কৃষ্ণবেণী পর্ব ২১

কৃষ্ণবেণী পর্ব ২১
নন্দিনী নীলা

“কি হলো এটা! জায়ান তোমার ওপর এতো রেগে গেল কেন? কি বলেছ তুমি ওকে?”
জোভান জেসমিন বেগম এর দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে হন হন করে নিজের রুমে চলে যায়।
জেসমিন বেগম হা করে ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
জোভান নিজের রুমে এসে দেয়াল ঘুসি মারতে লাগল।

এদিকে তৃষ্ণা ঘুম ভেঙে দেখে জায়ান আশেপাশে নাই। ঘুমানোর আগে করা কান্ডকারখানা মনে পরতেই চমকে উঠে। এমন বিহেভ কখনো করেনি ও জায়ানের সাথে আজ করে প্রচুর লজ্জা পাচ্ছে ও।‌

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে এসে ব‌ই নিয়ে পড়তে বসে। যাতে জায়ান এসে আর ওকে বকতে না পারে। ব‌ই নিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে একাই। তখন বাইরে থেকে চিৎকারের শব্দ আসে। তৃষ্ণার রুমে থেকে শব্দ টা খুব আসছে। ও বুঝতে পারছে না এই শব্দ কোথা থেকে আসছে। ড্রয়িং রুমে থেকে ত আসার কথা নয়। কারণ সেখানে থেকে এই রুমে কোন শব্দ আসে না। এই বাসার সবার শেষে আমাদের এই রুমটা। তৃষ্ণা বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। নিচের দিকে তাকাতেই দেখে আয়ান আর জায়ান মারামারি করছে। তৃষ্ণা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে ওখানে দুজনে শত্রুর মতো মারপিট করছে কেন?

কোনটা কে তৃষ্ণা দূরে থেকে বুঝতে পারছে না। দুজনেই আঘাত পাচ্ছে সমানে। লাস্টে একজন পুকুরে পরে গেল। তৃষ্ণা দৌড়ে নিচে আসলো। সবাইকে জানাতে কিন্তু অদ্ভুত বিষয় নিচে কেউ নাই। তৃষ্ণা বাইরে এসে দেখল সবাই সেই দিকেই যাচ্ছে। দুজনকে থামানোর চেষ্টা করছে। তৃষ্ণা নিজের প্রতি আয়ানের নোংরা দৃষ্টি দেখে ভাবতো একদিন আয়ান অনেক মার খাবে জায়ানের হাতে। আর সেদিন তৃষ্ণা তৃপ্তির হাসি হাসবে। সেই মারপিট হচ্ছে দুজনের মাঝে কিন্তু কারণটা তৃষ্ণা জানে না। আর এখানে দুজনেই ভালো মার খেয়েছে আর আহত দুজনেই হয়েছে। কিন্তু তৃষ্ণা তো চায়নি ওর স্বামী ওই নোংরা লোকটার হাতে মার খাক। তাহলে কেন খেলো। ওর চোখ ছলছল করে উঠলো।

জেসমিন বেগম এগিয়ে এসে জায়ানের জখম লাগা হাতে ছুয়ে বলল,” এসব কি করছো তোমরা? ইশ কত আঘাত পেলে। কেন দুই ভাই মারামারি করলে বলো?”
জায়ান জেসমিন বেগমের হাত নিজের হাতের উপর থেকে সরিয়ে বলল,” আপনি আপনার আদরের ছেলের থেকে শুনেন।”
” তুমি আমার সব চেয়ে আদরের সন্তান।”

জায়ান তাকে অবজ্ঞা করে চলে এলো। তৃষ্ণা নিচে এসেই জায়ান কে চিনে ফেলেছে। জায়ানের পেছনে দৌড় লাগিয়েছে ও।
জায়ান বিছানায় বসে আছে। শরীরের অনেক স্থানে লাল হয়ে আছে। ঠোঁটের কোনায় রক্ত লেগে আছে। জায়ান গায়ের শার্টটা খুলে ফেলল।
তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,” ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসো।

তৃষ্ণা এক পাশে দাঁড়িয়ে জায়ানের ক্ষত দেখছিল। জায়ানের কথা শুনে ড্রয়ার খুলে বক্স নিয়ে এলো।
জায়ান তৃষ্ণার হাত থেকে বক্স নিয়ে খুলল। ভেতর থেকে তুলা বের করে তাতে স্যাভলন লাগিয়ে বলল রক্ত মুছে দিতে।
তৃষ্ণা তুলা হাতে নিয়ে ঢোক গিলছে।
” তৃষ্ণা তাড়াতাড়ি কর। জ্বলছে প্রচুর।”

তৃষ্ণা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে‌ বলল,” আপনারা মারামারি করলেন কেন?”
” খুব মারপিট করতে ইচ্ছে হয়েছিল। মানুষ পাচ্ছিলাম না তাই দুই ভাই ইচ্ছা পূরন করলাম মারপিট করে।”
তৃষ্ণা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বলে,” এ্যা কি বলেন? এমন অদ্ভুত ইচ্ছে ও কারো হয় নাকি?”
” কথা কম বলে কাজ কর।”

তৃষ্ণা কাঁপা হাতে তুলো নিয়ে জায়ানের পেছনে গিয়ে বসলো বিছানার। তারপর আস্তে করে রক্ত মুছে দিতে লাগল। শার্ট এর ভিতর কীভাবে কেটে রক্ত বের হয়েছে ও বুঝতে পারছে না।
জায়ান দাঁত চেপে সহ্য করছে।
জায়ানের শরীরের যেখানে যেখানে কেটে রক্ত বের হয়েছে তৃষ্ণা সব আসতে ধীরে খুব যত্ন নিয়ে স্যাভলন লাগিয়ে দিলো।
এবার শুধু বাকি আছে মুখমন্ডল। তৃষ্ণা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে দেখে জায়ান বলল,” কিহলো শেষ?”

” হুম।” মুখ নিচু করে বলল।
” ঠোঁটের কোনার রক্তে আমার মুখ নোনতা হয়ে গেল। সেটা তোমার চোখে পরলো না।” জায়ান রাগান্বিত গলায় বলল।
তৃষ্ণা শুকিয়ে আসা ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,” ওটা কাজ আপনি করেন।”
বলেই তৃষ্ণা মাথা নিচু করে ফেলল।
জায়ান তৃষ্ণার লাজুক মুখশ্রী দেখে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,” এতো লজ্জা পাবার কি আছে? আমি কি রোমান্স করার জন্য বলছি যে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলে?”

তৃষ্ণা তোতলানো কন্ঠে বলল,” কি কন? এইসব নিয়ে না‌ আসলে…
জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে নিজের নিকটে এনে বলল,” স্বামীর সেবা করতে এসে অজুহাত দেখাচ্ছ? একটুও মায়া মহব্বত নাই স্বামীর প্রতি তাই না।”

” ভুল বুঝছেন আপনি আমায়। আমি আসলে লজ্জা পাচ্ছি।”
জায়ান মুখ উঁচু করে বলল,” তাড়াতাড়ি লাগিয়ে দাও। ব্যথা করছে।”
তৃষ্ণা জায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,” আপনি চোখ বন্ধ করে রাখেন। নয়লে আমি এটা পারব না।”
জায়ান চোখ বন্ধ করল না এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা তা দেখে আরো কাজ করতে পারছে না। চোখ তুলতে পারছে না। লজ্জায় এবার বাম হাত উঁচু করে জায়ানের চোখের উপর রেখে বলল,” দোহাই লাগে চোখ বন্ধ রাখেন। ”

তৃষ্ণার কান্ডে জায়ান জখম লাগা ঠোঁট প্রসস্থ করেই হাসলো। তৃষ্ণা ঠোঁটের কোনায় হাত দিতে অনেক ইতস্তত বোধ করল। দাঁতে দাঁত চেপে ঠোঁটের কোনায় রক্ত মুছে দিল।
তৃষ্ণা চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। তারপর জায়ানের সামনে থেকে সরে আসতে যাবে তখন জায়ান আসার রাস্তা বন্ধ করে দেয় তৃষ্ণা কোমরে দুই হাত দিয়ে আটকে।
তৃষ্ণা থতমত খেয়ে বলে,” কি হলো ছাড়ুন।”

” একটা কিস দাও ব্যথা কমে যাবে তাহলে। এতো ব্যথায় আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি ব‌উ।”
” এ্যা কি সব বলেন। ছাড়েন।”
জায়ান জোর করেই তৃষ্ণার কপালে একটা চুমু খেলো। তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে সরে এলো।

জায়ান তৃষ্ণার লজ্জা মাখা হাসির দিকে তাকিয়ে বলল,” আয়ান যেদিন চুমু দিয়েছিল এভাবেই লজ্জা পেয়েছিলে নাকি?”
তৃষ্ণা চোখ কপালে তুলে ফেলল। লাজ লজ্জা ফেলে জায়ানের দিকে তাকালো বিস্মিত নয়নে। জায়ান কঠিন চোখ মুখ করে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা থমকানো চোখে তাকিয়ে আছে।

” কি হলো এতো ভয় পেলে কেন?”
” আ—পনি এসব কি বলছেন?”
” কেন ভুল বলেছি কি?”
তৃষ্ণা জায়ানের কথায় কি বলবে বুঝতে পারছে না। জায়ান সব কিভাবে জেনে ফেলল। তৃষ্ণা ঠোঁট কামড়ে ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
জায়ান বিছানায় শুয়ে পরলো।

তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে কাঁপছে ভয়ে। জায়ান কতোটুকু জেনেছে? ওকে কি আবার ভুল বুঝেছে নাকি। আয়ান তো বলেছিল এসব জানালে ওকেই চরিত্রহীনা প্রমাণ করবে। তাহলে কি তাই হলো। জায়ান ওকে ভুল বুঝলো। ওই খারাপ লোকটার জন্য আমি আমার স্বামীর কাছে খারাপ হয়ে গেলাম। আমাকে তো চুপ থাকলে হবে না। জায়ান কে সব খুলে বলতে হবে।
তৃষ্ণা চোখের অশ্রু মুছে জায়ানের মাথার কাছে গিয়ে বলল,” আপনে আমারে ভুল বুঝছেন। আমি কিন্তু খারাপ মাইয়া না। আমি শুধু আপ…

জায়ান চোখ বন্ধ করেছিল। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই চেঁচিয়ে বলল,” স্টপ। কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করলে কিন্তু রুম থেকে বের করে দরজা আটকে শান্তিতে ঘুমাবো। আমি প্রচুর ক্লান্ত তাই আমার কাছ থেকে সরে যাও।”
তৃষ্ণা হু হু করে কেঁদে উঠলো।

এদিকে বাড়িতে সবাই চিন্তায় বিভোর আয়ান আর জায়ান কেন দুজনকে শত্রুর মতো মারছিল। দুইভাই নিজেদের শত্রু ভাবতে শুরু করলো কবে থেকে। জেসমিন বেগম স্বামীর নিকট বসে ভাবছেন। আয়ান না হয় জায়ান কে খুব একটা পছন্দ করে না। হিংসা করে সব সময় তাই বলে মারতে চলে যাবে এতো সাহস কোথায় পেল?
আর‌ জায়ান তো আয়ানের কাজের জন্য ওকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু ভাই হয় ওর ও কিভাবে নিজের ভাইকে এমন আঘাত করলো।

কপালে হাত দিয়ে জেসমিন বেগম বসে আছে। চিন্তায় মাথা ব্যথা করছে উনার।
” এসব কি হচ্ছে বলেন তো। পরিবারের সবাই সবার বিরোধী পক্ষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। সবাই সবার সাথে কেন বিবাদ করছে?”
সাদিকুর রহমান আয়ানকে দেখতে এলো আয়ানের রুমে আয়ানকে খুব মার মেরেছে জায়ান। জায়ানের শক্তির সামনে আয়ান যে কিছুই না এই ছেলেটা বুঝে না। টক্কর দিতে গিয়ে বিছানায় পরলো। তিনি খুব শান্ত ভাব নিয়ে ছেলের পাশে বসলো।

” কি করেছ তুমি? জায়ান পশুর মতো মেরেছে নিশ্চয়ই কারণ ছাড়া নয়। কি অঘটন ঘটিয়েছ বলো।”
” বাবা আপনি বলেন তো আমি কি সত্যি আপনার ছেলে?”
” কি সব বলছো তুমি? ”
” আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় আমি আপনাদের সন্তান নয়। ওই জায়ান আপনাদের সন্তান শুধু।”

” অযোক্তিক কথা বলো না আয়ান। ভুলে যেও না তোমরা দুজন যমজ ভাই। জায়ান আমার সন্তান হলে তুমি ও আমার‌ই সন্তান তাই এসব কথা বাদ দিয়ে বলো কি করে জায়ানের মাথা গরম করে দিয়েছ!”

” আমি কিছুই করিনি। ও সব সময় আমার উপর অত্যাচার করে নিজেকে উপরে রাখতে চায় এটাই। কিন্তু ও আমার যমজ ভাই তাই ওকে আমি মারতে পারি না বেশি কষ্ট হয়। কিন্তু ওর তো আমার প্রতি কোন টান নাই এজন্য মারতে গেলে অসুর হয়ে যায়।কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন বাবা আমি যদি ওকে আঘাত করতে চাইতাম ও আমাকে ফুলের টুকাও দিতে পারতো না। ওর থেকে আমি বেশি শক্তিশালী ও সাহসী।”

সাদিকুর রহমান আয়ানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল।
” কারণটা বলবে না ওকে। কিন্তু নিজের ভুল ধারণা পোষে রেখে লাভ নাই। নিজেকে সাহসী ভেবে আনন্দিত হলে হ‌ও। কিন্তু কার মায়া দয়া বেশি সেটা আমাকে শেখাতে হবে না তোমায়।”

উষসী সেজে গুজে আহত স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল,” এক মাস তো তোমার বিছানায় রেস্ট দিতে হবে আয়ান। এবার একটু শয়তানি মনটাকে রেস্ট দাও। আমি বরংচ একটু আড্ডা দিয়ে আসি। বাই।”
বলেই উষসী চলে গেল হাত নাড়াতে নাড়াতে।
আয়ান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিরবির করে বলল,” একবার সুস্থ হতে দে জায়ান তোকে তো আমি দেখ নিব। আর উষসী তোমার ডানা অনেক বেড়েছে কিভাবে কাটতে হয় আমি জানি।”

উর্মি দেখা করতে আসছে আরিফের সাথে। মন থেকে একটু আসতে চায়নি। কিন্তু জায়ান নিজে উর্মিকে দেখা করতে বলেছে। ও জায়ানের কথা ফেলতে পারেনি। ভাইয়ের কথা অমান্য করার সাহস ওর নাই।
আসার পর থেকে আরিফ লক্ষ্য করছে উর্মি গভীর চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে। সামনে যে ও বসে আছে সেই কথাই হয়তো মেয়েটা ভুলে গেছে। ও বাজিয়ে দেখার জন্য উর্মির সামনের হাত নাড়া দিল। সত্যি উর্মি নরলো।

আরিফ উর্মির কাঁধ ধরে ঝাকুনি দিয়ে বলল,” এই যে মেডাম। কোন দুনিয়ার আছো? আমার সাথে মিট করতে এসে কোন চিন্তায় বিভোর হলে। একটু পর তো চলেই যাবে‌ যতক্ষন আছো আমার সাথে একটু কথা অন্তত বলো।”
উর্মি চমকে দাঁড়িয়ে পরেছে বসা থেকে। আচমকা ধাক্কা খেয়ে ও ভয় পেয়ে গেছে।
আরিফ উর্মির ভয়ার্ত মুখশ্রী দেখে বলল,” আরে ভয় পেলে নাকি? আমি আরিফ তোমার হবু হাজবেন্ড। আমাকে ভয় পেও না। তাহলে এই দেখা করা মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।”

উর্মি নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,” কিসের মজা নষ্ট হবে?”
” কয়দিন পর তুমি আমার ওয়াইফ হবে। এখন প্রথম দেখায় যদি হবু বর কে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় হবু ব‌উ তাহলে কি ভালো হবে বলো তো। আমাদের তো এখন সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে হবে‌‌। তবেই না বিয়ের পর এসব নিয়ে গল্প করতে পারব।”

” আপনি এতো ঘারত্যারা কেন? বলছি না আমি আপনের বিয়ে করতে চাই না। তবুও কেন এই বিয়েটা করতে চাইছেন আমার মতামত নাই জেনেও কেন সামনে এগুচ্ছেন?”
” এসব কথা বাদ। আচ্ছা বলো কি খাবে?”
” আমি কিছু‌ই খাব না। আপনি কেন আজ দেখা করার জন্য ভাই কে বলেছেন আমি ভাইয়ের মুখের উপর কথা বলিনা বলেই কি সেই সুযোগ নিচ্ছেন?”

” সুযোগ একটু নিতেই হবে মেডাম না হলে তো তোমাকে বউ করে পাব না।”
এতো দিন উর্মি ভেবেছিল এই লোকটাকে বুঝালে বুঝবে। লোকটাকে ভালো ভেবেছিল কিন্তু লোকটা এতো শয়তান আর ঘাড়ত্যারা বুঝতে পারে নি। এখন লোকটাকে ওর জাস্ট অসহ্য লাগছে।

এদিকে তৃষ্ণা বিছানার চারপাশে পায়চারি করছে। কি করবে ভাবছে আর আঙুল কামড়াচ্ছে।
হঠাৎ ওর মাথায় এলো জায়ান তো সব সময় ঘুমানোর সময় ওকেও জোর করে বুকে টেনে নিয়ে ঘুমায় আজ কেন নিলো না। তারমানে সত্যি উনি ওকে ভুল বুঝলো। এখন কি করবে ও কিভাবে তার ভুল ভাঙাবে?
তৃষ্ণা কাঁদো কাঁদো মুখ করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

তারপর কি ভেবে যেন বিছানায় গিয়ে পা উঠিয়ে বসলো। আর ফট করেই জায়ানের গা ঘেঁষে শুয়ে পরলো। জায়ান কে লাজ লজ্জা ভুলে জড়িয়ে ধরলো। যেটা জায়ান করে জোর করে সেটা তৃষ্ণা করলো আজ সেচ্ছায়। জায়ান ঘুমের মধ্যে‌ই তৃষ্ণা কে নিজের থেকে সরিয়ে গম্ভীর সুরে বলল,” একদম আমার গায়ের উপর আসবে না। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব নয়লে।”
তৃষ্ণা দূরে সরে কান্না মাখা গলায় বলল,” আপনি ওই খারাপ লোকটার জন্য আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিলেন?”

“কি হলো এটা! জায়ান তোমার ওপর এতো রেগে গেল কেন? কি বলেছ তুমি ওকে?”
জোভান জেসমিন বেগম এর দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে হন হন করে নিজের রুমে চলে যায়।
জেসমিন বেগম হা করে ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
জোভান নিজের রুমে এসে দেয়াল ঘুসি মারতে লাগল।

এদিকে তৃষ্ণা ঘুম ভেঙে দেখে জায়ান আশেপাশে নাই। ঘুমানোর আগে করা কান্ডকারখানা মনে পরতেই চমকে উঠে। এমন বিহেভ কখনো করেনি ও জায়ানের সাথে আজ করে প্রচুর লজ্জা পাচ্ছে ও।‌

চোখে মুখে পানির ছিটা দিয়ে এসে ব‌ই নিয়ে পড়তে বসে। যাতে জায়ান এসে আর ওকে বকতে না পারে। ব‌ই নিয়ে পড়ার চেষ্টা করছে একাই। তখন বাইরে থেকে চিৎকারের শব্দ আসে। তৃষ্ণার রুমে থেকে শব্দ টা খুব আসছে। ও বুঝতে পারছে না এই শব্দ কোথা থেকে আসছে। ড্রয়িং রুমে থেকে ত আসার কথা নয়। কারণ সেখানে থেকে এই রুমে কোন শব্দ আসে না। এই বাসার সবার শেষে আমাদের এই রুমটা। তৃষ্ণা বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। নিচের দিকে তাকাতেই দেখে আয়ান আর জায়ান মারামারি করছে। তৃষ্ণা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে ওখানে দুজনে শত্রুর মতো মারপিট করছে কেন?

কোনটা কে তৃষ্ণা দূরে থেকে বুঝতে পারছে না। দুজনেই আঘাত পাচ্ছে সমানে। লাস্টে একজন পুকুরে পরে গেল। তৃষ্ণা দৌড়ে নিচে আসলো। সবাইকে জানাতে কিন্তু অদ্ভুত বিষয় নিচে কেউ নাই। তৃষ্ণা বাইরে এসে দেখল সবাই সেই দিকেই যাচ্ছে। দুজনকে থামানোর চেষ্টা করছে। তৃষ্ণা নিজের প্রতি আয়ানের নোংরা দৃষ্টি দেখে ভাবতো একদিন আয়ান অনেক মার খাবে জায়ানের হাতে। আর সেদিন তৃষ্ণা তৃপ্তির হাসি হাসবে। সেই মারপিট হচ্ছে দুজনের মাঝে কিন্তু কারণটা তৃষ্ণা জানে না। আর এখানে দুজনেই ভালো মার খেয়েছে আর আহত দুজনেই হয়েছে। কিন্তু তৃষ্ণা তো চায়নি ওর স্বামী ওই নোংরা লোকটার হাতে মার খাক। তাহলে কেন খেলো। ওর চোখ ছলছল করে উঠলো।

জেসমিন বেগম এগিয়ে এসে জায়ানের জখম লাগা হাতে ছুয়ে বলল,” এসব কি করছো তোমরা? ইশ কত আঘাত পেলে। কেন দুই ভাই মারামারি করলে বলো?”
জায়ান জেসমিন বেগমের হাত নিজের হাতের উপর থেকে সরিয়ে বলল,” আপনি আপনার আদরের ছেলের থেকে শুনেন।”
” তুমি আমার সব চেয়ে আদরের সন্তান।”

জায়ান তাকে অবজ্ঞা করে চলে এলো। তৃষ্ণা নিচে এসেই জায়ান কে চিনে ফেলেছে। জায়ানের পেছনে দৌড় লাগিয়েছে ও।
জায়ান বিছানায় বসে আছে। শরীরের অনেক স্থানে লাল হয়ে আছে। ঠোঁটের কোনায় রক্ত লেগে আছে। জায়ান গায়ের শার্টটা খুলে ফেলল।
তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলল,” ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসো।

তৃষ্ণা এক পাশে দাঁড়িয়ে জায়ানের ক্ষত দেখছিল। জায়ানের কথা শুনে ড্রয়ার খুলে বক্স নিয়ে এলো।
জায়ান তৃষ্ণার হাত থেকে বক্স নিয়ে খুলল। ভেতর থেকে তুলা বের করে তাতে স্যাভলন লাগিয়ে বলল রক্ত মুছে দিতে।
তৃষ্ণা তুলা হাতে নিয়ে ঢোক গিলছে।
” তৃষ্ণা তাড়াতাড়ি কর। জ্বলছে প্রচুর।”

তৃষ্ণা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে‌ বলল,” আপনারা মারামারি করলেন কেন?”
” খুব মারপিট করতে ইচ্ছে হয়েছিল। মানুষ পাচ্ছিলাম না তাই দুই ভাই ইচ্ছা পূরন করলাম মারপিট করে।”
তৃষ্ণা চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে বলে,” এ্যা কি বলেন? এমন অদ্ভুত ইচ্ছে ও কারো হয় নাকি?”
” কথা কম বলে কাজ কর।”

তৃষ্ণা কাঁপা হাতে তুলো নিয়ে জায়ানের পেছনে গিয়ে বসলো বিছানার। তারপর আস্তে করে রক্ত মুছে দিতে লাগল। শার্ট এর ভিতর কীভাবে কেটে রক্ত বের হয়েছে ও বুঝতে পারছে না।
জায়ান দাঁত চেপে সহ্য করছে।
জায়ানের শরীরের যেখানে যেখানে কেটে রক্ত বের হয়েছে তৃষ্ণা সব আসতে ধীরে খুব যত্ন নিয়ে স্যাভলন লাগিয়ে দিলো।
এবার শুধু বাকি আছে মুখমন্ডল। তৃষ্ণা একপাশে দাঁড়িয়ে আছে দেখে জায়ান বলল,” কিহলো শেষ?”

” হুম।” মুখ নিচু করে বলল।
” ঠোঁটের কোনার রক্তে আমার মুখ নোনতা হয়ে গেল। সেটা তোমার চোখে পরলো না।” জায়ান রাগান্বিত গলায় বলল।
তৃষ্ণা শুকিয়ে আসা ঠোঁট জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল,” ওটা কাজ আপনি করেন।”
বলেই তৃষ্ণা মাথা নিচু করে ফেলল।
জায়ান তৃষ্ণার লাজুক মুখশ্রী দেখে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,” এতো লজ্জা পাবার কি আছে? আমি কি রোমান্স করার জন্য বলছি যে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠলে?”

তৃষ্ণা তোতলানো কন্ঠে বলল,” কি কন? এইসব নিয়ে না‌ আসলে…
জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে নিজের নিকটে এনে বলল,” স্বামীর সেবা করতে এসে অজুহাত দেখাচ্ছ? একটুও মায়া মহব্বত নাই স্বামীর প্রতি তাই না।”

” ভুল বুঝছেন আপনি আমায়। আমি আসলে লজ্জা পাচ্ছি।”
জায়ান মুখ উঁচু করে বলল,” তাড়াতাড়ি লাগিয়ে দাও। ব্যথা করছে।”
তৃষ্ণা জায়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,” আপনি চোখ বন্ধ করে রাখেন। নয়লে আমি এটা পারব না।”
জায়ান চোখ বন্ধ করল না এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা তা দেখে আরো কাজ করতে পারছে না। চোখ তুলতে পারছে না। লজ্জায় এবার বাম হাত উঁচু করে জায়ানের চোখের উপর রেখে বলল,” দোহাই লাগে চোখ বন্ধ রাখেন। ”

তৃষ্ণার কান্ডে জায়ান জখম লাগা ঠোঁট প্রসস্থ করেই হাসলো। তৃষ্ণা ঠোঁটের কোনায় হাত দিতে অনেক ইতস্তত বোধ করল। দাঁতে দাঁত চেপে ঠোঁটের কোনায় রক্ত মুছে দিল।
তৃষ্ণা চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো। তারপর জায়ানের সামনে থেকে সরে আসতে যাবে তখন জায়ান আসার রাস্তা বন্ধ করে দেয় তৃষ্ণা কোমরে দুই হাত দিয়ে আটকে।
তৃষ্ণা থতমত খেয়ে বলে,” কি হলো ছাড়ুন।”

” একটা কিস দাও ব্যথা কমে যাবে তাহলে। এতো ব্যথায় আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি ব‌উ।”
” এ্যা কি সব বলেন। ছাড়েন।”
জায়ান জোর করেই তৃষ্ণার কপালে একটা চুমু খেলো। তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে সরে এলো।

জায়ান তৃষ্ণার লজ্জা মাখা হাসির দিকে তাকিয়ে বলল,” আয়ান যেদিন চুমু দিয়েছিল এভাবেই লজ্জা পেয়েছিলে নাকি?”
তৃষ্ণা চোখ কপালে তুলে ফেলল। লাজ লজ্জা ফেলে জায়ানের দিকে তাকালো বিস্মিত নয়নে। জায়ান কঠিন চোখ মুখ করে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা থমকানো চোখে তাকিয়ে আছে।

” কি হলো এতো ভয় পেলে কেন?”
” আ—পনি এসব কি বলছেন?”
” কেন ভুল বলেছি কি?”
তৃষ্ণা জায়ানের কথায় কি বলবে বুঝতে পারছে না। জায়ান সব কিভাবে জেনে ফেলল। তৃষ্ণা ঠোঁট কামড়ে ধরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
জায়ান বিছানায় শুয়ে পরলো।

তৃষ্ণা দাঁড়িয়ে কাঁপছে ভয়ে। জায়ান কতোটুকু জেনেছে? ওকে কি আবার ভুল বুঝেছে নাকি। আয়ান তো বলেছিল এসব জানালে ওকেই চরিত্রহীনা প্রমাণ করবে। তাহলে কি তাই হলো। জায়ান ওকে ভুল বুঝলো। ওই খারাপ লোকটার জন্য আমি আমার স্বামীর কাছে খারাপ হয়ে গেলাম। আমাকে তো চুপ থাকলে হবে না। জায়ান কে সব খুলে বলতে হবে।
তৃষ্ণা চোখের অশ্রু মুছে জায়ানের মাথার কাছে গিয়ে বলল,” আপনে আমারে ভুল বুঝছেন। আমি কিন্তু খারাপ মাইয়া না। আমি শুধু আপ…

জায়ান চোখ বন্ধ করেছিল। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই চেঁচিয়ে বলল,” স্টপ। কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করলে কিন্তু রুম থেকে বের করে দরজা আটকে শান্তিতে ঘুমাবো। আমি প্রচুর ক্লান্ত তাই আমার কাছ থেকে সরে যাও।”
তৃষ্ণা হু হু করে কেঁদে উঠলো।

এদিকে বাড়িতে সবাই চিন্তায় বিভোর আয়ান আর জায়ান কেন দুজনকে শত্রুর মতো মারছিল। দুইভাই নিজেদের শত্রু ভাবতে শুরু করলো কবে থেকে। জেসমিন বেগম স্বামীর নিকট বসে ভাবছেন। আয়ান না হয় জায়ান কে খুব একটা পছন্দ করে না। হিংসা করে সব সময় তাই বলে মারতে চলে যাবে এতো সাহস কোথায় পেল?
আর‌ জায়ান তো আয়ানের কাজের জন্য ওকে সহ্য করতে পারে না। কিন্তু ভাই হয় ওর ও কিভাবে নিজের ভাইকে এমন আঘাত করলো।

কপালে হাত দিয়ে জেসমিন বেগম বসে আছে। চিন্তায় মাথা ব্যথা করছে উনার।
” এসব কি হচ্ছে বলেন তো। পরিবারের সবাই সবার বিরোধী পক্ষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। সবাই সবার সাথে কেন বিবাদ করছে?”
সাদিকুর রহমান আয়ানকে দেখতে এলো আয়ানের রুমে আয়ানকে খুব মার মেরেছে জায়ান। জায়ানের শক্তির সামনে আয়ান যে কিছুই না এই ছেলেটা বুঝে না। টক্কর দিতে গিয়ে বিছানায় পরলো। তিনি খুব শান্ত ভাব নিয়ে ছেলের পাশে বসলো।

” কি করেছ তুমি? জায়ান পশুর মতো মেরেছে নিশ্চয়ই কারণ ছাড়া নয়। কি অঘটন ঘটিয়েছ বলো।”
” বাবা আপনি বলেন তো আমি কি সত্যি আপনার ছেলে?”
” কি সব বলছো তুমি? ”
” আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় আমি আপনাদের সন্তান নয়। ওই জায়ান আপনাদের সন্তান শুধু।”

” অযোক্তিক কথা বলো না আয়ান। ভুলে যেও না তোমরা দুজন যমজ ভাই। জায়ান আমার সন্তান হলে তুমি ও আমার‌ই সন্তান তাই এসব কথা বাদ দিয়ে বলো কি করে জায়ানের মাথা গরম করে দিয়েছ!”

” আমি কিছুই করিনি। ও সব সময় আমার উপর অত্যাচার করে নিজেকে উপরে রাখতে চায় এটাই। কিন্তু ও আমার যমজ ভাই তাই ওকে আমি মারতে পারি না বেশি কষ্ট হয়। কিন্তু ওর তো আমার প্রতি কোন টান নাই এজন্য মারতে গেলে অসুর হয়ে যায়।কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেন বাবা আমি যদি ওকে আঘাত করতে চাইতাম ও আমাকে ফুলের টুকাও দিতে পারতো না। ওর থেকে আমি বেশি শক্তিশালী ও সাহসী।”

সাদিকুর রহমান আয়ানের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল।
” কারণটা বলবে না ওকে। কিন্তু নিজের ভুল ধারণা পোষে রেখে লাভ নাই। নিজেকে সাহসী ভেবে আনন্দিত হলে হ‌ও। কিন্তু কার মায়া দয়া বেশি সেটা আমাকে শেখাতে হবে না তোমায়।”

উষসী সেজে গুজে আহত স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল,” এক মাস তো তোমার বিছানায় রেস্ট দিতে হবে আয়ান। এবার একটু শয়তানি মনটাকে রেস্ট দাও। আমি বরংচ একটু আড্ডা দিয়ে আসি। বাই।”
বলেই উষসী চলে গেল হাত নাড়াতে নাড়াতে।
আয়ান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিরবির করে বলল,” একবার সুস্থ হতে দে জায়ান তোকে তো আমি দেখ নিব। আর উষসী তোমার ডানা অনেক বেড়েছে কিভাবে কাটতে হয় আমি জানি।”

উর্মি দেখা করতে আসছে আরিফের সাথে। মন থেকে একটু আসতে চায়নি। কিন্তু জায়ান নিজে উর্মিকে দেখা করতে বলেছে। ও জায়ানের কথা ফেলতে পারেনি। ভাইয়ের কথা অমান্য করার সাহস ওর নাই।
আসার পর থেকে আরিফ লক্ষ্য করছে উর্মি গভীর চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে। সামনে যে ও বসে আছে সেই কথাই হয়তো মেয়েটা ভুলে গেছে। ও বাজিয়ে দেখার জন্য উর্মির সামনের হাত নাড়া দিল। সত্যি উর্মি নরলো।

আরিফ উর্মির কাঁধ ধরে ঝাকুনি দিয়ে বলল,” এই যে মেডাম। কোন দুনিয়ার আছো? আমার সাথে মিট করতে এসে কোন চিন্তায় বিভোর হলে। একটু পর তো চলেই যাবে‌ যতক্ষন আছো আমার সাথে একটু কথা অন্তত বলো।”
উর্মি চমকে দাঁড়িয়ে পরেছে বসা থেকে। আচমকা ধাক্কা খেয়ে ও ভয় পেয়ে গেছে।
আরিফ উর্মির ভয়ার্ত মুখশ্রী দেখে বলল,” আরে ভয় পেলে নাকি? আমি আরিফ তোমার হবু হাজবেন্ড। আমাকে ভয় পেও না। তাহলে এই দেখা করা মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।”

উর্মি নিজেকে ধাতস্থ করে বলল,” কিসের মজা নষ্ট হবে?”
” কয়দিন পর তুমি আমার ওয়াইফ হবে। এখন প্রথম দেখায় যদি হবু বর কে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় হবু ব‌উ তাহলে কি ভালো হবে বলো তো। আমাদের তো এখন সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে হবে‌‌। তবেই না বিয়ের পর এসব নিয়ে গল্প করতে পারব।”

” আপনি এতো ঘারত্যারা কেন? বলছি না আমি আপনের বিয়ে করতে চাই না। তবুও কেন এই বিয়েটা করতে চাইছেন আমার মতামত নাই জেনেও কেন সামনে এগুচ্ছেন?”
” এসব কথা বাদ। আচ্ছা বলো কি খাবে?”
” আমি কিছু‌ই খাব না। আপনি কেন আজ দেখা করার জন্য ভাই কে বলেছেন আমি ভাইয়ের মুখের উপর কথা বলিনা বলেই কি সেই সুযোগ নিচ্ছেন?”

” সুযোগ একটু নিতেই হবে মেডাম না হলে তো তোমাকে বউ করে পাব না।”
এতো দিন উর্মি ভেবেছিল এই লোকটাকে বুঝালে বুঝবে। লোকটাকে ভালো ভেবেছিল কিন্তু লোকটা এতো শয়তান আর ঘাড়ত্যারা বুঝতে পারে নি। এখন লোকটাকে ওর জাস্ট অসহ্য লাগছে।

এদিকে তৃষ্ণা বিছানার চারপাশে পায়চারি করছে। কি করবে ভাবছে আর আঙুল কামড়াচ্ছে।
হঠাৎ ওর মাথায় এলো জায়ান তো সব সময় ঘুমানোর সময় ওকেও জোর করে বুকে টেনে নিয়ে ঘুমায় আজ কেন নিলো না। তারমানে সত্যি উনি ওকে ভুল বুঝলো। এখন কি করবে ও কিভাবে তার ভুল ভাঙাবে?
তৃষ্ণা কাঁদো কাঁদো মুখ করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।

কৃষ্ণবেণী পর্ব ২০ (২)

তারপর কি ভেবে যেন বিছানায় গিয়ে পা উঠিয়ে বসলো। আর ফট করেই জায়ানের গা ঘেঁষে শুয়ে পরলো। জায়ান কে লাজ লজ্জা ভুলে জড়িয়ে ধরলো। যেটা জায়ান করে জোর করে সেটা তৃষ্ণা করলো আজ সেচ্ছায়। জায়ান ঘুমের মধ্যে‌ই তৃষ্ণা কে নিজের থেকে সরিয়ে গম্ভীর সুরে বলল,” একদম আমার গায়ের উপর আসবে না। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব নয়লে।”
তৃষ্ণা দূরে সরে কান্না মাখা গলায় বলল,” আপনি ওই খারাপ লোকটার জন্য আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিলেন?”

কৃষ্ণবেণী পর্ব ২২