কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৪

কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৪
নন্দিনী নীলা

” উষসীর সাথে আবার খারাপ বিহেভ করেছো?” শক্ত গলার বললেন জেসমিন বেগম।
“ওর কথা বাদ দাও তো। তুমি আমাকে বাসায় আসার জন্য তারা কেন দিলে সেটা বলো!”
“বাদ দেব কেন? বলেছিনা ওর সাথে কোন রকম খারাপ বিহেভ করবে না।”

“আম্মু, ওকে জাস্ট আমার এখন সহ্য হয় না। তুমি তো জানোই প্রথম থেকে ওকে আমি সহ্য করতে পারি না। তবুও ওকে আমি এক বছর ধরে সহ্য করে আসছি। আর কতদিন ওকে আমার সহ্য করতে হবে? দিন দিনও নিজের সীমা পেড়িয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে আমার কাজের জন্য কৈফিয়ত চাচ্ছে। আমি কি করব না করব ওই ফকিন্নির বাচ্চাকে তার কৈফিয়ত দেবো?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” নিজের রাগকে সংযত করো। উষসীর সাথে কোন রকম খারাপ ব্যবহার করবে না এটাই আমার লাস্ট ওয়ার্নিং। ওর প্রয়োজন যতদিন আছে ততদিন ওকে ওর মতো থাকতে দাও। ওর কথা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো।”
” ওকে এতোই তোমার প্রয়োজন জায়ানের বউ করে আনলেই পারতে। সব প্রয়োজনে আমাকে কেন বলি দিতে হবে?”
“তুমি এখন আমাকেও প্রশ্ন করতে শুরু করে দিয়েছো?”

“আমি প্রশ্ন করলে আমাকে ধমক দিতে পারো। অথচ ভাইকে ধমক দেওয়ার সাহস তোমার নেই কিন্তু কেন?”
” যে কাজের জন্য তোমাকে এনেছি সেই কাজটা করো। অযথা প্রশ্ন করে টাইম ওয়েস্ট না করে।”
আয়ান রাগে ফুঁসতে লাগল। জেসমিন বেগম আয়ানকে একটা রুমে নিয়ে আসলো। আয়ান নিজের কাজ শেষ করে আর একবারও জেসমিন বেগমের দিকে তাকালো না নিজের রুমে চলে আসলো।
তৃষ্ণা জাগ্রত হতে দেখতে পায় সকাল হয়ে গেছে আর জায়ান সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। তৃষ্ণা শোয়া থেকে উঠে বসে জায়ানের দিকে তাকিয়ে ভাবে।

উনি কি তাহলে সত্যি সারারাত জেগে কাজ করেছে? বিছানার আশায় সময়টুকু পায়নি! ঘুমিয়েছে কখন?
তৃষ্ণা ওঠে জায়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ায়। ঘাড় বাঁকা করে ঘুমিয়ে আছে উনার কি ঘাড় ব্যথা করবে না? ডাকবে না কি ডাকবে না ভেবে ডেকেই উঠে। জায়ান ঘুমঘুম চক্ষু মেলে তাকিয়ে সামনে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা তৃষ্ণাকে দেখে থমকে যায়। তৃষ্ণা এলোমেলো চুলগুলো বড় খোপা করে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।

ঘুম থেকে উঠেছে কেবলই এজন্য মুখের উপর তৈলাক্ত ভাব ফুটে উঠে আছে। জায়ান তৃষ্ণার এই রুপ দেখে কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে আছে। কথা বলতে পারছে না। ওর চোখে তৃষ্ণা কে এই রুপে অপরুপ সুন্দর লাগছে।সাথে প্রচন্ড খুশি হলো ঘুম থেকে উঠে এমন একটা দৃশ্য দেখে ওর মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। ও ঘুমিয়েছে ঘন্টাখানি হবে। সারারাত ধরে কাজ করেছে।

কাজ আর কি করেছে বেশিরভাগ সময়। তৃষ্ণার ঘুমন্ত মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থেকেছে। কিন্তু কাছে যেতে পারে নি কাছে গেলে যে আর কাজে আসতে পারবে না। আর রাতের মধ্যে কাজ কমপ্লিট না হলে কাল বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে। এমনিতেই মায়ের মুখে সারাক্ষণ বউ এনে নাকি কাজের গাফিলতি করে এসব শুনতে হয়। এজন্য জিদ্দি মনে আজকে কাজটা শেষ করবে ভেবেছিল।

জায়ান নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে আর এদিকে তৃষ্ণা জায়ান কে অদ্ভুত ভঙ্গিতেই তাকিয়ে থাকতে দেখে ডেকে যাচ্ছে বিছানায় গিয়ে শুতে বলছে। সারারাত কাজ করেছে ক্লান্ত এখানে না শুয়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে নিতে। জায়ান ওর কথার কোন উত্তরও দিচ্ছে না নড়ছেও না। এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

তৃষ্ণা মুখটা বিকৃত করে চেয়ে আছে। জায়ান চোখ বন্ধ করে আবার তাকিয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। বেরিয়ে এলো চোখে মুখে পানি দিয়ে। সারারাত জেগে থাকার ফলে চোখ দুটো লাল বর্ণ হয়ে আছে। তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে জায়ানের কান্ড কারখানা দেখছে। জায়ান তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে রেডি হতে লাগল বাইরে যাওয়ার জন্য। তৃষ্ণা জায়ানকে পরিপাটি হতে দেখে ধরে ফেলেছে জায়ান আর বিশ্রাম নেবে না। তৃষ্ণা এগিয়ে এলো ডেসিং টেবিলের সামনে। জায়ান তখন চুল পরিপাটি করছিল।

“আপনি এই সাত সকালে কোথায় যাবেন?”
জায়ান নিজের কাজ করতে করতেই বললেন,,”সারারাত যে কাজ করলাম সেটা সম্পূর্ণ করে আসি। তুমি এখন আমায় ডেকে ভালোই করেছো। বাঁকা হয়ে শুলেও দুই তিন ঘন্টার আগে জাগতে পারতাম না। থ্যাঙ্ক ইউ।”
বলেই তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তৃষ্ণা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে।

“আপনি ঐ কাগজ পাতিতে কি করলেন রাতভর? এত সকালে আবার কি কাজ সম্পন্ন করতে যাবেন? ঘুমাবেন না অসুস্থ হয়ে যাবেন তো।”
“বললেই কি তুমি বুঝতে পারবে? জেগে থাকার অভ্যাস আছে এতো সহজে আমি অসুস্থ হয় না।”
থতমতো খেয়ে গেল তৃষ্ণা। মাথা নিচু করে বলল,,”বুঝতে পারব না বলে আপনি আমাকে কিছুই বলবেন না? যখন জানেন আমি কিছু জানত বুঝতে পারব না। তাহলে আমার মত অশিক্ষিত মেয়েকে আপনি বিয়ে করলেন কেন? এখন বুঝতে পারব না বলছেন।”

“তোমার যেমন জানার বোঝার এত আগ্রহ। আমার তো জানানোর আর বোঝানোর এত আগ্রহ নাই। তুমি এসব না জানলে বিরাট কোন ক্ষতি হয়ে যাবে না তাই তুমি তোমার মতোই থাকো।”
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে ফট করে একটা কথা বলে উঠল,”আমি শুনেছি গেরামের মেয়েকে শহরের ছেলেরা বিয়ে করে আনে ঠকানোর জন্য তাদেরকে কাজের লোকের মত খাটানোর জন্য। আপনিও কি সেই রকম মনোভাব থেকে আমাকে বিয়ে করেছেন? আপনি আবার আমাকে ঠকাবেন না তো?”

বলেই ঢোক গিলল।
মুখ ফসকে কথাটা তো বলে ফেলল এখন যদি এর জন্য ধমক খেতে হয়।
জায়ান অবাক চক্ষে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণার কথা শুনে জায়ানের চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে উঠেছে। এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে ও কল্পনা করতে পারেনি।

“তোমার মাথায় এসব কথা আবার কে ঢুকিয়েছে? কাজের লোকের মতো কি তোমাকে তো কাজ‌ই করাই না।”
“কে ঢুকাবে? এটা তো সত্য কথাই‌। এবার যখন বাসায় গিয়েছিলাম তখনও তো আমার চাচিরা এসে বলছিল এত বড়লোক বাড়ি থেকে আমাকে কেন বিয়ে করে নিয়ে গেল! আমিতো আপনাদের বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য না।”
“বিয়ে করেছি আমি। আমার ব‌উয়ের যোগ্যতা আমি দেখব নাকি আমার বউয়ের যোগ্যতা আছে কিনা সেটা তোমার চাচীরা ঠিক করে দেবে?” রাগান্বিত গলায় বলল।

তৃষ্ণা জায়ানের রাগান্বিত কন্ঠস্বর শুনে চুপ মেরে গেল আর কথা বলা সাহস করল না। জায়ান তৃষ্ণার দুই বাহুতে হাত রেখে বলল,”তোমার ঐ থার্ড ক্লাস চাচীদের জন্য তুমি তোমার বাড়িতে যাওয়ার অধিকার হারালে। যারা আমার নামে তোমার কাছে খারাপ কথা বলতে আসবে তারা কেউ তোমার জীবনে থাকতে পারবে না। মনে রেখো।”
তৃষ্ণা বিস্মিত চোখে তাকাল জায়ানের দিকে।

” কি বলছেন এসব?”
জায়ান একটা ফাইল হাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। তৃষ্ণা জায়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল রুমের বাইরে একটা লোক দাঁড়ানো ছিল। জায়ান বের হতেই হাত থেকে ফাইল সেই লোকটা নিয়ে পেছনে যেতে লাগল।
কথাটা বলে কি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারলাম। আচ্ছা উনি তো এমনি কথাটা বলতে পারে। আমি এত ভাবছি কেন? সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে উনি আমায় এত বড় শাস্তি কেন দিবে? বেশি ভাবছি ধুর বকুল কি করছে দেখে আসি।
তৃষ্ণা ফ্রেশ হয়ে বকুলের খোঁজ করতে গেল। উর্মি এখনো ঘুমাচ্ছে কিন্তু বকুল নাই তৃষ্ণার আগমনে উর্মির ঘুম পাতলা হয়ে আসে।

উর্মি বলে, কি হয়েছে ভাবী?”
“বকুল কোথায় ওকে দেখতে পাচ্ছি না!”
“ও তো আরো কিছুক্ষণ আগেই উঠে বাইরে চলে গেছে। আমাকে ডেকেছিল আমি রাতে একটু বেশি সময় জেগে ছিলাম এজন্য উঠতে পারিনি ও বলল ও নাকি তোমার কাছে যাবে। আর আমি তো জানি আজকে ভাইয়া সকালে চলে যাবে। তুমিও জেগে গেছো। তোমাদের রুম ও চেনে এজন্য আমি আর বাইরে যায়নি। দেখো বাসায় ভেতরেই কোথাও আছে হয়তোবা ঘুরতেসে।”

” হুম। ”
তৃষ্ণা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে। এই বাসার প্রত্যেকটা মানুষ রহস্যজনক। ও একা একা কোথায় চলে গেল? এই মেয়েটা ও না আমার কাছে না গিয়ে একা কোথায় চলে গেছে। সব রহস্যজনক মানুষের মাঝে ও ওই খারাপ লোকটাও আছে সেখানে বকুল একা একা ঘুরতেছে না জানি আবার তার চোখে পড়ে যায়।

তৃষ্ণার যত ভয় আয়ান কে নিয়ে যদি আয়ান বকুলের কোন ক্ষতি করে দেয় তার ছোট্ট বোনটা যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় আয়ানকে একটু ও বিশ্বাস নাই। যে তার ভাবীর দিকে এমন কুনজর দিতে পারে সে যে কারো সর্বনাশ করে দিতে পারে।
সারা বাসা তন্ন তন্ন করে খুজলো বকুলকে। তৃষ্ণা কোথাও বকুলের দেখা না পেয়ে ছাদে পর্যন্ত গেল বাসার আরেকটা কাজের মেয়েকে নিয়ে। কারণ লিয়া তখন সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি করছিল। ভয়ে তৃষ্ণার হাত পা কাঁপছে কি করবে ভেবে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরছে।

তখন দেখা হয় উষসীর সাথে তৃষ্ণা কে উদ্বিগ্ন হয়ে হাঁটতে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে?
তৃষ্ণা কান্না করে দিয়ে বলে,”বকুল কে কোথাও খোঁজে পাচ্ছি না। ঘুম থেকে উঠে কোথায় চলে গেল!”
“আরে তুমি কাঁদছো কেন? আশেপাশেও কোথাও আছে ভালো করে খুঁজে দেখো। ভোর সকালে কোথায় যাবে?”
“সারা বাসা তো খুঁজলাম কোথাও নাই।”

কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৩

“বাগানে দেখেছো?”
“না বাইরে তো যাইনি‌।”
“সিউর বাইরে গেছে তুমি একবার বাইরে চেক করো। বোকা মেয়ে একটুতে কান্না করে দিয়েছো। এতো সিকিউরিটি গার্ড এই বাসায় কারো কোন ক্ষতি হবে না টেনশন নিও না।”

কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৫