রচুর খুশি, এই প্রথম কারো প্রতি তার এতো পাগলামো।
রূপা মাহির চোখের দিকে তাকালো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

মাহি গিয়ে মাহতিম এর পাশে বসে পরলো।
মাহতিম একবার আড়চোখে আরিয়ান চাচ্চুর দিকে তাকালো।
আরিয়ান নিজের মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে কিছু একটা করছে।
মাহতিম একটু দূরত্ব রেখে বসে বললো,’ ভাবি আপনিও আসেন না। ‘
রূপা ওদের থেকে দূরে সোফায় বসলো।

আরিয়ান একবার রূপার দিকে তাকিয়ে হাসলো। বিনিময়ে রূপাও হাসি দিলো।
মাহতিম রাগী দৃষ্টিতে আরিয়ান এর দিকে তাকালো। বেটা এই জন্যই এখনো সিঙ্গেল । এতো সুন্দর একটা মেয়ে বসে আছে কই একটু কথা বলবে তা না!
মাহতিম রূপার দিকে তাকিয়ে বললো ভাবি আপনাদের বাসাটা ঘুরিয়ে দেখান তো।
রূপা কিছু বলার আগেই মাহি বললো,’ আমি দেখাই। রূপা তুই জিজুকে ডেকে নিয়ে আয়।’
রূপা মাথা নেড়ে উঠে গেলো।

মাহতিম চেয়ে ছিলো এই দুইজন কে একা রেখে যেতে জেনো ওদের মধ্যে কথায় হয়।
মাহতিম আরিয়ান চাচ্চু কে বললো,’ তুমি এখানে বসে কি করবে তুমিও চলো..’
আরিয়ান মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
মাহি হেঁসে ওদের নিয়ে বাসা ঘুরিয়ে ছাঁদে গেলো।
ছাঁদে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ। আর খুব সুন্দর রঙ করা ছাঁদ।

আরিয়ান ছাঁদ দেখে হেঁসে বললো,’ ছাঁদের যত্ন নেয় কে..? আর এই ছাঁদের রঙটা কে করেছে..?’
মাহিঃ ছাঁদের যত্ন নেয় রূপা। আর এই রঙ আমি করেছি।
মাহতিম মাহির অনেক প্রসংশা করলো কিন্তু আরিয়ান কিছু বললো না। সে জেনো এক গভীর ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছে। এই মাহি কে..? এতো মিল কেনো তার প্রেয়সীর সাথে এই মেয়ের..?
মাহির সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে মাহতিমের। এক কথায় বন্ধুত্ব।

মাহতিম রূপাদের ছাঁদ থেকে দূরে তাকালো। দূরে ছাঁদের রেলিং এর উপর উঠে বসে আছে একটা মেয়ে। হ্যাঁ মাহতিম ঠিক দেখেছে মেয়েই এটা চুল বাতাসে উড়ছে। কেমন উদাসীন হয়ে বসে আছে। যদি পড়ে যায়!!
মাহতিম এর দৃষ্টি খেয়াল করে মাহিও তাকালো।
মাহি তাকিয়ে কিছুটা রাগী সুরে বললো,’ এই বেয়াদব মেয়ের মৃ*ত্যুর ভয়ডর নেই। রাত বেরাতে চুল ছেড়ে রেলিং এর উপর বসে আছে।’

মাহতিম মুগ্ধ হয়ে বললো,’ চিনো তুমি মেয়েটিকে..?’
মাহি ভ্রু কুঁচকে মাহতিম এর দিকে তাকালো।
গম্ভীর কণ্ঠে বললো,’ হুম। ‘
মাহতিমঃ মেয়েটা এভাবে কেনো বসে আছে..?
মাহিঃ আপনি গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসুন! কারন আপনিও এখানে আছেন আমিও এখানে আছি । ওর মনের খবর আমি কিভাবে জানবো। সারাদিন টইটই করে ছেলেদের মতো পোশাক পড়ে সারা এলাকা ঘুরে বেড়াবে আর রাত হলে রেলিং এ বসে সুইসাইড করার প্লেন।

মাহতিমঃ মেয়েটা কি সত্যি সুইসাইড করবে..?
মাহিঃ আমি কিভাবে জানবো।
মাহতিমঃ তুমিই তো বললে চিনো।
মাহি কিছু বলার আগে আরিয়ান বললো,’ মেয়েটা সুইসাইড করবে না।’
মাহতিম অবাক হয়ে বললো, ‘ তুমি কিভাবে জানলে।’
আরিয়ান কিছু বললো না আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসলো।

এমন কতো কতো দিন আরিয়ান রেলিং এর উপরে বসে তার প্রেয়সী কে তাঁরাদের মাঝে খুঁজে বেরিয়েছে। আজ এক যুগ পেরিয়ে গেছে কিন্তু তারকাছে মনে হয় এই তো সেই দিন এক সাথে বসে হাতে হাত রেখে তাঁরা গুনেছে। তার প্রেয়সী তাকে এমন ভাবে মায়ায় জড়িয়ে নিয়েছে অন্য কোনো নেশা আজও তাকে ছুঁতে পারেনি। আজ হঠাৎ এই ঝড়ের বেগে মাহি আসলো। কি এই মাহি..?মাহি সম্পর্কে সব জানতে হবে৷
সাজ্জাদ কথা শেষ করে পেছন ফিরে দেখে রূপা দাঁড়িয়ে আছে।

সাজ্জাদঃ কখন আসলে..?
রূপাঃ যখন আপনি কথা বলায় ব্যাস্ত।
সাজ্জাদঃ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
রূপা কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো। নিজের দিকে তাকালো।
সাজ্জাদ রূপার হাত ধরে আয়নার সামনে দাঁড় করালো। নিজে রূপার পেছনে দাঁড়ালো।
রূপার মাথা সাজ্জাদের ঘার অবধি।

রূপা আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আপনি তো আমার থেকে সুন্দর.. ‘
সাজ্জাদ হেঁসে বললো, ‘ গায়ের রঙে কি আসে যায় বলো! তুমি জানো তুমি কতো কিউট আর মায়াবী।
রূপাঃ আমি একদম কিউট নই বলেই হাসলো রূপা।
সাজ্জাদ রূপার দিকে ফিরে বললো,’ হ্যাঁ আমি জানি আপনি অনেক কিউট। শাড়িতে তো আরও বেশি কিউট লাগে। ৫.৫ হাইট, শ্যামবর্ন গায়ের রঙ, ঘন-কালো কেশ, টানা টানা মায়াবী চোখ, পাতলা ঠোঁট, আর তা দেখেই মাতাল এক সুদর্শন যুবক ।’ বলেই হাসি দিয়ে রূপার দিকে তাকালো।
রূপা ভেবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে সাজ্জাদের দিকে । সাজ্জাদ আর কিছু বলার আগেই রূপা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
রূপার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কপালে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে হাসলো সাজ্জাদ।
রূপার মুখ দেখেই মাহি জিজ্ঞেস করলো কি হয়ে.?
রূপা মাথা নেড়ে বললো কিছু না।

মাহিঃ তাহলে লজ্জায় এমন লাল কেনো হয়ে আছে..?
রূপাঃ ঘুম থেকে উঠেছি তাই এমন।
সবাই বসে রাতের খাবার খেয়ে নিলো। আজ মাহি এখানেই থাকবে।
সবাই খুব ক্লান্ত তাই আজকের মতো নিজেদের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো৷
রূপা রুমে এসে নিজের কিছু জিনিস নিয়ে অন্য রুমে যত্ন করে রেখে আসলো।
শাড়ি চেঞ্জ করে সেলোয়ার-কামিজ পরলো।

সাজ্জাদ বিছানায় বসে রূপার দিকে তাকিয়ে আছে৷
রূপা সব কাজ শেষ করে গিয়ে বসলো।
সাজ্জাদ ও রূপার পিছু পিছু বারান্দায় গেলো৷
রূপা সাজ্জাদকে দেখে বলে উঠলো, ‘ আমার ঘুম আসছে না আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন।’
সাজ্জাদঃ তাহলে চলো গল্প করি৷
রূপাঃ আজ নয় অন্য দিন। আজ হয়তো আপনি ক্লান্ত।
সাজ্জাদ গিয়ে রূপার পাশে দাঁড়ালো।

রূপাঃ আপনি এখনো বললেন না। আপনি এতো কিছু কিভাবে জানেন..?
সাজ্জাদঃ আমার বউয়ের প্রথম থেকে শেষ অবধি যদি আমি খবর না রাখি তাহলে আমি কেমন স্বামী!! তুমি এখন আমার একটা অংশ রূপা। আমি তোমার অতীত জানতে চাই না। অতীতে তোমার মনে কে ছিলো জানতে চাই না। আমি চাই তোমার বর্তমান,ভবিষ্যত সব কিছু শুধু আমাকে ঘিরেই হোক।
এভাবে ওদের মাঝে অনেক কথা হলো।

রাত প্রায় ২টা।
রূপা উঠে দাঁড়ালো, ‘ চলুন ঘুমানো যাক। ‘
সাজ্জাদ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

কি নেশায় জড়ালে পর্ব ১৫

রূপারুমে যেতেই সাজ্জাদ সামনে বাগানের দিকে তাকালো। একটা ছায়া দেখা যাচ্ছে । সাজ্জাদ হেসে রুমে চলে গেলো।
মাহতিম আবার ছাঁদে চলে আসলো। বার কয়েক ওই ছাঁদের দিকে তাকালো না কেউ নেই৷
মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো। ঘুম আসছে না। নতুন কোথাও আসলেই এমনটা হয় মাহতিমের।
পেছন থেকে মাহি বলে উঠলো, ‘ এতো রাতে আপনি ছাঁদে..?!!’
মাহতিম চমকে তাকালো মাহির দিকে।
মাহির হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ।

কি নেশায় জড়ালে পর্ব ১৭