কৃষ্ণবেণী শেষ পর্ব

কৃষ্ণবেণী শেষ পর্ব
নন্দিনী নীলা

জায়ান নিজের অসুস্থ শরীর নিয়ে তৃষ্ণাকে খুঁজতে বের হ‌ওয়ার জন্য ছটফট করছে। ডক্টর এসে ওকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়ার এগিয়ে আসতেই জায়ান ইনজেকশন টেনে উল্টো ডক্টর কে পুশ করে বেরিয়ে আসে‌। নার্স মাথায় হাত দিয়ে ডক্টর কে ধরে। জেসমিন, উর্মি ও জোভান জায়ান কে বের হতে দেখে থামানোর চেষ্টা করলে জায়ান এমন জোরে ওদের ধমক দেয় ওরা ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। জায়ান বের হতেই পুলিশ ওকে ঘিরে ধরল। জায়ান অবাক হয়ে তাকাল সবাই ওকে এমন ঘিরে ধরছে কেন? মনে হচ্ছে ও কোন আসামী।

একটু পর‌ই ও কাহিনী বুঝতে পারল আয়ান ভাবছে ওকে সবাই। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ওর।
” আয়ান এখানে কিভাবে আসবে ও তো থানায় থাকার কথা? আমাকে আপনারা আয়ান ভাবছেন মাথা ঠিক আছে আপনাদের।” হুংকার দিয়ে বলল জায়ান।
পুলিশ আয়ানের করা সব কথা খুলে বলল। কেবিন থেকে আয়ান মিসিং। জায়ান অবাক হয়ে গেল। এসবের পেছনে কি তাহলে আয়ানের হাত আছে? তোকে এবার আমার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না আয়ান। রাগে ওর মুখ শক্ত হয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আয়ান কে না খোঁজে আপনারা আমাকে আটকে কেন দিচ্ছেন?”
” সরি আমরা আপনাকে আয়ান ভেবেছিলাম।”
সবাই জায়ানের সামনে থেকে সরে দাঁড়ান। জায়ানের পেছনে সবাই ছুটে আসে। একদিন ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ওকে হসপিটালে রাখা গেছে আজকেই ও সব ফেলে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় এতো উত্তেজনা ঠিক না।
জায়ানের সাথে দুজন গার্ড গাড়িতে উঠেছে। জোভান ও দৌড়ে এসে গাড়িতে উঠে বসে।

,,” আমি তোমার সাথে যাব।”
জায়ান উত্তর দিল না। পত্রিকায় ওর আর তৃষ্ণার ছবি ছাপানো হয়েছে।
হঠাৎ একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে জায়ানের নাম্বারে কল আসে। জায়ান রিসিভ না করে বিরক্ত হয়ে কল কেটে দেয়। কিন্তু টানা কল আসছে দেখে রিসিভ করে বিরক্তিকর গলায় কে জিজ্ঞেস করল।
ওপাশ থেকে লোকটা কিছু একটা বলল। জায়ান উত্তেজিত গলায় জায়গায় নাম জিজ্ঞেস করে।
লোকটা ঠিকানা বলতেই জায়ান সেদিকে গাড়ি নিয়ে যেতে বলল।
জোভান অবাক গলায় বলল,,” কে কল করেছিল ভাইয়া?”

” চিনি না।”
” কি বলল?”
” তৃষ্ণার খোঁজ পেয়েছি!”
” হোয়াট?” বিষ্ময় এ হতবিহ্বল হয়ে গেল জোভান এতো সহজে তৃষ্ণার খোঁজ পেয়েছে ও বিলিভ করতে পারছে না।
তৃষ্ণা একটা চায়ের দোকানে বসে আছে। মুখশ্রী যথেষ্ট ফ্যাকাশে। দুদিন যাবত না খেয়ে ওর শরীর নেতিয়ে গেছে। পানি বিহীন ওকে রুহুল কিছুই খাওয়াতে পারে নি। ওকে যে বাসায় ধরে রাখা হয়েছিল তার থেকে একটু বাম সাইডে এই চায়ের দোকান সেখানেই বসে আছে তৃষ্ণা। ওর গায়ে এখনো দুইদিন আগের সেই স্কুল ড্রেস। চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। ওর সামনে একটা মেয়ে ও একটা পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে। এই পুরুষ টাই একটু আগে চা খেতে এসে ওকে দেখে চমকে গিয়েছিল। তারপর ওর কাছে এসে বলেছে,,” আপনি জায়ান আহনাফ এর ওয়াইফ মিসেস তৃষ্ণা রাইট?”

তৃষ্ণা হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে ছিল লোকটার দিকে। ওর চোখে ছিল চরম বিষ্ময়। লোকটা ওকে চিনল কি করে? ও এতোক্ষণ এখানে বসে ভাবছিল কীভাবে বাসায় ফিরবে কিন্তু লোকটা ওর পরিচয় জানল কি করে? সে কি জায়ানের পরিচিত কেউ?
তৃষ্ণার বিস্মিত চোখে ভাষা লোকটা হয়ত পড়ে ফেলল। তার হাতে একটা পত্রিকার কাগজ আছে। সেটায় তৃষ্ণা আর জায়ানের একটা কাপল পিকচার দেওয়া। তৃষ্ণা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে পত্রিকার দিকে।

” এটা আপনি তো?”
তৃষ্ণা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে স্বীকার করল।
” কাঁদবেন না আমরা আপনাকে আপনার স্বামীর কাছে পৌঁছে দেব। কিছু খাবেন?”
তৃষ্ণা কাঁদছে মুখে হাত চেপে। দুটো দিন ওর কাছে নরকের মতো কেটেছে। মাথা নিচু করে বসে চোখের জল ফেলছে একটা কথাও বলাতে পারল না কেউ ওকে।

দূর থেকে একটা সাদা গাড়ি এগিয়ে আসতে দেখে তৃষ্ণা মাথা উঁচু করে তাকায়। গাড়ি থেকে অতি প্রিয় মানুষটিকে বেরিয়ে আসতে দেখতেই ওর বুকের ভেতর কেঁপে উঠে।‌ দীর্ঘ দিন পর জায়ান কে দেখে তরাক করে উঠে দাঁড়ায়। দূর থেকেই জায়ান তৃষ্ণাকে দেখতে পেয়েছে। কাঁধ পর্যন্ত চুল গুলো দুলিয়ে মেয়েটা দৌড়ে আসছে ওর দিকে। দূর্বল শরীরে তৃষ্ণা কীভাবে ছুটে আসছে ও নিজেও জানে না। কিন্তু ও শুধু চাইছে জায়ানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তারপর নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিবে ওর একমাত্র আশ্রয়স্থলে। জায়ান তৃষ্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে পারছে না। থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তৃষ্ণা দৌড়ে এসে জায়ান এর বুকে ঝাঁপিয়ে পরেছে ততক্ষণে।

” আপনি এতো দেরি করে কেন আসলেন। কত কষ্ট হয়েছে আমার জানেন?” অস্পষ্ট সুরে বলল তৃষ্ণা।
জায়ান পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে তৃষ্ণা মুখটা দুহাতে ধরে সামনে এনে দেখল চোখের পারে কালি পড়ে গেছে। মুখটা শুকিয়ে একটু খানি হয়ে গেছে। চুলের দিকে তাকাতেই ওর হৃদপিন্ড কেঁপে উঠল। কান্না গিলে তৃষ্ণার কপালে চুমু খেয়ে বলল,,” সরি জান। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার জন্য তোমাকে সাফার করতে হলো।”
তৃষ্ণা জায়ানের বুকের সাথে মিশে ঝরঝরিয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল। এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেন‌ বুকের ভেতর ঢুকে যেতে পারলে শান্তি পেতো।

যে লোকটা জায়ান কে কল করেছিল তার নাম নিহান। এগিয়ে এসে জায়ানের সাথে হ্যান্ডশেক করে চলে গেল। তৃষ্ণা কথা বলার মতো অবস্থায় নেই জায়ান কে পেয়েই নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিয়েছে। জায়ান কিছু জিজ্ঞেস না করে তৃষ্ণা কে আলতো হাতে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। তৃষ্ণা এখন কথা বলার মতো অবস্থাতেও নাই। গাড়িতে উঠে লক্ষ্য করে তৃষ্ণা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। জায়ান তৃষ্ণার গালে আলতো চাপ দিয়ে ডেকে উঠে। তৃষ্ণাকে নড়চড় করতে না দেখে শিউর হয় তৃষ্ণা অজ্ঞান হয়ে গেছে।

যে বাসায় তৃষ্ণা কে আটকে রাখা হয়েছিল পুলিশ সেখানে থেকে রুহুল, আয়ান ও কয়েকজন গুন্ডার লাশ উদ্ধার করে। শেফালী কে খোঁজে বের করে থানা নেওয়া হয়। শেফালী নিজের পরিবারের বিপদের জন এই কাজ করেছে কিন্তু অপরাধ তো অপরাধ ই। তাই তার শাস্তিও হবে। এদিকে আয়ান ওখানে কীভাবে পৌঁছাল। রুহুল আর আয়ানের মধ্যে যে বিরাট বড়ো ঝামেলা হয়েছিল সেখানের অবস্থা দেখেই বুঝা গিয়েছে। তৃষ্ণা তাদের লড়াইয়ে মধ্যে লুকিয়ে ছিল খাটের কোনে। কেউ কারো থেকে কম নয়।

দুজন দুজনের প্রাণ নিয়েই ক্ষান্ত হয়েছে। তৃষ্ণা আয়ান কে দেখে এক মুহুর্তের জন্য জায়ান ভেবে বসেছিল কিন্তু আয়ান নিজেই নিজের পরিচয় দিয়েছে রুহুলের কাছে। তৃষ্ণা তখন আরো ভয়ে ছিল আয়ানের উদ্দেশ্য ছিল ওকে রুহুল এর থেকে উদ্ধার করে নিজে কব্জা করা। আর তৃষ্ণা হতভম্ব হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে ছিল। থানা থেকে এই লোকটা বের হলো কি করে? আয়ানের বদলে জায়ান কেন এলো না?

এদিকে আয়ান না আসলে আজ রুহুল এর থেকে ও রক্ষা পেতো না। কারণ সময় মতো আয়ান না আসলে রুহুল ওর উপর শারীরিক নির্যাতন করতো। আয়ান কে ও পছন্দ করে না কিন্তু তার জন্য আজ ও নিজেকে বাঁচাতে পেরেছে। আয়ানের মৃত্যুতে তৃষ্ণা থমকে গিয়েছিল। কিন্তু কেন জানি দুই শয়তান নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে মরেছে এটা দেখে ভেতর থেকে একটা স্বস্তি ও পেয়েছিল।

কিন্তু চোখের সামনে রক্তারক্তি কান্ড মারামারি দেখে ও ভয়ে কি করবে বুঝে উঠেছে পারছিল না। নিজের রক্ত মাখা সাদা হিজাব গায়ে জড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসে বাসা থেকে। আয়ান অনেক লোক নিয়ে এসেছিল কিন্তু তারা আয়ান মরতেই পালিয়ে গেছে। তৃষ্ণা বেরিয়ে বাসায় কিভাবে যাবে চিনতে না পেরে হাঁটতে লাগে। আর একটা চায়ের দোকানে নজরে পড়তেই নিজেকে সেখানে বসিয়ে রাখে।

কারণ ওর শরীর এতোটাই দূর্বল লাগছিল হাঁটা কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু নিজের জ্ঞান ততক্ষণ ধরে রেখেছিল যতক্ষণ আপন মানুষের দেখা না পাওয়া যায়। চায়ের দোকানদার অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু তৃষ্ণা একটা কথাও বলেনি। আসলে ওর গলা দিয়ে কথা বের হয়নি। শুধু ভয়ে ও থরথরিয়ে কাঁপতে থাকে। দুইদিনে এতো সব কাহিনী দেখা লাগবে ওর ও ভাবতেই পারেনি।

বাসায় আসার পর তৃষ্ণা কে স্যালাইন দেওয়া হয় অতিরিক্ত দূর্বলতায় ও নেতিয়ে গেছে। ছয় ঘন্টা স্যালাইন চলে। খাবার দেওয়া হয়েছে কিন্তু এক লোকমা ও খেতে পারে নাই।এবার জায়ান নিজে খাবার নিয়ে তৃষ্ণার সামনে বসে আছে। তৃষ্ণা পাথরের মতো মাথা নিচু করে বসে আছে। আসার পর থেকে একটাও কথা বলে নাই। বকুল বোনকে জড়িয়ে ধরে কত কান্না কাটি করল তৃষ্ণা একটা কথা ও বলল না। উর্মি খাবারের প্লেট দিয়ে গেছে।

” আমার দিকে তাকাও তৃষ্ণা।”
তৃষ্ণা টলমল চোখে জায়ানের চোখের দিকে তাকাল।
জায়ান বাম হাতে তৃষ্ণা গাল ধরে বলল,,” খাবে না?”
তৃষ্ণা উত্তর দিল না। ছলছল চোখে শুধু তাকিয়ে আছে নিষ্পলক। জায়ান ভাতের প্লেট সরিয়ে তৃষ্ণা মাথা বুকে টেনে নিয়ে বলল,,” কথা বলো প্লিজ। এভাবে নিশ্চুপ থেকো না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তোমাকে এমন গুমড়ে থাকতে দেখে আমার বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।”

তৃষ্ণা জায়ানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ডিপ ডিপ হৃদস্পন্দন এর শব্দ শুনছে। কথা বলতে চাইলেও ও বলতে পারছে না।
জায়ান ব্যর্থ গলায় বলল,,” আমার সাথে কথা বলতে চাও না? এতোটা অপরাধী হয়ে গেলাম আমি?”
তৃষ্ণা এবার ফুঁপিয়ে উঠল। জায়ানের বুকের কাছের শার্ট খামচে ধরে বলল,,” আমি ওই সময় গুলো ভুলতে পারছি না। কি নৃশংস!”

” কথা বলো সবার সাথে, এভাবে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিলে কিভাবে তুমি স্বাভাবিক হবে?”
” পারছি না। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আমার চুল কেটে দিছে, তখন মনে হয়েছে আমার প্রাণ কেড়ে নিছে। আপ নি ও তো কষ্ট পাচ্ছেন। আপনি তো বলেছিলেন এই চুল আপনার সব চেয়ে পছন্দের। আমাকে আপনি এইজন্য ভালবেসে ছিলেন আর আজ সেটাই আমার নাই। এখন তো আপনি আর আমাকে ভালবাসবেন না। আমি কিভাবে স্বাভাবিক হবো ওই লোকটা আমার সব সুখ কেড়ে নিল। আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। মনে হচ্ছে এই যন্ত্রণার থেকে আমিও আপনার মায়ের মতো পাগল হয়ে গেলে ভালো হতো। সব কষ্ট ভুলে একটু মুক্তি পাব।”

জায়ান তৃষ্ণার মাথাটা বুকে থেকে টেনে উঠিয়ে রাগী চোখে তাকালো ওর ফোলা মুখের দিকে। জায়ানের রাগান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণা অসহায় মুখ করে। তৃষ্ণা অবচেতন মন শুধু বলছে জায়ান আর ওকে ভালবাসবে না।
জায়ান রাগান্বিত গলায় বলল,,” I love you in every way. হ্যা আমি তোমার চুল দেখেই তোমায় পছন্দ করেছিলাম কিন্তু তাই বলে সেটা না থাকলে তোমায় ভালবাসব না এটা কল্পনাও করতে পারি না।

আমি তোমায় ভালবাসি তৃষ্ণা। আমার ভালবাসা তুমি পুরোটাই। তোমার শরীরের একটা অংশ আমার পছন্দের বেশি ছিল তাই বলে তুমি পুরোটা আমার কাছে ফেলনা নয়। তুমি মানুষটাই আমার কাছে অতি আপন।‌ আমার ভালবাসা। তোমার যদি আর কখনো চুল নাও হয় এই কাঁধ পর্যন্ত চুলের তৃষ্ণাকেই আমি সারাজীবন ভালবাসব। তুমি জানো তোমাকে এখন কত মিষ্টি লাগছে। তোমার এই নিউ লুক আমায় আরেকবার তোমার প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে। এক চুলের জন্য আমি সব কিছুকে কেন ত্যাগ করব। আর তোমার চুলটাও আমার কাছে আছে। রুহুল সেটা আমাকেই প্রেরণ করেছিল।”

জায়ান উঠে ড্রয়ার খুলে তৃষ্ণা লম্বা চুলের গোছা বের করে দেখালো তৃষ্ণা কে। তৃষ্ণা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।‌ জায়ান চুলটা যথা স্থানে রেখে তৃষ্ণার কাছে এগিয়ে এল। ওর পাশে বসে ওর চোখের জল মুছিয়ে চোখের পাতায় চুমু খেল। জোর করেই কয়েক লোকমা খাবার তুলে দিল মুখে তৃষ্ণা।

এক সপ্তাহ পর পার্লার নিয়ে যায় উর্মি তৃষ্ণা কে সাথে জায়ান ও বকুল ও আসে। একা তৃষ্ণা কে আর কখনো বাইরে পাঠানোর সাহস করতে পারবে না জায়ান। পার্লার থেকে চুলগুলো একটা সুন্দর কাটিং দিয়ে আসে। তৃষ্ণা যতবার আয়নায় নিজের মুখ দেখে কেঁদে উঠে। চুল দেখলেই ওর বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠে। জায়ান বাইরে অপেক্ষা করেছে।ওরা আসতেই তৃষ্ণা কে নিয়ে ওরা শপিং মলে আসে। তৃষ্ণা মুখ গোমড়া করেই ঘুরাঘুরি করে। আসার পথে উর্মি হঠাৎ গাড়িতে থেকে চিৎকার করে উঠে,,” ভাইয়া গাড়ি থামাও।”

জায়ান চমকে গাড়ি ব্রেক করে।
” কি হয়েছে?”
উর্মি তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,,” ভাবি তুমি কখনো ফুচকা খেয়েছ?”
তৃষ্ণা মাথা নাড়িয়ে না বলে।
” খুব বড় মিস করেছ। তাড়াতাড়ি নামো তোমার মন আমি ফুচকা খাইয়ে ভালো করে দেব। আসো।”
জায়ান বাঁধ সাধলো,,” ইম্পসিবল। রাস্তার নোংরা খাবার খাওয়া যাবে না। কিছু খেতে চাইলে রেস্টুরেন্টে চল বা ফুসকা হাউজে চল।”

” উফ ভাইয়া ফুসকা কি আর চার দেয়ালের মাঝে খেয়ে মজা! ওখানে কি ইনজয় করবে? তুমি একদম বাঁধ সাধবে না। চুপচাপ নামো এখানেই আমরা ফুচকা খাব। ভাবি কিছু বলো।”
তৃষ্ণা জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,” আপু সাথে খাই প্লিজ। না করবেন না।”
জায়ান তৃষ্ণাকে আর মানা করতে পারল না। রাগী চোখে শুধু উর্মির দিকে তাকাল। বিরক্তিকর গলায় আচ্ছা বলে নেমে এল তিনজন।

উর্মিকে জোভান কল করেছে ওরা কোথায় আছে জানতে। উর্মি কোথায় আছে বলে কল‌ কেটে দিল।
তিন প্লেট ফুচকা অর্ডার করল উর্মি। বকুল গোল গোল চোখে তাকিয়ে ফুচকার ভেতরে ভর্তা দেওয়া দেখছে। ওর জিভে জল চলে আসছে মন বলছে এটা খেতে খুব সুস্বাদু হবে।
উর্মি প্রথম প্লেট বকুল কেই দিল। বকুল এতো বড় ফুচকা কীভাবে খাবে ভাবছে।
উর্মি ওর মুখের ভঙ্গিমা দেখেই হেসে ফেলেছে।

ওর প্লেট থেকে একটা ফুচকা ইয়া বড়ো হা করে নিজের মুখে পুরে নিল। তৃষ্ণা ও বকুল চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। ওদের গ্রামে এমন ফুচকা কখনো দেখেনি‌। খায় ও নি কখনো তাই সবটাই ওদের কাছে নতুন লাগছে। বকুল খাচ্ছে আর খুব প্রশংসা করছে।

তৃষ্ণা নিজের প্লেট নিয়ে জায়ানের সামনে এসে দাঁড়াল। জায়ান কপালে কুঁচকে বলল,,” কোন সমস্যা? খাচ্ছ না কেন?”
তৃষ্ণা কাঁচুমাচু মুখ করে তাকিয়ে আছে। আমতা আমতা করে পাশে এক জোড়া কাপল এর দিকে তাকায় আড়চোখে। একটা ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেই হেসে হেসে একজন আরেকজন কে খাইয়ে দিচ্ছে ফুচকা।
জায়ান তৃষ্ণার দিকে ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে মন পড়ার চেষ্টা করছে। তৃষ্ণা আড়চোখে এক জোড়া কাপল এর তাকাচ্ছিল সেটা লক্ষ্য করে।

” খাইয়ে দেওয়া লাগবে? ওদের মতো?” জায়ানের ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। তৃষ্ণা জায়ানের কাছে ধরা পড়ে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল। মাথা নিচু কাঁপতে লাগল। জায়ান চামচ দিয়ে ফুচকা তুলে দিল তৃষ্ণার মুখে। তৃষ্ণা এতো খুশি হলো যে ও বলে উঠল,,” থ্যাংকিউ।”

জায়ান তৃষ্ণার দিকে আরেকটা ফুচকা তুলে দিয়ে বলল,,” ব‌উ আমার দেখি রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন তো এই পুতুল ব‌উয়ের সাথে আমাকে একদম মানাচ্ছে না। চুল ছোট করায় তোমায় তো একটা বেবি ডল লাগছে।”
তৃষ্ণা লজ্জা গলায় বলল,,” আমাকে পুতুল লাগছে?”

” হুম। আমার পুতুল ব‌উ।”
বলেই জায়ান তৃষ্ণার গাল টেনে দিল। তৃষ্ণা একটা সাদা রঙের গাউন পরেছে এটার সাথে কটি এড করা এজন্য ওরনা নেওয়ার প্রয়োজন পরে নাই। চুল গুলো সুন্দর করে কেটেছে গোল করে। ওর মুখটা গোলগাল ফর্সা গাল দুটো গোলাপী আভা ফুটে থাকে। ওকে ঠিক বিদেশিনী লাগছে। জায়ান তৃষ্ণার চুল গুলোতে হাত দিয়ে এলোমেলো করে বলল,,” বাচ্চা ব‌উ এখন পুতুল ব‌উ হয়ে গেছে।”

তৃষ্ণা জায়ানের দিকে একটা ফুচকা তুলে দিল। জায়ান নাক মুখ কুঁচকে ফেলল।
” এগুলো আমি খাব না।”
” প্লিজ একটা খান অনেক টেস্টি।”
জায়ান তৃষ্ণার জোরাজুরিতে একটা মুখে নিল। মুখটা যথেষ্ট গম্ভীর তবুও দাঁতে দাঁত চেপে খাচ্ছে। এদিকে বকুল আর উর্মি ওদেরকে দেখছিল। উর্মি এবার এগিয়ে এসে চেঁচিয়ে উঠল,,” খুব তো নোংরা বলছিলে এখন তো ঠিকি খাচ্ছ। ”
জায়ান গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। তৃষ্ণা মিটিমিটি হাসছে।

জোভান আসার পর থেকে উর্মিকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে। বকুলকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায় ও। কিন্তু তৃষ্ণার জন্য পারছে না ও উর্মিকে একটু তৃষ্ণা কে ম্যানেজ করে দিতে বলছে।বকুল এসেছে অনেক দিন হলো। ওর ফিরে যাবার সময় হয়ে আসছে। তাই আজকে একটু একাকি সময় পার করতে চায়। উর্মি কে মনের অনুভূতি জানিয়েছে আয়ান বকুল কে ব‌‌উ সাজিয়ে এনেছিল তখন। ওর একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড ওর বোন উর্মি। কষ্টের কথা ও কারো সাথে শেয়ার করতে পারে নাই। তখন উর্মির সাথেই সব শেয়ার করেছিল। আর জায়ান সে তো সিসি টিভির মতো সব কীভাবে যেন বুঝে যায় বলতেও হয়না।

” একদম আমার পেছনে ঘুরবি না। ভাবির বোনের সাথে ডেটিং করতে যাবি তার অনুমতি আমি কেন এনে দেব। তোর দরকার তুই যা ভাবির কাছে তার বোনকে চাইতে।”
” আমার ভয় করে।”
” এতো মিষ্টি ভাবিকে কেউ ভয় পায় গাধা। যা বলছি মনে কথা‌ ভাবিকে জানিয়ে আগে মানিয়ে নে। না হলে কিন্তু তার বোন জামাই আর তোর হওয়া হবে না। সে সম্পর্কে তোর ভাবি আবার জেইঠাস।”

জোভান মুখটা ভোঁতা করে ঢোক গিলে তৃষ্ণার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তৃষ্ণা, জায়ান ও বকুল দাঁড়িয়ে কথা‌ বলছিল। বকুল জোভানের দিকে তাকিয়ে আছে। জোভান ঢোক গিলে বলল,,” ভাবি তোমার সাথে একটু জরুরি কথা ছিল।”
তৃষ্ণা বলল,,” হ্যা বলো।”
জোভান আমতা আমতা করছে। জায়ান বলল,,” কিরে বল কি জরুরী কথা।”
তৃষ্ণা ফিক করে হেসে বলল,,” আমার বোনকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চাও?”
জোভান চোখ কপালে তুলে তাকাল। ভয়ে ওর হাত পা কাঁপছে। ভাবি না জানি ওকে খারাপ ভেবে বসে।

” না মানে আসলে ভাবি….
” থাক ভাই কিছু বলা লাগবে না। আমি সব শুনেছি। তুমি যদি আমার বোনের দায়িত্ব নিতে চাও তার জন্য আমার বাবা মায়ের সম্মতি লাগবে। আমার কথা জানতে চাইলে আমি বলব আমার বোন আমার চোখের সামনে থাকবে এর থেকে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। বোনকে জা হিসেবে পেয়ে আনন্দি‌ত‌ই হব।”

জোভান খুশিতে কাকে জড়িয়ে ধরবে না পেয়ে জায়ান কেই জড়িয়ে ধরে।
” তোর বিয়ে আমার শালিকার সাথেই হবে নো টেনশন। কিন্তু এখনি নয়। বকুলের এখনো বয়স কম। আর তুই ও নিজের লেখাপড়া শেষ করিস নি। তাই বিয়েটা তোর পড়ালেখা শেষ হলেই হবে। আর বকুল কেউ আমি স্কুলে ভর্তি করে দেব। তৃষ্ণার ভাই এখন জব করছে তাই তার সাথে বাবা মা ও শহরেই থাকবে এখন থেকে।”
তৃষ্ণা সন্তুষ্টি চোখে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।

জোভান বকুলকে নিয়ে গাড়ি করে চলে গেল। উর্মি এগিয়ে এসে বলল,,” দেখছ কান্ড সবাই জোড়া হয়ে যাচ্ছে প্রেম করতে আর আমার বর বিজনেস এর জন্য সিলেট গিয়ে পড়ে আছে। এখন আমি কার সাথে প্রেম করব।”
তখনি আরিফের নাম্বার থেকে কল আসে। উর্মি কলে কথা বলতে বলতে তৃষ্ণা আর জায়ান কে রেখে চলে গেল। তৃষ্ণা জায়ানের বুকে মাথা রেখে বলল,,” আমি আমৃত্যু আপনার বক্ষস্থলে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে চাই।”
জায়ান দুহাতে তৃষ্ণা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেল।

আয়ানের মৃত্যুতে খুব একটা শোক পালন আর কেউ না করলেও সেটা পালন করছে জেসমিন। সাদিকুর ও সে নিয়ে মন মরা হয়ে থাকে। উর্মি নিজের মন খারাপ টা কাউকে দেখায় না। বিশেষ করে জায়ানের সামনে তো নয়‌ই কিন্তু মনের দিক দিয়ে কষ্ট পেয়েছে প্রচুর।‌ ভাই ছিল যতোই খারাপ থাক। জোভান আয়ান এর মৃত্যুর খবরে কষ্ট একটু হয়েছিল কিন্তু তার সামনে ওর করা সব অন্যায়ের কাছে তুচ্ছ।

আয়ান আর উষসীর একটা ছবি ড্রয়িংরুমে টানাই রাখা হয়েছে। সেদিকে চোখ ভরা জল নিয়ে তাকিয়ে আছে জেসমিন। সন্তান যত‌ই খারাপ হোক মায়েদের যে বুকটা ফেটে যায়। তাই তো এতো অন্যায় করার পর ও তিনি আয়ানের জন্য না কেঁদে থাকতে পারেন না।
জায়ান তৃষ্ণাকে নিয়ে একবার মৌমিতা কে দেখতে গিয়েছিল। তার অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। জায়ান মায়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। আয়ান আর পৃথিবীতে নাই জানার পর তার রিয়েকশন কেমন হবে? যদি কোনদিন মা স্বাভাবিক জীবনে ফেরে তখনি জানবে এই চরম সত্য।

সুজনের ব‌উ মালতি কেন আত্নহত্যা করল?
মালতি বিয়ের পর সুন্দর মতোই সংসার করছিল। সেখানে অবশ্য স্বামীর ভালবাসা ছিল না।
ওর সাথে একমাত্র বকুলের একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। বকুল যে প্রতিদিন ওদের বাসায় গিয়ে ওর সাথে গল্প করে। সুজন ওকে কাছে টেনে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি। কারণ তার মনে এখনো তৃষ্ণা আছে। সেটা সুজন নিজেই বলেছে আর এটাও বলেছে তাকে ভালবাসার চেষ্টা করবে।

কিন্তু বললেই তো ভালবাসার মানুষকে সরিয়ে আরেকজন কে জায়গা দেওয়া যায় না। মালতি নিজের জন্য জায়গা তৈরি করবে এমনটাই আশা করেছিল কিন্তু হঠাৎ সব তছনছ হয়ে যায়। মালতি কোনদিন মা হতে পারবে না এই চরম সত্য কথাটা ওর পরিবার না জানিয়ে ওকে বিয়ে দিয়েছে। মালতি জানত এই কথা জানিয়ে বিয়ে দিয়েছে কিন্তু ওর শাশুড়ি একদিন হঠাৎ খুব চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগে। মালতির আপন ফুপি ওর শাশুড়ি কে এই কথাটা বলে দিয়েছে আর এ‌ও বলেছে তাদের ঠকানো হয়েছে।

” হায় আল্লাহ আমার একটা মাত্র পোলা। তার বিয়ে এমন মেয়ের সাথে দিলাম সে নাকি কোন দিন মা হতে পারবে না। আমার পোলার সংসারে সন্তান আইবো না। নির্বংশ হয়ে যাবে গো। না দেখতে সুন্দর আর না সন্তানের জননী হতে পারবে। কি অলক্ষি ঘরে আনলাম।”
সুজনের মায়ের‌ আহাজারি শুনে ভয়ে মালতি আঁতকে উঠে।‌সুজনের মা মালতিকে দেখতেই ছুটে এসে চুলের মুঠি ধরে বলে,,” বের হ আমার বাড়ি থিকা অলক্ষি।”

মালতি অনেক কথা বলতে চায় অনেক সে মালতির কোন কথাই শুনে না। সুজন তখন বাজারে ছিল। বাসায় এসে এই অবস্থা দেখে চমকে উঠে মাকে থামায়।‌ সুজনের মা কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বলে। সব শুনে সুজন ও রেগে যায়। একেতে এই মেয়ে ওর পছন্দ না তার উপর নাকি এতো বড় কথা লুকিয়ে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে। ওকে তো ঠকানো হয়েছে।‌ও নিজেও মালতির উপর রাগারাগী করে।

তারপর বলে এখনি নাকি মালতিদের বাড়ি গিয়ে সব জানাবে। ঠকবাজ, মিথ্যা বাদীদের মেয়েকে নিয়ে সংসার করবে না। মালতি থমকানো চোখে তাকিয়ে ছিল সুজনের দিকে ও ভেবেছিল সুজন হয়ত ওর দিকে একটু হলেও সহানুভূতি দেখাবে কিন্তু না ওকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে। এদিকে ওর মনে পড়ে যায়।‌ দেখতে সুন্দর না বলে ওর বিয়ে হচ্ছিল না বাবা মা অনেক চিন্তায় থাকত ওকে নিয়ে। আবার ওর এতো বড় অক্ষমতার জন্য কেউ বাড়ির ব‌উ করতে চায়নি ওকে। অনেক কষ্টে এই বিয়েটা হয়েছে।

তাও এমন মিথ্যা চার করে। ওর চোখে জল ভরে উঠে। বিয়ে পর নিজের বাড়ি গিয়েছিল তখন ওর মা ওকে বলেছিল,,” জামাই বাড়ির মাটি কামড়ে পড়ে থাকবি। যাই হয়ে যাক। জানিস তো বিয়ে না হলে এই সমাজে টিকতে পারে না মেয়েরা আবার তালাক দেওয়া মেয়েকে নিয়েও বাবা মা সমাজে সুখ দেখাতে পারেনা। তুই যদি কোন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়িস এই বাড়ি ফিরে আসবি না। দরকার পরল মরবি তাও স্বামীর ভিটা রেখে বাপের বাড়ি আসবি না।”

মায়ের সেই মরার কথাটা তখন মাথায় চেপে বসে। এই লোকটা ওকে ভালবাসে না তার মনে আরেকজনের বাস। আর সে এই অক্ষমতা মেনে সাধু হয়েও ওকে ভালবাসবে না আর না সংসার করবে। তাহলে কার জন্য বেঁচে থাকব। মায়ের কথাই ফলুক তাহলে।

মা ছেলেকে বাইরে রেখেই মালতি দরজা আটকে দেয়। খুন সুজন না করলেও মালতির আত্নহত্যার জন্য দায়ী ওরা মা ছেলে তাই সুজন ভয়ে পালিয়ে যায় বাড়ি থেকে।
( যাদের কৃষ্ণবেণী গল্পটা পছন্দ, ভালো লেগেছে তারা একটু কষ্ট করে রিভিউ দিয়ে পাশে থাকবেন। আপনাদের রিভিউ আমাদের মতো লেখিকাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। ধন্যবাদ নেবেন সবাই।)

সমাপ্তি

গল্প লিখতে চাইলে সারাজীবন এ ও শেষ করা যাবে না। যত এগোবে তত কাহিনী বাড়বে ঝামেলা বাড়বে ইটস নরমাল বিকজ জীবন যতদিন থাকবে সমস্যা, হাসি, কান্না, সুখ , দুঃখ, ভালবাসা সব আসতেই থাকবে। শুধু হেসে ও পার করা যায় না কেঁদে ও পার করা যায় না। আমি যতটা ভেবে রেখেছিলাম ততটাই দিলাম আপনার বললেও এখন এটা বাড়ানো সম্ভব নয়।
পরিশেষে বলি দুই একজনের জন্য আমি মন খারাপ করি না। আমি আমার মতো চেষ্টা করি ভালো লেখার কিন্তু আমি জানি না ঠিক কতটা পেরেছি। যারা গল্প পড়েছেন সবাইকে অনেক ভালবাসা, ও শুকরিয়া। দোয়া করবেন যেন আপনাদের মনমতো কিছু দিতে পারি সামনে।
দীর্ঘ জার্নির প্রিয় গল্পটা শেষ করলাম। জায়ান, তৃষ্ণা, বকুল, উর্মি, আরিফ, জোভান, সবাইকে অনেক বেশি মিস করব। আপনারা কতটা করবেন জানি না। অনেক শেষ হবে শুনে বলেছেন যেন সিজন টু লিখি। আমার ও ইচ্ছে আছে সিজন টু লেখার। কিন্তু এখনি সম্ভব নয়। সাজিয়ে নিয়ে আসছে সময় লাগবে।‌ যদি মন মতো সাজাতে পারি তাহলে সিজন টু নিয়ে আসব আপনাদের জন্য।
কিন্তু নতুন করে হবে না সেটা। এটার সমাপ্তি থেকে নতুন করে শুরু করব।

কৃষ্ণবেণী পর্ব ৪৫

2 COMMENTS

Comments are closed.