গভীর গোপন পর্ব ১০

গভীর গোপন পর্ব ১০
অনন্য শফিক

জুঁই বললো,’ চলুন আমরা সবাই জেবা আপুর হাসব্যান্ডের বাসায় যাবো।মনির ভাইয়া যে ঘরের কথা বললেন, অর্থাৎ যেখান থেকে এই ভিডিও হয়েছে এই ঘরটা নিজ চোখে দেখতে চাই।হতেও তো পারে মনির ভাইয়া মিথ্যে বলছেন! এখানে অন্ধভাবে কাউকে বিশ্বাস করবো কেন আমরা? তুলি ভাবিও যাবে।সবাই যাবো। এখানে কোন রকম সন্দেহ রাখবো না।’
আমি বললাম,’ চলো দেখি গিয়ে। আমার কষ্ট হলেও আমি যাবো।আমি সব দেখতে চাই নিজের চোখে।’

এরিমধ্যে জেবার চেহারা কেমন বিবর্ণ হয়ে উঠলো। সে ফস করে বলে উঠলো,’ আশফাক। আশফাক গোপনে এই ভিডিও করেছিল।আমি জানতাম না আগে এটা সে করেছে। এরপর কোন একটা কারণবশত আমি জানতে পারি সে এটা করেছে। এরপর এটা সে নিজ থেকেই ছ*ড়িয়ে দিয়েছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

জেবা কাঁদতে শুরু করলো। হাউমাউ করে কাঁদছে।যেন কেউ মরেছে ওর।চোখ দিয়েই অজর ধারায় জল গড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ করে কেউ এভাবে কাঁদতে দেখলে ওর জন্য খুব মায়া হবে। কিন্তু আমার বা জুঁইয়ের কিংবা মনিরের, আমাদের কারোরই ওর জন্য কোন রকম মায়া হচ্ছে না। বরং একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠছে আমাদের ঠোঁটে।
আমার মেজাজ ভারী খারাপ হলো। নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে এই প্রথমবার জেবার গালে একটা শক্ত চ*ড় বসিয়ে দিয়ে বললাম,’ তুই যে আসলেই চরিত্রহীন এর প্রমাণ নিজে নিজেই দিলি এখন! ছিহ্! তোর লাজ – লজ্জা কিচ্ছু নাই! এরকম জীবন রাখার চেয়ে ম*রতে পারিস না তুই!’

আশফাক এরিমধ্যে বসা থেকে উঠলো। তারপর রেগেমেগে আগুন হয়ে উঠে বললো,’ জেবা কি বললি তুই এটা? কি বললি আমায় নিয়ে?’
জেবা কান্নাভেজা গলায় বললো,’ যা সত্যি তাই বলেছি। তুই এটা করেছিস।তুই!’
জুঁই বসা থেকে উঠলো। উঠে জেবার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’ জেবা আপু, তুমি কি আজকাল সবাইকে তোমার শরীরের ভিডিও করার সুযোগ দাও নাকি?’

জেবা কিছু বললো না।বিষম খেলো।
জুঁই বললো,’ ভাইজানের সঙ্গে না তোমার ভাই বোনের সম্পর্ক।তো ভাই কেন তার বোনের এরকম একটা ভিডিও করবে? আর বোন কেন তার ভাইয়ের সামনে এরকম ভাবে উ*লঙ্গ হবে? বলো। নাকি মনির ভাই যা যা বলেছেন এর সবকিছুই সত্যি?’

জেবা থতমত খেয়ে গেল। কিছু বলতে পারছে না আর।দেখে বুঝাই যাচ্ছে মুখ ফসকে এই কথা বেরিয়ে এসেছে। হয়তো, জুঁই যখন বললো আমরা সবাই মিলে জেবার হাসব্যান্ডের বাসায় গিয়ে ঘরটা দেখবো তখনই সে ভয় পেয়ে গেছে।ধরা পড়ে যাবে শিগগির তা বুঝে ফেলেছে।তাই তালগোল পাকিয়ে ফট করে এটা বলে ফেলেছে।
কিন্তু আশফাক এই কথা কোন ভাবেই মেনে নিলো না। সে বললো,’ জেবা, আমাকে ফাঁ*সিয়ে তোর কি লাভ হবে বল? কেন এই মিথ্যে কথাটা বললি? আমাদের তো সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল।ভাই বোনের মতো ছিলাম আমরা। কেন মিথ্যে বলে এর পবিত্রতা নষ্ট করলি তুই?’
আশফাককে কেমন যেন অসহায় দেখাচ্ছে। ওদিকে জেবার চেহারার দিকে তাকানোই যাচ্ছে না। খুব ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে ওকে।

জেবা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,’ কোন মিথ্যে বলিনি আমি।মিথ্যে বলবো কেন? তুই সুযোগ মতো এই ভিডিও করেছিলি।আমি এর কিচ্ছু জানতাম না।তুই ফাঁ*দে ফেলেই এটা করেছিস। তারপর এটা তুই ছ*ড়িয়ে দিয়েছিস সব জায়গায়। কেন এটা করেছিস তাও আমি জানি।আমি অনেক দিন ধরেই তোকে বলছিলাম টুকিকে তুই নিজের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি দিবি। তুই রাজি হোস নাই। তুই অস্বীকার করে গেছস সব সময়।

টাকা দিয়ে, বিভিন্ন কিছুর লো*ভ দেখিয়ে আমায় চুপ রাখতে চেয়েছিস। কিন্তু আমায় দমাতে পারিস নি। এরপর আমি যখন বললাম তোর স্ত্রীর কাছে সব বলে দিবো। তখন রাগে তুই নিজেই তো বলেছিস তোর কাছে ভিডিও আছে।বলেছিলি, গোপনে ভিডিও করেছিস। আমাকে দেখিয়েছিলি পর্যন্ত।আমি তখন রাগে বলেছিলাম ভিডিও দিয়ে আমায় ভয় দেখিয়ে লাভ নাই।আমি সব বলে দিবো।আমি তোর সন্তানের মা হিসেবে স্বীকৃতি চাই।আমি তোর ঘরে আসবো।তুই আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবি।তুই তখন রাগে এটা ছ*ড়িয়ে দিয়েছিস। আমার সর্বনাশ করেছিস!’

জুঁই হাততালি দিলো। বললো,’ দারুণ নাটক। বাহ্! এই না হলো ভাই আর বোন। এই না হলো তাহাদের পবিত্র সম্পর্ক। এবার দেখি ভাইয়ের বউ হবার স্বীকৃতি চাচ্ছে বোন। আবার বিয়ের আগেই তারা সন্তানও জন্ম দিয়েছে। অসাধারণ!’
জেবা কাঁদছে আবার।একটু পর পর কাঁদে।কি এক বিচ্ছিরি অবস্থা।
জুঁই ধমকে উঠলো জেবাকে।বললো,’ কান্না থামা এবার। অনেক অভিনয় হয়েছে। তোকে আমি বোন ডাকতাম।আপু ডাকতাম। এখন আমার নিজের উপরই কেমন ঘেন্না হচ্ছে।আর ভাইজান, তুমি কি বলবা এই বিষয়ে? জেবা যা বলছে এর সব মিথ্যে তাই তো?’

আশফাক রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো,’ ও একটা বা*জারি মেয়ে।এর কথা তুই বিশ্বাস করলি কি করে?’
জুঁই ধমকের গলায় বললো,’ আর তুমি মহান দরবেশ তাই না? তোমার উপর সে এইসব অপবাদ দিচ্ছে এই তো?’
আশফাক বললো,’ অবশ্যই অপবাদ দিচ্ছে। কথায় কথায় বলে না উপকারের ঘাড়ে লাথি। আমার অবস্থাও সেরকমই হয়েছে। উপকার করতে গিয়েছিলাম। এখন লা*থি খাচ্ছি।’

মনির অনেকক্ষণ পর কথা বললো। সে বললো,’ আশফাক সাহেব, নিজেকে আর কতো ভালো মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবেন? আপনি আমার জীবনটা ন*ষ্ট করেছেন! আপনি যে একটা কা*লপ্রিট এটা স্বীকার করে ফেললেই তো খেলাটা এখানে খতম হয়ে যায়। শুধু শুধু দেরি করছেন কেন? এতে তো সবারই কষ্ট হচ্ছে।’

আশফাক খানিক সময় চুপ করে রইলো। তারপর হঠাৎ করেই বললো,’ জেবার হাসব্যান্ডকে আমি এখানে এক্ষুনি খবর দিয়ে আনবো।আমি চেয়েছিলাম সব গোপন থাক।সব গোপন রাখতে চেয়েছিলাম।জেবা, তোর ভালোটাই আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু তুই ই তোর ভালো চাস না।তুই ই তোর সব গোমর ফাঁ*স করতে চাস। তবে ভালো মতোই এটা ফাঁ*স হবে। আজ সবাই জানবে, তুই কতো বড় সাপ!’

এসব বলতে বলতে আশফাক রাগে হাঁপাচ্ছে।
জেবা বললো,’ ওকে এখানে আনলে আমি এখানে থাকবো না! ওর সামনে আমি থাকবো না।’
আশফাক হাসলো। হেসে বললো,’ কেন থাকবি না? ও সবকিছু প্রকাশ করে দিবে এই জন্য? তখন আর এই উজ্জ্বল মুখ থাকবে এই জন্য তাই না?’
জেবা বললো,’ আমার আর কিছুই নাই প্রকাশ করার মতো। কিন্তু ওকে আমার সহ্য হয় না। এই জন্য ওর সামনে থাকবো না।’

আশফাক আরো কি যেন বলতে চেয়েছিলো।
জুঁই বললো,’ ভাইজান, তোমার অপবিত্র মুখটা দয়া করে এখন বন্ধ করো প্লিজ! অনেক কথা বলেছো। অনেক মিথ্যে বলেছো।জেবা তো স্বীকার করেছো শেষমেষ। তুমিও এবার স্বীকার করো। পাপ করার সময় ভয় পাওনি এখন ভয় পেয়ে কি লাভ!’

আশফাক অসহায়ের মতো করে বললো,’ আরে তোদের কীভাবে বুঝাবো এই টুকির জন্মদাতা আমি না! এটা বুঝতে পারছিস না কেন তোরা!’
জুঁই অবাক হবার মতো করে বললো,’ টুকির জন্মদাতা তবে কে? তুমি নিশ্চয় তাও জানো? তুমি তো মোটামুটি জেবা আপু সম্পর্কে সবই’জানো।ও যা যা করেছে তোমাকে নিয়েই করেছে।তো এখন টুকির আসল পিতার নামটা বলে দিলেই তো পারো!’

আশফাক বললো,’ আমি অবশ্যই জানি টুকির জন্মদাতা আসলে কে। কিন্তু আমি বললে তো তোরা কেউই বিশ্বাস করবি না। এই জন্য বলছি জেবার হাসব্যান্ড আসুক। সে সব জানে। তার মুখে যখন বলবে তখন এমনিতেই বিশ্বাস করবি ‌তোরা সবাই।আমি বললে কোন লাভ হবে না।’
জেবা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। বললো,’ জুঁই, ওর এসব কথা বিশ্বাস করো না।আমি আমার মেয়ের কসম করে বলছি।টুকির বাবা আশফাকই।আমি কসম করে বলছি।’

আশফাক তার সামনে থাকা টেবিলের উপর তার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে এক থা*বর মেরে বললো,’ কু*ত্তার বাচ্চা, আমি তোর সন্তানের বাবা হতে যাবো কোন দুঃখে? তোর সন্তানের বাবা তোর চাচাতো ভাই।যে তোর সাবেক প্রেমিক মনিরের কাছে আমার নামে সব অপবাদ রটেছে।যে আমার নামে সব ব্লে*ইম দিয়েছে। তুই ভেবেছিলিটা কি? আমি এইসবের কিচ্ছু জানবো না? তুই উপরে উপরে ভালো মানুষের ভং ধরে থাকা ভেতর খারাপ শয়তান একটা! তুই একসঙ্গে কজনকে নাকে বড়শি লাগিয়ে ঘুরিয়েছিস এর সব আমি জানি।জেনেও চুপ ছিলাম।চুপ থেকে ভুল করেছি। এখন আমায় শিক্ষা দিচ্ছিস তুই! ‘

আশফাকের কথা শুনে কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে এলো। সমাধান হয়ে আসা বিষয়টা আবার ঘোলাটে লাগছে । কিন্তু এটা স্পষ্ট আশফাক নিজেও একটা কা*লপ্রিট। তাকে নিয়ে সংসার করার কোন ইচ্ছে আমার নাই। তার সঙ্গে একছাদের নিচে থাকা তো দূরের কথা, ও যে শহরে থাকে ওখানেই আমি আর থাকতে চাই না।

মজার বিষয় হলো আশফাক এই তথ্য দেবার পর মুহূর্তের ভেতর জায়গাটা মোটামুটি একটা র*ণক্ষেত্র তৈরি হয়ে পড়লো।দেখা গেল জেবা তার পায়ের জুতো খুলে আশফাককে পি*টাতে আসছে। জুঁই গিয়ে তাকে আটকে ফেলেছে। এদিকে আশফাক নিজেও ওর দিকে তে*ড়ে যেতে চায়তেই মনির গিয়ে আশফাককে আটকে দিলো।জেবা আটকা থেকেই চেঁচাতে শুরু করলো।বললো,’ আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমায় জড়িয়ে তুই নোংরা কথা বলেছিস কুকুর! তোরে জুতো দিয়ে পি*টিয়ে সোজা করে ছাড়বো আমি! ‘

জুঁই তাকে থামাতে চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই থামাতে পারছে না। সে বরং গলা ছেড়ে চিৎকার করছে।রাগে হুং*কার ছুঁড়ছে। আশফাক এরিমধ্যে বললো,’ আমি তোর জামাইরে ফোন দিয়েছি।ও আসুক।ও এসে সব বলবে। তোর চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে কি কি করেছিস না করেছিস এর সবকিছুই বলবে এসে। তখন এই গলা রাখিস। এভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করে কথা বলিস! বে*শ্যা কোথাকার!’
আশফাকের সঙ্গে দীর্ঘ দীর্ঘ সময় ধরে আমি কোন কথা বলিনি। এই প্রথম কথা বললাম। খুব শীতল অতচ তীক্ষ্ণ গলায় বললাম,’ সে যদি বে*শ্যা হয় তবে তুমি কি? নাকি পুরুষ মানুষ যা ইচ্ছে তাই করতে পারে? পুরুষ মানুষ এসব করলে তার চরিত্র ক*লঙ্কিত হয় না? ‘

আশফাক কিছু বললো না। শুধু রাগে ফুসফুস করছে ও।
আমি বললাম,’ টুকি তোমার বাচ্চা নাকি ওর চাচাতো ভাইয়ের বাচ্চা এটা তুমি কাকে ডেকে আনিয়ে প্রমাণ করবে তা করো। কিন্তু এসব প্রমাণ টমান দেখে আমি থামবো না আশফাক! আমি আমার নিজের ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি।আমি আমার নিজের পথ দেখবো। আমার গর্ভের সন্তানের উপর এমন নোংরা পিতার ছায়া পড়তে কিছুতেই দিবো না আমি!’

আশফাক আমার এসব কথা শুনলো কি না বুঝতে পারলাম না। তাকে দেখলাম ফোন নিয়ে ব্যস্ত হতে। সে পকেট থেকে ফোন বের করে জেবার হাসব্যান্ডকে আবার ফোন করলো। ফোন করে তাড়া দিয়ে বললো,’ আপনি দ্রুত আসুন। আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার স্ত্রী আমার বাসায় ল*ঙ্কাকাণ্ড ঘটাচ্ছে! আপনি দয়া করে দ্রুত এসে এর একটা বিহিত করুন ভাই !

গভীর গোপন পর্ব ৯

(গল্প প্রায় শেষের দিকে)

গভীর গোপন পর্ব ১১